২১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ১২ তম পর্ব 





ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১২ তম পর্ব 
মনি জামান

গাড়ি চলছে জিকু আর আসমা দুজন পাশাপাশি সিটে বসে,নয়ন দাদী মোমেনা বেগমের কোলে ফিরোজ পিছুনের সিটে মোমেনা বেগমের পাশে বসে ভাবছে এক মনে,আজকে যে ব্যবহার আসমার সাথে করেছে শাশুড়ি মোমেনা বেগম তা রীতিমত ভাবনার বিষয় সে নিজ চোখে দেখেছে ঘটনাটা,কিন্তু বন্ধু জিকু সেটা লক্ষ্য করেছে কিনা জানে না ফিরোজ তবে বিষয়টি জিকুকে বলা কি উচিত হবে আবার ভাবলো না বিষয়টি বলা ঠিক হবে না কারণ এটা তাদের পারিববারিক বিষয়।
গাড়ির ড্রাইভার জিকুকে জিজ্ঞেস করলো,ভাই ঐ সামনে মোড় দেখা যায় মোড় থেকে কোনদিকে যাবো,জিকু ড্রাইভারকে বলল,আপনি মোড়ে গিয়ে তারপর ডানে ঘুরে সোজা ঐ যে রাস্তা ওটায় যাবেন,ড্রাইভার বলল,আমি কখনো এই রাস্তায় আসিনি তাই জিজ্ঞেস করলাম ভাই কিছু মনে করবেন না ভাই,জিকু বলল না না কেন কিছু মনে করবো আপনি তো এই রাস্তা চিনেন না আমি জানি।
নয়ন প্রস্রাব করেছে দাদী মোমেনা বেগমের কোলে,মোমেনা বেগম বৌমা আসমাকে না ডেকে ফিরোজকে বলল,নয়নকে জিকুর কাছে দাও দাদু ভাই প্রস্রাব করে দিয়েছে আমার কাপড়ে বলে ফিরোজের কাছে নয়নকে দিয়ে বলল জিকুকে দাও।
ফিরোজ নয়নকে নিয়ে আসমাকে ডেকে বলল,ভাবি নয়ন প্রস্রাব করেছে ওর দাদীর কাপড়ে ধরেন নয়নের জামা প্যান্ট পাল্টে দেন,জিকু হাত বাড়িয়ে ফিরোজের কাছ থেকে ছেলেকে নিয়ে আসমার কোলে দিয়ে বলল,পাল্টে দাও জামা প্যান্ট।
জিকু ব্যাগ থেকে ছেলের জামা প্যান্ট বের করে আসমাকে দিলো আসমা ছেলেকে নতুন জামা প্যান্ট পরিয়ে নিজের কাছে রাখলো।গাড়ি চলছে ভবদা গ্রামের পথ ধরে আজ আসমার বেশ খুশি খুশি লাগছে কতদিন পর স্বামীর বাড়ি যাচ্ছে সে,কারণ প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার আসমার স্বপ্ন ও এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম নয়।
আসমা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাশুড়ি তার সাথে যত খারাপ ব্যবহার করুক না কেন সে শাশুড়ির মন জয় করবেই কাজে ব্যবহারে সব দিক থেকে তা যতোই কষ্ট হোক আসমার,হঠাৎ জিকু আসমাকে বলল,এই আসমা তুমি চুপ করে আছো কেন,জিকুর ডাক আসমার ভাবনায় ব্যবচ্ছেদ ঘটলো,আসমা বলল না এমনি বাইরের গাছপালা কত সুন্দর তাই দেখছি।
জিকু আসমাকে বলল,ঐ যে দুরে যে গ্রামটা দেখা যায় ওটার পরেই আমাদের ভবদা গ্রামের শুরু,আসমা বলল,আর কত সময় লাগবে আমাদের পৌছাতে বাড়ি।
জিকু বলল,আর এক ঘন্টা মত সময় লাগবে বাড়ি পৌছাতে,আসমা বলল,তাই?জিকু বলল হ্যাঁ।
আসমা আর জিকু গল্প করছে তাদের কথোপকথনে ফিরোজ লক্ষ্য করলো মোমেনা বেগমের ভিতর কিছুটা বিরক্ত বিরক্ত ভাব মনে হচ্ছে,মোমেনা বেগমের লাল টকটকে মুখের চেহারাটা কেমন যেন কালচে রঙ্গ ধারণ করেছে রাগে।
সাংবাদিক হিসেবে ফিরোজের নাম ডাক আছে সে দৈনিক ভবদা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তার চোখ শকুনের মত তীক্ষ্ণ যা এড়ালো না মোমেনা বেগমের মুখচ্ছবি দেখে।
ফিরোজ কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছে এভাবে চললে কতদিন টিকবে আসমা! আগামী দিনে কিছু ঘটার আভাষে শঙ্কিত ফিরোজ,কারণ মোমেনা বেগম এমন এক নারী সে কখনো হয়তো আসমাকে পুত্র বধু হিসেবে মেনে নেবেনা,সেটা আজকের এই ব্যবহারে ফিরোজ অনুমান করতে পারছে। মোমেনা বেগম এমন এক কঠিন মনের মানুষ যেমন অহঙ্কারি তেমনি লোভী এবং গরীব বিদ্বেষী,এটা ভবদা গ্রামের সবাই জানে।
আসমা স্বামী জিকুকে বলল,নয়নকে একটু ধরো নয়ন ঘুমিয়ে পড়েছে বলে জিকুর কাছে দিয়ে নিজে একটু নড়েচড়ে গুছিয়ে বসলো তারপর জিকুকে বললো কয়টা বাজে দেখতো,জিকু ঘড়ি দেখে বলল,পৌনে পাঁচটা আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বাড়ি পৌছে যাবো,আসমা বলল,তাই নাকি তাহলে তো আমরা এসে গেছি তাই না?জিকু বলল,হ্যাঁ আর দশ মিনিট মত সময় লাগবে।
এ কথা শুনার সাথে সাথে আসমার ভিতর একটা কেমন যেন রোমাঞ্চকর ভাব অনুভুত হলো,সত্যি আজ সে শশুর বাড়ি যাচ্ছে কতদিনের স্বপ্ন আসমার শশুর বাড়ি যাওয়ার আজ সে স্বপ্ন পূর্ণ হতে যাচ্ছে,শশুর বাড়ির সবাইকে সে আপন করে নিবে,সুন্দর একটা সংসার হবে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকবে ছেলে নয়নকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবে,আসমা নিজে আবার কলেজে ভর্তি হয়ে অনার্স শেষ করবে অবশ্য স্বামী জিকু আসমাকে বার বার বলেছে তুমি ভর্তি হও আমি ভর্তি করে দিয়ে আসি।আসমা রাজি হয়নি শুধু এটুকু জিকুকে বলেছিলো যদি কোন দিন শাশুড়ি মেনে নেই সেদিন আবার লেখাপড়া শুরু করবে।আজ শাশুড়ি মেনে নিয়েছে আসমাকে,আসমার মনের ভিতর কি যে খুশি লাগছে কাউকে বোঝাতে পারবেনা সে।
আজ কতদিন বাবা মা'কে দেখিনি আসমার মনটা যেন ছুটছে মায়ের বাড়ির দিকে,আসমাকে মেনে নিয়েছে তার শাশুড়ি এই কথাটা শুনলে বাবা মা ও অনেক খুশি হবে।আসমার আজ ছোট দুটো বোনের কথা মনে পড়ছে ওরা কেমন আছে লেখাপড়া করছে কিনা ইত্যাদি ভাবনা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে মনের ভিতর,আসমা তার ভালোবাসার রাজকুমার পেয়ে আজ এতদিন সবাইকে ভুলে গিয়েছিলো আজ আবার নতুন করে পেতে যাচ্ছে সব কিছু।জিকু আসমার গায়ে ছোট্ট একটা টোকা দিয়ে বলল,আসমা ঐ দেখো আমাদের বাড়ি দেখা যায় আর মিনিট তিনেক সময় লাগবে বাড়ি পৌছাতে,আসমা জিকুর আঙুল লক্ষ্য করে তাকালো এবং দেখলো এই প্রথম তার শশুরবাড়ি,দুইতলা বিশিষ্ট অট্টালিকা ঐ দুরে যেন ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে নতুন বউ আসমাকে স্বাগত জানাতে।


চলবে.....

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬২




ধারাবাহিক উপন্যাস


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬২)
শামীমা আহমেদ 

অপ্রত্যাশিতভাবে আগত নোমান সাহেবের মিসড কল দেখে শায়লা সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বোধহীন হয়ে কতক্ষন যে সেভাবে দাঁড়িয়ে রইল তা হয়তো সময় ঘড়িই বলতে পারবে! ভেজা চুলে আলুথালু বসনায় একেবারে বেখেয়াল হয়ে রইল। ওয়াশরুমে শাওয়ার ঝরছে অবিরল ধারায়। একেবারে কানে তালা লেগেছে নয়তো সে শব্দও কোন চেতনা আনছে না কেন?আবার মোবাইল রিং হতেই শায়লা একেবারে চমকে উঠলো! মোবাইল স্ক্রিনে তাকাতে বুকের ভেতর কেঁপে উঠছে!ফোনের শব্দটা যেন তার ভেতরে আতংক হয়ে বেজে উঠলো। যেখানে  এতদিন এই রিংটোন কতইনা কাঙ্ক্ষিত ছিল। আজ নোমান সাহেবের মিসড কলে শায়লা একেবারে জড় কাঠের মত হয়ে গেছে।নোমান সাহেব ফোন করলে তাকে কি বলবে? কেমন করে সে বুঝাবে কানাডায় যাওয়ার এতটুকুও ইচ্ছে তার নেই। কলটা কি রিসিভ করবে না আগে রাহাতকে জানাবে?শায়লার ভেতরে অস্থিরতায় পায়ের তলায় ভেজা কাপড়ের জমে থাকা জলের ধারা বইছে। শায়লা বুঝে উঠতে পারছে না সে এখন কি করবে? একটানা অনেকক্ষন কল হয়ে  থেমে গিয়ে আবার কল শুরু হতেই শায়লা বিছানায় রাখা মোবাইলটির দিকে খুবই ভয় মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকাতেই যেন তার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওহ! এও কোনদিন হতে পারে!শিহাবের কল! শায়লা রীতিমতো এক ঝটকায় ফোনটি খাঁমচে ধরলো। কলটি দ্রুতই রিসিভ করলো।মনে হলো কোন খুনী তাকে তাড়া করেছিলো আর বারবার পিছন ফিরে তাকিয়ে  প্রাণ  বাঁচাতে দৌড়াতে গিয়ে   হঠাৎই শিহাবের  আগমন। বাঁচবার প্রানান্তকর চেষ্টায় অন্ধের মত তার উপর গিয়ে পড়েছে ! শায়লা দ্রুতই ফোন রিসিভ করে নিলো। যেন সে অনুভব করলো শিহাব তার খুব কাছেই দাঁড়িয়ে।
ও-প্রান্ত থেকে শিহাবের জানতে চাওয়ার সে কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না শায়লা। কিছুই যেন শুনতে পায়নি।শুধু শিহাবই তার জন্য অনেক পাওয়া। শিহাব শায়লাকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে,,ভালো মত পৌছেছো? কি করছো? তোমাকে মিস করছি।সারাদিন একসাথে ছিলাম। এখন আমার পাশটা কেমন ফাঁকা লাগছে।ঘরে এসে ভালো লাগছে না শায়লা।তোমার কথা খুব মনে পড়ছে!শায়লা তুমি এসে আমায় বিকেলের চা বানিয়ে দিয়ে যাও,,শায়লা,
শায়লা কিছু বলছো না যে?বাসায় কোন সমস্যা হয়েছে? রাহাত কি কিছু বলেছে? তোমার মা কি রাগ করেছেন? 
রাহাত আর মায়ের কথা শুনতে পেয়ে শায়লা যেন নিজের মাঝে ফিরে এলো।চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সে তার নিজের ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে। তবে এতক্ষন সে কোথায় ছিল? 
শিহাবের বারবার শায়লা, শায়লা ডাকে, এবার যেন সে স্বাভাবিকে ফিরে এলো! 
সন্ধ্যে হয়ে গেছে ঘরের বাতি দেয়া হয়নি,ওয়াশরুমের দরজা খোলা, বাতি জ্বলছে,শাওয়ার থেকে পানি ঝরছে!
শায়লা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো,পরনের ভেজা কাপড় গায়ে অর্ধেক শুকিয়ে গেছে।ভেজা চুল পানিতে জমাট বেঁধে আছে।
হাতের মোবাইল খেয়াল হতেই তা কানে লাগালো।শিহাব বলেই যাচ্ছে,শায়লা কোন সমস্যা হয়েছে?কথা বলছো না কেন?
এবার শায়লার কন্ঠ খুললো, না  না কোন সমস্যা নেই।আমি ভালমতো পৌছেছি।রাহাত, মা আমাকে কিছু বলেনি।
শিহাব,আমি শাওয়ারে ছিলাম।তাই ফোন ধরতে দেরী হলো।
ওহ! সরি, ঠিক আছে,তুমি শাওয়ার সেরে নাও। আমি বাসায় ঢুকেছি।তাই তোমার খোঁজ নিলাম।আচ্ছা রাতে কথা হবে।শিহাব কল শেষ করলো।
ঠিকাছে বলে শায়লা মোবাইলটির দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে রইল আর ভাবলো,কি এক আজব যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে যা কিনা বয়ে আনতে পারে এক অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ আবার বয়ে আনতে পারে একরাশ শুভবারতা। একটু আগের ভীত শায়লার মনের ভেতর এখন যেন শিহাবের রেশ লেগে রইল। হাতে ধরা মোবাইলটিকে শিহাব মনে করে শায়লা তাকে বুকের খুব কাছে নিয়ে আলতো করে চেপে ধরলো, শিহাবের উষ্ণতায় হৃদয়ে শক্তি ভরে নিলো।
শায়লা ফোনটি বিছানায় রেখে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো!
হায়! কতক্ষণ হলো শাওয়ারওটা চলছে,,,
শায়লা শাওয়ার বন্ধ করে টাওয়েল হাতে নিলো। শরীর আর চুলে বুলিয়ে নিয়ে কাপড় পালটে নিলো। ভেজা কাপরগুলো কাল বুয়ের জন্য বালতিতে জমিয়ে রাখলো।যদিও সে নিজের কাপড় নিজেই কেচে নেয় কিন্তু এখন শায়লার আর কিছুই ভালো লাগছে না।মনের ভেতর মিশ্র অনুভূতি।  দোটানায়  পায়ের চলা বারবার ধীর হয়ে যাচ্ছে। বারবার শিহাবের মুখটা ভেসে উঠছে। শায়লা ঘরের বাতি জ্বালিয়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে  দরজা খুলে বেরিয়ে ডাইনিং এ এলো। 
ডাইনিং এ মা বা রাহাত কাউকে দেখছে না।
ড্রইং রুম থেকে বেশ জোরে টিভির সাউন্ড ভেসে আসছে। শায়লা উঁকি দিতেই রাহাত হাসি মুখে বললো, আপু আসো।বসো।টিভি দেখি।
শায়লা এগিয়ে গেলো।মা কোথায়? ঘরে?  যাই দেখা করে আসি।
না আপু, মা ঘরে নেই।
কেন?  মা কোথায় গিয়েছে?
মা,নায়লার বাসায় গিয়েছে। আজ দুপুরে এসে মোর্শেদ মাকে নিয়ে গেছে।নায়লার নাকি মাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মেয়েদের মায়ের জন্য আকুলতাতো লাগবেই। 
তাহলে,মা আজ ফিরবে না?
না,কয়েকদিন হয়তো থাকবে।বসো আপু।
আচ্ছা,আমি চা বানিয়ে আনি।তারপর ভাইবোন বসে গল্প করবো।
শায়লা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।চুলা জ্বালিয়ে চায়ের পানি বসাতেই ঝট করে চা নিয়ে শিহাব যেন তখন কি বলছিল,সেটা মনে করার চেষ্টা করলো,,ও হ্যাঁ, চা বানিয়ে দিয়ে আসতে বললো! শায়লা মনে মনে একা একাই হেসে ফেললো,আর নীরব কথায় বলে উঠলো, ইস, খেয়ে দেয়ে আমার কোন কাজ নেই? তাকে চা বানিয়ে দিতে হবে।শায়লা এই মন গড়া কথন শুধু সে নিজেই শুনতে পেলো।
ট্রেতে দুই কাপ চা, বিস্কিট নিয়ে শায়লা ড্রইং রুমে গেলো।ভাই বোন টিভির দিকে তাকিয়ে।রাহাত ক্রিকেট খেলা দেখছে।
টিভির দিকে মুখ রেখেই রাহাত চায়ের কাপ হাতে নিলো।শায়লা একটা বিস্কুট এগিয়ে দিতেই রাহাত বলে উঠলো, আপু কেমন লাগলো শিহাব ভাইয়াদের বাড়ির সবাইকে? আরাফ কি তোমার কাছে এসেছিল?
শায়লা আনমনে চায়ের কাপ তুলে নিলো।তার চোখে আজ সারাদিনের ঘটে যাওয়া সবকিছু রিক্যাপের মত ভেসে উঠলো। 
শায়লা বললো, হ্যাঁ সবাইকে ভালো লেগেছে।সবাই খুব ভালো।
হ্যাঁ,তাতো  শি্হাব ভাইয়াকে দেখলেই বুঝা যায়। খেলা দেখায় ডুবে থাকা রাহাতের মন্তব্য। 
আর আরাফ?
আরাফ প্রথমে আসতে চায়নি।পরে আস্তে আস্তে কাছে এসেছে।রেখে আসতে মায়াই লাগছিলো।
তাহলেতো আপু, আজ তুমি অনেক আনন্দ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরেছো।তোমার মন শিহাব ভাইয়ের ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
তবুও তোমার সাথে আজ কিছু জরুরি কথা খোলামেলাভাবে বলে নিতে চাই।আজ মা ঘরে নেই।মা যেটুকু বুঝার বুঝে গেছে।তার কাছে আমরাতো কিছুই লুকাইনি।এখন তোমার,আমার আর শিহাব ভাইয়ার মিলিতভাবে সবকিছুতে আগাতে হবে।
শায়লা চায়ের কাপে বিস্কুটটি ভিজিয়ে নিলো।একচুমুক চা গলায় চালিয়ে দিল।সবকিছুর টেনশনে শায়লার গলা শুকিয়ে আসছিলো।আমি তো তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছি।
আজ সন্ধ্যায় নোমান সাহেবের  মিসড কলে ফোনের কথাটা কি বলবে? ভাবতেই রাহাত 
বলে উঠলো, আজ দুপুরে রুহি খালা এসেছিলো।ততক্ষনে মা নায়লার বাসায় চলে গেছে।সম্ভবত  আজ সকালে সে তোমাকে আমাকে বাইরে যেতে দেখেছে।
রুহি খালা কি বললো?
বললো, তোমরা ভাইবোন যা করছো সেটা ঠিক করছো না।তোমার বিবাহিত বোন অন্য পর পুরুষের সাথে সারাদিন বাইরে কাটাচ্ছে এইসব কানাডায় জানলে বিষয়টি ভালো হবে না।একজনের বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে অন্য আরেকজনের কাছে দিয়ে আসছো,,শায়লার কানাডায় যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।নোমান বাবাজি শীঘ্রই চলে আসবে।তোমরা ঠিকঠাক মত চলাফেরা করো।,,,এইসব আরকি,,
শায়লা নীরবে চায়ের সাথেই যেন কথা বলছে।যেন বলছে,আমি কোনদিনই কানাডা যাচ্ছি না।তা  যত শর্তেই সে বাধা থাকুক না কেন।
শায়লা এবার বুঝতে পারলো,আর এজন্যই
নোমান সাহেবের এত কল? আজ আমার কথা মনে পড়েছে।বিয়ে করে রেখে যাওয়া বউয়ের যে খোঁজ নেয় না, যার মন বুঝার কোন দায়িত্ব সে মনে করেনা,কেবল স্বামীর অধিকারে  অন্যের খবরে আজ কল করা।
রাহাত বললো, আপু নোমান সাহেব শীঘ্রই আসছে।চিন্তা করোনা। তার আগেই আমি ডিভোর্সের কাগজপত্র রেডি করে ফেলবো।তুমি শুধু নিজেকে ঠিক রেখো আর নিয়মিত শিহাব ভাইয়ার সাথে যোগাযোগটা রেখো।
শায়লা আর কোনদিক চিন্তা না করেই বলে ফেললো,একটু আগে সন্ধ্যা নোমান সাহেব কল দিয়েছিলেন।আমি শাওয়ারে ছিলাম।মিসড কল হয়ে গেছে।কথা হয়নি।
আমি কি এরপর ফোন এলে আমি কি কল রিসিভ করবো? রাহাতের কাছে জানতে চাইলো শায়লা।
হ্যাঁ আপু, অবশ্যই কল ধরবে আর কি বলতে চাচ্ছে তা শুনবে। তুমি তোমার কথা কিছু জানিও না।আবার আইনি ঝামেলা করতে পারে। নিশ্চয়ই রুহি খালা সব জানিয়েছে,,,
শায়লা  মনের ভেতর উৎকন্ঠা নিয়ে যেন সামনে এক বিরাট যুদ্ধ তার মোকাবেলা করতে হবে,,এই ভেবে ভেবে  ধীর পায়ে খালি চায়ের কাপ, ট্রে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।

শিহাব একপ্রস্থ গ্রোসারী আইটেম কেনাকাটা করে ঘরে ফিরেছে।কিচেনে গিয়ে সব গুছিয়ে রাখলো।নিজেই এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে  বারান্দায় বসলো।একটা বেনসন স্টিক ধরিয়ে সাথে চা পান চললো আর   আজ শায়লাকে কাছে পাওয়ার ক্ষনগুলো মনে করে চোখে মুখে এক আনন্দের ঝিলিক খেলে যাচ্ছিল! অবশ্য সে ঝিলিক কেউ দেখছে না,এমন কি শিহাব নিজেও দেখছে না,শুধু ভেতরে ভেতরে  রক্তস্রোতে আর হৃদস্পন্দনে তার সাড়া মিলছে।
চলবে......

কবি মমতা রায় চৌধুরীর কবিতা




অমর একুশ
মমতা রায় চৌধুরী



একুশ মানে মাতৃভাষা
একুশ প্রাণের চেতনা।
একুশ মানে ছদ্মবেশে
লুট চালায় ঘাতকেরা।
একুশ মানে ভাইয়ের রক্তে
রঞ্জিত প্রাণের ভাষা।
একুশ মানে ভাষার দাবিতে
রক্ত ছোটায় শিরায়।
একুশ মানে বাঁচার লড়াই
অহংকার আপামর বাঙালির।
একুশ টাটকা ক্ষতে 
দৃঢ় প্রত্যয় রাখি।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস১১ তম পর্ব 




ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১১ ম পর্ব 
মনি জামান

মেবিন নাছোড় সে নিলয়ের কাছ থেকে আসমা গল্পের শেষ শুনবে,মেবিন আদর মাখা কণ্ঠে বলল,প্লীজ বলো পরে কি হয়েছিল আসমার,
নিলয়ঃ শোন তাহলে,মোমেনা বেগম সাংবাদিক ফিরোজকে সাথে নিয়ে কুমাল্লায় উদ্দশ্য ছেলে জিকুর বাসায় রওনা হল,অবশ্য আগেই সাংবাদিক ফিরোজ জিকুকে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছিলো,জিকুর মাকে নিয়ে ওদের বাসায় যাচ্ছে সংবাদটা।জিকু খবরটা পেয়েই আসমাকে বলল,মা আর ফিরোজ আসছে আজ আমাদের বাসায় আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে,আসমা খবর শুনেই আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করলো,আজ আসমা খুশি আল্লাহ তারপ্রতি মুখ তুলেছে,আসমা আজ খুব খুশি শাশুড়ি আসছে শুনে।আসমা জিকুকে বলল,শোন আজ আম্মা প্রথম আসছে কেনাকাটা করতে হবে সব,জিকু বলল,হ্যাঁ আমিও ভাবছি বাজার করতে যাবো তবে কি কি কিনতে হবে লিষ্ট করে দাও আসমা আগেই লিষ্ট করে রেখেছিল সেটা জিকুকে দিয়ে বলল,এগুলো সব নিয়ে এসো লিষ্ট অনুযায়ী দেখো আবার কোনটা বাদ না পড়ে বলেই জিকুর হাতে লিষ্ট ধরিয়ে দিলো  জিকু লিষ্ট নিয়ে বাজারে চলে গেলো।আসমা আজ বাসা বাড়ি সব সুন্দর করে গোছগাছ করলো মনের মত করে,কারণ শাশুড়ি আসবে কি যে খুশি লাগছে আজ আসমার,জিকু মায়ের জন্য বাজার করলো তারপর শাড়ি এবং আনুসাঙ্গিক সব কেনাকাটা করে দুই ঘন্টার ভিতর রিক্সায় করে সব নিয়ে বাসায় চলে এলো।আসমা আর জিকু দুজনে মিলে সব কাজ করলো তারপর রান্না শেষ করে দুজনে গোসল সেরে মা এবং ফিরোজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।দেরি দেখে জিকু ফিরোজের কাছে ফোন করে জানতে চাইলো মা আর তুই এখন কোথায়,ফিরোজ বললো এইতো কুমিল্লা বাস স্টান্ডে নামলাম মাত্র।জিকু বলল, অপেক্ষা কর আমি আসছি,বলে আসমাকে বলল,আমি মাকে আনতে যাচ্ছি তুমি বাসায় থাকো বলেই বেরিয়ে গেল,বাস স্টেশন থেকে জিকুর বাসায় আসতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লাগে রিকশায়।আসমা নয়নকে কোলে নিয়ে বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শাশুড়ির জন্য অপেক্ষা করছে কখন আসবে শাশুড়ি মোমেনা বেগম,প্রায় দশ পনেরো মিনিট পরে জিকু তার মাকে ও ফিরোজকে সাথে নিয়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো,গেটের সামনে এসেই ফিরোজ আসমার সাথে ছালাম বিনিময় করলো,আর মোমেনা বেগম আসমার কোল থেকে তার পুতা ছেলে নয়নকে কোলে নিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো,আসমা শাশুড়িকে ছালাম দিলো কিন্তু আসমার ছালামের উত্তর দিলো না মোমেনা বেগম,এমনকি বললো না বৌমা কেমন আছো।নয়ন কে কোলে নিয়েই মোমেনা বেগম বাসার ভিতর চলে গেলো আগে আগে, জিকু পিছনে সাংবাদিক ফিরোজ আর আসমা পিছুনে।
শাশুড়ি মোমেনা বেগম আসমার সাথে কথা না বলাতে আসমার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেলো,কিন্তু ফিরোজের দৃষ্টি এড়ালো না বিষয়টি,আসমাকে ফিরোজ শান্তনা দিয়ে বলল, ভাবি মন খারাপ করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।ফিরোজেরও আজ অনেক খারাপ লেগেছে জিকুর মায়ের এই ব্যবহারে মানুষ এতটা অহঙ্কারি হয় কি করে,জিকুর মা মোমেনা বেগমকে না দেখলে ফিরোজ বুঝতেই পারতো না।
সবাই বাসার ভিতরে এলো মোমেনা বেগম ও ফিরোজ তাদের পোশাক পরিবর্তন করে ফ্রেস হলো,কিছুক্ষণ পর জিকু মাকে ও ফিরোজকে ডাকলো খেতে,ফিরোজ ও মোমেনা বগম খাবার টেবিলে এসে বসলো জিকুও বসলো,আসমা ওদের খাবার পরিবেশন করে খাওয়াল শাশুড়ি জিকু ও ফিরোজকে।খাওয়া শেষে মোমেনা বেগম ছেলে জিকুকে বলল,সব গোজ-গাজ করে নিতে বাড়িতে ফিরতে হবে,জিকু বলল,মা কালকে চলো যায়,মোমেনা বেগম বলল,না না এখন গুছিয়ে নাও মাত্রতো দুই ঘন্টার পথ।ফিরোজও বলল,চল জিকু ভাবিকে গুছিয়ে নিতে বল,কি আর করা মায়ের হুকুম।জিকু আর আসমা সব গোছগাছ করে নিয়ে জিকু ফোন করলো প্রাইভেট গাড়ির জন্য স্টেশনে,একটু পর গাড়ি চলে এলো সবাই মিলে ওদের ব্যাগ গাড়িতে উঠালো তারপর গাড়িতে সবাই গিয়ে উঠে বসলো কিন্তু আশ্চর্য মোমেনা বেগম একটি বারের জন্য হলেও বৌমা আসমার সাথে কথাই বললো না।ড্রাইভার জিকুর কাছে জানতে চাইলো কোথায় যাবেন,জিকু বলল,ভবদা গ্রামে ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো  ভবদা গ্রামের উদ্দশ্য,ফিরোজ মনে মনে ভাবছে আসমার বিষয়টি নিয়ে,এমন হলে আসমার ভবিষ্যৎ কি?আরো ভাবছে বিষয়টি জিকু লক্ষ্য করেছে কিনা,যদি করে থাকে তাহলে ঐ সামাল দিতে পারবে।সমাজের এই উচু নিচু জাত পাত কেন সৃষ্টি করলো সৃষ্টি কর্তা এটা খুব ভাবালো সাংবাদিক ফিরোজকে,আসমার বিষয়টি ফিরোজের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করলো।আসমা অসাধারণ একটি মেয়ে রূপে গুণে শিক্ষা দীক্ষায় আর দশটা মেয়ের থেকে সম্পূর্ণ  আলাদা,কিন্তু আসমার একটাই অপরাধ সে গরিব ঘরের সন্তান।ফিরোজের একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো হাই সৃষ্টিকর্তা তোমার দুনিয়ায় মানুষে মানুষে এত ব্যবধান কেন।


চলবে....