২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

কবি মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা

 


রীতি
মোঃ ইসমাঈল 

আহা কতই না সুন্দর দেখতে ফুল
চোখ আসে জুড়িয়ে হয়ে যায় ব্যাকুল। 
যখনই নাকে আসে ফুলের ঘ্রাণ
পরম শান্তিতে জুড়ায় এ মন ও প্রাণ। 

মৌমাছিরা ফুল থেকে করে মধু আহরণ
তোমারই মনের গহিনে আমি করিবো বিচরণ।
ফুল ফুটে বসন্তের ঋতুতে
আমি হারিয়ে যাবো কেবল শুধু তোমাতে।

ফুল ফুটে ফল ধরিয়ে যায় সে ঝড়ে
মানুষ অভিনয়ের মাঝে যায় যে মরে।
অবশেষে হয়ে যায় ফুলের ইতি
অপরদিকে মানুষের বেঁচে থাকে শুধুই স্মৃতি।

মমতা রায়চৌধুরীর পত্রিকা





উপন্যাস




 টানাপোড়েন ১১৫
থাকো জাজ্জ্বল্যমান হয়ে

মমতা রায়চৌধুরী

টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টির পর শীত প্রভাতের কাঁচা সোনালী রোদ্দুর যেন নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে ।পথের ধারে নির্জীব গাছগুলোর শিশির
চাকচিক্যে ভরিয়ে দিয়েছে ।তবে বাতাস একটু 
কড়া আছে ।বেলা বাড়ছে রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া ,যাতায়াত ,পথিক সংখ্যাও বেড়ে 
চলেছে ।শীতকালে কাশ্মীরি কোম্পানির নানা রঙের শাল , রেপার এবং নানা রংয়ের বালাপোষ পথচারীরা শরীর ঢাকাতে  রবির ছটা যেন আরো বেশি বর্ণ বহুল হয়ে উঠেছে।
রেখা অনেকদিন পর ছাদের অনুচ্চ আলিশার ধারে দাঁড়িয়ে এই সব দৃশ্যগুলো দেখছিল। এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি আজ স্কুলে যাবে কিনা। তবে শরীরটা তো সাথ দিচ্ছে না  রান্না তো এখনো বসায় নি। না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।মাসি এসে কাজ করছে। এই মাসিকে বেশি কিছু দেখানোর নেই। মাসিকে একবার বুঝিয়ে দেয়াতে , সব বুঝে গেছে।
এমন সময় রেখার ভাবনা পাশের বাড়ির 
দিকে ।নজরে আসলো শূন্য বাড়িটার বাইরের দিকে তাকিয়ে ,একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।' বেশ কয়েকদিন হল চৈতির মা নেই। রেখা শুনেছি মেয়ের বাড়ি থেকে একটু বাবার বাড়ি হয়ে আসবে কেমন শূন্যতা ঘিরে আছে যেনো বাড়িটাকে অথচ এই ছাদে উঠলে চৈতির মা ও ছাদ থেকে কত কথা বলে। কখনো বা জানলার ধারে দাঁড়িয়ে কখনো বা রান্নাঘরের থেকে কত কথাই না 
হয়েছে ।যখন কোন মানুষই দূরে থাকে তখন বোঝা যায় তার শূন্যতা।কাছে থাকলে বোঝা যায় না। দূরে গেলে তার অভাব ততটাই প্রকট হয়ে ওঠে। এই শূন্য বাড়িটার সঙ্গে একটা মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতি যেন জড়িয়ে গেল।
হঠাৎ মনোজ নিচ থেকে ডাকছে'রেখা, রেখা,রেখা
আ. আ আ…
এরপর মাসি ডাকলো ও বৌমা বৌমা বৌমা।
রেখা ছাদের থেকে উত্তর দিল ডাকছো মাসি?
'আরে ছেলে ডাকছে তোমায় একবার নিচে এসো তো।
ও আচ্ছা যাচ্ছি
মনোজ যে রেখাকে ডাকবে কল্পনার অতীত ছিল।
বাচ্চাগুলোর অসুস্থতার সময় দু এক কথা ওর সঙ্গে হত ।আজকাল যেন কথাটাও বড় প্রয়োজন মাফিক। তাই মনোজ ডাকছে শুনে একটু উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো , পরক্ষনেই মনটা নিষ্প্রভ হয়ে গেল কারণ প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে এজন্যই মনোজ ডেকেছে এই ভেবে । তার স্বচ্ছ আনন্দময় দর্পণএর  মত উজ্জল প্রাণের উপরে ধুলোর পর্দা যে পড়ে গেছে। তবুও রেখার ইচ্ছে হয় ধুলোকণাকে  সরিয়ে ,দর্পণে আবার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে। দেখতে ইচ্ছে করে তার প্রিয় মানুষগুলোর  প্রতিচ্ছবিও। যত অভিমান ক্ষোভ সব দূরে সরিয়ে ভেসে যেতে চায়, চলে যেতে চায় কাছের মানুষের টানে। রেখা বড্ড ভালবাসার কাঙ্গাল। তাই মনোজের ডাক শোনা মাত্রই ছাদের থেকে সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নামতে থাকে ।যত দ্রুত এসে পৌঁছানো যায় কিন্তু একি হচ্ছে তার শরীর আগের মত কেন সাড়া দেয় না ,নামতে গিয়ে ও সে দ্রুত নামতে পারে না। একটু নামতে গিয়ে হাঁপাতে থাকে। ওদিকে মনোজের ক্রুদ্ধ স্বর শোনা যায়"এতক্ষণ আসতে লাগে ?একটা কাজের জন্যই তো ডেকেছি, গল্প করার জন্য তো নয়?'
সব কথাগুলো শুনতে পায় রেখা। মনের ভেতরে যে খুশির হাওয়া  পাল তুলে দিয়েছিল, আস্তে আস্তে সেটা যেন চুপসে যেতে থাকে। তবুও আস্তে আস্তে আসে ।তারপর জিজ্ঞেস করে 'কি হয়েছে?'
'তোমাকে কখন থেকে ডাকছি। তুমি কি শুনতে পাও না? নাকি শুনেও, না শোনার ভান করো। কেন এরকম করো বলো তো ?এত কথা বলতে ত ইচ্ছে করে না , তবুও বলতেই হয়?'
রেখার বুকের ভেতরে লাগে তবুও শব্দটা ব্যবহার করার জন্য রেখার এতটাই অপ্রয়োজনে হয়ে N  ।,গেছে এতে রেখার কি দোষ আছে ভেবে পায় না ভাবার চেষ্টা করতেও চায়না এখন যত ভাবতে যাবে তত কষ্ট বাড়বে শুধু রেখার দুই চোখ জলে ভরে ওঠে। এসব কথাগুলো শুনতে চায় না। অথচ আজকাল  এসব কথা শুনতে হয় ।কি পেয়েছে এই সংসার থেকে?উপরি পাওনা হিসেবে পেয়েছে অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান।
তবুও মনের কষ্ট গুলোকে পাথরচাপা দিয়ে বলল 'কি হয়েছে বলো?  '
 'ওদিকে' সুরু' ফোন করেছিলো? '
রেখা একটু অবাক হলো' সুরো' দা?
 'ওরা কাজের মানুষ কতক্ষণ ফোন ধরে থাকবে বলো ?তোমার মত তো আর সাতসকালে কেউ ছাদে গিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে বেড়াবে না অত সময় ওদের কাছে নেই তাই না?
ফোনটা কেটে দিলো।'
রেখা শুধু বললো '  তা আমাকে কি জন্য প্রয়োজন তোমার বন্ধু র ?'
'কি অবাক কান্ড আমার বন্ধু কোনদিন তোমার সঙ্গে কথা বলে নি? না  কি কেউ কথা বলে না এমন ভাবে বলছো?'
রেখা একটু চুপ করে থাকলো তারপর ভাবলো 'তাই তো কথা তো বলে ।'
ফলে আর কিছু কথা বাড়ালো না।
"আর শোনো ' মা'  কিন্তু ,দিন তিনেক পরেই আসছে। শুধু এটুকুই বলবো বাড়িতে যেন শান্তি বজায় থাকে।'
রেখা যত মনোজকে দেখছে তত বেশি অবাক হয়ে যাচ্ছে।  বাড়িতে অশান্তির মূল তাহলে কি রেখা? এটাই বোঝাতে চাইল মনোজ।
আজ মনোজ ও একথাটা স্পষ্ট করে বলল।
রেখা বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট ,যেন আর নিতে পারছি না , রেখা আস্তে আস্তে নিজের ঘরে চলে আসে। ওদিকে মাসি কাজ করে দিয়ে যাবার সময় বলল বৌমা ,আসছি মা।'
প্রতিদিনই মাসি চলে যাবার আগে রেখাকে এভাবে সম্মোধন করে যায় । উফফফ একটা কাজের মাসি তার এই মিষ্টি ডাকটা  এত কষ্টের ভেতরের যেন কোথায় একটু যন্ত্রণা উপশমের মলম লাগিয়ে দেয়। 
রেখা শুধু বলে হ্যাঁ, মাসি এসো।'
কতদিন কাকিমার সাথে কথা হয় না। নানা ঝামেলায় জড়িয়ে থাকার জন্য খবর নেওয়া হয়নি।
মা চলে যাবার পর থেকে কাকু কাকিমার কাছ থেকে একটু স্নেহ ভালোবাসা পায়। মাসের মানি অর্ডার টা ঠিক পৌঁছেছে কিনা খবর নেওয়া হয়নি। গতদিনের পেপারে বেরোনোর স্বপ্নীলের ছবিটা ওর কাব্যের অংশটুকু সযত্নে রেখে দিয়েছে রেখা খাটের পাশে রেখে দিয়ে ভাবলে একবার কাকিমার কাছে খবরটা নেয়া দরকার বলেই ফোনটা করলো। রিং হয়ে গেল ।ধরল না।
রেখা আবার ফোন করল। এবার মনে হচ্ছে ফোনটা ধরল। 'হ্যালো'।
রেখা বলল ও কাকিমা?
কাকিমা বললেন 'কে রে ননি?'
রেখা বলল  কাকিমা'।
কেমন আছিস মা গলাটা শুনে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে? কি হয়েছে মা?'
রেখার চোখ তখনো জলে ভেজা। নিজেকে সাম্লে নিয়ে বললো'কই কিছু হয়নি তো।'সবাই ঠিক আছে তো?'
হ্যাঁ আমরা মোটামুটি ঠিকই আছি তবে তুই লুকিয়ে গেলে হবে মা তোর গলাতে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।
না না তোমরা সব সময় তো ওটাই ভাবো কিছু না কিছু হয়েছে বলো?
আমরা মা সন্তানের দুঃখ-কষ্ট আমরা ভাল করে বুঝি মা। যাক ভাল থাক এটাই সব সময় চাই।
তোমরা ও'মাসে মানি অর্ডারে টাকাটা পেয়েছো?
হ্যাঁ ,পেয়েছি ।একটু দেরি হয়েছে মা আর আমাদেরও জানানো হয়নি ।জানানো উচিত ছিল। একটু অন্য সমস্যা হয়েছিল?'
রেখা অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করল 'কি হয়েছে? কাকু ঠিক আছে? তুমি ঠিক আছো তো?'
কাকিমা বললেন' হ্যাঁ আমরা সবাই ঠিক আছি।তোর কাকুর যা অবস্থা সেরকমই আছে আরে বুলু দির কথা বলছিলাম।'
কি হয়েছে বুলু কাকিমার?
 বুলুদি তো শয্যাশায়ী ।কদিন আর আয়ু আছে পৃথিবীতে কে জানে? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রেখা যেন স্পষ্ট শুনতে পেল।
'সেকি কাকিমা? ছোট ছেলে বৌমা দেখছে তো?'
'ঐতো দায়ে পড়ে' পাড়ার লোকে চাপ আছে না?'
তবে বুলু দি মনে হচ্ছে বড় ছেলের জন্যই প্রাণটা ধরে রেখেছেন।'
'নীলুদা তাহলে আর আসলো না। নীলুদাকে কি খবরটা জানানো হয়েছে।'
'কে জানে ওদেরকে তো বলেছি যে খবরটা জানাতে। ওরা জানাচ্ছে কিনা সেটাই তো বুঝতে পারছি না। না হলে বলো না মায়ের এরকম অবস্থা শুনে সে কি না এসে পারে?'
রেখা বলল 'তাই তো?
'খুব দেখতে  ইচ্ছে করছে।'
'চলে আয় না মা ।কতদিন আসিস না ।সেই যে এসেছিলি। ক দিন এসে থেকে যা। আমাদেরও ভালো লাগবে। তোরও মনটা একটু ভালো হবে।
রেখা মনে মনে ভাবল   মা আসলে পরেই যাবে। 
হ্যাঁ দেখছি কাকিমা ।আমারও মনটা ছুটে গেছে তোমাদের 
জন্য ।রোজই তো পাখির মত মন  ছুটে যায়। শুধু দেহটা পড়ে থাকে এখানে।
দেহ থাকে।প্রাণ থাকে না।
ঠিক আছে কাকিমা পরে কথা বলবো ভালো থেকো সবাই। রাখছি ফোন।
'হ্যাঁ মা ।রাখ। ভাল থেকো।'
ফোনটা নামিয়ে  রেখে ভাবে ,কিছু সময়ের জন্য তার মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠেছিল। নইলে এই সংসার তার প্রতি অন্যায় বিচার করে ,তাকেই শুধু দোষী সাব্যস্ত করে। কষ্টগুলো যেন হু হু করে বুকের ভেতরে ছুটে চলে। তবুও স্বপ্নীলের ছবিটাকে আঁকড়ে ধরে  বলতে থাকে 'যেখানেই থাকো ,ভালো 
থেকো ।কবিতা, কাব্য ,উপন্যাস এরমধ্যে তোমার প্রকাশ জাজ্জ্বল্যমান হয়ে থাকুক। শুধু আমি থাকি অন্ধকারে চাইলেও দেয়াল চিরে পারবে না দেখতে।চোখের জল শুধু পড়বে। তবুও তুমি চলো নীল আকাশে দু'চোখ মেলে আর হৃদয় পথে দু 'পা ফেলে। দেখবে হৃদয় আকাশের মত। আজ বলবো কি তোমায় প্লিজ নিজের খেয়াল রেখো।
আমি যেথায় যেখানে থাকি শুধু বলবো তুমি ভালো থেকো ।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা




 ভাষা
সেলিম সেখ 

বাংলা মোদের গর্বের ভাষা
পেয়েছি শত কষ্টে,
সেই ভাষাই শুনবে তুমি
সকল বাঙালীর ওষ্ঠে।

বাংলা ভাষা শুনে মোদের
প্রাণ ধড়ে তে ফিরে,
বাংলা ভাষার অপমানে
প্রাণ যে যায় ছিঁড়ে।

পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়েছে আজ
এই বাংলা ভাষা,
বিদেশীরাও পড়ছে বাংলা
বলছে দেখো খাসা।

বাঙালির রক্তে মিশে আছে
মোদের বাংলা ভাষা,
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তায়
সপ্তম স্থানে আসা।

এই ভাষাতেই পড়ি লিখি
এই ভাষাতেই গাই গান,
বাংলা ভাষা না বললে
বাড়বে কীভাবে মান।

কবি সৈয়দ আহম্মদ আশেকী এর কবিতা




পালাব কোথায়
সৈয়দ আহম্মদ আশেকী


তোমাদের ছেড়ে আমি পালাব কোথায় ?
এ মমতাময়ী প্রেম-ভালোবাসা মাখা
মিশে আছে আমার প্রাণ।
আমার শত জনমের পূর্ব পুরুষেরা
এইখানে ঘুমায়ে আছে,
আমার বাবা ,আমার দাদা
তাঁর বাবার বাবা,দাদার দাদা
তাঁদের স্পর্শ পাই সর্বত্র।
মমতাময়ী মাটির পরতে পরতে
বৃক্ষের কান্ডে,ডালে,পাতায় মুকুলে, ফুলে
বাতাসের গন্ধে,সুস্নিগ্ধ নদী-ঝিলের জলে
পাখির কলতান,আলো,বৃক্ষ ছায়
তাঁদের ছেড়ে আমি পালাব কোথায়?

এইখানে মাটির ঘ্রাণে মিশে গেছেন নবাব সিরাজ
জন্মভূমি ছিলো যার বক্ষের পাঁজর,
দরাজ মুক্তি কন্ঠের ঢেউ শেখ মুজিবুর রহমান,
বহমানকালে শেরে বাংলা ফজলুল হক,
দেশ প্রেমের উপমা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী,
শুদ্ধ মানব মাওলানা ভাসানী,
উদ্যমী প্রাণ পুরুষ জেনারেল উসমানী
স্বপ্ন সিঁড়ি-চুড়ায় স্বপ্ন ছিল;
মেঘের ফাঁকে ফাঁকে ধবল চাঁদ
উঠে হেসেছিল মায়ায় মায়ায়
তাঁদের ছেড়ে আমি পালাব কোথায় ?

টলমল নদীজল, সুনির্মল বায়ু
দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ,সবুজের হাসি।
এইখানে আমার ঘর,গ্রাম,নগর,বন্দর
আমার স্বজন,প্রিয়জন,স্বপ্ন-কোলাহল। 
রাধারমণ,বাউল করিম,হাছন,লালন
ধানের শিষে কৃষকের আনন্দকেতন
ঢেউ খেলে আঁকাবাঁকা হাওয়ায়
এত সুখ রেখে আমি পালাব কোথায় ?

এ মাটি আমার বেঁচে থাকা
যে ঘ্রাণে বুকে সজিব-শক্তি সাহস
দুর্বার চিত্ত ,উম্মত্ত ইচ্ছা পৌরুষ।
জন্ম জন্মান্তরে বাঙালিপনা।
এ মাটি আমার মা;
পূর্বপুরুষদের মত আমিও
মাটির কোলে মিশে যাব
তবু নিঃশেষ হবো না কোনদিন।
এ বায়ু চরে শ্যমল আঁচল ধরে 
নির্মল ঘ্রাণ নেবো,সুবাস নেবো।
তোমাদের ছেড়ে, প্রেমের কোল ছিঁড়ে 
কভু কি ভাল থাকা যায়?
তোমার ছেড়ে আমি পালাব কোথায় ?

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৪ পর্ব






ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১৪ তম পর্ব 

মনি জামান


জিকুর মৃত্যুর পরে আসমা খুব ভেঙ্গে পড়েলো ঠিক মত ঘুমায় না ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না,ছেলেটাকে ও কাছে পেতনা সব সময় শাশুড়ি মোমেনা বেগম নয়নকে কাছে রেখে দিতো,আসমা নয়নকে কাছে ডাকলে মোমেনা বেগম আসমার কাছে আসতে দিতোনা ছেলেকে।ছেলে নয়ন ও দাদী মোমেনা বেগমের কাছে থাকতে থাকতে মা ছাড়া দাদীর কোলে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো,মা আর ছেলের দুরত্বটা বাড়ানোর জন্য মোমেনা বেগম মনে মনে সেই প্রথম দিন থেকে সুদুর প্রসারি এই কৌশল অবলম্বন করে সে সফল,যাতে মা আর ছেলের দুরাত্ব বেড়ে যায় কারণ মোমেনা বেগম মনে মনে চায় ছোট লোকের বাচ্চা আসমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে।
আজ হোক কাল হোক মোমেনা বেগম সেই সুদর প্রসারি যড়যন্ত্রের ফসল মা ছেলের এই দুরত্ব সৃষ্টি।জিকুর মৃত্যু আজ দেড় বছর হয়ে গেলো এই দেড় বছরে আসমার জীবনে নেমে এল চরম নির্যাতনের এক ভয়ংকর অধ্যায়,জিকুর মৃত্যুর পর মোমেনা বেগম আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো আসমা উপর এখন এই ছোটলোকের মেয়ে আসমা তার বাড়ির বোঝা হয়ে গেছে, তাই নিষ্ঠুর সব কৌশল একের পর এক প্রয়োগ করতে শুরু করছে।
আসমার কোন কাজে ত্রুটি না পেলে ও অহেতুক আসমাকে গালাগালি মার ধোর শুরু করলো,প্রতিবেশিরা কেউ কোন কথা বলতো না মোমেনা বেগমের ভয়ে।
সাংবাদিক ফিরোজ মাঝে মাঝে আসতো মোমেনা বেগমের বাড়ি আসমাকে দেখতে, কিন্তু মোমেনা বেগম ফিরোজের আশা একদম পছন্দ করতো না কারণ ফিরোজকে ভয় পেতো যদি ফিরোজ কিছু জেনে যায়,তাই কৌশল অবলম্বন করে একদিন মোমেনা বেগম ফিরোজকে ডেকে বলল,ফিরোজ আসমা এখন বিধবা তুমি এই যে আসা যাওয়া কর আমাদের বাড়ি পাড়ার লোকেরা কিন্তু কানাঘুষা করে। 
তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো আর কি বলবো,মোমেনা বেগমের কথা শুনে ফিরোজ যা বুঝার বুঝে নিয়েছে,তারপর থেকে ফিরোজ জিকুদের বাড়ি আর কখনো যায়নি দুর থেকে দেখতো,আসমার কষ্ট আর নির্যাতন গুলো সাংবাদিক হিসেবে সকল খবর প্রতিবেশীদের কাছে নিয়ে নিতো,সব যখন শুনতো ফিরোজ নিজেই যেন কষ্ট অনুভব করতো।
ফিরোজ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আসমাকে বাঁচানোর একটাই পথ আসমাকে বিয়ে করা কারণ ফিরোজ আসমাকে পছন্দ করে,তাই একদিন আসমাকে ডেকে ফিরোজ নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিলো,প্রস্তাব শুনে আসমা ফিরোজকে বলল,এটা সম্ভব নয় ভাই। আমার মৃত্যু বেতীত জিকুকে এই মাটিতে শুয়ে রেখে আমি বিয়ে তো দুরের কথা আমি কোথাও যাব না মৃত্যু হলে এখানেই হবে কারণ জিকু আমার হৃদয়ে ভালবাসার রাজকুমার,আমার হৃদয়ে অন্য কাউকে আমি কখনো স্থান দিতে পারবনা ভাই।
ফিরোজ অবাক হয়ে শুনলো সেদিন আসমার কথা গুলো,ফিরোজ ভাবছে এই সমাজে কজন নারী ভালোবাসাকে এমন শ্রদ্ধার সাথে হৃদয়ে ধারণ করে এমন ভালোবাসা আঁকড়ে রাখে,আসমার কথা গুলো শুনার পরে আসমার প্রতি ফিরোজের আরো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়ে গেলো।
ফিরোজ ভাবলো আসমা কি সত্যিই মানুষ না কোন স্বর্গের দেবী যে এত নির্যাতন ভোগ করার পরেও স্বামী জিকুর ভালবাসা আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে স্বামীর ভিটে!ফিরোজ সেদিন বলল,ভাবি স্যালুট আপনাকে যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে শুধু একবার সংবাদ দেবেন আমি আপনার পাশেই আছি।আসমা মাথা নাড়িয়ে সেদিন সাই দিয়ে বলল,প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলব ভাই।
ফিরোজ চলে গেলো কিন্তু ফিরোজ একবারও বুঝতে পারলো না আসমা আজ দুইদিন কিছুই খায়নি তাকে খেতে দেয়নি নিষ্ঠুর শাশুড়ি মোমেনা বেগম।এদিকে মোমেনা বেগম একের পর এক কৌশল অবলম্বন করে ও যখন আসমাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে পারলো না,তখন একটা ভয়ঙ্কর যড়যন্ত্র মনে মনে ঠিক করে মোমেনা বেগম তার ভাইয়ের ছেলে বকাটে নিশাখোর যবুক আরমানকে ফোন করলো তারপর বললো,আরমান বাবা তুমি আমার বাড়ি একবার এসো কালকে জরুরী দরকার তোমার কাছে,আরমান বলল,কি এমন দরকার আমার কাছে,ফুফু বলেন কি হয়েছে।মোমেনা বেগম আরমানকে বলল, একটা কাজ করতে পারবি বাপ,আরমান বলল কি কাজ ফুফু?মোমেনা বেগম বললো,আমার বাড়ি আয় তারপর বলবো। আরমান পরের দিন ফুফু মোমেনা বেগমের বাড়ি এসে হাজির হলো,আরমানকে ফুফু মোমেনা বেগম বলল,বাবা তুমি ঐ ছোট লোকের বাচ্চা আসমার ঘরে রাত্রি ঢুকে  আসমার সাথে ধস্তাধস্তি করবে আমি ঠিক সেই সময় লোকজন নিয়ে ধরে ঐ ছোট লোকের বাচ্চাটাকে বাড়ি থেকে বের করে দেব।পারবিনা বাপ?তোকে অনেক অনেক টাকা দেব,আরমান বলল,পারবনা মানে কখন করতে হবে কাজটা?মোমেনা বেগম বলল,কাল রাতে।
পরের দিন রাত নামলো আসমা ঘরে থাকা কিছু মুড়ি খেলো,তাও মোমেনার বাড়ির বৃদ্ধ কর্মচারী মোবারাক চুরি করে কিনে দিয়ে গেছে আসমার কষ্ট না দেখতে পেরে।পরের দিন রাতে আসমা শুয়ে আছে তার ঘরে,দরজা এখনো দেইনি ভাবছে পরে দরজা দিয়ে ঘুমাবে।হঠাৎ আসমা দেখলো আরমান ঘরে ঢুকেই আসমাকে জড়িয়ে ধরলো,আসমা ধস্তাধস্তি করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কিন্তু দুর্বল শরীর আসমার,না খেয়ে খেয়ে এতটাই দুর্বল যে আরমানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।
আরমান আসমাকে এত জোরে ধরেছে যে আসমার আর কিছুই করার নেই,আরমান একে পর এক আসমার শরীর থেকে শাড়ি ব্লাউজ সব খুলে ফেলেছে তারপর
আসমাকে ধর্ষণ করে ঘরে অপেক্ষা করছে আরমান মোমেনা বেগমের জন্য।
একটু পর মোমেনা বেগম পাড়ার লোক জন নিয়ে হাজির হয়ে ঘরে ঢুকে আসমাকে ধরে বাইরে নিয়ে এলো,আরমান মোমেনা বেগমের কথা মত পালিয়ে গেলো। মোমেনা বেগম লোকজনকে বলল,এই মেয়ে চরিত্রহীন আমার কথা তো কেউ এতদিন বিশ্বাস করনি আজ সবাই প্রমাণ পেলে তো?
কাল সকালে এই চরিত্রহীন ছোট লোকের বাচ্চার বিচার করে বাড়ি ছাড়া করা হবে আপনরা কি বলেন,সবাই বলল হ্যাঁ সকালে বিচার করতে হবে।আজ সবাই একসুরে কথা বলছে,আসমা নির্বাক,আসমার আজ কেন জানি মনে হলো পাষান পৃথিবীর জীর্ণ কুঠিরে আজ সংরক্ষিত তার ভালোবাসা বিসর্জন হলো,চূর্ণ হলো তার সব অহঙ্কার।জিকুকে হারানোর পর থেকে কত রাত কেটে গেছে একা,নির্ঘুম অশ্রু সজল দুটি চোখ,কষ্টের আলিঙ্গনে ছিলো এই ক্ষণিক জীবনে না পাওয়ার সব কষ্ট গুলো,আজ কারো প্রতি আসমার কোন অভিযোগ নেই,নেই পৃথিবীর প্রতি কোন অভিমান
আজ যা আছে সেটা তার ভাগ্যের প্রতি ঘৃণা,নিজেকে বড় একা লাগছে কেউ নেই তার আজ।



চলবে....

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬৪




ধারাবাহিক উপন্যাস


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬৪)
শামীমা আহমেদ 

শায়লার ফোন ব্যস্ত পেয়ে শিহাবের ভেতরে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।।যেন সাজানো বাগানে আচমকা  কালবৈশাখীর তান্ডব। শিহাব বুঝতে পারছে না সে এখন কি করবে? শায়লার নাম্বারে কি কল দেবে বা দেয়া উচিত  হবে? কিন্তু এমনতো হতে পারে শায়লা তার অনিচ্ছাতেই কানাডায় কথা বলছে।পরক্ষণেই শিহাব ভাবলো, না,শায়লাতো কথা বলতেই পারে। শিহাবের মন  কেমন যেন  দোদুল্যমান হয়ে যাচ্ছে।তবে কি শায়লা অন্য কিছু ভাবছে? তবে যে আজ সারাদিন আমাদের সাথে সময় কাটালো? যদিও রেস্টুরেন্টে তাকে বেশ চিন্তিত লাগছিলো।তবে কি নোমান সাহেব শায়লার সাথে যোগাযোগে আছে? কই শায়লাতো কিছু বললো না?আর এতদিন নীরব  থেকে এখন সে কেন শায়লার খোঁজ করছে।কিন্তু শায়লাতো বলেছে সে আমাকেই ভালবাসে। শায়লাতো বারবার এটাই বুঝিয়েছে।আরাফকে আপন করে নিয়েছে। আরাফও শায়লাকে খুব পছন্দ করেছে।তাহলে কেন এতটা কাছে আসা? তার জন্য এতটা আকুল হওয়া? আবার কি তবে তার জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটতে যাচ্ছে? শিহাবের 
বিছানায় আর ভালো লাগছে না। মোবাইল নামিয়ে রেখে সে উঠে বসলো।  এক চাপা উত্তেজনায় ঘরময় হেঁটে চললো।এমন টেনশনের সময় সিগারেট  দরকার টেনশন কমাতে।কিন্তু সন্ধ্যা থেকে শায়লার ভাবনায় ডুবে থেকে একে একে সব স্টিক শেষ হয়েছে।এখন কি করা ? এত রাতেতো সিগারেটের দোকান খোলা নেই। শিহাবের ভেতর কিছু একটা হারিয়ে যাওয়ার আশংকা!
নোমান সাহেব আজ কিছুতেই ফোন কল ছাড়ছেন না।মনে হচ্ছে গত দেড়বছরের কথা সে আজ বলবে। অবিরত বলেই চলেছে,
সুইট হার্ট শাআলা।আই এম ভেরি সরি ফর মাই ডিলে।ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।ইন ফ্যাক্ট,আই ওয়াজ ওয়েটিং ফর ইউর রেস্পন্স!
শায়লা বুঝে নিলো,আসলে উনি ভেবেছিলেন আমি বিদেশ যাওয়ার জন্য নিশ্চয়ই অধীর আগ্রহে করে আছি।উনি ভেবেছেন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের মত বিদেশের পাত্রের জন্য আমি লোভী হয়ে আছি। সে শায়লাকে  খুবই সস্তা ভেবেছে।বারবার তার মুখে শায়লাকে  শাআলা ডাকটি অসহ্য লাগছে।
শাআলা,আই এম কামিংজাস্ট আফটার টেন ডেজ।প্লিজ, ফরগিভ মি,নাউ আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড, ইটস মাই ফল্ট,
এ প্রান্তে শায়লা একেবারে নীরব পাথর হয়ে আছে।শিহাবকে কি উত্তর দিবে সে? কি করবে এখন?
শাআলা,মাই চিল্ড্রেন লাইক ইউ ভেরি মাচ! ইউ আর দেয়ার মম। দে আর আলঅয়েজ আস্কিং এবাউট ইউ।প্লিজ,জাস্ট থিংক অফ দেম।
শাআলা,প্লিজ টক টু মি, প্লিজ রিপ্লাই মি,,প্লিজ ইউ গেট রেডি।ইউ প্যাক আপ ইউর এভরিথিং। আই উইল টেক ইউ উইথ মি হিয়ার ইন কানাডা।
প্লিজ, মাই লাভ,ডোন্ট বি স্যাড! 
শাআলা,প্লিজ, টক টু মি।প্লিজ রিপ্লাই মি,,
শায়লা এপাশে একেবারেই নিরুত্তর হয়ে রইল। অচেনা একটি কন্ঠে শায়লার নাম উচ্চারিত হচ্ছে শায়লার ভেতরে হু হু করে উঠছে। কিছুতেই তা ভাললাগছে না। সন্ধ্যার ফোনকলের শিহাবের কন্ঠের প্রলেপ এখনো তার কানে লেগে আছে।
নোমান সাহেব কোন সাড়া না পেয়ে অগত্যা বললেন,
ওকে,ডিয়ার,আই এম বিজি নাউ।টক টু ইউ লেটার।প্লিজ,গেট ইওর মাইন্ড রেডি টু কাম টু কানাডা।আই এম ইন এ হারি নাউ,,,
সো,বাই ফর দিস মোমেন্ট! লাভ ইউ শাআলা।
শাআলা,ডু ইউ লাভ মি? বাই হানি!
নোমান সাহেবের এই বিরতিহীন কথা শায়লার ভেতরে এঁফোড় ওফোঁড় হয়ে বেরিয়ে গেলো! বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণায় রক্তক্ষরণ হতে লাগলো।তার রক্তের ভেতর একটাই স্পন্দনের পুনরাবৃত্তি ,শিহাব, শিহাব, শিহাব!শায়লা একেবারে নীরব নিথর হয়ে ঘরের দেয়ালে দৃষ্টি নিয়ে মন ভাবনায় ডুবে রইল। অপলক দৃষ্টিতে  শুধু শিহাবের মুখটিই ভেসে উঠছে!
শিহাব বুঝতে পারছে না কি করবে? আইনি জটিলতা পার করে শায়লাকে তার কাছে আনা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এখুনি শায়লার সাথে কথা বলতে হবে তার।শিহাব এগিয়ে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো।শায়লাকে ছোট্ট করে একটা মেসেজ লিখলো।
শায়লা ঘুমিয়েছ? 
মেসেজের শব্দে শায়লা ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।শিহাবের নাম দেখে দ্রুতই মেসেজটি দেখে নিলো। সাথে সাথে রিপ্লাই দিলো,না জেগে আছি। রিপ্লাইটি পৌঁছাতে এক দন্ড সময়ের মধ্যেই শিহাবের কল চলে এলো, শায়লা রিসিভ করে হ্যালো  বলতেই, জানার প্রবল আগ্রহ আর উত্তর শোনার উৎকন্ঠায়  জানতে চাইল, শায়লা তোমার ফোন বিজি পাচ্ছিলাম কেন? 
শায়লা একটু সময়ও নষ্ট না করে উত্তর দিলো,কানাডা থেকে কল এসেছিল।
কি বললেন উনি?
বললেন, উনি দশদিন পর বাংলাদেশে আসছেন আমাকে নিয়ে ফিরবেন।
শিহাব কথাটি শুনে শিহাবের শরীরের ভেতর দিয়ে মনে হলো একটি শীতল অনুভুতি বয়ে গেলো।যা  শায়লাকে নিয়ে তার মনের ভেতর জ্বলে উঠা শত আশা আকাঙ্ক্ষার বাতিটি যেন ধপ করে নিভিয়ে দিলো।
শিহাব হালকা করে বললো,তুমি কি বললে? 
শায়লা নীরব হয়ে রইল।
শায়লার নিরুত্তরে শিহাব যেন ভেঙে পড়লো।
শায়লা,কিছু বলো।তুমি কি বললে? তুমি কি তার সাথে চলে যাবে? শায়লা কথা বলো।উত্তর দাও। শিহাবের আবেগী কন্ঠে শায়লার চোখ দিয়ে কান্নার ধারা নেমে আসছে। শায়লা কোন কথাই বলতে পারছে না।সে শিহাবকে এই বলেও আশ্বস্ত করতে পারছে না, শিহাব তুমি ভয় পেও না। কিছুক্ষন পর শিহাবের উৎকন্ঠাকে দমাতে শায়লা বলে উঠলো,,শিহাব  নোমান সাহেবের কথার আমি কোন উত্তর দেইনি।কারণ,আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। আমি তোমার কাছেই থাকতে চাই।তুমি আমাকে বেঁধে রাখতে পারবে না শিহাব? আমি তোমার সাথেই জীবন কাটাতে চাই।
শায়লার কথাগুলো শিহাবের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনলো। শায়লা তাকে ছেড়ে যাবে না, শায়লা তার হয়েই থাকবে! শিহাব মনকে আনন্দের খবরটি জানিয়ে দিয়ে, একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। শায়লাকে কাছে নেয়ার আবেগে শিহাব বেশ আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,শায়লা তুমি আমার খুব কাছে আসো। আমার বুকের মাঝে তোমার আবাস গড়ে নাও।আমি সকাল বিকাল রাত সারাটাক্ষন  শুধু তোমাকেই দেখতে চাই।
শায়লা তুমি আমাকে কাছে টেনে নিবে না?
এবার শায়লা অনেকটা স্বাভাবিকে ফিরে এলো।সন্ধ্যা থেকে ঘটে যাওয়া সবকিছুকে তুচ্ছ করে শায়লা শিহাবের মাঝে ডুবে গেলো।খুবই মোলায়েম কন্ঠে, মাদকতায় পূর্ণ কন্ঠে  শায়লা বললো,হু, এসো আমার খুব কাছে।
ফোনের দু'প্রান্তে দুজন যেন দুজনের পরশ অনুভব করছে। দুজন দুজনার নিঃশ্বাসের দুরত্বে খুব কাছাকাছি অনুভবে একেবারে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে যেনো! 
কিছুক্ষন পর শিহাব বলে উঠলো, শায়লা তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমারও মন চাইছে তোমাকে দেখার,তোমার একটা ছবি পাঠাবে? 
এ কথা বলতেই, শিহাব ভিডিও কলে চলে এলো। দুজন দুজনকে দেখে যেন শান্তি পেলো।
কি আজ ঘুমাতে হবে না? শায়লার প্রশ্নে শিহাব বলে উঠলো, কেন এক রাত কি আমার জন্য না ঘুমিয়ে কাটানো যায় না?
বেশ যায়,
তবে থাকো জেগে।জানো শায়লা তোমার ফোন বিজি পেয়ে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
কেন আমার হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে? 
হ্যাঁ, তোমাকে যদি হারিয়ে ফেলি এই জীবনে আর আমি কাউকে  বিশ্বাস করবো না জেনে রাখো।
না, আমি হারাবো না।আর তোমাকেও একা থাকতে হবে না।
কিন্তু কিভাবে শায়লা? কিভাবে তা সম্ভব করবে? 
ভালোবাসায় সব সম্ভব শিহাব।ভালোবাসায় সব জয় করে নেয়া যায়।শুধু অধিকারে সব পাওয়া যায় না।
শায়লা, তুমি আমাকে অভয় দিচ্ছো।
হ্যাঁ, শিহাব মনে রেখো, তুমি না, আমিই তোমাকে আগে ভালবেসেছি।তাই তোমাকে পাওয়ার আকুলতা আমার বেশি।আর তুমি আমার ভালোবাসায় সাড়া দিয়েছো তাই তোমাকে পূর্ণ করা আমার ভালোবাসার শপথ।
শায়লার কথায় শিহাব আজ যেন অন্য শায়লাকে দেখছে।কথায় আর দৃষ্টিতে বেশ দৃঢ়তা। শিহাব নিজেকে একজন সুখী মানুষ ভাবছে যেখানে শায়লা  তাকে এমনিভাবে ভালোবেসেছে।এই ভেবে শায়লাকে হারানোর ভয় থেকে একটু যেন সাহস ফিরে এলো।
বেশ অনেক রাত হয়েছে।শায়লা মন থেকে নোমান সাহেবের কথাগুলো মুছে ফেওলতে চাইছে। হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন মনের ভেতর সাহস জমা হলো।নিজেকে বেশ হালকা মনে করেছে।
শিহাবকে জানালো,এখন তার বেশ ঘুম পাচ্ছে।সে ঘুমাতে চায়।শিহাবও যেন নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।শায়লা শিহাবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিলো।
কল শেষ করলেও আজ শিহাবের চোখে যেন ঘুম নেই। সন্ধ্যা থেকে শায়লার ভাবনায় ডুবে থেকে হঠাৎই হারানোর ভয়ে শিহাবের চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে গেছে।তার শায়লাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।শিহাব ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় রইল।

খুব সকালে শিহাবের ফোন কলে শায়লার ঘুম ভাঙলো।ঘুম জড়ানো চোখে শায়লা হ্যালো বলতেই, শিহাবের কন্ঠ ভেসে এলো,
শায়লা তোমার  বারান্দায় এসে একটু দাঁড়াবে?  তোমাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।



চলবে.....

কবি রফিকুল ইসলাম এর কবিতা





আশাদীর্ণ অনুতাপে
রফিকুল ইসলাম

নন্দন ভুবনলোকে  আনমনে জাগে 
কত স্বপ্ন  এলোমেলো 
তৃষ্ণিত পলাতকা মন পরম আত্মীয় প্রিয়জন
কত বন্ধু এল-গেলো।। 
অনুভূতির সীমানায় কত কল্পনা
কত প্রত্যাশার পায়চারী 
কখনো অভিমানে পিয়াসী মনে আড়ি ।
স্বপ্ন বিন্যাসে নিশিদিন নীলকণ্ঠ ফোটে
ধূলা মাটির মায়া মালিকায়
বেগুনি প্রজাপতি নাচে বাতাসে গায়।
ভালোবাসার অরণ্যে মুখ লুকায় 
আবেগী বাসর সাজায় পাতার আড়ালে।
 শত চুম্বনে অনুরাগে মায়ায় জড়ালে ।
ঘুম ভাঙা ভোরে ঝরে পড়ে সুখের শিশির 
রোদেলা ক্লান্ত দুপুর 
অদূরে হাঁসের ছানা জলে ভাসে 
ব্যথার দেউলে বসে কত কথা মনে আসে।
বিকেলের  সোনা রোদে 
হলুদ ঝিঁঙে ফুল মাচায় দোলে
প্রণয়ী পায়রা বাকবাকুম মাতে টিনের চালে।
অলখ্যে হলুদ রঙে ঝরে পড়ে পাতার আয়ু 
আশাদীর্ণ অনুতাপে
বিমর্ষ-ম্লান জীবন সন্ধ্যা বিদায় আরতি জ্বালে 
আঁধারের  নির্জন পথে।