চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"
বনফুল
( ২১ তম পর্ব )
পলাশ মাথা নিচু করে বসে আছে ওনাদের সামনে। পলাশকে খানিকটা লজ্জা পেতে দেখে ওয়াজেদ সাহেব প্রশ্ন করলো রেজাল্টের পর কি করবে, কিছু ভেবেছো? পলাশ উত্তর দিলো জ্বি, না আঙ্কেল এখনো কিছু ভাবিনি,ওটা রেজাল্টের উপর নির্ভর করছে, যদি ভালো হয় ইচ্ছে আছে বাহিরের কোনো ভার্সিটি থেকে এম,বি,এ,করবো।
জুঁইয়ের মা মনোয়ারা বেগম বুঝতে পারছে ছেলে মেয়েরা একটু গল্পগুজব করবে.....তাই নিজের স্বামীকে বললেন তুমি শাওয়ার করে এসো,
আমি টেবিলে খাবার পরিবেশন করছি,এই বলে ওদের একটু সুযোগ করে দিলেন।
বাবা-মা চলে যেতেই জুঁই পলাশ আর সৈকতকে উদ্দেশ্য করে বললো এ হচ্ছে আমার বান্ধবী অহনা, আর অহনাকে বললো জুঁই ও হচ্ছে...
কথা শেষ হবার আগেই অহনা বলে বসলো, বুঝেছি তোর ফাগুনের....
পলাশ একটু লজ্জা পেলো।অহনা পলাশ কে উদ্দেশ্য করে বললো, তা পলাশ বাবু,মৌ জমেছে তো?পলাশ একদম চুপ করে আছে, বেশ মজা পাচ্ছে, কিন্তু মুখে কিছু বলছে না।
জুঁই আবার বললো, আর উনি হচ্ছেন পলাশের বন্ধু সৈকত ভাই।
এবারে সৈকত মুখ খুললো,মৌ জমেছে বলেই না আজ আমার, আপনার নিমন্ত্রণ।
অহনাও ওদের ইশারায় সালাম জানালো। তারপর অহনা পলাশকে বললো ভাইয়া আমার দুর্ভাগ্য ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়ায় আমাদের আলাদা হতে হলো। পলাশ বললো জুঁই ও তুমি মাঝেমধ্যে একটু সময় বের করে একসাথে হবে সমস্যা কি? অহনা বললো সেতো হবো কিন্তু প্রতিদিন তো আর দেখা হচ্ছে না।
কথার মাঝখানে সৈকত ঢুকে বললো কি আর করা যাবে, বাস্তবতা কে মেনে নিতেই হবে।
সৈকত কথা বলতেই, এবারে অহনা সৈকত কে ঠেস দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললো
সৈকত দেখতে পাচ্ছি কিন্তু সামনে ঊর্মিমালা কই?
দেখতে পেলাম না তো!
সৈকত হেসে উঠলো।
জুঁই বললো,হাসলেন কেন ভাইয়া?
সৈকত বললো, ওনার কথা শুনে।
আমার কথা শুনে? কেন?
সব কিছু কি চোখে দেখা যায়, মন দিয়েও তো কিছু কিছু জিনিস দেখতে হয়,সৈকত জবাব দেয়।
অহনা,হুম্ম বলে চুপ করে যায়।
সৈকত আবার বলে, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, তবে তার পানি লোনা না মিঠা জানিনা।
এবারে জুঁই জবাব দিলো,পরিক্ষা প্রার্থনীয়।
সবাই হো হো হো করে হেসে ফেললো।
একটু পরে, সৈকত পলাশ ও জুঁইকে একটু সুযোগ করে দেওয়ার কায়দায় বললো জুঁই আমি কি তোমাদের বাড়ীর ভিতর ঘুরে দেখতে পারি? জুঁই বললো,ওহ্,শিওর ভাইয়া,অহনাকে উদ্দেশ্য করে জুঁই বললো, তুই কি সৈকত ভাইয়া কে নিয়ে বাড়ি টা ঘুরিয়ে দেখাতে পারবি? অহনা বললো আপনি কি আমার সাথে যাবেন? সৈকত বললো আপনি সহযোগিতা করবেন তাতে সমস্যা কোথায়?
অহনা বললো জ্বি ভাইয়া চলুন তাহলে, ঘুরে দেখবেন...। ওরা দুজন চলে যেতেই জুঁই পলাশের পাশে বসলো, পলাশ সুযোগ বুঝে, জুঁই আজ তোমাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে...
জুঁই প্রশ্ন করলো যেমন?
ইস এতো কিছু বলা যায়! অন্যদিন থেকে বেশি এগ্রেসিভ লাগছে........
জুঁই বললো, তাই বুঝি!তোমাকেও আজ বেশ বর বর মনে হচ্ছে।
পলাশ বললো, বর বর না-কি বর্বর?
বলেই হাহাহা হাহাহা হাহাহা হেসে উঠলো ।
জুঁই বললো,হুমম,বুঝেছি রসিক নাগর।
তুমি কি আমার রুম,আর ছাদ-বাগান দেখবে না ? এই বলে পলাশের হাত ধরে বললো চলো দেখবে,
প্রথমে ওর রুমে নিয়ে গেল। পলাশ অবাক হয়ে দেখছে আর ভাবছে জুঁই কতো শানশৌকতে বড় হয়েছে, আমি তা দিতে পারবো তো.... এই ভেবে একটু আনমনা হয়ে যায়, জুঁই পলাশের হাত ধরে বললো কি হলো তোমার! কি ভাবছো?
জুঁই হাত ধরতেই পলাশ বাস্তবে ফিরে এলো, জুঁইয়ের শরীরের পারফিউমের একটা আকর্ষণীয় সুবাস অনুভব করলো.....।
জুঁই এবারে পলাশের হাতে একটা আলতো চাপ দিতেই
পলাশ স্থবির হয়ে গেলো। জুঁই পলাশের এই অবস্থা টা খুব এনজয় করতে করতে পলাশের বুকে তার মাথা টা রেখে বললো, কি হলো, চুপ করে আছো কেন?কিছু বলো?
পলাশ মন্ত্রমুগ্ধ বালকের মতো জুঁই য়ের দুটো গালে হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে মাথাটা চেপে ধরে বললো, জুঁই, আমি কি....
কথা শেষ না হতেই
মুহূর্তে জুঁই পলাশ কে জড়িয়ে ধরে বলে, হ্যাঁ তুমি, তুমি আমার, শুধু ই আমার।পলাশ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না,জুঁইয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো জুঁই আমি তোমাকে এতো সাচ্ছন্দ্য দিতে পারবো তো?
জুঁই আরো জোরে চেপে জড়িয়ে ধরতেই,পলাশ ভয় পেলো,বললো ছাড়ো,কেউ দেখে ফেলবে।
জুঁই বললো, আমার ঘরে কেউ আসবে না। তুমি যে আমার অন্তরের সম্পদ,বাইরের এই বৈভব তার কাছে কিচ্ছু না।এইসব ভেবে তোমার মন খারাপ হচ্ছিল!
পলাশ জুঁইয়ের মাথায়, ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললো হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি? জুঁই এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো এসব ভাবনা ছেড়ে এখন চলো বাগান দেখবে......
ছাদে উঠে পলাশ আরো আশ্চর্য হলো কি রুচিশীল জুঁই.... পলাশ নিজের অজান্তেই বলে উঠলো খুব সুন্দর তোমার বাগান, আসলে তুমি নিজেই যে আরো বেশি সুন্দর।
এরই মধ্যে ময়না ছাদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বললো আপা, খালাম্মা বলছেন খাবার টেবিলে আসার জন্য।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much