চিঠি
রাজ রিডার
চিঠি! চিঠি! চিঠি!
এই অবেলায় ডাক পিয়ন—তাও এই যুগে। আশ্চর্য!
ভুলে এসেছে নাকি? পিয়নটাও নতুন কেউ মনে হয়।
আগেরটা কি বেঁচে আছে—তাও জানি না।
আছে হয়তো। অবসরে গেছে।
আর সে চিঠি, চিঠি বলে হাঁক দিতো না।
খুব নরম সুরে বলতো—প্রিয়জনের বার্তা এসেছে
বাহ কি সুন্দর অভিব্যক্তি—প্রিয়জনের বার্তা।
চিঠি! চিঠি! চিঠি!
নিচে মনে হয় কেউ নেই। তাই দরজাটা খুলে দিচ্ছে না।
নামতেই হবে হয়তো। চশমাটা কই রাখলাম?
“এত ভুলো মনের না তুমি। তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।“
তুমি দেখো একদিন কিছু না কিছু করবোই।
“যদি কিছু করতে পারো একটা চিঠি অবশ্যই লিখবো তোমাকে।“
আরেহ মাথাতেই তো আছে। চোখের সাথে সাথে
মাথাটাও গেল মনে হয়। যেতেই পারে। একই সাথে দুজনের জন্ম।
মচ! মচ! মচ!
হাড়ের মতো চটি জোড়াও শব্দ করছে।
“এই নাও নতুন চটি। অন্য কোন স্যান্ডেল নিবো ভাবছিলাম।
কিন্তু তোমার ইমেজের সাথে এই জোড়াই মানায়।“
এসবের কি দরকার ছিলো। এটাই তো বেশ রয়েছে।
“বলেছে তোমাকে। আর এই নাও ডায়েরি। আমাকে নিয়ে
কবিতা লিখো।“
তোমাকে নিয়েই তো লিখি। তুমিই তো আমার মিউজ।
তোমাকে চেতনা দিয়ে নিজেই অচেতন।
“থাক। অনেক হয়েছে। আর বলতে হবে না।“
এসো কবিতা লিখি।
“কবিতা! এখন? আমি থাকলে তোমার কবিতা হবে?”
হবে। দীর্ঘ শ্বাসের সবচেয়ে বড় মহাকাব্য—পয়ারে পয়ারে।
“কবে লিখেবে?”
আষাঢ়স্য প্রথমে দিবসে।
“তবে আমিও চিঠি লিখবো পহেলা আষাঢ়ে।“
ছাতাটা যে কই আছে? বৃষ্টি হচ্ছে গত দুই দিন ধরে।
সুবোল যে সব কোথায় রাখে? আর আজ বাজারে যেয়ে
হতচ্ছাড়া মরে গেছে মনে হয়।
এই তো! পেয়েছি।
“তা তো পাবেই। যখনই চেয়েছো তখনই পেয়েছো।
কবে আবার বাধা দিয়েছি আমি।“
অভিমানে ঠাঁসা—এমনকি শরীরের প্রতিটা বাঁধনও।
চৈতন্যের আলোক যাত্রায় বাধা দেয়।
আজ যেন সিঁড়িটা শেষ হতেই চায় না।
যেন সসীম থেকে অসীমে যাত্রা করছি।
—বাবু, আপনার চিঠি এসেছে।
দাও।
—এখানে একটি সই দেন।
আচ্ছা, শোন ভাই এখন যাস না। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।
আর সময় থাকলে একটু চাও খেয়ে যাস। নিচের ঘরে একটু বোস।
—জি আচ্ছা, দাদা।
-দাদা, আজ যা বৃষ্টি হচ্ছে না!
একটু পর পর কী বাজ পড়ছে রে বাবা।
মরেই যাবো মনে হচ্ছিল।
আজ কী কিনলি রে? পেলি কিছু ভাল। না ঝড় বৃষ্টি দেখে পালিয়ে এলি।
-না দাদা। চিংড়ি কিনেছি। আর কিছু তরি তরকারিও।
বেশ। আর ওকে একটু চা খেতে দিস। কর্তব্যপরায়ণ ছেলে।
বড় ভাল লাগলো ওকে দেখে।
পরিচয়কে ছাপিয়ে যেয়ে যে পরিচয় হয়
তেমনই পরিচিত এই হাতের লেখা।
“হাতের লেখা তো নই, যেন টাইপ।“
বাবার হাতে শিখেছি জানো। আমার মায়ের
হাতের লেখাও অনেক সুন্দর ছিলো। তবে তোমারটার এই অবস্থা কেন?
“কত মার খেয়েছি, জানো। শুধু হাতের লেখা খারাপ বলে পরীক্ষায়
নম্বরও কম পেতাম।“
আমার সাথে আগে দেখা হলে ঠিক শিখিয়ে দিতাম।
“হুম বলেছে। শিখাতে; তবে অন্য কিছু।“
সুবোল, একটু উপরে আয়।
-দাদা।
ছেলেটা আছে, না চলে গেছে রে?
-চা-বিস্কুট খাচ্ছে, দাদা।
এই ঠিকানায় এই ডায়েরিটা পার্সেল করে দিতে বলিস ওকে।
আর কত কি লাগবে দিয়ে দিস।
“বলেছিলাম লিখবো। মনে আছে তোমার? বহু বছর পর তোমাকে দেখলাম। চায়লেই সম্ভব ছিলো। ইচ্ছে করেই তোমার ছবির মুখোমুখি হইনি, জানো? কিন্তু এই কদিন এত পত্রিকায় আর টিভিতে এসেছো—না দেখে উপায় ছিলো না। শেষ পর্যন্ত এত বড় পুরষ্কারটা পেয়েই গেলে তুমি।“
ঠিকই বলেছো। হারিয়ে সব পেয়েছি।
অভিমান গুলো বুঝি কলমের কালিতে লিখা হলো সাড়িতে
উত্তরমুছুন