২১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস১১ তম পর্ব 




ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১১ ম পর্ব 
মনি জামান

মেবিন নাছোড় সে নিলয়ের কাছ থেকে আসমা গল্পের শেষ শুনবে,মেবিন আদর মাখা কণ্ঠে বলল,প্লীজ বলো পরে কি হয়েছিল আসমার,
নিলয়ঃ শোন তাহলে,মোমেনা বেগম সাংবাদিক ফিরোজকে সাথে নিয়ে কুমাল্লায় উদ্দশ্য ছেলে জিকুর বাসায় রওনা হল,অবশ্য আগেই সাংবাদিক ফিরোজ জিকুকে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছিলো,জিকুর মাকে নিয়ে ওদের বাসায় যাচ্ছে সংবাদটা।জিকু খবরটা পেয়েই আসমাকে বলল,মা আর ফিরোজ আসছে আজ আমাদের বাসায় আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে,আসমা খবর শুনেই আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করলো,আজ আসমা খুশি আল্লাহ তারপ্রতি মুখ তুলেছে,আসমা আজ খুব খুশি শাশুড়ি আসছে শুনে।আসমা জিকুকে বলল,শোন আজ আম্মা প্রথম আসছে কেনাকাটা করতে হবে সব,জিকু বলল,হ্যাঁ আমিও ভাবছি বাজার করতে যাবো তবে কি কি কিনতে হবে লিষ্ট করে দাও আসমা আগেই লিষ্ট করে রেখেছিল সেটা জিকুকে দিয়ে বলল,এগুলো সব নিয়ে এসো লিষ্ট অনুযায়ী দেখো আবার কোনটা বাদ না পড়ে বলেই জিকুর হাতে লিষ্ট ধরিয়ে দিলো  জিকু লিষ্ট নিয়ে বাজারে চলে গেলো।আসমা আজ বাসা বাড়ি সব সুন্দর করে গোছগাছ করলো মনের মত করে,কারণ শাশুড়ি আসবে কি যে খুশি লাগছে আজ আসমার,জিকু মায়ের জন্য বাজার করলো তারপর শাড়ি এবং আনুসাঙ্গিক সব কেনাকাটা করে দুই ঘন্টার ভিতর রিক্সায় করে সব নিয়ে বাসায় চলে এলো।আসমা আর জিকু দুজনে মিলে সব কাজ করলো তারপর রান্না শেষ করে দুজনে গোসল সেরে মা এবং ফিরোজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।দেরি দেখে জিকু ফিরোজের কাছে ফোন করে জানতে চাইলো মা আর তুই এখন কোথায়,ফিরোজ বললো এইতো কুমিল্লা বাস স্টান্ডে নামলাম মাত্র।জিকু বলল, অপেক্ষা কর আমি আসছি,বলে আসমাকে বলল,আমি মাকে আনতে যাচ্ছি তুমি বাসায় থাকো বলেই বেরিয়ে গেল,বাস স্টেশন থেকে জিকুর বাসায় আসতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লাগে রিকশায়।আসমা নয়নকে কোলে নিয়ে বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শাশুড়ির জন্য অপেক্ষা করছে কখন আসবে শাশুড়ি মোমেনা বেগম,প্রায় দশ পনেরো মিনিট পরে জিকু তার মাকে ও ফিরোজকে সাথে নিয়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো,গেটের সামনে এসেই ফিরোজ আসমার সাথে ছালাম বিনিময় করলো,আর মোমেনা বেগম আসমার কোল থেকে তার পুতা ছেলে নয়নকে কোলে নিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো,আসমা শাশুড়িকে ছালাম দিলো কিন্তু আসমার ছালামের উত্তর দিলো না মোমেনা বেগম,এমনকি বললো না বৌমা কেমন আছো।নয়ন কে কোলে নিয়েই মোমেনা বেগম বাসার ভিতর চলে গেলো আগে আগে, জিকু পিছনে সাংবাদিক ফিরোজ আর আসমা পিছুনে।
শাশুড়ি মোমেনা বেগম আসমার সাথে কথা না বলাতে আসমার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেলো,কিন্তু ফিরোজের দৃষ্টি এড়ালো না বিষয়টি,আসমাকে ফিরোজ শান্তনা দিয়ে বলল, ভাবি মন খারাপ করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।ফিরোজেরও আজ অনেক খারাপ লেগেছে জিকুর মায়ের এই ব্যবহারে মানুষ এতটা অহঙ্কারি হয় কি করে,জিকুর মা মোমেনা বেগমকে না দেখলে ফিরোজ বুঝতেই পারতো না।
সবাই বাসার ভিতরে এলো মোমেনা বেগম ও ফিরোজ তাদের পোশাক পরিবর্তন করে ফ্রেস হলো,কিছুক্ষণ পর জিকু মাকে ও ফিরোজকে ডাকলো খেতে,ফিরোজ ও মোমেনা বগম খাবার টেবিলে এসে বসলো জিকুও বসলো,আসমা ওদের খাবার পরিবেশন করে খাওয়াল শাশুড়ি জিকু ও ফিরোজকে।খাওয়া শেষে মোমেনা বেগম ছেলে জিকুকে বলল,সব গোজ-গাজ করে নিতে বাড়িতে ফিরতে হবে,জিকু বলল,মা কালকে চলো যায়,মোমেনা বেগম বলল,না না এখন গুছিয়ে নাও মাত্রতো দুই ঘন্টার পথ।ফিরোজও বলল,চল জিকু ভাবিকে গুছিয়ে নিতে বল,কি আর করা মায়ের হুকুম।জিকু আর আসমা সব গোছগাছ করে নিয়ে জিকু ফোন করলো প্রাইভেট গাড়ির জন্য স্টেশনে,একটু পর গাড়ি চলে এলো সবাই মিলে ওদের ব্যাগ গাড়িতে উঠালো তারপর গাড়িতে সবাই গিয়ে উঠে বসলো কিন্তু আশ্চর্য মোমেনা বেগম একটি বারের জন্য হলেও বৌমা আসমার সাথে কথাই বললো না।ড্রাইভার জিকুর কাছে জানতে চাইলো কোথায় যাবেন,জিকু বলল,ভবদা গ্রামে ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো  ভবদা গ্রামের উদ্দশ্য,ফিরোজ মনে মনে ভাবছে আসমার বিষয়টি নিয়ে,এমন হলে আসমার ভবিষ্যৎ কি?আরো ভাবছে বিষয়টি জিকু লক্ষ্য করেছে কিনা,যদি করে থাকে তাহলে ঐ সামাল দিতে পারবে।সমাজের এই উচু নিচু জাত পাত কেন সৃষ্টি করলো সৃষ্টি কর্তা এটা খুব ভাবালো সাংবাদিক ফিরোজকে,আসমার বিষয়টি ফিরোজের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করলো।আসমা অসাধারণ একটি মেয়ে রূপে গুণে শিক্ষা দীক্ষায় আর দশটা মেয়ের থেকে সম্পূর্ণ  আলাদা,কিন্তু আসমার একটাই অপরাধ সে গরিব ঘরের সন্তান।ফিরোজের একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো হাই সৃষ্টিকর্তা তোমার দুনিয়ায় মানুষে মানুষে এত ব্যবধান কেন।


চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much