২৫ অক্টোবর ২০২১

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়" ১৭

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 





                      উদাসী ডানার মেঘ 
                                                                (পর্ব ১৭)


                                        বাসায় এসে মাত্র সুস্থ হয়েছে সামিয়া ঘরের  গোছগাছ শেষ না হতেই সৈকত ফোন করে,বললো বাসায়,আজ সারারাত তাস খেলবে দুই বন্ধু ভাবিদের নিয়ে আসবে
বাসায়,যেয়ে রান্না করো তাড়াতাড়ি  একটু পায়েস করো এই বলে ফোন রেখে দিলো।
সামিয়ার কান্না পেলো  শরীরটাএখনো দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি  অফিসে যেতে হয়  ভাবছে   কি ভাবে কি করবে রান্না
তৃষ্ণার টেবিলের কাছে যেয়ে বললে- তোর গুছানে শেষ? তাড়াতাড়ি চল চেকআপ করাতে হবে আবার
সমিয়া - কিসের চেক আপ
তৃষ্ণা- ডাক্তার দেখাবে চলো
সামিয়া- মাথা খারাপ তোর একা ডাক্তারের কাছে
গেলে আর রক্ষা আছে আমার।
তৃষ্ণা- আমার সাথে চলো
সামিয়া - না আরও বাজে কথা বলবে,বাসায় তাসের আড্ডা বসবে কাল পুজোর বন্ধ তাই বন্ধুরাও  তাদের বউ নিয়ে রাতে খাবে।
তৃষ্ণা- এতো দূর্বল কি ভাবে করবি রান্না
সামিয়ায়- সে হবেনে তের ভাবতে হবেনা।
তৃষ্ণা সামিয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো তাড়াতাড়া করে,কাপড় চেন্জ করে হাতমুখ ধুয়ে রান্না ঘরে এলো, রান্না   করতে পারছেনা আাবার মাথাটা ঘুরচ্ছে। বুয়া মাথায় পানি দিয়ে বললো আমাকে দেন
আপা আমি বাকি গুলো করে ফেলি।
সামিয়া কিছুই বললোনা রান্না শেষ করে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই ওরা চলে এলো।
চা নাস্তার পর্ব শেষ করিয়ে সামিয়া কিছুটা সময় কথা
বললো ওরা ও তাস নিয়ে বসে পড়লো
সৈকতকে বললো কিছু প্রয়োজন হলে যেনো ডাকে।
বুয়াই চা দিলো কয়েকবার এবার সামিয়া দেখে রাত এগারেোটা প্রায় বাজে উঠে এসে বললে টেবিলে( খাবার দিবে।সৈকত দিতে বললো একসাথে সবাই খেতে বসলো সামিয়া খেতে পারলোনা ভালো লাগছেনা খেতে
সবার সামনে তাই নাড়াচাড়া করে উঠে পড়লো।
আবার চায়ের পালা শেষ হতেই বসে পড়লো খেলতে
ভোর হতেই সব চলে গেলো। সামিয়ার শরীর ভর্তি
রেশ উঠেছে সৈকত ঘুমাচ্ছে। আজ বন্ধ ডাক্তার ও পাবেনা। কষ্ট পাচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত,লাগছে।


                                                                                                    চলবে.....

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ১৩

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল



 

                                                                    বনফুল
                                                                         ( ১৩ তম পর্ব ) 


জুঁই পলাশের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে, এক ঘুমে সকাল আটটা বেজে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জুঁই তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুম ঢুকে ফ্রেস হয়ে এসে ফোন দিলোপলাশ কে,হ্যালো গুডমর্নিং... 
জবাবে পলাশ জুঁই কে বললো গুডমর্নিং ডিয়ার, আজ তোমার  এতো আর্লি ঘুম ভাঙ্গলো, ব্যাপার কি? 
-কি করবো বলো তুমি তো আজ ফোন দাওনি। 
পলাশ বললো ভেবেছিলাম ফোন দিই আবার ভাবলাম যদি তুমি ঘুমে থাকো তাহলে ঘুমটা ভেঙ্গে দেওয়া ঠিক হবে কি না,এই ভেবে ফোন দিইনি।আচ্ছা সুইট হার্ট আর ভুল হবে না।
- এখন ছাড়ছি রেডি হতে হবে। 
পলাশ বললো ঠিক আছে । জুঁই ফোন রেখে ড্রেস চেঞ্জ করে  চুল আঁচড়ে সুন্দর একটা ইযার রিং কানে পড়লো, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক দিলো, সাজগোছ শেষ করে জুঁই নিচে নেমে এলো, টেবিলে নাস্তা পরিবেশেন করাই ছিলো , নাস্তা শেষ করতেই মা মনোয়ারা বেগম জুঁইকে জিজ্ঞেস করল তুমি কি চা নেবে না কফি? 
জুঁই বললো কফি দিতে বলো। কফি শেষ করে জুঁই বললো আমি বেরোলাম।
 বাবা-মা দুজনেই বললো সাবধানে যেও, 
ক্লাসের অনেক আগেই গেটে পৌঁছালো জুঁই, মনে মনে খুশিই হলো, অনেকটা সময় পাওয়া যাবে, পলাশের সাথে সময় কাটানো যাবে।
গেটে ঢুকে একটু সামনে এগোতেই দেখতে পেলো পলাশ গতকালের জায়গায় বসে আছে। জুঁই হাসি হাসি মুখ এগিয়ে এলো পলাশের দিকে , পলাশও জুঁইকে দেখে খুব খুশি হয়েছে... পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মতো আড্ডা মারলো।পলাশ জুঁইকে বললো চলো ক্লাসের সময় হয়ে গেছে, জুঁই হুম বলে উঠতে গেলে তখন তার কেমন যেন মাথাটা  ঘুরে উঠলো। জুঁই মাথায় ধরে বসে পড়লো। 
পলাশ ব্যস্ত হয়ে বললো, জুঁই কি হলো?  
জুঁই বললো না তেমন কিছুই না মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠলো।
পলাশ বললো ক্লাস করবে না কি বাসায় চলে যাবে?
 জুঁই বললো আরে এমন কিচ্ছু না আমরা ক্লাসে যাই... বলে দুজনেই পাশাপাশি হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে জুঁই দোতলায়, আর পলাশ তিনতলায় চলে গেলো।সোয়া একটায় দুজনেই এক সাথে নেমে এসে গাড়িতে   উঠলো। 
এভাবেই গল্প করতে করতে দুজন দুজনার বাসায় পৌঁছে যায়। এভাবেই হাসি আনন্দে কেটেগেলে চারমাস।  পলাশের পরিক্ষা খুব ভালো হয়েছে।


                                                                                                                      চলবে....

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩২


 


                       টানাপোড়েন (৩২)

                               বৃষ্টিভেজা দুপুর


                                      রেখা কত কিছু ভেবে রেখেছিল পুজোটা খুব এনজয় করবে। রিম্পাদির আসার কথা ছিল বাড়িতে। একদিনের জন্য এসেছিল।রিম্পাদি আসার  দিন টা আনন্দে কেটেছে এতসব বিশৃঙ্খলাতার মধ্যেও।
বাড়িতে  তুমুল অশান্তি। একদিকে মিলি(স্ট্রীট ডগ) ওর বাচ্চা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। রেখা ও মনোজ এক চুলও বাড়ির এদিক ওদিক হতে পারে না। তাহলেই কপালে ওদের কষ্ট ।  সুরঞ্জন ফোন করেছিল পুজোতে যেতে । কিন্তু পারে নি। অন্যদিকে যৌথ সম্পত্তির  টানাপোড়েন। রেখার শ্বশুর মশাইকে ঠকিয়ে ,জ্যাঠাশ্বশুর সব নিজের  এবং তার সন্তানদের নামে যৌথ সম্পত্তি দখলে রেখেছেন। তাই রোজ অশান্তি। এরমধ্যে মিলির বেবি হওয়াতে ওদের কাজের লোকগুলোকে অব্দি এমনভাবে শেখানো হয়েছে, যাতে মিলিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় ।রেখা শুধু ভাবে এরা আর কত নীচে নামবে । মিলির সিঁড়ির নিচে বাচ্চাটা হওয়াতে । বাচ্চাগুলোর চোখ না ফোটায় সিঁড়ির নিচেই থাকবে। ।কিন্তু অজুহাত দেখিয়ে মিলিকে বের করে দেবার ওরা বাহানা‌ খুঁজছে। যেহেতু মিলি বাচ্চাগুলোকে আগলে রাখে ,কোন ব্যাগ পত্র দেখলে  বাচ্চাগুলোকে চুরি করে নিয়ে নেবে ভেবে 'ও' ঘেউ ঘেউ আওয়াজ করে ।কিন্তু যারা নিয়মিত চলাচল করছে ,তাদের কিন্তু কিছুই বলে না ।অথচ সেদিন পদিপিসি,কাজ না করে বাড়ি চলে গেছে।
আর রেখার জা , যা চিৎকার করে বলছে 'এখন আর মানুষ নয় বুঝলে,কুকুরের বাড়িঘর হয়ে গেছে।'
(ফোড়ন কেটে  কথা বলছে)। এর জন্য কেউ বাড়িতে ঢুকতে পারবে না। বাসনপত্র রয়েছে ,কে মাজবে ?বাসি উঠোন কে ধোবে?
 'অনেকক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচির পর ,কেউ কোনো সাড়া দেওয়াতে । চুপ করেছে। 
মনোজ রেখাকে এসে বলল  'মাথা ঠান্ডা রাখ। এখন যে করেই হোক এই দিনগুলোকে পার করতে হবে ।পরে ওর ঘরের ব্যবস্থা করা ‌হবে।'' 
কিছুক্ষণ পরেই রেখার জা (রীতা ) হন্তদন্ত হয়ে রেখার দিকে ধাবিত হল।মনে হলো মৈনাক পর্বত ছুটছে।ইন্দ্রজিৎ যেমন রণ সাজে সজ্জিত হয়ে রামচন্দ্রকে বধের  উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল, ঠিক তেমনি।
রেখাকে এসে ডাকছে  'রেখা রেখা।।
রেখা  রান্নাঘরে রান্না করছিল, শুনে সাড়া দিল  "কি দিদিভাই?'
রীতা বলল ' একটু বাইরে এসো।'
রেখা বলে  ' হাতটা ধুয়ে আসছি।'
আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রীতা সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো ' কি বলছো, বলো?'
'রীতা  বলল 'পদিপিসি মিলির জন্য কাজ না করে চলে ‌গেছে । 'এখন এইসব কাজকর্মগুলো কে করবে বল?'
রেখা বলল-'কেন ?মিলি কি করেছে?'
রীতা বলল ' কি করে নি বলো? (দুই হাত তুলে দেখালো) ঘেউ ঘেউ করে বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে। পদিপিসি ভয় পেয়ে গেছে।'
রেখা বলল  'পদিপিসীকে তো  মিলি চেনে। ওনাকে তো কিছু বলার কথা নয়। আর যদি ঘেউ ঘেউ করেই থাকে। তাহলে  ,আমাদেরকে ডাকতো ।সেটা করলেই তো হতো। চলে যাবার কি আছে?"
রীতা বলল "অত কথা তো আমি বাপু বলতে পারব না। তবে এখন কাজগুলো কে করবে?'
তখন রেখা বাধ্য হয়ে  বলল 'ঠিক আছে ।সে বাসি উঠোন ধুয়ে দেবে ।তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই 
এই কথা বলার পর রীতা চলে গেল।'
আসলে এইভাবে রেখাকে জব্দ করছে। মিলি যেহেতু সদ্যজাত মা।সন্তানের প্রতি সবসময় একটা নিরাপত্তার দায়িত্ব  ওর ওপর। মায়েরা সন্তানের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে ।তাই সে অবলা জীব হলেও তার মাতৃত্বকে অস্বীকার করা যায় না ।সেজন্যই বলা হয়েছিল কোন অসুবিধা হলে রেখা বা মনোজকে ডাকতে। কিন্তু তা না করে বাড়ি চলে গেছে। আসলে এগুলো যে পুরোটাই নাটক ,তা বুঝতে অসুবিধে হয় নি রেখার। 
নানা কারণে একটা কি রকম যেন একটা বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।বাড়িতে রেখার মনেও বিন্দুবিসর্গ শান্তি নেই। মনোজের সঙ্গেও চলছে একটা যেন টানাপোড়েন ।আগামীকাল লক্ষ্মী পূজার প্রস্তুতি। রেখা কালবিলম্ব না করে নিচে গিয়ে উঠোনটা ধুয়ে দিল। আর উপর থেকে জেটি শাশুড়ি, রেখার জা ,ভাসুর সবাই দেখতে লাগলো আর হাসতে লাগল নিজেদের মধ্যে।
রেখার একটুও কষ্ট হয় নি। জানে সে যা করছে একটা অবলা জীব এর জন্য করছে।তা যে যতই বদমাইশি করুক না কেন? তবে মনে মনে  সবসময় মনোজের কথাটাই ভাবছে। আজকাল কি হয়েছে কে জানে?
 ওর কি কোন অফিস সংক্রান্ত  সমস্যা চলছে ?সেটাও তো শেয়ার করে নি ।'
হঠাৎ করেই  মনোজকে লক্ষী পূজোর ফর্দ ধরিয়ে রেখা বলল ‌ 'এই ফর্দটা রাখো। বাজার করতে হবে।'
মনোজ চিৎকার করে বলল 'তোমার কবে আক্কেল হবে বল তো ?যখন তখন যা কিছু ধরিয়ে দিলেই হলো।আমি যেতে পারবো কি পারবো না ,সেটা একবারও মাথায় আসলো না।'
রেখা তো হতবাক। ফ্যাল ফ্যল করে মনোজের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল 'আমি বুঝতে পারি নি।'
মনোজ বলল ' কবে বুঝবে তুমি আমাকে ?তোমার তো ওই একটাই কথা ।বুঝতে পারি নি। ভাগশেষ।'
রেখার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল টপটপ করে আর কোন কথা বলল না। সে শুধু ভাবতে লাগলো
অকারণে অনেক কথা শোনাল  ।রেখা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে ।
রেখা ভাবছে  'ও কি করেছে? বাড়ির পুজোর জন্য ই ফর্দটা ধরিয়েছে ।এত চিৎকার করার কি আছে ?এটাই তো বুঝতে পারছে না।'
 শেষ পর্যন্ত রেখাকেই লক্ষ্মী পূজার ফর্দ নিয়ে যেতে হয়েছে বাজার করতে।
 ভেতরে ভেতরে সব সময় একটা কষ্ট  রেখার।এতদিনের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম মনোজ রেখার প্রতি এতটা রিয়াক্ট করল ।রেখার কি অপরাধ নিজেই বুঝতে পারছে না ।বারবার নিজের আত্মসমালোচনা করছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না কোনো হদিস ।এইসব ভাবনা চিন্তা মাথায় নিয়ে  সন্ধ্যেবেলাটা একটু বসেছে ,কিভাবে কি জোগাড় যন্ত্র করবে?পুরোহিত মশাইকে খবর দেয়া ,ফোনবুক ঘেটে ঘেটে নম্বর জোগাড় করে তাকে ফোন করা। এর পর  ঢাকওয়ালাকে খবর দেয়া। সমস্ত কিছুই কন্টাক্ট করেছে রেখা। বড্ড ক্লান্ত লাগছে রেখার। বরাবর মনোজ এই সমস্ত কাজ গুলো করে। মনোজের যা মেজাজ বিগড়ে আছে ,ধারে কাছে যেতেই রেখা সাহস পাচ্ছে না। এর ই  মধ্যে রাত সাড়ে দশটায় হঠাৎই ফোন।রেখা ফোন রিসিভ করে ক্লান্ত স্বরে বলে  'হ্যালো'।
ওপার থেকে কণ্ঠ ভেসে আছে  'আমি বড়দি বলছি রেখা।'
রেখা এবার বালিশ ছেড়ে উঠে বসে ধড়ফড় করে। আর মনে মনে ভাবে  হঠাৎ বড়দির ফোন?
রেখা বলল  'হ্যাঁ দিদি ।বলুন?'
বড়দি বললেন 'তোমার কি শরীর খারাপ?'
রেখা বললে 'না দিদি ।বলুন। একটু ক্লান্ত আছি।'
বড়দি বললেন আসলে গলার স্বর টা শুনে তাই মনে হলো তো? যাই হোক কাজের কথায় আসি।
কালকে তোমাকে একবার স্কুলে আসতে হবে?'
রেখা বললো  'কেনো দিদি?
এখন তো ছুটি চলছে।'
বড়দি বললেন  'হ্যাঁ ছুটি চলছে কিন্তু এসআই অফিস থেকে আজকেই একটা মেসেজ এসেছে,আগামীকাল স্কুলে স্কুলে মাননীয় মন্ত্রী শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন ।সেই শুভেচ্ছা বার্তার পত্রটিকে গ্রহণ করতে হবে। স্কুলের হেড অফ দা ইনস্টিটিউশন না থাকলেও হবে ।অন্য কোনো প্রতিনিধি গ্রহণ করলেও হবে। তাই..'
রেখা বলল ' দিদি লোকাল টিচারকে বললে হয় না?'
বড়দি বললেন  'হ্যাঁ ।আমি ফোন করেছিলাম। শুধুমাত্র অনিন্দিতা ছাড়া ,বাকিরা সবাই আউট অফ স্টেশন। 'অনিন্দিতার আবার জ্বর সেজন্য তোমাকেই বলছি। কেন তুমি কি আউট অফ স্টেশন?'
রেখা বললো  ' না দিদি। রেখা যে কি জ্বালায় জ্বলছে এটা বড়দিকে কি করে বলবে?কত রকম সমস্যায় জর্জরিত  ।অপরদিকে তো নাও করতে পারবে না। আসলে বড়দি অনেকটাই ভরসা করেন রেখার উপর । নিজের অসুবিধা সত্তেও এবং স্কুলের কথা ভেবে জিজ্ঞেস করল' ওনারা 'কটায় আসবেন?'
বড়দি বললেন  'ওটাই তো মুশকিল রেখা।কিছু বলেন নি। বলেছেন এগারোটা থেকে থাকতে। একটা তো নির্দিষ্ট টাইম দেবেন সে সবকিছু দেন নি।'
রেখা বললো ' তাহলে দিদি কটা অব্দি থাকতে হবে এটা না বললে হয় ,বলুন ? সাড়ে চারটার দিকে থাকা সম্ভব?'আগামীকাল আবার লক্ষ্মী পুজো। যদিও লক্ষ্মী পুজো দুদিন পড়েছে।'
বড়দি বললেন  'তবুও আমি আর একবার যোগাযোগ করব ধীরেন বাবুর সঙ্গে। তোমাকে জানাবো ।তবে তুমি ধরেই নাও এগারোটার মধ্যে স্কুলে যেতে হবে।'
রেখা বলল  'ওখানে কি করতে হবে দিদি?'
বড়দি বললেন  'তেমন কিছুই করতে হবে না। উনারা আসবেন শুভেচ্ছা বার্তার পত্রটি দেবেন ।সেটি তুমি গ্রহণ করবে,সঙ্গে ফটো তুলবে।সেই ফটোগুলোকে গ্রুপে আবার পোস্ট করে দেবে কেমন,?'
রেখা বলল ‌'ঠিক আছে দিদি।'
বড়দি বললেন  'তাহলে তুমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যেও কেমন? আমি জানি ,তুমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে ।তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।'
রেখা বলল  'ওকে দিদি।'
রেখা ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল । লক্ষ্মীপূজো না হয় পরশুদিন করবে। কিন্তু মিলিদের খাবার ব্যবস্থা করতে হবে ।সুমিতা কাজে আসবে কি ,আসবে না ।ওর তো কোন ঠিক ঠিকানা নেই। যা কাজ আজকেই  গুছিয়ে নিতে হবে ।সবথেকে বড় মনে অশান্তি লাগছে মনোজকে নিয়ে।
সন্ধ্যার পর থেকে একটা কথাও মনোজ  রেখার সঙ্গে বলে নি। রেখা যে  মনোজকে বলবে,আগামীকাল স্কুলে যাবে,সেটাও বলতে পারছে না।মিলির বাচ্চাগুলোকে নিয়েই যত চিন্তা।কি  করবে ভেবে পাচ্ছে না। অবশেষে খাবার টেবিলে মনোজকে রেখা বলল  'আগামীকাল স্কুলে যাব। তাই মিলিদের খাবারটা তুমি ঠিকঠাক দিয়ে দিও।'
মনোজ কোন কথারই উত্তর দিল না ।খেয়ে উঠে চলে গেল। রেখার চোখ ফেটে জল পড়তে লাগল।
একটা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমাতে গেল।
এদিকে ভোর থেকেই শুরু হয়ে গেছে বৃষ্টি ।মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে ।চারিদিকে কিছু দেখা যাচ্ছে না। রেখা ট্রেন ধরে স্কুলে পৌঁছালো। স্কুলে গিয়ে দেখছে দিলীপ দা গেট খুলে দাঁড়িয়ে আছে । একগাল হেসে কাছে এগিয়ে এসে বলল ' দিদি শুভ বিজয়া।'
রেখাও একগাল হেসে  মনের কষ্টটাকে চেপে বলল 'শুভ বিজয়া।ভালো আছেন তো সবাই?'
দিলীপ দা বললেন 'হ্যাঁ দিদি। ‌ আপনারা?'
রেখা বলল  'সবাই ভালো আছে।'কতটা যে ভালো আছে ,সে শুধু রেখাই জানে কিন্তু সৌজন্যবোধের জন্য তো বলতেই হবে।
সঙ্গে সঙ্গে দিলীপ দা বলল  'দিদি একদম ভিজে গেছেন তো? যান ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ করে নিন। না হলে চারিদিকে  যা জ্বর জ্বালা হচ্ছে।'
 অনেকদিন পর স্কুলে এসে সত্যিই খুব ভালো লাগছে ।কিন্তু চারিদিক শুধু শূন্যতা শূন্যতা। পাশের চেয়ারটায় রিম্পাদি বসে। রিম্পাদি তো  ক্ষণিকের অতিথি। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সময় গড়িয়ে দুটো বাজে তখনও তাদের দেখা নেই। ঠিকা আড়াইটে নাগাদ দিলীপদা এসে বললেন ' দিদি এসআই অফিস থেকে লোক এসেছেন? তবে দিদি চেনা কাউকে লাগলো না। আপনি আসুন।'
রেখা বলল ' আপনি ওনাদের ভেতরে নিয়ে আসুন।'
দিলীপদা ঘাড় নেড়ে চলে গেলেন।
একটু পরেই দিলীপ দা এসে বললেন ' দিদি উনাদের এই ঘরেই ডেকে আনছি।'
রেখা শুধু বলল ' ঠিক আছে।'
হঠাৎই স্টাফ রুমে যাকে ঢুকতে দেখলো রেখা ।দেখে তো অবাক হয়ে গেল এবং সেই ভদ্রলোক অবাক হয়ে গেলেন। সৌজন্যবশত রেখা বলল  'নমস্কার ভিতরে আসুন।"
আগন্তুক ভদ্রলোক সৌজন্যবশত নমস্কার জ্ঞাপন করলেন।
রেখা দিলীপ দা কে বলল দিলীপ দা উনাদের একটু মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা করুন বিজয়ার পরে আসলেন তো? আর মালাদি এসেছে একটু চা এর ব্যবস্থা করতে বলুন।'
দিলীপদা ঘার ছেড়ে চলে গেলেন।
ভাবছে হঠাৎ সুব্রত কোথা থেকে হাজির হলো। রেখার জীবনে কি ঘটতে চলেছে ,কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎই সুব্রতের সঙ্গে থাকা ভদ্রলোক বললেন আমি একটু স্কুলটা ঘুরে দেখছি আপনি বসুন।
রেখাকে একা পেয়ে সুব্রতবাবু বললেন  'তুমি এই স্কুলে আমাকে চিনতে পারছো? অনেকদিন পর তোমাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে ।ভালো আছো তো?'
রেখা তো প্রথমে ভেবেছিলো স্বপ্ন দেখছে ।এখন দেখছে না বাস্তবের মাটিতে আছে ।ভাবতে পারছে না সুব্রত এসআই হয়ে স্কুলে এসেছে।
শুধু ঘাড় নেড়ে বলল হ্যাঁ।
এরপর মাননীয় মন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পত্রটি স্বয়ং এসআই সাহেব রেখার হাতে দিলেন এবং ছবি তোলা হলো।
রেখা ভাবতে পারছে না ,শেষ পর্যন্ত সুব্রতর সঙ্গেই তাকে ছবিটা তুলতে হলো ।এটা কি ভবিতব্য?
এদিকে বৃষ্টি থামছে না বড়দি ফোন করে খবর নিলেন।
থাকে অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন‌ বললেন  'এই জন্যই তো তোমাকে এত ভালোবাসি রেখা। তোমাকে কোন কাজ দিলে তুমি সহজে না করো না। তোমার ওপর ভরসা করা যায়।'
রেখা শুধু বলল  'না, না, দিদি এটা তো আমাদের ডিউটি।'
বড়দি বললেন  'তোমাকে তো সেই ৫টার ট্রেন ধরতে হবে।সাবধানে এসো।'
সুব্রত বাবু বললেন'তোমাকে স্টেশনে পৌঁছে দেয়া হবে আমাদের গাড়িতে।'
রেখা কিন্তু কিন্তু করলেও গাড়িতে যেতেই হলো। কিভাবে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে না গিয়ে কোনো উপায় ছিল না। আর মনে মনে ভাবছে সেই কলেজ লাইফের কথা ।সুব্রত কি সেই আগের মতই আছে? আজ সেই বৃষ্টির দুপুর আর কলেজ লাইফের বৃষ্টির দুপুর, দুটোর মধ্যে  বিস্তর তফাৎ।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"৪




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত
(পর্ব)
শামীমা আহমেদ 

---মা আর রাহাতের সাথে রাতের খাবার খেয়ে ডাইনিং রান্নাঘর গুছিয়ে শায়লা নিজের শোবার ঘরে চলে এলো।শায়লা আগে মায়ের ঘরেই ঘুমাতো। মায়ের শরীরটা কখন কেমন হয়! তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটে  অন্য ঘর দুটো রাহাত আর নায়লার দখলে। ওরা রাত জেগে পড়াশুনা করতো। আর  ক্লান্ত হয়ে অফিস ফেরা শায়লার একটা পরিপূর্ণ ঘুম দেয়া খুবই অত্যাবশ্যক ছিল। যখন থেকে নীচতলার রুহি খালাম্মা বিয়ের প্রস্তাবটি নিয়ে এলেন তখন থেকে শায়লা আলাদা ঘরে চলে এলো।কানাডা থেকে কল আসতো, কথা বলতে হতো। শায়লা কখনো ভাবেনি সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ের এমন অচেনা কাউকে জীবনসঙ্গী করতে হবে।তবুও টুকটাক কথা চলতো। কেমন আছো, ভালো আছি,পছন্দ, অপছন্দ, এইতো! 
নীচতলার খালাম্মা নিশ্চয়ই সবিস্তারে শায়লাদের সব কথাই জানিয়েছে আর শায়লার ছবিও দেখিয়েছে। কোন রকম ওজর আপত্তি না দেখিয়ে চট করেই নোমান সাহেব, পুরো নাম নোমান চিশতী,রাজী হয়ে যায়।শায়লা বেশ বুঝতে পারে দুজনার বয়সের ব্যবধান।আর এত বয়সে আজো বিয়ে করেনি! বিষয়টি শায়লার মনে উঁকি দিলেও ঘুণাক্ষরেও তার প্রকাশ আনেনি চোখে মুখে। প্রায় প্রতি রাতেই কথা হতো।
এগার ঘন্টার সময়ের ব্যবধানেও দুজনার কথা হতো। রাত একটায় ফোন এলে জানাতো এখন দুপুর তিনটে বাজছে, এইতো আমি লাঞ্চে যাচ্ছি।
তখন শায়লার মনে পাভেলের সাথের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠতো। একসাথে লাইব্রেরি,  ক্যাফেটেরিয়া, বাসস্টপেজ,,কতইনা ভালো লাগা আর চোখে স্বপ্ন নিয়ে এগুচ্ছিল দিনগুলি! এখনো অনেকটা তাই, তবে এখন ইচ্ছের বাইরে স্বপ্ন সাজাতে হচ্ছে। শুধু আগের সেই উচ্ছ্বাসটাই নেই।
একদিন নীচতলার রুহি খালাম্মা জানালেন নোমান বলতে চাইছে বিয়ের সব যখন ঠিক হয়েছে তবে আর শায়লার চাকরিটা করার কী প্রয়োজন?  তো সেটাতেও ইস্তফা দিতে হলো। এখন শায়লার অপেক্ষা নোমান সাহেব দেশে আসবেন এবং বিয়ে পর্ব সমাপ্ত করে 
স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।শায়লার সাথে কথা হয়, ভিডিও কলে দেখা হয়,  দীর্ঘদিন ঠান্ডার দেশে থেকে গায়ের রঙ আর চোখে মুখে সতেজতা থাকলেও বয়সটাকে লুকানো যায়নি। শায়লার চেয়ে কমপক্ষে পনের বছরের বড় এমন কেউ কি সংসার জীবনে বন্ধুর মত হবে নাকি অভিভাবক হয়ে কেবল দায়িত্ব পালন করবে। আসলে শায়লার মাঝে কোন অনুভুতিই কাজ করে না। তার একটাই ভাবনা নায়লার জন্য হলেও এই বিয়ে তার মেনে নিতে হবে।
আর মায়েরা, মেয়েদের যতই আপন ভাবুক  তবুও  সব মায়েরাই চায় ছেলে ছেলের বউ নাতি নাত্নী নিয়ে শেষ জীবনটা সুখেশান্তিতে  কাটাতে।এই বাবামাকেই তখন খুব অচেনা লাগে। শায়লা তাই সকল মনযোগ নোমান সাহেবের দিকেই নিয়ে গেলো। এভাবে শায়লাকে নানান সময়ে নানান চরিত্রে নিজেকে সাজাতে হয়েছে। বাবামায়ের প্রথম সন্তান আর বাবাদের কাছে কন্যা সন্তানতো আরো বাড়তি আদরের জায়গা।সুখের দিনগুলি খুব দ্রুতই ফুরিয়ে গেছে! 
যথাসময়ে নোমান চিশতি সাহেব দেশে এলেন।  এসে পাঁচতারকা হোটেলে উঠলেন। হতেই পারে, এত ধনী ব্যক্তি! 
খালাম্মার মহা উদ্যোগে এক বিকেল সন্ধ্যায়  শায়লাদের  কিছু আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হলো। আত্মীয়স্বজনেরা বহু আগেই সরে গিয়েছিল, তাদের দূর্দিনে পাশে কেউই ছিল না।
যে শায়লা এইটুকু বয়েসে সংসারের হাল ধরেছিল, পড়াশুনাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অথচ আজ তারই বিয়েতে  এত বছর পর তাদের ছাড়া বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ হয়না।যদিও আত্মীয়স্বজনদের জানার এতটুকু আগ্রহ নেই মেয়েটির কোথায় বিয়ে হচ্ছে, বিদেশ বিঁভুয়ের ছেলে  একটু খোঁজ খবর করি।
আজ একবছর হতে চললো সেই কাগজের বিয়ে কাগজেই সাক্ষ্য হয়ে আছে।বিয়ের পর মাত্র পাঁচদিনের সময় কাটানো,পাঁচতারকা হোটেলের বিলাসবহুল কক্ষে।এরপর থেকে শুধুই অপেক্ষা! ওপার থেকে  নোমান চিশতী শুধু এটাই বলে চলেছে এইতো শীঘ্রই তোমাকে নিয়ে আসার কাগজপত্র পাঠাবো। এইতো এম্বেসীতে আজই দাঁড়াবো। এমন এড়িয়ে যাওয়ার কারণ অবশ্য শায়লার নীরবতা।নোমান সাহেবের ফেসবুকে এক বিদেশিনীর সাথে ছোট্ট দুটো ফুটফুটে ছেলে মেয়ের ছবি।বেশ হাস্যজ্জ্বোল ছবি। এদের পরিচয় জানতে চেয়ে নোমান সাহেবকে বারবার প্রশ্ন করলেও তিনি নিরুত্তর থেকেছেন। শায়লার বুঝে নিতে কষ্ট হলোনা এরা তার প্রথম ফ্যামিলি। অনেকদিন পর তিনি জানালেন,তার আগের স্ত্রী সুজানা এই দুটো  সন্তানকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করেছে। শায়লা কি এই সন্তানদুটোর মা হতে পারবে না? শায়লার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে!বারবার তার জীবনে শুধু দায়িত্ব এসে দাঁড়ায়।শায়লার নীরবতায় নোমান সাহেব কিছু একটা বুঝে নেয়।
শায়লা নিরুত্তর থাকে। 
রাতের অন্ধকারে দুচোখের জল শুধু অনুভব করা যায়,কখনো তা দেখা যায় না। নোনা স্বাদের সে অশ্রুজলে থাকে ভেতরের তীব্র ঘৃণা আর কষ্টের প্রকাশ। আনমনা হয়ে শায়লা  ভাবে সেতো একা একা ভালোই ছিল।কেন বারবার
তার জীবনে অন্য মানুষের এমন আচমকা আগমনে, শান্ত সাজানো মনটাকে, তছনছ করে দেয়া! 



                                                                                         চলবে......

রুবিনা




শান্তির পায়রা 


বৃষ্টি বর্ষণশীল, জন্মাল অরন্য, সাগর, পাহাড়,
পৃথিবীর সোপান হলো মাটির কৃতজ্ঞতা। 
শুরু হল কালের যাত্রা.... 
অতঃপর মহাকালের গহ্বরে প্রবেশ করে ক্রোধ, প্রতিশোধ,  
চক্রাকারে মানুষের শোভা যাত্রায় আমিত্ববোধ। 
অবলীলায় চলছে সক্রিয় অপেরার পালা, 
লেগে থাকে ঠোঁটে কুড়ানো হাসির মহড়া।
উদাহরণ স্বরূপ, তুখোড় সব মানবতার ইতিহাস, 
আদি থেকে  জ্বলছে তো জ্বলছে রতি হ্রাস। অনুভূতিহীন বাক্যগুলো অসমাপ্ত প্রতিক্রিয়া, 
অবশেষে রাতকে দিনের আলোয় দেখার অপচেষ্টা। 
বোবাকালা মানুষ গুলো অনেকটা রোবটের মত যান্ত্রিকতাবাদ,
বিকল মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে মুদ্রিত মুদ্রার
আবাদ। 
যাপিত আনন্দ, উচ্ছ্বাস, বিশ্বায়ন নিয়ন্ত্রিত হয় রিমোট কন্ট্রলে,
মহা কালের অত্যাধুনিক যাত্রা শুরু, আকাশ প্রযুক্তির উৎকর্ষে।
তথাপি.. 
এক ঝাক শান্তির পায়রা উড়ে আকাশে, 
মহাকাব্যের সৃষ্টি হল লাল কালি

ফরমান সেখ





বন্ধু আমার প্রিয়ার সাথে

       

পূর্বাকাশে  রবি ওঠে
চারিদিকে  আলোকিত,
বন্ধু আমার, প্রিয়ার সাথে
হয়েছে আজ  অবির্ভুত।

মিলেমিশে  খায় যে খানা-
পাশাপাশি  গোলটেবিলে,
হেঁসে ভাসায়  আনন্দতে
গল্প জমায়  দুজন মিলে।

কি হয়েছে  ফোনে কথা-
উদাত্ত মনে  নিশিরাতে,
সে কথা আজ  সামনা- সামনি
উঠেছে আজ  জম জমাটে।

কথা তাদের  ভাসছে যেন-
ভালোবাসার  বাঁশির সুরে,
চোখের কোণে  ফুটছে যেন-
সর্ষের ফুল  দিন-দুপুরে।

প্রিয়া বলে, তুমি আমার-
ভালোবাসার  প্রিয় হরি,
বন্ধু বলে, তুমি প্রিয়া-
আমার ডানা  কাটা পরী।

জি,এম,লিটন




বন্ধু


দুধের স্বর যেমন করে--
দুধকে ঢেকে রাখে,
প্রকৃত বন্ধু হলে কেউ--
তেমনি পাশে থাকে।

বন্ধুত্বের সম্পর্কে থাকলে-
বিশ্বাস,ভালোবাসা আর যতন,
ফাটবে না,ভাঙ্গবে না,সেই সম্পর্ক,
থাকবে ইস্পাতেরই মতন। 

ছলনাময়ী এই দুনিয়ায়--
বন্ধু চেনা দায়।
বন্ধুত্বেরই হাত বাড়িয়ে--
সকল কিছু,লুটে নিয়ে যায়।

প্রকৃত বন্ধু পাওয়া গেলে--
অনেক কপালে ফুল ফোঁটে।
বন্ধুর কারণে বন্ধুর আবার--
জীবনহানিও ঘটে। 

ছেলের সাথে মেয়ের বন্ধুত্ব নাকি--
এই জমানায় হয়,
আমি বলি,আগুনের পাশে মোম--
কভু নিরাপদ নয়।

মিষ্টি হাসি লেগেই থাকে,
স্বার্থপর বন্ধুর ঠোঁটে। 
গাছের ফলটি খেয়ে বন্ধু,
গাছের গোড়া কাটে। 

পিতামাতার মত বন্ধু,
এই দুনিয়ায় নাই।
শত বিপদের মাঝেও তারা--
দিবে তোমায় ঠাঁই।
 
সহধর্মিণী,সন্তানদের সাথে,
কেউ যদি বন্ধুত্ব করে।
জেনে রেখ, স্বর্গীয় সুখ--
বিরাজ করবে সেই ঘরে। 

সৃষ্টিকর্তার সাথে কেউ--
যদি বন্ধুত্ব করে,
সুখে যাবে সেই জীবন, 
যাবে পূন্যেয় ভরে।

অলোক দাস




 মেঘে ঢাকলো আকাশ 



 আবার আকাশ ঢাকছে মেঘে, আবারও হবেই বৃষ্টির রিম ঝিম শব্দ বাড়ির আনাচে কানাচে I নীলাকাশ ঢেকে দিলো কালো মেঘে I সবদিক হোলো অন্ধকার I না দেখে কিছুই বলা যায় না I না দেখলে ভাব ও আসে না বর্তমান ও ভবিষতের I এতো চিরসত্য I সন্ধ্যার চা এসে গেলো এখুনি I রাস্তায় আলো জ্বলে উঠলো, জললো আলো মন্দিরে I মোনে হয় এখুনি বৃষ্টি নামবে I একি অনাসিস্ট্রি!

asff

LOVE

safaf

LOVE