৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"১ম পর্ব

 আজ থেকে শুরু  হলো নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।    




উদাসী মেঘের ডানায়       
                                                     (ম  পর্ব)
 

ভিঁজে বালুচরে উদাসী মেঘের পড়ন্ত বিকেলে একহাত
শাড়ির কুচি আলগোছে একটু উচু করে ধরে দাঁড়িয়ে
অগনিত ঢেউয়ের জলরঙে চোখ মেলে দিলো।
আরও কিছুটা সময় থেকে মৃদু পায়ে এগিয়ে গেলো
আর একটু সামনে।
মনটা কেন জানি ঐ জলতরঙ্গের ঢেউয়ের মতোন
একরাশ কান্না গুমরে উঠতেই, থমকে গেলো ডাক শুনে
ঃ তৃষ্ণা তুমি এখানে?
তৃষ্ণা কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকলো, চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো
ঃ হুম দেখতেই পাচ্ছো
    তুমি এখানে অপু? 
ঃ আমি ও কিছুটা সময় কাটাতে এসছি,একা এসেছো।

ঃ একা আসা যায়না বুঝি। 

ঃ বেশ ভালো লাগছে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবার
ফিরে দেখা তুমি তেমনই আছো ,শুধু  ভ্রমর কেশে
কাশঁফুলের ছোঁয়ায় বেশ লাগছে। 
ঃএই সেরেছে অপু, এই বয়সে ও কাব্য ভাণ্ডার   আছে দেখছি। 

ঃ বয়স হয়তো সময়ের হিসেবে বাড়ে,কিন্ত মনের কি
বয়স বাড়ে। যাক কোথায় উঠেছো? 

ঃ রেষ্ট হাউজে, একটা সেমিনারে এসছি, ভাবলাম
ছুটি নিয়ে সামিয়া আর আমি দুদিন থাকবো।
তুমি কোথায়? 
ঃ ঔ-তো সায়মনে, বেশ লাগছে আমার তোমার সাথে
দেখা হয়ে, কত বছর হলো বলো  একটা কল ও
করোনা কেন?
কি হবে বলোতো দেখা করে,কল করে জীবন কি পাল্টে যেতেো। 
ঃ তৃষ্ণা জীবন পাল্টে যায়না, আমরা পাল্টে ফেলি জীবনের চাওয়া,পাওয়া গুলি সমাজের দায়বদ্ধতা আমাদের আঁকড়ে ধরে তাই। তবুও কেন
জানি জীবনের গল্পগুলো চাপা থাকে নিভৃত মনে। 

তৃষ্ণা দু'চোখ মেলে ঢেউ গুনছে যেনো জীবনের পরতে
পরতে ঢেউ ভাঙ্গা খেলা ঘর ভেসে যায় অজান্তে এমন সময় মৌনতা ভেঙ্গে ডাকলো অপু
ঃ এসোনা একটু বসে দেখি সূর্য ডোবার এই গোধুলি
সময় টুকু, একটু থেমে, আপত্তি  আছে? 
ঃ  তা বসা যায়।
ঃ আর হয়তো দেখা হবে কিনা জানিনা,তবে 
দেখা হবার আনন্দ টুকু নিয়ে না হয় ফিরে যাবো আমরা। 

বসে রইলো দুজনই চুপ, কেউ কথা বলছেনা
অপু নিরবতা ভেঙে বললো -এখনো একাই আছো
নিজের দিকে একবার ও দেখলেনা ভাবলেনা একার
জীবন বয়ে বেড়ানো কি কষ্ট তা আমি এখন বুঝি 
সাহস হয়নি তোমাকে ফোন করি, ঐ সময়টা তোমার পাশে ছিলাম ঠিকই  কিন্ত সমাজ তোমাকে এতোটাই
কঠিন করে ফেলেছিলো, যে একটা বছর স্বামির সংসার করেছিলে, উনি রোড আকসিন্ডেটে মারা
গিয়েছিলো, সবাই অপয়া বলাতে সেই সব কথার
ভিতরই বন্দী হয়ে থাকলে। 

ঃকি আর করা বলো,তবে বেশ আছি। 
ঃ মনে আছে  জিগ্যাসা করেছিলাম তোমার কি কোন
আবেগ নেই? 

ঃকথার মাঝে তৃষ্ণা বলে উঠলো-মনে আছে বলেছিলাম। 
না,কোন আবেগ নেই,যে সংসার অপমানে অপবাদে
জর্জিরিত করে স্বামির মৃত্যুর দায়ভার চাপিয়ে শশুর
বাড়ি থেকে বের করে দেয়,একা করে দেয়
তার আবেগ সব স্বপ্ন স্রোতে ভেসে যায়,তার আবার আবেগ।
আমি চাইনি আমার মতন আর কোনো নারী কষ্ট পাক,
তাই বুঝতে পেরেছিলাম একসাথে কাজ করেতে করতে তুমি ভালোবেসে ফেলেছিলে, আমিও হয়তো
বুঝতে দেইনি কখনো,তোমার বউ আছে কি লাভ লুকোচুরি খেলায় 
তবে কেন আমি এতো কষ্টো নিবো নতুন করে স্বপ্ন দেখার,কেনইবা আমি
আর একটা সংসার ভাঙার পাপ নিজের ঘাড়ে নিবো
তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম বলতে সেদিন।
সরে ও গিয়েছিলাম এই চাকরীটা ছেড়ে অন্য জায়গায় কাজের ব্যাস্তটা দেখিয়ে। 

যাক দীর্ঘ সময়ের পরও জানতে পারলাম ভালোবাসতে। কিন্ত আমার সংসারের কথা ভেবে
দুরে সরে থাকতে, হুমম, তখন হয়তো আমি 
সংসার সামলাতে যেয়ে আরোও বেশি কষ্ট দিতাম
দুটো নারীকে।
আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে স্যালুট জানাতে। 

ঃ কি যে বলোনা অপু বন্ধুকে তো ভালোবাসে
সবাই,তাই বলে পাবার জন্য নিজের স্বার্থের জন্য
কেউ ঘর ভাঙে। 

ঃ যাক আজ কিন্ত আমার সাথে ডিনার করে তারপর যাবে, এখন আপত্তি নেই তো আমার সংসার
ভাঙারও ভয় নেই,ও চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। 

চমকে উঠে বললো - কবে, কি হয়েছিলো? 
আমাকে বলো প্লিজ। 

-ঃ ওর বিয়ের আগ থেকেই হার্টের সমস্যা ছিলো, প্রথম
ছেলেটা হবার সময় আমি জানতে পারি, তারপর
আর বাচ্চা নেইনি দেশের বাহিরে ও নিয়ে যেতাম
চিকিৎসা করাতে, লাভ হয়নি,হঠাৎ লাঙে পানি এসে
যাওয়াতে বাচাঁতে পারেনি ডাক্তার,তা প্রায় পাচঁ বছর হলো ও নেই, পরে সবই বলবো তোমাকে যদি শুনতে
চাও।
ঃঅবশ্যই শুনবো আজই শুনবো, মনটা খুবই অস্হির 
হয়ে উঠলো। 
তৃষ্ণা চুপ করে সব শুনে বললো- আমাকে তুমি 
কল করে জানাতে পারতে। 

ঃইচ্ছে করে জানাইনি, তু্মি আবার কি ভাববে তাই। 

ঃ সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, এখন না হোক ফেরা যাক।
    তারপর   সব শুনবো। 

ঃচল পৌঁছে দিয়ে আসি রেষ্ট হাউজে
আটটার সময় তৈরী থেকো নিতে আসবো...


     ]

                                                                                                                                           (.চলবে।...)

রাবেয়া পারভীন এর ধারাবাহিক ছোট গল্প "কালো ক্যনভাস"৪

  নতুন  ধারাবাহিক "কালো ক্যনভাস "
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।  



                    কালো ক্যনভাস 
                                                                                        ( র্থ পর্ব)

ক্ষনিকের জন্য নীলার দৃস্টি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো।  পনেরো বছর আগের সময়টা  মনে হলো তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।  তের বছর বয়সের এক মিষ্টি কিশোরী।  জীবনের কোন জটিলতা  তাঁকে তখনো স্পর্শ করেনি । রঙিন প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করে। সপ্তম  শ্রেনীতে পড়ে।  এমন সময় তাঁদের বাসায় গৃহশিক্ষক  হয়ে আসে  এই  ইশতিয়াক আহমেদ। লম্বা  ছিপছিপে গড়নের যুবক। ইউনিভার্সিটি তে পড়ে। নীলা আর  ছোট ভাই নয়ন কে পড়ানোর  জন্য  ইশতিয়াক স্যারকে  নিয়োগ দেয়া হয়।  পড়ানোর ফাঁকে মাঝে মাঝেই  নানান ছু্ঁতোয়  নীলার হাত ধরত  ইশতিয়াক।
- বাহ্ !  তোমার হাতটা তো খুব সুন্দর আর খুব নরম।
নিজের হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে  জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতো নীলা।  তখন ইশতিয়াক হেসে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলত
- কি হয়েছে নীলা , ভয় পাচ্ছ কেন ?  
একদিন  নয়ন পড়তে এলোনা। নীলা একা পড়ছিলো  ইশতিয়াক  হঠাৎ নীলাকে জরিয়ে ধরে ওর গালে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসল। নীলার সারামুখমন্ডল  লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

জাফর রেজা'র ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত "৬

স্বমহিমায় লিখে চলেছেন নতুন ধারাবাহিক লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত 
মতামত দিন  আপনাদের  একটি  কমেন্ট লেখকের ১০০ লেখার  সমান মূল্যবান। 




ক্ষনিক বসন্ত 
( ৬ ষষ্ঠ পর্ব ) 
 

দেশে দিনগুলি মোটামুটি কেটে যাচ্ছিল, কিন্তু কোথায় কেন যেন একটা শুন্যতা অনুভব করি, কি যেন কি নেই।
বুলার সাথে প্রতিদিন কথা হয়, ও অনেক কথার মাঝে একটি কথা প্রতিদিনই বলে __ শরীরের যত্ন নেবেন। 

কিছুদিন যাবৎ বুলা বেশ আনমনা,  কোন প্রশ্নের উত্তর সাথে সাথে পাইনা।
বুলা কি হয়েছে,  আপনি এত অন্যমনস্ক কেন, আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল কবে আসবেন ? 
আপনি বললে আমি কালই চলে আসবো।
কালই আসার দরকার নেই তবে তারাতারী আসুন।
চারদিন পর চলে গেলাম। বুলা এয়ারপোর্টে এল, কিন্তু ওর মুখে সেই হাসি নেই, ওকে খুব বিষণ্ণ লাগছিল।
কি হয়েছে বুলা ?
উত্তর দিলনা বলল__ চলুন যাওয়া যাক।
যাবার পথেও খুব কম কথা বললো। তারপরও জিজ্ঞেস করলাম__ বুলা কি হয়েছে ?
উত্তর দিলনা।
কাল আপনার সময় হবে?
কেন বুলা ?
আমাকে একটু নদীর পাড়ে ও পার্কে নিয়ে যাবেন ?
অবশ্যই নিয়ে যাব, কখন যাবেন।
সকাল থেকে সারাদিনের জন্য। 

আমরা নদীর পাড়ে হাটছি, কিন্তু বুলা আগের মত কথা বলছেনা। আমার একটু কাছে এসে বলল
একদিন আপনাকে একটা কথা বলেছিলাম, মনে আছে ?
কি কথা বুলা ?
__ বলেছিলাম, এই সামাজ ও সমাজের আইন গুলোতো আমাদেরই সৃষ্টি, তাই না; তবে এই সমাজ কেন আমাদের সুন্দর স্বপ্নগুলোতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আবার জিজ্ঞেস করলাম বুলা কি হয়েছে ?
বুলা কোন উত্তর না দিয়ে বলল__ চলুন অন্য কোথাও যাই।
আমরা হাটছিলাম একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে। 

                                                                                                                                চলবে...

মোঃহা‌বিবুর রহমান এ‌র লেখা "সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা"১১তম পর্ব (ধারাবাহিক মুক্তগদ্য)




                                                     সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা 
                                                                              (১১তম পর্ব)

মানুষ সামা‌জিক জীব অার সে সব সময় সঙ্গ চায়। একজন স্বামীর সব‌চে‌য়ে ভাল সঙ্গী হ‌লো তার সহধ‌র্মিণী আর স্ত্রীর সব‌চে‌য়ে ভাল ও কা‌ছের সঙ্গদাতা বা বন্ধু হ‌লো তার প্রিয়তম স্বামী। সৃ‌ষ্টির সেরা জীব- মানু‌ষের বি‌বেক-বু‌দ্ধি আ‌ছে ব‌লেই তারা নি‌জের ভালমন্দ অ‌তি সহ‌জেই বুঝ‌তে পা‌রে এবং অ‌ন্য প্রাণী‌দের ভালমন্দের বিষয়‌টিও অনুধাবন কর‌তে পা‌রে বা অান্দাজ কর‌তে সক্ষম হয়।

‌বি‌য়ে জি‌নিস‌টি হ‌লো স্বামী স্ত্রীর ম‌ধ্যে সারা জীব‌নের আত্মার বন্ধন। তাই এর গুরুত্ব অপ‌রিসীম। এটা বাঙ্গালী সমা‌জের মানুষ‌দের জন‌্য বি‌শেষভা‌বে প্রযোজ‌্য। পাশ্চা‌ত্যের অ‌নেক দে‌শেই আজকাল ঘন ঘন জীবনসঙ্গী প‌রিবর্তনের একটা রেওয়াজ সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে।

একবার ভাবুন‌তো-একজন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার বু‌ড়ো বয়‌সের কথা। এমন একটা বয়সে মানুষ উপনীত হয় যখন প্রতি‌টি মানুষই বেশ কিছুটা বোধ শ‌ক্তি হা‌রি‌য়ে ফে‌লে অ‌নেকটা ছোট্ট মাসুম শিশুর মত হ‌য়ে যায়। এ সময় নিজ সন্তা‌নেরাও তা‌দের তেমন পাত্তা দেয় না। (কোন কোন ক্ষে‌ত্রে কিছুটা ব‌্যতিক্রম তো অবশ‌্যই থা‌কে)। ছে‌লের বউ‌য়েরা কিংবা না‌তিপু‌তিদের কোন কা‌জে কিংবা প্রয়োজ‌নে ডাক‌লে বা কোন কিছু চাই‌লে তারা ঝা‌মেলা ম‌নে ক‌রে। এমন‌কি কেউ তখন তা‌দের‌ দি‌কে ফি‌রেও তাকা‌তে চায় না। এমতাবস্থায়, য‌দি বৃ‌দ্ধের সহধ‌র্মিণী জী‌বিত থা‌কেন তাহ‌লে ঐ বয়‌সেও কিন্তু তি‌নি তার প্রিয় স্বামীর প্রতি নজর রা‌খেন।

বৃদ্ধ বয়‌সে মানুষ নি‌জে‌কে বড় অসহায় ভা‌বে এবং কার‌ণে অকার‌ণে সহ‌জেই আ‌বেগপ্রবণ হ‌য়ে প‌ড়ে। এমতাবস্থায়, স্বামী স্ত্রীর ম‌ধ্যে পরস্পর হৃদ‌্যতার কার‌ণেই এ‌কে অপ‌রের জন‌্য তারা অনুভব ক‌রে থা‌কেন আর এ কার‌ণেই তা‌দের অসহায়ত্ব কিন্তু বহুলাং‌শেই দূরীভূত হ‌য়ে যায়।

জানিনা পশুপা‌খিদের ম‌ধ্যে আ‌দৌ এধর‌নের কোন অনুভূ‌তি আ‌ছে কিনা? মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব তাই তা‌দের অনুভূ‌তি সমূহ প্রখর হয় এবং তারা মু‌খের ভাষায় তা প্রকা‌শ কর‌তে পা‌রে। অন‌্যদি‌কে, পশুপা‌খি‌রা অঙ্গভ‌ঙ্গির মাধ‌্যমে অনুভূ‌তি প্রকাশ ক‌রে থা‌কে যা শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ তা উপল‌ব্ধি কর‌তে পা‌রে।

সু‌খে দুঃ‌খে বিপ‌দে আপ‌দে একজন সহধ‌র্মিণী সদা তার স্বামীর পা‌শে অবস্থান ক‌রে থা‌কেন। একইভা‌বে স্বামী তার সহধ‌র্মিণীর পা‌শে থে‌কে আজীবন তা‌কে সাহস যু‌গি‌য়ে ভালমত বেঁচে থাকার অনু‌প্রেরণা যু‌গি‌য়ে যান।

দীর্ঘজীবন চলার প‌থে সহধ‌র্মিণী তার স্বামী ব‌্যক্তি‌টির জীব‌নের সা‌থে একদম জো‌কের মত লে‌গে থা‌কেন আর সম‌য়ে সম‌য়ে তা‌কে হুঁ‌শিয়ারী বার্তা দি‌য়ে সাবধান ক‌রে স‌ঠিক প‌থে চল‌তে সহায়তা ক‌রেন। তাই ছন্দ মি‌লি‌য়ে বল‌তে হয় স্বামী স্ত্রী যেন একটা মা‌নিক জোড় তারা শুধুই দুজন দুজনার।




ক্রমশ

সজল কুমার মাইতি'র দুটি কবিতা







নিশ্চিহ্ন

আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তায় 
রোজ একটা কুকুর মাঝরাতে
রাস্তার মধ্যিখানে ঘুমিয়ে থাকে।
আগে আবছা আলোয় দেখা যেত
কেমন এক স্বপ্নালু মায়াবী দৃশ্য মনে হোত।
এখন স্ট্রিটল্যাম্পের আলোগুলো বদলে দিয়েছে 
উজ্জ্বল দিনের মতো।
এখনো সে ঘুমিয়ে থাকে ঠিক মাঝরাতে
রাস্তার মাঝখানে।
বড়ই নিশ্চিন্ত, বড়ই সহজ সরল
হয়তো কোনো দিন কোনো মত্ত নেশাগ্রস্ত গাড়িচালক
চাকার তলায় পিষে দিয়ে যাবে 
ধীরে ধীরে রক্তের দাগ 
চাকার থেকে ও নিশ্চিহ্ন হবে একদিন।






সুখের পায়রা

কয়েকটা পায়রা রোজ পাশের বাড়ির চারতলায় 
ভাঙা জানালায় বসে বকম বকম করে।
কখনো সখনো ভাঙা জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়
ভেতরে হয়তো বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা হয়।
কোন একদিন ভাড়াটে আসবে ঐ ঘর পরিষ্কার হবে 
ওদের তাড়িয়ে দেবে। সুখের পায়রা ঘরছাড়া হবে 
পায়রা সত্যি সুখের খোঁজ দিতে পারে?

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৬

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 




                                               উপন্যাস টানাপোড়েন 
                                                                                                                           পর্ব (১৬)

                                                                           লোভ

                                  

                                       নেক দিন টানা বৃষ্টির পর রোদ উঠেছে।গতরাতে পার্থ ও  সোমদত্তার চিন্তায় ঘুম হয় নি। সকালে একবার পার্থর খবর নেবে বলে সমদত্তাকে ফোন করলো।রিং হলে ওপারের গলা এলো 'হ্যালো'।
রেখা বলল  'পার্থ কেমন আছে  রে?'
সমু বলল ' ভালো।'
রেখা আর কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে বলে ফোন ছেড়ে দিল। এমনিতেই রেখার অস্বস্তি হচ্ছিল সোমদত্তা সঙ্গে কথা বলতে। কারণ সকাল-সকাল রেখা তার মেজাজটাকে বিগড়াতে   চায় নি। ফোন কেটে দিল। আজকে রেখাকে স্কুলে যেতে হবে। রিম্পা দির সঙ্গে এ কটা দিন সেভাবে ভালো করে কথা বলাই হয়নি।মনে হচ্ছে যেন এক যুগ রিম্পাদির সঙ্গে কথা বলা হয় নি ।মনটা ছটফট করছে। এজন্য স্কুলে যাবে । যে কটা দিন রিম্পাদির সংস্পর্শে থাকা যায়। সেই লোভটা রেখা কিছুতেই সামলাতে পারছে না ।তাই ক্লান্ত-অবসন্ন শরীর নিয়েও স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। না হলে আজকের দিনটা রেস্ট নিতো। এদিকে সকাল-সকাল মনোজ গেছে পুটুর বাড়িতে ।খোঁজ লাগাতে কি হয়েছে? মনোজের আসার টাইম হয়ে গেছে কিন্তু আসছে না কেন ?এদিকে রেখাকেও স্কুলে যেতে হবে। রেখা দ্রুত হাতের কাজগুলো সেরে, স্নান করে ,পূজা পাঠ করে রেডি হয়ে নিল। মনোজ আসলে ওকে  ব্রেকফাস্ট দিয়ে দেবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রেখা ভাবছে না আর দেরী করা যাবে না ।মনোজকে একটা ফোন করে নিল রেখা। 
হ্যালো'। তুমি কখন আসবে? আমাকে ট্রেন ধরতে হবে তো?
মনোজ বলল 'তুমি বেরিয়ে যাও?'আজকে তো আমি অফিস যাব না।'
রেখা বলল ' ও দিকে পুটুর খবর কি?'
মনোজ বলল 'পুটু কদিন কাজে আসতে পারবে না?'
রেখা বলে  'তাহলে কি হবে?'
মনোজ বলল  'ওকে বলে এসেছি নিজে আসতে না পারলে অন্য কাউকে কাজে ঢুকিয়ে দে।'
রেখা বলল  'কী বলল?'
মনোজ বলল  'তুমি স্কুলে বেরিয়ে যাও, পরে কথা হবে।'
রেখা বললো  'একটা চাপ থেকে যাচ্ছে ।ঠিক আছে আমি স্কুলে চলে যাচ্ছি। তোমার ব্রেকফাস্টটা রাখা আছে ।খেয়ে নেবে ।দেখো বাড়িতে আছো বলে আবার ১টা বাজিয়ে দিও না বেকফাস্ট খেতে। আর দুপুরের খাবারটা ঠিক সময়ে খেয়ে নিও।'
মনোজ বলল  ,'হ্যাঁ ,রে বাবা। আমি ঠিক সময়ে খেয়ে নেব ।তুমি অত টেনশন নিও না। আর সাবধানে যেও।'
রেখা বলল  'ঠিক আছে ।দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।
না, এখন যদি না বের হতে পারে তাহলে এই ট্রেনটা সে মিস করবে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটল অটো অটো বলে।
অটোতে উঠে পরল ।বাবা আজকে অনেক ভিড়।রেখাকে যে লোকটার পাশে বসতে হলো তার গায়ের থেকে ভোটকা দুর্গন্ধ ,সঙ্গে ঘামের গন্ধ। রেখার যেন মনে হলো অন্নপ্রাশনের খাবারগুলো সব বেরিয়ে আসবে।রেখার কেমন অস্বস্তি হতে লাগল। কিন্তু কিছু করার নেই ।যেতে হবেই। এরমধ্যে পাশে বসে থাকতে-থাকতে রেখা অনুভব করল অচেনা লোকটি যেন ক্রমশ সরে আসছে, আলতো করে ওর সাথে নিজের স্পর্শ ,আস্তে আস্তে কুনুটা যেন রেখার বুকের কাছে ।রেখা কিছু বলতে পারছে না ।শেষ পর্যন্ত রেখা অটোওয়ালাকে বলল ' একটু তাড়াতাড়ি চলুন না।'
 অটোওয়ালা বলল  'এর থেকেও দ্রুত কি করে যাব দিদি ?আমার আটোতে তো আর এরোপ্লেনের পাখা লাগানো নেই।'
এই কথা শুনে সেই অসভ্য লোকটি হো হো হো্করে হেসে উঠলো।
রেখাও বুঝল যে সে বোকার মত কথাটা বলেছে ।অটোওয়ালা ঠিক তার গতিতেই যাচ্ছে কিন্তু রেখার মনে হচ্ছিল একটু তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারলেই লোভী মানুষটার হাত থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে নিতে পারতো। এই জন্য তাড়া দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অটো স্টেশনে থামলো। ততক্ষণে খবর হয়ে গেছে ট্রেন ঢুকছে ।অটোওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে ছুটতে শুরু করলো ওভারব্রিজ পার হয়ে যেতে হবে। যখন ওভারব্রিজ পার হলো তখন ট্রেন হুইসেল দিয়েছে এবার সে আরো দ্রুত ছুটতে শুরু করলো ।কোনরকমে সে  ট্রেনটায় উঠলো ।সেই সময় ওর হুঁশ ছিল না যে ,তাকে লেডিস কম্পার্টমেন্টে উঠতে হবে। তাড়াহুড়োতে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়েছে। ভেতরের দিকে যাবার চেষ্টা করলো ভিড় ঠেলে ঠেলে কোন রকমে লাগেজগুলোকে নিয়ে একটা সাইড করে দাঁড়াতে চেষ্টা করল।
ট্রেনের ভেতরেও সে লক্ষ্য করলো এই ভিড়ের মধ্যে তার পায়ের উপরে কোন একটি পা যেন ঘষছে ।তাকিয়ে দেখল সেই অটোতে বসে থাকা লোকটি। রেখা এবার আরো বেশি অস্বস্তি অনুভব করল।  নিজের পা টা সরিয়ে নিল । কিন্তু কি রকম নির্লজ্জ লোকটা ।ঠিক রেখার পায়ের কাছেই আবার পা টা রেখেছে ।রেখা ভাবছে কি করে এই লোকটার পাশে এসে দাঁড়াল? রেখা ভাবতেই পারে নি। রেখা এবার সিটে বসে থাকা লোকদের জিজ্ঞেস করলো কে কোথায় যাবে ?এর মধ্যে একজন বলল ' পালপাড়া নামবে।'
 রেখা বলল  'জায়গাটা বুক রইল।'
 লোকটা শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। পরক্ষণেই চোখ বুজে ঘুমাতে থাকল।
অস্বস্তি ক্রমশ বাড়িয়ে দিলো পাশের ওই লোকটা। এবার রেখা বাধ্য হয়েই বললো ' দাদা একটু ঠিক জায়গায় পা রাখুন।'
 লোকটি নির্লজ্জের মতো বলল  'আপনার প্রাইভেট কারে আসা উচিত ।এত ভিড়ের মাঝে একটু এদিক ওদিক হতেই পারে ।'
রেখা কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। কি বলছে এই লোভী মানুষ। রেখার পাশেই কি আবার বসবে..? ভাবতে পারছে না রেখা ।গা টা যেন ঘৃনায় ঘিন ঘিন করতে লাগলো। পুরুষ মানুষগুলোই কি এরকম কে জানে বাবা ।মেয়ে দেখতে পেলে তারা স্থির থাকতে পারে না ।
রেখা মনে মনে ভাবতে লাগল না না সব পুরুষকে দিয়ে বিচার করলে কি হয় ,এটাও একবার পুরুষদের প্রতি সহানুভূতির সঙ্গে ভাবল। এমনি সময় ট্রেন এসে পালপাড়ায় থামল ।রেখা তার নির্দিষ্ট বুকিং সিটে গিয়ে বসলো আর হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অসভ্য লোভী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলো না বলে ।কোনরকমে সে জায়গাটায় বসলো ।কিছুক্ষণ পর সে অনুভব করতে লাগলো সে যার পাশে বসেছে পাশে আরেকটি ভদ্রলোক ? না ভদ্রলোক বলবো না। আরেক লোভী ক্রমশ যেন রেখার গায়ে ঢুকে পড়তে চাইছে ।রেখা ভাবছে আজকের দিনটাই রেখার খারাপ ।তাই এই ধরনের লোভী মানুষদের চক্করে রেখাকে পড়তে হয়েছে ।অথচ মুখ ফুটে বলতে গেলে কি রকম কথা শোনাচ্ছে ।রেখা এবার পাশে থাকার লোকটির দিকে একটু বিরক্তি চোখে তাকালো ,বুঝিয়ে দিতে চাইল, যে কাজটি করছে মোটেই পছন্দ নয় ।বরং লোভী লোকটা একবারে রেখার দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষা বুঝে নিয়ে ইতঃস্তত বোধ করল। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যাচ্ছে পাশের লোকটি  কনুই দিয়ে ধাক্কা মারছে। রেখা ভাবছে এ তো বড্ড জ্বালা হল ।পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ মানুষগুলোই কি তাহলে এরকম? এমন সময় আরেক ভদ্রলোক তিনি নেমে গেলেন ।পাশে এসে বসল সেই অটোতে বসা লোভী কামাতুর লোকটা। রেখা ভাবল বসে থাকাটাই তার অসম্ভব ব্যাপার। দুটো অসভ্য লোভী মানুষের পাশে বসে রেখার তখন স্যান্ডউইচ হবার কথা ।তাই রেখা উঠে  সে এগিয়ে গেল গেটের কাছে। ট্রেন চলেছে বাইরে সবুজ দিগন্ত মাঠ কদিনের বৃষ্টিতেও যে জল থইথই করছিল ।এক দিনের টানা রোদে জল যেন অনেকটা নিচে নেমে গেছে। ভালই লাগছিল প্রকৃতির এই কান্ড কারখানা ।কদিনের বৃষ্টিতে রেখা যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল অথচ এই বৃষ্টি রেখার খুব পছন্দের। এরই মধ্যে ফোন বাজতে শুরু করল রেখা হাতরে হাতরে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করল ।দেখল ।রিম্পাদির কল। রেখা রিং ব্যাক করল রিম্পাদি 'হ্যালো 'বললো।
 রেখা বলল 'ট্রেনে আছি ।স্কুলে যাচ্ছি।'
রিম্পাদি বলল  'আমি এটা জানার জন্যই তোকে ফোন করেছিলাম ।যাক সাবধানে আয় ।অনেক কথা জমে আছে ।তোকে কাছে পেলে সব বলবো।'
রেখা বলল আমিও তোমাকে আজকের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলব।
রিম্পাদি বলল 'কেন রে কিছু অস্বস্তিকর ঘটনা?'
রেখা বলল  'একদম ঠিক ধরেছ।'
রিম্পা দি বলল কেন তোর কাছে সেফটিপিন ছিল না। তোকে তো অনেক আগে আমি এই টিপস দিয়েছিলাম। আরে অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে তো।'
রেখা এত অস্বস্তির মধ্যে ও হাসতে হাসতে বললো 'ঠিকই বলেছ ।তোমার টিপস কাজে লাগাই নি বলেই আজকে এতটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল ।এবার থেকে কথাটা মাথায় রাখবো।'
 রিম্পাদি বলল  'আমার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটেছিল তোকে তো কবে বলেছি না? সেই  চাঁদু সেফটিপিন এর জ্বালা কিরকম হাড়েহাড়ে বুঝতে পেরেছে ।বুঝেছিস ?বলেই দুজনে হাসতে শুরু করলো।
রেখা মনে মনে ভাবল সত্যিই রিম্পাদির কাছে আছে কিছু স্টক। এরইমধ্যে ট্রেন এসে থামল নির্দিষ্ট স্টেশনে। এক ধৈর্যহীন অতৃপ্ত যুবা ট্রেন না থামতেই নামতে যাচ্ছিল ।
এক ভদ্রলোক তাকে টেনে ধ'রে বলেন !'এত তাড়া কিসের ?এইজন্যেই তো যত অঘটন ঘটে।'
রেখা মনে মনে ভাবছে সত্যিই পৃথিবীতে কত ধরনের লোভ কাজ করে। কারোর ভেতরে কামলোভ ,কারোর ভেতরে আগে যাওয়ার লোভ, কারোর ভেতরে কাউকে ভালোবাসার লোভ, কারোর ভেতরে কাউকে বিশ্বাস করার লোভ, কারণ ইর্ষার লোভ। এই লোভ জিনিসটা বড্ড বেশি। আর এটা আছে বলেই একটা প্রতিযোগিতা চলে।



ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৬ ক্রমশ

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের তিনটি কবিতা



যোগচিহ্ন
 
 বিয়োগ বলে কিছু নেই
সবই যুক্ত আমাদের দিন আনা দিন খাওয়া
                          নুন তেল মশলার জীবনে
যাকে তুমি বিয়োগ বলছো 
তা আসলে ঋনাত্মক যোগ 

(a-b) 
এ শুধু দেখার ভুল, অন্যভাবে লেখা
বিভ্রম মেশানো কিছু আধখেঁচড়া অলীক প্রলাপ 
আসলে এটাই সত্য  a+(-b) 

যে প্রেম ভেঙে গেছে 
যে বন্ধু চলে গেছে দূরে 
যে মানুষের ছায়া পৃথিবীতে আর বেচে নেই
এ কেন বিয়োগ হবে ?

এ সকলই অভিজ্ঞতা যুক্ত হওয়া নতুন অধ্যায়। 





উচ্ছেদতন্ত্র

এমন উড়ন্ত দিনে নিজেকেই তুলে ফেলি শেকড়ের থেকে
 
পকেটে সূর্যের আভা নিভে গেছে উদ্বাস্তু বিকেলে 
হাততালি দিয়ে উঠল পুরোনো চিঠির মোহ 

বাক্সের প্রাচীরে সেই সোঁদাগন্ধ রঙিন কবিতা
সমুহ উত্তাপ নিয়ে একান্ত হাতের কাছে উল্লাস চেয়েছে 

বাঁশি,  তুমি কতটুকু সুর গুঁজে দাও
এই বৈভবের হারানো সন্ন্যাসে।












হালখাতা 

ধার থাক যত খুশি  
কিছুতেই হরগিজ  এই ক্ষত শুকোবার নয় 
নিজেই নিজের কাছে প্রতিদিন কেনা বেচা করি 
         থেকে যায়  নিজেরই ঘামের কিছু দেনা 
চুপি চুপি লেখা থাকে গোপন খাতার নিচে অ-গণিত 
সংখ্যাচিহ্ন, মুদ্রাদুষ্ট অঙ্কের সীমানা 


নতুন বছর এলে স্পর্শ করি ধার বাকি
অপরিশোধ্য এই  ঋণ  জানি ফুরোবে না। 

মাধুরী বিশ্বাস




স্বপ্ন প্রেত
                 

তুমি কী এখনও স্বপ্ন দেখো ?
স্বপ্ন ... 
গলিত চাঁদের জোৎস্না মাখার 
জলপরি আর পদ্মপাতার।
এখনও কী রাত জাগো রূপকথার দেশে ? 
স্বপ্নে দেখো.... এলোকেশ, ডাগর চোখ, ঠোঁট, শুভ্র-দেহ, আমন্ত্রণ.... আর স্পর্শ ??

আমি নবীন স্বপ্ন দেখি না বহুদিন 
নিদ্রাহীন রাত জাগা চোখ দেখে--
কবেকার প্রিয় এক স্বপ্ন-প্রেত।
বার বার....

সানি সরকার




চিরন্তন 



প্রতিটি অক্ষর শেষে কোনও যতিচিহ্ন রাখতে নেই 

ভালবাসার জন্যে দ্বন্দ্ব নয়, ধোঁয়া নয় 
একটি প্রাণ আর হাসিই যথেষ্ট

অবাক হব না তোমার কাছে সবই আছে 

আমি তো জানি

দেবব্রত সরকার




হেরাফেরি 

কিছুটা আঘাত এসে খেলা করে মনে আমি তো মনের বালক কিন্তু পরে পরে 
এই দেখ ভুলে আছি তোমাদের থেকে নিয়ে আছি বেশ কিছু ভালোবাসা থেকে
আর বাকি মায়া দিয়ে নিয়ে আসি জল নোনতা জলের মাঝে চোখ টলটল
কি আর বলি কাকে আমার যা আছে তোমাদের কথা মতো চলেছি  বিরাজে

কিছুটা ঘরানা হলেও কিছুটা বদলাবে কিছুটা সময় মতো পিছে পিছে যাবে
রাতের আধার থেকে নিয়ে আসি ভয় মাটির কাছের থেকে জেগে মনময়
বোঝার উপায় নেই কোনো কাজ ফেলে সব্বাইকে ছেড়ে দিয়ে একা একা এলে
এই ধর আর বেশি কথা নয় দেরি এই খানে যা কিছুই করি হেরাফেরি

গোলাম কিবরিয়া শরীফ




নূপুর



হাতে মেহেদী, পায়েতে নূপুর -
কাঁদিছে নতুন বৌ, 
ঘোমটার আড়ালে ঝড় বয়ে যায় -
জানিতে পারেনা কেউ। 

দৃশ্যপট -

সেদিন হঠাৎ বাবা ফিরিলেন -
হাতে দুই হাড়ি দই, 
হাসি হাসি মুখে, চেঁচামেচি করে, 
"রূপসী" র মা যে কই? 

"আরে বাপু, আসিতেছি আমি -
শুনিবো সকল কথা ;
হাতের কাজটা শেষ হতে দাও -
মেয়েটা পেয়েছে ব্যাথা। "

পানের কৌটা হাতে নিয়ে মা যে -
সুধালো বাবাকে এসে;
এইবার বলো হয়েছে কি তবে-
তুমি- বরাবরই একপেশে। 

আরে, খুশির খবর "রূপসী" র তরে-
খুব করে দোয়া করো, 
খুব ভালো ছেলে, নাম ডাক ও আছে,
শিক্ষায়ও বেশ বড়। 

প্রস্তাব দিলো শহরের ছেলে -
ক'জনা এমন পায়? 
বেশ  ভয়ে বাবা, পাছে ফিরে যায় -
যদিও দিয়েছে সায়। 

ওপাশ হইতে কান পেতে শোনে -
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে ;
রূপসীর  মনে হারানোর ভয় -
"পড়েছি এ কোন ফাঁদে! "

অবশেষে এলো সেই শুভক্ষন -
বিয়ের আসরে বর ;
মনে মনে ভাবে,  জানিনা কি লাভে -
বাবা যে করিলো পর। 

পাড়া প্রতিবেশী,  আত্মীয় সব -
আাসিলো অনেক সেজে, 
ঘোমটার আড়ালে রূপসী কাঁদিছে -
জ্বলছে দ্বিগুন তেজে। 

আয়োজন শেষে, জমাবে যে পাড়ি-
শহরের পানে কনে, 
এইবার বাবা দিশা ফিরে পায় -
চোখ মোছে ক্ষনে ক্ষনে।

মোটরের গাড়ি ছাড়িয়া দিয়াছে -
ছোট বোন সাথে তার,  
হাউমাউ করে কাঁদিছে রূপসী -
পিছু ফিরে বার বার। 

তিন মাস পর -

"অসুখ শরীরে বাঁধিয়াছে বাসা -
সারক্ষন কাঁদে মন ;
আমরা  হয়তো শহরে আসিবো -
রোগ হবে নিরূপন।" 

বাবার চিঠিতে বিব্রত মেয়ে -
পতি কে যে ভয় পায়, 
"বাবার অনেক অসুখ হয়েছে -
শহরে আসিতে চায়! "

ক্ষেপিয়া উঠিলো শিক্ষিত ছেলে -
বেকুবের মত হাঁকে ;
"তাদের সমাজ মিলিবেনা হেথা -
না - বলো আসিতে তাকে। "

বিব্রত বাবা, বিব্রত মেয়ে -
বিব্রত বিধাতা, 
অশিক্ষিতের আলোর আড়ালে -
শিক্ষিত জামাতা। 

বাজার হইতে নূপুর আনিয়া 
বলেছিলো বাবা ওরে,
যখনই আমাকে পড়বে যে মনে -
পড়বি যতন করে। 

নূপুর পায়েতে, নিয়তিকে দোষে -
আর শুধু একা হাঁটে, 
লাথি মেরে দিলো শিক্ষার মুখে-
একাকী জীবন কাটে।

ফরমান সেখ




হে আমার ভারতবর্ষ

হে আমার ভারতবর্ষ
হে আমার জন্মভূমি
তোমার বুকে যারা, নৃশংস ভাবে কেটেছে আঁচড়
নিকৃষ্ট হিংসু জানোয়ারের মত 
বসিয়েছে থাবা
তোমার বুকে অনর্গল চালিয়েছে গুলি
বহিয়েছে রক্তের স্রোত,
হা-পিত্যেসের মত যারা, তোমার ইজ্জত নিয়ে খেলেছে রঙের খেলা 
কেড়েছে গাঁয়ের আঁচল
মিথ্যা অপবাদ দিয়ে  তোমার করেছে কলঙ্কিত
আবর্জনা দিয়ে ভরিয়েছে আঁচল
যারা তোমার রক্ত কণিকায় জ্বালিয়েছে হোমানল 
ঝরিয়েছে অশ্রুজল

আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাবো,
প্রতিবাদী কণ্ঠে ভরিয়ে দেবো সর্বত্র
প্রাণ দিয়েও ছিনিয়ে নেবো তাদের কাছ হতে তোমাকে
আসবে নতুন প্রজন্ম,
নতুন স্বাধীনতা
তোমাকে পরিয়ে দেবো- রানীর ভূষণ আমরা ফিরিয়ে আনবো তোমার সুখের এক নতুন সকাল
মুখের একগুচ্ছ স্বচ্ছ হাঁসি
সম্পদে ভরিয়ে দেবো তোমার আঁচল-
শান্তি বিরাজ করবে তোমার ছায়ায়
আর বেশির দেরি নয়
আসবে খুব শিগগির,
খুব শিগগির.....

dafda

LOVE