ধারাবাহিক উপন্যাস
সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১২ তম পর্ব
মনি জামান
গাড়ি চলছে জিকু আর আসমা দুজন পাশাপাশি সিটে বসে,নয়ন দাদী মোমেনা বেগমের কোলে ফিরোজ পিছুনের সিটে মোমেনা বেগমের পাশে বসে ভাবছে এক মনে,আজকে যে ব্যবহার আসমার সাথে করেছে শাশুড়ি মোমেনা বেগম তা রীতিমত ভাবনার বিষয় সে নিজ চোখে দেখেছে ঘটনাটা,কিন্তু বন্ধু জিকু সেটা লক্ষ্য করেছে কিনা জানে না ফিরোজ তবে বিষয়টি জিকুকে বলা কি উচিত হবে আবার ভাবলো না বিষয়টি বলা ঠিক হবে না কারণ এটা তাদের পারিববারিক বিষয়।
গাড়ির ড্রাইভার জিকুকে জিজ্ঞেস করলো,ভাই ঐ সামনে মোড় দেখা যায় মোড় থেকে কোনদিকে যাবো,জিকু ড্রাইভারকে বলল,আপনি মোড়ে গিয়ে তারপর ডানে ঘুরে সোজা ঐ যে রাস্তা ওটায় যাবেন,ড্রাইভার বলল,আমি কখনো এই রাস্তায় আসিনি তাই জিজ্ঞেস করলাম ভাই কিছু মনে করবেন না ভাই,জিকু বলল না না কেন কিছু মনে করবো আপনি তো এই রাস্তা চিনেন না আমি জানি।
নয়ন প্রস্রাব করেছে দাদী মোমেনা বেগমের কোলে,মোমেনা বেগম বৌমা আসমাকে না ডেকে ফিরোজকে বলল,নয়নকে জিকুর কাছে দাও দাদু ভাই প্রস্রাব করে দিয়েছে আমার কাপড়ে বলে ফিরোজের কাছে নয়নকে দিয়ে বলল জিকুকে দাও।
ফিরোজ নয়নকে নিয়ে আসমাকে ডেকে বলল,ভাবি নয়ন প্রস্রাব করেছে ওর দাদীর কাপড়ে ধরেন নয়নের জামা প্যান্ট পাল্টে দেন,জিকু হাত বাড়িয়ে ফিরোজের কাছ থেকে ছেলেকে নিয়ে আসমার কোলে দিয়ে বলল,পাল্টে দাও জামা প্যান্ট।
জিকু ব্যাগ থেকে ছেলের জামা প্যান্ট বের করে আসমাকে দিলো আসমা ছেলেকে নতুন জামা প্যান্ট পরিয়ে নিজের কাছে রাখলো।গাড়ি চলছে ভবদা গ্রামের পথ ধরে আজ আসমার বেশ খুশি খুশি লাগছে কতদিন পর স্বামীর বাড়ি যাচ্ছে সে,কারণ প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার আসমার স্বপ্ন ও এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম নয়।
আসমা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাশুড়ি তার সাথে যত খারাপ ব্যবহার করুক না কেন সে শাশুড়ির মন জয় করবেই কাজে ব্যবহারে সব দিক থেকে তা যতোই কষ্ট হোক আসমার,হঠাৎ জিকু আসমাকে বলল,এই আসমা তুমি চুপ করে আছো কেন,জিকুর ডাক আসমার ভাবনায় ব্যবচ্ছেদ ঘটলো,আসমা বলল না এমনি বাইরের গাছপালা কত সুন্দর তাই দেখছি।
জিকু আসমাকে বলল,ঐ যে দুরে যে গ্রামটা দেখা যায় ওটার পরেই আমাদের ভবদা গ্রামের শুরু,আসমা বলল,আর কত সময় লাগবে আমাদের পৌছাতে বাড়ি।
জিকু বলল,আর এক ঘন্টা মত সময় লাগবে বাড়ি পৌছাতে,আসমা বলল,তাই?জিকু বলল হ্যাঁ।
আসমা আর জিকু গল্প করছে তাদের কথোপকথনে ফিরোজ লক্ষ্য করলো মোমেনা বেগমের ভিতর কিছুটা বিরক্ত বিরক্ত ভাব মনে হচ্ছে,মোমেনা বেগমের লাল টকটকে মুখের চেহারাটা কেমন যেন কালচে রঙ্গ ধারণ করেছে রাগে।
সাংবাদিক হিসেবে ফিরোজের নাম ডাক আছে সে দৈনিক ভবদা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তার চোখ শকুনের মত তীক্ষ্ণ যা এড়ালো না মোমেনা বেগমের মুখচ্ছবি দেখে।
ফিরোজ কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছে এভাবে চললে কতদিন টিকবে আসমা! আগামী দিনে কিছু ঘটার আভাষে শঙ্কিত ফিরোজ,কারণ মোমেনা বেগম এমন এক নারী সে কখনো হয়তো আসমাকে পুত্র বধু হিসেবে মেনে নেবেনা,সেটা আজকের এই ব্যবহারে ফিরোজ অনুমান করতে পারছে। মোমেনা বেগম এমন এক কঠিন মনের মানুষ যেমন অহঙ্কারি তেমনি লোভী এবং গরীব বিদ্বেষী,এটা ভবদা গ্রামের সবাই জানে।
আসমা স্বামী জিকুকে বলল,নয়নকে একটু ধরো নয়ন ঘুমিয়ে পড়েছে বলে জিকুর কাছে দিয়ে নিজে একটু নড়েচড়ে গুছিয়ে বসলো তারপর জিকুকে বললো কয়টা বাজে দেখতো,জিকু ঘড়ি দেখে বলল,পৌনে পাঁচটা আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বাড়ি পৌছে যাবো,আসমা বলল,তাই নাকি তাহলে তো আমরা এসে গেছি তাই না?জিকু বলল,হ্যাঁ আর দশ মিনিট মত সময় লাগবে।
এ কথা শুনার সাথে সাথে আসমার ভিতর একটা কেমন যেন রোমাঞ্চকর ভাব অনুভুত হলো,সত্যি আজ সে শশুর বাড়ি যাচ্ছে কতদিনের স্বপ্ন আসমার শশুর বাড়ি যাওয়ার আজ সে স্বপ্ন পূর্ণ হতে যাচ্ছে,শশুর বাড়ির সবাইকে সে আপন করে নিবে,সুন্দর একটা সংসার হবে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকবে ছেলে নয়নকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবে,আসমা নিজে আবার কলেজে ভর্তি হয়ে অনার্স শেষ করবে অবশ্য স্বামী জিকু আসমাকে বার বার বলেছে তুমি ভর্তি হও আমি ভর্তি করে দিয়ে আসি।আসমা রাজি হয়নি শুধু এটুকু জিকুকে বলেছিলো যদি কোন দিন শাশুড়ি মেনে নেই সেদিন আবার লেখাপড়া শুরু করবে।আজ শাশুড়ি মেনে নিয়েছে আসমাকে,আসমার মনের ভিতর কি যে খুশি লাগছে কাউকে বোঝাতে পারবেনা সে।
আজ কতদিন বাবা মা'কে দেখিনি আসমার মনটা যেন ছুটছে মায়ের বাড়ির দিকে,আসমাকে মেনে নিয়েছে তার শাশুড়ি এই কথাটা শুনলে বাবা মা ও অনেক খুশি হবে।আসমার আজ ছোট দুটো বোনের কথা মনে পড়ছে ওরা কেমন আছে লেখাপড়া করছে কিনা ইত্যাদি ভাবনা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে মনের ভিতর,আসমা তার ভালোবাসার রাজকুমার পেয়ে আজ এতদিন সবাইকে ভুলে গিয়েছিলো আজ আবার নতুন করে পেতে যাচ্ছে সব কিছু।জিকু আসমার গায়ে ছোট্ট একটা টোকা দিয়ে বলল,আসমা ঐ দেখো আমাদের বাড়ি দেখা যায় আর মিনিট তিনেক সময় লাগবে বাড়ি পৌছাতে,আসমা জিকুর আঙুল লক্ষ্য করে তাকালো এবং দেখলো এই প্রথম তার শশুরবাড়ি,দুইতলা বিশিষ্ট অট্টালিকা ঐ দুরে যেন ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে নতুন বউ আসমাকে স্বাগত জানাতে।
চলবে.....