১৭ নভেম্বর ২০২১

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"১৫

 স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শামীমা আহমেদ'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "অলিখিত শর্ত"




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
                                              (পর্ব ১৫)
   শামীমা আহমেদ 

রাতের খাবারের টেবিলে ভা,ইবোন শায়লা আর রাহাতের  বেশ চুটিয়ে আড্ডা হলো।রাহাতের বন্ধুরা কে কোথায় কী করছে? কে কী হতে চেয়ে হতে পারেনি, সহপাঠী মেয়েদের কার কোথায় বিয়ে হয়েছে, কে মেয়ে খুঁজছে, কে দেশের প্রতি হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমালো! এমনি নানান গল্প শেষে  শায়লা সাড়ে দশটার দিকে নিজের ঘরে এলো।প্রতিরাতে ঘুমাতে যাবার আগে শায়লা নিজেকে একটু ফ্রেশ করে নেয়।ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখটা ধুয়ে নেয়া, দাঁত ব্রাশ করা, খুব ভালো করে হাত, পা ধুয়ে নেয়া। ছোটবেলায় সারাদিন খেলাধুলা ছুটোছুটির কারণে  মা এই পা ধুয়ে ঘুমানোর অভ্যাসটা করেছেন।শায়লা নিজেও দেখেছে এতে বেশ ভালোই লাগে। ঘুমটা ভালো হয়।একটা  হালকা  ঢিলেঢালা পোশাক পরে নেয়া,চুলে ব্রাশ করা, শরীরের ক্লান্তি দূর করে দেয়।সবশেষে ময়শ্চারাইজার লাগানো।এতে ত্বকের আদ্রর্তা ঠিক থাকে।ত্বক রুক্ষ হয়না। কখনো মেকআপের জন্য  নয়, নিজের সৌন্দর্যটা ধরে রাখতে শায়লার একটু আধটু পার্লারে যাওয়া হয়। শায়লার গায়ের রঙটা শ্যামলা হলেও তার ছিপছিপে গড়নটা অনেকের কাছেই ঈর্ষার কারণ। শায়লা আয়নায় নিজেকে একটু দেখে নিলো। আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে লজ্জাবোধ হচ্ছিল।
টুং শব্দে মেসেজ এলো! শায়লা মোবাইলটার দিকে এগিয়ে গেলো।
হু, শিহাব সাহেবের মেসেজ।
---এইতো ফিরলাম!
শায়লা  বেশ সহজভাবেই লিখে ফেললো,
এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকলেন?
বন্ধুদের সাথে গল্প আড্ডায় সময় কোনদিন দিয়ে কেটে গেছে বুঝিনি।
সবসময়ই কি এমনটা করেন?
আরে নাহ! মাঝে মাঝে।আচ্ছা ফ্রি হয়ে কথা বলবো। 
শায়লা বললো,  ঠিক আছে, খেয়ে নিন।
হু, ফ্রেশ হয়ে আভেনে খাবার গরম দিচ্ছি।
বলেই নিশ্চুপ হলেন।
অচেনা এই মানুষটার জন্য শায়লার মনটা হু হু করে উঠলো!কেমন যেন মায়া জন্মালো। মনে হচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে টেবিলে  খাবার সাজিয়ে দিয়ে আসি !শায়লা নিজেকে মিলিয়ে নিল ভাবনার সাথে।
ইস! যেখানে বাঙালি মেয়েরা  না খেয়ে থেকে স্বামীর  ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকে,
নিজে হাতে খাবার বেড়ে খাওয়ায়,নিজে ভালোটা না খেয়ে স্বামীর প্লেটে তুলে দেয়, সেখানে তার এমন কেউ নেই,নিজের হাতেই সব করতে হচ্ছে? সে না হয় অনেক ছেলেরা তা করতে পারে কিন্তু ঘরের এই শূন্যতাতো কিছুতে পূরণ হওয়ার নয়।কেমন করে থাকে একা একা? নাকি কারো সাথে আবার প্রেম ট্রেম চলছে? তাই কি বউ চলে গেলো নাকি? আজকালতো পরকীয়ায় সমাজ ভরে গেছে। সত্যিকারের প্রেমের সংজ্ঞা বদলে গেছে। আর ব্রেকআপও খুবই  সাধারণ ঘটনা। এ যুগের মেয়েরা খুব সাহসী। 
নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারে। শায়লা বুঝে না সে কোন যুগে পড়েছে? কেন সে নিজের মতামতটা শক্ত করে বলতে পারে না?
শিহাব আর কথা বাড়ায়নি।হয়তো খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত হলো।শায়লা কী তার জন্য অপেক্ষা করবে? 
কিন্তু কেনই বা অপেক্ষা করবে? আবার ভাবল, আহা! বেচারা ঘরে ফিরেই আমাকে জানিয়েছে।তাহলে নিশ্চয়ই আসতে পথে আমার কথা ভেবেছে।
মনের ভেতর কোন সন্দেহ রেখে শায়লা কখনো শিহাবকে কোন প্রশ্ন করেনি।পাছে আবার তার কাছে না ছোট  হতে হয়!
লোকটিতো তার উপর আস্থা রাখতে চাইছে।
একজন মনের কথা বলবার বন্ধু বা সঙ্গী সবারই আজীবনের চাওয়া।
শায়লা ভাবনা ক্রমেই ডালপালা গজাচ্ছে।তার সম্পর্কে অনেককিছু জানতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কখনো জানা হচ্ছে না উনি কোথায় থাকেন, কী করেন? কত মানুষ কত ধরনের অবৈধ ব্যবসা করে। তেমন কিছুতে আবার জড়িত নয়তো? একা এভাবে একটা ফ্ল্যাটে থাকেন,বিষয়টি নিয়ে শায়লা বেশ চিন্তিত হলো।
শায়লার মনে যত ভয় উঁকি দিচ্ছে, সে নিজের মনে নিজেই তা খন্ডন করছে।শায়লা বুঝতে পারছে না কেন এমন করে সম্পর্কটা গাঢ় হচ্ছে। সেতো ভেবে নিয়েছিল কোন ভাবেই দূর্বল হওয়া যাবে না। তবে কেন এমন হচ্ছে?
নানান দ্বিধা দ্বন্দ্ব রেখেই সময় এগিয়ে চললো।
শিহাব নিজের হাতেই খাবার টেবিল সাজিয়ে নিল।তেমন খুব কিছুর আয়োজন নয়।এক প্লেটেই ভাত,মুরগির তরকারী আর বুটের ডাল সাজিয়ে আভেনে দুই মিনিটের জন্য ঢুকিয়ে দিল।রেফ্রিজারেটর  থেকে ঠান্ডা পানির  ক্যানটা বের করে নিল।নিজের হাতে মগটা ধুয়ে খাবার নিয়ে বসলো।শিহাব বাইরে নিজেকে যতই ব্যস্ত রাখলো ভেতরে কেমন যেন একটা একাকীত্ব বোধ করলো। শিহাবের চোখ দুটো জলে ভরে গেলো।খুব ইচ্ছা হচ্ছিল শায়লাকে একটা কল দিয়ে কথা বলতে। শায়লার সাথে পরিচয়ের পর থেকে প্রায়ই শিহাবের এমনটা হচ্ছে।তবে কি অবচেতন মনে সে শায়লার উপস্থিতি কামনা করছে।শায়লার সহজ সরলভাবে কথা বলা শিহাবকে খুব আবেগী করে তুলছে।
আজ বন্ধু মহলে গল্প আড্ডায় কিছুতেই যেনো তার মন বসছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল সে কখন বাসায় ফিরবে আর শায়লাকে মেসেজ করবে।কয়েকজন বন্ধু তার এই অস্থিরতা ভাবটা টেরও পেয়েছে।বেশ ঠাট্টাও করছিল।কেন কার জন্যে এই অস্থিরতা? কিন্তু বন্ধুরা শিহাবের সবটাই জানে তাই কখনো ঠাট্টাচ্ছলে মনে আঘাত দিয়ে কিছু বলে না। শিহাবের ব্যবসার এই বন্ধুরা খুবই আন্তরিকভাবে তার সাথে মেশে।
এমনি আড্ডায় কয়েক কাপ চা ভেতরে চালান হয়ে যায় কিন্তু আজ যেন এক কাপই ফুরাতে চাইছে না।কিন্তু আড্ডার মধ্যমণি শিহাব চলে এলে বন্ধুরা মন খারাপ করবে।তাইতো সময়টা কোনভাবে পার করে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে  সোজা বাসায় ফিরে আসা।
শিহাব ভাত খাচ্ছিল আর ঘড়ি দেখছিল।নাহ! ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। এখন নক দেয়াটা অভদ্রতা  হবে। তাইতো খাবার টেবিল গুছিয়ে বিছানায় চলে এলো। আজ মোবাইলে গান শুনে রাতটা কাটিয়ে দিবে।
আহ! রিশতিনা,তুমি আমার জীবনে এক ধূমকেতু হয়ে এলে আর এভাবে হারিয়ে গেলে? মনের ভেতর এমনি অভিমান পুষে রেখেছে গত তিনটি বছর । 
হঠাৎ করে শায়লা এফবির প্রোফাইলের মুখটা ভেসে উঠল!  শিহাব বুঝতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে?শায়লার মায়া ভরা মুখটায় কেমন যেন খুব আপন করে টানে।
তাইতো শিহাব নিয়মিত শায়লার খোঁজ খবর নিচ্ছে।নিজের চলাচল জানাচ্ছে।কখন কী করছে, যতটুকু জানানো যায় বা শেয়ার করা যায় তা করছে। শায়লাও তা জেনে রাখছে।
নিজেও টুকটাক মেসেজ দিয়ে রাখছে যেন একটা যোগাযোগ সর্বক্ষণ থাকে।


                                                                                                       চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much