১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৩

অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করবার মতো আকর্ষণীয়  মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" পড়ুন ও অপরকে পড়তে সহযোগিতা করুন  


টানাপোড়েন

সম্পর্ক

মানিক , তোর বাবার প্রেশারের ওষুধ, সুগারের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে ।অফিস থেকে ফেরার পথে একবার নিয়ে আসিস  বাবা? মানিক কোন উত্তর না দিয়ে টাইটা বাঁধছিল আর বউকে তাড়া দিচ্ছিল " কিগো দাও টিফিন টা। যা আজ খুব লেট হয়ে যাবে।' ছেলের এই হন্তদন্ত ভাব দেখে মনীষাদেবী একটু ইতস্তত করতে লাগলো আর একবার বলবে কিনা? কিন্তু বলতে তো হবেই। তিন দিন হল ঔষধ শেষ হয়ে গেছে। তুই শুনতে পাচ্ছিস মানিক। হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি। একবার সোমদত্তাকেও তো ফোনে বলতে পারো বাবার ওষুধের কথা। সব সময় আমাকে কেন বল মা? মনীষাদেবী ছেলের অফিস যাবার পথে আর কোন কথা বাড়ান না। আজকাল মানিকের ভেতরে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে সব সময় সোমদত্তাকে নিয়ে ।ওর বোনকে  হিংসে করে? কথা না বাড়িয়ে ছেলের পথের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। ভেবে পায় না কি করবে? অথচ এ বাড়ির পুরোটাই ছেলের নামে লিখে দেয়া হয়েছে। লিখে দেবার আগে পর্যন্ত বাবা-মাকে কি কেয়ারই না করত মানিক। আজকাল খাবার টেবিলে একসঙ্গে তো বসাই হয় না। আগে খাবার টেবিলে সব সম্পর্ক যেন জড়ো হতো। বাবার পাতের মাছের মাথা ছেলের পাতে , ছেলের থেকে মেয়ের পাতে, সেখান থেকে মায়ের পাতে। এই ভাবেই পাত বদল হতে থাকত ভালো ভালো খাবার জিনিস গুলো ।তারপর সবাই একসঙ্গে সেই মাছের মাথাটা ভাগ করে খেত তাতে যেন রান্নার স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যেত। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে হল , নিশিত বাবুকে  কি বলবে? এমন সময় বৌমা হাঁক দেয় " মা আজকে দুপুরে রান্নাটা আপনি করে নেবেন। আমার সময় হবে না ।আমি একটু বেরোবো। কথাটা কানের ভেতরে ঢুকলো , তবুও  সাড়া দিলেন না মনীষাদেবী ।পরে ঝাঁঝের সুরে এসে বলল-আজকাল এত ধ্যাতলা হয়েছেন কেন? একবার বললে সাড়া দেন না। হ্যাঁ বৌমা শুনেছি। শুনলেই ভালো। বলেই গটগটিয়ে চলে গেল সুরমা। আজকাল প্রায় দিনই ছেলে অফিসে চলে যাবার পর বৌমা বেরিয়ে যায় ,ফিরে আসে ঠিক ছেলের অফিসের ছুটি হবার আগে। মনীষাদেবী ভাবেন তাদের সময় তাদের স্বামী অফিসে চলে গেলে সারাদিন ঘরের কাজ কম্ম আর ছেলেমেয়েদের স্কুল থেকে ফেরার পর কি টিফিন দেবে ,এইসব চিন্তায় মশগুল হয়ে থাকতেন। মনীষাদেবী ভাবেন এখন সময় পাল্টেছে এদের গতিবিধিও পাল্টেছে। কিন্তু রোজ মানিক বেরিয়ে যাবার পরই কেন বেরোতে হয় বৌমাকে । ছেলে বৌমার সম্পর্ক ভালো আছে তো? নাকি সবটাই মেকি।এই ভাবনাটা আজকাল প্রায়ই ভেতরে ভেতরে মনীষাদেবীকে খেতে থাকে।একথাটাও ভেবেছিলেন একবার ছেলেকে বলবেন? কিন্তু ছেলে কি মায়ের কথা বিশ্বাস করবে? রোজ কোথায় যায় বৌমা ,এ প্রশ্ন মনীষা দেবীর। সাতপাঁচ না ভেবে রান্নাঘরের দিকে মনীষাদেবী ছুটলেন আর ভাবতে লাগলেন কি সুখের সংসারটাই ছিল। যখন সংসারে বউ হয়ে ঢুকেছিলেন, শাশুড়ি মা কত আদর করে কাছে ডেকে রান্না-বান্না সব শিখিয়েছিলেন ।কখনো বাপের বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্টটা মনেই হয়নি। আর নিশিথবাবু তো অফুরান ভালোবাসেন। বাচ্চারাও ছোট ছিল। প্রত্যেকে মা অন্ত প্রাণ ছিল। দুই ভাই বোন একে অপরকে সব জিনিসটাই ভাব করে ,ভাগ করে,তারা নিজেদের  মত করে নিত। এই তো মানিক যখন ক্লাস টুয়েলভ পরীক্ষা দেবে তখন ওর প্রচন্ড জ্বর। টেস্ট পরীক্ষা। ভয়েতে ওর বুক শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। তখন ওর পাশে মনীষাদেবী আশ্বাসবাণী শুনিয়েছেন, অভয় দিয়েছেন, সারারাত ছেলের পাশে বসে থাকতে হয়েছে। শরীর খারাপ বলে নয়। পড়ার সময়গুলোতে মা কাছে না থাকলে ওর যেন পড়া মনেই থাকতো না। কত রাত জেগেছেন ।তবু সেগুলো কষ্টের মনে হয় নি। আজ একটা বেসুরো কথা বড্ড মনে লাগে। আজ কাল মায়ের রাত জাগার প্রয়োজন হয় না ।আজ মানিক বড় অফিসের বড় পোস্টে আছে। আজ মানিকের গাড়ি হয়েছে। আজ মানিকের মান সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু মা বাবার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যগুলো যেন একটু শিথিল হয়েছে কোন এক সম্পর্কের কারণে। সোমদত্তাও আজকাল মায়ের খবর নেয় না। বাবা কেমন আছে জানতেও চায় না। ওর রাগ হয়েছে দাদার নামে সব বাড়িটা লিখে দেবার জন্য। মেয়ের রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক । তবুও মানিক বোনের সাথে হিংসা করে।তবে কি দ্রুত সময় বদলে মানুষের মানসিক দিক পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে? আজ মানিক মাকে ছাড়া চলতে পারে। আজ অফিস থেকে এসে মাকে ডাকার প্রয়োজন মনে হয় না। এই তো কবে যেন ,তা প্রায় মানিকের বিয়ের দুবছর আগে ।একবার মনীষাদেবী  তার নিজের দিদির বাড়ি বেড়াতে গেছিল, আর সেই ছেলে ফোনের পর ফোন করে মা কে বিরক্ত করেছে। তখন দিদির বাড়ির সবাই বলত ভাগ্য করে একটা ছেলের জন্ম দিয়েছিস মনি । আজকে সবকিছুই কেমন যেন ইতিহাস মনে হয়। হঠাৎই নিশিথ বাবুর ডাকে সম্বিত ফেরে 'মনি ,আজকেও কি সুরমা বেরিয়ে গেল? রোজ কোথায় যায় একবার জানতে চাওনি? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনীষাদেবী নিশিথ বাবুর কাছে এসে দাঁড়ান। রান্না হয়ে গেছে তোমাকে খেতে দিয়ে দিই। এসো দুজনে একসাথে খাব নিষেধ বাবু বলেন। আর কি সেই বয়স আছে গো? মনিষাদেবী বলেন। কাছে যেতেই নিশিথ বাবু মনীষাদেবীর হাত দুটো ধরে বলেন ,এসো এসো সখা আমার ঘরে এসো।'মনীষাদেবী কোন উত্তর দেন না চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। নিশিথ বাবু বলেন আমি ঘরে থাকি বলে কি আমি কিছু বুঝতে পারি না মনি? সব পারি? তুমি আজকাল খুব কষ্ট পাও না?তোমার ছেলে আজকেও কোন ওষুধ আনবে না। মনীষাদেবী বলেন ' আমার ছেলে ওরকমই নয়, আনবে না ,কেন? যত বাজে কথা। আনলেই ভালো।
মনীষাদেবী ভাবছে সম্পর্ক গুলো সব যেন দূরে চলে যাচ্ছে। ভাই-বোন, বাবা-মা প্রত্যেকের বাঁধন যেন আলগা হয়ে গেছে। বিশ্বাস অবিশ্বাস দোলাচলে জীবন দাঁড়িয়ে আছে। মনীষাদেবী আড়ালে চোখের জল ফেলেন আর ভাবেন ভগবান আমাদের চাওয়া-পাওয়া তো কিছু নেই সব সময় আমার সন্তানদের ভালো রেখো। সব সম্পর্ক গুলো যেন মধুর বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, ভগবান দেখো।





ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৩ ক্রমশ

জয়তী মৈত্র কাঞ্জিলাল


বাড়ি 


স্মৃতি জমে পুরনো দালান 

ব্যথা ঘিরে রাখে অভিমান 

দরজার মলিন কপাটে 

কড়া দুটো বড় বেশি ম্লান।  


এল শেপ ব্যালকনি জুড়ে 

রূপকথা আজও মৃদুস্বরে 

জ্যোৎস্না আঁচল পেতে দিলে 

ধূসর পরীরা খেলা করে। 


কৈশোর মুছে গেছে কার

জীবন তো বহতা নদী 

পিছু ফিরে দেখে না যে কেউ 

হারানো সে নামে ডাকো যদি।।

মুন চক্রবর্তী


 স্বপ্ন সাজে


কিছু ভালোলাগা জমিয়ে রেখেছে কোনো এক প্রহর

সাগরের সীমনায় দাঁড়িয়ে আছে কোনো এক প্রকাশ

জীবন ছন্দের মৌমাছির জমিয়ে রাখা মধুর সন্ধানে 

পত্র লেখা

জল প্রপাতের না বলা কত কথা শোনার অপেক্ষায় তানপুরা 

ছদ্মবেশী মেঘ তারা দেখার দূরবীনে প্রেমের নদী কাশফুলে

গভীর রাতের নির্জনতায় গজল শব্দ বাহারী অজানা দেশের স্বপ্নে--!

দীপান্বিতা রায় সরকার



দাগ 


এই নিস্প্রভ আবহ, রোদ ফুরলে যেমন জমে যায়... 

দীর্ঘশ্বাসের মতো,  যেমন কোনও ছন্দ বিরাগ... 


ঘুমের ভিতর ঘুম তলিয়ে জোৎস্না হাপিস,

চৌহদ্দীর চতুর্দিকে মৃত্যুর দাগ 


রোদ ফুরলে যেমন জমে,  রাত্রির শোক 

ঝড়ের বুকে শিখার মতো সব থেকে যায় 


নদীর  উপর জল থেমে যায়, বাঁক বদলে

এত নিঃসঙ্গতা, বলো, আমি  কোথায়, 

শুধু একটি দাগ ছড়া

zssaew

 jhyeyf

mmnh

 jjdjjc

পূর্ণিমা ভট্টাচার্য ( টুকুন )




যুদ্ধ জয়

 

স্বপ্ন দেখতে চোখ লাগেনা

চাই যে মনের স্তর,

চেতন মন কে আড়াল করে

অবচেতনে তার ঘর।

    মনটাকে হালকা করে

    প্রাণখুলে খুব হাসো,

    সত্যি ভালো থাকতে হলে

    আগে নিজেকে ভালোবাসো।

কল্পনাকে রং লাগাতে

রঙ যদি না মেলে,

মনের যত রঙ আছে

সবকটা দাও ঢেলে।

    কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে

    ইচ্ছে গুলো দেখো,

    যেই ইচ্ছে ছুটে বেড়ায়

    তাকে সামলে রেখো।

নতুন নতুন ভাবনারা সব

যদি উঁকি মারে,

দেখবে তারা মনের ঘরে

কেমন কড়া নাড়ে।

   চিন্তা গুলো যদি কখনো

   দুশ্চিন্তা হয়,

   উপেক্ষা করবে তাদের

   কখনো পাবেনা ভয়।

জীবন যুদ্ধে তবেই যে

হবে তোমার জয়।

        .

ফরমান সেখ


প্রকৃতি


চারিদিকে     ভরে গেছে

    সবুজেরি শোভায়,

মাঠে মাঠে   রাখাল বালক

      গরু চরে ডোভায়।

নদীর কূলে   নৌকা মাঝি

     সারাদিন নৌ বাহে,

চারিদিকে   কত মানুষ

      কত কথা কহে।

গগন কোলে   সোনার রবি

     ঝিকিমিকি জ্বলে,

মাঠে মাঠে   চঞ্চল শিশু   

     হাসি হাসি খেলে।

চাষী ফিরে   মাঠে হতে

     নিয়ে লাঙল-গরু,

পাখিরা সব    ঝাঁকে ঝাঁকে

      বাঁধায় মিঠা করু।

ডালে ডালে    ঝুলে বাদুড়    

     হয়ে ফলের মতন,

গাছেরা সব   চারিদিকে  

    সেজেছে সে নতুন।

ভ্রূমরেরা মধু   খেয়ে

   ভ্রূমে ফুলে ফুলে,

কত গুলা    হুনুমানে

   হাসে হৃদ খুলে।

রাস্তা-ঘাটে  চলে যত

  রঙ বে-রঙের গাড়ি,

উঁচু নিচু    চারিপাশে

  কত লোকের বাড়ি।