০৩ অক্টোবর ২০২১

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"৪

 চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়" আজ তৃতীয় দিন। 
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।






                                                                                 উদাসী মেঘের ডানায় 
                                                                                                    ( পর্ব চার)


                                ডোরবেলটা বেজে উঠলো দরজা খুলেদিয়েই বললো
ঃবড়দা তুমি হঠাৎ!
আগে তো ডুকলে দে মিলি নাকি দরজায় দাঁড়িয়ে
কথা বলবো।
ঃআসোনাতো অনেকদিন তাই অবাক হলাম এসো।
ড্রইংরুমে বসতে দিয়ে মিলি একগ্লাস পানি এনে
সামনে রেখে বললোঃ কেমন আছো, বাসার সবাই
কেমন আছে?
আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে, তৃষ্ণাকে দেখছিনা আজ ওরতো ছুটি।
ঃনা, বড়দা ওতো অফিসের কাজে চিটাগাং গিয়েছে
কাজ শেষে ছুটি নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছে কয়দিন থাকবে।
ঃএভাবে মেয়েটাকে তুই আদর দিয়ে নষ্ট করছিস
বিয়ে দিতে হবেনা, প্রায় চল্লিশে পড়েছে, পরে আর
পাত্র পাওয়া যাবেনা।
ঃতৃষ্ণা বিয়ে আর করবেনা বড়দা।
বললেই হলো যোয়ান মেয়ে চাকরি করে বেড়াবে
তাছাড়া আমাদের ওতো মান সন্মান আছে।
আমি ওর জন্য পাত্র দেখেছি,এজটু বয়স্ক আগের
বউ আছে প্যারালাইজড, তাই সংসার সামলানোর
জন্য ভালো পাত্রী খুঁজছে, আমারই এক বন্ধুর আত্বীয়।
ঃ সরি বড়দা আমার মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে
মানুুষ করেছি, আর একজনের বউকে সেবা করার
জন্য নয়।
ঃখুব অহংকার তোর মেয়ে নিয়ে তোর।
তা একটু আছে বৈকি বড়দা, তা তোমার মেয়েওতো
বিধবা ওকে দাওনা বিয়ে আমার মেয়ে নিয়ে মাথা
ঘামাচ্ছ কেন?
ঃকি এতো বড় কথা আমার মেয়েকে দিবো তোর মেয়ের ছোট সে।
ঃতিন বছরের ছোট, তেমন ছোট কোথায়?
তুই আমাকে অপমান করছিস, তোর মেয়ে
অফিসের কাজে বাহিরে যায়, না কি করে জানিস।
ঃঠিক মতন কথা বলো বড়দা, নয়তো আসতে পারো।
যাবো তো বটেই, তবে দেখি মেয়ে কোথায় যায়
এতদিন চুপ করে ছিলাম, এখন আর চুপ থাকবোনা।
ঃযাও যা ইচ্ছে করো লাভ হবেনা আমার মেয়ে
কেমন তা সবাই জানে।
রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
তৃষ্ণার মা চুপ করে সোফায় কিছুক্ষন বসে থেকে
তৃষ্ণা কে কল করলো
তুমি কেথায় তৃষ্ণা কবে আসবে।
ঃমা চিন্তা করোনা আজ আমি নীলগিরি যাবো তিনদিনের বেশি থাকবোনা চলে আসবো।
কার সাথে যাচ্ছো তুমি আর সামিয়া এতোদুর?
মামনি প্লিজ এসে সব বলবো, চিন্তা করোনা আমি
ভালো আছি তোমার দোয়ায়।
ভালো লাগেনা তোকে ছাড়া বাসাটা খালি খালি লাগে।
এইতো মা চলে আসবো, রাখি।

অপুঃ চলো, নয়তো দেরি হয়ে যাবে পৌছাতে।
ঃ চলো।
গাড়ি,ছুটছে দুজনই চুপ,মাঝে মাঝে গুনগুন করছে তৃষ্ণা, অপু,বললো গুনগুন না করে একটু গাওনা বেশ লাগবে
তৃষ্ণা গান ধরলো মমচিত্তে নাচেথই থই

ঃকতদিন পর তোমার গান শুনলাম।
মোনালিসা কাল পূর্ণিমা দেখে পরশু ফিরবো আমার কক্সবাজার সমুদ্র দেখে পরদিন সোজা ঢাকায় তোমার মাকে বলেছোতো।
ঃহুমম বলেছি
অপুঃ 


আজি নৃত্য জাগিয়েছো বিশ্বে
বয়ে চলে ধীরে নতুনের সুর
তবু কেন আজ অতি কাছে তবু মনে
হয় বহুদুর
কোনটি তেমার আসল রূপ প্রিয়তমা
কষ্টের দিনে নাইবা ডাকিলাম, তবু ভালোবাসা
যায়নি মুছে বেদনার বুক থেকে।
বাহ্ চমৎকার তুমি লিখোনা কেন?
ঃলিখবো শুধু তোমার জন্য, তুমিই আমার কবিতা।
আচ্ছা সময় এলে দেখা যাবে।
একটানা ড্রাইভ করে মাঝপথে গাড়ি পার্কিং করে
দুপুরের লান্ঝ সেরে আবার ছুটলো। 
চলবে....

সমিত মণ্ডল




স্পর্শকাতর সংলাপ

 
এই পোড়া দেশে
উন্মত্ত সাধু — যোগী
ছাই ভস্ম মদ-মাংস খায় ভোগী
এক পঙক্তিতে দাঁড় করায়
                  ষাঁড়-বলদ-নারী!
 
দুহাত ভরে শান দিই
বিষাক্ত তরবারি
এই চরাচরে শিস দিই অবাধ
                        বেশ ভারি।
 
শোন রোমিও জুড়ি
পূবে-পশ্চিমে উন্মাদ ঘুরি
এদেশ এখনও আব্রুতে ঢাকা
ঠুসে দেব গরম ত্রিশূল, ছ্যাঁকা
 
ফুল-মালা জপি
জিগির তুলি, তুলি ভর
ঘুমনোর আগে দেখে নিস
তোদেরও আসবে জ্বর!
 
ভালো করে দ্যাখ  
রোমিও বিরোধী স্কোয়াড  
লাভ জিহাদ, আস্ফালনে ভর্তি
সেলাই করে দেব মুখ
জানিস কী খতরনাক দর্জি?
 
আস্তিনে লুকানো যাদুছড়ি
পাঠাবো ফরমান
মুছে দেব ইতিহাস — বলিদান
হাঃ——— ফুঃ———
এদেশ দ্যাখ নতুন তালিবান!
 
উন্মত্ত ——যোগী
ছাই-ভস্ম মদ-মাংস খায়
            ভোগী———!

গোলাম রববানী




ক্যামনে ভালো বাসবে ভবে




কেউ কোনোদিন ভাবিনি যা

তা ভাবলে আর ক্ষতি কিসে

ভাবছি এবার পৃথিবীর সমস্ত সাগর কিনে নেবো

কিনে নেবো জলরাশি হাওড়-বাওড়-দীঘি-লেকো

জলের অতোটা অভাব পড়েনি

আকাশ ঝরণার ধারও ধারেনি

চোখের কোণে ফোঁটা ফোঁটা জলের জলনগর

জমে জমে এন্টার্কটিকা বরফের পাহাড় টিলা 

সমস্ত তুষার মরুভূমি আর বড় বড় বন বনানী 

মেঘে ঢাকা আকাশের মতো চোখের কোণে

উড়ে উড়ে চলে দিকদিগন্তে ঘনকালো ঘনবরষা 

চোখের কোণে সেট বেঁধেছে তুষারে ঢাকা অঞ্চল

গ্রামবাংলা শহরবন্দর নগর মহানগর আর বিজনবন

চোখের গভীরে চোখ গুজে রাখি সারাক্ষণ 

চোখ মেলতে খুলতে অতোটা আর ভালো লাগে না

অকাল বন্যা ঝড়ঝাপটা মাতাল হাওয়া চাই না

সুনামি বিরুদ্ধে সুনামি

হারিকেনের বিরুদ্ধে হারিকেন

চাঁদের মাটির বিরুদ্ধে মাটি

মোরার বিরুদ্ধে মোরা আমার ভালো লাগে না

চোখ খুলতে আমার আর অতোটা ভালো লাগে না


চোখ মেললেই ভেসে যাবে আমার ভালোবাসা

চোখ মেললেই তলিয়ে যাবে এ বিশ্বচরাচর 

আর সবুজে সবুজ ঘেরা বিস্তীর্ণ খোলা ময়দান

আমি ক্যামন করে বলো চোখ খুলি

আমি কেমন করে বলো বিশ্বাস ভাঙি

ভাঙা-গড়া খেলার মতন স্পর্ধা ক্যামন করে করি


আমি য্যানো বলতেই পারি 

চোখের কোণে একফোঁটা জল আমারি

জলে জলে জলাকার করে দেবো

ফোঁটা ফোঁটা জলে ছিটিয়ে দেবো 

ভালোবাসাময় এ রঙের পৃথিবী কতোটা দামী 


আমার এ জীবন ফোঁটা জলে ভালোবাসাময় থাক 

এক ফোঁটা জলে, থাক না তোমাদেরও 

কেউ য্যানো আর বলতেই না পারে 

ক্যামন করে ভালো বাসবো বলো এ ভবে!

কেয়া চ্যাটার্জী'র গল্প " কৃপণ-কথা"

সকলের উদ্দেশ্যে জানাই , গল্পটি পড়ুন।  পড়লেই এক নতুনত্ত্বের ছাপ পাবেন।  




                    কৃপণ-কথা




ভবানীপুরের চারতলা বাড়ির ঝুল বারান্দা দিয়ে শহরের অনেকখানিই দেখতে পাওয়া যায়। আগে গাছগাছালিতে ভরা ছিল জায়গাটা। এখন ধীরে ধীরে বাড়ি-বহুতলে ছেয়ে যাচ্ছে এলাকা। 

আমাদের বাড়িটা অনেকদিনের পুরোনো। নিচের তলা দোকানকে ভাড়া দেওয়া। দোতলা, তিনতলায় থাকে ভাসুর আর দেওরের পরিবার, আমরা থাকি চারতলায়। আমাদের একটি মেয়ে। বিয়ে ও চাকরি নিয়ে পুনেতে বাসস্থান গেঁড়েছে। কলকাতা আসে বছরে একবার। আমাদের এই দুটি প্রাণীর জীবনে কোনো চাহিদা নেই আর। বুড়োবুড়ি দুজনা'তে বেশ সুখেই আছি।

আমার বুড়ো ক'দিন আগেই অবসর নিলেন। প্রথম প্রথম অবসর জীবনটা বেশ উপভোগ করছিল কিন্তু মাস কাটতে না কাটতেই শুরু হলো বিরক্তি আর মন খারাপের টানাপোড়েন। আমিই বলে কয়ে পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে পাঠাতে শুরু করলাম। এখন তিনি সকালে উঠে এক কাপ চা খেয়ে মর্নিং ওয়াকে যান। তারপর বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বাজার সেরে, খবরের কাগজের আদ্য শ্রাদ্ধ করে ন'টা নাগাদ ঘরে ঢোকেন। তারপর বই নিয়ে বসেন। ওটি তার বরাবরের স্বভাব। আমারও।

এইভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু তাল কাটল একটা অদ্ভুত ব্যাপারে। আগেই বলেছি আমাদের বাড়ি অনেক পুরোনো। সেই বাড়িতে আজ পর্যন্ত ভগবানের কৃপায় উইপোকার উপদ্রব হয়নি। কিন্তু কয়দিন ধরেই দেখছি আরশোলার ভারী উৎপাত শুরু হয়েছে। এদিকে আমি সবজান্তা গৃহিনী ইঁদুরের ল্যাজ ধরে ফেলতে পারি, টিকটিকির কাটা লেজ ফেলতে পারে, ছুঁচোর সব ব্যাপারে নাক গোলানো বন্ধ করতে পারলেও এই আরশোলা বস্তুটিকে একটু সমঝে চলি। আসলে ওদের ব্রহ্ম অস্ত্র হলো ওই পাখনা দুটো। একবার মেলে দিয়ে যে কোথায় গিয়ে বসবে ভগা ন জনান্তি। যাইহোক, আমার কপালেই এই আরশোলা নামক বস্তুটি এসে জুটল। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বা ওভেনের পাশে, মশলার কৌটোর বক্সে, বাজারের ব্যাগে, ডিনার টেবিলে, বাথরুমে, বইয়ের তাকে, এমনকি ড্রেসিং টেবিলেও আরশোলা। ওই কদর্য চেহারা, লিকলিকে শুঁড়, খোঁচা খোঁচা ছ'টা পা দেখলেই আমার হৃৎপিন্ড তড়াক করে লাফিয়ে উঠতে শুরু করলো। পাঁচ-ছয় দিন এরকম কাটলো। এবার সকাল থেকেই সঙ্গে একটা ছোট লাঠি রাখতে শুরু করলাম। যেখানেই দেখতাম সেখানেই খোঁচা, যখনই দেখতাম তখনই খোঁচা। কি আশ্চর্য! এতো খোঁচা খেয়েও পতঙ্গটা মরতো না। সে শুধু লাফিয়ে লাফিয়ে স্থান পরিবর্তন করতো। 

একদিন সন্ধ্যেবেলা বসার ঘরে বসে টিভি দেখছি। মেগা সিরিয়াল আমার পোষায় না বাপু! খবরের চ্যানেল আর ডিসকভারি চ্যানেলেই কালাতিপাত করি। কত্তা এমন সময় দেখি টিভির ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার শত্রু। সেই খয়েরি রং, লিকলিকে পা, নোংরা শুঁড়। গা ঘিনঘিন করে উঠলো। হাতের কাছে পেলাম লাঠিটা। ধরে সবে কাজটা সারতে যাবো এমন সময় কে যেন বলে উঠল, “এই এই একদম খোঁচা দিবি না বলে দিলাম।” চমকে উঠলাম। কে বলল কথাটা? আরশোলা? না না, সে আবার হয় নাকি? লাঠি বাগিয়ে আবার এগিয়েছি এমন সময় আবার শুনলাম, “খবরদার!” এবার থমকালাম। নাঃ এতো মনের ভুল নয়। স্পষ্ট শুনছি কেউ হুমকি দিচ্ছে। ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলাম, “কে? কে কথা বলছে?” অমনি উত্তর এলো, “আমি রে আমি মৌমিতা।” ভাবতে বসলাম কে মৌমিতা, আমার সাথে তার কোথায় দেখা ইত্যাদি। কিন্তু মরচে পড়া স্মৃতির পাতায় তাকে খুঁজে পাওয়ার আগেই আবার কণ্ঠস্বরটি বলে উঠলো, “চিনতে পারছিস না? আরে সেই যে তোর মেয়ে আর আমার ছেলে এক স্কুলে পড়তো। আমরা প্রতিদিন এক বাসে সঙ্গে যাওয়া আসা করতাম। আমি থাকতাম পঞ্চাননতলায়...” ঝপ করে মনে পড়লো, হ্যাঁ ঠিক তো। আমার মেয়ে তো সেই কোন ছোটবেলায় একটা প্লে স্কুলে পড়তো। সেই সময় বন্ধুত্ব হয় মৌমিতার সাথে। গোলগাল, বেঁটে খাটো চেহারার মানুষটি বেশ আমুদে ছিল। কিন্তু একটাই দোষ ছিল ― কিপ্টেমি। সেই নিয়ে অবশ্য ওকে কম খ্যাপানো হয়নি। তারপর মেয়েকে নিয়ে চলে আসা হয় এই বাড়িতে। ছোট স্কুল ছেড়ে বড় স্কুলের গন্ডিতে পা দেয় মেয়ে আর মেয়ের মা উভয়েই।    


     কিন্তু এতদিন পর সেই মৌমিতা কোথা থেকে এলো? চোখ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলাম, “হ্যাঁ রে মনে পড়ছে। কিন্তু তুই কোথা থেকে কথা বলছিস?” কণ্ঠস্বরটি উত্তর দিল, “কেন এই যে আরশোলার থেকে।” চমকে উঠে সোফায় পা গুটিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম , “ও মা গো! তুই  আরশোলা হয়ে গেছিস? এতদিন ধরে তুই আমার বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলি?” সে বলল, “হ্যাঁ রে অনেক দিন ধরে একটা জরুরি কথা বলার ছিল। সুযোগই পাচ্ছিলাম না। আজ হলো অবশেষে। কিন্তু তোর দেখছি মায়া দয়া কিচ্ছুটি নেই রে। এইটুকু একটা প্রাণীকে কেউ অতো বড় লাঠি দিয়ে খোঁচা দেয়!” আরশোলার পাখনা দুটো থেকে যেন এক ঝলক  দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম, “জানিস তো আরশোলায় আমার ভয়। তাই আর কি...” সে বলল, “কি করবো বল। পুনর্জন্মের সেকশানে এতো লাইন পড়েছিল না! ধৈর্য্য রাখতে পারলাম না। তাই যার শরীর দিল বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিলাম। মানুষ হলে একহাত তর্ক জুড়ে দিতাম কিন্তু অশরীরি কিনা, তাই বিশেষ ট্যাঁ ফুঁ করতে পারলাম না। যদি ব্যাটা নরকে পাঠিয়ে দেয়!” মৌমিতার ওরফে আরশোলার কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একটু গম্ভীর হয়েই বললাম, “তা কি জরুরি কথা বলবি বললি যে?” আরশোলার দিক থেকে উত্তর এলো, “হ্যাঁ তা একটা আছে বৈকি। জীবন্ত অবস্থায় মনে ঘুরঘুর করতো জানিস তো। মরার পরেও দেখছি ভুলিনি। তাই তোর বাড়ি খুঁজে এলাম।” আমি একটু অধৈর্য হয়েই বললাম, “বল না কি কথা?” তারপর যে উত্তর এলো তাতে আমার চক্ষু চরক গাছ। শুনলাম, “আমার সেই সাত টাকা তো ফেরৎ দিলি না রে?”

আমি আকাশ থেকে পড়লাম। “সাত টাকা? কিসের সাত টাকা?” প্রায় চিৎকার করেই বলে ফেললাম। ওদিক থেকে উত্তর এলো, “ভুলে গেছিস? জানতাম ভুলে যাবি। সেই যে একদিন বাসে তোর কাছে খুচরো ছিল না বলে কন্ডাক্টারের সাথে তুমুল ঝগড়া বাধল তোর। আমি তোদের থামিয়ে তোর ভাড়াটা দিয়ে দিলাম। তুই বললি, মৌমিতা তোকে পরে টাকাটা দিয়ে দেবো। আমি শুধু ঘাড় নেড়েছিলাম। তারপর তুইও ভুলে গেলি। আমিই লজ্জায় চাইনি। কিন্তু মনের মধ্যে ঘুরঘুর করতো কথাটা। আসলে স্বভাবটা একটু কিপটে গোছের কিনা। দেখ না এই জন্য মুক্তিও পাচ্ছি না।” আমি মুখে হাত চালিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই কি করে পারিস মৌমিতা! এতটা কিপটে কেউ হতে পারে!” বলেই একটু সামলে নিলাম। এই মুহূর্তে ও  আমার থেকে শক্তিশালী। একে ভূত তার উপর আরশোলা। বললাম, “কিভাবে দেবো? তোর বাড়ি গিয়ে?” সে উচ্ছসিত হয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ তাই কর তাই কর।” এই বলে সে  তার বেহালার বাড়ির ঠিকানা সমেত পথ নির্দেশিকা সব বলে দিল।

পরেরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়লাম। ভেবে অবাকও হচ্ছিলাম,  হাসিও পাচ্ছিল, শেষে কিনা ভূতের বাড়ি স্বেচ্ছায় চললাম। তাও আবার আরশোলা ভূত। সে আবার কথাও বলে। হা ঈশ্বর, এই দুনিয়ায় কতো কি না ঘটে। কথা অনুযায়ী এসে পৌঁছলাম একটা দোতলা বাড়ির সামনে। বাড়িটার সামনে একটা সাদা কাপড়ের গেট লাগানো। বোঝাই যাচ্ছে ভেতরে শ্রাদ্ধ কাজ চলছে। আরো কিছু লোক এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে। আমি সটান ঢুকলাম বাড়ির ভেতর। বসার ঘরেই বেশ কিছু লোকজন  বসে আছেন মাটিতে। একটি বছর ত্রিশের ছেলে পুরোহিতের সামনে বসে মন্ত্রপাঠ করছে। তার একটু দূরেই ফুল মালা মিষ্টিতে প্রায় ঢাকা পরে আছে মৌমিতার ছবি। ঘরের মধ্যে চোখ চালিয়ে বুঝলাম ওর স্বামীও বেশ কিছুদিন হলো গত হয়েছেন। “আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।” পিছন ফিরে দেখি একটি সাতাশ আঠাশ বছর বয়সী বউ আমার দিকে সন্দিগ্ধভাবে তাকিয়ে। অনুমান করলাম হয়তো মোমিতার পুত্রবধূ। হেসে বললাম, “আমি আসলে মৌমিতার বান্ধবী। আমার মেয়ে আর ওর ছেলে একই স্কুলে পড়তো।” সে আস্বস্ত হয়ে বলল, “ও, কিন্তু মা তো...বুঝতেই পারছেন।” বললাম, “হ্যাঁ। আসলে ও আমার কাছে কিছু টাকা পেতো। তাই দিয়ে গেলাম।” মেয়েটির হাতে টাকাটা গুঁজে দিয়ে প্রায় পড়ি মরি করে ঘর থেকে বেরোতে যাবো এমন সময় সে আমার হাত চেপে ধরে পাশের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল, “আপনিও?” আমি অবাক হয়ে বললাম, “আমিও মানে?” সে আরো গলা নামিয়ে বলল, “আপনিও কি আরশোলার সাথে কথা বলেছেন?” চোখ গোল গোল করে জোরে জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম। সে বলল, “আর বলবেন না, পুজোর সময় একটা তিন হাজারের জামদানি আদায় করেছিলাম বরের থেকে। তা আমার শাশুড়ি মায়ের পছন্দ হয়নি। তখন কিছুই বলেননি। মৃত্যুর কিছুদিন পর আলমারি খুলে দেখি ঠিক ওই শাড়ি টার ওপর বসে আছে একটা আরশোলা। ভয়ে চিৎকার করে সরে গেলাম। ওমা অমনি শুনি আরশোলাটা শুঁড় নেড়ে বলছে, “এই শাড়িটা কিন্তু দুই হাজার দাম বৌমা। হাজার টাকা অযথাই খোকার থেকে ঝাপলে। পরেরবার আর করো না কেমন। টাকা তো আর গাছে ফলে না।”  আমি তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। বলুন তো আর ঐ শাড়ি পড়া যায়!” আমি হাসবো না কাঁদবো ভেবে পেলাম না। সত্যি মৌমিতা কিপ্টেমির একটা লিমিট থাকতে হয়! মেয়েটি বলল, “তা আন্টি এসেছেন যখন একটু বসুন। একটু জল মিষ্টি খেয়ে যান।” আবার মিচকি হেসে বলল, “পাশের ঘরে গিয়ে দেখুন তো পরিচিত কাউকে পান কিনা?” পাশের ঘরে গিয়ে সত্যিই অবাক হলাম। আরো জনা কয়েক মহিলা বসে আছে। তাদের মধ্যে দু তিনজন পরিচিত। যে স্কুলের সুবাদে মৌমিতার সাথে আলাপ হয়েছিল, সেই স্কুলেরই বান্ধবী এরা। এদের সাথেও একই ঘটনা ঘটেছে। কারুর কাছে দশ টাকা বাকি ছিল, কারুর কাছে পাঁচ টাকা। ঘটনাটা এতটাই তাজ্জব ও হাস্যকর যে কথার মাঝখানে হাসি চেপে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এদিকে শোকের বাড়ি কোনোভাবেই উচ্চ হাসি এলাউড নয়। বৌমাকে সাবধানে থাকতে বলে আমরা কজন বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। বেশ একটা রিইউনিয়নই হয়ে গেল আমাদের। কতো কথা, কতো স্মৃতি। মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম মৌমিতাকে। ওর জন্যই তো গতানুগতিক সংসারিকতার বাইরে আজকের দিনটা পেলাম।

বেশ খোশ মেজাজেই সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরেছি। দরজা দেখি আলগা ভাবে বন্ধ। খুলতেই চোখ পড়লো সোফায় বসা কর্তা মশায়ের ওপর। এই সময় সাধারণত থাকেন না। আজ আমি নেই বলেই হয়তো রয়েছেন। এখুনি বেরোবেন। কিন্তু তার চোখ মুখ তো ঠিক লাগছে না। কেমন যেন ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছেন দেওয়ালের দিকে। হাতের খবরের কাগজটা বারে বারে কেঁপে উঠছে। আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “কি গো, কি হলো?” অমনি চমকে উঠে, “কে কে করে চিৎকার করে উঠলেন।” আমিও গলা চড়িয়ে বললাম, “এই যে আমি আমি। কি হয়েছে?” তিনি কিছুই বললেন না। শুধু জিজ্ঞাসা করলেন কোথায় গেছিলাম। আমিও কাল সন্ধ্যে থেকে আজ বিকেল অব্দি সব কিছুর বৃত্তান্ত দিলাম। এটাও বললাম যে কাল রাতে উনি যদি ভয় পান সেই চিন্তায় কথাটি চেপে গেছিলাম। কর্তা মশাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললেন, “এরকম হয় বোলো?” আমিও বললাম, “হম হয় তো।” তারপর চোখ কুঁচকে বললাম, “তা তোমার যদি কোনো ধার দেনা থেকে থাকে, দিয়ে দাও, বুঝলে?” কথাটা শুনেই সে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে মানি ব্যাগটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে ফিরতে দেরি হবে বলে প্রায় ছুটে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। আমি দেওয়ালে ঝুলন্ত টিকটিকির দিকে তাকিয়ে বললাম, “চিন্তা করবেন না ঠাকুরপো আপনার পাওনা গন্ডা আজকেই শোধ পেয়ে যাবেন।” মনের ভুল কিনা জানিনা, মনে হলো যেন টিকটিকিটা লজ্জায় পর্দার আড়ালে মুখ লুকালো।

সাফিয়া খন্দকার রেখা




বন্ধু 


স্মৃতির ক্যানভাস থেকে মুছে যায়না প্রিয় ইমেজ /
সময়ে আপণ করে নিয়েছি পথ ঘাট, নগর নাগর, অমাবস্যা পূর্ণিমা /
বুকের ভেতর প্রচন্ড বিস্ফোরণে ভাষাহীন এক বোধ কাজ করে /
এর ভেতরেই যেন যুগযুগ জেগে আছি/
এখনও সুর করে পড়ছি
অ তে - অয় অজগর আসছে তেড়ে
আ তে - আমটি আমি খাবো পেড়ে/
বেঞ্চের ডান পাশে রিনা বাম পাশে খসরু, সামনে মনিকা পেছনে সাঈদ /
শৈশব পেড়িয়ে কৈশোরের অদম্য কৌতূহলে হেঁটেছিলাম ছায়ার পেছনে তোদের সঙ্গী হয়ে /
চলে যেতে যেতে অন্তহীন সেই পায়ের ছাপ,  প্লাটিনাম স্কুলের বারান্দা, দপ্তরী রহমান চাচা,
রবার্ট স্যারের কানমলা, ইয়াসিন স্যারের লাল চোখ, মাওলানা স্যারের জোড়া বেত/
মনে কি পড়ে তোদের আমারই মতো?
ফড়িংয়ের পিছু নেয়া সেই সময়ের হাত ধরে এখনও হেঁটে যাই /
পৃথিবীর গল্পে সুগন্ধি ফুলের মতো তোরা বুকের অলিন্দে সৌরভ ছড়িয়ে যাচ্ছিস আজও /

বড় হতে হতে বুড়ো হয়েছি ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ এর কল্যাণে বন্ধুতালিকায় হাজারো বন্ধু/
অথচ স্মৃতির আকাশ থেকে নেমে এসে বৃষ্টির ফোটা হয়ে ভিজিয়ে দিস স্কুলের সেই তোরা/
খুব জানতে ইচ্ছে করে , এই মধ্যবয়সী আটপৌরে সন্ধ্যায় তোদেরও কি মনে পড়ে সেইসব স্মৃতি! 
বহুদূর অতীত.... চান কাকুর চায়ের দোকান, প্লাটিনামের বিস্তৃত মাঠের দূর্বাদল, শিশিরের টুপটাপ, স্কুলের দেয়ালে কাঠ কয়লায় লেখা নাম, ব্ল্যাকবোর্ড - সাদা চক, 
বেঞ্চের পেছন থেকে ফিসফিস করে পড়া বলে দেয়া/
তোদের কি মনে পড়ে.. 
দুই এক্কে দুই স্যারের মুখে সুঁই 
তিন দু গুণে ছয় স্যারের বুদ্ধি ক্ষয়/
ছয়তলার বারান্দা থেকে নীচের রাস্তায় তাকিয়ে ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েদের যেতে দেখি
আমার চোখের কোন চিকচিক করে ওঠে /
একা একা বিরবির করি তোদের কাছে ফিরে যাই,
ফিরে যাই মদন মোহনের কাছে.... 
পাখিসব করে রব রাতি পোহাইলো,
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল,
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।

রাবেয়া রুবি





যাপিত সময়


আমার সকাল টা আমার মতই হবে পাতায় যেমন শিশির থাকে।
তেমনি চোখে মুক্তার মতো স্বপ্ন ও বিষাদ দুটোই থাকবে কান্নার জলে বাঁকে বাঁকে। 
দিবস রজনী কেটেছে এক নির্ঘুম নির্জনে।  
ঠিকানা ছিল আগের জায়গায়
শুধু সাথী হারা হলো এই যা,
কেঁদে কেটে বৃষ্টি  নামতো মেঘলা আকাশে বেদনার সংগোপনে।
বিগত বছর গুলোতে হাসতে পারিনি কাতর যন্ত্রনায়।
শুধু তাকিয়ে দেখেছি গত বছর গুলোর স্তব্ধ  চেহারা।
রোদ, বৃষ্টি,  আলো আঁধারে, 
ব্যস্ততায়  অখন্ড অবসরে  বেলা অবেলায়।
নিয়মের বেড়াজালে ছুটে চলে জীবনের বাঁকে,
পৃথিবীর  পুরানো  নিয়মে আমি নতুন বৈষ্ণবী।
সরলা পথ হেটে চলেছি একা একা।
অবাধ্য স্মৃতি  গুলোতে অনন্ত তৃষ্ণা  থাকে।
অব্যক্ত হাহাকার ভেজা সন্ধ্যায়,
স্বপ্নের রঙ সময়ের  অপেক্ষায়,
আঁকা স্মৃতি  গুলো ধূসর হয়,
নিস্প্রভ  চোখে তাকিয়ে রয়।
কখনো  অদৃশ্য বদল কখনো  দৃশ্যত  পলায়ন,
কোথাও পরাজয় ভেবে নয় অবধারিত জয়ের বুনন।
পৌঁছে  যাই প্রতিটি মৌন কাজের আষ্টেপৃষ্টে, 
ক্রমাগত মনের ভিতর উচ্ছ্বলতার  জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে।
মাঝে মাঝে দখিণা বাতাসে স্মৃতির  আগুন জ্বলে,
স্মৃতির প্লাবনে অপূর্ণ তায় যায় সব ভুলে।
চাঁদ আলো দিয়ে বলে যায় আগামী তে আসবে ফের,
স্বপ্ন দিবে, কিছু সুখ আর মুঠো মুঠো নির্জনতা ঢের।
শত শূন্যতা আর বাধার পাহাড় ভেংগে এসে,
মনের সিড়ি বেয়ে বিষাদের  বহুতলে বেদনারা উঠে আসে।
তবুও সেই অপেক্ষায় আজো   আছি অপেক্ষমান,
সাথী করে কবিতা, শব্দের মিছিল, উপমা সময়ের গান।

রাবেয়া পারভীন এর ধারাবাহিক ছোট গল্প "কালো ক্যনভাস"৬

নতুন  ধারাবাহিক "কালো ক্যনভাস "
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।  



              কালো ক্যানভাস

                                                                          (ষ্ঠ পর্ব)

প্রায় একসপ্তাহ  হাসপাতালে থেকে বাসায় ফিরল নীলা। নীলাকে  অনেক প্রশ্ন করেও নীলার বাবা মা  কোন তথ্য নিতে পারলেন না। শুধু নীলার  অবচেতন  মুখে " প্লিজ স্যার  আমাকে ছেড়ে দিন " এই কথা থেকে  জালাল  সাহেব  অনুমান করলেন  যে  এটা ইশতিয়াকের কাজ। তখন ইশতিয়াকের  মেসে  গিয়ে খোঁজ করে জানলেন  সে  চলে গেছে  কেউ  তার ঠিকানা জানেনা । একবার ভাবলেন পুলিশে  জানাবেন  কিন্তু  নিজেদের  মানসন্মানের কথা ভেবে  চেপে গেলেন।  কিন্তু এই নীলা আর সেই নীলা  রইলোনা। আগের সেই আনন্দময়ী  কিশোরীটি  হঠাৎ করেই যেন বদলে গেছে। অল্প আওয়াজেও সে ভয়ে কেঁপে উঠে। কারও সাথে কথা বলতে ভালো লাগতোনা। পরীক্ষাটাও আর দেয়া হলোনা । বন্ধুরা  ছুটে এলো, এসে দেখলো  নীলা অসুস্থ কিন্তু কি হয়েছে জানলোনা। কারো সাথে কথা বলেনা সে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে  কিছুক্ষন চেয়ে থেকে দু হাতে মুখ ঢেকে  ডুঁকরে  কাঁদে। পুরো  একটা বছর  বিভীষিকার মধ্যে  কাটলো নীলাদের পুরো পরিবারের। মা  বাবার স্নেহ আর ভালোবাসায় আস্তে আস্তে  সেরে উঠল  নীলা। কিন্তু পুরো একটা বছর  বৃথাই  খসে পড়ল  নীলার জীবন থেকে। বাবার উৎসাহে  আবার পড়াশোনা  শুরু করল নীলা।

হামিদুল ইসলাম




জন্মদিন

                           

                      


নদীর জলে এখনো মাঝে মাঝে 

গা খুলে বসি 

আলগা হাওয়া এঁকে রাখে শীতল শ্বাস 


পেরিয়ে যাই ছাতারে শালিক নীল তিমির দেশ 

সাপ লুডু মই লুডুর ব‍্যস্ত জীবন 


হৃদয়ে বৃষ্টি ঝরার সুবাস 

শিশির মাখা ভালোবাসার ঠোঁটে রাখি চুমু। সান্ধ‍্য কথন 


ফুল হয়ে ফোটে তোমার জন্মদিন উৎসব 

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৯

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 





                                                                 টানাপোড়েন (১৯)

                                                                                             নতুন ডাক।


শরতের শুভ্র আকাশ ,পেঁজা তুলোর মতো মেঘ কাশ,শিউলির সমারোহ , আগমনী সুর। কেমন চারিদিকে একটা পুজো পুজো গন্ধ। মায়ের আরাধনার জন্য তার আসার অপেক্ষায় ধরাবাসি যেন উদগ্রীব। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের মনে আনন্দের দিন। কিন্তু আজকে যেন শিখার আনন্দ অনেকটাই বিবর্ণতা ধারণ করেছে। প্রতিবছর পঞ্চমী থেকে কলকাতার প্যান্ডেল প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা ,মজা ,আড্ডা। এবার মনটা একদমই ভালো নেই। আজ যে দিব্যেন্দু নেই ।শিখা ভাবতেই পারে না পাঁচ বছরের সম্পর্ক এভাবে ভেঙে যাবে ।যদিও শিখার দিক থেকেই আপত্তি ।আপত্তি করার কারণ ও আছে। কিন্তু মন থেকে যে স্মৃতিগুলো মুছে ফেলা যায় না ।অতীত বড় বেদনাদায়ক ।বর্তমানে ঝড় তোলে, ভবিষ্যতেও ঝড় তোলে, মনের ভেতরে শুধুই আলোড়িত করে। ভেবেছিল একটা ছোট্ট সংসার হবে ।দিব্যেন্দুর জন্য সারাদিনের অপেক্ষার পর অফিস থেকে ফিরলে সামান্য খুনসুটি আর মধুর ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে তাদের জীবন। কিন্তু কি হলো ভাবতে-ভাবতে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ।পাঁচতলার ফ্ল্যাট থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখছে, কত আবালবৃদ্ধবনিতা সকলে পুজোর মার্কেটিং করতে বেরিয়েছে ।গাড়ির হর্নে জেরবার হবার অবস্থা ।এ বছরটা কি করবে? দিব্যেন্দু কি তাহলে রীতার সঙ্গে ঘর করবে? শেষ পর্যন্ত দিব্যেন্দুর মনে ধরল রীতাকে?কোন দিকে রীতার উপযোগী নয় সে ।যদিও রীতা হতে চায় না শিখা । তাতে দিব্যেন্দু তার মনের আকাশে বিচরণ করুক বা না করুক ।এলোমেলো ভাবনা সারাটা সন্ধ্যে যেন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ।হঠাৎই কানে আসে শিখা শিখা শিখা বলতে বলতেই বৌদি (মাধু )ঘরে ঢোকে। এসেই লাইটটা জ্বেলে কি ব্যাপার রে, অন্ধকার করে আছিস কেন? পুজো এসেছে কোথায় একটু হাসি খুশি থাকবি তা নয় ।বললাম চল পুজোর মার্কেটিং করে আসি তাতেও রাজি হলি না।' 
বৌদি শিখার কাছে গিয়ে আলতো করে চুলে হাত বোলাতে থাকে। 'চল নিচে চল। তুই তো বললি তোমরা যা নিয়ে আসবে মার্কেটিং করে সেটাই আমার পছন্দ ।চল বৃষ্টি ও পছন্দ করেছে পিসিমণির জন্য ।'
শিখা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে আর একটু মলিন হাসে।
বৌদি বলে " 'শিখা তোর মন খারাপ কেন , আমি জানি। দেখ মা মারা যাবার পর থেকে তোকে আমি মানুষ করেছি ।তুই আমার সন্তানের মতো তাই তোর ভালো মন্দ সমস্ত কিছু তো আমাদেরই দেখতে হবে ।বল জেনে শুনে কেউ এরকম একটা ছেলের সঙ্গে তোর সম্পর্ক মেনে নিতে পারে?'
শিখা বলে ' না বৌদি তোমরা যথার্থই সিদ্ধান্ত নিয়েছ'
বৌদি বলে 'কিন্তু তোকে এরকম অবস্থায় দেখলে তো
আমাদের ভালো লাগে না। পূজা এসেছে কোথায় বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘুরবি ।হৈ হৈ করবি আনন্দ আড্ডা..। তা নয় ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বসে আছিস।'
শিখার চোখে জল। শিখা বলে  'এতোকাল তো অনেক ঘুরেছি বৌদি। এবার একটু বাড়িতেই থাকি না?'
বৌদি শিখাকে বুকের কাছে টেনে এনে বলে 'জানি তোর কষ্ট হচ্ছে ।কিন্তু কি করবো বল?'
শিখা বলে  'জানি তোমারা আমার ভালোর জন্যই করবে ।মা মারা যাবার পর দুঃখ-কষ্ট সব তোমরা ভুলিয়ে দিয়েছ বৌদিভাই ।তাই তোমাদের সিদ্ধান্তই আমি মাথা পেতে নেব ।আমাকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করো না।'
বৌদি একটু ভরসা পেয়ে বলল ' হ্যাঁরে ,সেদিন বলেছিলাম না তোর একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে ।তাহলে তাদের সঙ্গে কি কথাটা পারব? ছেলেটি ভালো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ওল্ড বালিগঞ্জে বাড়ি ।একটাই ছেলে দেখতে-শুনতেও ভালো।'
শিখা বলে 'বৌদি ভাই একটা কথা বলব, রাখবে?
বৌদি বলে 'যদি দিব্যেন্দুর ব্যাপারে কোন কিছু কথা ভেবে থাকিস ।তাহলে সেটা না বলাই ভালো।'
শিখা বলে '  'না বৌদি ভাই সেরকম কোন কথা নয়।"
বৌদি হেসে বলে ' তাহলে কি বলবি বল?"
শিখা বলে (আবদারের সুরে )'আমার জন্য সম্বন্ধ দেখো না।'
বৌদি অবাক হয়ে বলে  'সে কিরে? কেন?'
শিখা বলে  '"আসলে আমি বিয়ে করতে চাইছি না ।আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছি বৌদি ভাই।
তাই বলছিলাম যে আমার তো এমএ ফাইনাল ইয়ার হয়ে গেল ।এবার বি.এড ভর্তি করে দাও।'
বৌদি বলে (খুশি হয়ে)   'সেটা তো খুব ভালো কথা।'
কিন্তু এটাও ভাবার বিষয় আছে, তোকে‌ সুপাত্রস্থ করতে পারলে তোর দাদা একটু চিন্তা মুক্ত হ'ত। এদিকে বৃষ্টি ও তো বড় হচ্ছে।'
শিখা বলল 'আমি জানি বৌদিভাই। কিন্তু তুমি দাদাকে বললেই হবে।'
বৌদি বলে ' দ্যাখ, ছোট থেকেই তোর সব আবদার মিটিয়েছি।চেষ্টা করব যাতে তোরে এই আশাটা পূর্ণ তা পায়।'
শিখা আনন্দে বৌদিকে জড়িয়ে ধরে আর বলে  'লাভ ইউ বৌদি ভাই।'
বৌদি বলে  'ঠিক আছে। চলো এবার নীচে চলো।'
ওদিকে বৃষ্টি মা মা মা বলে ডাকছে।
বৌদি বলল  'ওই দেখ বৃষ্টি কেমন ডাকছে?'
শিখা বলল  'তুমি যাও আমি আসছি।'
বৌদি বলে  'ঠিক আছে দেরি করিস না যেন। আর পুরনো সেই সব কথাগুলো নিয়ে কষ্ট পাস না। তুই এতদিনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। প্রত্যেক নারীর উচিত স্বাবলম্বী হওয়া -বলেই বৌদি নিচে চলে যায়।'
শিখার কানে বাজতে লাগল বৌদির কথা। সত্যিই তো ওসব কথা ভেবে ভেবে তার কোন লাভই নেই। তারচেয়ে বরং নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, স্বাবলম্বী হয়ে দিব্যেন্দুকে দেখিয়ে দিতে হবে। তাই দিব্যেন্দুর কথা ভেবে ভেবে সারাটা দিন কাটালে হবে না। জীবনটাই রঙ্গ মঞ্চ।
শিখা এসব কথা ভাবলো বটে কিন্তু মনের কোণে যে মেঘ জমেছে, তা কি করে কাটবে? তবে সে জানে এই মেঘ রোদ্দুর লুকোচুরি খেলায় রোদ্দুর এসেই খুশির আলোতে ভরিয়ে তুলবে। 
ওদিকে বৌদি ডাচ্ছে  'শিখা শিখা...?'
বৌদির ডাকে শিখার ভাবনায় ছেদ পড়ে। যাচ্ছি বলেই সে ছুটে যায় নিচে। 
নিচে গেলে বৃষ্টি শিখাকে জড়িয়ে ধরে বলে ' পিসিমণি জানো তো, তোমার জন্য আমি একটা খুব সুন্দর ড্রেস চুজ করেছি।'
শিখা বৃষ্টিকে গাল দুটো ধরে আদর করে বলে ' তাই ?তাহলে তো আমার খুব পছন্দ হবে। আমাদের বৃষ্টি সোনা যে পছন্দ করেছে।'
ওদিকে সুরঞ্জন এসে বলছে  'হ্যাঁরে শিখা তুই নাকি বিএড এ ভর্তি হতে চাইছিস?'
শিখার বৌদি বলল 'হ্যাঁ ওকে সেই ব্যবস্থাই করে দাও। আমি চাই শিখার মনে কোনদিন যেন আফসোস থেকে না যায় ,আমাদের জন্য ওর বিএড পড়া হয়নি। আর তাছাড়া ওতো নিজে স্বাবলম্বী হতে চাইছে। এদিকে বি এড টা করে নেবে ।অন্যদিকে নেট ,সেটের জন্য ও চেষ্টা করতে থাকবে। ওটাই যথার্থ ডিসিশন।'
সুরঞ্জন বলে কিন্তু..? শিখার বৌদি কথাটা শেষ করতে দেয় না বলে  কোন কিন্তু নয়। আজ বাবা-মা বেঁচে থাকলে শিখার মতামতের গুরুত্ব দিত। আর তাছাড়া কেউ যেন বলতে না পারে ওর বৌদি জন্যই এটা হয়নি।'
শিখা বলে  'না বৌদি ভাই সমাজ সংসার কি বলল তাতে কিছু এসে যায় না। আমি জানি আমার জীবনে আমার দাদা বৌদির গুরুত্ব কতটা? ছোট থেকে অভাব আমাকে বুঝতে দাও নি। সব সময় আমার চাহিদাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করেছ। দাদাকে দেখেছি ওভারটাইম করতে ।তবে জানি দাদার কিছুটা অসুবিধে হবে ।তবে দেখো আমি ঠিক দাদার পাশে দাঁড়াবো একদিন।
শিখার দাদা শিখাকে বুকে টেনে নিয়ে বলে আমরা তো এটাই চাই বোন ।তুই যাতে সুখী হোস। প্রথম প্রথম তোর বৌদির প্রতি আমার একটু সন্দেহ ছিল। আজ অকপটে স্বীকার করছি তোর বৌদি না থাকলে সত্যিই হয়তো আমি সব চাহিদা  পূরণ করতে পারতাম না। কখনো কখনো তোর কিছু কিছু আবদার পূরণ করতে গিয়ে ভাবতাম এতটা গুরুত্ব না দিলেই হয় কিন্তু তোর বৌদি বরাবর আমাকে বুঝিয়ে এসেছে মা-বাবা নেই আমরাই ওর মা-বাবা ওর মনে যেন কোনো খেদ না জন্মায়।'
শিখা বলে ' আমি জানি দাদা ।তুমি এবং বৌদি আমার জন্য কি কি করেছ ?কাউকে নতুন করে আমাকে বলতে হবে না ।তাই আমিও চাই একটি ছেলের মত আমি তোমার সংসারের হাল ধরতে। বৃষ্টির দায়িত্ব নিতে ।তোমরা সেই আশীর্বাদ করো। তোমরা আমার পাশে থাকলে ,আমার আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। দাদা ,তাছাড়া আমার জীবনে ঘটে যাওয়া দিনগুলোর জন্য হয়তো আমার মনে কষ্ট আছে ।কিন্তু আমি জানি তোমরা আমাকে সঠিক পথে চালিত করেছ।'
দাদা বৌদি দুজনাই কাছে এসে শিখাকে বুকের কাছে টেনে নেয় আর বলে আমাদেরও বিশ্বাস আছে তোমার প্রতি। তুমি পারবে ।আমরা তোমার পাশে আছি।'
শেখার জীবন শুরু হলো নতুন করে নতুন ভাবনায় উদ্দীপ্ত হয়ে ।পরের দিন শরতের রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ তাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে কোথায় মেঘ, কোথায় বৃষ্টি ?এসো আমরা সোনা রোদ হয়ে ভাসি। শিখাও যেনও তার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে চায় কোন সূদুরালোকে। আজ যেন সকালটা আলো আলোময়।তাই গেয়ে ওঠে শিখা 'ও আকাশ সোনা সোনা, এ মাটি সবুজ সবুজ, রঙের ছোঁয়ায় হৃদয় রেঙেছে ,আলোর জোয়ারে খুশির বাঁধ ভেঙেছে।'
দাদা বৌদিদি নূতন করে শিখার কন্ঠে গান শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আর ভাবে অমানিশার অন্ধকার বোধহয় কাটলো।


ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৯ ক্রমশ

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ৩

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 




                                                                         "বনফুল"
                                                                                 ৩ য় পর্ব      


                         জুঁই মোটামুটি নিশ্চিন্ত  হলো, এখন অন্তত ফোন করে যোগাযোগ করা যাবে। 
জুঁই ফেরার পথে পলাশকে হেটে যেতে দেখে ড্রাইভাকে গাড়ি থামাতে বললো, পলাশের সামনে এসে গাড়ি থামতেই জুঁই গাড়ি থেকে নেমে এসে বললো প্লিজ আপনি গাড়িতে উঠুন, জুঁইয়ের মুখের দিকে তাকাতেই ব্যাপারটা ঠিক অন্য রকম..... 
পলাশ আর না করতে পারেনি। 
পলাশ গাড়িতে উঠলো ড্রাইভারের পাশের সিটে, জুঁই জানতে চাইলো আপনি কোন দিকে যাবেন। 
পলাশ বললো আমি মতিঝিল এজিপি কলোনি.... 
ড্রাইভার পলাশকে মতিঝিল এজিপি কলোনিতে নামিয়ে নিয়ে ড্রাইভার লালমাটিয়ায় চলে গেল জুঁইকে নিয়ে। 
রাতে পড়ার টেবিলে বসে জুঁই পলাশের কথাই ভাবছে, কেন বারবার পলাশের কথা মনে পরছে..... 
তবে কি পলাশকে ভালো লেগে গেলো! যতবার পড়াতে মন কনসেনট্রেট করতে চাইছে তত বেশি করে পলাশের মুখটা হৃদয় পটে বেসে উঠছে....
তবে কি পলাশকে ভালোবেসে ফেলেছি!  
এই টানাপোড়নে বেশ কয়েক মাস  কেটে গেল, জুঁই অন্য কিছু ভাবতে পারছে না। সেদিন পলাশের সাথে দেখা হলো জুঁইয়ের, জুঁই জানতে চাইলো কেমন আছেন আপনি, পলাশ জবাবে বললো হে ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?  জুঁইও বললো ভালো আছি। 
জুঁই বললো পড়াশোনা বিষয়টা কিছুই বুঝতে পারছিনা, আপনি কোন ভাবে হেল্প করতে পারেন। 
পলাশ বললো কি হেল্প তোমার বলো? 
আমি বুঝতেই পারছি না কোথা থেকে শুরু করবো, পলাশ বললো ঠিক আছে আমার নোটস্ গুলো তো পরেই আছে, ঐ পড়লেই আশাকরি ভালো করবে। জুঁই খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো... 
পলাশ বললো তার দরকার নেই তুমি ভালো রিজাল্ট করলেই হলো। 
পরদিন পলাশ একটা বেগে করে ওর প্রথম বছরের সব নোটস্ গুলো নিয়ে গেইটে অপেক্ষা করছিলো। 
কিছুক্ষণ পরই জুঁইয়ের গাড়ি ভার্সিটির গেইটে থামলো, পলাশ এগিয়ে গিয়ে জুঁইয়ের হাতে বেগটা ধরিয়ে দিয়ে খুব দ্রুত ভার্সিটি ভিতরে ডুকে গেলো, কারণ পলাশের ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে।

সোমাশ্রী সাহা




শূন্য পর্যায়
 

তৃষ্ণা তেমনি কুহকী ও শান্ত 
জিহ্বা ও কণ্ঠ শুকিয়ে যায় 
এমন একটি সময় যখন আগুন ডাকে, আয়... 

তৃষ্ণা 
মনের, ভেতরের, বাইরের...  
ওখানেই জন্ম ও মৃত্যু 

এই সময়, মুহূর্ত, ভাসিয়ে নিয়ে  যাবে, আরও 
যেন আবেগ ও নৌকো, কিন্তু কোনওটিই নয় 

এমন নিঙড়ানো সুখের সামনে দাঁড়ালেই 
ভয় পাই 

অথচ দ্যাখো, মন কথা বলছে না, 
মুদ্রার কথা বলছে যেমন 
যেভাবে চুপচাপ ফাঁকি দ্যায় জীবন

cxvv

LOVE

cxvxc

LOVE