১০ নভেম্বর ২০২১

এডুকেশনাল ইকো-সিস্টেম তৈরি : সুপ্রতিম ঘোষ

সুপ্রতিম ঘোষ এর লেখা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করা




একজন ভারতীয় হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের মনের কোণে একটা স্বপ্ন ঘর করে রয়েছে, তা হলো আমাদের এই ভারতবর্ষ একদিন সুপার পাওয়ার হবে। হাঁ এই স্বপ্ন আমিও দেখি আর আমার মতো আপনিও দেখেন। কিন্তু আমাদের এটা কখনোই ভুললে চলবে না যে একটা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সুপার পাওয়ার দেশ গড়ে তোলার এই যাত্রাটা, সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে আমাদের শিক্ষা প্রণালী কি, কেমন, কতটা প্রভাব ফেলছে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের উপর। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছে -আজ যদি আমরা একটু গভীর ভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার দিকে নজর দিয়, তাহলে আমরা শুধু চাপ, হতাশা ও বিষন্নতাই খুঁজে পাবো। আজও আমাদের দেশের একাংশ পিতা মাতা এমন আছেন যিনারা নিজেরদের সর্বস্ব দিয়ে তাদের সন্তানদের হাই টেক স্কুল ও টিউশন ক্লাসে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছেন।কিন্তু তাতেও কি একজন শিক্ষার্থী এই চাপ, হতাশা ও বিষন্নতা কাটিয়ে উঠতে পারছে ?

আমাদের ধর্ম গ্রন্থ বলে - প্রকৃত শিক্ষা আমাদের মুক্তির রাস্তা দেখায়। কিন্তু আজ একজন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষকেরাও সমান ভাবে এই চাপ, হতাশা ও বিষন্নতার শিকার হচ্ছেন।কিন্তু আমরা প্রশ্ন হলো - আমরা কি এমন কোনো ব্যবস্থাপনাকে গ্রহণ করতে পারি না, যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী এই চাপ, হতাশা ও বিষন্নতা কাটিয়ে সম্পূর্ণ আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করতে করতে তাদের ভবিষৎকে নির্মাণ করতে পারে ?




 আমাদের হিউম্যান মাইন্ড সবসময় যেখানে আনন্দ রয়েছে সেখানে ছোটে। তাই একটা  শিশু মনও যে কর্মে আনন্দ রয়েছে সেই কাজটাই বার বার করতে চাই যেমন - খেলাধুলো, কার্টুন, সিনেমা, ভিডিও গেম ইত্যাদি। কিন্তু একজন শিশু যখন সে পড়তে বসে তখন আর সে সেই আনন্দ খুঁজে পাই না কারণ আনন্দদায়ক সমস্ত কিছুই ভিজ্যুয়াল আর পড়তে বসে দেখে টেক্সচুয়াল। তাই পড়তে বসে, সে চাইলেও মন বসাতে পরে না ফলে এই রকম চলতে চলতে একদিন তার ছাত্র জীবন  হতাশা ও বিষন্নতা গ্রস্ত হয়।
 একজন শিক্ষার্থী যখন বার বার লিখে, পড়ে কোনো টপিক কে মুখস্থ করেও মনে রাখতে পারে না তখন তার মন বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তার মাইন্ড  হয়তো পড়াশোনা করার জন্যে নয় ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হতাশার সৃষ্টি হয়। 
তদরূপ বিভিন্ন  ধরণের সমস্যার ( স্মৃতি ধরে রাখার সমস্যা, লেখার ও পড়ার সমস্যা, প্রেরণার অভাব, নেতিবাচক চিন্তা, মুখস্থ করতে অসুবিধা, মনোযোগের অভাব, আত্মবিশ্বাসের অভাব, শেখার সময় বিভ্রান্তি, প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না করা, পরীক্ষার উদ্বেগ, পড়ার সময় একঘেয়েমি, অলসতা, সময়ানুবর্তিতার অভাব, ইত্যাদি ) মধ্যে  দিয়ে যখন একজন শিক্ষার্থীর জীবন অতিবাহিত হয় তখন তার প্রকৃত সমাধান খুঁজে না পাওয়ার ফলে একদিন তার ছাত্র জীবন সম্পূর্ণ ভাবে চাপ, হতাশা ও বিষন্নতায় জর্জড়িত হয়ে পরে।
আমাদের ছাত্র সমাজের এই বিশাল সমস্যাকে উপলব্ধি করার পর, আমি আমার ২০ বছর বয়সেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের একটি মাধ্যম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই ।
কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল এই সমস্ত সমস্যার প্রকৃত কারণ গুলো খুঁজে বার করা অর্থাৎ কারণের কারণ খুঁজে বার করা। দীর্ঘ সময় ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর গভীর অধ্যাবসা করে ফাইনালি খুঁজে পাই সেই সমস্ত ফাঁক গুলো যার কারণে শিক্ষার্থীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রথমত :: আমরা শুধু শিখি কিভাবে লিখতে হবে আর কিভাবে পড়তে হয়। কিন্তু কিভাবে মনে রাখতে হয় সেটা আমরা কেউ শিখি না বা আমাদের শেখানো হয় না। আবার বেশির ভাগই কিভাবে লিখতে হবে আর কিভাবে পড়তে হয় সেটাও শিখিনা বা শিখানো হয় না। শুধুমাত্র বলা হয় লেখ আর পড়। 
দ্বিতীয়ত :: আমরা সবাই বিজ্ঞান পড়ি কিন্তু আমাদের পড়াশোনাতে বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করে কেউ পড়াশোনা করি না।
তৃতীয়ত :: আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা ব্যাক্তিগত লার্নিং স্টাইল রয়েছে কিন্তু আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় এমন কোনো মাধ্যম নেই, যার মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী নিজের প্রকৃতি অনুসারে, ব্যাক্তিগত লার্নিং স্টাইল অনুসারে নিজের মতো করে পড়াশোনা করতে পারে। 
চতুর্থত :: আজ আমাদের কাছে এমন কোনো গুরু বা শিক্ষক উপলব্ধ নেই যিনি ২৪/৭ ঘন্টা একজন শিক্ষার্থীর সাথে থেকে শুধুমাত্র তার পড়াশোনাকে নয় বরং তার শক্তি এবং দুর্বলতা কে জেনে, তার প্রকৃতিকে জেনে সেটাকে লালনপালন করে বিকাশ ঘটিয়ে সঠিক জায়গায় কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া চালাবে।




 আমি আমার দীর্ঘ কালীন গবেষণায়, বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদদের ও হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর গভীর অধ্যাবসার  মাধ্যমে  এই চারটে বিষয়কে আমি মূল কারন রূপে খুঁজে পেয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যদি আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে থেকে এই চারটে ফাঁককে পূরণ করতে পারি তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে এক আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ আমাদের আগামী প্রজন্মকে উপহার দিতে পারবো।       
আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে থেকে এই চারটে ফাঁককে পূরণ করতে জন্ম উত্থান হয় - পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ এবং হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে প্রিয় পার্সোনাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ''MissionAA.Com'' এর। যার উদ্দেশ্য এই চাপ, হতাশাপূর্ণ ও বোরিং শিক্ষা ব্যাবস্থাকে নির্মূল করে শিক্ষায় এক নতুন স্বাদ প্রকাশের মাধ্যমে আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করা। আমাদের ছাত্র, শিক্ষক এবং সহকর্মীদের সফল করার জন্য তাদের মধ্যেকার সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করার ও জাগিয়ে তোলার জন্য  সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিক্ষার বাস্তুতন্ত্র (এডুকেশনাল ইকো-সিস্টেম) তৈরি করা। আমাদের বিশ্বাস তারা প্রথাগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে নিজস্বতা কে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার এই নতুন মাধ্যমে নিজেদেরকে সংযুক্ত করে তাদের বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবে।

1 টি মন্তব্য:

  1. একটা সময়োপযোগী লেখা। ভালো উপস্থাপনা, সাবলীল ও জ্ঞানগর্ভ লেখনী।

    উত্তরমুছুন

thank you so much