১৯ মার্চ ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৩৬



উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৩৬
ভয়েস বিভ্রাট

মমতা রায়চৌধুরী


কল্যান সেমিনার শেষ করে কৃষ্ণনগর স্টেশনে যখন আসলো তখন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে চারিদিকে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা। এমন অবস্থায় অটো থেকে নামতে নামতে কিছুটা ভিজেও গেল। ভাবছে  তাই তো গলার এই অবস্থা ।এর মধ্যে যদি আবার ঠান্ডাতে কিছু একটা হয় তাহলে তো দারুণ মুশকিল হয়ে যাবে।
যথারীতি ট্রেন ঢুকে গেল। কল্যান ট্রেনে গিয়ে বসলো।
নির্দিষ্ট টাইম এ ট্রেন ছেড়ে দিল।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল আজকে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারবে না মনে হচ্ছে কৃষ্ঞনগরেই  ৬. ৪০
অথচ ডাক্তার না দেখালেও নয়। দেখা যাক 'ডাক্তারবাবু তো ৯টা পর্যন্ত থাকবেন বলেছেন?'
মাথাটা ভেজেনি এই রক্ষে। প্যান্টের নিচের অংশ ভিজেছে ।হাতের অংশটুকুও ভিজেছে। ট্রেনে
বসে কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। ট্রেনে বসে হাজারো কথা মনে পড়তে লাগলো। মনে পড়ল অনিন্দ্যর কথা। কল্যাণদের চারজনের একটা ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র অনিন্দ্য তখন প্রেম করতো। অনিন্দ্য হচ্ছে ওদের প্রেমের দীক্ষাগুরু। অনিন্দ্য আর মনীষা যখন চুটিয়ে প্রেম করছে ।তখন কল্যাণরা দূতের কাজ করতো। সম্ভবত ওদের লায়লা মজনুর প্রেম দেখেই কল্যাণের ভেতরেও একটা প্রেম প্রেম ভাব এসেছিলো। তারই ফলশ্রুতি বোধহয় প্রভা।
আজ আবার কেন ঘুরে ফিরে আসছে প্রভার কথা। এ যেন বৃষ্টি হলেই কল্যাণের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করে এন্টেনার মত। কোথায় অনিন্দ্য মনীষার গল্প করছিল সেখানে এসে পাতা জুড়ে নিল কল্যান প্রভার গল্প।
' হ্যাঁ, একদিন এসে হঠাৎ  অনিন্দ্য বলল
'যাই বলিস ভাই ফাইনাল পরীক্ষার হয়ে গেলেই আমরা দুজন পালাচ্ছি।'
কল্যান তো অবাক হয়ে গেল 'বলে কি?
পালাচ্ছি মানে?
তুই তো এখনো নিজের পায়ে দাঁড়ালি না মনীষাকে কি খাওয়াবি?
পরে কিন্তু প্রেম জানলা দিয়ে পালাবে।'
ভুরু কুঁচকে অনিন্দ্য বলেছিল শত্তুর না হলে তো কেউ এরকম কথা বলে ।না তুই আমার নাকি আসল বন্ধু। প্রিয় বন্ধু ।কোথায় আমাকে উৎসাহ দিবি ।সেসব নয়।'
'দেখ ভাই আমি কিন্তু বাস্তবটাই বললাম। আমি প্রকৃত বন্ধু বলে তোর বাস্তব অবস্থাটাকে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি ।এবার তুই যেটা ভালো বুঝিস?'
তারপর অনিন্দ্য কি একটা ভাবল কিছুক্ষন তারপর বললো' না কথাটা তুই ঠিকই বলেছিস কিন্তু আমার তো একটা সমস্যা হয়ে যাচ্ছে?'
'কিসের সমস্যা?'
'আরে মনীষাকে নিয়ে। ও তো এখনই বলছে বিয়ে করতে হবে,।'
'মানেটা কি? খেপেছে নাকি?'
তখন কল্যাণ বলল ' বুঝতে পারছি ।প্রেমের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস…
বলেই হাসতে শুরু করলো।
'তুই হাসছিস আমি মরমে মরমে মরছি।'
আচ্ছা, ঠিক আছে  তাহলে বল কি বলবো তোকে?'
'শোন,আমার আর পড়াশোনা হবে না।'
'ঠিক আছে তাহলে কি করতে চাইছিস?'
'আমি আমেদাবাদ চলে যাব।'
'কার ভরসায়?'
'আরে হারুদের একটা গদি আছে। ও বলেছিল ওখানে ব্যবস্থা করে দেবে একটা চাকরি।'
বেশ বোদ্বার মত মাথা নেড়ে কল্যান বলল' তাহলে তো সমস্যা মিটেই গেল।'
কিন্তু কি ট্রাজিক চরিত্র হয়ে গেল অনিন্দ্য।
এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই মনীষার বাবা ট্রানস্ফার নিয়ে চলে গেল দূরে সপরিবারে।
মনের দুঃখে অনিন্দ্য কিছুদিন দাড়ি রাখল, সাই গোলের রেকর্ড শুনল। তারপর এ ম, পরীক্ষা এসে গেল ।পড়ার চাপে সবই ঠিকঠাক হয়ে 
গেল। মজা করে বলেছিল কল্যান হারুকে
অনিন্দ্য আর মনীষার প্রেমের কাহিনী লাস্ট চ্যাপ্টার অনিন্দ্যের দাড়ি রাখা ।আমার মনে হয় আমাদের এই বাকি তিনজনেরো দাড়ি রাখা উচিত ছিল কারণ ওর প্রেমটা তাদের বাকি তিন জনেরও প্রেম।'
হারু তখন মজা করে বলেছিল 'তুইতো বাবা প্রভার সঙ্গে জড়িয়ে গেছিস ।তোর তো জীবনে বসন্ত এসেগেছে কিন্তু আমরা দেখ কি অভাগা আমাদের না জুটলো কোন সুন্দরী গোলাপ।
না নিতে পারলাম তার কোন ঘ্রাণ।'
ট্রেনে যেতে যেতে এইসব কথাই মনে পড়ছিল কিন্তু অনিন্দর মত কল্যাণের প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটল একটা প্রহেলিকার মধ্যে দিয়ে। প্রভার থেকে আর কোনো উত্তর কক্ষনো আশা করেনি ।প্রভা কিভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল অথচ কল্যাণ তো প্রভাকে মনেপ্রাণে ভালবেসেছিল ।দুরন্ত উচ্ছল নদী যেন ছিল ।কখনো মনে হয়েছে
 ঝরনা ।ঝরনার সঙ্গে হারিয়ে যেতে কল্যাণের কোন আপত্তি ছিল না।
অথচ…. শুধুই অন্তহীন জিজ্ঞাসা রয়ে গেল।'
এরই মধ্যে ট্রেন নির্দিষ্ট স্টেশনে এসে পড়ল।
ফোনটা বার করতে দেখলএরমধ্যেতে কটা মিসকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এতটাই ভাবনায় মশগুল ছিল যে সেটা খেয়াল করে উঠতে পারেনি।
ফোনটা খুলে দেখল শিখার বেশ কয়েকটা মিসকল হয়ে যাচ্ছে।
কল্যাণের উচিত ছিল শিখাকে ফোনটা করে দেয়া যে সে ট্রেনে উঠে পড়েছে।
কি করে ইরেস্পন্সাইবেল হলো?
নিজেকে নিজের প্রতি খুব বিরক্ত লাগলো।
তারপর একটা ফোন করলো।
ফোনের রিং হতেই শিখা ফোনটা রিসিভ করে বলল'কি ব্যাপার বলতো?'
কল্যান মনে মনে ভাবল এই শুরু হল অধিকারবোধ এটা তো হতেই হবে তারপর নিজেকে ঠিক রেখে বলল 'সরি এক্সট্রিমলি সরি ডিয়ার।'
'না না সরি কেন বলছো?'
'একবার ও মনে হয়নি চিন্তা হতে পারে?'
'আরে হ্যাঁ ,ভেবেছিলাম তোমাকে ফোন করবো শোনো না এত বৃষ্টি তারপর??'
'তারপর ,তারপর কি হয়েছে?'
'আরে সেরকম কিছু নয়।'
'ভিজে গেছ?'
"একটু ভিজেছি।'
গলাটা যেই দেখলে একটু আওয়াজ বেরোচ্ছে অমনি বৃষ্টিতে ভিজলে?'
'কিছু করার ছিল না গো অটো থেকে নামতে নামতে যেটুকু ভিজেছি।'
সকালে যখন বেরিয়েছি তখন ওয়েদারটা তো ভালই ছিল ।বোঝা গেছে কি বৃষ্টি হবে বল?'
'ঠিক আছে আর তোমাকে কোন কিছু বলতে হবে না।'
'এখন বল কতদুর আছো?'
'আর একটা স্টেশন।তার পরেই নেমে যাব।'
'ঠিক আছে ডাক্তারের এপারমেন্ট নিয়েছো তো?'
'নিয়েছি কিন্তু ডাক্তার থাকবেন কিনা কে জানে?'
'যদিও নটাএখনো বাজে নি।'
'ঠিক আছে ।দেখো কি হয়।
সাবধানে এসো।'
'ওকে'
বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তোমাকে ফোন করবো।'
শিখা  প্রসন্নতায় একগাল হেসে উঠলো।
কথা বলতে বলতেই স্টেশন এসে গেল। তাড়াতাড়ি নেমে পড়ল  কল্যান। কাঁকিনাড়া থেকে খুব বেশি সময় লাগে না ডাক্তার বাবুর চেম্বারে যেতে। এখনো দশ মিনিট বাকি আছে 9:00 বাজতে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটল। হাঁপাতে হাঁপাতে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে এসে দেখল ডাক্তার মুখার্জির চেম্বারে ভীষণ ভিড়। যদিও কল্যান সাক্ষাৎ লগ্ন আগেই স্থির করে এসেছে ।তবুও প্রায় ১৫মিনিট হলো স্লিপ জমা দিয়ে বসে আছে কল্যাণএর এখনো ডাকআসেনি। এদিকে সেই বৃষ্টিতে ভেজা চ্যাট চ্যাটে ভাব ভালো লাগছে না বসে থাকতে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে অনেকগুলো উইলি ম্যাগাজিন রয়েছে ।সেগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। হঠাৎ ম্যাগাজিনে যখন নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছে ঠিক তখনই 'কল্যাণ চৌধুরী কে আছেন ?এখানে ডক্টর কল্যাণ চৌধুরী?'
কল্যান বলল' আমি ।আমি ডক্টর কল্যাণ চৌধুরী।"
'আপনার ডাক এসেছে আপনি চেম্বার এ যান।'
পত্রিকাটি নামিয়ে রেখে নিজের ব্রিফকেস টি সঙ্গে নিয়ে উঠে দাঁড়াল কল্যাণ চৌধুরী।
বাবা প্রায় ঘড়ি দেখে আধ ঘন্টার মতো দেরী করিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার বাবু।
চেম্বারে ঢুকে হেসে নমস্কার করল চৌধুরী।
ডাক্তারবাবু নিজের ডান হাতটা কপালে ছুইয়ে বললেন 'বসুন 'চেয়ারটা দেখিয়ে।
"আচ্ছা বলুন আপনার কি সমস্যা?
কি কি অসুবিধা বোধ করছেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আপনার,?. একটু জোর করে হাসি এনে ডাক্তারবাবু আরো বললেন 'নট টু ওয়ারি'! ডোন্ট বি সো ডিপ্রেসড।'
কল্যাণ আমতা আমতা করে বলল আমার কি ডিফিকাল্ট কিছু হয়েছে?
'ফেটাল তো কিছু হয়নি আপনার?'
তবে আপনার প্রফেশনটা একটু অসুবিধে হতে পারে?
তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই এখন তো অনেক ভালো ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। মানে অপারেশনের ব্যবস্থা আছে। বিদেশ থেকে যদি করাতে চান করাতে পারেন আপনাদের তো দেশ বিদেশের যাতায়াত আছে বিভিন্ন সেমিনার উপলক্ষে।
এবার একটু ভয় পেয়ে কল্যান বলল' ডাক্তারবাবু আপনি কি বলছেন আমি কি চিরকালের মতো তাহলে আমার কন্ঠস্বর হারাবো?'
আজকাল ভয়েস বক্সটা রিপ্লেস করা কিছুই না। এতে আপনার অনেক কাজ চলে যাবে। সব কথাই বলতে পারবেন ।এটা হচ্ছে উইথ এ সিম্পল এন্ড সাইন্টিফিক ফলস ভয়েস।'
আপনি  স্মকিং করেন?'
কল্যান বলল' হ্যাঁ করি।'
মনে রাখবেন' স্মোকিং ইজ ডেডলি ফর ইউ'।
একটা কড আপনার একেবারেই গেছে এবং অন্যটাও প্রায় অলমোস্ট গন।'
ধোয়ায় ধোয়ায় গলাটার বারোটা বাজিয়ে দিবেন না আর।'
'ডাক্তারবাবু আমি কতদিন পর্যন্ত কথা বলতে পারব না?'
কেবল সপ্তাহে সপ্তাহে সাত দিন গান্ধীজী সপ্তাহে একদিন মৌনব্রত পালন করতেন জানেন তো আপনি ওরকমই করুন তিন সপ্তাহ ঘরে থাকুন চুপচাপ । কমপ্লিটলি গলাটার রেস্ট দিন।'
'তাহলে কি বলছেন আমি কি আর কথা বলতেই পারবোনা। ওটা একেবারেই চলে গেল । আ পার্মানেন্ট লস?'
'কি মুশকিল আমি কি তাই বললাম নাকি ।তিন সপ্তাহ আপনাকে কথা বলতে বারণ করা হলো এরপর অপারেশন টা করিয়ে নেবেন ।কেন অত  অরিড হচ্ছেন।'
এই মুহূর্তে  কিছু ওষুধ দেবেন না?
হ্যাঁ মাক্রাবিন আর ভিটামিন ইনজেকশন দুটো তিন সপ্তাহ এবং স্টেরয়েড অ্যান্টিবায়োটিক টা 10 দিন ঠিক যে ভাবে লিখে দেয়া হয়েছে সেই ভাবে চালিয়ে যান আর ওই যে বললাম ভয়েসকে কমপ্লিটলি রেস্ট দিন।
তিন সপ্তাহ পর আবার আপনার সঙ্গে আমার দেখা হবে।'
কল্যান বলল' থ্যাংক ইউ ডাক্তার'।
এরপর ডাক্তারবাবু আচ্ছা বলে টেবিলের উপরে রাখা ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়ে বলেন
' ওয়েলকাম ।নেক্সট।'
ডাক্তারবাবুর ওখান থেকে বেরিয়ে এবার কল্যাণ ভাবল সামনে রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খাবার নিয়ে চলে যেতে হবে বাড়িতে। স্টুডেন্টের দিকে যেতে যেতে ডাক্তারবাবু কতটা অর্থ পিচাশ সেটাই মনে মনে ভাবার চেষ্টা করছিল ভিজিট দেবার সঙ্গে সঙ্গে ঘন্টি বাজিয়ে দিলন আর একটা কথাও শুনতে রাজি হলেন না ডাক্তার বাবু। 
বাপরে কি প্রফেশনাল।
তারপর নিজের ভয়েসটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে লাগল এর মধ্যে যদি ঠিক না হয় পরের মাসেই আছে আবার আর একটা সেমিনার। এছাড়া কলেজে ক্লাস রয়েছে।কি হবে কে জানে জীবনে টানাপোড়েন তো রয়েছেই এখন চলে ভয়েজের টানাপোড়েন দেখা যাক ঈশ্বর কি করেন। কতদিন ভয়েস বিভ্রাটে থাকতে হয় কি যেন?

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৭২)
শামীমা আহমেদ 

সারাদিন ফ্যাক্টরির কাজ তদারকির দ্বায়িত্ব  শেষ  করে,দিনশেষে গাজীপুর থেকে রওনা দিয়ে, শিহাবের উত্তরায় ফিরতে রাত প্রায় দশটা হয়ে গেলো। পথিমধ্যে,চন্দ্রা, জিরাবো,আশুলিয়া, আবদুল্লাপুরের ভয়ানক যানজটে প্রায় একঘন্টা বসে থাকা। যদিও চাইলে আশপাশ দিয়ে বাইক চালিয়ে  বেরিয়ে আসা যেতো।কিন্তু শিহাবেরতো ঘরে ফেরার অত তাড়া নেই।কেউতো আর ঘরে তার জন্য অপেক্ষায় নেই।বরং বাইকে বসে উদাস হয়ে আকাশের চাঁদ দেখে কয়েক  স্টিক টেনে নেয়া যায়। আর এর সাথে কয়েককাপ চা, কফি চালান দেয়া হয় ভিতরে ভ্রাম্যমাণ চা, কফি বিক্রেতাদের কাছ থেকে।
যানজট ছাড়তেই শিহাব বাইকের স্পীড বাড়িয়ে সময়টা পুষিয়ে নিলো।
শিহাব বাসার গেটে এসে হর্ণ দিতেই কেয়ারটেকার বিল্লাল গেট খুলে৷ দিলো। বিল্লালের ভয়ার্ত দৃষ্টি! শিহাবের অনুমতি ছাড়া তার বাসায় অতিথি ঢুকেছে। কিভাবে তা ছারকে জানাবে। শিহাব বাইক পার্ক করে হেলমেট খুলতেই বিল্লাল তার কাছে এসে বললো, ছার মাফ কইরা দিয়েন। আপনার অনুমতি ছাড়া একটা কাজ কইরা ফেলছি ছার।
কি করেছো বিল্লাল? শিহাব বেশ নরম সুরেই জানতে চাইলো।
তাই কি এত কল দিচ্ছিলে সকালে?
জ্বী ছার।
তা কি করেছো?
ছার আপনি ঘরে গেলেই দেখতে পারবেন।
ক্লান্ত শিহাব আর কথা বাড়ালো না। বাইকের চাবি হাতে নিয়ে ঘিরের চাবি চাইতেই বিল্লাল বললো, ঘরে অতিথি আছে, তার কাছেই চাবি দিয়া গেছে বুয়া।
এবার শিহাবের মাঝে একটু ভাবনা এলো,,কে হতে পারে যে আমার অনুমতি ছাড়াই আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে যায়। শায়লা নয় তো? তবে কি সেদিন এখানে আসাতে  বাসায় কোন ঝামেলা হয়েছে?  সেকি তবে বাসা থেজে রাগ করে চলে এলো হাবের কৌতুহল বেড়ে গেলো।সে  দ্রুত লিফটের দিকে পা বাড়ালো।  শস্যলা কোন বিপদ হলো! লিফট উপরে উঠতেই শিহাব এক ঝটকায় বেরিয়ে দরজার কলিং বেলে আঙুল  দিয়ে বেশ কয়েকবার বিরতি ছাড়াই পুশ করলো। 
রিশতিনাতো এতটাক্ষণ ধরে, সেই সকাল দুপুর রাত কাটিয়ে শিহাবের ফেরার অপেক্ষাতেই উন্মুখ হয়ে ছিল। অলস ভঙ্গিতে টিভির সাউন্ড অফ করে চালিয়ে রেখে সময় পার করছিল।কলিং বেল শুনেই চমকে উঠে ঘর থেকে রক দৌড়ে দরজার কাছে এলো।
দরজা খিলতেই দেখলো শিহাব দাঁড়িয়ে! 
অপরপ্রান্তে শিহাবের জন্য রিশতিনা  বড় একটা বিস্ময়  হয়ে এলো। দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে!  দরজার এপাশ আর ওপাশে।শিহাবের পা যেন আর ঘরের দিকে চলছিলই না।  শিহাবকে কাছে পেয়ে রিশতিনার চোখ জলে ভরে উঠলো। মন চাইছে এখুনি শিহাবের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে।যেন খুব ইচ্ছা করছে শিহাব এখুনি যেন হাত বাড়িয়ে তাকে বুকে টেনে নিক।কত জনমের চাওয়া।কত যুগের তৃষ্ণা। 
শিহাব যেন এর কিছুই অনুভব করছে না।তার দুচোখ শুধু শায়লাকে খুঁজছে। সামনের মানুষটা অদৃশ্য হয়ে রইল। রিশতিনা বুঝতে পারছে শিহাবের কাছে সে একেবারেই অপ্রত্যাশিত হয়েছে।তাইতো সে এমন বরফ
কঠিন হয়ে আছে। এই বরফকে গলাতে হবে। শিহাবের ভেতরে তার জন্য ভালবাসার জলধারা বহাতে হবে আর এর জন্য শিহাবের শত অপমান সে সহ্য করবে। শিহাবের মন জয় করে আবার আগের সেই আবেগ অনুভূতি অনুভব ফিরিয়ে আনতে হবে।

রিশতিনা হাত বাড়িয়ে শিহাবের হাত ধরলো।শিহাবের ভেতর তখনো কোন চেতনা ফিরে আসেনি। তার চোখ রিশতিনার দিকে তাকিয়ে পাথর হয়ে আছে। রিশতিনা এক টানে শিহাবকে ঘরে নিয়ে এলো। দরজা লাগিয়ে  শিহাবকে বেড রুমে নিয়ে গেলো।বিছানায় বসিয়ে দুই হাত ধরে জানতে চাইলো,কেমন আছো চাঁদ? ভালোবাসার দিনগুলিতে রিশতিনা শিহাবকে চাঁদ নাম ডাকতো। শিহাব কি সব হচ্ছে  কিছুই বুঝতে পারছে না। সে শুধু শায়লার মুখটিই ভাবছে।
শিহাবের নীরবতায় রিশতিনা বললো,শিহাব তুমি কি ভুলে গেছো, তুমি আমায় কি নামে ডাকতে? আবার সেই নামে ডাকো চাঁদ।আবার সেই নামটিতে ডাকো।বলেই রিশতিনা ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। শিহাবের বুকে মাথা রাখলো।এবার যেন একটু স্বাভাবিকে এলো। একটা মেয়ে তার সামনে তার জন্য কাঁদছে, তার বুকে আছড়ে পড়ছে আর সে এমন স্থির হয়ে বসে আছে? শিহাব কথা বলে উঠলো,  রিশতিনা তুমি কেঁদোনা। বলেই রিশতিনার মুখটা দুই হাতে তুলে ধরলো।
রিশতিনা তখনো চোখ বন্ধ করে অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছে।আর বিড়বিড় করে বলছে 
শিহাব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। সব ভুলে আমায় গ্রহণ করো। আমি একেবারে তোমার কাছে চলে এসেছি।আমার পরিবারের
সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে এসেছি।
 শিহাব বুঝতে পারছে না এখন সে কি করবে বা তার কি করা উচিত? শায়লাকে সে কি বলবে? শায়লা  যে কোন ভাবেই তার কাছে আসবে।রিশতিনা স্থির হলো।কান্না থামালো।
রিশতিনা বললো, তুমি হাতমুখ  ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো আমি  খাবার দিচ্ছি। আজ জিগাতলা থেকে মা ভাবী অনেক খাবের পাঠিয়েছে। আমি আভেনে গরম করছি।শিহাবের তখন যেন আজ সকালের  সব মনে পড়লো।কেন বিল্লাল এত ফোন দিচ্ছিল তাকে।সে বুঝতে পারছে আজ আর রিশতিনাকে ফেরানোর কোন পথ কি সে পাবে?সে তার স্ত্রীর অধিকার নিয়ে তার কাছে এসেছে।কোন আইন বা ধর্মের দোহাই আজ আর কাজ করবে না। কিন্তু শায়লা যে তার মন প্রাণের অনেকখানি জুড়ে আছে।

রিশতিনা শিহাবের হাত ধরে ওয়াশরুমের দরজার কাছে নিয়ে গেলো।এওতটা পথ বাইক চালিয়ে সারাদিনের শত ঝামেলায় ক্লান শ্রান্ত শিহাব টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
রিশতিনা কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো।ফ্রিজ খুলে খাবার বক্স খুলে দেখে নিচ্ছিল কি কি আছে। দুটো প্লেট  হাতে নিয়ে ডাইনিং এ এলো। রিশতিনা বুঝিতে এভাবেই শিহাব ক্লান্ত ঘরে ফেরে আর একাই সব কিছু করে।শিহাবের জন্য তার মনটা হু হু করে  উঠলো। 
হঠাৎই শিহাবের মোবাইল বেজে উঠলো। রিশতিনা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো,রাত এগারোটা। এত রাতে কে কল করলো।রিশতিনা এগিয়ে এলো।মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো,মায়া নাম ভেসে উঠেছে আর স্ক্রীনে ভেসে উঠেছে, টানা টানা চোখে মায়াবতী মুখের একটি মেয়ের ছবি যার কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ।রিশতিনার কেন যেন ঐ টিপটাকে একেবারেই সহ্য হলো না।


চলবে.....

কবি আশ্রাফ বাবু




যেখানে দিন রাত চলে
আশ্রাফ বাবু

যে পৃথিবীতে আমাদের বাস তুমি ছিলে চুপচাপ, 
শেষ হয়ে যাইনি আমি আগন্তুক
যেখানে দিনরাত চলে বেচাকেনা।
চেয়ে চেয়ে রত হই প্রার্থনায় - প্রেরণা আর ভালোবাসা, জ্বলছে ভেতর থেকে - রত হই প্রার্থনায়
এই জীবনের আগে মৃত্যু হয়েছে।
 
আরেকটা জীবনে আগুনের তাপে তরুণ হৃদয় 
শুধু আন্দোলিত তপ্ত শোণিত ফুটছে আমার ধমনিতে
আমার অনুভূতিগুলো ভেতরে ভেতরে বেঁধে ফেলেছে,
জন্তুতে পরিণত হয়েছি বিশ্বস্ত প্রাণীর মতো,
যেখানে দিন রাত চলি আর ভুলি
ভেতরে ভেতরে আমি গজরাই।

আমার ভয় ও টান প্রশমিত হবার নয়-আমি প্রাণবন্ত, 
শেষ হয়ে যাইনি এইভাবে আর ভাবতে পারি নি
আর আমি চাই তুমি, ঠাণ্ডা বাতাস খেয়ে বলি।
সুখের চোখে জলে ভেজা দেখেছি স্বপ্নে
কোথায় এলাম সত্যিই এই মোকাম আমার
এই অনন্তদৃষ্টি রেখে,এই জায়গার উপর।

কবি মিতা নূর এর কবিতা





আমায় তুমি খুঁজবে 
মিতা নূর 



তুমি, তোমাকে পেয়েছিলাম শূন্যতার মতো, 
একমুঠো মিথ্যের ঘর আর বিষন্নতার উঠোনে !
তোমাকে পেয়েছিলাম ঘুটঘুটে আঁধারে, 
মুখ মুখথুবড়ে পড়ে থাকা জোনাকির আলোয় !
তোমাকে পেয়েছিলাম  নির্জন নির্ঘুম রাতের, 
অদেখা ভালোবাসার মাঝ পথে,
তুমি,তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে একজোড়া বিশ্বস্থ হাত বাড়িয়ে ! 
তোমাকে পেয়েছিলাম আমার কাব্যের মতো,
তোমাকে পেয়ে ভেবেছিলাম..!
আমার জীবনের অস্তিত্বের কোণ জুড়ে,
যেন এক স্বেচ্ছায়  মন খারাপী উড়িয়ে দেওয়া নীল আকাশ তুমি! 
তুমি, তোমার মায়াবী মুখখানা দেখে নিঃশ্বাস ছেড়ে ভেবেছিলাম, 
একজীবনের সমস্ত সুখ বুঝি তোমার ঐ বুকে রাখা, 
নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারি আরো কিছু সময়!
তুমি,তোমাকে পেয়েছি আজ ঠিকই, কিন্তু- কাছথেকে দেখে মনে হচ্ছে,
ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়ের মতো, 
এ-ই বুঝি আবার সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে! 
তুমি এসেছো ঠিক, কিন্তু অবেলায়, অবহেলা হাতে নিয়ে, 
তোমার চোখে ভালোবাসা কই? আমি তো খুঁজে পাচ্ছি না! 
হঠাৎ আমার বুকের ভেতরটা যেন ঝরে  
যাওয়া পাতার মতো, 
দুমড়েমুচড়ে ভেঙে যাওয়ার শব্দ পাচ্ছি..?
আমি কী ভুল করে  আবারও চোরাবালিতে পা দিয়েছি?
দৌড়ে আয়নার কাছে গিয়ে নিজেকে  আত্মাসমর্পণ করলাম। 
আয়নায় চোখ পড়তে দেখি, আমার আনন্দ গুলো, 
বিষন্নতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একেকটা করে নালিশ জানাচ্ছে। 
কপালের কালো টিপ আত্মচিৎকার   দিয়ে বলছে, 
আর কতকাল এমন করে দুঃখ লুকাবে...?
চোখে দু'টোও সুযোগ পেয়ে, স্যাঁস্যাঁতে হয়ে বলে উঠলো, 
আর কতকাল এমন করে  কাজল টেনে অশ্রু লুকাবে...?
ঠোঁট গুলোও সুযোগ ছাড়েনি একটুও, বলে উঠলো,
ঠোঁটের নীলচে ব্যথা গুলো আর কতকাল, রঙবেরঙে, রঙ মেখে ঢেকে রাখবে..? 
তখন আমি লজ্জায় চৈত্র কাতুরী হয়ে বর্ষা মেঘ খুঁজি, 
বুক ফেটে ভেতর থেকে তুমুল বেগে  বর্ষণ শুরু হয়। 
তুমি, তুমি চোখ মেলে দেখতে পাবে..!
তোমারও মনে পড়বে আমায়, 
কোনো এক পিচঢালা কংক্রিটে, 
যখন প্রচন্ড  হোঁচট খেয়ে পড়বে...!
বর্ষাস্নাত  কোনো বিকেলে আমাকেই তুমি খুঁজবে, 
নিঃসঙ্গতার চাদর, তোমাকে তখন জড়িয়ে ধরবে। 
তখন আমাকেই তোমার ভয়াবহ প্রয়োজন হবে,
হয়তো সেদিন দেখবে আমি নেই, মনে হবে আমিই তোমার,সকল রোগ শোকের সমাধান..!
দুজনের মনে এতো ভালোবাসা ছিল, তবু আজ। 
তবুও জীবনের কোনো মোড়েই আমরা নেই, 
সেইদিন  তুমি হয়তো থাকবে, কোনো টোং দোকানে বসে, 
হাতে নিকোটিন, ঠোঁটে চায়ের কাপ...!
তবুও চুম্বনের আবেশ অনুভব করছো আমায় মনে করে। 
তোমার চোখ দু'টো জলাশয়, কিন্তু খুব কৌশলে চশমার আড়াল ডাকবে। 
তখন আমাকেই তুমি খুঁজবে..!
আর আমাকে  হয়তো শহরের কোনো গোরস্তানে,
মাটি তার বুকে লুকিয়ে রাখবে সবুজ ঘাসের সুগন্ধিতে। 
তখন  মনে  অজান্তেই, মনে পড়বে, তোমার কবিতায় কী, আমি ছিলাম? 
তুমি,সেদিন শেষ বারে হয়তো, আরো একটা কবিতা খুঁজবে। 
আমার নামে লিখা হবে, তুমি, সযত্নে  লিখবে !!

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা




রঙিন বসন্ত
শিবনাথ মণ্ডল


ভূস্বর্গে বসন্ত এলো
   এলো ঋতু রাজ
গন্ধমাখা ফাগুন হাওয়ায়
    মনে লাগেনা কাজ।
শিমূল ফোটে পলাশ ফোটে
      ফোটে কৃষ্ণচূড়া 
আবির রঙে আকাশ লাল
       রঙিন হলো ধরা।
ফাগুন এলো হোলি এলো 
       এলো কোকিলের সুর
বসন্ত আজ বিরাজিত
          মন হলো ভরপুর।।