কালপুরুষ
এ এস এম হোসেন
আমি সজল আঁখি তে জল সঞ্চারি
দুঃখ পুষি বলে,
আমি অন্ত্য যাত্রী শেষ প্রহরে
স্বপন বোনা ছলে।
আমি হাসির মাঝে লুকাই প্রাণে
কান্নার উতরোল,
আমি স্বর্গ বেঁচি নরক কিনি
বিষাদ বিহ্বল দোল।
আমি ঘুমের ভানে বেঘুম চাতক
জাগ্রত মহাকাল,
আমি সাগর জলে জাহাজ ডুবাই
শূন্যে উড়াই পাল।
আমি ফুলসজ্জায় রক্তে রাঙাই
কুমারী বধুর হাত,
আমি ঠাকুর ঘরে সিঁদকাটা চোর
দুর্দম উৎপাত।
আমি ফুলের মাঝে হুলের আঘাত
ভুলের নটরাজ,
আমি শান্ত শুভ্র শরৎ মেঘে
আকাশ ফাটা বাজ।
আমি ছদ্মবেশী পদ্মগোখরো
এক ছোবলে ছবি,
আমি মরণ পাড়ে স্মরণ ভোলা
চরণ তোলা কবি।
আমি মিত্রের সাথে প্রতিচিত্র গড়ি
শত্রুকে বধি ঘাতকে,
আমি আমার আমিতে সুর সন্ন্যাসী
সুষুপ্ত জাত-জাতকে।
আমি আশের মাঝে নাশের নাগর
স্বর্গ খেকো ভুক,
আমি ধ্বংস লীলার বংশ ক্রমিক
ইসরাফিলের মুখ।
আমি আমার আমিতে ক্ষত-বিক্ষত
বক্ষে গাঁথা ত্রিশূল,
আমি মহাবিশ্বের মহা প্রয়োজন
তৃণমূল আমি উন্মূল।
আমি বিশ্বাসে রচি বিস্ময় ঘেরা
বিসৃত এই জনপদ,
আমি দুর্জয় চির দুর্নয় আমি
জগজ্জয়ী আমি হিম্মৎ।
আমি আকাশের গায়ে স্বাধীনতা লিখি
তড়িৎ আলোকে ঝলকে,
আমি জন্মশোধের মৃত্যুকামী
যমদূত প্রাণ অলখে।
আমি নীরবে নিভৃতে নিত্যানন্দ
চিত্তের মাঝে হাহাকার,
আমি আপনার সুখে অসুখ তুলিয়া
সুখেরে করি ছারখার।
আমি হাসি মুখে ধরি হননের গীতি
আপনার খুশি খেয়ালে,
আমি দিগ্বিজয়ের সৃষ্টি সুখে
মানচিত্র আঁকি দেয়ালে।
আমি চলে যেতে-যেতে বলে যাই সব
অনাগত ভূতভবিষ্যৎ,
আমি সময়ের চোখে দেখিয়াছি ভেজা
রক্তে রাঙানো রাজপথ।
আমি কালের ঘড়িতে শুনিয়াছি ঐ
ক্ষুধিতের দুঃখ বিলাপে,
আমি দেখিয়াছি কাবা তওয়াফের ভীড়ে
পুঁজিবাদে ঘেরা গিলাফে।
আমি দেখিয়াছি জল সকরুণ চোখ
অসহায় ডাকে স্রষ্টায়,
আমি পথশিশুদের বেওয়ারিশ লাশ
রুটি চুরি যাওয়া দোষটায়।
আমি দুঃশাসনের দুর্বিপাকে
দন্ডিত রাজ ফেরারি,
আমি অপশক্তির অবগুণ্ঠনে
পথের দিশা-দিয়ারি।
আমি ধুলোবালি জমা সংবিধানে
বিবেক নামের ছেলেটি,
আমি আদর্শচ্যুত স্বাধীন দেশের
শহীদের মমি করোটি।
আমি অরুণ লোকের মহা তরুণে
ছুটে চলি দিগ্ দিগন্তে,
আমি আপনার মাঝে আপনি নিখোঁজ
সকলের মাঝে অনন্তে।
আমি সকল ধর্মের ধর্ম গুরু
মানুষ ধর্মের জ্ঞাতি,
আমি বিশ্বমাতার লালিত শিশু
সকলের ভাই-ভ্রাতী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much