০৩ এপ্রিল ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪৬




উপন্যাস


টানাপোড়েন ১৪৬
হু হু করা বসন্ত

মমতা রায়চৌধুরী

অনেক রাতে মনোজ  ঘরে ঢুকলো। রেখা তখন  আধো ঘুমে। হঠাৎই বেড সুইচটা জ্বালাতে রেখার ঘুম ভেঙে যায় ।তাকিয়ে দেখে মনোজ  রেখার পাশে বসে। রেখা উঠতে যাবে ঠিক তখনই মনোজ বলল" উঠছো কেন ?মাথায় হাত বোলাতে লাগলো।
রেখা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
"অমন করে কি দেখছো?"
"না তুমি হঠাৎ করে এখন…।'
কথা সম্পূর্ণ না হতেই মনোজ  বলল আসলে কালতো মায়েরা চলে যাবে ,ওই ঘরে বসে একটু গল্প করছিলাম। একটু দেরী হয়ে গেল।'
রেখা উঠে বসলো'গাড়ি পেয়েছো?
"হ্যাঁ পার্থ ফোন করেছিল
আর অন্য একটা গাড়ি  পাঠাবে বলল।"
"ভালোই করেছ পার্থর গাড়ি হলে কোন চিন্তা থাকে না।"
"এই কটা দিন তুমি আবার শ্বাস নিতে পারবে প্রাণভরে।"
রেখা হাসতে থাকে। মনোজ রেখাকে আরো কাছে টেনে নেয়।
হঠাৎ করে মনোজের কি হলো?
 নিভে যাওয়া সাঁঝের প্রদীপ আবার জেগে উঠছে। যেমন করে না ফোটা গোলাপ গুলি আবার ফুটে ওঠে।
থমকে যাওয়া হিমেল হাওয়ায় যেন আবার বসন্তের গান বেজে উঠছে। এক অন্য বসন্ত মনে হচ্ছে।
এই বসন্তে আগামী ভোরের সূর্যোদয়ে যেন নতুন করে জাগবে রেখা মনোজের অরুণ আলো।
"কি হল তুমি এত কি ভাবছো?"
"ভাবছি তোমাকে দেখে ,হঠাৎ করে তোমার কি হলো?"
মনোজ গান গেয়ে ওঠে
"বসন্ত বহিল সখি
কোকিলা ডাকিল রে
এমন সময় প্রিয় সখা বিদেশে রহিলো রে…।"
রেখা বলল "বাপ রে তোমার পেটে পেটে এত!"
মনোজ সংশোধন করে বলল" না না আমার প্রিয় সখা আমার কাছেই রয়েছে ।বিদেশে কেন থাকবে?"
"সে তো বুঝলুম কিন্তু এত রাত্রিতে হঠাৎ বসন্ত জেগে উঠল কেন?"
"তুমি কি ভাবতে আমি ঝরে যাওয়া পাতা?"
রেখা চুপ করে থাকে ।
তারপর মনোজ বলে "এখন আমি তাই বসন্তের দমকা হাওয়া ।আমি তোমাকে একটা উজ্জ্বল সন্ধ্যা উপহার দেব ।এসো হাতটা ধরো  । বলেই মনোজ রেখাকে নিয়ে জানলার কাছে যায় ।
" দেখো কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে। নীল আকাশের কাছে বলছি মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ুক তোমার ওপর। তবে আজকে আমি বৃষ্টি চাইছি না। পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ায় যে রং লেগেছে সেই রংতে প্রাণ জেগেছে। তাই এই ফাগুন বসন্তে তোমাকে নিয়ে মনে হয় দূর আরো দূর কোথাও হারিয়ে যাই ,ঠিক পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ার মাঝে।"
রেখা বলল "ওয়েট ,ওয়েট ,ওয়েট আমার স্বামী কবে থেকে এত রোমান্টিক হয়ে উঠলো বাপ রে বাপ।"
এই চাঁদের দিকে তাকিয়ে একটা তোমার স্বরচিত কিছু শোনাও না।

"বেরঙিন জীবনে
 তবুও বসন্ত আসে।
 সেই গন্ধ বুকে নিয়ে 
খুঁজে ফিরি বসন্তে ।
মন ছুঁয়ে প্রাণ ছুঁয়ে যায় 
মউলের নেশার মতো ।
হৃদি ছুঁয়ে যায় 
তোমার এঁকে দেওয়া স্বপ্ন।।'

"বাহ কি সুন্দর বললে গো। তবে বে রঙিন জীবন কেন বললে?"
মনোজ হাঁ  করে রেখার উত্তরের প্রত্যাশায় থাকে।
 রেখা বলে "ওসব ছাড়ো তো ,চলো ঘুমাবে।"
দিব্যি তো বেশ দুজনে কথা বলছিলাম আবার এখন ঘুমানোর কথা বলছ কেন? একটু কথা বলো না।"
"ইসস স স ।"কালকে বুঝি আমি স্কুলে যাব না।
জানো আমার ওপর বসন্ত উৎসবের দায়িত্ব রয়েছে।"
"থাক স্কুলে তো বসন্ত উৎসব করবেই। বাড়িতে না একটু অন্য বসন্ত করে নাও।"
"কি সব বকো না ,ভালো লাগে না।"
"যখন তোমার সঙ্গে কথা বলি না ।তখন তুমি ভাবো আমার কি হল ?কেন অন্যমনস্ক আছি ,তাই না? আর যখন তোমার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাইছি, তখন তুমি সবকিছু এড়িয়ে যেতে চাইছ কেন ?এসব বললে হবে না।"
রেখা কিছুদিন যাবত এতটাই বিপর্যস্ত ছিল। হতাশার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছিল। যার জন্য সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে আগেই যেন গা শিউরে ওঠে। রেখা ভাবতে চায় না সেই সব কথা ।তখন তো শুধু মনে হতো রেখার, কবে শরতের উষ্ণতা মিশিয়ে আসবে বসন্ত ।শুধু এক তাল অবজ্ঞা আর অবহেলাই তার জীবনে ছিল ।হঠাৎ করে যখন বসন্তের গন্ধ এসেছে ,ফাগুন এসে নতুন করে হাতছানি দিচ্ছে। কেন আজ রেখার মনটা এরকম হচ্ছে? মনোজকে কেন এসব কথা বলতে বারণ করছে? না, না ।সত্যিই তাই ,হাজবেন্ড ওয়াইফের একটা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা উচিত কিন্তু এত রাত্রে কালকে তো আবার  স্কুল আছে। একটু আগে লেখা কমপ্লিট করল। ঠিক আছে আজকে ও যা চাইছে তাই হবে ।সব সময় নিজের ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দিলে হয় না। এরকমই এক ফাগুন দিন সেই দিনে ভালোবাসা মেখে দিয়েছিল আমার অধরে ।আজ নয় হয় সেই ভালোবাসা হয়ে থাকবো মনোজের ছায়াতে।
কতক্ষণ যে দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে ছিল জানালার কাছে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার চাঁদকে সাক্ষী রেখে , তা জানে না।হঠাৎ পাশের রুমের দরজা খোলার আওয়াজে দুজনে চমকে ওঠে। তাকিয়ে দেখে রাত দেড়টা।"চলো, চলো,শোবে কালকে না হলে উঠতে পারবে না।"
তারপর দুজনা শুয়ে পড়ে ।কখন যে ভোর হয়েছে বুঝতেই পারেনি। কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে ছটা।
এই যা মাসি এসে গেছে।
"উ হ কি ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখ ডলতে ডলতে বিছানা থেকে নেমে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খোলে। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে মাসি নয় পার্থ দাঁড়িয়ে। রেখা খুব লজ্জা পেয়ে যায় কারণ মাসি বলেই নাইট ড্রেসটা পড়েই দরজাটা খুলতে গেছে। বুঝতে পারে নি যে পার্থ। তাড়াতাড়ি পার্থকে বলল" ঘরে এসে বসো, বলে দ্রুত ছুটে এসে হাউজকোট টা বুলিয়ে নেয়। গায়ের উপর। আমি বসব না বৌদি। মাসিমারা রেডি তো ?, গাড়ি এক্ষুনি এসে যাবে।?"
"আচ্ছা আমি দেখছি।"
"বৌদি, তাহলে আমি আসছি উনাদের কিন্তু তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলুন গাড়ি কিন্তু দাঁড়াবে 
না।  মাসিমাদের ছেড়ে দিয়ে আবার একটা ভাড়া আছে।"
"ওকে।"
দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় দেখে মাসি।
মাসি বলল "এত সকালে পার্থদা এসেছিল কেন গো?"
"আরে মা আর দিদিরা তো আজকে চলে যাবে, তাই রেডি হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতে এসেছিল?"
"চলে যাবে? বাববা বাঁচলাম।"
"ঠিক আছে মাসি, তুমি কাজ করতে থাকো, আমি চা দিচ্ছি হ্যাঁ? আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নি।"
রেখা মনোজ এর কাছে গিয়ে মনোজকে ধাক্কা দিয়ে উঠালো বললো' পার্থ এসেছিল মায়েরা রেডি হয়েছে কিনা দেখতে, কিন্তু মায়েদের তো কোন আওয়াজ পাচ্ছি না। তুমি ওঠো। গিয়ে দেখো।"
"ঠিক উঠে যাবে রেখা ।আমাকে ঘুমোতে দাও।"
"একি কথা ঘুমোবে মানেটা কি?"
"খুব ঘুম পাচ্ছে রেখা"।-
বলেই আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। রেখা মহা সমস্যায় পড়ল। নিজেকে গিয়েই দেখতে হবে মনে হচ্ছে।
মনোজ বরাবরই একবার ঘুমিয়ে পড়লে ওকে তোলানো খুব মুশকিল ।ঘুম যদি ঠিকঠাক না হয় ও কিছুতেই উঠবে না।
অগত্যা কি করবে নিজে গিয়েই শাশুড়ি মায়েদের ঘরে নক করল।
 ঘর থেকেই বাজ খেকো গলায় আওয়াজ দিলো "কে?"
"আপনারা রেডি হয়েছেন কিনা তাই …।
কারণ গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে থাকবে না ।পার্থ এসে বলে গেল।
রেখা উত্তরের প্রত্যাশা না করে সোজা বাথরুমের দিকে চলে গেল। অন্যদিকে রেখার শাশুড়ি তখন নিজের মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে বলল" আরে ওঠ রে মনু, দেরি হয়ে যাবে কিন্তু। গাড়ি এসে দাঁড়াবে না বলছে।"
"হ্যাঁ, উঠছি চলো চলো।
চা দিয়েছে?"
"মহারানী বোধহয় ঘুম থেকে সবে উঠলো, দেবে, আমরা তো রেডি হই।"
রেখা ফ্রেশ হয়ে গোপালকে ভোগ চাপিয়ে চা করে শাশুড়ি মা, ননদের ঘরে দিয়ে আসলো। মাসিকেও চা বিস্কিট দিল।
রেখা জিজ্ঞেস করল "আপনারা জল খাবার খেয়ে যাবেন তো?"
"হ্যাঁ সে তো খেতে চাই। হলে তবে তো খাব?"
কাজের মাসি কথাটা শুনতে পেয়ে বলল বাপরে একটু কি ভালো করে বলা যায় না। সময় বাঁকা বাঁকা কথা।
রেখা তাড়াতাড়ি গিয়ে পরোটা করার জন্য অ
ফ্রিজ থেকে মাখা ময়দা বের করল আর চা করতে করতে তো অলরেডি আলু চচ্চড়ি বসিয়ে দিয়েছিল অন্য উনুনে।
 ঝপাঝপ লেচি কেটে বেলে নিয়ে পরোটা ভাজতে লাগলো। অন্যদিকে মিলিদের খাবারটা বসিয়ে দিল।
মাসি ঘর মুছে কাপড় কাচতে যাবে ঠিক তখন রেখার ননদ বলল "এখন মাসি তুমি বাথরুমে ঢুকবে না। আমরা ফ্রেশ হব।"
মাসি বললো "আমি কাজ করবো না বলুন ,আমার তো অন্য বাড়িতে কাজে যেতে হবে?
রেখা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল' আচ্ছা মাসি ,ততক্ষণ তুমি এই বাসনগুলো মাজতে থাকো না,?আর ইশারায় বলল কোন কথা ব"লো না।"
মাসি বলল "ঠিক আছে।"
রান্নাঘরে ঢুকে বেসিনে যা বাসনপত্র জমান ছিল সব বাসন নিয়ে মাজতে শুরু করলো বাইরের দিকটা।
আরে মিলিদের খাবার হয়ে গেলে এবার ডাল বসিয়ে দিল প্রেসার কুকারে সিটি মারার জন্য।
রেখার ননদ শাশুড়িরা রেডি হতে হতেই গাড়ি এসে হর্ন বাজাতে শুরু করল।।
রেখা বলল "আপনাদের খাবারটা দিয়ে দেবো?"
অন্যদিকে গাড়িতে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে শেষে রেখায় এসে বললো "একটু দাঁড়ান না খাবারটা খেলেই হয়ে যায়।"
"আমরা বলেছিলাম যে আটটার মধ্যে বেরোবো দেখুন সাড়ে আটটা বেজে গেল আমার তো অন্যদিকে ভাড়া আছে না?"
"ঠিক আছে এমনিতে একটু এদিক ওদিক হতেই পারে বাঙালির টাইম বলে কথা হেসে বলল।"
রেখা, বেগুন ভাজা করে নিতে নিতে ডাল সাথলে নিল। অন্যদিকে মোরলা মাছের টক বানিয়ে ফেলল আর সময় নেই এবার রেখাকে  রেডি হতে হবে। ক'দিন ধরে স্কুলে যাওয়া হয়নি। আজকে স্কুলে যেতেই হবে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি আছে।।
শাশুড়ি মা ,ননদের পরোটা গুলো সাজিয়ে খাবার টেবিলে দিয়ে আসতে, শাশুড়ি মা বলল" না ,না ,না খাব না ।আমাদের প্যাক করে দাও।"
 আবার রেখা সেই খাবারগুলোকে প্যাক করলো তারপর সেগুলোকে গুছিয়ে শাশুড়ি মায়ের হাতে দিল। মাঝে গিয়ে রেখা মনোজকে আবার ডাকলো "কি গো ওঠো। অনেক বেলা হয়েছে। আমি কিন্তু স্কুলে যাব আমাকে ছেড়ে দেবে আজকে। না হলে আমি ট্রেন পাব না।"
"হ্যাঁ ,ঠিক আছে। আমি তোমাকে ট্রেন ধরিয়ে দেবো।"
তারপর মনোজের মা বলল "ঠিক আছে, আসছি রে সাবধানে থাকিস। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস।"
 মনোজের  দিদি বলল' ভাই আসছি।"
মনোজ মাথা নাড়লো। তারপর বলল কবে আসছ আবার?"
"দোলটা মিটুক, দেখি কবে আসি।"
শাশুড়ি মা বা মনোজের দিদি কেউ রেখাকে কিছু বললই না।।
আপন মনে নিজে তৈরি হতে থাকলো। 
মাসি শুধু বলল "হ্যাঁ গো বৌমা, এতদিন ধরে যে তোমার শাশুড়ি মা ,ননদের কাজ করলাম আমাকে কিছু বকসিসও দিল না।
মাসির জিজ্ঞাসু কন্ঠে ছিল একটা আর্তি, একটা প্রাপ্তির আশা ।সেটা না হওয়াতে মন কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই রেখা  নিজেকে দেখিয়ে  বলল যে "সে তো আছে। দিয়ে দেবে।"
"সবসময় তুমিই বা কেন করবে বলো তো?"
"ঠিক আছে মাসি, একই তো হলো।"
 আমি পরে কালকে তোমাকে দিয়ে দেবো কেমন?
"তোমাকে নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই ।ঠিক আছে, আসছি ,বৌমা হ্যাঁ।"
"হ্যাঁ মাসিএসো।"
মনোজ দরজাটা লাগিয়ে এসে বলল" তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসবো আগে?"
"হ্যাঁ, হ্যাঁ চলো চলো ।দেরি হয়ে যাবে।"
অনেকদিন পর মনোজ রেখাকে বাইকে করে নিয়ে গেল ।রেখা মনোজের বাইকে উঠে মনোজকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।
 মনোজ বললো "ঠিক করে ধরো যেন পড়ে যেও না।"
স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ট্রেন ঢুকে গেল ট্রেনে উঠলো।
উঠে জায়গা পায়নি বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর জায়গা পেল।। তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে কিছু কম বয়সী ছেলে মেয়ে বসন্তের গান ধরেছে"ওই নীল দিগন্তে ফুলের আগুন লাগল নীল দিগন্তে…।"
গানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেল রেখা।
স্কুলে পৌঁছাতেই বড়দি খুব খুশি হয়ে বললেন "রেখা দেখো ,তুমি চেয়েছিলে এবার তো বসন্ত উৎসব করতে হবে? একদিনের মধ্যে তুমি প্রোগ্রাম সেট করতে পারবে?"
রেখা বললো "হ্যাঁ ,দিদি পারবো। আমি তো ফোনে কন্টাক্ট করে নিয়েছি সবার সাথে।
 বড়দি বললেন "আমি জানি তবু একবার কনফার্ম হয়ে নিলাম।"
"দিদি আমাকে শুধু কম মেয়েদের রিহার্সাল
 এর সময়টা একটু তাড়াতাড়ি করে দিতে হবে.
বড় দি বলেন "ঠিক আছে ,তুমি কখন থেকে করতে চাইছে বল?"
"আমাকে সেকেন্ড পিরিয়ড থেকে দিন।"
Ok
এখানে নিজের টেবিলে ব্যাগ পত্র রেখে মেয়েদের সাথে কন্টাক্ট করতে ক্লাস রুমে গেল।
প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী মেয়েদের বললো ৭ নম্বর রুমে এসে বসতে।
রেখা নন্দিনীকে  বলল" নন্দিনী, সব ঠিক করেছে তো?"
"সব ঠিকই আছে আপনি শুধু জাস্ট দেখে নিন একবার।"
Ok
নন্দিনী মেয়েদের বলো মেয়েদের চলে এসে  পারফর্ম করতে। প্রথমে ক্লাস অনুযায়ী কর।"
মেয়েদের গান আর নাচ এর সং একাত্ম্য হয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল রেখার অন্য এক বসন্তের কথা। এই বসন্তে
জুড়ে ছিল শুধুই কোকিলের কুহুতান আর হৃদয় ভরা উচ্ছ্বাস, যেন একটা দমকা বাতাস এসে সব কিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল । রেখার মনের  সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে যেন মনে হয়েছিল ঢেউগুলি বসন্তের বাতাসের মতো আছড়ে পড়ছে তার বুকের উপর।শৈশব, কৈশরকালের বসন্ত তার  হৃদয়ের প্রতিটি কোণে যেন সেই স্পন্দন এখনো অনুরনিত হয়।নীলদার বসন্তের হাতছানি আজও ….।কেন নীলদাকে ভুলতে পারে না রেখা ?অথচ নীলদার কি একবারও মনে পড়ে রে
 কথা ?আজ রেখা সংসারী হয়েছে ।তবুও নীল বসন্ত কেন তার মাঝে বারবার উঁকি দিয়ে যায়। যে বসন্তে হাতে হাত রেখেছিল ।কবিতা আওরে 
ছিল ।মনে পড়ছে বারবার কবি দেবব্রত সরকারের এর লেখা-

"শুভ দোল মন খুলে বলা
হাতে হাত মন খুলে চলা।
বসন্ত উৎসব এলে
কিছু কথা রং মেখে বলা।
কি বুঝি এসে গেল দোল
কিছু হবে না এখন
পূর্ণ করো ভেবে থাকা গোল
জেগে ওঠে বসন্ত এখন।'

সত্যিই তাই মেয়েরা যখন নাচ করছে "খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল… "
সেই শৈশবের অনুভূতি গুলো তার মন প্রাণ জুড়ে রয়েছে। কি রংটাই না লাগিয়েছিল সেবার নীলদা রেখাকে শৈশবের স্মৃতিতে আজও ফিকে হয়ে যায়নি  আজও জ্বলজ্বল করছে  স্মৃতিপটে। রং লাগিয়ে ভূত করে দিয়েছিল আর বলেছিল 
"তুই আমার ভুত রে  রং মেখে তোকে কি সুন্দর লাগছে ।এভাবেই সারা জীবন রঙিন থাকিস।"
আজ মেয়েদের বসন্ত উৎসবের মাঝে প্রস্তুতিতে হঠাৎ করেই যেন নীলদার জন্য মন কেমন করা একটা বসন্ত হু হু করে ডাক দিয়ে যায়।
রেখা আপন মনে বলে ওঠে কবি দেবব্রত সরকারের কবিতা--

"বেশ তবে কাছে এলে বোঝাবো
মনে রেখো এই কথা শেখাবো।
দিনরাত এক করে বলবে
ভালোবাসা নেশা ঘোরে টলবে।
লেখা শুধু লেখা হোক মনেতে
চুপি প্রেম শুয়ে হৃদি বনতে
কি যে বলি একা মন হাতরে
ছেলে-মেয়ে মানু -ষের জাত রে।"

রেখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে আজ তুমি চুপিসারেই রয়ে গেলে মনেতে।












কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much