১৮ জুলাই ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন 188






উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৮৮

নতুন অভিজ্ঞতা

মমতা রায় চৌধুরী


বারোটার লোকাল ধরবে বলে রেখা তড়িঘড়ি দরজা লাগাতে শুরু করলো অলরেডি এগারোটা বেজে গেছে না এরপর আর লেট করা যাবে 
না ।টোটো আবার ঠিক সময় না পাওয়া গেলে এই ট্রেনটা না পেলে মুশকিল হয়ে যাবে। এক এক করে ঘরের দরজা লাগাচ্ছে আর ভাবছে ।এর ই মধ্যে তুতুটা কিউ কিউ করছে।
রেখা বলল" কি হয়েছে বলো তো 
তোমার ?দেখছো তো এখন আমি ব্যস্ত 
আছি ।চলো তোমাকে বেরোতে হবে ,ঘরের দরজা লাগাবো তো ?চলো ,চলো, চলো ।"
কি বুঝলো কে জানে ?তারপর নিজের থেকেই দরজার দিকে এগোতে থাকলো।। তুতু  একবার করে রেখার দিকে' দেখতে লাগলো এবার জুতো পায়ে গলিয়ে নিল ডাইনিং টেবিল থেকে জলের বোতলটা নিল আর একবার দেখে নিল রান্নাঘরের জানলাটা ঠিক দেয়া হয়েছে কিনা ,ড্রইং রুমের জানালা ঠিক দেয়া হয়েছে কিনা ।এই সময় যখন তখন ঝড় জল হতে পারে। না সব ঠিকঠাক আছে। ফ্রিজটা অফ করে দিল।
কলাপসিবল গেট টেনে তালা লাগিয়ে দিল। তালা লাগাতে লাগাতে ভাবছে আবার পার্থকে ফোন করতে হবে ?
আজ সেন্টুদা থাকলে এই অসুবিধা হতো না অলরেডি ১১.১০ বেজে গেছে বেজে গেছে।না ধারে কাছে পার্থকে দেখতে পাচ্ছে না।
এরমধ্যে রেখার পায়ে-পায়ে ঘুরতে লাগল মিলি ,পাইলট ,তুলি। রেখা এবার বিরক্ত হচ্ছে বলল "আমাকে আর বিরক্ত ক"রো না  তোমরা ।দেখছো তো এক জায়গায় যাচ্ছি। রেখা আবার ভাবলো না এদের প্রতি অযথা বিরক্ত কেন হচ্ছে আবার সবার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিল এবার ভাবল যে ফোনটা করতে হবে পার্থকে ।ফোন করতে যাবে ঠিক সেইসময় পার্থ এসে হাজির বলল" কাকে ফোন করছ?"
"কাকে আবার তোমাকে?"
"কেন?'
"দেরি হচ্ছে তো যদি ট্রেন মিস করি ওই জন্য টেনশন হচ্ছিল।"
"এই নাও চাবিগুলো। পার্থ হাত বাড়িয়ে চাবির গোছা বুঝে নিল।"
"আর শোনো রান্নাঘরে ওদের খাবার রাখা আছে।"
"আমি আসছি পার্থ।"
তোমাকে কি ড্রপ করতে হবে বৌদি?
রেখা বললো" না ,না সময় আছে তো। টোটো ঠিক পেয়ে যাবো।"
"না ,কোন হেজিটেট করো না আমার কিন্তু কোনো অসুবিধে নেই।"
"না গো দরকার হলে নিশ্চয়ই বলতাম শুধু শুধু কেন তোমাকে আমি কতদুর টেনে নেব বল?'
"ঠিক আছে বৌদি। বেস্ট অফ লাক।"
কথা বলতে বলতেই একটা টোটো সামনে দিয়ে যাচ্ছে রেখা পার্থ দুজনে একসঙ্গে বলে উঠলো "অ্যাই টোটো, দাঁড়াও।'
টোটোওয়ালা  কাছে আসলো। রেখা দেখল চেনা নয়।"
বলল "স্টেশন যাব।"
রেখা টোটো তে উঠে বসলো। টোটোয়ালা।তখনও দাঁড়িয়ে।
রেখা বলল 'চলুন?.
"উনি যাবেন না? 
রেখা বলল-কে ?এখানে আর কেউ যাবে না।
টোটোওয়ালা বলল "শুধু আপনি একা যাবেন?'
টোটোওলার একটা কোথাও ভুল হয়েছে ।আসলে পার্থ আর রেখা দুজনে একসঙ্গে টোটো কে ডেকেছিল তো এইজন্য।
রেখা স্টেশনে পৌঁছানোর পর ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে প্ল্যাটফর্মের দিকে এগোচ্ছে তখন খবর হচ্ছে ট্রেন নৈহাটিতে ঢুকছে।
রেখা দেখলো অনেক সময় আছে।
ভাবল একবার মনোজকে ফোন করে দেখবে।।ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে নিয়ে প্ল্যাটফর্মের একটা জায়গা দিতে বসল। মনোজকে ফোন করতে যাবে নম্বরটা খুঁজছে। একটা নম্বর ভেসে উঠলো। ভালো করে খেয়াল করল এটা বড়দির নম্বর।
আবার কেন বড়দি ফোন করলেন কনফার্ম হওয়ার জন্য যে আমি যাচ্ছি কিনা কিন্তু বড়দি সেটা ভালো জানেন যে আমি যখন কথা দিয়েছি তাহলে যাব। বোধহয় অন্য কোন কারণে রেখা মনে মনে এটাই ভাবলো ।তারপর যখন আবার ফোনটা রিং হল তখন ধরে বলল" হ্যালো'
হ্যাঁ রেখা বেরিয়েছো?
"হ্যাঁ ,ট্রেন ধরবো বলে বসে আছি প্লাটফর্মে।"
"না তুমি যাবে আমি জানি, সে কারণে আমি ফোন করিনি। তবু একবার জিজ্ঞেস করলাম। যে কারণে ফোন করেছি ,সামনে কিন্তু রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী আছে, মনে আছে তো তোমার?"
"হ্যাঁ সে ,কি আর ভোলা যায়?
রবীন্দ্রনাথেই আমাদের বাঁচা , কথা বলা । আমাদের দিকভ্রষ্ট বাঙালির পথ প্রদর্শক।"
"যা বলেছ একদম হক কথা।"
"আমিই  ফোন করতাম বড়দি।"
"কেন?"
"এই তো এই ব্যাপারে। এই স্কুল ছুটি প্রোগ্রাম কি স্কুলে হবে? সেই কারণেই করতাম।"
"সে স্কুল ছুটি হোক অনুষ্ঠান তো করতেই হবে।'
"তুমি অ্যারেঞ্জ করে উঠতে পারবে তো সেটাই এখন ভাবনা।'
"হ্যাঁ ,আমি হয়তো বেশি মেয়ে পাব না কিন্তু যারা মোটামুটি পার্টিসিপেট করে ওদের সঙ্গে আমি ফোনে কন্টাক্ট করে নেব।'
"বা হ ,বাহ  দারুন ব্যাপার ।আমি তো এই জন্যই তোমার উপর এতটা ভরসা করি রেখা।"
"এরমধ্যে  হুইসেল দিল ট্রেন ঢুকছে। বড়দি, আমি এখন ফোনটা রাখি আমার ট্রেন ডুকছে।"
"হ্যাঁ , হ্যাঁ রাখো রাখো সাবধানে।"
রেখা ফোনটা রেখে দ্রুত ছুটল কারণ ট্রেন দিয়ে দিয়েছে ওভারব্রিজ পার করে যেতে হবে।
রেখা হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে দুই নম্বর প্লাটফর্মে উপস্থিত হল তারপর ট্রেনে উঠল।'
"ট্রেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন ছেড়ে 
দিল ।"রেখা মনে মনে ভাবল আরেকটু হলে ট্রেন মিস করত ।এতক্ষণ ধরে প্লাটফর্মে বসে থেকে যদি ট্রেন মিস হতো এর থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারত।'
যাক এই সময় ট্রেন টা একটু ফাঁকা আছে। উঠে জায়গা পেয়ে গেল। রেখা ভাবল একটা লম্বা ঘুম দেবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। একটা লম্বা ঘুমের শেষে ট্রেন যথারীতি নির্দিষ্ট সময়ে কৃষ্ণনগর স্টেশনে থামলো। রেখা তাড়াতাড়ি জায়গা ছেড়ে উঠে প্লাটফর্মে নামলো ।তারপর ভাবল আজকে মূল গেট দিয়ে না বেরিয়ে অন্য আরেকটি গেট  দিয়ে বেরোবে। ঠিক তাই।
বেরিয়েই ই একটি  টোটোওলাকে জিজ্ঞেস করল "যাবেন?"
টোটোওয়ালা বলল' হ্যাঁ যাবো। কোথায় যাবেন?"
"কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ।"
'হ্যাঁ চলুন।"
লোকটা হ্যাঁ চলুন বলে বসেই রইল তখন রেখা বলল' কি হল যাবেন না?'
"দাঁড়ান আর কয়জন প্যাসেঞ্জার নি ই ।"
রেখা কথা বাড়ালো না। কারণ জানে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই এজন্য চুপচাপ বসে রইলো আর ভাবতে লাগলো রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী প্রোগ্রামের কথা। আজ নাচের জন্য সোহিনী প্রিয়াঙ্কা দেবাংশী ওদেরকে  ফোন করতে হবে।। আর কবিতার জন্য রাজশ্রী, কেয়া, মিত্রা, সমিয়া, আর গানের জন্য স্নিগ্ধা,সহেলি অদ্রিজা ওদেরকে বলতে হবে। রেখা টোটোতে বসে বসেই একটা ছক করে ফেলল । আজই বাড়িতে এসে এদেরকে ফোন করতে হবে। এবার রেখা বিরক্ত হয়ে টোটোওলা কে তাড়া দিল ও আপনি যদি না যান বলুন। আমি নেমে যাব।"
টোটা ওয়ালা এবার বুঝতে পারল যে ভীষণভাবে রেগে গেছে ,সেইজন্য টোটোওয়ালা আর কথা না বাড়িয়ে টোটো ছেড়ে দিল  রেখা বুঝল এরা  শক্তের ভক্ত।
রেখা যখন কলেজে পৌঁছাল ।সেখানে গিয়ে দেখল কর্তৃপক্ষ তখনও হাজির হয়নি। রেখা এএসআই ম্যাডামকে ফোন করল।
হ্যালো'
"আমি এস এন জি  থেকে বলছি।"
"হ্যাঁ বলছি এখনো তো কেউ এসে পৌঁছায়নি বুঝতে পারছিনা কোন জায়গাটা ঠিক হবে?
আপনি দেখুন কলেজের দোতলায় উঠে যান ওখানে একটা ছোট প্যান্ডেল মত করা আছে ওখানেই সব ব্যবস্থা করতে হবে।"
"ব্যবস্থা মানে?"
'যে সমস্ত প্রতিযোগী আসবে তাদেরকে আপনারাই ঠিকঠাক করে বসিয়ে ওদের টপিক দিয়ে দেবেন ।তারপর নির্দিষ্ট সময় পর সেটা তুলে আপনারাই মূল্যায়ন করবেন।"
'ও আচ্ছা। আর কোনো স্কুল থেকে আসবে?'
'হ্যাঁ ,
ডি এ ন  বয়েস স্কুল থেকে আসবেন দুজন
 টিচার ।"
"আচ্ছা ,আচ্ছা ঠিক আছে।"
"চিন্তা করবেন না ,আমাদেরও প্রতিনিধি থাকবে আর কোন অসুবিধা হলে আমাদেরকে ফোন করবেন।"
Ok'
ফোনটা রাখতে রাখতে ই প্রতিযোগী রা  চলে আসলো ।ইতিমধ্যে দুজন ভদ্রলোক আসলেন তাদের সঙ্গে পরিচয় হতে জানা গেল উনারাও জাজমেন্টে আছেন।
তাদের মধ্যে একজন অখিল বাবু বললেন"আপনি রেখা চৌধুরী না?"
রেখা একটু অবাক হয়ে বলল 'কেন বলুন তো?'
আপনার মত লেখিকার সঙ্গে আজকে আমরা একসঙ্গে কাজ করে সময় কাটাবো, এত সৌভাগ্যের ব্যাপার।'
রেখা বলল"এভাবে বলবেন না আমি তো আপনাদের মতই।"
 আমার লেখা পড়েছেন?
"যথেষ্ট বলতে পারি কোনদিন তো সামনাসামনি দেখা হয়নি।
নাইস টু মিট ইউ।'
'আমিও ভীষণ খুশি।'
এসআই অফিস থেকে দুজন প্রতিনিধি এসে ড্রইং শিট দিয়ে গেলেন। তারপর প্রতিযোগীদের স্কুল তাদের নাম কন্টাক্ট নম্বর ,ক্লাস, সব লিখে নেয়া হলো। নির্দিষ্ট টাইম দিয়ে শুরু হয়ে গেল প্রতিযোগিতা।
নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলে তাদের ড্রইং শিট তুলে নেয়া হলো ।তারপর সমস্ত প্রতিযোগীদের জন্য ছিল টিফিন এর ব্যবস্থা  তাদেরকে একটু বসতে বলা হলো এবং পাশের রুমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলার উন্নয়নের জন্য যে সমস্ত প্রকল্পগুলো চালু করেছেন সে সম্পর্কে তাদেরকে ভালো করে দেখানো হলো।
প্রতিযোগীরা ভীষণ খুশি তারপর তারা বাড়ি চলে গেল। জাজমেন্ট এর দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁরা সকলে একমত হয়ে মূল্যায়ন করলেন ।পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটা গ্রুপের মধ্যে ফেলা হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত একটি গ্রুপের মধ্যে ফেলা হয়েছে। তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। মূল্যায়ন কপি এসডিও  সাহেবের কাছে পাঠানো হয়েছে ।এবার তাদের জন্য যে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটা পরে সেই কন্ট্রাক নম্বরে প্রতিযোগীদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এসে ক্যামেরাবন্দি করে নিয়ে গেলেন।
সব কাজ শেষে সকলের জন্য ছিল টিফিন এর ব্যবস্থা  ।প্রত্যেকের হাতে প্যাকেট ধরিয়ে দেয়া হলো। রেখা তখন ট্রেন ধরবে বলে ছুটছে। একজন ভদ্রলোক বললেন "ম্যাডাম আপনার টিফিন বাক্স টা নিয়ে যান। রেখার তখন তাড়া তখন সেই ভদ্রলোক ছুটে গিয়ে রেখার হাতে দিয়ে আসলেন।"
রেখা জানে এই ট্রেনটা মিস করলে তার অনেক রাত হয়ে যাবে তাই মরি-বাঁচি করে এসে ছুটতে শুরু করল টোটো ধরবে বলে। রেখা টোটো পেয়েও গেল তারপর বসে বসে ভাবতে লাগলো জীবনে কত কিছু শেখার বাকি আছে। "যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি। একটা নূতন অভিজ্ঞতা হল রেখা র । আর ওই অখিল বাবু কি অমায়িক।
কে দেখে কতটা খুশি হয়েছিলেন সত্যি তো তাই ছোটবেলায় আমরাও তো ভাবতাম লেখক মানেই কোনো ভিনগ্রহের বাসিন্দা লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর মধ্যে দিয়ে আমাদের সেই ছোটবেলার কিশোরের ছবিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।এটাই  রেখার জীবনের প্রাপ্তি। টোটোওয়ালা বলল এসে গেছে এসে গেছে নামুন।
রেখা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল ও আচ্ছা আচ্ছা বলে তাড়াতাড়ি নেমে পড়ল। ওবাবা মোদীকে মেয়েগো করেছে বৃষ্টি হবে নাকি কোথাও কোথায় বৃষ্টি হয়ে গেছে একটা ঝড়ো ঠান্ডা হাওয়া বইছে এমন সময় একটা ছোট্ট শিশু এসেরে খাড়া চুল টেনে ধরলো রেখা একটু থমকে গেল কি সারল্য মাখা মুখ ভিক্ষা চাইছে রেখার তখন ট্রেন ধরার তারা কিন্তু তবুও দাঁড়িয়ে আশেপাশে খোঁজার চেষ্টা করলে সঙ্গে আর কে আছে দেখল দূরে ওর মা মায়ের জীর্ণশীর্ণ বস্ত্র পরিয়ে তার ভাবনা চিন্তার কোনো অবকাশ ছিল না বাচ্চাটার হাতে 100 টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে আসলো। কি আজব আমাদের দেশ ছোট্ট শিশুর যেখানে তার শৈশবের দিনগুলো হেসে-খেলে বেড়ানোর কথা সেখানে তার জীবন জিজ্ঞাসা এসে 
দাঁড়িয়েছে ।খাব কি? প্রশ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে । অথচ অন্নর অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকার । এই অধিকারের দাবিতেইএ শিশু যেন কতটা পরিণত হয়ে গেছে। এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হল রেখাকে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়েরেখা এ কথাই ভাবতে ভাবতে প্ল্যাটফর্মের দিকে পা বাড়ালো।

কবি জাহানারা বুলা এর কবিতা "সময় একটি নক্ষত্র"





সময় একটি নক্ষত্র

জাহানারা বুলা



সময় শুধু ভালো না লাগার কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়
নক্ষত্রটি গুলতি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যেত যদি

যদি এই খারাপ লাগাগুলো ঝরে পড়তো 
অতল কোনো পাত্রে, সমুদ্র বা মাঠে 
আমার ঘরের ছাদও যদি হতো ঝরে পড়ার 
উপযোগী জায়গা 
বলতাম- ঝরে পড়

আমি নাহয় ঘর ছেড়ে বিবাগী হয়ে যেতাম
দ্বারে দ্বারে মুঠো চালের পরিবর্তে 
ভালোলাগা ভিক্ষা করে ফিরতাম। 

ভালোলাগা ভোরের শিশিরের মত
বেলা উকি দিলেই কাতর প্রাণে
কোন মেঘের আড়ালে যে পালিয়ে যায় কে জানে।

মাথার উপরে অশুভ কালো মেঘও যে ভর করে থাকে
হাত বাড়ানো মানা
ভালো লাগা তাই হাতড়ে পাওয়া যায় না।

কবি পরাণ মাঝি এর কবিতা "সোয়েটার"





সোয়েটার 

পরাণ মাঝি 



এই পয়লা ফাল্গুন দিনে  জড়িয়ে ধরো না আমাকে
পুড়ে যাবে , ঘেমে যাবে শরীর ---
টুপটাপ করে গড়িয়ে পড়বে অযাচিত প্রেম, ভিজে ভিজে পুড়বো আমিও!

তারপর --
হয়ত বিরক্ত হবে, ছুঁড়ে ফেলবে। ভাববে আপদ গেল।

না গো --
যত দূরেই ছুড়ে দাও না কেন আমাকে 
ঘুরে ফিরে ঠিক আবার আসবো কাছে ।

জেনে রেখো ---দিন বদলায় , তারিখ বদলায় না; ঋতুও ---

আগামী হেমন্তের শেষে পড়বে মনে আবারও
আমি শীতার্ত প্রেম তোমার; কেবল উষ্ণতা দান করি 
                     ভীষণ ভালোবাসি তোমার সকল কাজ কারবার 
                    আমি আর কেউ নই, সামান্য সোয়েটার তোমার!!

কবি সুশান্ত হালদার এর যুগল কবিতা





কবি সুশান্ত হালদার এর যুগল কবিতা



(১)
প্রেম নাই বলে চাই প্রতিবাদ 
সুশান্ত হালদার 

সূর্য ডুবে গেলে সবাই ঘরে ফিরে 
আমি ফিরি না 
কারণ 
কেউ নেই,যে বলবে 
দুর্যোগের দেশে সব রাতই সুকান্ত'র ঝলসানো চাঁদ! 

(২)
অবিক্রীত হাড় 
সুশান্ত হালদার 

সামনে যে বসে আছে 
মানুষ মনে হয়নি উৎসবের রাতে 
গুপ্তঘাতকের মত বিস্ফারিত চোখ বাইনোকুলারে 
তর্জনী ট্রিগারে যেন ভাড়াটে খুনি এসেছে মদ্যপানে

মরা জোছনার এই বিলাপ মুখরিত রাতে
কেউ কেউ বিক্রি করে দিলেন মাথা সমেত শিরদাঁড়া পাঁজর 
অথচ আমি 
অবিক্রীত হাড়ে লিখে ফেলেছি 'স্বাধীনতার ডাক উনসত্তরের'!

কবি গোলাম কবির এর কবিতা"একান্ত কষ্ট ও আত্মবিলাপ"




একান্ত কষ্ট ও আত্মবিলাপ

গোলাম কবির

  স্বাধীনতার ৫১ বছর শেষেও আমরা
  এখনো মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানই 
  রয়ে গেলাম শুধু! একটুও মানুষ হতে
  পারিনি এখনো এই দুঃখ কোথায় রাখি!
  তা না হলে যে কোনো ছুতোয় সংখ্যালঘু
 জনগণের বাড়িঘর, মন্দির ইত্যাদি ভাঙচুর, 
  আগুন লাগানো, লুটপাট এসব কি করে হয়!
 আবার এর জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা 
 হয় না এবং হয় নি বলেই এখনো 
 ওরা নিজদেশেই যেনো পরবাসী এবং
 কখনো কখনো ওদেরকে দেশান্তরী হবার মতো 
 সুকঠিন এবং অনন্যোপায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়! 
 না - এটা কোনো কবিতা নয়, এ আমার একান্তই কষ্ট এবং আত্মবিলাপের কথা!