১৫ মার্চ ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব১৩৩




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৩৩
পরতে পরতে ভালোবাসা
মমতা রায়চৌধুরী

কল্যাণের কথা ভাবতে ভাবতেই শিখার অনেক রাত হয়ে গেল । বেড সুইচ টিপে এক ঝলক হলুদ আলোর মধ্যে চোখমুখ কুঁচকে উঠে বসলো শিখা। বিকেলবেলা কল্যাণের  সঙ্গে ঘুরে ফিরে আসার পর ওই যে শুয়েছে, মাধুর অনুরোধে খেতেও গেল না। সারা শরীর মন জুড়ে যেন সেই উষ্ণতার স্পর্শ রয়ে গেছে ।না কোনকিছুই আজকে আর ভালো লাগছে না আর কোন কিছু নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে না।
কল্যাণকে যে একটা ফোন দেবে সেটাও সাহসে কুলাচ্ছে না  আসলে কল্যান কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস ।হয়তো যে বিষয়টা নিয়ে লিখছে সেই বিষয়টা কমপ্লিট না হলে কল্যান রেগে ও যেতে 
পারে।  মাঝখানে ফোনটা করলে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। ঘুম আসছেনা অপরিসীম একটা ক্লান্তি লাগছে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করছে অথচ কোন চোখে ঘুম নেই। শিখা এক সময় উঠে টেবিলের কাছে গেল কাগজপত্র বইপত্রের একটা অসামঞ্জস্য ভাবে পড়ে আছে যেন দেয়াল চাপা পড়ে গেছে । তারপর একসময় ড্রয়ার খুলে লম্বা একটা খাম বের করলো এরকম আমি ব্যক্তিগত চিঠি পত্র লেখে না। অ্যাপ্লিকেশন লিখে পাঠায়। নীল কালিতে লেখা পরিষ্কার করে একটা কোনায় তারিখ। আরো অনেকখানি শূন্যতা উপরে নিচে বাঁ দিকে চাপ বেঁধে আছে। উল্টেপাল্টে দেখল খামটা। তারপর দেখতে পেল এক একটা কাগজে আঁকা একটা তারিখ দেওয়া।
শিখার বুঝতে অসুবিধা হয় না চিঠিটা কার?
দিব্যেন্দুর কথায় আর লেখায় অনেক আসমান জমিন তফাৎ থাকতো।
তবু একটা চিঠি রেখে দিয়েছে শিখা। কেন যে অতীত স্মৃতি আঁকড়ে বসে আছে সেটা বুঝতে পারে না। আজ কল্যাণের থেকে যে ভালোবাসা যে সম্মান পেয়েছে সেখানে তো সবকিছু ভুলে যাবার কথা। তার পরেও সেই স্মৃতি আঁকড়ে চিঠি থাকে কেন কাছে রেখেছে। মনেরি অজান্তে বারবার চিঠির অক্ষরগুলি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
একটা চিঠি ছিল এরকম
১২/২
আর যেন মন কেমন করছে। তোমার জন্য মনটা ছটফটিয়ে রয়ে গেছে। আচ্ছা বলতো কেন এমন হচ্ছে? বসন্ত তো দোরগোড়ায় এসে গেছে। বাসন্তী রং তুমি সেজেছো কি অপরূপ লাগছে। কৃষ্ণচূড়া পলাশের রঙে আজ তুমি সেজেছো। তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। তোমার সুমিষ্ট কুহুতান প্রানো মনে ভরে নিতে ইচ্ছে করছে। আগামীকাল তুমি আমার সঙ্গে দেখা করবে ।শুনতে পাচ্ছ?'

কোথায় গেল সেই টান কোথায় গেল সেই ভালোবাসা নাকি সেটা পুরোটাই ছিল একটা 
মোহ , সাময়িক ক্রাশ। নইলে কি করে পারে শিখাকে ছেড়ে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে।
চিঠিটা পড়ে যেটুকু ভালোলাগা মনের ভেতরে ছিল আবার এক রাশ বিরক্তি তিক্ততায় মনটা ভরে উঠলো।
চিঠিটা হাতে নিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে শিখার।
হঠাৎ মনে হলেও একবার কি করলেন কে ফোন করবে গলাটা কেমন আছে কে জানে নাকি এখনো ল্যাপটপে বসে তার লেকচার রেডী করছে।
ওটাকে ঘুরিয়ে নেবার জন্য কল্যাণের দিকে মনোনিবেশ করল আর ভাবলো একবার করেই দেখি না কি হয়।
শিখা ফোন করলো। কল্যাণের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল' মনের হদিস কে বা জানে….,.।'
ফোন বেজে গেল। শিখা ভাবলো না থাক বিরক্ত করে লাভ নেই কাজের ব্যাপারে কল্যান ভীষণ সিরিয়াস।
এবার শিখার ফোন বেজে উঠলো'শিখা রিংটোন বাজতে শুরু করলো'আমার পরান যাহা চায় ,তুমি তাই….,.,.।'
শিখা ভাবল কি হলো রে বাবা তাড়াতাড়ি এসে ফোনটা রিসিভ করল বলল' হ্যালো'।
"হ্যাঁ ,কল্যান বলছি।'
হ্যাঁ আমি ফোন করলাম তোমায়।
আসলেই এই মাত্র লেখাটা কমপ্লিট করলাম তো তাই ফোনটা তখন ধরতে পারিনি
বাবা এতক্ষণ ধরে লিখলে?
হ্যাঁগো কোথাও গিয়ে লেকচার দিতে হলে একটু ভেবেচিন্তেই লিখতে হয় ।
তাহলে তোমার তো আমি ডিস্টার্ব করলাম।
না না আর ডিস্টার্ব করতে আমার লেখা তো কমপ্লিট।
থ্যাংকস গড। 
নাহলে নিজেকে অপরাধী মনে হতো।
শোনো না কিছু খেলে?
না বৌদি ডেকেছিল খাইনি কিছু।।তুমি  কি খাবে এখন?
মাসি ডিম টোস্ট করে রেখে গেছে।
এত রাত্রে খাবে ডিম টোস্ট?
তাছাড়া  উপায় কী বলো?j
আর একটা জিনিস অবশ্য আছে খেলে হয়।
কি বলতো?
ওটস.।
তা বেশ যেটা ভালো লাগে খাও।

তোমার মন ঠিক হয়েছে?
শিখা বললো' ওই আছে '।
কেন ?কেন?
মনটা খারাপ?
কি জন্য আমায় বলো।
শিখার যেন মনে হলো তার মনের ভেতরে একটা আকাশ অখণ্ডতার বৃষ্টিতে কি বিপুলতা কি অবকাশ। হঠাৎ মনে হল যেন কল্যাণের কথায় একটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো যদিও ঝরঝর দুর্গন্ধ আছে বাতাসে বিশাল সাদা আকাশে এমন ফ্যাটফেটে জ্যোৎস্নায় গদগদ চাঁদপাড়া মুখ। পূর্ণিমা যেন তাকে ভাসিয়ে রেখে  রেখেছে 
হঠাৎ কল্যাণ বললো কি ব্যাপার চুপ করে গেলে যে।
হ্যাঁ বলো।
আসলে তুমি চুপ করে গেলে তো তাই?
তোমার গলাটা এখন কেমন?
নাগো তেমন সুবিধার মনে করছি না।
দেখো কালকে আবার তোমার লেকচার আছে কি যে হবে। গারগিল করে নাও।
হ্যাঁ,করব।
ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়ো।
শুভরাত্রি।
শুভরাত্রি শিখা বলল।
শিখা চেয়েছিল আর একটু কথা বলতে। কিন্তু কি কথা বলবে কল্যাণের সঙ্গে যখন কথা বলে তখন আর থৈ পায় না কি কথা বলবে বুঝে উঠতে পারেনা।
আসলে সংলাপ এমন একটা প্রবাহ সে তার ছন্দ নিয়ে এগিয়ে চলে হঠাৎ ছন্দপতন হলে কথাগুলো সব থেমে যায় আবার নতুন করে শুরু করতে 
হয় । আবার কাঠ খড় পোড়াতে হয়।
এবার শিখা বিছানায় গা এলিয়ে দিল। ভাবতে লাগলো সে আছে সব সময় তার ভালোবাসার আঙ্গিনায় এ কথাটা যেন সে মনে রাখে। ভালোবাসার স্বপ্নচূড়ায় সেই ভাবনা গুলোকে শিখা জমিয়ে রেখেছে। যেদিন তাদের এই ভালোবাসার পরিণতি লাভ করবে সেদিন সে তার জমানো যত টুকরো টুকরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস সবগুলোকে সে সঙ্গে উপহার দেবে। শুধু এটুকু জেনে রাখ যেন।
আজ শিখার মনে লেগেছে বসন্ত স্পর্শ। তাই কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ে
': এই না হলে বসন্ত কিসের
দোলা চাই অভ্যন্তরে,
মনের ভিতর জুড়ে
আরো এক মনের মর্মর।'
সত্যিই তাই আজ শিখার মনের মর্মরে লেগেছে দোলা কল্যান  বসন্তে।"
আজ গানের সুরে তাই বলতে ইচ্ছে করছে 'তুমি পাহাড় হলে/ ,আমি 
সবুজ ।তুমি অরণ্য হলে, /আমি
 পাখি ।আকাশ হলে/আমি শঙ্খচিল। তুমি শ্রাবণ হলে/আমি শ্রাবণ ঢল।
 তুমি বন্যা হলে /আমি সুনীল…'
আজকের দুমুঠো বিকেল এর ভালোবাসার স্পর্শ পরতে পরতে জড়িয়ে শিখা চলে যায় ঘুমের দেশে।
ও কল্যাণের হাতির সঙ্গে শিকার হাত যখন স্পর্শ করেছিল সেখানে নিজের মধ্যে ছিল না যেন বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল। উষ্ণতার পারদ চরছিল দ্রুত হারে।
কল্যাণ এক হাত দিয়ে শিখাকে কাছে টেনে নেয় একেবারে বুকের কাছে। এই প্রথম কোনো পুরুষের বুকে মাথা রেখে ছিল শিখা। হয় হয় পরিণতিটা শেষ পর্যন্ত যেন পায় ভালোবাসার স্পর্শ পরতে পরতে নিয়ে সে বাকি জীবনটা কাটিয়ে যেতে চায়। আর দিব্যেন্দুর বেখেয়ালি ভাবনাগুলোকে সে পানিতে ভাসিয়ে দিতে চাই নদীর দুরন্ত স্রোতে।

কবি মমতা রায়চৌধুরীর এই সময়ের কবিতা





ভালোবাসার মন্ত্র

(সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কবিতা)
 
মমতা রায়চৌধুরী


তুমি ঘুমোচ্ছ।
তাই
আমি তোমার চোখের ওপর 
আলতো চুমু এঁকে দিলাম।
ভালোবাসার শেষ চুমু।
কেমন অবাক হচ্ছো না?
কি জানি আবার তোমাকে এই ভালবাসায় ,আদরে ভরিয়ে দিতে পারব কিনা?
হয়তো বা পারব ,
হয়তো বা না।
তবুও বুকের ভেতরে জাগে আশা।
কিন্তু আঁতকে দেখি
আমার ডান পাশে
বারুদে ভরা বিষাক্ত বাতাস,
রক্তাক্ত শরীর,
আমার বাঁ পাশে
ছিন্নভিন্ন লাশ,
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এদিক-ওদিক
এ যেন এক মৃত্যু উপত্যকা।
তার মাঝে তোমার ভালোবাসা বুকে 
তুমি জাগার আগেই বেরিয়েছি।
তুমি ঘুমাও।
তুমি ঘুমাও প্রিয়তমা।
আমার মাতৃভূমি ওপর
সাম্রাজ্যবাদী লোভী নেকড়ে
ফেলেছে হিংস্র দৃষ্টি ।
আমাকে যেতে হবে।
আমাকে যেতে হবে 
আমার মায়ের জন্য,
তোমার জন্য ,সবার জন্য।
চারিদিকে ছড়ানো-ছিটানো 
কাঠ কয়লা,দোমড়ানো-মোচড়ানো।

 আর রক্তাক্ত দাগে দেখছি
  তোমার মুখে চাঁদের আলো।
বিষন্নতা ,অন্ধকার আর
নেকড়ের থাবার অনেক দূরে।
তবুও কেন বোঝে না এরা?
অস্ত্রের ঝনঝনানি ,বারুদের 
 উল্লাসে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে
চলে ফন্দিবাজ যুদ্ধবাজী।
অথচ
ছোট্ট শিশু চায় না যুদ্ধ।
 তার আদুড় গা শৈশব আঁকড়ে
  হাতছানি দেয় দুচোখ ভরে,
সুন্দর পৃথিবীর গন্ধ নিতে।
আমি বীভৎস অবস্থাতেও
তোমার ঘুমন্ত মুখের
নিষ্পাপ শিশুর সৌন্দর্য
অনুরণিত করি রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

কবি মহুয়া চক্রবর্তীর কবিতা





ফেরারী মন
মহুয়া চক্রবর্তী


হয়তো কাল প্রভাতের আলোয় 
আমি আর থাকবো না 
পৃথিবীর কোথাও কোন ক্ষণে
রয়ে যাবে আকাশের চাঁদ সূর্য ধ্রুবতারা
আর হবেনা কোনদিন আমার 
তোমাদের মাঝে ফেরা।

যদি হঠাৎ কখনো কোনদিন মনে পরে আমায়
পাবে আমায় সেই তারাদের ভিড়ে
প্রভাতের প্রথম আলো হয়ে ছুঁয়ে যাবো তোমায়
আবার কখনো চাঁদনী রাতে জোছনা হয়ে
 আসবো তোমারই নীড়ে।

 গ্রীস্মের সেই তপ্ত দুপুরে 
 তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে বসবে গাছের ছায়ায়
আমি তখন শীতল বাতাস হয়ে তোমায় জড়াবো ফেলে আসা স্মৃতির মায়ায়।

তুমি কি মনে রাখবে আমায় 
হয়তো একটু একটু করে মুছে যাবে সব সময়ের তাড়ায়।
জীবনের সব স্বপ্ন সব আসা তোমার বাড়ির আঙিনায় গেলাম ফেলে 
তুলসী তলার প্রদীপ হয়ে জলবো আমি 
যদি কখনো তোমার দেখা
মেলে।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬৮




ধারাবাহিক গল্প


শায়লা শিহাব কথন 

অলিখিত শর্ত (পর্ব ৬৮)

শামীমা আহমেদ 



বিকেলে শিহাবের চায়ের দাওয়াত পেয়ে শায়লার মনে অন্যরকম একটা ভালো লাগার অনুভুতি হলো।  যেন এক পশলা বাতাস ছুঁয়ে গেলো ! শিহাবের সাথে কথা হওয়ার পর থেকে শায়লার দু'চোখের পাতা আর এক হয়নি। বাকী সময়টা সে জেগে জেগেই ঘুমালো।আর  বারবার  দেয়ালে বড় ঘড়িটার দিকে তার চোখ পড়ছিল।সেকেন্ডের কাঁটার একটা একটা করে ঘরের চলন আর তার ভেতরে শিহাবকে দেখার আনন্দে একটু একটু করে এগিয়ে চলা। হঠাৎ করে এমন প্রাপ্তি ভেতরটায় কেমন যেন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো! শায়লা ভেবে নিলো,সে আজ  চিকন জরি পাড়ের সেই কালো কোটা শাড়িটি পরবে।শাড়িটার বুনন খুবই হালকা।পরলে মনে হয় পাখির পালকের মত অনুভুতি। আর শাড়িটায় শায়লাকে বেশ উজ্জ্বলও দেখায়।যদিও শিহাবের পাশে তাকে একটু অনুজ্জ্বলই লাগে। অবশ্য এ কথা শুনলে শিহাব ভীষণ রেগে যায়। যদিও শায়লা নিজেকে বুঝে কিন্তু তবুও শায়লা লক্ষ্য করেছে শাড়ি পরলেই তার দিকে শিহাবের যেন  সপ্রতিভ একটা দৃষ্টি ! 

চারটার দিকে শায়লা বিছানা ছাড়লো। একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে চুল আঁচড়ে নিলো। মন চাইছে চুলটা খোলাই রাখবে আজ। শাড়িটা বের করতেই মনে পড়ে গেলো রাহাত চাকরীর প্রথম বেতন পেয়ে শায়লার জন্য শাড়িটা কিনে এনেছিল ! সেদিন শায়লার আনন্দে চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। সে ভাবলো,রাহাত এখন যেমন আচরণই করুক না কেন তার জন্য রাহাতের ভেতরে এক গভীর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। সেটা ভাইবোনের অজানা নয়।শায়লা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে  চট করে শাড়িটা পরে নিলো। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ বসিয়ে আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে নিলো।আসলে সে নিজেকে না, শিহাবের চোখে যেন নিজেকে দেখছিল।আজ তাকে দেখে শিহাবের ভালো লাগবে তো? শায়লাকে দেখে সে কি চমকে উঠবে! শিহাব কি আজো বলবে, শায়লা তোমাকে আমি একদমই চিনতে পারিনি আজ! কালো শাড়িতে তোমার এমন মুগ্ধ করা সাজ, আমার চোখ ফেরানো দায়! এখন তোমায় একগোছা দোলনচাঁপা উপহার দিতে
মন চাইছে বলেই শিহাব তার বাইক থামিয়ে ফুল খুঁজতে থাকবে। 
শায়লা ভাবনার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এলো। সবকিছু ঠিকঠাক মত গুছিয়ে নিলো। মায়ের প্রেসক্রিপশন আর টাকা। সাথে ঘরের কিছু টুকটাক কেনাকাটাও আছে। ওষুধ কিনে একটা সুপার শপে ঢুকতে হবে। শায়লা ঘরের চাবি  হাতে নিয়ে নিলো।শিহাবকে মেসেযে জানিয়ে দিলো।আমি বেরুচ্ছি।তবে কাজ শেষ করে কল দেবো।

শায়লা দরজায় তালা লাগিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই রুহি খালা তার ঘরের দরজায় দাঁড়ানো।যেই ওৎ পেতেই ছিল।শায়লাকে একেবারে খপ করে ধরবে! শায়লা নামতে গিয়ে একটু ইতস্তত করছিল।এখুনিতো প্রশ্নের জেরার মুখে পড়তে হবে। পরক্ষণেই শায়লা নিজেকে শক্ত করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। 

কোথায় যাও শায়লা ? 
এইতো খালা কালতো মা আসবে রাহাত বললো মায়ের ওষুধগুলো এনে রাখতে তাই বেরুচ্ছিলাম।
খালা  একেবারে দারুন অভিভাবক হয়ে বললেন, নাকি সন্দেহের বশেই বললেন, ওষুধ আনতে তোমার যাইতে হইবো ক্যান? তোমার খালু এখন আছরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাইবো।তারে ট্যাকা আর প্রেসক্রিপশনটা দিয়া দাও ওষুধ আইনা দিবো। শায়লা ভাবলো এতো আসলে সাহায্য না,শায়লাকে গৃহবন্দী রাখার পাঁয়তারা। শায়লাও তার বুদ্ধি খাটিয়ে বললো অবশ্যই খালা এই নেন মায়ের প্রেসক্রিপশন আর এইযে টাকা।শায়লা ব্যাগ থেকে এসব বের করে দিলো।শুধু বললো খালুজি যেন ওষুধের মেয়াদের তারিখ ভালো করে দেখে আনেন। শায়লাকে ফেরাতে পেরে রুহি খালা এক তৃপ্তির হাসি দিতেই শায়লা বললো, তবে খালা আমার নিজের কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা আছে।আমাকে যেতেই হবে।বলেই শায়লা গটগট করে বেরিয়ে এলো।রুহি খালা শায়লার কর্মকান্ডে রীতিমতো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো!রুহি খালা ভাবলেন,শায়লার আজকাল অনেক পরিবর্তন। সে আর সেই আগের মত বোকাসোকা মেয়েটি নেই।খুবই চালাক হয়ে গেছে নয়তো কেমন করে সে তাকে বোকা বানালো !

শায়লা মেইনগেটের বাইরে এসে একটা রিকশা ডাকলো আর ভেবে নিলো সময় যখন পাওয়া গেলো আজ শিহাবের জন্য একটা উপহার কিনবে।শায়লা ভাবলো যেহেতু  সে আজ শিহাবের বাসার অতিথি তাই সে কিছুতেই খালি হাতে যাবে না।সে ট্রাস্ট ফ্যামিলি নীডস'এর দিকে রিকশাওয়ালাকে এগিয়ে যেতে বললো।

শিহাব খুব দ্রুতই হাতের কাজগুলো সেরে নিলো। অফিস এসিস্ট্যান্ট ছেলেটা, কবিরকে 
সব বুঝিয়ে দিয়ে বেরুনোর জন্য নিজেকে তৈরি করে নিলো। শায়লাকে নিয়ে আজ খুব সুন্দর একটা বিকেল কাটতে যাচ্ছে ! শিহাবের মন আনন্দে নেচে উঠলো!সে শায়লার ফোন কলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো।বারবার মোবাইল স্ক্রিনে চোখ যাচ্ছিল। এইটুকু সময়ের ব্যবধান তবুও খুবি দীর্ঘ লাগছে। ওয়াশরুমের আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো।আয়নায় চোখ পড়তেই নিজের দিকে যেন নিজেই প্রশ্ন রাখল।শিহাব তুমি যা করছো তা কি ঠিক হচ্ছে ? কেন নিজের মনকে  শায়লার দিকে এতটা নিয়ে যাচ্ছো ? শিহাব এর কোন উত্তর দিতে পারছিল না।হঠাৎই শায়লার মুখচ্ছবি মনের পর্দায় ভেসে উঠলো। শিহাব তার কাছেই প্রশ্নটা রাখলো। 

শায়লা বলতে পারো আসলেই আমাদের গন্তব্য কোথায় ? শায়লা যেন কথা বলে উঠলো, তোমার আমার গন্তব্য এক। দুজনেরই এক ঠিকানার দিকে যাত্রা।আর সেটা ভালোবাসার ছোট্ট নীড়ের দরজায় প্রবেশের অপেক্ষায়। শিহাব যেন একটু আশ্বস্ত হলো।অফিস ওয়াশরুমে রাখা 'পয়জন'স্প্রে সারা গায়ে স্প্রে করে নিলো।এটা তার খুবই প্রিয় সুগন্ধি। অপূর্ব সুবাসের মোহময়তায় মনে হলো যেন শায়লার হাতের ছোঁয়া পেলো!শিহাব মনে মনে ভাবলো শায়লা আজ তার বাসায় প্রথমবারের মত আসছে। শায়লার জন্য একটা উপহার কিনে নিতে হবে। বলেই শিহাব ঘড়ি দেখলো। শিহাব ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই শায়লার মেসেজ এলো।শায়লা বেরুচ্ছে। শিহাব নিজেও মানসিকভাবে তৈরি হয়ে নিলো। মোবাইলে একটা উপহারের অর্ডার প্লেস করলো। বাসার এডড্রেস জানিয়ে দিলো। বিকাশ পেমেন্ট করে বাইকের চাবি আর সানগ্লাস নিয়ে বেরুনোর জন্য উদ্যত হলো। কবির সালাম দিতেই তাকে একশত টাকাত একটা নোট এগিয়ে দিয়ে বললোতুমি বিকেলে নাস্তা করে নিও। আর ভালো মত সবকিছু গুছিয়ে লকআপ করে রাখবে। কাল সকালে চলে আসবে। 

মোবাইলে শায়লার মেসেজ এলো,আমি কোথায় দাঁড়াবো ? 
শিহাবেরভেখন মেসেজ লেখার ইচ্ছে নেই।সে শায়লাকে কল দিলো,তুমি কোথায় আছো ?
এইতো বাসার কাছেই।
শিহাব হিসেব করে নিলো,তবে কাবাব ফ্যাক্টরির অপজিটে ফুলের দোকানগুলোর কাছে দাঁড়ালে শিহাব সহজেই তাকে বাইকে তুলে নিতে পারবে।
শায়লা শিহাবের কথামত ফ্যামিলি নীডস থেকে বেরিয়ে ফুলের দোকানগুলোর কাছে রিকশা থামালো। আহ! চত্ত্বরটা যেন ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে! শায়লা শিহাবের অপেক্ষায় রইল।হাতে উপহারের ব্যাগটিকে পরম ভালবাসার আগলে রইল।

দুমিনিটের মধ্যেই শিহাবের বাইক শায়লার কাছে এসে থামল।যদিও হেলমেট থাকায় বুঝা যাচ্ছিল না আসলে  বাইকের চালকটি কে? সানগ্লাস চোখে একটা লাল সাদা  প্রিন্টেড শার্টে শিহাবকে খুব সুন্দর লাগছিল।হেলমেট খুলতেই  শায়লার চোখ আনন্দে নেচে উঠলো! বাইক স্টার্ট রেখেই শিহাব বললো চলে আসো শায়লা।আজ আর শায়লার মনে কোন বাধাই কাজ করলো না।সে দ্রুতই উঠে শিহাবের পিছনে বেসে নিলো।শিহাব হেলমেট ঠিক করে একটু দূর এগিয়ে গিয়ে বাইক থামালো। "টেইস্টি ট্রিট" ফাস্ট ফুডের শপে বাইক থামিয়ে শায়লা রেখে শিহাব নিজেই শপে ঢুকলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে কিছু খাবার নিয়ে বেরিয়ে এলো।সরি শায়লা তোমাকে অপেক্ষায় রাখলাম।
কিছু হবে না,আমি ঠিক আছি।
চায়ের সাথে একটু টা নিয়ে এলাম।বলেই শিহাব দারুণ মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো
শায়লা অবাক হয়ে সেই হাসির মাঝে হারিয়ে গেলো!

শিহাব বাইক স্টার্ট দিলো।সেক্টর তের নম্বর এর ব্রীজ পেরিয়ে  সোজা এগিয়ে বাইক যেন হাওয়ায় ভেসে চললো।শায়লার বহু চেনা পথ 
আজ শিহাবের সংস্পর্শে অন্যরকম ভালোলাগায় আবেশিত করলো।

বাইক লুবানা হাসপাতালের পিছনের রোডে ঢুকে  একটু এগিতেই শিহাবের বাইক থামলো। দারোয়ান গেইট খুলতেই বাইক গ্যারাজে ঢুকল।দুজনে নামতেই সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে একটা লোক এগিয়ে
এলো।হাতে বিশাল এক ফ্লাওয়ার বু'কে!
শিহাব সেট এগিয়ে নিয়ে শায়লার হাতে দিলো।শায়লা ভীষণভাবে চমকে গেলো!

শিহাব বললো,শায়লা তোমাকে আমি ভালবাসি।আমাদের গৃহে তোমার আগমনে স্বাগতম জানাই।শায়লা ফুলের বু'কেটি হাতে নিয়ে একদৃষ্টে শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইল।চোখে মুখে বিস্ময় মিশ্রিত প্রশ্ন খেলে গেলো।
শিহাব তা ভালোভাবেই বুঝে নিলো। শায়লাকে আশ্বস্ত করে বললো,হ্যা, ঠিকই শুনেছো। শিহাব শায়লাকে নিয়ে লিফটের কাছে এগিয়ে গেলো।


চলবে....

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা




লজ্জা
রুকসানা রহমান 

সাগর  টেনে নিলো আচমকা এসে, 
ছুঁয়ে দিলো নোনা  
জল ওষ্ঠে।
টেনে নিলো অতল গভীরে।
স্বপ্নরা পাহাড়ের পাদদেশে অস্হির,
লজ্জা ঢাকলো মেঘ
তার ছায়ায়
বিনম্র শ্রদ্বায় !

Poet Suparna Chatterjee 's poem




Festival of Colour

Mrs.Suparna Chatterjee


Significance of colour means
A beautiful loving heart.
Which is very rare
And the most precious.
Significance of colour means
Welcoming Spring 
At the end of Winter.
Significance of colour means
A couple of lovers’ 
Madness of love.
Significance of colour means
Falling of dry leaves,
And coming out with green leaves instead of it.
Significance of colour means
Constant pain of a broken heart.
Significance of colour means
Endless waiting for a distant love.
Significance of the “Festival of Colour” means,
To enjoy the day 
In a different way.
By forgetting every wounds 
 Learn to love all the people of the beloved Earth.