৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

গোলাম কিবরিয়া শরীফ




নূপুর



হাতে মেহেদী, পায়েতে নূপুর -
কাঁদিছে নতুন বৌ, 
ঘোমটার আড়ালে ঝড় বয়ে যায় -
জানিতে পারেনা কেউ। 

দৃশ্যপট -

সেদিন হঠাৎ বাবা ফিরিলেন -
হাতে দুই হাড়ি দই, 
হাসি হাসি মুখে, চেঁচামেচি করে, 
"রূপসী" র মা যে কই? 

"আরে বাপু, আসিতেছি আমি -
শুনিবো সকল কথা ;
হাতের কাজটা শেষ হতে দাও -
মেয়েটা পেয়েছে ব্যাথা। "

পানের কৌটা হাতে নিয়ে মা যে -
সুধালো বাবাকে এসে;
এইবার বলো হয়েছে কি তবে-
তুমি- বরাবরই একপেশে। 

আরে, খুশির খবর "রূপসী" র তরে-
খুব করে দোয়া করো, 
খুব ভালো ছেলে, নাম ডাক ও আছে,
শিক্ষায়ও বেশ বড়। 

প্রস্তাব দিলো শহরের ছেলে -
ক'জনা এমন পায়? 
বেশ  ভয়ে বাবা, পাছে ফিরে যায় -
যদিও দিয়েছে সায়। 

ওপাশ হইতে কান পেতে শোনে -
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে ;
রূপসীর  মনে হারানোর ভয় -
"পড়েছি এ কোন ফাঁদে! "

অবশেষে এলো সেই শুভক্ষন -
বিয়ের আসরে বর ;
মনে মনে ভাবে,  জানিনা কি লাভে -
বাবা যে করিলো পর। 

পাড়া প্রতিবেশী,  আত্মীয় সব -
আাসিলো অনেক সেজে, 
ঘোমটার আড়ালে রূপসী কাঁদিছে -
জ্বলছে দ্বিগুন তেজে। 

আয়োজন শেষে, জমাবে যে পাড়ি-
শহরের পানে কনে, 
এইবার বাবা দিশা ফিরে পায় -
চোখ মোছে ক্ষনে ক্ষনে।

মোটরের গাড়ি ছাড়িয়া দিয়াছে -
ছোট বোন সাথে তার,  
হাউমাউ করে কাঁদিছে রূপসী -
পিছু ফিরে বার বার। 

তিন মাস পর -

"অসুখ শরীরে বাঁধিয়াছে বাসা -
সারক্ষন কাঁদে মন ;
আমরা  হয়তো শহরে আসিবো -
রোগ হবে নিরূপন।" 

বাবার চিঠিতে বিব্রত মেয়ে -
পতি কে যে ভয় পায়, 
"বাবার অনেক অসুখ হয়েছে -
শহরে আসিতে চায়! "

ক্ষেপিয়া উঠিলো শিক্ষিত ছেলে -
বেকুবের মত হাঁকে ;
"তাদের সমাজ মিলিবেনা হেথা -
না - বলো আসিতে তাকে। "

বিব্রত বাবা, বিব্রত মেয়ে -
বিব্রত বিধাতা, 
অশিক্ষিতের আলোর আড়ালে -
শিক্ষিত জামাতা। 

বাজার হইতে নূপুর আনিয়া 
বলেছিলো বাবা ওরে,
যখনই আমাকে পড়বে যে মনে -
পড়বি যতন করে। 

নূপুর পায়েতে, নিয়তিকে দোষে -
আর শুধু একা হাঁটে, 
লাথি মেরে দিলো শিক্ষার মুখে-
একাকী জীবন কাটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much