০৩ এপ্রিল ২০২২

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৮৩




ধারাবাহিক উপন্যাস 


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৮৩)
শামীমা আহমেদ 

কিছুক্ষণ যাবৎ একটানা কলিং বেল বেজেই চলেছে।শায়লা মায়ের ঘরে মায়ের পাশে চুপচাপ বসে আছে। কলিং বেল শুনছে কিন্তু দরজা ভেতর থেকে লক করা রয়েছে। তাই সে এ ব্যাপারে কোন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। সে  একমনে শিহাবকেই ভেবে চলেছে। গতকাল সারাদিন শিহাবের সাথে কাটানো সময়গুলো ভীষণভাবে মনে পড়ছে। শিহাবের প্রতিটি কথা  প্রতিটি আশ্বাস শায়লাকে বেঁচে থাকবার প্রেরণা যোগায়।  তার খুব করে মনে পড়ছে পরিচয়ের পর থেকে কিভাবে একটু একটু করে দুজনার ভাললাগা আর তা প্রকাশের ছোট্ট ছোট্ট ক্ষণগুলো। এখন তো অন্য এক শিহাব তার সামনে দাঁড়িয়ে। যে কিনা তার জীবনের  পিছনের সব কিছু ঝেড়ে ফেলে শুধু শায়লাকেই  আপন করে নিয়েছে। শায়লাও তার মনের চাওয়ার বিরুদ্ধে কিছুই করবে না। 
কিন্তু আজ দুপুরের ফ্লাইটে নোমান সাহেব দেশে আসবেন। তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় আনার সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গতকাল বাসায় শায়লার দীর্ঘক্ষণ অনুপস্থিতি আর মায়ের অসুস্থতায় আয়োজনে কিছুটা ভাটা পড়লেও বুঝা যাচ্ছে আজ তারা সবাই আবার পূর্ণ উদ্যমে নামবে। সবই শায়লার মনে বিরুদ্ধে। অবশ্য কেউই আর তার ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য নিয়ে চিন্তিত নয়। দুপুরের মধ্যেই বাসায় আত্মীয় স্বজনেরা চলে আসবে। 
কলিং বেল শুনে রাহাত ঘুম থেকে জাগলো।সে দরজা খুললো। বুয়া ঘরে ঢুকলো।রাহাত তাকে মায়ের জন্য দ্রুত নাস্তা বানাতে বললো। শায়লা মায়ের ঘর থেকে সবই শুনলো। বুঝা গেলো, রাহাত সংসারের দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই নিয়েছে। আজ আর কিছুতে শায়লার পরামর্শ বা মতামতের প্রয়োজন মনে করছে না। কেনই বা করবে ? আর ক'দিন পর তো শায়লা আর এ বাড়িতে থাকছে না। তখনতো রাহাতকেই সবকিছু  সামলাতে হবে। 
মায়ের ঘুম ভাঙলো।শায়লা মাকে খুব যত্ন করে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। যাবতীয় কাজে সহযোগিতা করে মায়ের শাড়িটা বদলে দিলো। মা একেবারেই নীরব হয়ে আছেন। তবে চোখে মুখে তার স্বস্তির প্রকাশ। শায়লা বাসায় ফিরে এসেছে। শায়লা তার প্রথম সন্তান।প্রথম সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের  অন্যরকম ভালবাসা জমানো থাকে আর সাথে থাকে নির্ভরতা। আর শায়লাতো মায়ের পুরোটাই খেয়াল রাখে।
নাস্তা তৈরি হলে শায়লা মাকে ডাইনিং এ নিয়ে এলো। রাহাত তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মায়ের শরীরের খোঁজ খবর নিলো।
ভাই বোন মা এক টেবিলে নাস্তা পর্ব চললেও ভাই বোনের আর সেই আগের মত কথা বলে গল্প করে নাস্তা করার চিত্রটি আজ ভীষণভাবে অনুপস্থিত। খুব নীরবেই নাস্তা করা হলো।বুয়া তিন কাপ চা করে আনলো।এবার রাহাত শায়লার দিকে বেশ রিল্যাক্স ভঙ্গিতে কথা বলে উঠলো। গতকালের কোন ঘটনাকেই রাহাত আর আলোচনায় আনলো না। আজ সকাল থেকে আবার সবকিছু যেন সুন্দর করে এগিয়ে চলে।তাছাড়া আজ নোমান সাহেব আসবেন।যে করেই হউক আপুকে শান্ত রাখতে হবে।
আপু, আমরা সবাই দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে নোমান ভাইয়াকে  এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে যাবো। তুমি তৈরি থেকো। তুমি যেন অবশ্যই এয়ারপোর্টে যাও নোমান ভাইয়া বারবার বলেছে।
রাহাতের কথায় শায়লা বেশ অবাকই হলো! আজকাল নোমান সাহেবের সাথে  তাকে নিয়ে রাহাতের এত কথা হয়! যদিও নোমান সাহেব তাকেও লাল শাড়ি পরে এয়ারপোর্টে যেতে বলেছে। শায়লার এইসব কিছুতে ভীষণ বিরক্তি লাগছে। মন থেকে সে কোন রকম আগ্রহবোধ করছে না।রাহাত শায়লার কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে ডাইনিং থেকে নিজের ঘরের ভেতরে গেলো। মুহুর্মুহু আত্মীয়স্বজনের কল আসছে।কে কখন আসবে তা জানাচ্ছে।ছোট কাজিন ভাইবোনেরা আজ সন্ধ্যায় ছাদে গায়ে হলুদের আয়োজন করেছে। শায়লা এবং নোমান সাহেবের একসাথে হলুদ ছোঁয়াবে। 
শায়লার ঘরটিকে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজানো হবে। বাসায় ঝামেলা এড়াতে প্রচুর খাবারের অর্ডার করা হয়েছে।  বিয়ে বাড়ি রীতিমতো  সরগরম হয়ে উঠছে।গতকাল শায়লার পার্লারে যাওয়ার কথা থাকলেও সে শিহাবের সাথেই পুরো সময়টা কাটিয়েছে।তাই রাহাত আজ পার্লারে যাওয়ার অন্য ব্যবস্থা করেছে। 
শায়লার বড় মামার মেয়ে বুবলী ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া। ধরতে গেলে সিরিয়ালে শায়লার পর তার বিয়ের আয়োজন হওয়ার কথা। পাত্র পক্ষ আংটি দিয়ে রেখে গেছে।মাস্টার্স ফাইনাল হলেই বিয়ে।এছাড়া সিরিয়ালে আরো কয়েকজন কাজিন বিয়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠছে।সে ক্ষেত্রে শায়লার বিয়ের পর্ব,শায়লাকে জামাই বাড়িতে নিজের সংসারে পাঠানো খুবই জরুরী হয়ে গেছে। মুরুব্বিরা যার যার মেয়ে নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু শায়লা কিভাবে বুঝাবে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই আয়োজন তার কাছে অর্থহীন। তার সম্পূর্ণ মন প্রাণ জুড়ে আছে শিহাবের স্পর্শ, শিহাবের ভালোবাসা।
শায়লার ফোনে বুবলীর কল। ইচ্ছে না করলেও কলটা ধরতে হবে। ওদেরতো আর শায়লার এতকিছু জানা নেই।শায়লা কল রিসিভ করতেই বুবলী উচ্ছাসে ফেটে পড়লো!
আপু, তুমি অপেক্ষা করো।এইতো কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি চলে আসছি। তোমাকে নিয়ে পার্লারে যাবো। তোমাকে একটু ফ্রেশ হতে হবে।  বাসার কাছে কোন পার্লার আছে আমাকে জানিও। শায়লা আচ্ছা বলে কল রেখে দিলো। সে বুঝতে পারলো কেন বুবলী এত উচ্ছ্বসিত! কারণ শায়লার পরপরই তার আয়োজন এগিয়ে আসছে। চট করে শায়লার মনে একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। তাহলে পার্লারের কথা বলে এয়ারপোর্টে যাওয়াটা এড়িয়ে যাওয়া যাবে।
শায়লা তার মোবাইল নিয়ে বারান্দায় চলে এলো।শিহাবকে মেসেজে জানালো, সেক্টর ছয় এ আগোরার উপরে আটতলায় পারসোনা পার্লারে  এক ঘন্টার মধ্যেই  সে যাচ্ছে। শিহাব যেন তার জন্য সেখানে অপেক্ষা করে। শিহাব মেসেজ দেখে নিলো।মনে মনে জায়গাটা ভেবে নিলো। সে দ্রুতই নাস্তা সেরে গতকালের কাপড় পালটে শায়লার কলের অপেক্ষাতেই ছিল। শায়লার সাড়া পেয়ে তার মন আনন্দে নেচে উঠলো! মনে মনে ভেবে নিলো, 
এবার আর সে শায়লাকে হারাতে চায়না। দেখামাত্রই বাইকে তুলে নিবে। যদি উত্তরাতে থাকতে ওরা ঝামেলা করে তবে আজই ঢাকার বাইরে কোথাও চলে যাবে।  
বাসায় রুহি খালা এসেছে।ডাইনিং এ বসে মায়ের সাথে কথা বলছে। শেষ মূহুর্তের সকল প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা চলছে।যদিও তার চোখ সারাক্ষণ শায়লাকেই খুঁজছে।তাকে কাছে পেলে হয়তো কিছু জ্ঞান ঝাড়তেন।কিভাবে  স্বামী সংসার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে হয় তার একশ একটি তরিকা বাৎলে দিবেন।
রুহি খালার চোখে মুখে আনন্দ ঠিকরে পড়ছে।অবশেষে সে শায়লাকে কানাডা পাঠানোর সব ব্যবস্থা করতে পেরেছে। তিনি নিজে নিজেই আত্মতৃপ্তিতে ঢেকুর তুলছেন!  
শায়লা দূর থেকেই সবকিছু দেখছে।সে আর কাছে গিয়ে আলোচনার টেবিলে যোগ দেয়নি। রাহাতের ফোন সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকছে। কল আসছে,কল যাচ্ছে।কিন্তু শায়লাকে সময় দেয়ার,শায়লার কথা শোনার এতটুকুও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বাসার ভেতরের সামগ্রিক পরিস্থিতি জানিয়ে শায়লা শিহাবকে মেসেজ করেই যাচ্ছে।শিহাব সবকিছুতেই শায়লাকে শান্ত থাকতে বলছে। 
শিহাব শায়লার জন্য একেবারে প্রস্তুত হয়ে আছে।সে একবার তার ঘরের চারিদিকে তাকালো। শিহাব এই ভেবে পুলকিত হলো যে, আর কিছুক্ষন পরেই শায়লা আমার এই ঘরে চলে আসবে। আমার শূন্য ঘরটা শায়লার চলাচলে প্রাণ ফিরে পাবে। আমি আর কোনদিন শায়লাকে হারিয়ে যেতে দিবো না। শিহাব চোখ বন্ধ করে শায়লাকে এক নিঃশ্বাসে ছুঁয়ে নিলো ! 
ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বুবলী চলে এলো। একটা সবুজ চুন্দ্রী প্রিন্টের শাড়িতে বুবলীকে খুব সুন্দর লাগছে। যেন বুবলীরই বিয়ের ফুল ফুটেছে ! অবশ্য একসময় রাহাতের প্রতি বুবলী কিছুটা দূর্বল ছিল। ছোটবেলায় স্কুল কলেজে পড়ার সময় যখন আসতো তখন শুধু রাহাতের পিছনে ঘুরঘুর করতো। বুবলীর মায়ের কড়া নির্দেশ আর ভীষণ আপত্তিতে বুবলী এ সম্পর্ক  খুব বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেনি।
অবশ্য বর্তমানে রাহাতের অবস্থানে বড়মামীর ভীষণ আফসোস চোখে মুখে একেবারে স্পষ্ট! তবে বুবলী ভেতরে সেই ভালো লাগাটা আজো পুষে রেখেছে। ঘরে ঢুকেই সে আড় চোখে রাহাতকে একটু দেখে নিলো। রাহাত বুবলীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে  তার গুরুগম্ভীর দৃষ্টিতে বুবলীর দিকে তাকালো। যদি এই তাকানোতা বুবলী ঠিকই এক নজর দেখে নিলো। তারও কিছু ভালোলাগা ছিল।তবে আজ আর এসব ভেবে লাভ নেই।বুবলীর  এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। 
কেমন আছো রাহাত ভাইয়া ? বুবলীর সেই স্বভাবসুলভ চটপটে বাচনভঙ্গি! 
আমি ভাল আছি।তা তোমরা কখন বেরুবে ? 
এইতো এখুনি ভাইয়া।
ঠিক আছে দ্রুত চলে যাও।নীচে একটা সিলভার কালারের প্রাইভেট কার আছে। আমার বন্ধুর।আজ  সারাদিনের জন্য দিয়েছে।আমাদের সাথে থাকবে।তোমরা গাড়িটা নিয়ে পার্লারে যেও।
শায়লা সবই বুঝতে পারলো।রাহাতের কেন এত কর্ম তৎপরতা! কেন এত নিরাপত্তা ? প্রহরী দিয়ে দেহের নজরদারি রাখা যায় কিন্তু মনকে তো আর কেউ ফেরাতে পারেনা। মনতো পুরোপুরি  শিহাবের দখলে। শায়লা আজীবনই শিহাবকে ভালোবাসবে।শিহাবের সাথেই বাকী জীবন কাটাবে।
রাহাত বুবলীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
তোমরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। আমরা সবাই মিলে এয়ারপোর্টে যাবো। 
জ্বি আচ্ছা ভাইয়া। যদিও বুবলী রাহাতের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রাহাতের প্রতি সলজ্জ চাহনী আজো যে তার মনে রাহাতকে ভালো লাগার রেশ রয়ে গেছে তা স্পষ্ট! 
শায়লা মাকে সালাম করে ঘর থেকে বেরুলো। মনে মনে সে মায়ের কাছ থেকে শিহাবকে পাওয়ার দোয়া চেয়ে নিলো।যদিও মায়ের তা বুঝা হলো না। মায়ের চোখে পানি টলমল করছে। তিনি শায়লার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে দিলেন। আজ তার মেয়ের স্বামী  কানাডা থেকে আসছেন। মেয়েটা দশদিন পর কানাডা চলে যাবে।কোন দূরদেশে থাকবে। ভাবতেই মায়ের বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো। তাদের পাঁচজনের সুখী সংসারটা থেকে একেএকে তিনজন চলে যাচ্ছে। ঘর খালি হয়ে যাচ্ছে। শায়লার চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।কাজের বুয়া শায়লার মাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এলো।
কি আর করবেন খালাম্মা। মাইয়াগো এইটাইতো জীবন। বাপ মা লাইলা পাইলা অন্যের বাড়িত পাঠাইয়া দেয়। আপনি আমিও বাপের ঘর ছাইড়া আইসা পরের ঘর করতাছি। চিন্তা কইরেন না, আমগো রাহাত ভাইজানরে বিয়া করাইলে আবার আপনার গড় নাতিপুতিতে ভইরা যাইবো।
মায়ের এত উৎকন্ঠায় শায়লা তাইতো মনে মনে  ভাবছে,শিহাবের কাছে থাকলে তো মা তুমি আমায় প্রতিদিনই দেখতে পাবে।আমি তো প্রতিদিনই তোমার কাছে আসতে পারবো। এমনি করে ভাবলেও শায়লার মনের কথাটি মনের ভেতরেই রয়ে গেলো।
চলো আপু দেরী হয়ে যাচ্ছে।বুবলী তাড়া দিতেই রাহাত বলে উঠলো চলো আমি তোমাদের পার্লারে নামিয়ে দিয়ে আসি। গাড়িটা অযথা ওখানে বসিয়ে না রেখে আমি একটু বেরুবো। তোমাদের হয়ে গেলে আমাকে জানাবে।আমি গাড়ি নিয়ে চলে আসবো।
রাহাতের এমন কথায় শায়লা ঠিকই বুঝে নিলো কেন রাহাত তাদের সঙ্গী হতে চাইছে।
ভালোই হবে।শিহাব ওখানে থাকবে। রাহাতকে জানিয়েই সে শিহাবের সাথে চলে যেতে পারবে। 
গাড়ি পারসোনা পার্লারের নিচে থামতেই শায়লার উৎসুক চোখ  গাড়ির ভেতর থেকে শিহাবকে দেখতে পেলো। মেরুন রঙা শার্টে সেই সানগ্লাস সেটে দেয়া কাঙ্খিত মুখখানি বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শায়লাকেই খুঁজছে যেন! রাহাতও শিহাবকে দেখতে পেলো।
গাড়ির ভেতর রাহাত আর শায়লার দৃষ্টি বিনিময় হলো।রাহাত শিহাবকে দেখে ভীষণ চমকে গেলো ! বুবলী গাড়ি থেকে নেমেই  শায়লাকে বের হওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলো। শায়লা বেরিয়ে এলেও তার মন বারবার শিহাবের দিকেই ফিরছিল যেন!


চলবে....

কবি শাহীন রহমান এর কবিতা "কোন কারিগর"





কোন কারিগর
শাহীন রহমান

আহা কি মনোহর সৃষ্টি ভুবন,স্রষ্টা ধরার কোন সে গুনি,
ঢেউ এর গানে মুগ্ধ হই, আর শিশির ঝরার শব্দ শুনি। 

ওই নীল সাগরের উর্মি এসে,পা ধুয়ে দেয় আদর করে,
দূর নীলিমায় আকাশ নামে,পাহাড় বেয়ে ঝরনা ঝরে। 

ওই সাগর পানে ছুটছে নদী,কার ইশারায় সুর্য ওঠে, 
চাঁদের টানে জোয়ার ভাটায়,কানন জুড়ে কুসুম ফোটে। 

 গাভীর বাটে কে দুধ ঝরাই, বৃক্ষ শাখায় ধরাই ফল,
আকাশ জুড়ে মেঘ আনে কে, মুশলধারে ঝরায় জল। 

মাঠ ছেয়ে যায় সোনার ধানে, কে দেয় তাতে শস্য দানা,
ভ্রুণ গুলো সব মায়ের গর্ভে,কেমন করে পায় ঠিকানা। 

হওয়ার আগে মায়ের বুকে,কে ঠেসে দেয় দুধের বাটি, 
কেন সোনার ফসল তুলতে ঘরে, গর্ভবতী হয় এ মাটি। 

কে এনে দেয় জীবে'র আহার, গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা পানি,
খুব তাপদহনে শরীর জুড়ায়,শিতল দখিন মলয় আনি। 

আঁধার রাতে কে ঢেলে দেয়, পুর্ণমাসির চাঁদের আলো ? 
কে শিখালো হৃদয় ভরে,আপনজনের বাসতে ভালো। 

যার করুনায় এলাম ভবে,তার খবর কি রাখি আমি ? 
শুধু আমার তরেই সৃষ্টি যিনি,করে গেলেন দিবাযামী।  

এই জমিন জুড়ে মাদুর পাতা,কোথায় থাকে দুর্বাঘাস,
কোন কারিগর গড়াই এসব,কোথায় বল তাহার বাস।

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪৬




উপন্যাস


টানাপোড়েন ১৪৬
হু হু করা বসন্ত

মমতা রায়চৌধুরী

অনেক রাতে মনোজ  ঘরে ঢুকলো। রেখা তখন  আধো ঘুমে। হঠাৎই বেড সুইচটা জ্বালাতে রেখার ঘুম ভেঙে যায় ।তাকিয়ে দেখে মনোজ  রেখার পাশে বসে। রেখা উঠতে যাবে ঠিক তখনই মনোজ বলল" উঠছো কেন ?মাথায় হাত বোলাতে লাগলো।
রেখা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
"অমন করে কি দেখছো?"
"না তুমি হঠাৎ করে এখন…।'
কথা সম্পূর্ণ না হতেই মনোজ  বলল আসলে কালতো মায়েরা চলে যাবে ,ওই ঘরে বসে একটু গল্প করছিলাম। একটু দেরী হয়ে গেল।'
রেখা উঠে বসলো'গাড়ি পেয়েছো?
"হ্যাঁ পার্থ ফোন করেছিল
আর অন্য একটা গাড়ি  পাঠাবে বলল।"
"ভালোই করেছ পার্থর গাড়ি হলে কোন চিন্তা থাকে না।"
"এই কটা দিন তুমি আবার শ্বাস নিতে পারবে প্রাণভরে।"
রেখা হাসতে থাকে। মনোজ রেখাকে আরো কাছে টেনে নেয়।
হঠাৎ করে মনোজের কি হলো?
 নিভে যাওয়া সাঁঝের প্রদীপ আবার জেগে উঠছে। যেমন করে না ফোটা গোলাপ গুলি আবার ফুটে ওঠে।
থমকে যাওয়া হিমেল হাওয়ায় যেন আবার বসন্তের গান বেজে উঠছে। এক অন্য বসন্ত মনে হচ্ছে।
এই বসন্তে আগামী ভোরের সূর্যোদয়ে যেন নতুন করে জাগবে রেখা মনোজের অরুণ আলো।
"কি হল তুমি এত কি ভাবছো?"
"ভাবছি তোমাকে দেখে ,হঠাৎ করে তোমার কি হলো?"
মনোজ গান গেয়ে ওঠে
"বসন্ত বহিল সখি
কোকিলা ডাকিল রে
এমন সময় প্রিয় সখা বিদেশে রহিলো রে…।"
রেখা বলল "বাপ রে তোমার পেটে পেটে এত!"
মনোজ সংশোধন করে বলল" না না আমার প্রিয় সখা আমার কাছেই রয়েছে ।বিদেশে কেন থাকবে?"
"সে তো বুঝলুম কিন্তু এত রাত্রিতে হঠাৎ বসন্ত জেগে উঠল কেন?"
"তুমি কি ভাবতে আমি ঝরে যাওয়া পাতা?"
রেখা চুপ করে থাকে ।
তারপর মনোজ বলে "এখন আমি তাই বসন্তের দমকা হাওয়া ।আমি তোমাকে একটা উজ্জ্বল সন্ধ্যা উপহার দেব ।এসো হাতটা ধরো  । বলেই মনোজ রেখাকে নিয়ে জানলার কাছে যায় ।
" দেখো কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে। নীল আকাশের কাছে বলছি মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ুক তোমার ওপর। তবে আজকে আমি বৃষ্টি চাইছি না। পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ায় যে রং লেগেছে সেই রংতে প্রাণ জেগেছে। তাই এই ফাগুন বসন্তে তোমাকে নিয়ে মনে হয় দূর আরো দূর কোথাও হারিয়ে যাই ,ঠিক পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ার মাঝে।"
রেখা বলল "ওয়েট ,ওয়েট ,ওয়েট আমার স্বামী কবে থেকে এত রোমান্টিক হয়ে উঠলো বাপ রে বাপ।"
এই চাঁদের দিকে তাকিয়ে একটা তোমার স্বরচিত কিছু শোনাও না।

"বেরঙিন জীবনে
 তবুও বসন্ত আসে।
 সেই গন্ধ বুকে নিয়ে 
খুঁজে ফিরি বসন্তে ।
মন ছুঁয়ে প্রাণ ছুঁয়ে যায় 
মউলের নেশার মতো ।
হৃদি ছুঁয়ে যায় 
তোমার এঁকে দেওয়া স্বপ্ন।।'

"বাহ কি সুন্দর বললে গো। তবে বে রঙিন জীবন কেন বললে?"
মনোজ হাঁ  করে রেখার উত্তরের প্রত্যাশায় থাকে।
 রেখা বলে "ওসব ছাড়ো তো ,চলো ঘুমাবে।"
দিব্যি তো বেশ দুজনে কথা বলছিলাম আবার এখন ঘুমানোর কথা বলছ কেন? একটু কথা বলো না।"
"ইসস স স ।"কালকে বুঝি আমি স্কুলে যাব না।
জানো আমার ওপর বসন্ত উৎসবের দায়িত্ব রয়েছে।"
"থাক স্কুলে তো বসন্ত উৎসব করবেই। বাড়িতে না একটু অন্য বসন্ত করে নাও।"
"কি সব বকো না ,ভালো লাগে না।"
"যখন তোমার সঙ্গে কথা বলি না ।তখন তুমি ভাবো আমার কি হল ?কেন অন্যমনস্ক আছি ,তাই না? আর যখন তোমার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাইছি, তখন তুমি সবকিছু এড়িয়ে যেতে চাইছ কেন ?এসব বললে হবে না।"
রেখা কিছুদিন যাবত এতটাই বিপর্যস্ত ছিল। হতাশার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছিল। যার জন্য সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে আগেই যেন গা শিউরে ওঠে। রেখা ভাবতে চায় না সেই সব কথা ।তখন তো শুধু মনে হতো রেখার, কবে শরতের উষ্ণতা মিশিয়ে আসবে বসন্ত ।শুধু এক তাল অবজ্ঞা আর অবহেলাই তার জীবনে ছিল ।হঠাৎ করে যখন বসন্তের গন্ধ এসেছে ,ফাগুন এসে নতুন করে হাতছানি দিচ্ছে। কেন আজ রেখার মনটা এরকম হচ্ছে? মনোজকে কেন এসব কথা বলতে বারণ করছে? না, না ।সত্যিই তাই ,হাজবেন্ড ওয়াইফের একটা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা উচিত কিন্তু এত রাত্রে কালকে তো আবার  স্কুল আছে। একটু আগে লেখা কমপ্লিট করল। ঠিক আছে আজকে ও যা চাইছে তাই হবে ।সব সময় নিজের ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দিলে হয় না। এরকমই এক ফাগুন দিন সেই দিনে ভালোবাসা মেখে দিয়েছিল আমার অধরে ।আজ নয় হয় সেই ভালোবাসা হয়ে থাকবো মনোজের ছায়াতে।
কতক্ষণ যে দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে ছিল জানালার কাছে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদকে সাক্ষী রেখে , তা জানে না।হঠাৎ পাশের রুমের দরজা খোলার আওয়াজে দুজনে চমকে ওঠে। তাকিয়ে দেখে রাত দেড়টা।"চলো, চলো,শোবে কালকে না হলে উঠতে পারবে না।"
তারপর দুজনা শুয়ে পড়ে ।কখন যে ভোর হয়েছে বুঝতেই পারেনি। কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে ছটা।
এই যা মাসি এসে গেছে।
"উ হ কি ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখ ডলতে ডলতে বিছানা থেকে নেমে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খোলে। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে মাসি নয় পার্থ দাঁড়িয়ে। রেখা খুব লজ্জা পেয়ে যায় কারণ মাসি বলেই নাইট ড্রেসটা পড়েই দরজাটা খুলতে গেছে। বুঝতে পারে নি যে পার্থ। তাড়াতাড়ি পার্থকে বলল" ঘরে এসে বসো, বলে দ্রুত ছুটে এসে হাউজকোট টা বুলিয়ে নেয়। গায়ের উপর। আমি বসব না বৌদি। মাসিমারা রেডি তো ?, গাড়ি এক্ষুনি এসে যাবে।?"
"আচ্ছা আমি দেখছি।"
"বৌদি, তাহলে আমি আসছি উনাদের কিন্তু তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলুন গাড়ি কিন্তু দাঁড়াবে 
না।  মাসিমাদের ছেড়ে দিয়ে আবার একটা ভাড়া আছে।"
"ওকে।"
দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় দেখে মাসি।
মাসি বলল "এত সকালে পার্থদা এসেছিল কেন গো?"
"আরে মা আর দিদিরা তো আজকে চলে যাবে, তাই রেডি হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে এসেছিল?"
"চলে যাবে? বাববা বাঁচলাম।"
"ঠিক আছে মাসি, তুমি কাজ করতে থাকো, আমি চা দিচ্ছি হ্যাঁ? আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নি।"
রেখা মনোজ এর কাছে গিয়ে মনোজকে ধাক্কা দিয়ে উঠালো বললো' পার্থ এসেছিল মায়েরা রেডি হয়েছে কিনা দেখতে, কিন্তু মায়েদের তো কোন আওয়াজ পাচ্ছি না। তুমি ওঠো। গিয়ে দেখো।"
"ঠিক উঠে যাবে রেখা ।আমাকে ঘুমোতে দাও।"
"একি কথা ঘুমোবে মানেটা কি?"
"খুব ঘুম পাচ্ছে রেখা"।-
বলেই আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। রেখা মহা সমস্যায় পড়ল। নিজেকে গিয়েই দেখতে হবে মনে হচ্ছে।
মনোজ বরাবরই একবার ঘুমিয়ে পড়লে ওকে তোলানো খুব মুশকিল ।ঘুম যদি ঠিকঠাক না হয় ও কিছুতেই উঠবে না।
অগত্যা কি করবে নিজে গিয়েই শাশুড়ি মায়েদের ঘরে নক করল।
 ঘর থেকেই বাজ খেকো গলায় আওয়াজ দিলো "কে?"
"আপনারা রেডি হয়েছেন কিনা তাই …।
কারণ গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে থাকবে না ।পার্থ এসে বলে গেল।
রেখা উত্তরের প্রত্যাশা না করে সোজা বাথরুমের দিকে চলে গেল। অন্যদিকে রেখার শাশুড়ি তখন নিজের মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে বলল" আরে ওঠ রে মনু, দেরি হয়ে যাবে কিন্তু। গাড়ি এসে দাঁড়াবে না বলছে।"
"হ্যাঁ, উঠছি চলো চলো।
চা দিয়েছে?"
"মহারানী বোধহয় ঘুম থেকে সবে উঠলো, দেবে, আমরা তো রেডি হই।"
রেখা ফ্রেশ হয়ে গোপালকে ভোগ চাপিয়ে চা করে শাশুড়ি মা, ননদের ঘরে দিয়ে আসলো। মাসিকেও চা বিস্কিট দিল।
রেখা জিজ্ঞেস করল "আপনারা জল খাবার খেয়ে যাবেন তো?"
"হ্যাঁ সে তো খেতে চাই। হলে তবে তো খাব?"
কাজের মাসি কথাটা শুনতে পেয়ে বলল বাপরে একটু কি ভালো করে বলা যায় না। সময় বাঁকা বাঁকা কথা।
রেখা তাড়াতাড়ি গিয়ে পরোটা করার জন্য অ
ফ্রিজ থেকে মাখা ময়দা বের করল আর চা করতে করতে তো অলরেডি আলু চচ্চড়ি বসিয়ে দিয়েছিল অন্য উনুনে।
 ঝপাঝপ লেচি কেটে বেলে নিয়ে পরোটা ভাজতে লাগলো। অন্যদিকে মিলিদের খাবারটা বসিয়ে দিল।
মাসি ঘর মুছে কাপড় কাচতে যাবে ঠিক তখন রেখার ননদ বলল "এখন মাসি তুমি বাথরুমে ঢুকবে না। আমরা ফ্রেশ হব।"
মাসি বললো "আমি কাজ করবো না বলুন ,আমার তো অন্য বাড়িতে কাজে যেতে হবে?
রেখা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল' আচ্ছা মাসি ,ততক্ষণ তুমি এই বাসনগুলো মাজতে থাকো না,?আর ইশারায় বলল কোন কথা ব"লো না।"
মাসি বলল "ঠিক আছে।"
রান্নাঘরে ঢুকে বেসিনে যা বাসনপত্র জমান ছিল সব বাসন নিয়ে মাজতে শুরু করলো বাইরের দিকটা।
আরে মিলিদের খাবার হয়ে গেলে এবার ডাল বসিয়ে দিল প্রেসার কুকারে সিটি মারার জন্য।
রেখার ননদ শাশুড়িরা রেডি হতে হতেই গাড়ি এসে হর্ন বাজাতে শুরু করল।।
রেখা বলল "আপনাদের খাবারটা দিয়ে দেবো?"
অন্যদিকে গাড়িতে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে শেষে রেখায় এসে বললো "একটু দাঁড়ান না খাবারটা খেলেই হয়ে যায়।"
"আমরা বলেছিলাম যে আটটার মধ্যে বেরোবো দেখুন সাড়ে আটটা বেজে গেল আমার তো অন্যদিকে ভাড়া আছে না?"
"ঠিক আছে এমনিতে একটু এদিক ওদিক হতেই পারে বাঙালির টাইম বলে কথা হেসে বলল।"
রেখা, বেগুন ভাজা করে নিতে নিতে ডাল সাথলে নিল। অন্যদিকে মোরলা মাছের টক বানিয়ে ফেলল আর সময় নেই এবার রেখাকে  রেডি হতে হবে। ক'দিন ধরে স্কুলে যাওয়া হয়নি। আজকে স্কুলে যেতেই হবে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি আছে।।
শাশুড়ি মা ,ননদের পরোটা গুলো সাজিয়ে খাবার টেবিলে দিয়ে আসতে, শাশুড়ি মা বলল" না ,না ,না খাব না ।আমাদের প্যাক করে দাও।"
 আবার রেখা সেই খাবারগুলোকে প্যাক করলো তারপর সেগুলোকে গুছিয়ে শাশুড়ি মায়ের হাতে দিল। মাঝে গিয়ে রেখা মনোজকে আবার ডাকলো "কি গো ওঠো। অনেক বেলা হয়েছে। আমি কিন্তু স্কুলে যাব আমাকে ছেড়ে দেবে আজকে। না হলে আমি ট্রেন পাব না।"
"হ্যাঁ ,ঠিক আছে। আমি তোমাকে ট্রেন ধরিয়ে দেবো।"
তারপর মনোজের মা বলল "ঠিক আছে, আসছি রে সাবধানে থাকিস। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস।"
 মনোজের  দিদি বলল' ভাই আসছি।"
মনোজ মাথা নাড়লো। তারপর বলল কবে আসছ আবার?"
"দোলটা মিটুক, দেখি কবে আসি।"
শাশুড়ি মা বা মনোজের দিদি কেউ রেখাকে কিছু বললই না।।
আপন মনে নিজে তৈরি হতে থাকলো। 
মাসি শুধু বলল "হ্যাঁ গো বৌমা, এতদিন ধরে যে তোমার শাশুড়ি মা ,ননদের কাজ করলাম আমাকে কিছু বকসিসও দিল না।
মাসির জিজ্ঞাসু কন্ঠে ছিল একটা আর্তি, একটা প্রাপ্তির আশা ।সেটা না হওয়াতে মন কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই রেখা  নিজেকে দেখিয়ে  বলল যে "সে তো আছে। দিয়ে দেবে।"
"সবসময় তুমিই বা কেন করবে বলো তো?"
"ঠিক আছে মাসি, একই তো হলো।"
 আমি পরে কালকে তোমাকে দিয়ে দেবো কেমন?
"তোমাকে নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই ।ঠিক আছে, আসছি ,বৌমা হ্যাঁ।"
"হ্যাঁ মাসিএসো।"
মনোজ দরজাটা লাগিয়ে এসে বলল" তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসবো আগে?"
"হ্যাঁ, হ্যাঁ চলো চলো ।দেরি হয়ে যাবে।"
অনেকদিন পর মনোজ রেখাকে বাইকে করে নিয়ে গেল ।রেখা মনোজের বাইকে উঠে মনোজকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।
 মনোজ বললো "ঠিক করে ধরো যেন পড়ে যেও না।"
স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ট্রেন ঢুকে গেল ট্রেনে উঠলো।
উঠে জায়গা পায়নি বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর জায়গা পেল।। তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে কিছু কম বয়সী ছেলে মেয়ে বসন্তের গান ধরেছে"ওই নীল দিগন্তে ফুলের আগুন লাগল নীল দিগন্তে…।"
গানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেল রেখা।
স্কুলে পৌঁছাতেই বড়দি খুব খুশি হয়ে বললেন "রেখা দেখো ,তুমি চেয়েছিলে এবার তো বসন্ত উৎসব করতে হবে? একদিনের মধ্যে তুমি প্রোগ্রাম সেট করতে পারবে?"
রেখা বললো "হ্যাঁ ,দিদি পারবো। আমি তো ফোনে কন্টাক্ট করে নিয়েছি সবার সাথে।
 বড়দি বললেন "আমি জানি তবু একবার কনফার্ম হয়ে নিলাম।"
"দিদি আমাকে শুধু কম মেয়েদের রিহার্সাল
 এর সময়টা একটু তাড়াতাড়ি করে দিতে হবে.
বড় দি বলেন "ঠিক আছে ,তুমি কখন থেকে করতে চাইছে বল?"
"আমাকে সেকেন্ড পিরিয়ড থেকে দিন।"
Ok
এখানে নিজের টেবিলে ব্যাগ পত্র রেখে মেয়েদের সাথে কন্টাক্ট করতে ক্লাস রুমে গেল।
প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী মেয়েদের বললো ৭ নম্বর রুমে এসে বসতে।
রেখা নন্দিনীকে  বলল" নন্দিনী, সব ঠিক করেছে তো?"
"সব ঠিকই আছে আপনি শুধু জাস্ট দেখে নিন একবার।"
Ok
নন্দিনী মেয়েদের বলো মেয়েদের চলে এসে  পারফর্ম করতে। প্রথমে ক্লাস অনুযায়ী কর।"
মেয়েদের গান আর নাচ এর সং একাত্ম্য হয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল রেখার অন্য এক বসন্তের কথা। এই বসন্তে
জুড়ে ছিল শুধুই কোকিলের কুহুতান আর হৃদয় ভরা উচ্ছ্বাস, যেন একটা দমকা বাতাস এসে সব কিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল । রেখার মনের  সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে যেন মনে হয়েছিল ঢেউগুলি বসন্তের বাতাসের মতো আছড়ে পড়ছে তার বুকের উপর।শৈশব, কৈশরকালের বসন্ত তার  হৃদয়ের প্রতিটি কোণে যেন সেই স্পন্দন এখনো অনুরনিত হয়।নীলদার বসন্তের হাতছানি আজও ….।কেন নীলদাকে ভুলতে পারে না রেখা ?অথচ নীলদার কি একবারও মনে পড়ে রে
 কথা ?আজ রেখা সংসারী হয়েছে ।তবুও নীল বসন্ত কেন তার মাঝে বারবার উঁকি দিয়ে যায়। যে বসন্তে হাতে হাত রেখেছিল ।কবিতা আওরে 
ছিল ।মনে পড়ছে বারবার কবি দেবব্রত সরকারের এর লেখা-

"শুভ দোল মন খুলে বলা
হাতে হাত মন খুলে চলা।
বসন্ত উৎসব এলে
কিছু কথা রং মেখে বলা।
কি বুঝি এসে গেল দোল
কিছু হবে না এখন
পূর্ণ করো ভেবে থাকা গোল
জেগে ওঠে বসন্ত এখন।'

সত্যিই তাই মেয়েরা যখন নাচ করছে "খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল… "
সেই শৈশবের অনুভূতি গুলো তার মন প্রাণ জুড়ে রয়েছে। কি রংটাই না লাগিয়েছিল সেবার নীলদা রেখাকে শৈশবের স্মৃতিতে আজও ফিকে হয়ে যায়নি  আজও জ্বলজ্বল করছে  স্মৃতিপটে। রং লাগিয়ে ভূত করে দিয়েছিল আর বলেছিল 
"তুই আমার ভুত রে  রং মেখে তোকে কি সুন্দর লাগছে ।এভাবেই সারা জীবন রঙিন থাকিস।"
আজ মেয়েদের বসন্ত উৎসবের মাঝে প্রস্তুতিতে হঠাৎ করেই যেন নীলদার জন্য মন কেমন করা একটা বসন্ত হু হু করে ডাক দিয়ে যায়।
রেখা আপন মনে বলে ওঠে কবি দেবব্রত সরকারের কবিতা--

"বেশ তবে কাছে এলে বোঝাবো
মনে রেখো এই কথা শেখাবো।
দিনরাত এক করে বলবে
ভালোবাসা নেশা ঘোরে টলবে।
লেখা শুধু লেখা হোক মনেতে
চুপি প্রেম শুয়ে হৃদি বনতে
কি যে বলি একা মন হাতরে
ছেলে-মেয়ে মানু -ষের জাত রে।"

রেখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে আজ তুমি চুপিসারেই রয়ে গেলে মনেতে।












কবি শিবনাথ মণ্ডল  এর কবিতা "সবার সেরা"




সবার সেরা 
শিবনাথ মণ্ডল  


আয়রে সবাই ছেলে মেয়ে 
  পড়তে সবাই চল
লেখা পড়ায় কেউ কোনো দিন 
করিসনা ভাই ছল । 

বড়ো স্কুলে যাবো সবাই
পড়বো কত ব ই 
আর কখনো কাউকে মোরা
দেবনা টিপসই ।


শিক্ষা নেবো ইস্কুলে 
শিখবো লেখা পড়া 
ভালো ভালো পডবো ব ই
গল্প কবিতা ছড়া ।


ছেলে মেয়ে সবাই মিলে 
শিখলে লেখা পড়া 
বিশ্বের মাঝে এই দেশটা 
হবে সবার সেরা ।


তখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে
এই দেশের কথা 
সবাই তখন  স্বীকার করবে
শ্রেষ্ঠ ভারত মাতা ।।










  

কবি মিতা নূর এর কবিতা "কালো রেশমের আবরণে"




কালো রেশমের আবরণে
 মিতা নূর

সবকিছু শূন্য লাগে, নিঃস্ব লাগে অসতীত্ব, 
ভাবছি, শুধু ভাবছি,ভেবে ভেবে ক্লান্ত আমি, 
সত্যিই ক্লান্ত আমি, 
আবার না ভেবেও পারি না! 
না পারি ভুলতে- না পারি মনের অবস্থা কাউকে বলতে। 
আজ বাস্তবতার কাছে  বড় অসহায় লাগে, 
কেমন যেন নিজেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছি। 
কোনোকিছুই আর মন টানে না,
এখন ভালো আছি হয়তো!
কারোর রক্তিম পলাশের রং ভুলে,কালো রেশমের আবরণে।
একসময়  কাউকে নিয়ে শখ ছিল, স্বপ্ন ছিল, সব পালটে দিয়েছি; 
আজ ব্যস্ত আমি ভীষণ রকম  তার চেনা কে ভুলে। 
সেদিন সে  ভালোই করেছে, তার মন থেকে  নিজ হাতে আমার ছবি মুছে দিয়ে! 
নয়তো আজ অকেজো ছবি হয়ে থেকে যেতাম ধুলোবালিতে, 
এইতো বেশ আছি, চোখের কোণে পুষে রেখে সাগর !! 

--২৯/০১/২০২২--ইং--রাতঃ-১২ঃ১২,

কবি অলোক দাস এর কবিতা "প্রাচীন একটা বটগাছ "





প্রাচীন একটা বটগাছ 
অলোক দাস 

একটা বহু প্রাচীন বটগাছ, 
দিয়েছে মানুষকে অক্সিজেন, 
পখিকূলকে দিয়েছে আশ্রয় ।
গ্রীষ্মের গরমে দিয়েছে একটু আরাম ।
পথিককে দিয়েছে বিশ্রাম ।
আজ বটগাছের সব পাতা গেছে ঝরে । 
সে আজ শক্তিহীন । 
ভালোবাসাহিন পাথর ।
কেউই আসে না ওর কাছে ।
ওর পাশে বকুল, শিউলি ও পলাশ ।
নিচে সবুজ গাছের অরণ্য ।
মানুষের ভালোবাসা সীমাবদ্ধ ।

কবি মোঃসেলিম মিয়া এর কবিতা "আজরাইলের হাঁক"





আজরাইলের হাঁক
মোঃসেলিম মিয়া 
(রমজানুল মোবারক) 

মেধা শ্রম অর্থ জস অট্টালিকা বাড়ি 
কালের স্বাক্ষী রইবে দন্ডায়মান 
আবসুসের আহাজারি! 
নিথর দেহ শব্দহীণ প্রাণ 
বেড়িয়ে গেছে চলে---
নাম ধরে আর ডাকছেনা কেউ 
লাস বলছে তারে!
কত যতনে রাখা নাম খানি
টাইটেল গেছে ছুটে --
নামের পোদ্দারি ক্ষমতার বাহাদুরি 
বেঁচে থাকাটাই যে মিছে!
ক্ষনিকের বাস কত পণ্ডশ্রম 
হায়রে ব্যাকুলতা!
মৃত্যু অমোঘ ভুলে গেছি সবে
স্বজ্ঞানে নির্বোধিতা।
ক্ষণকালের দুনিয়া দারি
কিসের ছোটাছুটি? 
দিনের শেষে  হিসেবের গড়মিল 
অন্কটাই নাহি খাঁটি !
দাফন কাফনে ব্যস্ত সবাই 
লাস রবেনা ঘরে,
সাড়ে তিনহাত ভিটে জায়গা 
কাঁদা মাটি সব ঘিরে। 
অহংকার সব চূর্ণ হবে
 দেহ খাবে মাটি!
কিসের এতো বাহাদুরি
মৃত্যুর সওদা কি কারো জুটে?
কবর হবে বসত ভিটা 
শাপ বিচ্ছুর বাস,
সময় থাকতে হই সচেতন 
আজরাইলের পেতেই হাঁক !