২২ অক্টোবর ২০২১

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"




                                                                  অলিখিত শর্ত (য় পর্ব)
                                                                      শায়লা শিহাব কথন 

                                                                      শামীমা আহমেদ 





                                                              রিকশা ভাড়া মিটিয়ে শায়লা দোতালায় উঠে এলো। দোতালায় ওরা থাকে আর নীচতলায় বহুদিনের পুরনো একটি ভাড়াটিয়া পরিবার।
সুখে দুখে একসাথে। অনেকটা ঘরের মানুষের মতই হয়ে গেছে তারা।শায়লার বাবা দোতালা পর্যন্ত বাড়িটি তুলতে পেরেছিলেন। 
এরপর চাকরির অবসরের সাথে জীবনেরও অবসর নিলেন। পরিবারটির আমূল পরিবর্তন  এসে গেলো।শায়লার মা তিনটি সন্তান নিয়ে একেবারেই ভেঙে পড়লেন।
স্বামীর নির্ভরতায় মধ্যবিত্ত পরিবারের মায়েরা স্বামীকে হারিয়ে একা চলতে যেমন 
অসহায় বোধ করেন। শায়লাকেই ধৈর্য্য ধরে সব সামাল দিতে হলো।ছোট ভাই রাহাত তখন কলেজে পড়ছে আর ছোট বোন নায়লা এসএসসির প্রস্তুতিতে।শায়লার অনার্স প্রায় শেষের দিকে ছিল। আর কিছুদিন ক্লাসের পরেই ফাইনাল। তা আর দেয়া হলো না।
একটা চাকরি নিতে হলো সংসারের আয় বাড়াতে। দিন রাত্রির পরিশ্রমে নিজের দিকে তাকানোর সময় হলোনা।আর তখুনি জীবন থেকে  অনেককিছুই খসে গেলো নিতান্তই নিছক অজুহাতে। শরীর ও মন দুটোই ভেঙে পড়লো শায়লার।সে সব দুঃসহ স্মৃতি শায়লা ভুলে থাকতে চায়।জীবনের উঠতি বয়সে ভালোবাসার রঙ লাগতে না লাগতেই তা ফিকে হয়ে গেলো।তবে চলমান জীবনধারা কখনোই থেমে থাকে না। বয়ে যায় আপন গতিতে।তাতে হয়তো পাহাড়সম বাধা, উঁচু নীচু কন্টকময় পথ পাড়ি দিতে হয়। 
শায়লা সবকিছুর সাথেই নিজেকে মানিয়ে নিলো। জীবনকে এক সরলরেখায় নিয়ে এলো।যেখানে শুধু মা  ছোট ভাই রাহাত আর ছোট বোন নায়লা।নিজেকে অচেনা করে রাখল নিজের কাছেই।
দোতালায় দরজায় কলিং বেল দিতেই মা দরজা খুলে দিলো। রাহাত এখনো ফিরেনি?  
শায়লার প্রশ্নে মা জানালেন, না, ওর দেরি হবে জানিয়েছে। সেই কলেজ পড়ুয়া ভাইটি একে একে ইউনিভার্সিটির দিনগুলো পেরিয়ে আজ দারুণ একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছে। বিবিএ এমবিএ করেছে।শিক্ষাগত যোগ্যতায় যেন পিছিয়ে না পড়ে তাতে শায়লার সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল। এখন সোনালী ভবিষ্যৎ উঁকি দিচ্ছে।রাহাতেরও অনেক স্বপ্ন মা বোনদেরকে নিয়ে।দারিদ্র্যতা ঘুচিয়ে আনবে স্বচ্ছল জীবন।
শায়লা ফ্রেস হয়ে মাকে সবকিছু বের করে দেখালো।একে একে সুটপিস, শার্ট, মিলিয়ে টাই আর শেভিং কিটস উইথ ডিওডোরেন্ট। 
সুট পিসের সাথে ওদের দেয়া ফ্রি একটি চমৎকার ব্যাগ।
ছোট বোন নায়লার পছন্দের বিয়ে।ওর অনার্সের পর পাত্রপক্ষও বেশ আগ্রহ করে তাকে গ্রহন করেছে।ওদের পারিবারিক অবস্থাও বেশ ভালো।মাস্টার্স তারাই করিয়ে নিবে।নিজস্ব ব্যবসায় দায়িত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিবেন। এমন পরিবারে আত্মীয়তা করে শায়লার পরিবারকে একটু নিচু হয়েই থাকতে হয়।তবুও মায়ের মন।যতটুকু পারা যায়।
ছোটবেলা থেকেই নায়লা বেশ চটপটে  ও উজ্জ্বল গাত্রবর্ণে শায়লার সাথে বরাবরই তুলনায় এসেছে।মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আর কবে পাল্টাবে? বিয়েটাই যেনো জীবনের মূলমন্ত্র।একটা মেয়ের ভালো বিয়ে হয়েছে বলতে আমাদের সমাজে কোন স্ট্যান্ডার্ড কে বুঝায়? এসব কথা শোনা শায়লার  সয়ে গিয়েছে।
---নায়লা ও মূর্শেদ ওরা সুখী দম্পতি। ছয় মাস হলো বিয়ের।
প্রায়ই গাড়ি হাঁকিয়ে মায়ের বাড়ি বেড়াতে আসে।চোখে মুখে সুখের ছোঁয়া।ওদের দেখে শায়লাও  আনন্দিত হয়!ভালোবাসার মানুষকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া ও সুখী দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যাওয়া এটা ভাগ্যবান মেয়েদের জন্যই লেখা থাকে। 
মা বলে উঠলো, তবে তো ওদের একদিন আসতে বলতে হয়।
ওরা বসুন্ধরাতে শ্বশুরের বিশাল ফ্ল্যাটে আছে। পারিবারিক ব্যবসা।একমাত্র ছেলের বউ।বেশ আদর আহ্লাদেই নায়লার দিন কাটছে।
শায়লা বললো --হ্যাঁ, বলো,, এভাবেই প্রতিটি বিষয়ই শায়লাকে দেখতে হয় যেন মাকে খুশি রাখা যায়।
---কিংবা রাহাত গিয়েও দিয়ে আসতে পারে বা মুর্শেদের সাথে একসাথে গিয়ে টেইলারিংয়ে দিয়ে আসতে পারে।শায়লা ভাবলো, বাবা বেঁচে থাকলে আজ তার জীবনটা অন্যরকম হতো। শায়লা বড় মেয়ে, হয়তো তাকে নিয়েই ভাবনাটা আগে আসতো।
মাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে শায়লা নিজের ঘরে এলো।পাভেলের কথা খুব মনে পড়ছে!
অনার্সের সহপাঠী ছিল।প্রথম বছর থেকেই একটু  একটু ভালোলাগা এগিয়ে যাচ্ছিল।
ফাইনাল ইয়ারে তার পূর্ণতাও এসেছিল।
শায়লার বাবার মৃত্যুতে পাভেল একেবারে পালটে গেলো। শায়লার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। শায়লার খোঁজ রাখা মানেই ভবিষ্যতে তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়া।একটা শিক্ষিত ছেলের এমন ভাবনায় শায়লার মন ভেঙে যায়। আর শায়লাও পারিবারিক কারণে পড়াশুনাটা গুটিয়ে নেয়। একে একে আটটি বছর হারিয়ে যায় ওর জীবন থেকে। 



                                                                                                                                                     চলবে....

তানভীর আজীমি ( এথেন্স, গ্রিস )




মন মানেনা পথের দূরত্ব


জানতে ইচ্ছে করে কেমন আছ তুমি ?
জানি ভালোবাসা নিঃশব্দে গেছে হারিয়ে অজানায়
আকাশের তারাগুলি যেভাবে হারার দীর্ঘশ্বাস ফেলে
অমাবস্যার আঁধারের জালে।

সুখ পাখিরা উড়ে গেছে নিঝুম সন্ধ্যায়
গাছেরা পাতায় ঝরে পড়ে বিদীর্ণ কিরণ যেভাবে
ভোরের সূর্য জেগে উঠে শিশিরের কান্না হয়ে
সারা রাত দিগন্তে প্রত্যাশার স্বপ্ন চোখ
শেষ করতে চায় তার অসীমতার যাত্রা।

সত্যি করে বলো তুমি কেমন আছ আজ ?
জানো ভালোবাসতে হলে অনেক বড় মন চাই
কি করে বলি তোমার আমি রেখেছিলাম
অনবদ্য ভরসার প্রদীপ ভেবে।

সময় বোধ হয়.বোঝে না ভালোবাসার মূল্য
তাইতো জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে এভাবে
দু'হাত দিয়ে সরিয়ে দিলে আমায়
তাই বলে কি মন থেকে সরাতে পারবে কখনো।

যোজন যোজন দুরত্বে চোখ যেন তাই মাপে
মন কি পথের ব্যবধান টা মাপবে হৃদয়ের টানে
অজস্র দুরত্ব হলেও মনের চোখ যেন ঠিক তাই দেখে
যে মনের গহীনে রাখেছিলাম তোমায় যত্ন করে
সেখানেই থাক তোমার স্থায়ী নিবাস।

তুমিও থাকো অসীম সুখে পাখিদের কলতানে মেতে
ভবিষ্যতের স্বপ্ন এঁকে চোখের পাতায়
আমি না হয় হারাই বিদীর্ণ সময়ের চোরাবালিতে  
রাতের অন্ধকারে.নয়নের নীরব অশ্রুধারায়।

মতিউল ইসলাম





অপত্য স্নেহ 


এভারেস্টের চুড়োয় উঠতে চাইনি কখনোই,
কখনোই ভাবিনি সংবাদের শিরোনাম হতে,
দামি গাড়ি দেখে থমকে গেলেও কখোনো ভাবিনি ওটা আমার চাই।

নুন আনতে পান্তা ফুরানো মানুষ আমি
অনেক না পাওয়া আর সামান্য প্রাপ্তির
যোগ বিয়োগে কেটে যায় দিন রাত,
ছেড়া কাঁথায় শুয়ে রাজা হবার স্বপ্ন আমার নয়।

মাসের মাঝে পকেট গড়ের মাঠ,
মাস পহেলার দিনের দিকে তাকিয়ে
কাটিয়ে দিই বছরের পর বছর।
আমার এই নিন্ম মধ্যবিত্ত সংসারে
কোথা থেকে এলি রে তুই?

মনটাকে নিমিষেই করে দিয়ে রাজা,
আমার সমস্ত না পাওয়ায় হিসেব
ভুলিয়ে দিলি আলতো হেসে,
হাজার খুশি ছড়িয়ে দিলি আকাশ বাতাসে,
বাঁকা শিকদাঁড়া সোজা করে উঠে দাড়িয়েছি
স্বপ্ন গুলো পকেট বন্দী করার জন্য।

নুর আদিল সেখ




পাখির পরিবার 



ঘুরে ঘুরে গ্রাম ঘুরে 
আমি চলি পাখির খোঁজে ।
সেজে সেজে সং সেজে 
ঘড়িতে পাঁচটা বাজে ।
বনে-বনে ঝোপে ঝোপে 
কতো পাখি সেজে থাকে ।
তারা সব জেগে ওঠে আর 
খ্যাদ্যের আহারে ছুটে ।
ঝাকে-ঝাকে একে-বেঁকে 
ছবি আঁকে খোলা আকাশে ।
পথে ঘাটে জানালাতে বসে 
গান ধরে সরু ঠোটে  টান দিয়ে  ।
সন্ধের ধ্বনি পেয়ে তারা 
ছুটে সব নিজ নিজ বাসাতে।

শিবনাথ মণ্ডল




জাগো দূর্গা জাগো


শরৎএল আশ্বিনে
ঢাকে বাজে বোল
কচি ধানের ক্ষেতেওঠে
ঢেউয়ের কত দোল।
শিউলী ফুলে সুবাস ছড়াই
কাশফুলের রাশি
ছেলে বুড়ো সবার মুখে
মৃদু মৃদু হাসি।
নতুন বস্ত্র দেখলে দূর্গা
বড্ড খুশী হয়
গরিব দুঃখী সবাই যেন
নতুন বস্ত্র পায়।
মহালয়া এসে গেল
আর কটাদিন পরে
পাড়ায় পাড়ায় পূজোর গল্প
আনন্দে ছড়িয়ে পরে।
সবাই মিলে দেখবো ঠাকুর
শহর থেকে গ্রামে
নতুন পোষাক কিনুক সবাই
অল্প বেশি দামে।
দূর্গাদেবী জেগে ওঠো
ত্রিশূল নিয়ে হাতে
দস‍্যু দানব ঘুরে বেড়ায়
আজকে দিনে রাতে।
মাগো তুমি ছেড়েদাও
আগের মহিষাসুর
শয়তানদের বধ কর মা
যারা এই সমাজের অসুর।।

গৌরীশংকর মাইতি





শিউলি ফুল



শিউলি গাছে শিউলি ফুল
পাতার ফাঁকে ফাঁকে,
শরৎ হাসে মেঘের দেশে
আকাশের বাঁকে বাঁকে।

শরৎ শিউলি গন্ধ ছড়ায়
তিতলি ঝাঁকে ঝাঁকে,
বাউল বাতাস বইছে ধীরে
পথের বাঁকে বাঁকে।

শরৎ শিশির ভোরের বেলায়
ঝরে শিউলি ফুলে,
ঢাকে কাঠি ঢ্যাম কুড়া কুড়
পুজোর ছুটি স্কুলে।

শিউলি ঝরে গন্ধ ওড়ে
শিশির ভেজা ঘাসে,
পুজোর ছন্দ মনে আনন্দ
বাতাসে ভেসে আসে।

কিচিরমিচির পাখি ডাকে
শিউলি গাছের শাখে,
মৌটুসী ঐ নাচছে দেখো
রোদের আলো মেখে।

মৌমাছি ওড়ে দলে দলে
ডানায় ডানায় গান,
শিউলি গাছে নাচছে তারা
পুজোর কলতান।

মোঃ ইমরান হোসেন





শূন্যের সুখ


সর্বহারার মতোই আমি সব হারাতে চাই 
সব হারিয়ে একটা মানুষ, শুন্য জীবন চাই
শুন্য হলো বাঁচার সংখ্যা, শূন্যে শপথ করি
কষ্ট গুলোয় শূন্য দিয়ে পুণ্যর রুপ ধরি।

 সকাল বিকাল যার নামে সাঁই, যপি তোমায় রাখি
তার মুখে আর পেলাম না ক আমার নামের সারি
তাই তো আমি ভীষণ একা, হাজার প্রাণের ভীরে
এক মানুষে সস্তি খুঁজি সুখ সাগরের জলে।

সদ্য প্রেমের তপ্ত জ্বালার সংখ্যা বুকে বয়
শংঙ্কা হিয়ায় সংখ্যা রোগের বিয়োগ ব্যথা হয়
প্রেম হোক তোমার শরৎ-সঙ্গী তোমার ভেতর থাকুক
দোকলা বিহীন আমার জীবন, এমনি করেই বাঁচুক। 

তাই শূন্যে খুঁজি আমার সর্গ, শূন্যে করি বাস
সংখ্যার মাঝে চাই না আমি আমার সর্বনাশ।

ফরমান সেখ




স্মৃতি কথা



যখন আমি  বিদ্যালয়ে
      নব নতুন ঢুকি--
তখন আমি  সবে মাত্র
    নয় বছরের বৈকি!

মনে মনে  আনন্দতে
    উঠতো ভরে এসে,
একলা তবু  স্বপ্ন গুলো
    ফিরতো হেঁসে হেঁসে।

তখন আমি  নব নতুন
    নতুন সকল গুরু--
শ্রেণীকক্ষে  বুকের পাঁজর
      কাঁপতো দুরু দুরু।

জানলা দিয়ে  মন যে আমার
     ছুটতো সর্বক্ষনে,
উড়ান দিতো  বায়ুর পথে
     ঘুরতো বনে বনে।

বিদ্যালয়ে  চলার পথে
     অল্প কিছু স্মৃতি,
বলে গেলাম  তোমার দ্বারে
     গেয়ে গেলাম গীতি।

বাহাউদ্দিন সেখ




          ভোম্বলের ভুড়ি

                         রাম ভোম্বলের অসীম ভুড়ি
                              খাই শুধু ভাত মুড়ি। 
                             দাল দিয়ে মুড়ি খায়
                         একের পরে আবার চাই। 
                             বুড়ি বলে ভাত নাই
                     রাম ভোম্বল করে শুধু খাই খাই। 

গোলাম রববানী




ঘাতকেরা থেকে গেছে
 

কী বলবো আর -
যা বলি তা-ই তো যন্ত্রণার হার,
হেমলক বিষের-ই মতো 
ঘাতকেরা থেকে গেছে মেরে বহুদূর-
তবুও মুগ্ধ করে ক্যানো বারংবার
ধুতরা ফুলের শুভ্রতা-

যন্ত্রণার মাঝে আছে দীর্ঘশ্বাস 
আর চিতানলে পড়ে থাকা ছাইপাঁশ..

২৫ আশ্বিন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ/ কেশবপুর, যশোর।

তহিদুল ইসলাম





দলীয় ইস্তাহার



দলীয় ইস্তাহার প্রতিশ্রুতিতে ভরা
এনেছে একটা দারুন চমক----
পটে আঁকা ছবির মতোই  সুন্দর সুন্দর দেবালয়
ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে
শহরে, মেট্রোপলিটনে ,বন্দরে সর্বত্রয়
এবং সেই সব শহরের প্রবেশ পথে
আকাশ ছোঁয়া স্মৃতিসৌধ গুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে
উপরের দিকে হাত তুলে যেন আহ্বান জানাচ্ছে,
একবার হলেও ঘুরে যেতে
এই," মন্দির শহর" কিংবা,"মন্দির দেশ"।

মন্দির প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য
পর্যটকের কোলাহল আর হকারের শ্লোগানে মুখর
যেন সারা শহর খুশির জোয়ারে ভাসছে।
রাত্রিকালীন জোয়ারের প্রাবল্যতায় সৌন্দর্যায়ন
এবং বিজলী বাতির আলোর রোশনাই
যেন নির্মেঘ আকাশের চাঁদ নীচে নেমে এসেছে
কাঁটাতারে ঘেরা বাগিচার এক উঠোনে
পূর্ণিমা রাতে সবাইকে ভালোবাসতে।
হুরির দল নেচে গেয়ে ভরিয়ে তুলছে
সারা দেশ,সারা শহর।

মন্দিরের এক্কেবারে বাইরের দিকে 
দূর থেকে মরিচীকার মতো সবার মূর্তিভ্রম ঘটে---
রাস্তার দুই ধারে কাতারে কাতারে ধূলোয় ঢাকা মূর্তি গুলো একটা  ছেঁদা থালা হাতে নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে কিংবা বসে রয়েছে।
সবাইকে অবাক করে
যখন তারা  দুটো পয়সা ভিক্ষা চাইল
তখন সকলের ভুল ভাঙলো।
___________

সানি সরকার




বন্ধুকে লেখা কবিতাটি 
 



যাঁর মাথায় ও গালে চুমু এঁকেছি 

তাঁর জন্য লিখছি ফুল, লিখছি জ্যোতি-স্নান... 

হে ব্রহ্মাণ্ড, মনে রেখ, ওঁর প্রতি 
অযুত অভিমান থাকতেই  পারে 
কিন্তু আমার কোনও স্বার্থ ছিল না
আজও নেই 

সত্যিকারের বন্ধুর কাছে কখনও-ই স্বার্থ থাকতে নেই
এ-কথা তুমি জানো, বন্ধু...  

ওঁর জন্যে চুমু, বৃষ্টি, আর গাঢ়  অভিমান

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"২৯

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "

' টানাপোড়েন' ( 'পর্ব ২৯)
'যদি বন্ধু হও'



                                       সারারাত শিখার চোখে ঘুমের দেখা ছিল না। ভোরের দিকে একটু চোখটা লেগেছে। এমন সময় গানের গলা ভেসে আসলো"আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়েছিলে, দেখতে আমি পাই নি তোমায়..।'শিখা কানটা খাড়া করে শুনলো ।অপূর্ব লাগছে। পাশ ফিরে দেখছে বৌদি নেই যে, জিজ্ঞেস করবে গানের গলার আওয়াজ কোথা থেকে আসছে ।আন্দাজ করার চেষ্টা করে শুনলো দোতালার ঘর থেকে। শিখা  উৎসুক ভাবে খাটের উপর উঠে বসলো। আর ভাবলো ' কি মিষ্টি'। গলাটা একটু চেনা চেনা লাগছে। কল্যাণ দার? কাকে জিজ্ঞেস করবে? ওপরের ঘরে উঠে যাওয়াটাও তো দৃষ্টিকটু দেখাবে।'
একটু পরেই গান থেমে গেল। শিখা বাথরুমের দিকে গিয়ে দেখল, লম্বা লাইন আছে ।সে আস্তে আস্তে ড্রয়িংরুমে এসে বসলো। আনমনে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছে। 

এমন সময় বৌদির গলা শোনা যাচ্ছে। শিখা শিখা শি.ই.খ.আ। উঠে পড় অঞ্জলি আছে কিন্তু?'
শিখা সাড়া দিল'বৌদিভাই আমি উঠে গেছি'।

মাধুরী বলল 'বাথরুমে চলে যা।( চিৎকার করে )
শিখা বলল  'আমি লাইনে আছি।'

এদিকে নিউজ পেপার উল্টাতেই একটা ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠল ।কাছে নিয়ে দেখল। আরে এ তো কল্যাবাবুর ছবি? কল্যান বোস ডিলিট উপাধি পেয়েছেন। শিখা ছবিটা বার বার দেখতে লাগলো আর ভাবলো কল্যানবাবুর কত গুন। এরকম লোকের সান্নিধ্য পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এমন সময় হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখে কল্যানবাবু। এ যেন শিশির স্নাত শিউলি ভোরে মনের ভেতরে যে ডাক দিয়েছিল, তার স্পষ্ট ধ্বনি শোনার জন্য ই যেন  অপেক্ষমান ছিল।
শিখা বুঝে ওঠার আগেই কল্যান বলল 'ঘুম হয়েছে রাত্রে?'

শিখা বলল (মনের কথাটা লুকিয়ে) ' হ্যাঁ'
কল্যাণ বলল  'তাই? আপনার চোখ দুটো দেখে তো মনে হচ্ছে না ।মনে হচ্ছে সারারাত ঘুম হয় নি ।চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ কেন? কার চিন্তা করছিলেন?'

শিখা একটু চমকে ওঠার মত বলল,  'আসলে  একটু বেশি রাত্রে শোওয়া হয়েছে তো ,রাত্রে ভালো ঘুম হয় নি।'
কল্যান বলল ' ঘুম না হলে মন মেজাজ ভালো থাকে না।'

শিখা বলল ' আচ্ছা বলতে পারেন, সকাল বেলায় গানটা কে করছিলেন?'
কল্যান বলল  'কেন গানটা আপনার ভালো লাগেনি?'

শিখা বলল 'অসাধারণ লেগেছে ।কিন্তু গানটা পুরোটা শুনতে পেলাম না ।এজন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, আফসোস ও হচ্ছে।'
কল্যাণ  মুচকি মুচকি হেসে বলল ' আসলে শিল্পী মানুষ তো নয় ,এ জন্য সাহস করে পুরোটা গাওয়া হলো না।'

শিখা এবার দাঁড়িয়ে পরলো এবং উচ্ছসিতভাবে বলল 'আপনি গাইছিলেন ?অসাধারণ। অপূর্ব লেগেছে। এত ভালো গান করেন আপনি ?আপনার কত কোয়ালিটি আছে বলুন তো, একটু ধার দিতে পারেন?'
কল্যাণ বলল  ,'একটু আধটু করা হোত  আগে।'

শিখা বলল 'আপনি গানটা কিন্তু ছাড়বেন না। আপনি চালিয়ে যান।'
কল্যান বলল  'তাই?

শিখা বলল  'একদম।'
এরইমধ্যে বৌদি আবার চিৎকার করে ডাকে  'শিখা তোর কিন্তু রেডি হতে সময় লাগবে ।আজকে তো শাড়ি পরবি বলছিলি?'

শিখা বল  'হ্যাঁ ,যাই বৌদিভাই।'হুটোপুটি করে যাওয়ার 
সময়ে শিখার দাদার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। মনোজ ফোনে কথা বলতে বলতে ড্রইং রুমে র দিকে ঢুকছে তখন বলল ' হ্যাঁ র, শিখা, কবে যে তুই হাত পা ভাঙ্গবি, একটু দেখে শুনে চল।? ধরে তোলে আর বলে একটু বসে যা।'

অন্যদিকে সুরঞ্জন ফোনে কথা বলছিল ' ‌মনোজ  রেখাকে নিয়ে আয় না ,এখানে খুব মজা হবে?'
ওপার থেকে কণ্ঠ ভেসে আসছে  'কোথায়?'

সুরঞ্জন বলল  'আমার শ্বশুর বাড়ি‌। গেদে।'
মনোজ বলল  'তুই কি খেপেছিস ,আমি তোর শ্বশুর বাড়িতে যাব? তাছাড়া রেখার  হবে না।'

সুরঞ্জন বলল  'মাধুকে দিয়ে ফোন করাচ্ছি।
মনোজ বলল  'কবে এসেছিস ?তার থেকে আমার বাড়িতে চলে আয়।'

 সুরঞ্জন বলল 'ষষ্ঠীর দিন'।
শিখা কল্যাণের দিকে তাকিয়ে বলল ' আচ্ছা আমি যাই রেডি হয়ে নিই।'

সুরঞ্জন বলল  'বৌদি কিন্তু এবার রেগে যাবে। বৃষ্টি কিন্তু রেডি হয়ে গেছে। তুই এখনো রেডি হতে পারলি না। 'আবার সুরঞ্জন আর মনোজ কথা বলেই যাচ্ছে ফোনে। কল্যান ম্যাগাজিন পড়তে লাগল এবং নিউজ পেপারের নিজের ছবিটা দেখে খুব খুশি হল।
এমন সময়  মন্ডপ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে যারা অষ্টমীর অঞ্জলি দেবেন ,তারা অবশ্যই প্যান্ডেল এসে হাজির হোন।

সবাই অষ্টমীর অঞ্জলি জন্য প্যান্ডেলে গিয়ে হাজির হল।
শিখা তখনও রেডি হতে পারে নি। কল্যান মণ্ডপে গিয়ে বারবার বাড়ির দিকে তাকাতে লাগলো।

হঠাৎই কল্যাণের নজর আটকে গেল শিখার দিকে ।শিখা সবুজ হ্যান্ডলুম শাড়ি, রেড সার্টিনের ব্লাউজ আর হ্যান্ডমেড জুয়েলারি পড়েছে। অষ্টমীতে ম্যাক্সিমাম শাড়ি লাল পেড়ে অথবা হলুদ শাড়ি পড়ে অঞ্জলি দেয় কিন্তু শিখা  যেন একটু অন্য লুকে ধরা দিল। এ যেন স্বর্গের থেকে অপ্সরা নেমে এসেছে মনে হল কল্যানের। তৃষ্ণার্ত চাতকের বুকে শিখা যেন এক পশলা বৃষ্টি।
আর কাকতালীয়ভাবে দেখা গেল কল্যাণও সবুজ পাঞ্জাবি পড়েছে।

বারোয়ারি প্যান্ডেলে সকলে যেন কল্যান আর শিখাকেই দেখছে।

যথাসময়ে অঞ্জলি পর্ব শেষ হলে সন্ধি পূজার জন্য প্রস্তুতি চলছে । সন্ধিপুজোতে প্রত্যেকে মোমবাতি জ্বালছে।তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে শিখা বলল 'একটা দিন তো আমিও জ্বালি।' 

মাধুরী বলল  'এই কল্যাণ এসো প্রদীপ জ্বালো। প্রদীপের শিখায় সব মঙ্গল হোক ।তোমাদের পরের বার যেন জোড়ায় দেখি।'
মাধুর বৌদি সরজু বলল 'আমিও দুর্গা মায়ের কাছে এই প্রার্থনাই করছি রে মাধু। জোড়ায় দেখতে পারলে তবেই আমি খুশি।'

কল্যান বলল ' শিখা আপনি জ্বালান।'
দুজনে মিলে একসঙ্গে প্রদীপ জ্বাললো ,মায়ের কাছে প্রার্থনা করল।

এর ই  মাঝে শিখার বৌদি কল্যানকে বলল ' আমি শিখাকে 'আপনি' করে ব'লো না তো ,ও অনেক ছোট।'
কল্যাণ বলল 'আসলে তা নয় বৌদি। এইটুকু সম্মান তো দিতেই হয় ।ঠিক আছে এরপর থেকে তুমি করেই বলবো।'

সন্ধিপূজা শেষে  কল্যান মাধুকে বলল- 'বৌদি আশেপাশে কটা ঠাকুর হয়েছে  ?'
মাধু বলল 'আগে তো বেশি হতো না ।এখন নাকি বেশ ভালই হয় ।দেখবে ?যাও না ঘুরে এসো। '

কল্যান বললো  'কিন্তু আমাকে তো একজন সঙ্গী দিতে হবে ।'
মাধু বলল' চেনা সঙ্গী নেবে? না অচেনা সঙ্গী নেবে?'

কল্যাণ বলল  'যেটা ভালো বুঝবেন বৌদি।'
মাধুরী বলল 'তাহলে এক কাজ করো ,তুমি বরং শিখা কে নিয়ে যাও ।গ্রামের পুজো ও দেখে নি কখনো। একটু ঘুরে আসুক।'

শিখা বলল  'আমি বৌদিভাই?'
মাধুরী বলল  'কেন তুই গ্রামের ঠাকুর দেখবি না? যা না ,কল্যাণের সাথে ।'

বৌদি বলল ' একটা বাইক দেবো?'
শিখা বলে  'বৌদি ভাই আমি কিন্তু বাইকে যাব না হেঁটে যাবো।'

কল্যান বললো  'পায়ে হেঁটে দেখার মজাই আলাদা সবুজ  স্পর্শ করে  গায়ে মেখে নেবো।শহর মানেই 'হাঁ করে সবুজ খায়'।
শিখা মনে মনে ভাবল কথায় কথায় শুধু কবিত্ব। এটাতো যতদূর সম্ভব শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা র লাইন। না বাবা বলবো না ।প্রফেসর মানুষ ।যদি ভুল ভ্রান্তি হয়।

মাধুরী বললো ' তা বেশ বেশ।'
কল্যান শিখা হাঁটতে শুরু করল।

কল্যান বলল  'হঠাৎ বি এড করতে গেলে কেন? ? তার চেয়ে 'নেট' বা 'সেট' পরীক্ষায় বসো।'
শিখা‌ বলল  'হ্যাঁ ,আমি ভেবেছি। আসলে ভেবেছিলাম বি এড টা করে নেব । তার মধ্যে যদি এসএসসি টা হয় ট্রাই করবো।'

কল্যান বলল   ''তুমি' নেট সেট 'এর জন্য ট্রাই করো।''
শিখা বললো  'কিন্তু আমি যে বি এড এ ভর্তি হলাম।

'কল্যাণ বলল 'ঠিক আছে। ভর্তি হয়েছ? কিন্তু পাশাপাশি এটা পড়ো ।সামনেই দেখবে বলে নেট সেট পরীক্ষা । ক'দিনের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি বেরোবে। আমি জানিয়ে দেবো কবে বেরুচ্ছে।
শিখা  বলল 'জানাই হয় নি আপনার কোন কলেজ?'

 ‌কল্যান বলল  'বারাসাত কলেজ।'
শিখা বলল 'ও আচ্ছা।আপনারা কি সুন্দর কলেজে পড়ান ।আমারও খুব ইচ্ছে করে যে আমিও   প্রফেসর ...।'

কল্যান বলল  'মনের ভেতরে থাকতে হবে উচ্চকাঙ্ক্ষার লক্ষ্য।তা পূরণের জন্য তোমাকে পরিশ্রম করতে হবে ।তাহলেই স্বপ্ন পূরণ হবে ।স্বপ্ন দেখতে জানতে হয় ।জানো তো শিখা?
আবার কবে তোমার সাথে দেখা হবে জানি না ।তবে তোমার জন্য শুভকামনা থাকলো।'

শিখা বলল ' হ্যাঁ, এখানে এসে আপনার মত ব্যক্তির সান্নিধ্য পেয়ে আমি ধন্যা।'
কল্যান বলল ' তাই বুঝি?'

শিখা লজ্জায় মাথা নীচু করলো।
কল্যান বলল 'গ্রামে দেখো কত সবুজ গাছপালা । আর বলে উঠল প্রাণ চায় , চক্ষু চায় সবুজ গালিচায় বসি দুজনায় '

শিখাও  বলল  'একটু ওখানটা যাব। জায়গাটি কী সুন্দর। সবুজ আর সবুজ। দূর্বাঘাসে অনেকদিন পর পা রাখলাম । মনে হচ্ছে সবুজ ই মনের ক্লান্তি দূর করবে।'
কল্যাণ বলল '"ঠিক আছে চলো "।

 শিখা বলল ' কিন্তু কে, কি ভাববে?' 
কল্যান বলল  'তুমি মনের দিক থেকে কতটা নির্মল সেটা আগে জানা দরকার। তবে সামাজিক রীতি-নীতি ,সংস্কার মানুষ তো অস্বীকার করতে পারে না।আমি তোমার কটা ছবি তুলে দিই।'

শিখা বলল  'আপনি দাঁড়ান । আমিও  আপনার কটা ছবি তুলে দিচ্ছি।'
কল্যান বলল 'আরে না, না। আমি ছবি তুলতে লজ্জা পাই।'

শিখা বলল .'এটা কিন্তু ভারি অন্যায় বললেন।
কল্যাণ বলল ' কেন?'

শিখা বলল-'কেন আজকের নিউজ পেপারে আপনার ছবি বেরিয়েছে তো?তাহলে কি করে ছবি তুললেন? কনগ্রাচুলেশন্স। ভেবেছিলাম সকালবেলায় ই আপনাকে অভিনন্দন জানাবো ।তার জন্য সরি জানাতে পারি নি বলে।'
কল্যাণ বললো  'আসলে ওগুলো তো দিতেই হতো।'

শিখা বললো  'এই ছবিটা যখন দেখবেন হাজারো ভিড়ের মধ্যে একবারও হলেও আপনার মনে পড়বে কোন একদিন শিখা নামে কোন মেয়ের  সঙ্গে দেখা হয়েছিল।'
কল্যাণ বলল  'সে তো আমার এমনিই মনে থাকবে ।স্মৃতি হবে কেন?'

শিখা বল 'না ,আপনার সঙ্গে কি আমার দেখা হবে বলুন?'
কল্যাণ বললো  'পৃথিবীটা গোল ।দেখা তো হবেই ফোন আছে তো কথা হবে ।তোমার যদি পড়াশোনার ব্যাপারে কোন হেল্প লাগে ।তুমি আমাকে ব'লো আমি নিশ্চয়ই তোমাকে সহযোগিতা করবো।'

যেতে যেতে শিখা বলল  'পাশের ওই ঠাকুর টা কি সুন্দর হয়েছে, না ?এখানেও  ডাকের কাজ হয়েছে। একটি কি সুন্দর সাবেকিয়ানা আছে তাই না? এ বাবা,
অনেকদূর এসে পড়েছি কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে। চলুন এবার ফেরা যাক ।ওই দেখুন বলতে বলতে বৌদি কল করেছে '

'হ্যালো'
মাধু বলল 'আরে আয়। ভোগ খাবি তো ?আর কতদূর যাবি ।চলে আয়। ভালো লাগছে?,'(হাসি সঙ্গে)।

শিখা বলল 'হ্যাঁ বৌদি ভাই যাচ্ছি।'
কল্যান বলে-' ফেরা যাক। চলো ।সবাই চিন্তা করবে।' 'কল্যান বলল ' একটা গান শোনাবেন যেতে যেতে।'

শিখা বলল 'তাহলে কিন্তু আমার সঙ্গে আনাকেও গান গাইতে হবে ।রাজি ?তবে গাইতে পারি।'
কল্যান বলল 'আমি?'

শিখা বলল '( কেন নয়?'
কল্যান বলল  'আমি তো তোমার মতো গাইতে পারি না ঠিক আছে চেষ্টা করছি।

'যদি বন্ধু হও,যদি বাড়াও হাত / যেন থামবে ঝড়...রাঙা সূর্য বলবে  সুপ্রভাত।'
কল্যান বললো  'প্রকত বন্ধুর অভাব'।বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।'

শিখা বলল ' হ্যাঁ ,একদম।'
কল্যাণ বললো (আবেগ ভরে) 'এরকম বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার ।প্রত্যেকের জীবনে এরকম একজন বন্ধুর দরকার ,যে সুখে- দুখে, বিপদে-আপদে সবসময় পাশে থাকে নিঃস্বার্থভাবে।'

কল্যান এবার হাতটা শিখার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল 'যদি বন্ধু হও...?'

ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"২৯ক্রমশ

কানন রায় এর দুটি কবিতা



একটা তুই  অলিখিত শব্দ 



আমি তখন গভীর ঘুমে ছিলেম মগন
ঘুম ভাঙলো তুই এসে ডাকলি যখন।
জেগে দেখি ঘুম ভেঙ্গেছে অনেক বেলায়
সময় কখন চলে গেছে নিজের অবহেলায়।
তুই বললি কানে কানে এখন ও আছে সময়
লেগে পরো লেগে পরো রেখোনা সংশয়।
তোর জন্য শুধু্ তোর জন্য আবার করলাম শুরু
এবার থেকে তুই আমার কাব্য লেখার গুরু।



হঠাৎ করে বৃষ্টি নামলো মনের গভীরে
ভেসে গেলাম কোথায় যেন কোন সে সুদূরে।
বুকের মাঝে বাজ পড়েছে টের পেলাম না কখন
পুড়ে সব খাঁক হয়েছে জানতে পেলাম যখন।
সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দাড়িয়ে আছি বেশ
চেতন পেলাম যখন আমার সব হয়েছে শেষ।
দুঃখ আমি কাকে বলবো নেই তো সুজন কেউ
বুকের ভেতর বইছে আমার কেবল ব্যাথার ঢেউ।


শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"




                                                                                                                অলিখিত শর্ত 
                                                                                                                                   (পর্ব২)
                                                                                                                      শায়লা শিহাব কথন 
                                                                                                                    শামীমা আহমেদ

---লিফটে উঠে শিহাব লিফটম্যানকে ইশারায় টপফ্লোর দেখালো। শায়লা বেশ অবাক হয়ে শিহাবের দিকে তাকালো! 
---চলো একটু বসি।শিহাবের এমন কথায় শায়লা অজান্তেই মাথা ঝুঁকিয়ে সায় দিল।
আজ সবই অন্যরকম ঘটে যাচ্ছে!শায়লা বর্তমান অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলো। টপফ্লোরে নেমে ওরা ক্যাফেতে  বসলো। এখনো বিকেল সন্ধ্যার জমজমাট ভাবটি হয়নি।একটু ফাঁকাই আছে। ওরা বাইরের দিকের  কিনারায় একটি টেবিল বেছে নিলো।  সেখান থেকে চারপাশের রাস্তা,বাড়িঘর, ছোট ছোট মানুষের চলাচল শায়লা নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে দেখছিল। ওয়েটার, সার্ভিস বয়গুলো নিজেদের মাঝে দৃষ্টি বিনিময় করে নিল ঈঙ্গিত ইশারায়। ওদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় ওরা ঠিকই বুঝে যায় কারা কাপল,কারা স্রেফ ফ্রেন্ড আর কারা প্রেমিক প্রেমিকা জুটি আর কারা আসে ঘরকে ফাঁকি দিয়ে সুখী-অসুখীর হিসেব করতে।এসব ব্যাপার শিহাবকে খুব একটা ভাবালো বলে মনে হয় না।শায়লাও শিহাবের দিকেই মনযোগী হলো।
----শিহাব কথা বলে উঠলো।
শায়লা কী খাবে? মেনু চার্টটি এগিয়ে দিয়ে বললো,চয়েস করো।
শায়লা না সূচক ভঙ্গিতে বললো, না এসব নয়।জাস্ট লাঞ্চ করেই বেরিয়েছি। হালকা জুস বা কফি একটা হলেই হবে। শিহাব দু'কাপ কফির অর্ডার করে  সানগ্লাসটা খুলে টেবিলে রেখে এবার  শায়লার দিকে একটু  তাকালো। শায়লা চমকে উঠল! ছেলেদেরও কি এত সুন্দর চোখ হতে পারে! তাইকি সে এতদিন আড়ালে ছিল। নিজেকে ভেবে নিল শায়লা,আজ বাসায় ফিরে আয়নায় নিজের চোখদুটো ভালো করে দেখবে।শিহাবের সাথে শায়লার  পরিচয়ের প্রায় ছয় মাস হতে চললো তবুও শায়লার এখনো জড়তা কাটেনি। অবশ্য শিহাব ইচ্ছে করেই তা কাটতে দেয়নি।এমন কোন আবেগী কথা আজো হয়নি যে সম্পর্কটির একটি  নাম দেয়া যায়!
শায়লা যেন কোন ভুল করে না বসে তাই এই দূরত্বটা বজায় রাখা।আর এটাও একটি অলিখিত শর্ত।কোন ভালোবাসার দৃষ্টিতে তার প্রতি তাকানো যাবে না।জাস্ট পরিচয় আর তা থাকবে বন্ধুত্ব আর দায়িত্ববোধ আর শুভকামনার ঘেরাটোপে। সেটাকে অতিক্রম করে কোন ভালোবাসার সম্পর্কের আভাস পেলেই শিহাব নিজেকে সরিয়ে নিবে চিরতরে। 
শায়লার একার জীবনে অন্তত তাকে বুঝবার বা সময় দেবার একজন সঙ্গী পেয়েছে। তাই এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার লোভ সে সংবরণ করেছে। অবশ্য শায়লা বরাবরই খুব অল্পে সন্তুষ্ট একটি মেয়ে। তবুও এতটুকু পাওয়াও যেন তার জন্য এক চাতকিনীর চাওয়ায় এক আকাশ পাওয়া!
শিহাব জানতে চাইলো,কেমন আছো? শায়লা বেশ স্পষ্ট করেই বললো, ভালো আছি। যেমনি থাকুক না কেন, কষ্ট বিষন্নতা দিয়ে সময়টা নষ্ট করতে চাইলো না শায়লা।
পাল্টা প্রশ্ন জুড়ে দিল সে,তুমি কেমন আছো শিহাব? 
এই 'তুমি' করে ডাকতে অনুমতি পেতেও শায়লার লেগেছে প্রায় দুইমাস।শিহাবের মতে এই 'তুমি' ডাকে অন্যরকম চাওয়া পাওয়ার সম্পর্কে দাঁড়িয়ে যায় ।রাতারাতি তা এক সমুদ্র দূরত্ব কমিয়ে দেয়। অলিখিত শর্তে এটাও বেঁধে দেয়া আছে, তুমি করে বলায় কোন বিশেষ সুবিধা নেয়া যাবে না। বন্ধুত্বের নামে কল্পনায় কিছু ভেবে নেয়া যাবে না। শায়লা একে একে সব শর্তই মেনে নিয়েছে কে জানে সময় পেরুলে কখনো চাই কী তুইতেও চলে যেতে পারে---এমনটির আশায়।
কিছু ভাবছো কি?শিহাবের ডাকে শায়লা স্বাভাবিক হলো!
শিহাব জানালো সেও ভালো আছে। যদিও তার চোখমুখ বিষন্নতায় ছাওয়া। শিহাব বললো,বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব ইচ্ছে করছিল তোমার সাথে দেখা করার।তাইতো তুমি একবার বলাতেই রাজি হয়ে গেলাম। আসলে ইচ্ছে চাওয়া যদি খুব গভীরের হয় বিধাতা সেটায় নিরাশ করেন না। আজ যেন কথার খই ফুটেছে!শায়লা হাসিহাসি মুখে তা শুনে যাচ্ছে। কথার মাঝে ছেদ ঘটাচ্ছে না। শিহাব বলেই চলেছে, জানো,দিন শেষে যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরি কি একটা টান যেন পা দুটোকে টেনে বেঁধে রাখতে চায় এদিকটায়।খুব ইচ্ছে হয় তোমায় কল করি, আসতে বলি, দেখা করি,কথা বলি,বসে একটু সময় কাটাই। কিন্তু সবকিছুই তো সাময়িক। এতে তো একেবারে সবকিছু ধুয়ে যাবে না। তাইতো যেমন দিন যাচ্ছে সেভাবেই বিকেল রাত্রি কাটুক তেমনটিই মেনে নেই। ভাগ্যিস তোমার সাথে পরিচয় আছে নয়তো, 
নয়তো কী? শায়লা এবার থামিয়ে দিলো।যেন খুব গুরুত্ব নিয়ে ভেবে শিহাব উত্তরটা দেয়।
নয়তো, নয়তো রিশতিনার স্মৃতিতাড়িত হয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় সময় কাটতো।
এভাবে স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকা মৃত্যুরই নামান্তর। তোমাকে নতুন করে সব সাজাতে হবে শিহাব।শায়লা কথার এদিকটায় গেলেই শিহাব অচেনা হয়ে উঠে।শায়লার মন্তব্য, কথা কোন কিছুই কানে তোলে না।নিজের ভেতর আবার নিজেকে গুটিয়ে নেয়। এজন্যই কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে শায়লার সাথে দেখা করা।শায়লাও সীমানার গন্ডি পেরোয় না কখনোই।কারণ শায়লা শিহাবকে, শিহাবের একাকীত্বটাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আর দেখবেই না বা কেনো, শিহাবের জীবনের আইডোলজিটা শায়লাকে ভীষণ আকৃষ্ট করে। এ যুগে এ সময়ে এমন সুন্দর আচরণের মানুষ পাওয়া ভাগ্যই বটে!
---কফি চলে এলো। কফিতে চুমুক দিয়ে শিহাব জানতে চাইলো,কানাডার খবর কী?
শায়লা হঠাৎ যেন নড়েচড়ে বসলো।এতক্ষণ শিহাবের জগতে ডুবে ছিল।নিজেরো যে একটা জীবন আছে সেটা ভুলেই গিয়েছিল।
শায়লারও সেই একই উত্তর।চেস্টা চলছে।
নতুন কোন খবর শুনতে পারলে শিহাব যেন একটু স্বস্তি পেতো। 
শিহাব শায়লা দুজন দুজনার দিকে তাকালো।
ভেতরে ভেতরে দুজনার একই সুর বাজে।
কিছু প্রকাশের কঠোরতায় তা বাকহীন।দু'টি নীড়হারা পাখি দুজনার কাছে আশ্রয় খোঁজে।কিন্তু কেউ প্রকাশ করে না তা অলিখিত শর্তকে ডিঙিয়ে।
শায়লার ফোন বেজে উঠলো। মায়ের ফোন। ফিরতে হবে। শিহাব বিল চুকিয়ে উঠে দাঁড়াল।কোন রকম অনুরোধে আরেকটু বেশি সময় থাকার জন্য বলবে না,,  শায়লা তা ভালো করেই জানে।আর যেখানে মায়ের ফোন! আর কোন প্রশ্নই উঠেনা।শিহাব  যথারীতি শপিং ব্যাগগুলো আবার হাতে নিয়ে লিফটে নেমে শায়লাকে রিকশা অব্দি এগিয়ে দিলো।
রিকশা এগিয়ে চললো। দুজনার মাঝে পথের দূরত্ব বাড়লো কিন্তু আজ বিকেলের সময়টায়
যেন দুজনার মনের দূরত্ব অনেকখানি ঘুচল।
---আপা,কোথায় নামবেন? রিকশাওয়ালার জিজ্ঞাসায় শায়লা নিজের মাঝে ফিরে এলো!
চলবে.....

রুবিনা





মাঝি  


আমি খেয়া ঘাটের মাঝি,,,
সারাদিন সারাবেলা  মানুষ পারাবার করি।
মন গহীনে কিইবা আছে জানতে নাহি পারি, 
উজানে ভাসাই তরী,ভাটিতে ফাঁটে নায়ের তলী।
নায়রী যায় সুখেদুঃখে, নিজ বাপের বাড়ি, 
পাড় হয় কেউ, করে সদাই হাট বাজারি। 
কেউবা করে এই পাড় থেকে  ওই পাড়ে  চলাচল, 
ভরা বর্ষায় বৈঠা জড়ায় শাপলা শালুকের দল ,
মাঝি মাল্লার গানের সুরে দাড় টানি  হাওরাঞ্চলে, 
বাউরি হাওয়ার অনুকূলে তরী চলে তরতরিয়ে। 
এপাড় ওপাড় দুই পাড়ে তে মাঝি অকূল ভরসা,
ছলাৎ ছলাৎ বইঠা চলে আমার সাধের খেয়া।
ঝুম বৃষ্টির হঠাৎ জলে ভিজে বাশের টুপি,  
সন্ধ্যা নামে ঢেউয়ের দোলায় নিজ আলয় ফিরি,
সারাদিনের ক্লান্তি জুড়ায় কৃষ্ণ মেঘের কলি।
আমি খেয়া ঘাটের মাঝি,
মানুষের  যাত্রা  সহজ করি, নিয়ে ঘাটেরকড়ি।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ১০ ম পর্ব

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 




                                                          বনফুল
                                                                                                                           ১০ ম পর্ব 


ফোনের রিংটোনে জুঁইয়ের ঘুম ভাঙ্গালো। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন সাইলেন্ট করতে ভুলে গিয়েছিল নিশ্চয়ই। ফোন হাতে নিয়েই জুঁই আশ্চর্য হলো! এ যে পলাশের ফোন, ইয়েস করতেই ওপাশ থেকে থেকে ভেসে এলো গুডমর্নিং সুইট হার্ট...
জুঁই কোনো দিন ভাবতে পারেনি এতো সুন্দর সকাল ওর জন্যে অপেক্ষা করে ছিলো।
পলাশ কোনো রিপ্লাই না পেয়ে আবার বললো হ্যালো...
পলাশের হ্যালোতে জুঁই বাস্তবে ফিরে এলো, সাথে সাথেই বললো গুডমর্নিং।
-এতো সময় লাগলো গুডমর্নিং বলতে!তুমি কি ঘুমোচ্ছিলে? 
-জুঁই না তো!
-তাহলে!  
আমি ভাবতেই পারছিলাম না এতো সুন্দর সকাল তুমি উপহার দেবে.... 
পলাশ ওপাশ থেকে হেসে উঠলো।
 জুঁই জানতে চাইলো হাসলে যে?
- পলাশ বললো জুঁই তুমি একটা পাগলী,
জুঁই উত্তরে জানালো তোমাকে  ভালোবাসার জন্য পাগলী হতেও রাজি। 
এবার পলাশ হেসে উঠলো হাহাহা হাহাহা হাহাহা....করে। 
- জুঁই বললো আমি কি হাসার মতো কথা বলেছি ? পলাশ কথা এড়িয়ে বললো ঘড়িতে কয়টা বাজে? আজ তবে ভার্সিটিতে যাবে না?
- জুঁই বললো কি যে বলো ভার্সিটিতে না গেলে তোমাকে  যে দেখতে পাবো না! পলাশেরও যে অবশ্য সেই ব্যাপার,সেটা প্রকাশ করেনি চেপে গেল, ওর চাওয়াটা জুঁইয়ের মুখ থেকে বেড়িয়ে এসেছে। জুঁই পলাশকে বললো এখন ছাড়ছি, ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে বেরোতে হবে তো...।
-পলাশ বললো ওকে ম্যাম। 
জুঁই বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে হালকা সাজগোছ করে নিচে নেমে এলো। ওর বাবা মা  ওর জন্য অপেক্ষা করছিলো জুঁই নেমে এলে একসঙ্গে নাস্তা করবে বলে ।গল্প-গুজবের মাঝে নাস্তা খাওয়া শেষ হলো, তারপর চা খাওয়া শেষ করে জুঁই বললো আমি বেরোচ্ছি। বাবা  মা দুজনেই বললেন সাবধানে যেও মা। 
জুঁই গাড়িতে উঠে বসলো, ড্রাইভার যথা সময়ে জুঁইকে ভার্সিটি গেট নামিয়ে দিলো, আজ পলাশ জুঁইয়ের আগেই চলে এসেছে, গেটের ভিতরে ঢুকেই জুঁই পলাশকে দেখতে পেলো।মুহুর্তেই চার চোখে দৃষ্টি বিনিময় হলো, পলাশ ছোট্ট করে হেসে বললো জুঁই চলো, ওদিকটায় গাছের ছায়ায় বসি, ক্লাসের অনেকটা সময় বাকি আছে।

শহিদ মিয়া বাহার





তখোনো কাটেনি ঘোর অন্ধকার


জন্মাবধি আমি অন্ধকার হাতড়ে
তরতাজা শরীর খুজি, আলোর---!

যেতে চাই সুর্য ছাড়িয়ে আরো দূরে গ‍্যালিক্সির কাছে
যেখানে তাদের উৎসাহী সন্তরণ!

সূর্যের এপাড়ে পাহাড়, বিজাতীয় সমুদ্র
সামনে দাঁড়িয়ে আছে আততায়ী সময়!

সমুদ্র চরে একটি সী-গাল নিস:ঙ্গ, একা 
সেও হাহাকার করে

আলো খোঁজে,আলোর দীপান্বিত রোদ, জোৎস্নার মায়া--!

আমি দেখি সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর জোৎস্নারা হাটে
হাত ধরে পাশাপাশি আমি হাটি
হাটে সী-গাল

আমি জোৎস্নার সাথে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে পড়ি
আর স্বপ্নডাঙ্গার দেশে উড়ে যাই স্বপ্নের ভেতর!

জেগে দেখি আমিও  সী-গালের মত  
সমুদ্র পাড়ে পড়ে আছি একা 

তখনো কাটেনি ঘোর অন্ধকার ।

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়,(চৌদ্দপর্ব)

 চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 





                                                                                 উদাসী মেঘের ডানায়  
                                                                                                              (চৌদ্দপর্ব)


                                               তৃষ্ণা,বারান্দায় নানা রঙের ফুল গাছ, পানি  দিতে দিতে এমন সময় ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো, 
রুমে এসে অন করলো অপু আজ এতো তাড়াতাড়ি 
কল করলো কেন জিগ্যােস করলো তৃষ্ণা ।

অপু-ভালো লাগছিলোনা তাই চলে এলাম বাসায়।
মোবাইলটা নিয়ে ফের বারান্দায় এলো।
এখনো হালকা রোদের আলো মুছে যায়নি চেয়ারে  বসলো তারপর বললো- কি হয়েছে,শরীর খারাপ? 

অপু--না,মনটা কেন জামি অস্হির, আসবো চলোনা একটু ঘুরি একসাথে, আসবো?
-এসো।
অপু এসে  নিয়ে গেলো  সোজা চলে এলো তিনশো ফিট নদীর কাছে,খোলা রেস্তরায় বসলো।

তৃষ্ণা -অপু মন খারাপ কেন?

অপু -ভালো লাগেনা আর প্রতিদিন খবরের কাগজে টিভি অন করলেই, হত্যা,ধর্ষন নানা রকম
অসস্হি কর খবর শুনতে হয়, ভালো কিছুই শুনিনা!

তৃষ্ণা-চার দেয়ালের ভিতর হলুদ আলোয় আমি
নারীদের শিশু কন্যাদের আর্তনাদ শুনি,না সইতে
পারি,না কিছু করতে পারি।
আমরা সমাজের প্রতিবন্ধীদের মতন ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটি,কোথায় কার কি হচ্ছে জানার চেষ্টা করিনা প্রতিবাদের ভাষাও নেই আমাদের কন্ঠে 
সবাই যে যার মতো না দেখার ভান করে থাকি।

অপু-নষ্ট সমাজ ব্যাবস্হায়  সমুদ্রের স্মানের ভয়ংকর
কৃষ্ণ গহব্বরে আজও নারীরা বন্দি।

তৃষ্ণা-ছোটবেলা থেকেই মা, দাদী, নানীরা,শিক্ষাদেয়
একবিংশ শতাব্দীতে ও শরীরের মাপ ঠিক রাখা
বাহারী চুলের বিন্যাসে  প্রনম্য আগুনের ভিতর দাঁড়িয়ে
স্বাক্ষরের কাগজে সঁপে দেবার জন্যই নারীর জন্ম
দহনে-দাহনে বেঘোরে পুড়ুক নারীর জীবন যেনো
খয়রাতি জীবন।
অপু-ক্ষুধার্ত খাদকদের জন্য ঠিক বলেছো, সমাজের ধনকুবেরদের জন্য,ওরা প্রেমের নামে ফাসিয়ে হত্যা করলে নারীর দোষ নারী লোভী নাম হয় এনজয়মেন্ট
আর নিম্নশ্রেণী করলে হয় ধর্ষন।ওদের বিচার হয়
তথাকথিত মুখোশ ধারীরা বেচেঁ যায়।

তৃষ্ণা-তাইতো আজকাল নারীরা খোঁজে ইতিহাসের
কালো পাতায় নিজেদের অধিকার।খুঁজছে কেউ,কেউ একা সমান্তরাল জীবনের পথ আদিপর্বের ক্ষয়ে
যাওয়া সময়ের জীবন বোধ থেকে কেউ মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে কেউ পারেনা। 
আর যারা পারে,চোখে তাদের ছায়া লেগে থাকা মুক্তির,অক্ষর চেনার আপ্রান চেষ্টা।
তাইতো আজও মোমের মতন গলে যাচ্ছে  ছলনার
ভালোবাসার পবিত্র আখ্যান
কোন কোন নারী আজও ফুঁফিয়ে ওঠা ফিসফাস
রক্তপাতে এক একটি রক্তজবা মরে বেঁচে ও খোঁজে
নিজেদের অধিকার, আর ধর্মের অজুহাতে পুরুষ শাসিত সমাজ নিপীড়ন, অপমান বদনাম দিতে ছাড়েনা, দেখো একদিন এই নারীরাই সর্বসেরা
হয়ে উঠবেেই উঠবে।


                                                                                                                                              চলবে....         

ফারহানা আহাসান




আমি জানি


আমি জানি শতবার না হোক একবার অনুভব করেছ আমায়।
আমার একটু না বলা কথাগুলো টের প্য়েছ তুমি।
আমি জানি তুমি কেমন আছ
আমার নির্বাক চোখের বইয়ের পাতার লেখায়।
আমি জানি ভালোবাস তুমি আমায়
তারপরেও কেন দুরুত্বটাকেই সঙ্গী করে নিলে
আমি জানি আমার চেয়েও আমায় চেন তুমি
আমার আত্মার ভেতরেও টের পাও তোমার উপস্থিতি।
এই অগোছালো মানুষটাকে গুছিয়ে নিয়েছ তোমার মতো করে
তবে কেন দুরত্বটাকেই নির্বাচনের কাঠগড়ায় দাঁড় করালে
তুমি যে অন্তরের প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে নিজেই নিজের অজান্তেই আমার প্রতিবিম্বের মাঝে আঁকড়ে ধরে আছ 
তাই বোঝার ব্যাপ্তিও আজ তোমার কাছে নেই।
আমি জানি তুমি আমার ভালোবাসার অনুভূতি কে অনুচ্ছেদে বর্ণিত করেছ 
কিন্তু আমি তোমার ভালোবাসার জীবনী হতে চাই।

শুরু হলো কাজী ইনাম এর ধারাবাহিক গল্প "একরাত্রি"

 এই সময়ের অন্যতম স্বনামধন্য উপন্যাসিক কাজী ইনাম এর চতুর্থ উপন্যাস এর প্রস্তুতি চলছে এখন  একরাত্রি শুরু হলো ধারাবাহিক গল্প ।  "স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকায় " পাঠকদের কাছে অনুরোধ লেখাটি পড়ে লেখক কে উৎসাহ প্রদান করুন আরো ভালো কিছু পাবার আশায়। 
 






                                              একরাত্রি
                                                                             ( ১ম পর্ব ) 

     
রাত দুটা। কিন্তু এ বাড়ির একটি লোকও ঘুমাতে যায়নি। দুই বছরের ছোট্ট মেয়ে কুসুম সে পর্যন্ত গভীর চিন্তিত মুখ নিয়ে জেগে আছে। বাসার কাজের মেয়ে মরিয়ম সেও ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাঝখানে দাড়িয়ে ঘন ঘন হাই তুলছে। তার এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা অবশ্য কারোরই ভালোলাগছে না। তবু তাকে কেউ কিছু বলছে না। মনে হচ্ছে এই বাড়িতে আজ আর কেউ কোনো কথা বলবে না । অদ্ভুত যাতনায় সবাই অপেক্ষা করছে আগামীকালের জন্য। আগামীকাল আফসারের মামলার রায় হবে।  
       আফসারকে খুব শান্ত লাগছে। রাবেয়া স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে কী ভাবল কে জানে ছোট্ট কুসুমকে কোলে নিয়ে বসিয়ে দিল তার কোলে। আফসার মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবা শুরু করে দিল। তার সাজা হয়ে যাবে। পাঁচ বছরের জেল। যাবজ্জীবনও হতে পারে। সে এর চেয়েও ভয়ংকর কিছু নিয়ে ভাবছে। অথচ অভিযোগ তেমন গুরুতর না। টাকা চুরির মামলা। ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে সে- এমনই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ মামলায় কঠিন সাজা হওয়ার কোনো কারণ নেই। বড়জোর দু-এক বছরের…। আফসার সবই জানে। তবুও ছোট্ট কুসুমের চোখের দিকে চেয়ে একটা ভীষণ ক্ষণস্থায়ী সুখ আর তারপরই একে চিরতরে হারিয়ে ফেলার একটা তীব্র বেদনা অনুভব করল। জীবন তাকে দিয়েছে অনেক। এতদিন সে তা বোঝে নি।   
    রাবেয়া রাতে রান্না করেছিলো আজ। সহজ রান্না না। সে পোলাও করছে। পোলাওর সাথে আরও অনেক কিছু। এতসব কিছু সে করেছে শরীর খারাপ নিয়ে। আজ এমনকি মরিয়মকেও সাথে নেয়নি। রান্না করেছে একা একা। রান্নাঘরের দরজার ছিটকিনি দিয়ে। রান্নার মাঝখানে রাবেয়া ঝরঝর করে কেঁদেছে। তার এতদিনের দীর্ঘশ্বাসটাই বুঝি কান্না হয়ে ঝরে পড়ল আজ। তাদের টানাপোড়েনের সংসারে ভালো রান্না হয় কালেভদ্রে। ছেলেমেয়েরা যখন খুব করে ধরে আর তাতে আফসারও সায় দেয় রাবেয়া তখন রাগী গলায় বলে, পালা পার্বন ছাড়াই পোলাও কোর্মা খেয়ে টাকা নষ্ট করব? না, তা হবে না। এ বাড়িতে উৎসব কখনো আসে না। আনন্দ-ফূর্তি হয়না। নিরামিষ জীবন এখানে। এরই মাঝে তবু কোনো বৃষ্টি-বাদলে আফসার যদি দুহাজার টাকায় দুটি ইলিশ মাছ কিনে চোরের মত এসে রাবেয়ার সামনে দাঁড়ায়  চোরা একটা সুখ পায় রাবেয়া। সে কাউকে জানতে দেয়না। নিজেকেও না।  
          মাছ ফেরত দিয়ে আস।
          দুটোই ফেরত দেব? একটা থাক?
          না, একটাও থাকবে না। এত দামি মাছ খাওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই।
    আফসার কিছু টাকা গচ্চা দিয়ে মাছ ফেরত দিয়ে আসে। রাবেয়া তার তীব্র সুখের অনুভূতিটাকে নষ্ট করে।
     রাতের খাওয়া সারা হয়ে গেছে আজ একটু সকাল সকালই । খাবার টেবিলে কেউ কোনো কথা বলেনি। টেবিল ভর্তি রান্নাবান্না দেখে ছেলেমেয়েরা বোধহয় লজ্জা পেয়েছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল মেহমান হয়ে অন্য কোনো বাড়িতে দাওয়াত খেতে বসেছে। আরিফ পাতে খানিক পোলাও নিয়ে নাড়াচাড়া করল। সপ্না তার বড় ভাইকে অন্ধ অনুকরণ করে। সেও পাতে পোলাও নিল। তারপর দু ভাইবোন কীসের অপেক্ষায় থাকল কে জানে কেউ আর কিছু মুখে দিল না। রাবেয়া দেখেও দেখে নি। যেন আজকের দিনে এমনই হওয়া উচিত।    
      আফসার কিন্তু খুব খেল। অন্যদিন যা খায় তার চেয়েও বেশি। কত কষ্ট করল রাবেয়া। উৎসবে সে যা করে না আজ তাই করেছে। না খেলে কী করে হয়? রান্নাই শুধু যে করেছে রাবেয়া তা না, যত্ন করে সেজেছেও। সুন্দর নীল রঙের শাড়ি পরেছে। নিখুঁত ফোঁটা এঁকেছে কপালে। সেন্টও মেখেছে হয়ত। রান্নার ঘ্রানে তা বোঝা যায়নি। আফসারের কেমন লজ্জা লাগছিল। সচরাচর সাজে না যারা তারা কোনোদিন হঠাৎ সেজেগুজে সামনে এলে স্বামীরা বুঝি এমনই লজ্জা পায়। অর্থহীন কিছু সময়ের জন্য রাবেয়া কেন এমন রঙিন হল খুব জানতে ইচ্ছে করছিল তার। জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি। রাবেয়ার দিকে চেয়ে শুধু একটা হাহাকারের হাওয়া বুকের মধ্যে বয়ে গেল । জীবনের এত স্বাদ সে বুঝি শুধু ফুরিয়ে যাবে বলেই।   

  ডাইনিং টেবিলটা ঘেঁষেই রাবেয়া দাঁড়িয়েছিল। সে সবার সাথে খেতে বসেনি। মনে মনে সে নিজেকে তৈরি করছিল একটা ভীষণ কঠিন সময়ের জন্য । আজকের দিনের কোনো মূল্য সত্যিই তার কাছে নেই। মনে তার আফসারের উপর রাগই জমেছে শুধু। এমন একটা মন নিয়ে সহজ স্বাভাবিক হওয়ার অভিনয় করে যাওয়া কঠিন কাজ। তারপরও তো সে চেষ্টা করল। সেজেগুজে সামনে এল। ভালোমন্দ রান্না করল। সামর্থ থাকলে হয়ত আরও কিছু করত। জীবনের ছন্দটাই বোধহয় এখানে। 

চলবে...