মোবাইলে টাইম পাশ, সম্বৃদ্ধ উল্লাস সাহিত্য হাসি ঠাট্টা খুনসুটি বিন্দাস পড়তে হবে নইলে মিস করতেই হবে। মোবাইল +91 9531601335 (হোয়াটসঅ্যাপ) email : d.sarkar.wt@gmail.com
৩০ এপ্রিল ২০২২
মমতা রায় চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬৬
উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৬৬
মন কেমন করা বিশেষ দিন
মমতা রায় চৌধুরী
আজ তো সেই বিশেষ দিন। রেখার কাছে বিশেষ দিনটির বিশেষ করে তোলার মতো কেউ নেই। আসলে বরাবরই সে তাকে কখনো হাইলাইট করার চেষ্টা করে নি। মা থাকলে একটু পায়েস রান্না করে খাইয়ে দিত। মা ,কাকিমা ,জেঠিমা জ্যাঠা, বাবা ,কাকা সবাই মিলে বাড়িতে সেদিন একটু অন্যরকম খাওয়া-দাওয়া হত বড়দের আশীর্বাদ নেয়া হতো ,প্রণাম করা হতো, এই চলত। গিফট হিসেবে কি পাওনা হত । অনেক কিছু। সবথেকে বড় প্রাপ্তি।মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ ,কখনো বা কোন গল্পের বই ,কবিতার বই ,আসলে এই বিশেষ দিনগুলোতে সেই গল্পের বই গুলো, কবিতার বই, উপন্যাস। মনে হতো যেকোনো নতুন রাইটারের বই এনে দিলেই খুশি । আজ সবই নস্টালজিক ।পাশের বাড়ির নীলদাও ওই দিনটার কথা জানতো না কিন্তু একদিন হঠাৎ করে বাড়িতে এসে দেখছে বড়রা সবাই আশীর্বাদ করছে। পায়েশ খাওয়াচ্ছে ।তখন এসে পড়াতেnঅবাক হয়ে গেছিল জিজ্ঞাসা করেছিল 'কাকিমা আজকে কি ননীর জন্মদিন?'
কাকিমা বলেছিল'মেয়েদের আবার জন্মদিন।' আমরা ওকেওই দিন আশীর্বাদ করি, সুস্থ থাকুক ভালো থাকুক। আর প্রকৃত মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠুক ।এই টুকুই বাবা আমাদের
কাছে ।জন্মদিন অন্যভাবে সেলিব্রেট করা হয় না কখনো।'
আজ দিন বদলেছে মা নেই, বাবা নেই ,কাকিমা প্রতিবার সেই দিনটা আসলেই আগে বলতেন 'ননী মা,তুমি আমার আশীর্বাদ নিও।'
" এবার ও কাকিমা দিনটার কথা মনে করিয়ে দেয় '।নইলে তো দিনটা কেমন একটা পানসেপারা , আবছা, অস্পষ্ট তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবুও আজকের এই ঝাপসা হয়ে যাওয়া তপ্ত মনে স্নেহের উত্তাপ বড্ড কাছে টানে।রেখা ভাবে ওই দিনটা আসা মানেই তো একটা করে বসন্ত পার হওয়া ,জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এক একটা রঙিন দিন। এইসব ভাবতে ভাবতে স্কুলে গেছে ।হঠাৎ করে প্রথম ক্লাস করে আসার পর, যখন ফোন বাজে ফোনটা রিসিভ করতেই পার্থ বলে ' শুভ জন্মদিন
বৌদি । তুমি অনেক অনেক ভালো থেকো, সুস্থ থেকো । নীরোগ থেকো।'
পার্থর ফোনটা পেয়ে একটু অবাক হয়ে
গেছে । বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলে।
পার্থ বলে 'আপনি এতদিন এসব কথা বলেন নি কেন?'
রেখা বলে 'এত বছর হয়ে গেছে কখনো তো এভাবে সেলিব্রেশন হয়নি। এ জন্য জানানো হয়নি।ম এই দিনটিকে ঘিরে একটা মজার ব্যাপার আছে। আসলে এই জন্মদিন আর সার্টিফিকেট এর জন্মদিন আলাদা। তাই হয়তো সেই ভাবে হাইলাইট হয়নি ।এ বছরটা যেন একটা অন্যরকম মাত্রা পেল এ বছরটা খুবই ভালো লাগছে ।প্রতিবছর আরও দুজন ছাত্রী উইশ
করে lওরা জানতে পেরেছিল কথায় কথায় দিনটাকে মনে রেখেছে। এদের জন্য বুকের ভিতর মনের চোরা কুঠুরিতে কোথায় যেন একটা ভালোবাসার জায়গা তৈরী হয়ে গেছে আর এই বিশেষ দিনে ওদের সেই শুভেচ্ছা বার্তা পেয়ে রেখার ভীষণ ভালো লাগে। তাই একটু কথা বলতে দেরি হয় তারপর বলে "ও থ্যাঙ্ক ইউ।
এতগুলো বছর বৌদি তুমি আমাদের ফাঁকি দিয়েছে এবার কিন্তু জন্মদিনে আমাদের খাওয়াতে হবে।
রেখা বলে আমার জন্মদিন তো সেভাবে আমরা পালন করি না ,পার্থ, জানবে কি করে বলো,?
এবার তো আমরা জানতে পেরেছি ।এবার কিন্তু খাওয়াতে হবে বৌদি ।'
রেখা বলে" ঠিক আছে খাবে ।খাওয়ার জন্য তোমাকে জন্মদিনেই খেতে হবে ,এমনকি কেউ দিব্যি দিয়েছে?
কারণ আছে বল তোমাকে তো কতবার বলেছি তুমি কি না এক কাপ চা খাওয়ার তোমার সময় থাকে না। ঠিক আছে তাই হবে।
"থ্যাংক ইউ বৌদি।'
"ইউ মোস্ট ওয়েলকাম।'
ফোনটা রাখতে না রাখতেই আবার ফোন
এবার রেখা দেখছে রিম্পা দি ফোন করেছে।
'হ্যালো।'
শুভ জন্মদিন রেখা খুব খুব ভালো থাকিস তুই সারাটা জীবন এভাবে আনন্দে কাটাস সুস্থ থাকিস।
রেখা অবাক হয়ে গেল বলল' কি বলছো তুমি?'
"কি বলবো অবাক হচ্ছিস?'
'তুমি কি করে জানলে?'
"এতদিন একসঙ্গে কাটিয়ে আসলাম। কখনো তোর জন্মদিনের কথা বলিস নি।"
হ্যাঁ আমি কখনো চাইনি আমার জন্মদিন হাইলাইট "হোক।'
'এখন তো সেটা হাইলাইট হয়ে গেল।'
'তুমি কি করে জানলে?'
'আরে ফেসবুক দেখিস নি?"
"না তো সময় পাইনি।"
"কেন কে দিয়েছে?"
" পার্থ ছেড়েছে তার সাথে মনোজ আরো কাকে কাকে যেন ট্যাগ করেছে।"
"কি বলছ?"
'আমি কি করে জানব বল? তুইতো কখনও আমাকে আপন ভাবিস নি ,বলিস নি।'
"তুমি জানো যে তুমি আমার কাছে কতটা ।তুমি আমার সারাটা আকাশ জুড়ে।'
শেষ পর্যন্ত রিম্পা দি বলে "আমাকে ফেসবুকে দিয়ে দিল।"
"তো কি হয়েছে ভালোই তো হয়েছে?
দেখ কত কমেন্টস করেছে।
তোর বাড়তি পাওনা লেখিকা হিসেবে।
শোন তোর গিফট পাওনা থাকল এখন আমি রাখছি কেমন?"
"তোমার ক্লাস আছে?'
"হ্যাঁ রে। নইলে এত তাড়াতাড়ি ফোন ছাড়তাম?"
"ঠিক আছে। পরে কথা হবে।"
এরমধ্যে বড়দি ডেকে পাঠালেন।
পঞ্চমী দি এসে বলল 'রেখাদি বড়দি আপনাকে ডাকছেন।'
"হ্যাঁ যাচ্ছি।'
বড়দি আ সব?'
মিষ্টি হাসি হেসে বললেন 'আরে রেখা এসো, এসো, এসো।''
"শুভ জন্মদিন রেখা, খুব খুব ভালো
থেকো ,সবসময় হাসিখুশিতে থেকো, সুস্থ থেকো।:
রেখা বলল থ্যাংক ইউ বড়দি।"
তারপরে রেখা গিয়ে বড়দিকে প্রণাম করলো।
বড়দি বলেন" এসো তুমি আমার বুকে এসো।'
বড়দি একটা সুন্দর গোলাপের বুফে আর একটা কবিতার বই উপহার দিলেন।"
রেখার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে । বড়দি বললেন রেখা তুমি কাঁদছো আজকের দিনে।"
"আমার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বড়দি। আমার মায়ের কথা ,বাবার কথা, আমার যৌথ পরিবারের সকলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আর এই কবিতার বই এটা আমার খুব পছন্দের ছোটবেলায় খুব ভয় পেতাম বড়দি।"
সেই ছোটবেলার দিনটা ফেরত পেলাম।
আজকের এই কান্না আমার আনন্দের কান্না।
বড়দি বললেন' এতদিন তো আমরা জানতাম না তোমার সার্টিফিকেটের যেটা সেটাই জানতাম কিন্তু কখনো তো তুমি সেলিব্রেট করো নি তাই ভাবলাম হয়তো জন্মদিনকে ঘিরে গেছে ।তোমাদের বাড়িতে আছে অনেকে তো মেয়েদের জন্মদিন সেলিব্রেট করে না ,এরকম কিছু আছে তাই ভেবেছি।'একদম ঠিক ভেবেছেন বড়দি আমাদের বাড়িতে মেয়েদের জন্মদিন সেলিব্রেট হয় না শুধু পায়েস রান্না করে মা দিতেন।
বড়দি বলেন 'কিন্তু দেখো, কি অদ্ভুত আমাদের বাড়িতে কখনও মেয়েদের জন্মদিন সেলিব্রেট করা হতো না শুধু মা পায়েস রান্না করে কোনরকমে দিতেন।
বড়দি বললেন অথচ দেখো এত বছর পর আবার সেই দিনটা সকলের সামনে প্রকাশ্যে আসলো।
"তোমার আজকে তুই টিফিনের পড়ে ক্লাস নেই তুমি আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেও।
রেখা বলল "থ্যাংক ইউ বড়দি।"
তাহলে বড়দি আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।
ঠিক আছে এসো সাবধানে।
রেখা তাড়াতাড়ি স্টাফ রুমে এসে খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে অন্যদের কে বলল আসছি।
বাকিরা সবাই বলল এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছ। রেখা বলল" আমার একটু দরকার আছে তাই।'
বেড়াতে যাবে ঠিক তখনই অনিন্দিতা ঢুকলো ঢুকেই প্রথমে রেখার কাছে গিয়ে বলল শুভ জন্মদিন রেখাদি। খুব খুব ভালো থেকো।"
অনিন্দিতার গেছে পরে কথা বলল রেখার আকাশে অনেক তারা গিরে যে অন্ধকার ছিল আজকে যেন অনেকটাই কেটে গেল।
তোদের ডাক্তার দেখানো হয়েছে?
না গো এখনো কয়েকদিন বাকি আছে?
এখন কি বুঝ ?
এখন কেমন বুঝছিস?
আগের থেকে অনেক ভালো।
যা"ক বাবা যে যেভাবে পারে ভালো থাকুক
তোকে একটা কথা বলি তুই এখন তোর বাচ্চার দিকে ধ্যান দে।
হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছিস।
অনিন্দিতা বলে আমার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে তো ?
রেখা বলে "কেন ঠিক হবে না।"
'আমি তোমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি রেখা দি। আজ তার ফল ভোগ করছি।"
রেখা বলে "না ,না এভাবে কেন বলছিস।
প্রত্যেকের জীবনেই কিছু খারাপ সময় আসে আবার ভালো সময় আসে।
খারাপ সময়ে আমরা একটু ভেঙে পড়ি।
এই অন্ধকার চিরদিন থাকবে না রে।"
অনিন্দিতা বলে "তোমরা সবাই আশীর্বাদ করো আমি যেন আমার ছেলেটাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারি।'
"সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না।আমি এখন আসি রে।'
"তুমি এখন চলে যাচ্ছ?"
"হ্যাঁ রে'
অনিন্দিতা হেসে বলল" দাদা কোথায় স্পেশাল কিছু সেলিব্রেশন করার জন্য ভাবছে। রেখা এক গাল হেসে বেরিয়ে গেল।
রেখা মনে মনে ভাবতে লাগল মন কেমন করা এই বিশেষ দিন। এটা যেন বিশেষ হয়েই থাকে। আজ রেখার ইচ্ছেগুলোকে নীল খামে ভাসিয়ে দিল।
।
কবি সেলিম সেখ এর কবিতা "খুশির ঈদ"
খুশির ঈদ
সেলিম সেখ
ঈদ মানে বছর ঘুরে
আসে যে খুশির দিন,
তাই তো দেখি অবুঝ শিশু
করছে তা ধিন ধিন।
ঈদের খুশি সকল কোণে
ছড়িয়ে পড়ুক আজ,
সকলে সেজেছে নতুন রঙে
পেয়ে নতুন সাজ।
ঈদের দিনের খাবারের গন্ধে
মন মেতেছে আবার,
বছর ঘুরে খুশির দিন
হয় না দেখা সবার।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলে
চলেছে ঈদগাহের দিকে,
আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে
চলে সে ধিকে ধিকে।
ঈদের দিনের নামাজ শেষে
করি শুরু সবে খাওয়া,
শান্ত বিকেলে অধীর মনে
হয় শুরু দূরে যাওয়া।
মুক্ত আকাশে মুক্ত বাতাসে
ওড়ে সকলের মন,
চায়না সে কভু থামতে
চলতে চায় সারাক্ষণ।
পবিত্র এই খুশির ঈদ
কাটুক সবার ভালো,
সকলের মনে জ্বলে উঠুক
ভাতৃত্ববোধের আলো।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)