০৩ মার্চ ২০২২

কবি জাবেদ আহমেদ এর কবিতা




মন
জাবেদ আহমেদ 


কবিতার পিছু দৌড়তে
দৌড়তে একদিন হারিয়ে
যাবো আমি হারিয়ে যাবে কবিতা,

মন তুমি হবে স্বপ্নহীন
শব্দহীন হবো আমি,

চাওয়া পাওয়ার ইতি শূন্য 
আত্মার জগতে 
পাই যদি তোমায়
হারাবো না আর কখনো
ওপারে পারবো কি লিখতে তোমায়
প্রাণেশ্বরি আসবে ডাকি যাদি
পংক্তি হয়ে কবিতার।

মন ডাকে মন তোমাকে।

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১১৯





উপন্যাস 

টানাপোড়েন১১৯

সব লাল পাথর চুনি হয় না

মমতা রায় চৌধুরী


স্কুলে সরস্বতী পুজো তাই ঘটা করে একটা মিটিং হয়ে গেল। ঘটা করে বলতে প্যানডেমিক সিচুয়েশনে যে রকমই হওয়া দরকার মেয়েদের ছাড়া মিটিং। এবার তো পুজো শিক্ষিকাদের। তাই সমস্ত দায়িত্ব শিক্ষিকাদের দেখে নিতে হবে আর কার কি দায় দায়িত্ব আছে সেই ব্যাপারটার জন্য বড়দি মিটিং সারলেন।
 বিদ্যালয়ের দেয়াল পত্রিকা' স্বপ্ন উড়ান'বের হবে। প্রতিবছরই হয়ে থাকে এ বছরই বা বাদ যায় কেন? না বাদ দেবোই বা কেন? মানুষের ভেতরে অদম্য শক্তিকে তো আর প্রতিরোধ করা যায় 
না ?তা যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন ।বিশেষত এই প্যানডেমিক সিচুয়েশনে গৃহবন্দি জীবনের শিক্ষার্থীদের ভেতরের যে কষ্ট ,যন্ত্রণা তাদের মনের ক্যানভাসে উড়ান দিতে চায় ।নানা স্বপ্ন আঁকি-বুকি কাটে। তাই যখন তাদের কাছে তাদের 'স্বপ্ন উড়ান 'কে পৌঁছে দেয়া যায় ,তাদের অদম্য লেখনি শক্তি প্রকাশের জন্য ।তাহলে তো আর কিছু বলার অপেক্ষাই রাখে না। রেখার কাঁধে পড়েছে এই গুরুদায়িত্ব। তাছাড়া ঘর সাজানো এসবেও রয়েছে ওর নাম ।অন্যান্য টিচারদের সঙ্গে নিয়ে কাজটা করতে হবে। মূল দায়িত্ব তাকে সামলাতে হবে। হাসিমুখে মেনে নিয়েছে কারণ পত্রিকার কাজ করতে ভালই লাগে। অন্যান্য কাজগুলো অন্যান্য শিক্ষিকাদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। পূজার তো আর বেশি দেরি নেই।
গ্রুপে আগেই মেয়েদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল অভিভাবককে দিয়ে তাদের লেখা স্কুলে পাঠিয়ে দেবার জন্য। সে সমস্ত কিছু সংগ্রহ করে নিজের দায়িত্বে রেখেছে। সারাদিন নানা পরিশ্রম গেছে স্কুলে।
বাড়িতে ফিরে ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল কিন্তু মনের ভিতর একটা আনন্দের উচ্ছ্বাস ঢেউ খেলে যাচ্ছিল সারাক্ষণ। আগামীকাল তো পিকনিক। তাই সব অবসাদ, ক্লান্তি ,ধুয়ে মুছে গেল। অনেকদিন পর রিম্পাদির সঙ্গে  দেখা হবে।
ফ্রেশ হওয়ার আগে মিলি, তুলি, পাইলটদের চিৎকারে আগে ওদেরকে গিয়ে আচ্ছা করে আদর করে নিল। তারপর ফ্রেশ হতে গেল।

এরমধ্যে বাথরুম থেকে আওয়াজ পাচ্ছে রেখার ফোনটা বেজে যাচ্ছে। ফোনের আর্তিতে তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।
হাতে টাওয়াল ধরাই আছে। তখনো তখনো চুল থেকে জল ঝরছে ফোটা ফোটা। রেখার এটা বদভ্যাস সে যেখানেই যাক বাড়িতে ফিরে এসে সামনের দিকে কিছুটা চুল ফ্রেশ হতে গিয়ে ভেজা তেই হবে। তাই এক হাতে ফোনটা ধরে রিসিভ করে বলল '।
"হ্যালো'।
'কি রে কি করছিস?'
'এইতো বাথরুম থেকে বের হলাম বলো।'
"শোন না .কালকে পিকনিক হচ্ছে না।'
রেখা অত্যন্ত অবাক হয়ে গেল  বললো '
'মানে ,মানেটা কি?'
'হ্যাঁ রে।'
তুমি আমার সাথে মজা করছো?
রেখা হাসতে হাসতে বলল নারে মজা নয় সত্যি বলছি বিশ্বাস কর। এই তিন সত্যি বলছি।
' সত্যি ,সত্যি ,সত্যি।'
রেখার অবসাদের মনে যেন হঠাৎ করেই মন খারাপ করা টোকা মেরে দিল।
ভেবেছিলো একটা গেটটুগেদার হবে ভেতরের যে ক্লান্তিগুলো আছে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে একটু অক্সিজেন নেবে, হাসি মজা হবে।'
সেখানে রিম্পা দি তোকি বলছে এসব কেমন যেন একটা বেপথু হয়ে গেল।
কিরে কোন জগতে আছিস?
রেখা , এই রেখা।রেখা ,কথা বলছিস কেন?
'কি কথা বলব ?তুমি তো সবকিছুতে জল ঢেলে দিলে।'/
'রাগ করিস না দেখ কি করবো ।হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে গেল যে।'
কে গো?
ওই তো আমাদের পাশের বাড়ির যে দিদি বলছিলাম না স্কুল শিক্ষিকা।
ওমা,আচ্ছা ,আচ্ছা। কি হয়েছে?
ভালোই সিরিয়াস জানিস তো?
হার্টের প্রবলেম য় ধরা পড়েছে।'
'এ বাবা।'
'ঠিক আছে। কি আর করা যাবে ।এটা তো মেনে নিতেই হবে না ?ঠিকই করেছ।'
এবার রাগ কমলো তো?
না গো কথাটা শুনে খারাপ লাগছে। জানো তো রিম্পা দি।
'খুব চনমনে আর সব ব্যাপারেই এগিয়ে আসার একটা প্রচেষ্টা আছে যখন আমাদের এই প্ল্যানিংয়ের কথা শুনল বলল
' আমাকে সঙ্গে নিও।'
'ঠিক আছে ভালো করে ডাক্তার দেখাচ্ছেন তো উনার সুস্থতা কামনা করছি।'
আর আজকে কি স্কুলে? কি হলো তোদের?
কি আবার হবে জানো তো সরস্বতী পুজোর আগে কি হয় তবে তোমাকে খুব মিস করছি। স্কুলে সবাই আমাদেরকে বলতো না সোলমেট।
আজকে একবার খোঁচা দিয়ে অনিন্দিতা বলল।
এটা আমার ভালই লেগেছে।
'কি হলো এবার পত্রিকার দায়িত্ব কার পরল?'
'তুমি কি ভাবছো বড়দি অন্য কাউকে দেবেন?
ও তাহলে তোর দায়িত্বে।'
খুব ভালো যে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছে আর কাঁধে দায়িত্ব খুব ভালো।
এই রিম্পা দি শোনো না ,এবারে এসো সরস্বতী পুজোতে।
ঠিক আছে দেখছি মেয়েকে নিয়ে যেতে পারি।
তবে মেয়ে যাবে কিনা কে জানে বন্ধুবান্ধব নিয়ে মত্ত থাকবে।
ওর কি দোষ বলো আমাদের সময়ে সরস্বতী পুজো মানেই আমাদের বসন্ত ছিল তাই না?
ভ্যালেন্টাইন্সডেতে মনে হতো ।ওই সময়েই সবাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করে নিত '।
'ঠিক বলেছিস। এই পুজোর সময় গুলিতে দেখা যেত প্রেমিক-প্রেমিকারা দেখা করতো। কি   সাগরিকা কি ছটফটানি ছিল ওর মনের ভেতরে তমালের জন্য বাপরে বাপ একপলক 
দেখবে ।পুজোতে মিস নেই ।পুজোর সময় বেরোবে, একটু বসে গল্প করা আর পাশাপাশি থাকা ।এখন তো তা নয়।'
'একদমই তাই ।'
আসলে এখন দিনকাল পাল্টেছে ডিজিটাল যুগ এখানে তো সবকিছুই অন্যরকম।
আমাদের সময় টা বেশি ভালো ছিল। সময় গুলো অনেক বেশি উপভোগ করা যেতো।
মনে আছে রিম্পা দি বলেছিলাম না আমার কলেজে তনিমা ও পাগল ছিল কুণালের জন্য। একবার তো কলেজের একটা রুমে প্রায় ওদের দুজনকে দেখা যেত ।ওই যেন ওই ঘরটা নাম দেয়া হয়েছিল সোলমেট রুম।'
', হ্যাঁ, হ্যাঁ বলেছিলি।'
'আর ওর সাথে ওর বিয়ে হয়নি।'
'প্যাথেটিক জানো তো।
মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল একটা বড়লোক ছেলের সঙ্গে।'
কুনাল ওর জন্য পাগল ছিল। প্রথম দিকে তো কুণালকে পাগল-পাগল লাগতো। পরে শুনেছিলাম ওকে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাতে হয়েছিল।
তনিমার জন্য তো কুণালের ক্যারিয়ারটা নষ্ট হয়ে গেল।'
"হ্যাঁ রে বাড়ির লোক মেনে নেয়নি বলেছিলি।'
যাইহোক ছাড়ো তো এসব কথা।
'ছাড়বো কিরে আজীবনের বিষাদ, বেদনা যে ওদের ভেতরে দাগ কেটে গেল ।এটা ভেবে ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে।'
কেন খারাপ লাগবে না বল ?যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখা ,এত ভালোবাসা সুখচরের মনভূমিতে যে বীজ বপন করে গেছে অথচ অঙ্কুর বের হয়ে  পল্লব পুষ্পরাজিতে ভরে উঠলো না। কেমন খারাপ লাগে ।অথচ তনিমাকে তো সেই অন্য একটি ছেলের পাশে নিজেকে সঁপে দিতে হয়েছিল বলো?ভাবো সেই রাতের কথা ।সেদিন ওর কেমন লেগেছিল ।একবারও কি ওর মনের ভেতরে কুনাল দাগ কেটে যায় নি ,যখন ওর স্বামী ওকে স্পর্শ করেছিল ,সেই স্পর্শের ভেতরে কি সুখানুভূতি ছিল, নাকি শুধুই একটা শারীরিক উত্তেজনা কাজ করে গেছে? ভাবতে খুব খারাপ লাগে।'
'কি হয়েছে বল তো তোর ?এই সব কথাগুলো বলছিস।'
'আমার মনের ভেতরে ভীষণ ভাবে দাগ কেটে যায়।'
ওই জন্য তো প্রেমটাও ঠিক করে করতে পারলি না ।প্রেম আসলেও তাকে ধরে রাখতে পারিস না।'
'কি করবো বলো?'
তবে তনিমার বর শুনে ছিলাম বড়লোক বাড়ির ছেলে হলে যে রকম হয় ।আজকালকার ছেলেদের ভেতরে যেমন স্বাস্থ্যসচেতনতাএসেছে। তনিমার  বরের কিন্তু সে রকম ছিল না। শুনেছি তো মেদবহুল ,গোবর গণেশ একটা।'
তনিমার মত একটা স্মার্ট মেয়ে কি করে ওর সঙ্গে খাপ খাওয়াচ্ছে বলো?'
'এসব ভাবলে খারাপই লাগে।'
'একবার তনিমার সঙ্গে আমার দেখা 
হয়েছিল ।ওকে দেখছি চারচাকা থেকে 
নামছে ।সারা গায়ে গয়নায় ভর্তি কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বড় বাড়িতে বিয়ে হয়ে  যে উচ্ছ্বাস থাকার দরকার, তা ওর চোখে মুখে ফুটে উঠতে দেখি নি।
'ও আমাকে দেখে একটু নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। যেমন করে খোলসে শামুক নিজেকে ঢুকিয়ে রাখে।আমার ওকে দেখে কি মনে হয়েছিল জানো? মনে হয়েছিল নদী পরিত্যক্ত খাদ বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে গেলে ফের নদীতে মিশতে চাইলে তাকে কি করতে হয় সে ভেবেই পায় নি।
অথচ যখন ওরা দেরাদুনে গেছিল এক্সকারশনে সেখান থেকে ফিরে এসে তনিমাকে দেখতে  মনে হয়েছিলো যেন একটা সুগন্ধ তার ফুসফুস থেকে  হৃদয় হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে।
একটা আলাদা লাবণ্য যেন 'ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল। কি সুন্দর ই না লাগছিল।
বিয়ের পর এত গয়নাগাটিতেও  ওর লাবণ্য ঝরে পড়তে দেখা যায়নি।'
'আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল কেমন আছিস?
আমি বলেছিলাম ভালো আছি।'
তুই কেমন আছিস?'
'ও বলছিল 'যেমন দেখছিস'।
তারপর মাথা নিচু করে চলে গেল।
দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল শুধু।
রিম্পা দি বলল' সব ভালোবাসা তো আর পরিণতি পায় না।'
"ঠিকই বলেছ।'
'সব লাল পাথরই তো আর  চুনি হয় না।
ছেলেটার কি পরিণতি হয়েছিল?'
কেমন ক্ষ্যাপা মত হয়ে গেছিল ।
বললাম তো তোমাকে আগে সাইকো প্রবলেম দেখা দিয়েছিল অথচ পড়াশোনায়  কি তুখোর ছিল। ও যেন কক্ষচ্যুত হয়ে গেছিল পুরো।
মাঝে মাঝে নাকি শুধু একটা কথাই বলতো
'সেই দেরাদুন।'
একটা মোলায়েম দুঃখ আর হতাশা যেন তাকে ঢেকে ফেলে দিয়েছিল ।তাই বলতোসেই ঠিকানায় পৌঁছাতে আর পারা গেল না।'
'ঠিক আছে। কি আর করবি বল,? ওর জন্য নিশ্চয়ই অন্য কোন তনিমা টইটম্বুর মেঘ নিয়ে অপেক্ষা করে আছে ওর ই  মতো কোন মেঘদূতের জন্য।'
' আদপে সেই মেঘদুত ,মেঘের কাছে  গেছিল কিনা কে  জানে?'
এসব কথাবার্তার  মধ্যেই বেশ কয়েকটা মিসকল হয়ে গেল।
রেখা বললো' ঠিক আছে রাখ ।আমাকে কেউ ফোন করছে।'
'ঠিক আছে রাখ। ভালো থাকিস। আচ্ছা শোন শোন ডাক্তার দেখিয়েছিস?'
'না গো সময় পাইনি।'
'আমি এদিকে তাহলে যোগাযোগ করব ডাক্তারের সঙ্গে?'
'ধেত তেরি, মরার সময় নেই ।ডাক্তার দেখাতে যাবে? সে দেখা যাবে বাড়াবাড়ি হলে ,তখন বলব।'
'শরীর নিয়ে অবহেলা করিস না।'
'না গো ,তুমি এত চিন্তা ক"রো না। ভালো থেকো।'

কবি সানি সরকার এর কবিতা




রিপু 
সানি সরকার 


এখন পেঁচিয়ে ধরার জন্যে 
কালো রঙের জাল তাড়া করবে, 
উত্তেজিত করবে, ভয় দেখাবে, কিন্তু 
আপনি আলোর সন্তান দাঁত চেনেন, পথ চেনেন… 

এই যে হাজার বছর থেকে অন্ধ করে 
কারা শেকল পরিয়ে রেখেছে চুপচাপ, আর 
আপনাকে অন্ধের মতো ক্রোধ ও ভয়ার্ত 
ক্ষুধার সামনে ভিক্ষুক বানাতে বানাচ্ছে বারবার 
মার্চ মাসের এই রাতে নিজের আত্মার সামনে দাঁড়ায়ে  
জিজ্ঞেস করুন কুসুম, আসল ও সত্যি কোনটা 

একটি ক্ষিপ্র ষাঁড় খাদের কিনারে শিং দোলাচ্ছে 
এখন আপনাকে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এমনি করে 
ঋতু পরিক্রমণ করানোর জন্যে মাঠে নামবেন 
রেফারি ও চার কোণে চারটি সহ রেফারি 
এমনকী অনবরত আপনার চোখে মাথায়
ও সমগ্র দেহে কাঁদানেগ্যাস ছুঁড়ে 
কাঁদানোর চেষ্টা চলবে, হাসানোর চেষ্টা চলবে
একটি ওটি রুমের ভেতর, এবং 

আপনার জানা দরকার রিপুর তাড়া পেলে লক্ষ মাইল ফলক 
পেরিয়ে ঝড়ের মতন ক্ষিপ্র ষাঁড় দোঁড়ে আসে 
কিন্তু এক্ষুনি আপনাকে অবলোকন করতে হবে 
আত্মার ভেতর আপনারই আঁকা গণ্ডিটিকে, আর 
সূর্যালোকের কাছ থেকে হাত পেতে 
চেয়ে নিতে হবে, রিপু থেকে আত্মরক্ষার রক্ষা কবচ

ভয় নেই কুসুম, আপনার ভয় পেতে নেই

কবি মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৪ তম পর্ব






ধারাবাহিক উপন্যাস



সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১৪ তম পর্ব 
মনি জামান


জিকুর মৃত্যুর পরে আসমা খুব ভেঙ্গে পড়েলো ঠিক মত ঘুমায় না ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না,ছেলেটাকে ও কাছে পেতনা সব সময় শাশুড়ি মোমেনা বেগম নয়নকে কাছে রেখে দিতো,আসমা নয়নকে কাছে ডাকলে মোমেনা বেগম আসমার কাছে আসতে দিতোনা ছেলেকে।ছেলে নয়ন ও দাদী মোমেনা বেগমের কাছে থাকতে থাকতে মা ছাড়া দাদীর কোলে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো,মা আর ছেলের দুরত্বটা বাড়ানোর জন্য মোমেনা বেগম মনে মনে সেই প্রথম দিন থেকে সুদুর প্রসারি এই কৌশল অবলম্বন করে সে সফল,যাতে মা আর ছেলের দুরাত্ব বেড়ে যায় কারণ মোমেনা বেগম মনে মনে চায় ছোট লোকের বাচ্চা আসমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে।
আজ হোক কাল হোক মোমেনা বেগম সেই সুদর প্রসারি যড়যন্ত্রের ফসল মা ছেলের এই দুরত্ব সৃষ্টি।জিকুর মৃত্যু আজ দেড় বছর হয়ে গেলো এই দেড় বছরে আসমার জীবনে নেমে এল চরম নির্যাতনের এক ভয়ংকর অধ্যায়,জিকুর মৃত্যুর পর মোমেনা বেগম আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো আসমা উপর এখন এই ছোটলোকের মেয়ে আসমা তার বাড়ির বোঝা হয়ে গেছে, তাই নিষ্ঠুর সব কৌশল একের পর এক প্রয়োগ করতে শুরু করছে।
আসমার কোন কাজে ত্রুটি না পেলে ও অহেতুক আসমাকে গালাগালি মার ধোর শুরু করলো,প্রতিবেশিরা কেউ কোন কথা বলতো না মোমেনা বেগমের ভয়ে।
সাংবাদিক ফিরোজ মাঝে মাঝে আসতো মোমেনা বেগমের বাড়ি আসমাকে দেখতে, কিন্তু মোমেনা বেগম ফিরোজের আশা একদম পছন্দ করতো না কারণ ফিরোজকে ভয় পেতো যদি ফিরোজ কিছু জেনে যায়,তাই কৌশল অবলম্বন করে একদিন মোমেনা বেগম ফিরোজকে ডেকে বলল,ফিরোজ আসমা এখন বিধবা তুমি এই যে আসা যাওয়া কর আমাদের বাড়ি পাড়ার লোকেরা কিন্তু কানাঘুষা করে। 
তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো আর কি বলবো,মোমেনা বেগমের কথা শুনে ফিরোজ যা বুঝার বুঝে নিয়েছে,তারপর থেকে ফিরোজ জিকুদের বাড়ি আর কখনো যায়নি দুর থেকে দেখতো,আসমার কষ্ট আর নির্যাতন গুলো সাংবাদিক হিসেবে সকল খবর প্রতিবেশীদের কাছে নিয়ে নিতো,সব যখন শুনতো ফিরোজ নিজেই যেন কষ্ট অনুভব করতো।
ফিরোজ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আসমাকে বাঁচানোর একটাই পথ আসমাকে বিয়ে করা কারণ ফিরোজ আসমাকে পছন্দ করে,তাই একদিন আসমাকে ডেকে ফিরোজ নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিলো,প্রস্তাব শুনে আসমা ফিরোজকে বলল,এটা সম্ভব নয় ভাই। আমার মৃত্যু বেতীত জিকুকে এই মাটিতে শুয়ে রেখে আমি বিয়ে তো দুরের কথা আমি কোথাও যাব না মৃত্যু হলে এখানেই হবে কারণ জিকু আমার হৃদয়ে ভালবাসার রাজকুমার,আমার হৃদয়ে অন্য কাউকে আমি কখনো স্থান দিতে পারবনা ভাই।
ফিরোজ অবাক হয়ে শুনলো সেদিন আসমার কথা গুলো,ফিরোজ ভাবছে এই সমাজে কজন নারী ভালোবাসাকে এমন শ্রদ্ধার সাথে হৃদয়ে ধারণ করে এমন ভালোবাসা আঁকড়ে রাখে,আসমার কথা গুলো শুনার পরে আসমার প্রতি ফিরোজের আরো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়ে গেলো।
ফিরোজ ভাবলো আসমা কি সত্যিই মানুষ না কোন স্বর্গের দেবী যে এত নির্যাতন ভোগ করার পরেও স্বামী জিকুর ভালবাসা আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে স্বামীর ভিটে!ফিরোজ সেদিন বলল,ভাবি স্যালুট আপনাকে যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে শুধু একবার সংবাদ দেবেন আমি আপনার পাশেই আছি।আসমা মাথা নাড়িয়ে সেদিন সাই দিয়ে বলল,প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলব ভাই।
ফিরোজ চলে গেলো কিন্তু ফিরোজ একবারও বুঝতে পারলো না আসমা আজ দুইদিন কিছুই খায়নি তাকে খেতে দেয়নি নিষ্ঠুর শাশুড়ি মোমেনা বেগম।এদিকে মোমেনা বেগম একের পর এক কৌশল অবলম্বন করে ও যখন আসমাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে পারলো না,তখন একটা ভয়ঙ্কর যড়যন্ত্র মনে মনে ঠিক করে মোমেনা বেগম তার ভাইয়ের ছেলে বকাটে নিশাখোর যবুক আরমানকে ফোন করলো তারপর বললো,আরমান বাবা তুমি আমার বাড়ি একবার এসো কালকে জরুরী দরকার তোমার কাছে,আরমান বলল,কি এমন দরকার আমার কাছে,ফুফু বলেন কি হয়েছে।মোমেনা বেগম আরমানকে বলল, একটা কাজ করতে পারবি বাপ,আরমান বলল কি কাজ ফুফু?মোমেনা বেগম বললো,আমার বাড়ি আয় তারপর বলবো। আরমান পরের দিন ফুফু মোমেনা বেগমের বাড়ি এসে হাজির হলো,আরমানকে ফুফু মোমেনা বেগম বলল,বাবা তুমি ঐ ছোট লোকের বাচ্চা আসমার ঘরে রাত্রি ঢুকে  আসমার সাথে ধস্তাধস্তি করবে আমি ঠিক সেই সময় লোকজন নিয়ে ধরে ঐ ছোট লোকের বাচ্চাটাকে বাড়ি থেকে বের করে দেব।পারবিনা বাপ?তোকে অনেক অনেক টাকা দেব,আরমান বলল,পারবনা মানে কখন করতে হবে কাজটা?মোমেনা বেগম বলল,কাল রাতে।
পরের দিন রাত নামলো আসমা ঘরে থাকা কিছু মুড়ি খেলো,তাও মোমেনার বাড়ির বৃদ্ধ কর্মচারী মোবারাক চুরি করে কিনে দিয়ে গেছে আসমার কষ্ট না দেখতে পেরে।পরের দিন রাতে আসমা শুয়ে আছে তার ঘরে,দরজা এখনো দেইনি ভাবছে পরে দরজা দিয়ে ঘুমাবে।হঠাৎ আসমা দেখলো আরমান ঘরে ঢুকেই আসমাকে জড়িয়ে ধরলো,আসমা ধস্তাধস্তি করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কিন্তু দুর্বল শরীর আসমার,না খেয়ে খেয়ে এতটাই দুর্বল যে আরমানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।
আরমান আসমাকে এত জোরে ধরেছে যে আসমার আর কিছুই করার নেই,আরমান একে পর এক আসমার শরীর থেকে শাড়ি ব্লাউজ সব খুলে ফেলেছে তারপর
আসমাকে ধর্ষণ করে ঘরে অপেক্ষা করছে আরমান মোমেনা বেগমের জন্য।
একটু পর মোমেনা বেগম পাড়ার লোক জন নিয়ে হাজির হয়ে ঘরে ঢুকে আসমাকে ধরে বাইরে নিয়ে এলো,আরমান মোমেনা বেগমের কথা মত পালিয়ে গেলো। মোমেনা বেগম লোকজনকে বলল,এই মেয়ে চরিত্রহীন আমার কথা তো কেউ এতদিন বিশ্বাস করনি আজ সবাই প্রমাণ পেলে তো?
কাল সকালে এই চরিত্রহীন ছোট লোকের বাচ্চার বিচার করে বাড়ি ছাড়া করা হবে আপনরা কি বলেন,সবাই বলল হ্যাঁ সকালে বিচার করতে হবে।আজ সবাই একসুরে কথা বলছে,আসমা নির্বাক,আসমার আজ কেন জানি মনে হলো পাষান পৃথিবীর জীর্ণ কুঠিরে আজ সংরক্ষিত তার ভালোবাসা বিসর্জন হলো,চূর্ণ হলো তার সব অহঙ্কার।জিকুকে হারানোর পর থেকে কত রাত কেটে গেছে একা,নির্ঘুম অশ্রু সজল দুটি চোখ,কষ্টের আলিঙ্গনে ছিলো এই ক্ষণিক জীবনে না পাওয়ার সব কষ্ট গুলো,আজ কারো প্রতি আসমার কোন অভিযোগ নেই,নেই পৃথিবীর প্রতি কোন অভিমান
আজ যা আছে সেটা তার ভাগ্যের প্রতি ঘৃণা,নিজেকে বড় একা লাগছে কেউ নেই তার আজ।


চলবে....

কবি মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা




রীতি
মোঃ ইসমাঈল 

আহা কতই না সুন্দর দেখতে ফুল
চোখ আসে জুড়িয়ে হয়ে যায় ব্যাকুল। 
যখনই নাকে আসে ফুলের ঘ্রাণ
পরম শান্তিতে জুড়ায় এ মন ও প্রাণ। 

মৌমাছিরা ফুল থেকে করে মধু আহরণ
তোমারই মনের গহিনে আমি করিবো বিচরণ।
ফুল ফুটে বসন্তের ঋতুতে
আমি হারিয়ে যাবো কেবল শুধু তোমাতে।

ফুল ফুটে ফল ধরিয়ে যায় সে ঝড়ে
মানুষ অভিনয়ের মাঝে যায় যে মরে।
অবশেষে হয়ে যায় ফুলের ইতি
অপরদিকে মানুষের বেঁচে থাকে শুধুই স্মৃতি।

কবি রফিকুল ইসলাম এর কবিতা




আশাদীর্ণ অনুতাপে
রফিকুল ইসলাম

নন্দন ভুবনলোকে  আনমনে জাগে 
কত স্বপ্ন  এলোমেলো 
তৃষ্ণিত পলাতকা মন পরম আত্মীয় প্রিয়জন
কত বন্ধু এল-গেলো।। 
অনুভূতির সীমানায় কত কল্পনা
কত প্রত্যাশার পায়চারী 
কখনো অভিমানে পিয়াসী মনে আড়ি ।
স্বপ্ন বিন্যাসে নিশিদিন নীলকণ্ঠ ফোটে
ধূলা মাটির মায়া মালিকায়
বেগুনি প্রজাপতি নাচে বাতাসে গায়।
ভালোবাসার অরণ্যে মুখ লুকায় 
আবেগী বাসর সাজায় পাতার আড়ালে।
 শত চুম্বনে অনুরাগে মায়ায় জড়ালে ।
ঘুম ভাঙা ভোরে ঝরে পড়ে সুখের শিশির 
রোদেলা ক্লান্ত দুপুর 
অদূরে হাঁসের ছানা জলে ভাসে 
ব্যথার দেউলে বসে কত কথা মনে আসে।
বিকেলের  সোনা রোদে 
হলুদ ঝিঁঙে ফুল মাচায় দোলে
প্রণয়ী পায়রা বাকবাকুম মাতে টিনের চালে।
অলখ্যে হলুদ রঙে ঝরে পড়ে পাতার আয়ু 
আশাদীর্ণ অনুতাপে
বিমর্ষ-ম্লান জীবন সন্ধ্যা বিদায় আরতি জ্বালে 
আঁধারের  নির্জন পথে।