ইউএন মিশনে হাইতিতে গমন
৭ম পর্ব
মোঃ হাবিবুর রহমান
রানওয়ে থেকে যখন আমাদের ভীমাকৃতির গগনতরী আকাশে উড়াল দেবার লক্ষ্যে ভো-দৌড় দিয়েছিল তখন হনুলুলুর স্হানীয় সময় বিকাল পাঁচটার মত হবে আরকি! হনুলুলুর নীল আকাশে তখন এক তোলা পরিমাণও মেঘের কোন চিহ্ন ছিলনা। ইচ্ছে হ'চ্ছিল হনুলুলুকে, হনুলুলুর নিজস্ব আকাশ পরিসীমা থেকে রাতের বেলায় তার বিদ্যুতবাতি ঝলকানো নয়নাভিরাম দৃশ্য অবগাহন করা। কিন্তু সূর্যি মামা তখনও প্রস্হান না করায় গগন থেকে হনুলুলুকে দিনের রুপে দেখতে হোলো।
তাই বুঝি হনুলুলুকে তার নিজ অন্তরীক্ষ থেকে রাতের বেলার সাজে না দেখার একটা অতৃপ্ত বাসনা র'য়েই গেলো। টেকআপ সময়ে হনুলুলুর নগরবাসী তখনও বসতবাড়ী কিংবা কলকারখানায় সন্ধা-প্রদীপ ধরায়নি কিংবা বিদ্যুতের সুইচ বোর্ডে সুইচ টিপে নিয়ন বাতি তখনও জ্বালায়নি। তাই সেদিন আকাশ থেকে রাতের হনুলুলুর রূপ দর্শন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মনটা ছিলো বেশখানি বিষন্নতায় ভরা।
এটা আকাশ ভ্রমণের ব্যর্থতা হিসেবে আমার জীবনে একটা স্হায়ী সাইনবোর্ডের আকারে চোখের সামনে যেন সবসময়ই লটকানো আছে, তবে পরবর্তীতে আমি আমার অন্য একটা আকাশ ভ্রমণের সময় আকাশ থেকে রাতের প্যারিস দেখে তার কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছিলাম। যাহোক, হনুলুলু থেকে পোর্টোরিকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এই ১২ ঘণ্টার একটানা এবারের আকাশ পথের ভ্রমণ ছিল অতীব চমৎকার ও আরামদায়ক।
আবহাওয়াটাও ছিল প্রায় সময়টা ধরেই আমাদের সম্পূর্ণ অনুকুলে।এরই মধ্যে বুঝি তাইরে-নাইরে করতে-করতে ঘণ্টা দুই কাটিয়ে দিয়েছি। তখন সকাল হওয়া-হওয়া ভাব। মজার ব্যাপারটা হ'লো, এধরনের দীর্ঘ আকাশ ভ্রমণে এক ধরনের দিবা-নিশির যে অনবরত লুকোচুরি খেলা চলতে থাকে সেটা সৃষ্টিকর্তা আমাকে বুঝি বাইস্কোপের মত নিজ চাক্ষুষ দর্শনে একেবারে পরিস্কার জল-জলন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে দিলেন।
হনুলুলুর আকাশ তখনও যেন ঠিক পরিস্কারভাবে পরিস্কার হয়নি, তখনও খানিকটা অন্ধকারে আচচ্ছন্ন। আমাদের বহনকৃত মার্কিনী গগনভেদী পঙ্খিরাজটি তখন প্রায় চল্লিশ হাজার ফুট উপর দিয়ে বুঝি আকাশের কোল ঘেঁষে গো-গো কিংবা শো-শো রবে ১২০০ মাইলেরও বেশী বেগে ছুটছে আর বুঝি জানান দিচ্ছে যে, "দেখো আমি বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ও উন্নত দেশের বিমান বাহিনীর অন্যতম ও অদ্ভূত এক বৃহাদাকার দ্রুতগামী আকাশযান, সুতরাং, আমার পথ থেকে তোমরা সরে দাঁড়াও, আমি আজ আকাশ পথের রাজা, কেউ ধারের কাছে আসলে পাবে তার উপযুক্ত সাজা।
হা, এইতো সূর্যি মামার মুচকি হাসি বুঝি এমাত্র প্রতিভাত হলো। সূর্যি মামাও যেন আমাদের সাথে ভ্রমণে বেরিয়েছে সুদুর সোনার বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে। হঠাৎ সিটবেল্ট বাধার হুশিয়ারী এলো, বুঝি জায়ান্ট পঙ্খিরাজ এয়ার-পকেটে পড়েছে, এযাত্রায় এটাই তার প্রথম ধাক্কা। খুব স্বাভাবিক ও আপনগতিতেই চ'লছে সে গন্তব্যের দিকে।
হঠাৎ মনিটরের দিকে তাকিয়েই যেন চক্ষু চড়কগাছ। প্লেনের অল্টিচ্যুড ও গতিবেগ যেন হঠাৎ করেই এ দু' দিনের সর্ব্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। নীচের দিকে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি বেশ কয়েকটা প্লেইন নিম্ন অল্টিচ্যুডে ভূ-ভা করে বিভিন্ন ডাইরেকশনে ভিন্ন-ভিন্ন গতিতে এদিক-ওদিক উড়ে চলেছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন সেগুলো অবলীলায় তৃতীয় মহাযুদ্ধের মহড়ায় অবতীর্ণ হ'য়েছে।
বাঙ্গালীরা খুবই অনুকরণ প্রিয় তাই বুঝি আমিও এরই মধ্যে কিছুটা মার্কিনীদের অনুকরণ করে ফেলেছি; না বলতে পারেন সেমি-আমেরিকান সেজে গিয়েছি। হনুলুলু থেকেই যে জিনিসটা আমার নজর কেড়েছিলো সেটা হলো ওরা দশ মিনিট পর পর পানি পান করে, তাই পানির বোতল হ'য়েছে তাদের নিত্য সঙ্গী। যেটা বলতে যেয়ে বেলাইন হ'য়ে গিয়েছিলাম-এটা এভাবে বলা যায়, "When you are in Rome, behave like a Roman".
তাই এমআরই (MRE) এর কথা ভুলে যেয়ে বুঝি আমার মত ক্ষুদ্রাকৃতির বাঙ্গালীর হাতে সদা-সর্বদা পানির বোতল শোভা পাচ্ছিল। "ওরাও খায় তাই বুঝি আমরাও খায়" ব্যাপারটি বুঝি ঠিক এমনই দাঁড়িয়েছে। ঘড়ি দেখে নিশ্চিত হ'লাম তখন সকাল ন'টা, বুঝি মেঘে-মেঘে বেলা হ'য়ে গেছে এমনটি আরকি!
এরই ভিতর কোন রকম আওয়াজ না দিয়েই অকস্মাৎ আবার এক মার্কিনী সার্জেন্টের অভ্যুদয়, ঠিক কি মতলবে তার শুভাগমন এখনও তা আবিস্কার ক'রতে পারিনি। অপেক্ষা করছি, দেখি বাচাধন কি বলে?
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much