১৪ মার্চ ২০২১

সৌমিত বসু


 


মায়া বৌ - ১১


একটা মানুষ আর একটা মানুষকে ডাকতে গিয়ে দেখে 

দুটো মানুষের মধ্যে দিয়ে চলে যাচ্ছে

এক তীব্র মালগাড়ি।

এক একটি বগির ফাঁক দিয়ে 

সে দেখার চেষ্টা করে ,কিন্তু 

ঝাপসা ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না ।


তখন সে ফিরেও যেতে পারেনা আবার পাতের ওপর ঝাঁপিয়েও পড়তে পারে না।সে নিশ্চিত ট্রেন চলে গেলে

তার জন্য পড়ে থাকবে শুধুই হুইসেল।


তখন সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আত্মহত্যা  করে।



মধুমিতা রায়




ইচ্ছেকথা...


কখনও ইচ্ছা করে

এলোমেলো সমস্ত ভাবনা নিয়ে

নদীর কাছে বসি


রুক্ষ যে পথটা 

চলে গেছে দূর থেকে দূরে

নদীর পাশে এলে

সেও খানিক নরম হয়ে ওঠে।


তারও ইচ্ছে জাগে

তার দুপাশে কৃষ্ণচূড়ার মায়া থাকুক

যত্নমাখা ছায়া থাকুক।


ভাবনাগুলো আকাশের সাথে

গল্পে মাতে

পানকৌড়ির মত ডুব দেয়

তারপর পথকে বলে....

ভালবাসি তো!


রুক্ষ পথটা কঠিন হবার চেষ্টা করেও

হেরে যায়

মায়া আর ছায়া তাকে কখন যেন

ভিজিয়ে দিয়ে গেছে!



ওয়াহিদা খাতুন




     


ধানক্ষেত


আঁকাবাঁকা তরঙ্গে বাতাসে তোলে দোল,

সবুজ বনটিয়া হয়ে মিলেছে পাখা ;

তশরি-পরশ নিতে ডাকে কচি কোল;

হিমেলী বায়ুতে মুদিত সবুজ শাখা ;

অপ্সরীর প্রাঙ্গণ জুড়ে সূর্য-কিরণ--

তার আলোর বিটপীতে শিশির-ঘ্রাণ ;

সবুজের আঁচলে দক্ষিণা সমিরণ--

ধানক্ষেত জুড়ে কচি শিসের রৌদ্রস্নান !


মেরুকন্যা হয়ে কুয়াশার শাড়ি পরে

গায় ফসলের গান;বসে আনমনে--

বুকে খেলে কচি শিশু দেখে মন ভরে--

শতাব্দী-শান্তনা শুনি এ সবুজ রণে--


দোদুল্যমান ধানশিসের স্নিগ্ধ বায়ু--!

মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিলো প্রতিটি স্নায়ু--!!



রচনাকাল:--১২/১২/২০২০ সকাল ৯টা ৩০মিনিট! (সনেট নং ৬৪)

কবি মিশ্রর




তোমাকে প্রাক্তন করিনি


তুমি কি সেই আগের মতোই আছো?

সেই অভিমানী,চাপা রাগ, অর্ধেক কথা

ভুল বোঝা তোমার অভ্যাস ছিল-


ভুল বোঝা তোমার অভ্যাস ছিল-

কথায় কথায় থাক বলে ফোনটা রেখে দেওয়া

সব ই তো মেনে নিয়ে ছিলাম

তবে কেন হারিয়ে গেলে ?


জানো তুমি, আজ ও সন্ধ্যাতারা এসে খবর দেয়, তোমার ভালো থাকা-মন্দ থাকা..


ঝিঁঝিঁ পোকা, জোনাকি,ওরা হাসিয়ে কাঁদিয়ে যায়

তোমাকে ভুলে থাকার জন্য,


নীড় ভাঙা পাখি,ও জানে আমাদের কথা..

শিশির ভেজা স্থলপদ্ম,ওর কাছে আমরা ঋণী।


আমাদের ভালোবাসা একমাত্র ওরাই জানে...


না, তোমাকে আমি প্রাক্তন করিনি-

প্রতিটা দিন এঁকে চলি তোমার মুখ, প্রতিটা মুখের ভীড়ে--


কোন দিন হয়তো ভুল করেই ফিরে আসবে আমার কাছে।

ড,সৈয়দ আজিজ




মানুষ



সেদিন রমনা পার্কে এক অপরাহ্নে 

ঘুরছিলাম উদ্দেশ্যেবিহীন,আনমনে 

সবুজের ছায়াঘের মায়াঘেরা পথে 

হঠাৎ পড়ল চোখে কোথা হতে 

এক লীলাসঙ্গিনী কিংশুক বৃক্ষতলে 

যৌবন রসের বহ্নিশিখায় লীলাচ্ছলে 

বসে খাচ্ছিল গান বেসুরে দোলে দোলে,

এক শীর্ণ শুভ্র সদ্যযাত শিশু কোলে 

অনুসন্ধানী চোখে ভীড়লাম কাছে সন্তর্পণে

কী জানি কী ভাবে,যদি দেখে পরিচিত জনে?

পসারিনী শিশুকে চামচে দুগ্ধ করাচ্ছিল পান

পরম তৃপ্তিতে,যতনে আগ্রহে সঁপে প্রান 

মনে ভাবি জারজ শিশু তবুও তো জন্মদাত্রী মাতা

তাই বুঝি দারিদ্র্য  পরিচর্যায় নেই কোনো কার্পণ্যতা 

প্রশ্ন করি অবহেলা ভরে, নিয়ে অভিঘ্য ভাব 

চামচে কেন? তোমার বুকের দুধের কি অভাব?

 শুধালো সে এ শিশু আমার নয় বটে 

বান্ধবীর, এর জন্মলগ্নেই মাতৃমৃত্যু ঘটে 

এখন ফেলি কোথা?তুলেছি আপনার কোলে 

মাতৃ হীন শিশুসন্তান তাই বেঁধেছি যে অঞ্চলে 

জিজ্ঞাসি মায়া ভরে,অসুবিধা হবে না তাতে?

শুধালো সে কে নেবে দায়িত্ব এই অনাথে?

দেশ,সমাজ,সরকার, আপনি না কোনো দলে?

তাই অনাথেরে নিয়াছি নিজ কোলে, তরুতলে 

 আপনাদের মতো আমাদের নেই সামাজিক সন্মান

আমরা, অচ্ছুত, অমানুষ, সাহেব এবার আপনি যান।

আবীর চ্যাটার্জী




মঙ্গল যাত্রা 


যাবোই যাবো চলে এবার 

দূর অজানার কোন দেশে 

ফুড়ুৎ করে পালিয়ে যাবো 

মঙ্গল এর ঐ দূর দেশে. 


যেতেও পারি চাঁদে আমি 

নয় বা শুক্র গ্রহে 

যাবোই যাবো চলে আমি 

দূর অজানার কোন দেশে. 


নেইকো সেথায় দলা দলি 

হানা হানি নেই সেথায় 

দূষণ মুক্ত পরিবেশে 

যাবোই আমি চলে এবার. 


মা বোনেদের নেই কোনো ভয় 

নেইতো সেথায় বলাৎকার 

নেইতো সেথায় নিন্দা চর্চা 

আমি হবো রাজা সেথায়. 


নেইতো সেথায় প্রধানমন্ত্রী 

মন্ত্রী সান্ত্রী নেই সেথায় 

পুলিশ কর্মী লাগেনা সেথায় 

অপরাধতো নেই সেথায়.  


ভাত কাপড়ের নেই চিন্তা 

নেইতো সেথায় কোটি প্রাণ 

হাতে গোনা মানুষ সেথায় 

নেই তো সেথায় কোনো দূষণ. 


যাবোই যাবো চলে এবার 

দূর অজানার কোন দেশে. 


মঙ্গলটা কাছে পিঠে 

অনেক বার গেছি সেথায় 

অনেক আছে চেনা জানা 

আপন কিছু আছে সেথায়. 


তোমরা যদি চাও গো যেতে 

মঙ্গলের ঐ দূর দেশে 

নামটি লিখে পাঠিয়ে দাও 

থাকবো আমি তোমাদের পাশে. 


আমি কিন্তু যাবো সেথায় 

থাকবো না আর এই দেশে 

দলা দলি হানা হানি 

করো তোমরা এখানে বসে.

শ্যামল রায়




হাতটা ধরো


ছেড়ে যাওয়ার আগে হাতটা ধরো

বুকের সেই চেনা গন্ধ ভাগ করে নেব

আমি তো ভালোবাসি তোমাকে।

এখনো ভুলিনি কপালের টিপ,, কাজল আঁকা চোখ

দু ঠোঁটে লিপিস্টিক, নীল শাড়ির কথা

হারায়নি কথাগুলো

আমি তো ভালোবাসি তোমাকে।

সেদিন হাত ছুঁয়ে ছিলাম

তুমি বলেছিলে সব ঠিক আছে

দুটো মন একাকার হয়েছিল

এসব দেখেছিল ইটের দেওয়াল 

আর চারপাশের গাছপালা

দুই হাতের স্পর্শ গুলো

এখনো ঢেউ খেলে যায় শরীরের ভেতর

আমি তো ভালোবাসি তোমাকে।

আন্তরিক নির্ভেজাল ভালোবাসায়

বুকে টেনে নিয়েছিলে

এসব কথা এখনো সূর্যের মতো

আমার হৃদয় জুড়ে  আলো হয়ে আছে

এসো আগের মতো মুখোমুখি বসি

তুমুল বিতর্ক হোক আমাদের

চোখের জলে ভেসে যাক তিলোত্তমা

নন্দন চত্বর কিংবা ভিক্টোরিয়া।

জ্বলে উঠুক রাজপথে আলো

দুই হাত ধরো বুকের চেনা গন্ধে

ফের নির্মাণ হোক ভালোবাসাবাসি।

বাহাউদ্দিন সেখ




ভালবাসার বিরহ

              


বসে রয়েছি তোমার বিরহের পথে

ভাবছি আসবে সেই জ্বলন্ত সাইক্লোল উল্কার তৃষ্ণা নিভাইতে।

আজও যে তোমার কথা ভেবে ভেবে

 পথে পাগল রয়েছি আমি

মেঘের শব্দ গর্জন ভেঙ্গে তুমি আসবে মৃত্তিকা ভূমির বর্ষা মেঘের উর্মির স্রোতের ঢেউয়ে।

নিশি রজনী রাত্রি আর কত দিন ভাসবে নুন্যতা অশ্রুজল নয়নে

আজ যেন বসন্তের কৃষ্ণচূড়া নেমেছে তবুও যে হৃদয়ের আঙিনায় ফুটেনি ডালে ডালে কৃষ্ণচূড়া ফুল।

শুধু হৃদয় অঙ্গে রহে কৃষ্ণচূড়া লাল জলন্ত আগুন

বিরহের পথে মৃত্যু নাই শুধু দেখি প্রলয়কান্ড তাণ্ডব ধ্বংসলীলা।

স্বপন কুমার ধর




 অন্বেষণে


কাকে যে খুঁজছিলাম,কাকে যে খুঁজছি,

দুপুর থেকে বিকেলের,হলুদ রোদ্দুরে চলেছি,

কখনো আবার আষাঢ়-শ্রাবণের গহন কালো মেঘের মধ্যে,

অবিরত দিন-রাত, বিকেল থেকে সন্ধ্যে,

হয়েছে অরন্যের ছায়া, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর,

পূর্ণিমার আলোকে উদ্ভাসিত মন,হয় উজ্জ্বলতর,

রোদ-ছায়া-বৃষ্টির আলো আঁধারে,

অনবরত প্রশ্নের আনাগোনা চলে, মনের গভীরে।


হয়তো বা পেয়েছি, কিংবা পাইনি,

বুঝেছি কি বুঝিনি, অনুভব ও করিনি,

কামনা-বাসনার অদৃশ্য,অতৃপ্ত চাহনি,

অচেনা, অজানায় হয়তো সায় ও দিইনি,

গুমোট ঘরে বদ্ধ যেমন, বেঁচে থাকার বাসনা,

ফুলের গন্ধের দৈহিক রুপ ও জাগায় যাতনা,

অন্বেষণে অন্বেষণে চলমান রয়েছি,

কাকে যে খুঁজছিলাম,কাকে যে খুঁজছি।

অলোক দাস




আমরা 


  গণতান্ত্রিক রক্ষাকবজ বিরোধিতা, বহুত্ব বাদ তো থাকবেই I সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না I কারণ সবাই সমান নয় I যার যা কাজ, সে করবেই I শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হোক সর্বতো I সংবিধান তো তাই বলে I এখন যে খেলা চলছে, কোথায় শেষ কে জানে? রাজনীতির ঢং না    দেখে দেশের জন্যে কাজ কাজ করা যায় I মোনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি আঘাত আমাদের শিক্ষা দেয় I অনেকেই অনেক কথাই বলবে - আমাদের যেটা ভালো, আমরা করবোই I