অলিখিত শর্ত ( ৫ম পর্ব)
শায়লা শিহাব কথন
শামীমা আহমেদ
নীচতলার রুহি খালাম্মা এসেছেন।আজ বোধহয় একটু সুস্থ বোধ করছেন।নানান ধরণের রোগের বসতি নিয়েছে তার দেহে। রোগের নাম জানতে হলে ডাক্তারী পড়ুয়ারা শুধু তাকে জিজ্ঞেস করলেই অন্তত দশটা রোগের নাম অনুভুতি,উপসর্গ সহকারে বিস্তারিতভাবে জেনে যাবে, যা সে বহন করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে।
---ধরতে গেলে সম্পর্কে তিনি এখন শায়লার চাচী শাশুড়ি।সে নিজের দুই মেয়েকে সেই কোনকালে বিয়ে দিয়ে বিদেশি জীবনে পাঠিয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ মনে করছেন।এই বাড়িতেই একে একে দুটো মেয়ের বিয়ে দেয়া। পিঠাপিঠি দুটো বোন সবেমাত্র স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে।দু'বেণী ঝুলিয়ে শায়লাদের ছাদে তখনো এক্কাদোক্কা খেলে।শায়লার থেকে বয়সে অনেক ছোট। ওদের মায়ের ধারণায় মেয়েদের বিয়ে দিতে দেরি করলে তাদের চোখমুখ ফুটে যায়।কি হতে কি হয়! আবার কোন
পছন্দের ছেলে এনে হাজির করে!কার সাথে না আবার ভেগেই যায়! তাই সে সুযোগ তার মেয়েদের তারা দেয়নি।অবশ্য খালু সেখানে একেবারেই বক্তব্যহীন।সংসারের চালিকা খালাম্মা একাই একশো।
তিনিই শায়লার জন্য বিয়ের প্রস্তাবটি আনেন।জানিয়েছিলেন তার এক দূর সম্পর্কের দেবরের ছেলে আজ প্রায় চৌদ্দ বছর হলো কানাডায় আছে। বাড়ি গাড়ি নিজের ব্যবসা সব করেছে।তাই বয়সটা কোনদিক দিয়ে বেড়ে গেছে খেয়ালই করেনি।এখন বিয়ে থা করে সংসার করায় মন দিতে চায়।বিয়ে করতে দেশে আসবে।মেয়ে খুঁজছে। তা শায়লার জন্যতো ভাবতে হয়। আর কতো ঘরে বসিয়ে রাখবেন?বয়সতো আর বসে থাকে না।
-----আসলে যখন বাড়ির মালিকের চেয়ে ভাড়াটিয়ার আর্থিক অবস্থা ভালো হয় তখন বাড়ি বয়ে এসে তারা নির্দ্বিধায় এভাবেই দু'কথা শুনিয়ে যায়।গায়ে পড়ে এইসব মহিলাদের মায়া কান্না শায়লার একেবারেই পছন্দ নয়। কিন্তু তারতো নিজের পছন্দ অপছন্দে কিছু আসবে যাবে না। তাকে ভাবতে হবে ভাইবোনের কথা। নায়লারও বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে।আর যেখানে তাকে এমন ধনী ছেলের পছন্দ! সেখানে শায়লাতো দেয়াল হয়ে থাকতে পারেনা।ওদের কথাতো ভাবতে হবে।নিজেকে পথ ছেড়ে দিতে হবে। কিছুদিন পর রাহাতের বিষয়টিও এসে যাবে। আসলে এইসব মহিলাদের অপছন্দ করলেও এরা কিন্তু সেই মাটিতে কেঁচোর মত। মাটির উর্বরতার মত সমাজের কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে।কথায় আছে না---নিন্দুকের বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো। শায়লার মায়ের চোখে মুখে এক তৃপ্তির ছায়া! শায়লাকে পাত্রস্থ করা অতি জরুরী। বয়স হয়ে যাচ্ছে। এদেশে বেশি বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেয়া যেনো রীতিমত একটা যুদ্ধক্ষেত্র। কতভাবেই না মেয়ে পক্ষকে বিনীত হতে হয়।আর মায়ের স্বস্তির কাছে শায়লার অমতে থাকা, এটা যেন শায়লার বৈশিষ্ট্যতে একেবারেই নেই।
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much