১৮ মার্চ ২০২২

কবি মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৩৫





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৩৫
মিষ্টি একটা গন্ধ 
মমতা রায়চৌধুরী

কল্যাণ এলার্ম দিয়ে রেখেছিল যথাসময়ে ঘুম ভাঙলো কিন্তু শরীর মন এতটাই ক্লান্ত ,উঠতে ইচ্ছে করছিল না । তবুও উঠতে তো হবেই। সকালে বিছানায় উঠে বসে দেখছে গলার অবস্থা আরো খারাপ। আজকে কি করে লেকচার টা দেবে ,গভীর সমস্যায় পড়ল।
এরমধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ শুরু হলো। এবার পুরোপুরি না উঠে আর পারল না কল্যাণ। নিশ্চয় মাসি এসেছে। আবার কলিংবেল বাজছে।
আড়মোড়া কেটে কল্যান আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগোল, তারপর দরজা খুললো।
সত্যি ,সত্যি মাসি এসেছে। 
মাসি বলল 'অনেক রাত্রে ঘুমিয়েছো নাকি?'
কল্যান একটা মস্ত বড় করে হাই তুলল। মাসির সাথে ইশারায় কথা বলল। কল্যাণ ইশারায় বুঝিয়ে দিল গারগিল করার জল দেবার জন্য।
মাসি যথারীতি গিয়ে আগে গারগিল করার জল দিল ।তারপর চা বানালো। তারপর  আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে হাত দিল।
মাসি জিজ্ঞেস করল 'কি খেয়ে যাবে 
আজকে ?কখন বেরোবে?'
কল্যাণ যা মুখে বলল বুঝানো অসুবিধে হল, তার থেকে আবার কিছু ইশারায় বুঝিয়ে দিল।
মাসি শুধু বললো 'ভাত খাবে তো?'
কল্যাণ মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি প্রকাশ করল।
মাসি বললো 'তাহলে কি খাবে?'
'তরকা বানাবো? রুটি খাবে তো?'
কল্যাণ মাথা নাড়লো।
এরমধ্যে কল্যাণের আবার ফোন বাজছে।
ফোনের আর্তনাদে ফোনটা রিসিভ করল বলল¡' হ্যালো'। গরগর আওয়াজ হলো।
'আমি শিখা বলছি।'
'হ্যাঁ বলো। 'আবার গরগর আওয়াজ।
'তোমার গলার অবস্থা তো বুঝতেই পারছি ...।'
'যাচ্ছেতাই।'.
'কিন্তু কি করে তুমি লেকচার দেবে?'
'সেটাই তো ভাবছি।
উপায়ও নেই।'
'ডাক্তার  দেখাবে না?'
'ফিরে এসে দেখাবো।'
'ঠিক আছে  টেক কেয়ার।'
'তুমিও নিজের যত্ন নিও।'
'কখন বেরোবে?'
'এই তো দশটায়।'
''ok'
'ফিরে আমাকে ফোন ক'রো।'
''ok'
ফোনটা কেটে দিলো। সারারাতের অবসন্ন ক্লান্ত মনে একটা বিষণ্ণতার ছাপ ফেলেছিল প্রভা। হঠাৎ করে শিখার ফোনটা আসাতে , সঙ্গে যেন একটা মিষ্টি গন্ধ হৃদয় বীণার চারিদিকে ভরে গেল। মন বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠল।
মাসি আর একবার গারগিল করার জল দিয়ে গেল। কল্যাণ ইশারায় মাসির কাছে আর এক কাপ চায়ের বায়না ধরল।
মাসি একগাল হেসে বলল 'দিচ্ছি।'
কল্যাণ একটা বাংলা ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছিল। হঠাৎই চোখ ফ্রেমবন্দি হয়ে যায় সম্পাদকীয় কলমটাতে। অন্যমনে পাতা উল্টাতে উল্টাতে এই সম্পাদকীয় কলমটা পড়ে বলল 
'বাহ ,বেশ ভালো লিখেছেন 
তো ?সেন্সেবল লেখা। যথেষ্ট সংযত আর ঝরঝরে ।সারও আছে ,তাতে আবার ধারও আছে।
মাসি এসে চায়ের কাপটা আবার ধরিয়ে দিল। চা খেতে খেতে লেখালেখির পাতার কবিতাংশে কবি দেবব্রত সরকার, কবি স্বপ্নীল ভট্টাচার্য, কবি রেখা চৌধুরী র কলমে চোখ নিবদ্ধ হয়ে গেল।
বসন্ত সংখ্যায় কবি দেবব্রত সরকার এ কবিতাটা বেশ সুন্দর


'বসন্ত  হাঁত রাই'


"তোমার চোখে রাঙানো ফুল আদরে আদখান,

আমার চোখে লাগলো ছোঁয়া রুপেরই আখ্যান।
তোমার চোখে কামনার ডাকে চুপ সাগরে ডুব,
আমার বুকে কৌতূহলের প্রশ্ন ওঠে খুব।
তোমার চুলে উঠল ভেসে আমার হিয়া চোখ,
তাকিয়ে আছি দেখছে দেখ ইচ্ছে ছবি লোক।
তোমার গালে চুপ্টি করে ঠোঁট  চলে যায় একা,
পায়ের থেকে কপাল জুড়ে চুমুতে আধ ক্ষ্যাপা।
নরম সুরে শরীর ভিজে হারিয়ে গেছে হৃদি,
শরীর এত নরম হলো জানেন নিরবিধি।
কৃষ্ণচূড়ায় রাধার খোঁপা ঢেকেছেএকলাই,
আবির ফুলে মেখেছে মন বসন্ত হাঁতরাই।"
মন ছুঁয়ে গেল কবিতাখানি। আর দেখার সময় নেই এবার ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে হবে ।তারপর বেরোনো আছে খেয়ে দেয়ে।
ডাইনিং টেবিলে বসে কল্যাণ প্লেটে চামচের আওয়াজ করতে লাগল। মাসি হাসতে হাসতে এসে বলল' একদম বাচ্চা ছেলের মতো হয়ে গেছ।'
ডিস বাজাতে হবে না । এই নাও তোমার খাবার।
ইশারায় বললো 'এতগুলো রুটি?'
মাসি বলল 'এতগুলো! দুটো রুটি খাবে না?
না, না খেয়ে নাও।'
ইশারায় মাসিকে বোঝাতে চাইল কিছু একটা।
মাসি বললো'একটু দাঁড়াও রান্নাঘর থেকে ছুটে নিয়ে আসছি,কাঁচা লঙ্কা ,পেঁয়াজ।'

যতদূর সম্ভব কম কথা বলছে গলার উপর খুব প্রেসার পরছে। তরকা টা দারুন বানিয়েছে মাসি।
হাতের ইশারায় বাহবা দিল মাসিকে।
মাসিও খুব খুশি হলো। আর বলল
'তোমার ভালো লাগলে আমারও ভালো লাগে। রান্না করেও সুখ।'
কল্যান বলল 'আমি সিরিয়াসলি বলছি মাসি তুমি ছোটখাটো একটা দোকান খুলতে পারো, মানে রেস্টুরেন্ট।'
মাসি তো একেবারে প্রসন্নতায় একগাল হেসে বলল 'আমাদের অত টাকা পয়সা কোথায় বাবা।'
কল্যান বলল'-হ্যাঁ আরো কিছু  তোমাকে অবশ্য আধুনিক অনেক রান্না শিখতে হবে।
তবে এটা অবশ্য করতে পারো যদি শুধু ট্রাডিশনাল রান্নায় থাক আবদ্ধ সেটাও করতে পারো।'
ওটা আমার স্বপ্ন হয়েই থাকবে বাবা। মাসি এঁটো বাসন গোছাতে গোছাতে বলল '
'আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আমরা কি আর সেই স্বপ্ন দেখতে পারি?'
কল্যান চেয়ারটা টেবিলের একটু ভেতরের দিকে  ঢুকিয়ে দিলো।
 তারপর বলল  বেশিনে হাত ধুতে  ' না মাসি কার কখন স্টার ঘুরে যাবে কেউ কি কিছু বলতে 
পারে ?তবে স্বপ্নটাকে মরতে দিলে তো হবে
 না ।স্বপ্ন তোমাকে দেখতেই হবে।'
মাসি শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
কল্যান নিজের রুমে গিয়ে ড্রেস পড়ে নিল বেরোতে হবে।
'মাসি তোমাকে আর সন্ধ্যেতে আসতে হবে না আমি কখন ফিরবো না ফিরব।'
'তা বেশ।
তাহলে তুমি কি খাবে?'
'আরে এক বেলা তো ,দরকার হলে কিছু কিনে নিয়ে এসে খেয়ে নেবো ।তোমাকে অত ভাবতে হবে না।
কালকে আবার সকাল সকাল চলে এসো কেমন?'
'ঠিক আছে। কি খাবে না খাবে একটা চিন্তা থেকে যাবে।'
"আরে না মাসি, কোন চিন্তা নেই ।আমার মা এখানে নেই তুমি এখন আমার মায়ের মত তাই এত চিন্তা করছ?'
মাসি বেরিয়ে গেল কল্যাণ বেরিয়ে পরলো।
কল্যাণ ট্রেন ধরল কৃষ্ণনগর লোকাল।
কৃষ্ণনগর স্টেশনে নেমে আবার কিছুতে উঠতে হবে। নবদ্বীপ কলেজে পড়েছে। একটা সেমিনার আছে।
ট্রেনে উঠে প্রথমদিকে জায়গা পায়নি ।তারপর ঠিক মদনপুর ছাড়িয়ে জায়গাটা পেল।
ট্রেনে যেতে যেতে ভাবল  মনে মনে কালকে লেখাটা নিয়ে ভাবতে থাকবে কিভাবে উপস্থাপন করবে ?পরিবেশনটা কতটা সুন্দর ভাবে করা যায় এসব আর কি।
তারপর কখন কৃষ্ণনগর স্টেশনে এসে থেমেছে বুঝতেই পারেনি চোখটা লেগে গেছিল।
সবাই যখন হন্তদন্ত হয়ে নামতে শুরু 
করেছে ।তখন নির্মেদ স্মার্ট কল্যাণ নামলো। তারপর হাঁটতে শুরু করল ।যথারীতি অটোওপেয়ে গেল। বাপরে অটোতে যা ভিড়। কিন্তু চাপতেই হলো ।এদিকে টাইমও হয়ে যাচ্ছে।
যথারীতি নবদ্দীপ কলেজে পৌঁছালো ওখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভরিয়ে তুলল। প্রথমেই ব্রিফকেস খুলে নিজের ল্যাবটপ বের করে চোখ বুলিয়ে নিতে থাকলো। এরইমধ্যে এসে গেল কফি।
কফিটা গলায় বেশ আরাম দিল। কি সুন্দর সুখানুভূতি। একটা  বাতানুকূল ঘরে বসতে দেয়া হয়েছিল। হলঘরটার শীতলতা যেমন নিজের শরীরটাকে প্রশান্তি দিয়েছে তেমনি ভেতরের প্রশান্তি দিয়েছে উষ্ণতায় ভরে কফি।


বিভিন্ন কলেজ থেকে বিভিন্ন লেকচারাররা এসেছেন। গলার জন্য কল্যাণ একটু কেমন যেন ভেতরে ভেতরে একটু দুর্বল হয়ে পড়ছিল।
ঠিকঠাক তথ্য পরিবেশন করতে পারবে কিনা ইন একটা সংশয় ছিল।
গুরুর নাম করে নেমে পড়তেই হলো।
গলার স্বর এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নিলো তারপর তার বক্তব্য শুরু করলো।
বক্তব্য শুনে সকলে অভিভূত, আপ্লুত।
প্রত্যেকের ভেতরে যে একটা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করেছে তাতে কল্যাণও ভেতরে ভেতরে ভীষণভাবে অভিভূত হয়ে গেছিল।
তারপর মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল আজকে ডাক্তার দেখাতেই হবে।  ব্রেক এর সময় ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করে নিয়েছে।
কিন্তু আজকে কি ডাক্তার দেখাতে পারবে কটায় ছাড়া পাবে সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছে না দেখা যাক।
এরমধ্যে লাঞ্চ এসে গেছে। লাঞ্চে বিরিয়ানি ,মটন কষা দেয়া হয়েছে। লঞ্চের প্যাকেট খুলে কল্যান
মনে মনে খুব খুশি হয়েছে।
মাঝে টুক করে মনে হল শিখাকে ফোনটা করলে কেমন হয়।
আমার গলাটা জন্য ও চিন্তিত   । ভাবতেই রিসিভ করলো তারপর বললো বলো।
'যেন মনে হল ফোনের অপেক্ষাতেই বসে ছিল 'অনেকটা অধীর আগ্রহে।'
"তোমার প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে?"
'না গো ,এখন লাঞ্চ করছি। এখন ব্রেক।'
'ও আচ্ছা তোমার গলার অবস্থা কি?'
'কি মনে হচ্ছে?'
সকালে যে খারাপ অবস্থা ছিল তার থেকে একটু বেটার মনে হচ্ছে ওষুধ খেয়েছো নাকি?
এটা বোধহয়  জানো ,ঈশ্বরের অসীম লীলা ।খুব টেন্সড ছিলাম আ'মি।'
'"তুমি কি করছ?
'তোমার কথাই চিন্তা করছিলাম। ঠিকঠাক গলা কাজ করছে কিনা?'
'তোমার লেকচার হয়ে গেছে?'
"হ্যাঁ ,হয়ে গেছে।'
"তাহলে কখন ফিরবে?'
'সেমিনার শেষ হোক তবে তো?'
'ঠিক আছে টেক কেয়ার।'
'সেম টু ইউ।'
'/অ্যাই শিখা একটা গান শুনিয়ে দাও না খুব ইচ্ছে করছে তোমার কন্ঠে গান শুনতে। প্লিজ।"
"এখন! মাথাটাও গেছে।"
"প্লিজ একটু শুনিয়ে দাও না'
"মান্নাদের একটা গান গাইছি বেশি কিন্তু করবো না?"
"Ok"
"মিষ্টি একটা গন্ধ রয়েছে ঘরটা জুড়ে,... এলোমেলো করে ছড়ানো ছিল যা, কার দুটি হাত সাজিয়ে দিলো তা। চিনি নাকি চিনি না। কাছে না দূরে..।'
ওদিকে কর্তৃপক্ষ কল্যাণকে ডাকলেন
' স্যার আসুন সেমিনার শুরু হয়ে গেছে।'
'হ্যাঁ যাচ্ছি,।' 
"এখন ছাড়ছি কিন্তু মিষ্টি একটা গন্ধ প্রাণের ভেতরে ছড়িয়ে দিলে তুমি।"
শিখা প্রসন্নতায় হো হো করে হেসে উঠলো।

কবি শারমিন সুলতানার কবিতা







জীবন নামক সহজ খাতায়

শারমিন সুলতানা 

চারপাশে এমন অনেক আছে
চরম অভাগা মানুষ, 
মৃত্যু ভয় নেইকো তাদের 
উড়ায় শুধু ফানুস। 

না হয়,"বাবার"চোখের মণি 
হয় যে অভিশপ্ত, 
বোনের দুঃখেও কাঁদেনা মন
হয় বিরক্তের পাত্র।

ভাইয়ের কষ্টের রাখে না খবর
জ্ঞান দিতে সদা ব্যস্ত, 
সত্যনিষ্ঠ তারাই কেবল
সবাই তাদের অধীনস্থ। 

টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে 
হয়নাতো আচরণ সদয়,
ইবাদতেও ঢের ফাঁকিবাজি 
কঠিন হয় যে হৃদয়।

"মা" থেকেও মধুর ডাকটি
ডাকতে জানে না যেই জন,
সব থেকেও ভীষণ গরিব 
বোঝেনা তাদের অবুজ মন।

এমন সুখী নাই-বা হোক
এই জগতের কেউ,
জীবন নামের সহজ খাতায়
থাকে সন্তান বউ।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৭০



ধারাবাহিক উপন্যাস

শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৭০)
শামীমা আহমেদ 


শিহাব, সন্ধ্যে হয়ে এলো। এবার বাসায় ফিরতে হবে, বলেই শায়লা উঠে দাঁড়ালো। 
শিহাব কথাটিতে শতভাগ সম্মতি জানিয়ে সেও উঠে দাঁড়ালো। 
হ্যাঁ,শায়লা চলো তোমাকে এগিয়ে দেই।
যদিও ইচ্ছে করছে জীবনের বাকী সময়টা তোমার সাথেই কাটিয়ে দেই। 
শায়লা আমার আর ভালো লাগছে না তোমাকে ছেড়ে থাকতে? এইতো তুমি চলে গেলে আমার আবার সেই একাকী থাকা।এই দীর্ঘরাত একাকী পাড়ি দেয়া। তোমার জন্য আমি সবসময় অপেক্ষায় থাকবো।
শিহাবের কথায়  শায়লার চোখে জল ভরে এলো। সে এই কথা টিতে সায় দিয়ে শিহাবকেজানালো,আমি সব বাধা পিছনে ফেলে তোমার কাছে আসবো শিহাব। তুমি শুধু আমার অপেক্ষায় থেকো।
শায়লা তার পার্সটা নিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে এলো।  শিহাব দরজা খুলে  দেখলো লিফট নিচে নামছে  এবং ভেতরে লোকজনও আছে। তাই এবার দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। কেয়ারটেকার বেলালকে শিহাব একটা রিকশা ডেকে দিতে বললো।শায়লাকে বিদায় জানিয়ে শিহাব বললো, পৌঁছে অবশ্যই  জানিও। বেলালকে কিছু বখশিশ দিয়ে শিহাব ঘরে ফিরে এলো।

বাসার গেটে রিকশা থামতেই শায়লার রুহি খালা আতংকে ধরলো। ভাগ্য সহায়  হলো,খালার ফ্ল্যাটের  দরজা বন্ধ এখন। শায়লা প্রায় নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলো। 
শায়লা বাসায় পৌঁছে সবার আগে শিহাবকে জানিয়ে দিলো। 
কিছুক্ষণ পর রাহাত অফিস থেকে ফিরলো হাতে মায়ের জন্য কেনা ঔষধের প্যাকেটটি দেখিয়ে রাহাত জানতে চাইলো, আপু তুমি নিজে ওষুধ কিনতে যাওনি? রুহি খালার বাসা থেকে ঔষধ আনতে হলো। তবে তুমিতো বাইরে গিয়েছিলে রুহি খালা ফোনে আমাকে জানালো। 
শায়লা বুঝে নিলো, রুহি খালা তবে রাহাতকে কল দিয়ে সব জানিয়েছে।
রাহাতের কথায় শায়লা নিরুত্তরই রইল।
আপু, তবে কোথায় গিয়েছিলে?
শায়লা ভাবলো, অন্য সময় হলে রাহাত এই প্রশ্নটা করার সাহস দেখাতো না।কিন্তু রুহি খালা রাহাতকে একেবারে বদলে দিয়েছে।
-তবে কি তুমি শিহাব ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে। শায়লার উত্তর না নিয়ে রাহাত বেশ বিরক্তির সুরে বললো, আপু এসব একেবারেই ঠিক হচ্ছে না।আর মাত্র কয়েকদিন পর নোমান ভাইয়া আসছেন। এ সময় তোমার শিহাব ভাইয়ার সাথে যোগাযোগটা কমিয়ে দেয়া উচিত।
রাহাতের মুখে এই প্রথম নোমান ভাইয়া নামটা শুনে শায়লা চমকে উঠলো!  এতদিন
ধরে নোমান সাহেবই বলে আসছিল। 
রাহাত বেশ বিরক্তিকর মনোভাব নিয়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। মনে হলো শায়লাদের কোন উত্তর শোনার জন্য সে মোটেই আগ্রহী নয়।

রাতে নোমান সাহেবের কল এলে শায়লাকে তার সাথে কথার অভিনয় চালিয়ে যেতে হলো।শায়লাকে নিয়ে তার কতশত ভাবনা!
শায়লা নীরবে তা হজম করে গেলো।

শিহাব আজ একটু তাড়াতাড়ি বিছানায় গেলো। কাল সকালে একটু গাজীপুর ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে। কিছু বিদেশি বায়াররা আসবে।ওরা ফ্যাক্টরির যাবতীয় বিষয় দেখে তবে অর্ডার করবে।ওয়ার্কাদের নিরাপত্তা, হেলথ ইসু, স্যানিটেশন, চাইল্ড  কেয়ার,ম্যাটারনিটির ছুটিছাটা,প্রোপার স্যালারি, ওয়ার্কিং টাইম,ওভারটাইম, তার পেমেন্ট যথাযথ কিনা তা খতিয়ে দেখবে। প্রোডাক্ট এর চেয়ে ওদের কাছে এগুলোর প্রায়োরিটি বেশি। আর এসব ওরা  শ্রমিকিদের কাছ থেকে নিজ মুখে শুনবে। ওরা যে একটা ভদ্র জাতি তা এতেই প্রমাণিত হয়।আর আমরা ? জাতিগতভাবেই শ্রমিকদের রক্তচোষা মালিকপক্ষ। শিহাব ভাবলো আমাদের নৈতিক চরিত্রের উন্নতি হওয়া জরুরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চেয়ে।
শিহাব একা বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে এইসব নানান ভাবনার ডালপালা মেলছিল।
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো। শিহাবের ধ্যান ভাঙল। ফোন হাতে তুলে নিতেই দেখলো মায়ের কল। শিহাব উঠে বসলো।
মা কেমন আছো ? জিজ্ঞেস করতেই মায়ের অনুযোগ, কিরে মাকে একেবারে ভুলেই গেছিস। কোন ফোন করিসনা, খোঁজ খবর নিস না,
এইতো মা খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে।
বুঝলাম,শায়লা কেমন আছে ? মেয়েটা এসে মায়া বাড়িয়ে গেছে। আরেকদিন নিয়ে আসিস।
আচ্ছা আনবো মা।
কিছু খাবার পাঠিয়েছি।কাল কুরিয়ারে গিয়ে নিয়ে আসিস।
শিহাবের কাল গাজীপুর যেতে হবে। এ কথাতো মাকে বলা যাবে না আর তাছাড়া খাবারও প্রায় শেষ। আনতেই হবে।
ঠিক আছে মা, আমি কাল গিয়ে নিয়ে আসবো।
আরাফ কেমন আছে মা ?
এইতো ভালোই আছে। আলহামদুলিল্লাহ। আজ অনেক খেলেছে ভাই বোনদের সাথে।
ঠিক আছে মা, আমি সময় পেলেই আসবো।
আচ্ছা বাবা ভালো থাকিস।পথঘাটে সাবধানে চলিস।
তুমি দোয়া রেখো মা।আচ্ছা রাখি।আল্লাহ হাফেজ।
শিহাব ঘড়িতে সময় দেখলো।রাত সাড়ে দশটা বাজছে।হ্যাঁ,কবিরকে  কল করা যায়।
শিহাব কবিরকে কল করে কাল কুরিয়ার থেকে খাবারগুলো রিসিভ করে বাসায় ফ্রিজে রেখে যেও।আমার কেয়ারটেকার বেলালের কাছে চাবি থাকে।তুমি তোমার নাম বলে রেখে যেও।
কবির খুবই অনুগতভাবে দ্বায়িত্ব বুঝে নিলো।
সকাল নয়টায় শিহাবের ঘুম ভাঙল। ওয়াশরুম থেকে ফিরে শিহাব বারান্দায় যেতেই গত সন্ধ্যার কফি মগ দুটি শায়লাকে ভীষণভাবে মনে করিয়ে দিলো। শিহাব উদাস ভাবনায় নিচের রোডের গাড়ি চলাচল দেখতে লাগল। ভেবে নিলো তাকেও বেরুতে হবে।শিহাব  শাওয়ার নিয়ে ঝটপট তৈরি হয়ে বের
হয়ে গেলো। কিছুদুর গিয়ে একটা চেনা রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা সেরে নিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশ্য  বাইকের স্পীড বাড়িয়ে ছুটে চললো।
রাহাত নাস্তা সেরে অফিসের জন্য বেরুবে।শায়লাকে জানালো, আপু আমি লাঞ্চের পর বের হয়ে মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসবো।
অফিস শেষ করে যেতে গেলে বেশ রাত হয়ে যাবে। বিকেল নাগাদ মা পৌঁছে যাবে বাসায় সেটাই ভাল। রাত করলে আবার কতক্ষণ জ্যামে পড়তে হয় কে জানে ? তুমি এদিকটা গুছিয়ে রেখো।শায়লা আচ্ছা বলে বাসার দরজা লাগিয়ে দিলো। 
শিহাবের অফিস এসিস্ট্যান্ট কবির যাত্রা বাড়ি থেকে বাসে একেবারে উত্তরার হাউজবিল্ডিং এ এসে নামল।নয় নম্বর সেক্টরে সুন্দরবন কুরিয়র গিয়ে শিহাবকে কল করলো।শিহাব বাইক থামিয়ে  কুরিয়ারের লোকদের সাথে কথা বলে  কবিরকে পার্সেলটি দিতে অনুরোধ করলো। কবির খাবারের ব্যাগটি নিয়ে তকশায় শিহাবের বাসা সেক্টর তের এর দিকে এহিয়ে গেলো।এর আগেও বেশ কয়েকবার কবির শিহাবের নানান কাজে এই বাসায় এসেছে।কেয়ার টেকার বিল্লাল তাকে ভালোভাবেই চিনে। বাসায় ঢুকতেই বললো,উপরে যান,সারের বাসায় নিয়া কাম করতাছে,দরজা খোলাই আছে। কবির লিফটে উপরে উঠে গেলো।দরজা খোলাই পেলো। বুয়া ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে।কবির খাবারের ব্যাগ থেকে বক্সগুলো বের করে সব ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে গেলো।নিচে এসে রিকশা নিয়ে অফিসের দিকে এগিয়ে গেলো। এর পরপর
হঠাৎ বাসার গেটে একটা উবার এসে থামলো। গাড়ির ভেতর থেকে একটি মেয়ে বাসার নাম্বার প্লেটের সাথে ঠিকানা মিলিয়ে নিচ্ছল।আর তা মিলে যাওয়াতে উবার  ভাড়া মিটিয়ে মেয়েটি গাড়ি থেকে নামলো। বাসার গেটে উঁকিঝুকি দিচ্ছে। বিল্লাল এগিয়ে গেলো। দেখলো খুবই সুন্দরী  একজন মেয়ে! মনে হচ্ছে বিদেশি। চোখে সানগ্লাস, পায়ে হাইহিল জুতা।খুব সুন্দর পোষাক পরা। হাতে একটা চাক্কাওয়ালা সুটকেস,তার গায়ের রঙ এক্কেবারে বিদেশিদের লাহান,ধবধবা ফসসা। এই সুন্দর মেয়েছেলেকেতো সে কোনদিন দেখে নাই ! তার ভিতরে ভীষণ কৌতুহল হলেও বিল্লাল তার ডিউটিতে ব্যস্ত হলো,ম্যাডাম, কাউরে খুঁজতাছেন ?
মেয়েটি খুব হালকা কন্ঠে বললো,হ্যাঁ,  এটা কি শিহাব সাহেবের বাসা,মানে উনি কি এখানে থাকেন ? 
বিল্লাল বিস্ময়ে যেন নির্বাক হয়ে গেলো। এত সুন্দরী মাইয়া সারকে খুঁজতাছে? অবশ্য সারওতো সুন্দর মানুষ। 
কি ভাবছেন? বলছেন নাতো ?
জ্বী ম্যাডাম,শিহাব সার এই বাসায় থাকেন, চারতলায়।
মেয়েটি লিফটের দিকে এগুতে চাইলে,বিল্লাল বলে উঠলো, সারতো বাসায় নাই,সকালেই বাহির হইয়া গেছে। গাজীপুর গেছে।আমারে বইলা গেছে। তয় সারের ঘর খোলা আছে,বুয়া কাজ করতাছে।
বিল্লালের মুখ দিয়ে কথাটা ফস করে বেরিয়ে গেলো !
তা,আপনি কে ম্যাডাম ? সারের কি হন ?
আমার নাম রিশতিনা।আমি আপনার সারের স্ত্রী।এতদিন বিদেশে ছিলাম।আজ দেখা করতে এসেছি ।
বিল্লাল বেশ অবাক হইল,মনের ভেতর তার প্রশ্ন,তবে কাইল বিকালে যে ম্যাডাম আসলো সে তবে কে ? সারের বউ আছে তাতো কোনদিন জানতাম না ! তয় বউ তার সাথে থাকে না ক্যান ?
আমি একটু তোমার সারের বাসায় যেতে চাই। উনি কোন পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন ?
না, না ম্যাডাম,সারের অনুমতি ছাড়া তার বাসায় আপনারে যাইতে দিতে পারিনা।
ঠিক আছে, তোমার স্যারকে কল করে যেনে নাও।আমি অপেক্ষা করছি।
বিল্লাল কল করতে ফোন হাতে নিলো।
রিশতিনা চারপাশে তাকিয়ে দেখছে।শিহাব বহুদিন হলো ঝিগাতলায় আর থাকছে না।ইংল্যান্ডে তার চলে যাওয়ার পরপরই এখানে চলে এসেছে।রিশতিনা মনে মনে তার উত্তরার কাজিন, শিহাবের বন্ধু রোমেল ভাইয়াকে অনেক থ্যাংক্স জানালো। রোমেল ভাইয়া হেল্প না করলে শিহাবের ঠিকানা জানা হতো না। অবশ্য ইংল্যান্ডে থাকতে শিহাবের সব খবর রিশতিনা তার কাছ থেকেই জানতো।
বিল্লাল শিহাবকে কল করেই যাচ্ছে। শিহাব চলন্ত বাইকে তার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না। এদিকে রিশতিনা উপরে যেতে চাইছে।কি যন্ত্রণায় পড়লো সে ভাবতেই নিচতলার অপুর আম্মু বেরিয়ে এলেন ছেলেকে স্কুল থেকে  নিয়ে আসতে। বিল্লাল এক দৌড়ে তার কাছে ছুটে গেলেন।এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব কিছু গরগর করে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলে গেলো।
অপুর মাতো সব শুনে চোখ কপালে তুললেন। কি ! শিহাব সাহেব বিবাহিত? তার স্ত্রী আছে। কই কোনদিনতো বলেননি।
রিশতিনা একটা সমাধানের জন্য তার দিকে এগিয়ে গেলো।
প্লিজ হেল্প মি।আই এম মিসেস শিহাব।আই এম হিজ ওয়াইফ।
আপনি তার বউ, তা এইটা আমরা কেমনে বুঝবো ? 
ইয়েস,আই হেভ প্রুফ। শিহাব ইজ মাই হাজবেন্ড।আই হেভ ফটোগ্রাফস অফ আস,ইউ সি,  বলে সে মোবাইল গ্যালারি থেকে ছবি দেখাতে চাইলো। অপুর আম্মু ভাবলো,বিষয়টি কেমন দেখায় ? সে বললো,বিল্লাল তোমার সার রে ফোন দাও, জিজ্ঞেস করো।
শিহাব গাজীপুরে পৌছেই দেখলো বিল্লালের অনেকগুলো কল। শিহাব ভাবলো,কবির কুরিয়রের খাবার রেখে গেছে সেটা জানাতেই  এত কল। উফ ! এ বিল্ললাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না।বেশি মাত্রায় ওবিডিয়েন্ট ! 
শিহাব ফোন রিসিভ না করেই ফ্যাক্টরিতে ঢুকে গেলো ম্যানেজার সাহেব এগিয়ে এলেন।অপুর আম্মু অনেকক্ষন অপেক্ষায় থেকে রিশতিনাকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালেন।রিশতিনা একে একে তার আর শিহাবের বিয়ের আগের পরের সব ছবি দেখালো। খুব সংক্ষিপ্ত করে নিজেদের দূর্ভাগ্যের কথা বললো। অপুর আম্মু ভাবলেন স্বামী স্ত্রীর মাঝে বোধহয় মান অভিমান চলছে। তিনি রিশতিনাকে চারতলায় শিহাবের ফ্ল্যাটের দরজায় পৌঁছে দিলো। আর তার ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে হবে এটা বলে রিশতিনার কাছ থেকে বিদায় নিলো।রিশতিনা কলিং বেল পুশ করলো।তার ভেতরে প্রচন্ড  এক ভাললাগা আবার শিহাবের প্রতি তার পরিবারের এত অন্যায় আচরণের জন্য তার চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো। 


চলবে....

কবি সফিক ইসলাম এর কবিতা




আয়নায় অন্যমুখ
সফিক ইসলাম



প্রতিদিন আকাশ থেকে খসে পড়া ঝরা পালক কুড়াই, আর জমিয়ে রাখি
একদিন পাখি হয়ে উড়ে যাবো।
একদিন  বাতাসের কানে কানে বলে যাবো
এ পৃথিবী আমার জন্যে নয়। 

প্রতিদিন অজস্র শিশিরের কণাগুলো চোখের কোণায় জমিয়ে রাখি....
একদিন রাতভর কাঁদবো বলে।
এভাবে নিয়তই ভেঙে ভেঙে টুকরো করি নিজেকে আয়নার কাচের মতো
অথচ প্রতিটি টুকরোতেই আমি  আমাকেই দেখি। 

নিভৃতে যত্ন করে যারা দুঃখ পোষে
অনিয়ম দেখে দেখে যারা বড় হয়
নিয়ম ভাঙার মিছিলে এই চোখ খুঁজে ফিরে
তাদেরই মুষ্টিবদ্ধ হাত। 

আগামীর ভোর কবে হবে বলতে পারো কেউ ?
যে ভোরে ভাঙা আয়নার পারা মুছে স্বচ্ছ কাচ হবে!
প্রতিস্মরিত আলোতে নিজেকে না দেখে 
দেখবো অগনতি মানুষের মুখ।

কবি জাহানারা বুলা'র কবিতা





স্মৃতির হরিণ 
জাহানারা বুলা

আমাদের প্রয়োজন অতিক্রান্ত সেই কবেই
যোগাযোগ অর্থহীন এখন
আমরা ভালো আছি, ভালোই থাকা উচিৎ। 

মৃত্তিকা রুক্ষ হয় না কেবল আষাঢ়ের বৃষ্টি বিহীন
পদ্মা-মেঘনা ফুঁসে ওঠে নির্ধারিত সময়ে ওদের
শরৎ জানান দেয় যদিও আকাশের নীলে
কাশবন থাকে না সবার চৌহদ্দিতে। 

পথের ধারে ঘুমিয়ে রাত কাটে যার
তার কাছে পেলব বিছানা অর্থহীন, অচেনা
আমাদের আকাঙ্ক্ষাও আজ স্মৃতির হরিণ।

কবি বকুল  আশরাফ এর কবিতা





যদি ভালোবাসো 
বকুল  আশরাফ

অপেক্ষায় থাকো বলেই তো ফোনটা ধরো,
আমি তো অপেক্ষায় জড়োসড়ো জুবুথুবু
কাঁথার ভেতর লুকাতে গিয়ে ভিন্নতরো
যেমন লুসাই পাহাড় লুকায় কিছু ঝর্না জল
যে জল বাধাহীন অকুতোভয় ছুটে চলে
মিশে যায় আরো কঠিন কোমল জলে
যেখানে সাগর আর নুনের ঢেউহীন লড়াই,
এ কেমন প্রেমের বড়াই বারবার ধেয়ে আসে
আর মিশে থাকে দুজনার চারপাশে।
ওরা কি সত্যি ভালোবাসে নিমের ডাল!
আয়ুর্বেদ জঞ্জাল যতো আবেগহীন করুণা
আমরা সুনীল-বরুনা যে তিন যুগ অভিমানে
তিনটি বরষ একসাথে কত আয়োজনে
এখন অধিক ভুল করি ! আসলে কি গড়ি !
নাকি নিজেকে ভাঙ্গি আর পোড়াই
শুধু জানি পোড়ালেই ধাতব আর মাটি
শর্তহীনভাবে শংকর নয় হয়ে উঠে খাঁটি
তাইতো ভালবাসার পথ ধরে এখনো পথ হাঁটি।

কবি রাজ রিডার এর কবিতা





চিঠি
রাজ রিডার

চিঠি! চিঠি! চিঠি!
এই অবেলায় ডাক পিয়ন—তাও এই যুগে। আশ্চর্য! 
ভুলে এসেছে নাকি? পিয়নটাও নতুন কেউ মনে হয়। 
আগেরটা কি বেঁচে আছে—তাও জানি না। 
আছে হয়তো। অবসরে গেছে। 
আর সে চিঠি, চিঠি বলে হাঁক দিতো না। 
খুব নরম সুরে বলতো—প্রিয়জনের বার্তা এসেছে
বাহ কি সুন্দর অভিব্যক্তি—প্রিয়জনের বার্তা।
চিঠি! চিঠি! চিঠি!
নিচে মনে হয় কেউ নেই। তাই দরজাটা খুলে দিচ্ছে না। 
নামতেই হবে হয়তো। চশমাটা কই রাখলাম? 
“এত ভুলো মনের না তুমি। তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।“
তুমি দেখো একদিন কিছু না কিছু করবোই। 
“যদি কিছু করতে পারো একটা চিঠি অবশ্যই লিখবো তোমাকে।“
আরেহ মাথাতেই তো আছে। চোখের সাথে সাথে 
মাথাটাও গেল মনে হয়। যেতেই পারে। একই সাথে দুজনের জন্ম। 
মচ! মচ! মচ!
হাড়ের মতো চটি জোড়াও শব্দ করছে। 
“এই নাও নতুন চটি। অন্য কোন স্যান্ডেল নিবো ভাবছিলাম।
কিন্তু তোমার ইমেজের সাথে এই জোড়াই মানায়।“
এসবের কি দরকার ছিলো। এটাই তো বেশ রয়েছে।
“বলেছে তোমাকে। আর এই নাও ডায়েরি। আমাকে নিয়ে
কবিতা লিখো।“
তোমাকে নিয়েই তো লিখি। তুমিই তো আমার মিউজ।
তোমাকে চেতনা দিয়ে নিজেই অচেতন। 
“থাক। অনেক হয়েছে। আর বলতে হবে না।“
এসো কবিতা লিখি। 
“কবিতা! এখন? আমি থাকলে তোমার কবিতা হবে?”
 হবে। দীর্ঘ শ্বাসের সবচেয়ে বড় মহাকাব্য—পয়ারে পয়ারে। 
“কবে লিখেবে?”
আষাঢ়স্য প্রথমে দিবসে। 
“তবে আমিও চিঠি লিখবো পহেলা আষাঢ়ে।“
ছাতাটা যে কই আছে? বৃষ্টি হচ্ছে গত দুই দিন ধরে। 
সুবোল যে সব কোথায় রাখে? আর আজ বাজারে যেয়ে
হতচ্ছাড়া মরে গেছে মনে হয়। 
এই তো! পেয়েছি। 
“তা তো পাবেই। যখনই চেয়েছো তখনই পেয়েছো।
কবে আবার বাধা দিয়েছি আমি।“
অভিমানে ঠাঁসা—এমনকি শরীরের প্রতিটা বাঁধনও।
চৈতন্যের আলোক যাত্রায় বাধা দেয়। 
আজ যেন সিঁড়িটা শেষ হতেই চায় না। 
যেন সসীম থেকে অসীমে যাত্রা করছি। 
—বাবু, আপনার চিঠি এসেছে। 
দাও।
—এখানে একটি সই দেন। 
আচ্ছা, শোন ভাই এখন যাস না। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। 
আর সময় থাকলে একটু চাও খেয়ে যাস। নিচের ঘরে একটু বোস। 
—জি আচ্ছা, দাদা। 
-দাদা, আজ যা বৃষ্টি হচ্ছে না! 
একটু পর পর কী বাজ পড়ছে রে বাবা। 
মরেই যাবো মনে হচ্ছিল। 
আজ কী কিনলি রে? পেলি কিছু ভাল। না ঝড় বৃষ্টি দেখে পালিয়ে এলি। 
-না দাদা। চিংড়ি কিনেছি। আর কিছু তরি তরকারিও।
বেশ। আর ওকে একটু চা খেতে দিস। কর্তব্যপরায়ণ ছেলে।
বড় ভাল লাগলো ওকে দেখে। 
পরিচয়কে ছাপিয়ে যেয়ে যে পরিচয় হয়
তেমনই পরিচিত এই হাতের লেখা। 
“হাতের লেখা তো নই, যেন টাইপ।“
বাবার হাতে শিখেছি জানো। আমার মায়ের
হাতের লেখাও অনেক সুন্দর ছিলো। তবে তোমারটার এই অবস্থা কেন?
“কত মার খেয়েছি, জানো। শুধু হাতের লেখা খারাপ বলে পরীক্ষায়
নম্বরও কম পেতাম।“
আমার সাথে আগে দেখা হলে ঠিক শিখিয়ে দিতাম।
“হুম বলেছে। শিখাতে; তবে অন্য কিছু।“ 
সুবোল, একটু উপরে আয়। 
-দাদা।
ছেলেটা আছে, না চলে গেছে রে? 
-চা-বিস্কুট খাচ্ছে, দাদা। 
এই ঠিকানায় এই ডায়েরিটা পার্সেল করে দিতে বলিস ওকে।
আর কত কি লাগবে দিয়ে দিস। 

“বলেছিলাম লিখবো। মনে আছে তোমার? বহু বছর পর তোমাকে দেখলাম। চায়লেই সম্ভব ছিলো। ইচ্ছে করেই তোমার ছবির মুখোমুখি হইনি, জানো? কিন্তু এই কদিন এত পত্রিকায় আর টিভিতে এসেছো—না দেখে উপায় ছিলো না। শেষ পর্যন্ত এত বড় পুরষ্কারটা পেয়েই গেলে তুমি।“
ঠিকই বলেছো। হারিয়ে সব পেয়েছি।