২২ জানুয়ারী ২০২১

ড,সৈয়দ আজিজ




মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করো


মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করো 

কবে খেয়েছিল পেট ভরে ভাত?

তার সন্তানদের সাথে নিয়ে, 

যাকে ভ্যানে তুলে নিয়ে গেছে 

দায়িত্বশীল পুলিশ কাল রাত, 

ট্রেন থেকে বিনাটিকিটে যাত্রার দায়ে 

যে ছাই বিক্রির জন্য রোজ

ভোরের ট্রেনে চড়ে আসে 

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় 

বিকেলের ফিরতি ট্রেনে আবার 

ফিরে যায় তার কুঁড়েঘরে, 

জিগ্যেস করো যখন তাঁর স্বামী 

তিনটি শিশু বাচ্চা রেখে 

যৌতুকের দায়ে তাড়িয়ে দিয়ে ছিল 

ভেঙে পাঁজরের শুকনো হাড় 

তখন কি ব্যবস্থা নিয়ে ছিল 

মহা দায়িত্বশীল পুলিশ?

কী ব্যবস্থা নিয়ে ছিল সরকার?

নিজেকে জিজ্ঞেস করো?

তিনটি বাচ্চার জন্য তাঁর 

বেঁচে থাকার আছে কি

কোনো মানবাধিকার!!!

মনি জামান




ফিরে যাও তুমি 


ফিরে যাও তুমি যেখানে সুখ গন্তব্যে, আপেক্ষিক বৃষ্টি হয়ে নদীর চঞ্চলতায়।

সব ভালোবাসা ছিন্ন করে হয়তো পাবে তোমার কাঙ্খিত সুখ,

আদরে গলেছিল বরফ প্রেমে সেজেছিল রঙধনু।

বিদগ্ধ আকাশে নক্ষত্র কুড়িয়েছি রাশি রাশি,শিশিরের দু'ঠোট স্পর্শে খুঁজেছি  প্রজাপতির পালকে এক টুকরো সুখ।

শ্মশান আদরে ডুবছে চাঁদ ঈগল ঠোঁটে

মরু অবয়ব,ধূসর বেলা শেষে ফিরিয়ে দিয়েছে ভালোবাসা,তাই ফিরে যাও তুমি তোমার সুখ গন্তব্য।

সালমা খান



শিশির বিন্দু 


নিলাক্ষী পাখি খুব যত্ন করে

ঠোঁটে শিশির বিন্দু দিয়ে,

সূর্যকে লিখেছিলো 

সবুজ পাতায় চারটি শব্দ  ,

"ভালোবাসি"

পূর্বের সূর্য আড়মোড়া 

ভেঙে পাতার জলটুকু 

চুষে নিয়ে বলে, কই 

এখানেতো জলের 

চিহ্ন নেই,

বুক ভরা ব্যথায় হলদে

পাতাটি পড়লো খসে।

দমকা হাওয়ায় উড়ে নিয়ে ,

মাটিতে মিলিয়ে গেলো,

নিলাক্ষী পাখি জ্বলজ্বলে

 ভেজা ভেজা চোখে 

তাকিয়ে রইলো।

রেবেকা সুলতানা রেবা




সব সুন্দর যে তুমি


যদি ভুল হয় শোধরে নিও

অযথাই জড়িওনা জটিলতায়।

ক্লান্তিদিনে তুমি হয়ে যেও বৃক্ষলতা

চুপিচুপি এসে বক্ষে ধারণ করো

হয়ে থেকো একাকীত্বের সঙ্গী।


কাঁধে মাথা রেখে শুনিয়ে দিও

যতো আছে তোমার মনের কথা

আমি অধীর আগ্রহে শুনে নেবো

তোমার হৃদয়ের যত ব্যাকুলতা।


আমি হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে

তোমার সুবাসে সুভাসিত হবো

তোমার প্রেমাবেগে আপ্লুত হবো

তোমার মাঝে মিশে যাব নিমিষেই। 


তুমি আমার সুগন্ধি ফুলের বাগান? 

নাকি দূরের তারাভরা আকাশ?

নাকি জোৎস্না বিলানো রাত?

নাকি সাফা পাহাড়ের ঝর্ণা?


ধুর..যা এতো ক্যানো প্রশ্ন করি!

মন বলে আমার

চোখে যা কিছু সুন্দর দেখি

সবি যে তুমি।

হাসনা হেনা




 পাথর  মানবী 


সে তো কবি  নয়, 

কবির  কবিতা  ও নয়, 

বাগানে  ফুটা  ফুল  ও নয়, 

কারো  মনের  পটে  আকা  

ছবি  ও নয়, 

নদীর জলের   ঢেউ  নয়, , 

চাঁদের  আলোয় আলোকিত  জ্বোসনা নয়, 

 সাগরের   উর্মি  ও নয়, 

 আকাশের নীল  তারা  নয়, 

 সূর্যের  কিরণ  নয়, 

 সে এক  পাথর  মানবী, 

যেনো  এক মরুভূমি, 

যেখানে  কখনো  বৃষ্টি  হয় না. . 

কখনো  ঝরনা  ঝরে  না, 

কখনো  জ্বোসনা  প্লাবিত হয় না, 

সে যেন  এক  নিরব  নিথর , 

সে নদী  কখনো  পায় না  সাগর।

লুৎফুররহমান চৌধুরী রাকিব ( ইংল্যান্ড )




ভালোবাসার আদালত 


তোমাদের ভালোবাসার আদালতে 

যদি কখনো হই আসামী

ক্ষমা করে দিও আমাকে

তোমাদের ঘৃণা থেকে একটু খানি।


কবিতার গা বেয়ে গড়িয়ে গেছে

হয়তো অনেক ভালো মন্দ কথা

অভিশাপ দিও কখনো বন্ধুগণ

মোর প্রাণে লাগবে যে ব্যাথা ।


কাউকে উদ্দেশ্য করে কখনো লিখিনি

কোন কবিতা বা গল্প 

ঢিল ছুঁড়ে মেরো না পথচলার সাথীরা

যদি কখনো ভালোবেসে থাকি  অল্প ।


সুন্দর বাগান হয়তো সাজানো যাবে না 

অতীতে ফেলে আসা ছন্দের মতো

জীবনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে

মনের উঠোন আজ ক্ষত বিক্ষত ।


তোমাদের মনের কাঠগড়ায় আমি

কখনো হতে চাইনি আসামী

তবুও যদি দোষী হয় থাকি

ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে নিও একটুখানি ।

আল সারোয়ার হৃদয়



ছায়া 


তোমার চুম্বনে গতিপ্রেম হাঁটে আমার দীর্ঘ নদীটির পাশে 

অপেক্ষার আকাশে বুঝি সব কোলাহলে ঝাঁকে ঝাঁকে গিলে খায় রীতিনীতি 

পৃথিবীর উল্টোপিঠে তখন কোকিলের ডাক

রক্তের বীজে শুধু মরে যায় সেই সময়

সন্ধ্যার বাতাস ফুলে দুলে আমার ব্রহ্মাণ্ডের গায়ে আঁচড় কাটে বয়স্ক এক রাত

ঢের অভিজ্ঞতা নিয়ে সঞ্চয়ে বিবেক ঘুমায় পাহাড়ের কাছে 

শূন্য হাতে ডেকো না ডেকো না 

সোমরস তখন অদৃশ্যে খুলে আঁখি 

তৃষ্ণা মিটিয়ে শিশিরের রসে দেখি তোমারই মুখ

তোমার ছায়া নামছে হাঁটছে শরীরে ভিতরে 

তোমাকে পেয়েছি ভেবে চোখের মিলন ঘিরে রাখে

অনন্ত প্রেম।

মেহেদুল আলম


ফিরে গেলে ফিরে পাবো 


যুগ দুই আগে 

শীতের কুয়াশায় 

মিশে থাকতো যে বাবলা গাছ

আমার ব্যস্ত পথের ধারে সকালে

হয়তো তারা এখনও বেঁচে আছে।

এখন কখনো কখনো মনে পড়ে তাদের কথা

মনে হয়, থেমে থেমে দেখে আসবো একবার।


সকালের ক্লাসে যেতে তড়িঘড়ি পায়ে

পথের ওপর ছড়ানো শিউলি ফুল মাড়িয়ে গেছি কতো

এখন কখনো কখনো

সে ফুলের কাছে যেতে ইচ্ছে করে খুব !


সে শহরের রাস্তাগুলি বেশ নির্জন ছিলো

হেঁটে বেড়াবার মতো

অথচ তখন হাঁটার সময় ছিলো না বেশি

এখন কি হাঁটা যাবে সেখানে নিরাপদে ?

ঘোড়ার খুরের শব্দ কি সেখানে আছে আগের মতন !


পদ্মার বুকে তখন বালি ছিলো

আমার বুক ছিলো খালি

জলের শূন্যতাই শুধু চোখে পড়তো তখন

এখন মনে পড়লে দুঃখ হয়, কারণ

সে বালিতে পা রেখে আমি দেখিনি কী সুখ ছিলো তাতে ! 


দুই যুগ আগে 

এক রাত স্টেশনে কেটেছিল ট্রেন ফেল করে

আজ রাতের সাথে সে রাতের কোনো মিল নেই

অথচ স্মৃতিগুলো এমন হয়ে ভাসে

মনে হয়, ফিরে গেলে ফিরে পাবো সব !

নীলিমা ইয়াসমিন



 মুছে ফেলো 


নিরাশার এক নামে লিখে দিয়েছি তোমার নাম

মৃত স্বপ্নের ঘোরে ফিরে ফিরে আসা এক স্বপ্নে চলে যাও তুমি 

অবিশ্বাসের জলে যে ছুঁয়েছে তোমায়, 

তাকে কেন ছুঁয়ে যাও 

কেনো দানবের গুহায় প্রবেশ করতে চাও।

কেন কাঁটা ভরা জঙ্গলের পানে ছুটে যাও।


পালিয়ে যাওয়া অমিমাংসিত প্রেমিকের কাব্যে লিখে দিয়েছি তোমার নাম

অন্ধকার রাতের পাখিরা চিৎকার করে নিঃশ্বাস ফেলছে

ওদের সঙ্গে আনন্দের নৃত্যগীত গাও

আর বেশি দেরি নাই হে প্রিয়।


সমস্ত প্রেমের খাতায় লিখে 

দিয়েছো মিথ্যা নাম

তাকে মুছে ফেলো।


তোমার  স্পন্দিত বুকে লিখে রেখেছো যে নাম,  তোমায় কী ভালোবাসে?

প্রেমিকের সঙ্গে পালানো সেই

অমিংমাসিত কাব্যে নয় আর।

বুক ভরা কামনার অতিষ্ঠ জীবনে নয়

এবার  জীবন হও অন্যের নয়

শুধু তোমার 

তোমার  প্রেমের কবিত্বে লিখে দিয়েছো 

যে মিথ্যা নাম মুছে ফেলো।


সূর্যের খরতাপের দাবানলে লিখে দিয়েছো যে নাম,

ছাই হয়ে মিশে গেছো যে ধুলোয় 

মুছে ফেলো,  মাটিতে মিশে যাও

দুর্বল মন, দুর্বল কায়া,দুর্বল মায়া

হে অবুঝ প্রেমময়ী 

কঠোর ধ্যানের শেষে আসবে

এক নির্ভর উৎসব

রৌদ্রে জ্বলুক তোমার মন

তোমার অচল জলে 

জাগাও তোমার প্রতিচ্ছায়া


আবার একটু একটু করে সবুজ হও

আবার কোন পাখি ঠোঁট দিয়ে নাড়িয়ে দিবে  তোমার চোখের  পাতা,

তোমার নতুন জন্মে নতুনের  আগমনী গানের সুর তোল।

মনের আঁধারে শত শত প্রদিপ জ্বালো

রাত কতক্ষণ থাকে 

তোমার দীনহীনতায়ই সাজাও

বিপ্লবী শুভেচ্ছা। 

পৃথিবীর সব সুন্দরে  লিখে দিবো একটি নাম ভালোবেসে, 

তুমি নীলিমা,তুমি আকাশ

তোমার বিশালতায় তুমি পৃথিবীকে নতুন করে সাজিয়ে নেও।

আর কোন অসুন্দর নোংরা জলে নিজেকে করোনা কালিমাময়।

শেখ মাহমুদ আল রাফসান


পরিকল্পিত বিলোপপ্রবণতা - ব্যবসার ফাঁদে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ 


অর্থনীতি বিভাগ (চতুর্থ বর্ষ) 

(জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় )


"উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা, 

আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জ্বীন পরী দেও-দানা।"


যথার্থই বলেছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। পুরো পৃথিবী এখন অনেক টাই আমাদের হাতের মুঠোয় এসে গেছে। কোনো তথ্য জানতে এখন আর ধূলাময় বইয়ের স্তুপ ঘাটতে হয় না, হাতে থাকা স্মার্টফোনে কিছু গুতাগুতি করলেই তথ্য হাজির - আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের সেই দৈত্য এখন প্রদীপ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে আমাদের মুঠোফোনে। তবে আরব্য রজনীর সেই দৈত্যের দীর্ঘায়ু থাকলেও আমাদের হাতে থাকা নব্য স্মার্টফোন রূপী দৈত্যের বয়স খুবই সীমিত এবং অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটি করা হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে। 


কেবল স্মার্টফোন নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সকল ইলেকট্রিক সামগ্রীর ই বয়সকাল ইচ্ছাকৃত ভাবেই কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেতাবি ভাষায় যার নাম পরিকল্পিত বিলোপ প্রবণতা (planned obsolescence)। প্রতিটি পণ্য ই এখন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমন ভাবে তৈরি করে যাতে ওয়ারেন্টির সময় টুকু কিংবা তার কিছু বেশিদিন ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যটি নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্রাহক সেবা বঞ্চিত হয়ে ও গ্রাহক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেনা, কারণ কোম্পানী গুলো তখন তাদের চমকদার পূর্ণ বিজ্ঞাপনের নিচে ছোট্ট করে লিখে রাখা একটি লাইন দেখিয়ে দেয় - যেটি হচ্ছে Terms and conditions বা শর্ত প্রযোজ্য। পরিকল্পিত এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত  মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলছে একশ্রেণী, আরেক শ্রেণী ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে দারিদ্রের  দুষ্টচক্রে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার এক রকম অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হয়েছে, সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে নতুন নতুন মডেল বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে যে প্রতারণা করা হচ্ছে তা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? 


গত কয়েক দশকে মানুষের মধ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েই চলেছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে প্রস্ততকারক কোম্পানী গুলোর নিজেদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতা। একটি পর্যায় পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতা সুস্থ ছিল, গ্রাহক পর্যায়ে স্বল্প খরচে মান সম্পন্ন পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু এখন এই প্রতিযোগিতা আর কোম্পানী গুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এর সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। ফলে রাজনীতির বেড়াজালে বিশেষ কিছু কোম্পানীর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পৃথিবী এবং তার বাসিন্দারা।


যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এমনিতেই পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিকল্প শক্তির উৎসের জন্য একদিকে যেমন বিজ্ঞানীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন, অন্যদিকে মুনাফালোভী কোম্পানী গুলো অল্প সময় মেয়াদি পণ্য তৈরি করে সম্পদের পরিমাণ আরও কমিয়ে ফেলছেন। পাশাপাশি দ্রুত ইলেকট্রনিক পণ্য পালটানোর সুবাদে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের পরিমাণ ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে - তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে আমাদের আবাসস্থল টি। উন্নত দেশ গুলো তে এসব রিসাইকল করা হলেও অনুন্নত দেশ গুলো এ বিষয়ে উদাসীন। তাদের গুগল সার্চ হিস্ট্রি ঘাটলে নতুন পণ্য মুক্তির খবর বা আন্তর্জাতিক বাজারের খবর পাওয়া যাবে - কিন্তু পুরনো পণ্য গুলো কে কিভাবে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে গড়ে তোলা যায় সেসব প্রযুক্তির খবরের হদিস পাওয়া যায়না। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে পরিবেশ দূষণ করে আমরা পৃথিবীর বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছি, আবার ধরীত্রি বাচানোর স্লোগান তুলে অর্থায়নের জন্য সেই উন্নত বিশ্বের কাছেই আর্জি জানাচ্ছি। মুনাফার একটি অংশ দান করে তারা বাহবা কুড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা বুঝতেই পারছিনা যে আদতে আমাদের অর্থ ই দান হয়ে ফিরে আসছে আমাদের কাছে। বুঝতে পারবো ও বা কিভাবে - নতুন নতুন গ্যাজেট সাজিয়ে রঙিন চশমা পরিয়ে অন্ধ করে রাখা হয়েছে আমাদের। আমরা ও উন্নত হওয়ার তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে হাত বাড়াচ্ছি অপ্রয়োজনীয় নতুন কোনো পণ্যের দিকে - কেবল সামাজিক মান মর্যাদা বাড়ানোর উদ্দেশ্য। সেজন্য মধ্যবিত্তের ঘরে এখন শোভা পাচ্ছে এয়ারকুলার। গ্যারেজে গাড়ি না থাকা এখন অপমানজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় যানজটে পড়লে এখন সারিবদ্ধ জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দেখা মেলে, যেটিকে আমরা উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে ও দেখি!! 


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন - ইতালিতে যে মধ্যবিত্ত রেনেসাঁসের সূত্রপাত করেছিলো, সেই মধ্যবিত্ত এদেশে আসবে না। এদেশে মধ্যবিত্ত বই কেনে না, কিন্তু আশি হাজার টাকার আইফোন কিনতে রাজি। অথচ আইফোনের চেয়েও এখন আমাদের বেশি প্রয়োজন বই। আমাদের দেশীয় ইঞ্জিনিয়ার রা যদি আমাদের চাহিদার যোগান দিতে পারে  এবং দেশেই মান সম্পন্ন পণ্য তৈরি করতে পারি - তাহলে দেশের টাকা যেমন দেশেই থাকবে তেমনি ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের রাশ টেনে ধরা যাবে। আমাদের শুধু বিনিয়োগ করতে হবে সচেতনতা এবং দেশীয় পণ্য ব্যবহারের ইচ্ছে। পৃথিবী কে বাচিঁয়ে রাখার জন্য হলেও সবাইকে এই পরিকল্পিত  বিলোপ প্রবণতার বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে।