আজ থেকে শুরু হলো নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের পড়তে সহযোগিতা করুন লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে লিখতে সহযোগিতা করবে।
উদাসী মেঘের ডানায়
(১ম পর্ব)
ভিঁজে বালুচরে উদাসী মেঘের পড়ন্ত বিকেলে একহাত
শাড়ির কুচি আলগোছে একটু উচু করে ধরে দাঁড়িয়ে
অগনিত ঢেউয়ের জলরঙে চোখ মেলে দিলো।
আরও কিছুটা সময় থেকে মৃদু পায়ে এগিয়ে গেলো
আর একটু সামনে।
মনটা কেন জানি ঐ জলতরঙ্গের ঢেউয়ের মতোন
একরাশ কান্না গুমরে উঠতেই, থমকে গেলো ডাক শুনে
ঃ তৃষ্ণা তুমি এখানে?
তৃষ্ণা কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকলো, চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো
ঃ হুম দেখতেই পাচ্ছো
তুমি এখানে অপু?
ঃ আমি ও কিছুটা সময় কাটাতে এসছি,একা এসেছো।
ঃ একা আসা যায়না বুঝি।
ঃ বেশ ভালো লাগছে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবার
ফিরে দেখা তুমি তেমনই আছো ,শুধু ভ্রমর কেশে
কাশঁফুলের ছোঁয়ায় বেশ লাগছে।
ঃএই সেরেছে অপু, এই বয়সে ও কাব্য ভাণ্ডার আছে দেখছি।
ঃ বয়স হয়তো সময়ের হিসেবে বাড়ে,কিন্ত মনের কি
বয়স বাড়ে। যাক কোথায় উঠেছো?
ঃ রেষ্ট হাউজে, একটা সেমিনারে এসছি, ভাবলাম
ছুটি নিয়ে সামিয়া আর আমি দুদিন থাকবো।
তুমি কোথায়?
ঃ ঔ-তো সায়মনে, বেশ লাগছে আমার তোমার সাথে
দেখা হয়ে, কত বছর হলো বলো একটা কল ও
করোনা কেন?
কি হবে বলোতো দেখা করে,কল করে জীবন কি পাল্টে যেতেো।
ঃ তৃষ্ণা জীবন পাল্টে যায়না, আমরা পাল্টে ফেলি জীবনের চাওয়া,পাওয়া গুলি সমাজের দায়বদ্ধতা আমাদের আঁকড়ে ধরে তাই। তবুও কেন
জানি জীবনের গল্পগুলো চাপা থাকে নিভৃত মনে।
তৃষ্ণা দু'চোখ মেলে ঢেউ গুনছে যেনো জীবনের পরতে
পরতে ঢেউ ভাঙ্গা খেলা ঘর ভেসে যায় অজান্তে এমন সময় মৌনতা ভেঙ্গে ডাকলো অপু
ঃ এসোনা একটু বসে দেখি সূর্য ডোবার এই গোধুলি
সময় টুকু, একটু থেমে, আপত্তি আছে?
ঃ তা বসা যায়।
ঃ আর হয়তো দেখা হবে কিনা জানিনা,তবে
দেখা হবার আনন্দ টুকু নিয়ে না হয় ফিরে যাবো আমরা।
বসে রইলো দুজনই চুপ, কেউ কথা বলছেনা
অপু নিরবতা ভেঙে বললো -এখনো একাই আছো
নিজের দিকে একবার ও দেখলেনা ভাবলেনা একার
জীবন বয়ে বেড়ানো কি কষ্ট তা আমি এখন বুঝি
সাহস হয়নি তোমাকে ফোন করি, ঐ সময়টা তোমার পাশে ছিলাম ঠিকই কিন্ত সমাজ তোমাকে এতোটাই
কঠিন করে ফেলেছিলো, যে একটা বছর স্বামির সংসার করেছিলে, উনি রোড আকসিন্ডেটে মারা
গিয়েছিলো, সবাই অপয়া বলাতে সেই সব কথার
ভিতরই বন্দী হয়ে থাকলে।
ঃকি আর করা বলো,তবে বেশ আছি।
ঃ মনে আছে জিগ্যাসা করেছিলাম তোমার কি কোন
আবেগ নেই?
ঃকথার মাঝে তৃষ্ণা বলে উঠলো-মনে আছে বলেছিলাম।
না,কোন আবেগ নেই,যে সংসার অপমানে অপবাদে
জর্জিরিত করে স্বামির মৃত্যুর দায়ভার চাপিয়ে শশুর
বাড়ি থেকে বের করে দেয়,একা করে দেয়
তার আবেগ সব স্বপ্ন স্রোতে ভেসে যায়,তার আবার আবেগ।
আমি চাইনি আমার মতন আর কোনো নারী কষ্ট পাক,
তাই বুঝতে পেরেছিলাম একসাথে কাজ করেতে করতে তুমি ভালোবেসে ফেলেছিলে, আমিও হয়তো
বুঝতে দেইনি কখনো,তোমার বউ আছে কি লাভ লুকোচুরি খেলায়
তবে কেন আমি এতো কষ্টো নিবো নতুন করে স্বপ্ন দেখার,কেনইবা আমি
আর একটা সংসার ভাঙার পাপ নিজের ঘাড়ে নিবো
তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম বলতে সেদিন।
সরে ও গিয়েছিলাম এই চাকরীটা ছেড়ে অন্য জায়গায় কাজের ব্যাস্তটা দেখিয়ে।
যাক দীর্ঘ সময়ের পরও জানতে পারলাম ভালোবাসতে। কিন্ত আমার সংসারের কথা ভেবে
দুরে সরে থাকতে, হুমম, তখন হয়তো আমি
সংসার সামলাতে যেয়ে আরোও বেশি কষ্ট দিতাম
দুটো নারীকে।
আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে স্যালুট জানাতে।
ঃ কি যে বলোনা অপু বন্ধুকে তো ভালোবাসে
সবাই,তাই বলে পাবার জন্য নিজের স্বার্থের জন্য
কেউ ঘর ভাঙে।
ঃ যাক আজ কিন্ত আমার সাথে ডিনার করে তারপর যাবে, এখন আপত্তি নেই তো আমার সংসার
ভাঙারও ভয় নেই,ও চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে।
চমকে উঠে বললো - কবে, কি হয়েছিলো?
আমাকে বলো প্লিজ।
-ঃ ওর বিয়ের আগ থেকেই হার্টের সমস্যা ছিলো, প্রথম
ছেলেটা হবার সময় আমি জানতে পারি, তারপর
আর বাচ্চা নেইনি দেশের বাহিরে ও নিয়ে যেতাম
চিকিৎসা করাতে, লাভ হয়নি,হঠাৎ লাঙে পানি এসে
যাওয়াতে বাচাঁতে পারেনি ডাক্তার,তা প্রায় পাচঁ বছর হলো ও নেই, পরে সবই বলবো তোমাকে যদি শুনতে
চাও।
ঃঅবশ্যই শুনবো আজই শুনবো, মনটা খুবই অস্হির
হয়ে উঠলো।
তৃষ্ণা চুপ করে সব শুনে বললো- আমাকে তুমি
কল করে জানাতে পারতে।
ঃইচ্ছে করে জানাইনি, তু্মি আবার কি ভাববে তাই।
ঃ সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, এখন না হোক ফেরা যাক।
তারপর সব শুনবো।
ঃচল পৌঁছে দিয়ে আসি রেষ্ট হাউজে
আটটার সময় তৈরী থেকো নিতে আসবো...
]
(.চলবে।...)