২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ১৪ পর্ব






ধারাবাহিক উপন্যাস


সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
১৪ তম পর্ব 

মনি জামান


জিকুর মৃত্যুর পরে আসমা খুব ভেঙ্গে পড়েলো ঠিক মত ঘুমায় না ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করে না,ছেলেটাকে ও কাছে পেতনা সব সময় শাশুড়ি মোমেনা বেগম নয়নকে কাছে রেখে দিতো,আসমা নয়নকে কাছে ডাকলে মোমেনা বেগম আসমার কাছে আসতে দিতোনা ছেলেকে।ছেলে নয়ন ও দাদী মোমেনা বেগমের কাছে থাকতে থাকতে মা ছাড়া দাদীর কোলে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো,মা আর ছেলের দুরত্বটা বাড়ানোর জন্য মোমেনা বেগম মনে মনে সেই প্রথম দিন থেকে সুদুর প্রসারি এই কৌশল অবলম্বন করে সে সফল,যাতে মা আর ছেলের দুরাত্ব বেড়ে যায় কারণ মোমেনা বেগম মনে মনে চায় ছোট লোকের বাচ্চা আসমাকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে।
আজ হোক কাল হোক মোমেনা বেগম সেই সুদর প্রসারি যড়যন্ত্রের ফসল মা ছেলের এই দুরত্ব সৃষ্টি।জিকুর মৃত্যু আজ দেড় বছর হয়ে গেলো এই দেড় বছরে আসমার জীবনে নেমে এল চরম নির্যাতনের এক ভয়ংকর অধ্যায়,জিকুর মৃত্যুর পর মোমেনা বেগম আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো আসমা উপর এখন এই ছোটলোকের মেয়ে আসমা তার বাড়ির বোঝা হয়ে গেছে, তাই নিষ্ঠুর সব কৌশল একের পর এক প্রয়োগ করতে শুরু করছে।
আসমার কোন কাজে ত্রুটি না পেলে ও অহেতুক আসমাকে গালাগালি মার ধোর শুরু করলো,প্রতিবেশিরা কেউ কোন কথা বলতো না মোমেনা বেগমের ভয়ে।
সাংবাদিক ফিরোজ মাঝে মাঝে আসতো মোমেনা বেগমের বাড়ি আসমাকে দেখতে, কিন্তু মোমেনা বেগম ফিরোজের আশা একদম পছন্দ করতো না কারণ ফিরোজকে ভয় পেতো যদি ফিরোজ কিছু জেনে যায়,তাই কৌশল অবলম্বন করে একদিন মোমেনা বেগম ফিরোজকে ডেকে বলল,ফিরোজ আসমা এখন বিধবা তুমি এই যে আসা যাওয়া কর আমাদের বাড়ি পাড়ার লোকেরা কিন্তু কানাঘুষা করে। 
তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো আর কি বলবো,মোমেনা বেগমের কথা শুনে ফিরোজ যা বুঝার বুঝে নিয়েছে,তারপর থেকে ফিরোজ জিকুদের বাড়ি আর কখনো যায়নি দুর থেকে দেখতো,আসমার কষ্ট আর নির্যাতন গুলো সাংবাদিক হিসেবে সকল খবর প্রতিবেশীদের কাছে নিয়ে নিতো,সব যখন শুনতো ফিরোজ নিজেই যেন কষ্ট অনুভব করতো।
ফিরোজ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আসমাকে বাঁচানোর একটাই পথ আসমাকে বিয়ে করা কারণ ফিরোজ আসমাকে পছন্দ করে,তাই একদিন আসমাকে ডেকে ফিরোজ নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিলো,প্রস্তাব শুনে আসমা ফিরোজকে বলল,এটা সম্ভব নয় ভাই। আমার মৃত্যু বেতীত জিকুকে এই মাটিতে শুয়ে রেখে আমি বিয়ে তো দুরের কথা আমি কোথাও যাব না মৃত্যু হলে এখানেই হবে কারণ জিকু আমার হৃদয়ে ভালবাসার রাজকুমার,আমার হৃদয়ে অন্য কাউকে আমি কখনো স্থান দিতে পারবনা ভাই।
ফিরোজ অবাক হয়ে শুনলো সেদিন আসমার কথা গুলো,ফিরোজ ভাবছে এই সমাজে কজন নারী ভালোবাসাকে এমন শ্রদ্ধার সাথে হৃদয়ে ধারণ করে এমন ভালোবাসা আঁকড়ে রাখে,আসমার কথা গুলো শুনার পরে আসমার প্রতি ফিরোজের আরো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেড়ে গেলো।
ফিরোজ ভাবলো আসমা কি সত্যিই মানুষ না কোন স্বর্গের দেবী যে এত নির্যাতন ভোগ করার পরেও স্বামী জিকুর ভালবাসা আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে স্বামীর ভিটে!ফিরোজ সেদিন বলল,ভাবি স্যালুট আপনাকে যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে শুধু একবার সংবাদ দেবেন আমি আপনার পাশেই আছি।আসমা মাথা নাড়িয়ে সেদিন সাই দিয়ে বলল,প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলব ভাই।
ফিরোজ চলে গেলো কিন্তু ফিরোজ একবারও বুঝতে পারলো না আসমা আজ দুইদিন কিছুই খায়নি তাকে খেতে দেয়নি নিষ্ঠুর শাশুড়ি মোমেনা বেগম।এদিকে মোমেনা বেগম একের পর এক কৌশল অবলম্বন করে ও যখন আসমাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে পারলো না,তখন একটা ভয়ঙ্কর যড়যন্ত্র মনে মনে ঠিক করে মোমেনা বেগম তার ভাইয়ের ছেলে বকাটে নিশাখোর যবুক আরমানকে ফোন করলো তারপর বললো,আরমান বাবা তুমি আমার বাড়ি একবার এসো কালকে জরুরী দরকার তোমার কাছে,আরমান বলল,কি এমন দরকার আমার কাছে,ফুফু বলেন কি হয়েছে।মোমেনা বেগম আরমানকে বলল, একটা কাজ করতে পারবি বাপ,আরমান বলল কি কাজ ফুফু?মোমেনা বেগম বললো,আমার বাড়ি আয় তারপর বলবো। আরমান পরের দিন ফুফু মোমেনা বেগমের বাড়ি এসে হাজির হলো,আরমানকে ফুফু মোমেনা বেগম বলল,বাবা তুমি ঐ ছোট লোকের বাচ্চা আসমার ঘরে রাত্রি ঢুকে  আসমার সাথে ধস্তাধস্তি করবে আমি ঠিক সেই সময় লোকজন নিয়ে ধরে ঐ ছোট লোকের বাচ্চাটাকে বাড়ি থেকে বের করে দেব।পারবিনা বাপ?তোকে অনেক অনেক টাকা দেব,আরমান বলল,পারবনা মানে কখন করতে হবে কাজটা?মোমেনা বেগম বলল,কাল রাতে।
পরের দিন রাত নামলো আসমা ঘরে থাকা কিছু মুড়ি খেলো,তাও মোমেনার বাড়ির বৃদ্ধ কর্মচারী মোবারাক চুরি করে কিনে দিয়ে গেছে আসমার কষ্ট না দেখতে পেরে।পরের দিন রাতে আসমা শুয়ে আছে তার ঘরে,দরজা এখনো দেইনি ভাবছে পরে দরজা দিয়ে ঘুমাবে।হঠাৎ আসমা দেখলো আরমান ঘরে ঢুকেই আসমাকে জড়িয়ে ধরলো,আসমা ধস্তাধস্তি করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কিন্তু দুর্বল শরীর আসমার,না খেয়ে খেয়ে এতটাই দুর্বল যে আরমানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।
আরমান আসমাকে এত জোরে ধরেছে যে আসমার আর কিছুই করার নেই,আরমান একে পর এক আসমার শরীর থেকে শাড়ি ব্লাউজ সব খুলে ফেলেছে তারপর
আসমাকে ধর্ষণ করে ঘরে অপেক্ষা করছে আরমান মোমেনা বেগমের জন্য।
একটু পর মোমেনা বেগম পাড়ার লোক জন নিয়ে হাজির হয়ে ঘরে ঢুকে আসমাকে ধরে বাইরে নিয়ে এলো,আরমান মোমেনা বেগমের কথা মত পালিয়ে গেলো। মোমেনা বেগম লোকজনকে বলল,এই মেয়ে চরিত্রহীন আমার কথা তো কেউ এতদিন বিশ্বাস করনি আজ সবাই প্রমাণ পেলে তো?
কাল সকালে এই চরিত্রহীন ছোট লোকের বাচ্চার বিচার করে বাড়ি ছাড়া করা হবে আপনরা কি বলেন,সবাই বলল হ্যাঁ সকালে বিচার করতে হবে।আজ সবাই একসুরে কথা বলছে,আসমা নির্বাক,আসমার আজ কেন জানি মনে হলো পাষান পৃথিবীর জীর্ণ কুঠিরে আজ সংরক্ষিত তার ভালোবাসা বিসর্জন হলো,চূর্ণ হলো তার সব অহঙ্কার।জিকুকে হারানোর পর থেকে কত রাত কেটে গেছে একা,নির্ঘুম অশ্রু সজল দুটি চোখ,কষ্টের আলিঙ্গনে ছিলো এই ক্ষণিক জীবনে না পাওয়ার সব কষ্ট গুলো,আজ কারো প্রতি আসমার কোন অভিযোগ নেই,নেই পৃথিবীর প্রতি কোন অভিমান
আজ যা আছে সেটা তার ভাগ্যের প্রতি ঘৃণা,নিজেকে বড় একা লাগছে কেউ নেই তার আজ।



চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much