১০ জুলাই ২০২২

কবি বাবুল চৌধুরী'র কবিতা "ভালবেসে ভাল থেকো"




ভালবেসে ভাল থেকো

 বাবুল চৌধুরী 


কঠোর আমি নই মোটেই 
শুধু নিজেকে বদলে নিয়েছি এটুকুই যা,
আবেগের প্রেমে এতটাই  মজে গেছি 
তাই দূরে থাকি এই ভেবে 
যদি নিজেকে ফেরাতে না পারি !
ভালবাসায় লেনদেন আছে নিশ্চই
তবুও চাই তুমি ভালবেসে ভাল থেকো
দূরে থাক তুমি ভালবাসা লয়ে বুক ভরে। 
না পাওয়াতে সুখ আছে 
বিরম্বনা নেই তাতে কোনো
পেয়ে হারানোর চেয়ে 
না পাওয়াতেই সুখ খুঁজে নিও। 

এজাক্স, অন্টারিও 

কবি নাজিয়া নিগার এর কবিতা "কালের কুটুম"




কালের কুটুম

নাজিয়া নিগার


কী ভীষণ একাকিত্বের নোঙ্গরে
পা রেখে চলে অঙ্কুশ জীবন
ফালি ফালি করে কাটা মনের কোটর
পালের হাওয়ায় পলিমাটির প্রস্তর
যেনো এক মৃত্যুগন্ধা ফুল!
ফোটার অপেক্ষায়
অপেক্ষার প্রহর।

পথে পথ রেখে চলতে ফিরতে
দমকা ধাক্কায়
থমকে রয় বায়োনিক সময়!

কী নিথুয়ায় জড়িয়ে রয় বৈরাগী মন?
ক্লান্ত পাখির শহর
একান্নবর্তীর সারদ বাজায় ঘুমহীন পেঁচা
অথচ,দিনশেষে একা নীড়ে;
মায়ার খঞ্জনি হাতে কালের কুটুম।


কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এর কবিতা "কবির খোয়ারি"




কবির খোয়ারি

রেজাউদ্দিন স্টালিন 


যখন রোদের গান মেঠোপথে করে পায়চারি,
শহরে তখন বাজে শীতাতপ ড্রামের খোয়ারি।

এখন রাখাল নেই কাকে তবে খোঁজে মেঠো পথ,
বাঁশির দরোজা দিয়ে চলে গেছে ঐতিহ্যের রথ।

কার আর ভালোলাগে জানজট কোলাহল দিন,
জীবনের স্বপ্নগুলো হতে থাকে ক্রমশঃ প্রাচীন। 

মোবাইলে ধেয়ে আসে প্রযুক্তির আশ্চর্য সুনামি,
বারুদ আকণ্ঠ খায় সভ্যতার সমস্ত প্রণামি।

মুহূর্ত এসেছে কাছে মহাকাল হারিয়েছে আয়ু,
বাঁচার সংগ্রামে কেউ হতে পারে হয়তো শতায়ু।

একদিন লোলচর্ম অবসাদ  বিষন্ন সময়,
কেড়ে নেবে স্বপ্নদেশ সবকিছু ভার্চুয়াল নয়।

অজর বাস্তব এসে হানা দেয় বুধের অন্তিমে,
ধীরগতি সবকিছু ডুবে যায় প্রজ্বলন্ত
অসীমে।

কবি মোঃ সেলিম মিয়া এর কবিতা আমার প্রিয়া





আমার প্রিয়া

মোঃ সেলিম মিয়া



ডাগর ডাগর নয়ন বানে 
পিলে চমকায় হাসি, 
তুমি আমার কাঙালির ধন
ত্রিভূবনের বাঁশি। 
রাঙা ঠুটেঁ জাগায় শিহরণ 
তুমি সর্বগ্রাসী! 
চুপি সারে হাতটি ধরে 
বুনিয়েছো কত স্বপ্ন, 
আশা নিয়ে বাসা বেঁধে 
তাই তো তুমি রত্ন!
জোনাক জ্বেলে আঁধার ঘুচে
চাইতে কাছে পাওয়া,
ভালোবাসার ফুলদানিতে 
বাসর সাজাতে চাওয়া।
বিয়ের সাজে রাঙা বেশে আসবে যখন ঘরে,
ভালোবাসার করিডোরে 
ভরিয়ে দিও মোরে। 
প্রতিক্ষার বাঁধ ভেঙে আজ
আমার প্রিয়া ঘরে!
সকাল সন্ধ্যা খুঁজি সুখ
তাঁরি ছোঁয়ার তরে।
সুখ খুঁজতে সুকান্তে হারিয়ে যাচ্ছি রোজ,
সংসার সুখে বেজায় খুশি 
জীবন করছি উপভোগ। 
ভালোবাসায় ধৈন্য মোরা চাওয়া পাওয়ার শেষ, 
স্বাদ আল্লাদের হিসেব নিকেশ 
চুকিয়ে দিয়েছে রেশ!
আমার প্রিয়া তুলনা বিহীন
মা হিসেবে অনন্য,
ভালোবাসার নাউ ভাসিয়ে 
তাই তো জীবন ধৈন্য।
সংসার সুখে বেজায় খুশি 
কাটছে ছন্দে দিন।
প্রিয়ার কুলে মাথা রেখে
তাকধিনাধিন ধিন।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস টানাপোড়েন পর্ব ১৮১




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৮১

সবকিছুই অন্যরকম

মমতা রায় চৌধুরী



রেখা শুধু ঘর বার করছে। আর ভাবছে ফোন করছি ফোনটাও কেন ধরছে না। কিছু কি বাড়াবাড়ি হল? চিন্তার ভাঁজ কপালে নিয়ে রেখা ভাবতে লাগলো কিন্তু আজ তো খাতা জমা দিতে যেতেই হবে ।এদিকে তাপমাত্রা45 ডিগ্রি আজ। ফোন করছি ধরে বলবে তো , যেতে পারবে 
কি ,পারবে না ?তাহলে তো রেখা নিজেই বাস ধরে যাবে বা ট্রেনে। রেখা ভাবলো একবার পার্থকে ফোনটা করে দেখলে হয়। যেমনি ভাবা অমনি কাজ। পার্থর ফোন নম্বরটা খুঁজে-খুঁজে ডায়াল করলো।"ও বাবা নট রিচেবল দেখাচ্ছে কেন। কি হলো রে বাবা?'
রেখা দমবার পাত্রী নয়। কিছুক্ষণ ওয়েট করার পর আবার কল করলো। এবার ফোনটা লাগলো এই রিং হচ্ছে। কিন্তু ধরছে না কেন? রেখার যে কতটা পালপিটিশন বেড়ে যাচ্ছে এটা কাকে বলবে? আবার ফোন করে ।এবার রিং হতেই অপরপ্রান্ত থেকে বলল 'হ্যালো।'
রেখা বলল 'পার্থ, আমি বৌদি বলছি।"
পার্থ বললো,," কোন বৌদি?"
সত্যি এরা টেনশনে আছে। আবার বলল তোমার দাদা ওখানে আছে?'
"ও রেখা বৌদি?"
"হ্যাঁ গো।"
"বলছি দাদা আছে,?"
"না তো দাদা তো বেরিয়ে গেছে।"
'কখন বেরিয়ে গেছে?"
"তা মিনিট পনেরো কুড়ি হবে।"
"কেন কিছু হয়েছে?"
"না গো তোমাদের কারোরই ফোন পাচ্ছি না আমার তো চিন্তা হচ্ছে না ?চৈতির বাবা কেমন আছে?'
"ডাক্তার এখনও কিছু বলেন নি ,।এইতো সবে মাত্র ডাক্তার ঢুখলেন।'
"হ্যাঁ, দেখো ঠিক টাইমে পৌঁছে যাবে।"
"আসলে আমার খাতা  জমা দেবার ব্যাপার রয়েছে তো।"
"ও এই জন্যই দাদা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন।'
তুমি কখন ফিরবে?
"এই তো বৌদি ডাক্তাররা কি বলেন দেখি তারপরে বৌদি (চৈতির মা) কে নিয়ে যাব।'
"হ্যাঁ ,হ্যাঁ ওটাই ঠিক হবে।"
"ফোনটা রাখতে না রাখতে ই বাঁশচেরা গলায় চেঁচিয়ে বাড়ি অন্ধকার করে ফেললো জেঠিশাশুড়ি।
রেখা কানটা খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল কি ব্যাপার ঘটেছে।
না কিছু তো হওয়ার কথা তো নয় ।মনোজের ঘরে গিয়ে দেখলো  'তুতু ঠিক শুয়ে আছে।'
রেখা ভারী অবাক হয়ে গেল আর ভাবলো তারপরেও কেন চেঁচাচ্ছেন। ও বাবা এখন তো তার  সাথে গলা জুড়েছে রেখার জা। " একা রামে রক্ষা নেই ,তার ওপর সুগ্রীব দোসর "l।
রেখা বাইরে বেরিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো।
দরজাটা খুলে দেখতে পেল গেটের কাছে বমি করা। এতক্ষণে রহস্যটা উদ্ধার হল। আরে বাবা শরীর থাকলে তো শরীর খারাপ করবেই । যা গরম পড়েছে। তাই এত শোরগোল। আচ্ছা বাবা পরিষ্কার তো তোমরা করবে না ?তাহলে এতো কথা কিসের ?দেখো, নোংরা থাকে, কি থাকে 
 না ?'
যদি থাকে তাহলে নয় কথা বলা যায়। এসব ভাবতে ভাবতে এক বালতি জল নিয়ে ভালো করে ধুয়ে দেয়। সামনে পাইলট ছিল শুয়ে। রেখা ভালো করে আদর করে দিল। উপর থেকে জেঠি শাশুড়ি আর বৌমা তাই দেখে আরো ওদের গা রাগে রি রি l করে উঠলো ।
রেখা ওদের গায়ে হাত বুলাতে লাগল আর বলতে লাগল 'তোদের কি শরীর খারাপ লাগছে?"
অসহায়ের মত তাকিয়ে রেখার কথাগুলো যেন বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। এমন সময় হঠাৎ পেছন থেকেকে যেন বলে উঠলো "কি হয়েছে ওদের?'
রেখা পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখল মনোজ।
"বলল বমি করেছে।'
'এইজন্য গেটের কাছে জল দিয়ে ধোয়া'
"হ্যাঁ।"
এতক্ষণ  তা নিয়ে দক্ষযজ্ঞ হয়ে গেল।
মনোজ গেট লাগাতে লাগাতে বললো"ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে 'এ তো সকলের জানা।
যে যেমন কর্ম করবে তার ফল ভোগ করবে।"
ও সব ছাড়ো তুমি রেডি হয়ে নাও বেরোবো।'
'কিসে যাবে?'
'বাইকে।'
'এত গরমে তোমার অসুবিধা হবে নাতো?'
"একটু তো অসুবিধা হবে ই কিন্তু কি আর করা যাবে বল।"
"ঠিক আছে তুমি রেডি তো আর পাইলট তুলিদের খাবারগুলো সব ভাগে ভাগে রেডি করে যাও।'
"হ্যাঁ আমি রেডি। খাবারগুলো ঠিকঠাক করে সাজিয়ে রেখেছি। সেন্টুদাকে শুধু বলে দেওয়া।"
"সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না ।আমার সব বলাই আছে। চাবি রেখে দিয়ে যাব।"
আচ্ছা শোনো তুমি একটু হালকা কালারের সালোয়ার কামিজ পড়ে নাও ।গরম তো।'
"তুমি খাবারটা  খেয়ে নাও।'
"দাও দাও দাও।"
রেখা খাবার বাড়তে বাড়তে জিজ্ঞেস করল
"ডাক্তার কি বলল চৈতি র বাবার সম্পর্কে।"
"কি বলবে আমরা যেটা ভেবেছি সেটাই।"
"ব্রেন স্ট্রোক।"
এথেকেই ওই একটা অংশ পড়ে গেছে তাই তো অর্থাৎ প্যারালাইসড ।'
"হ্যাঁ একদমই তাই।"
'কি করে পারবে বলতো খরচ চালাতে?'
'হ্যাঁ ,আমি আর পার্থ সেই কথাই ভাবতে ভাবতে গিয়েছি ।বৌদির সামনে সেটা প্রকাশ করি 
নি ।বৌদির চোখ মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে।
মেয়ে জামাই কতটুকু কি করবে কে জানে?'
"এমনিতেই চৈতির বাড়িতে অশান্তি হচ্ছিল এখন তো চৈতী যাই হোক প্রেগন্যান্ট ।এখন একটু ঠিক আছে ।'
"হ্যাঁ ,ঠিকই বলেছ।'
'দেখি আমরা এদিক থেকে  ক্লাব এর থেকে কিছু ম্যানেজ করব ।যতটুকু করা যায় মানুষের 
জন্য ,চেষ্টা করব।'
'নেবে আরেকটু পনির রেজালা?'
'না গো , গরমে আর বেশি খাব না।'
"ঠিক আছে ফ্রিজ থেকে এক বোতল  ঠান্ডা জলের বোতল বের করে নাও ।
"থালাটা কোথায় রাখবো বেসিনে?"
রেখা সানস্ক্রিম  পাউডারটা পাপ করতে করতে বলল হ্যাঁ ,ওখানেই রেখে দাও। রান্না ঘরের দরজাটা ভাল করে লক করেএসো।'
'আমাদের ওইদিকের মিনিগেট লক করে দিয়েছো?"
" হ্যাঁ দিয়েছি মনে হয় ।আচ্ছা ,ওদিকে গেলে একটু দেখে এসো না।'
"হেলমেটটা নিয়ে বেরোও।"
"হয়েছে তোমার?"
" হ্যাঁ,এইতো হয়ে গেছে "(দরজার লক করতে করতে বলল)।
ডুপ্লিকেট চাবি টা সেন্টু দার হাতে দিয়ে যেই গাড়িতে স্টার্ট করতে যাবে ,ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো  রেখা তখন মিলি,তুলি ,পাইলটদের মাথায় হাত রেখে আদর করছে।
মনোজ বললো" এই সময় আবার কে ফোন দিল । গাড়ি চালাতে গাঁড় ফেটে যাবে।'
মনোজ যখন বিশেষ মুডে  থাকে তখন ওই শব্দটার ব্যবহার করে।
মনোজ ফোনটা বের করে বলে 'হ্যালো'
পার্থ বলছি" দাদা,।'
হ্যাঁ বলো?'
"তোমরা কি বেরিয়ে পড়েছ?'
"হ্যাঁ গাড়ি স্টার্ট   দিতে যাবো ঠিক তখনি তোমার ফোন '।
"বলছি চৈতির বর তো এসেছে।'
"ও ভালো খবর তো।"
"পার্থ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল'এদিকে তো অন্য খবর?'
"কেন কি হয়েছে?"
চৈতির বাবাকে তো এখান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে বলছে।"
মনোজ অবাক হয়ে বলল 'এই অবস্থায়! আগে একটু স্টেবল হোক।'
"আর আমি তো একা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি 
না ।তাই তোমাকে ফোন করলাম।"
"বৌদি কি চাইছে?"
"চৈতির বর যখন কথাগুলো বলছিল বৌদি ইশারায় আমাকে না করলো।'
"আরে জামাই তো সুচারু নয় ।এইজন্যেই বৌদি বলেছে।"
"কি করি বলো তো?"
"জামাইকে বোঝাও এই অবস্থায় নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। সে পরে ভেবেচিন্তে ঠিক করা যাবে আর তাছাড়া ডাক্তাররা তো আরো অন্য জায়গায় রেফার করেন নি।
ঠিক আছে বলে দেখি।
ছাড়ছি তাহলে সাবধানে ঘুরে এসো।
ওকে।
ফোন কেটে দিয়ে এই মনোজ খুব তাড়া দিল রেখাকে। তাড়াতাড়ি এসো না?"
"আমি কখন থেকে রেডি তুমি তো ফোনে কথা বলে যাচ্ছ।"
মনোজ বলল"ঠিক আছে নাও নাও ওঠো আর কথা বাড়িয়ো না"।
রেখা দুগ্গা দুগ্গা বলতে বলতে বাইকে উঠলো ।
কিছুদূর আসার পরই রেখা মনোজ কে বলল "অ্যাই দাঁড়াও , দাঁড়াও "।
মনোজ একটু বিরক্ত হয়ে বলল' কি হলো?'
,আমি তো খাতাগুলোই আনি নি।"
মনোজ বললো"তুমি এত বেয়াক্কেল কি করে হলে? যা তুমি জমা করতে যাচ্ছ সেগুলোই তুমিও নিতে ভুলে গেলে?'
"কি করব বল হুটোপাটিতে  ভুলে গেছি ।'
"তবুও থ্যাংকস গড যে বেশীদূর যাযই নি। তাহলে কি হতো বলো তো ?"
"নাও নাও যাও তাড়াতাড়ি দরজা খোলো, খুলে নিয়ে আসো। যত্ত সব অনাসৃষ্টি কান্ড ।"
রেখা ভেতরে গেল দরজা খুলে আর মনোজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে লাগলো আর ভাবলো ওকে এত বকলাম আমার ঠিক হলো না কারণ এতগুলো খাতার চাপ তারপর সংসারের কাজকর্ম, লেখা আছে বেচারার নাজেহাল অবস্থা। ও তো সবসময় টানাপোড়েনের মধ্যেই থাকে । মনোজ ভাবতে লাগলো ''কেন যে রেখার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করে ফেলে।"