নূপুর
হাতে মেহেদী, পায়েতে নূপুর -
কাঁদিছে নতুন বৌ,
ঘোমটার আড়ালে ঝড় বয়ে যায় -
জানিতে পারেনা কেউ।
দৃশ্যপট -
সেদিন হঠাৎ বাবা ফিরিলেন -
হাতে দুই হাড়ি দই,
হাসি হাসি মুখে, চেঁচামেচি করে,
"রূপসী" র মা যে কই?
"আরে বাপু, আসিতেছি আমি -
শুনিবো সকল কথা ;
হাতের কাজটা শেষ হতে দাও -
মেয়েটা পেয়েছে ব্যাথা। "
পানের কৌটা হাতে নিয়ে মা যে -
সুধালো বাবাকে এসে;
এইবার বলো হয়েছে কি তবে-
তুমি- বরাবরই একপেশে।
আরে, খুশির খবর "রূপসী" র তরে-
খুব করে দোয়া করো,
খুব ভালো ছেলে, নাম ডাক ও আছে,
শিক্ষায়ও বেশ বড়।
প্রস্তাব দিলো শহরের ছেলে -
ক'জনা এমন পায়?
বেশ ভয়ে বাবা, পাছে ফিরে যায় -
যদিও দিয়েছে সায়।
ওপাশ হইতে কান পেতে শোনে -
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে ;
রূপসীর মনে হারানোর ভয় -
"পড়েছি এ কোন ফাঁদে! "
অবশেষে এলো সেই শুভক্ষন -
বিয়ের আসরে বর ;
মনে মনে ভাবে, জানিনা কি লাভে -
বাবা যে করিলো পর।
পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় সব -
আাসিলো অনেক সেজে,
ঘোমটার আড়ালে রূপসী কাঁদিছে -
জ্বলছে দ্বিগুন তেজে।
আয়োজন শেষে, জমাবে যে পাড়ি-
শহরের পানে কনে,
এইবার বাবা দিশা ফিরে পায় -
চোখ মোছে ক্ষনে ক্ষনে।
মোটরের গাড়ি ছাড়িয়া দিয়াছে -
ছোট বোন সাথে তার,
হাউমাউ করে কাঁদিছে রূপসী -
পিছু ফিরে বার বার।
তিন মাস পর -
"অসুখ শরীরে বাঁধিয়াছে বাসা -
সারক্ষন কাঁদে মন ;
আমরা হয়তো শহরে আসিবো -
রোগ হবে নিরূপন।"
বাবার চিঠিতে বিব্রত মেয়ে -
পতি কে যে ভয় পায়,
"বাবার অনেক অসুখ হয়েছে -
শহরে আসিতে চায়! "
ক্ষেপিয়া উঠিলো শিক্ষিত ছেলে -
বেকুবের মত হাঁকে ;
"তাদের সমাজ মিলিবেনা হেথা -
না - বলো আসিতে তাকে। "
বিব্রত বাবা, বিব্রত মেয়ে -
বিব্রত বিধাতা,
অশিক্ষিতের আলোর আড়ালে -
শিক্ষিত জামাতা।
বাজার হইতে নূপুর আনিয়া
বলেছিলো বাবা ওরে,
যখনই আমাকে পড়বে যে মনে -
পড়বি যতন করে।
নূপুর পায়েতে, নিয়তিকে দোষে -
আর শুধু একা হাঁটে,
লাথি মেরে দিলো শিক্ষার মুখে-
একাকী জীবন কাটে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much