শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব ৪৮)
শামীমা আহমেদ
রাহাত অফিসের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার আগেই তাকে কথাটা জানাতে হবে। নয়তো বিশাল এক কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে!মা ভীষণ অপ্রস্তুত হবে। এমনটি ভেবে শায়লা দ্রুতই ঘুম থেকে উঠলো। সকালের নাস্তার আয়োজন শেষে রাহাতকে ডাইনিং টেবিলে রেখে শায়লা মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে নিলো।মা বিছানায় নেই।তার মানে মা জেগে গেছেন।ওয়াশ রুমে আছেন।এই ফাকে শায়লা কথাটি রাহাতকে জানালো।
গতকাল শিহাব আমাকে বাসার গেটে নামিয়ে দেয়ার সময় আমার পিছনে রিকশায় নিচ তলার রুহি খালা ছিল।সে শিহাবকে দেখেছে।আমি বাইক থেকে নামছিলাম,বিস্ময়ে তার চোখ ফেটে যাচ্ছিল।
এখন কি করা যায়। তুমি অফিসে বেরিয়ে গেলেই রুহি খালা আসবে।আর মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে যখন সব বলবে মাতো বিশ্বাসই করতে চাইবে না।আর যখন বুঝবে এটা সত্যি তখন মা যতটা আঘাত পাবে তা কিভাবে সামাল দিবো! শায়লা এই ভেবে অস্থির হয়ে উঠছে।রাহাতের কাছে এর সমাধানের উপায় বের করে দিতে বলছে।
সবকিছু শুনে রাহাত কিছুটা ভেবে নিলো।শিহাব ভাইয়া তোমার নিরাপত্তার কথা ভেবে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছে এটা ঠিক কিন্তু এই যে পাড়া প্রতিবেশীরা তা দেখে ফেললো এটা তো একটা বিরাট ঝামেলা হবেই। তুমি একটা বিবাহিতা মেয়ে রাত করে সেজেগুজে একজন অচেনা মানুষের বাইক থেকে নামবে,বিষয়টিতো আমাদের সমাজে গ্রহনযোগ্য হবে না। দেখা যাক কি করা যায়।তবে যাই হউক মাকে এখনই সব জানানো প্রয়োজন।এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমরা ভাইবোন নিতে যাচ্ছি, মাকে তা জানানো উচিত।মায়ের দোয়া ছাড়া তো নতুন জীবন শুরু করা যাবে না।শায়লার চোখ মুখ ভীতিকর হয়ে উঠলো! মা কিভাবে নিবে ব্যাপারটা?
মা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং এ এলো।প্রতিদিনই সে রাহাতকে অফিসের জন্য বিদায় জানায়।
রাহাত বললো,মা বসো।তোমার সাথে আমার একটু জরুরি কথা আছে।শায়লা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রাহাত তাকে বসতে বললো। রাহাত কি কিছু বলতে চায়? মায়ের জিজ্ঞ্যাসু চোখ! তবে কি শায়লার কানাডা যাওয়ার কাগজপত্র এসে গেছে! শায়লা না থাকলে কে তাকে দেখবে? পরক্ষণেই ভাবলো,ছি ছি কেন এমন ভাবছি? মেয়েতো তার স্বামীর সংসারে যাবে, এটাইতো আনন্দ!
মায়ের ভাবনাকে একেবারে উল্টে দিয়ে রাহাত যা শোনালো শায়লার মা,লায়লা আঞ্জুম, একেবারেই তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না!
রাহাত জানালো,মা আজ হয়তো নিচতলার রুহি খালা আসতে পারে।উনি এসে শায়লা আপুকে নিয়ে যা বলবে তুমি শুধু চুপ করে শুনবে। তার কোন প্রশ্ন বা উত্তর করো না।শুধু শুনে রাখবে।আমি সময়মত তোমাকে সব জানাবো।রাহাত কি বলছে, আর এসব কেনই বা বলছে মা কিছুই বুঝতে পারছিল না।শুধু রাহাতের কথায় মাথা ঝুকালো। তবে কি কানাডার ব্যাপারে কিছু ঘটেছে?
শায়লা একেবারে শব্দহীন হয়ে শক্ত মনোভাবে টেবিলে বসে রইল।
রাহাতের অফিসের গাড়ি চলে এসেছে।রাহাত দরজার কাছে গেলো।শায়লা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। রাহাত জানালো আমি আজই শিহাব ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। কিভাবে দ্রুত সবকিছু করে ফেলা যায়।আপু তুমি টেনশন করোনা৷ রাহাতের কথায় শায়লা আস্বস্ত হলো।
নাস্তা পর্ব শেষ করে চায়ের মগ নিয়ে শায়লা নিজের ঘরে এলো।আজ আর রান্নার চাপ নেই।গতকাল নায়লার বাসা থেকে অনেক খাবার পাঠিয়েছে।শায়লাদের তিনদিন রান্না না করলেও চলবে। কাজের বুয়া আজ শুধু ঘরবাড়ি থালাবাসন পরিষ্কার করবে আর কাপড় ধুয়ে চলে যাবে। শায়লা বেশ অনেকক্ষন হলো মোবাইল থেকে দূরে ছিল।ঘরে এসেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে শিহাবের মেসেজটা দেখে নিলো।শুভ সকাল।শায়লা আমার প্রতি বিশ্বাস রেখো।কখনী ভুল বুঝনা।
নাহ,শিহাব তোমাকে ভুল বুঝার কোন অবকাশ নেই।তুমি কাঁচের মতই স্বচ্ছ আর তোমার প্রতি আমার পুরোপুরিই বিশ্বাস শিহাব।শায়লা মনে মনে মেসেজের উত্তরটা দিয়ে দিলো।নিশ্চয়ই শিহাব তা জেনে যাবে।।দুজনার মন যে এখন একই কথা কয়,একই সুরে গায়!
আজ সকাল সকাল শিহাবের জীবনে একি ঘটে গেলো। আজ সকালে এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে তা শিহাবের ভাবনার ত্রিসীমানাতেও নেই। হ্যাঁ, রিশতিনাকে সে ভুলেনি।রিশতিনা তার সন্তানের মা।শিহাবের জীবনে শায়লার প্রবেশের আগে পর্যন্ততো পাবে না জেনেও সে রিশতিনার অপেক্ষায়
ছিল। ধীরে ধীরে শায়লা তার মাঝে জায়গা করে নিয়েছে আররিশতিনাকে পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই জেনে আজ শায়লার ডাকে সাড়া দিয়ে শিহাব একটা সিদ্ধান্তে এসেছে।উফ! রিশতিনা এতদিন কেন নীরব ছিলে? রিশতিনাকেওতো অস্বীকার করা যায় না।সেতো অবস্থার স্বীকার। তার বাবা মায়ের রক্তচক্ষুর কারনে তার ভালবাসা, সন্তান সবকিছুকে ফেলে যেতে হয়েছে চারটি বছর পর আজ এভাবে রিশতিবা তার সাথে দেখা করতে চাইবে এযে কল্পনায় এলেও এ যে বাস্তব রূপ পাবে সে আশাটুকু করতেও শিহাব সাহস পায়নি। জজ সাহেব রিশতিনার জাঁদরেল পিতার কাছে মেয়ের ভালবাসা মূল্যহীন হয়েছে। প্রচন্ড চাপের মুখে মেয়েকে সবকিছু ছাড়িয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।অতটুকু দুধের শিশু আরাফকে ফেলে যেতে হয়েছে।শিশুটির তখনো নাম রাখা হয়নি।রিশতিনা জানেও না তার ছেলের নামটা কী?
তাছাড়া রিশতিনা আজ অন্য একজনের সাথে জীবন বেঁধেছে। তার আর পিছনে ফেরার কোন প্রয়োজন আছে কি?
শিহাবের কেবলি গতকাল সন্ধ্যায় শায়লার
সাথে তার কথা তার স্পর্শ শায়লার তার প্রতি আস্থা ভরসায় তার প্রতি নির্ভরতা সেটাই যেন বারবার জানান দিচ্ছে। শিহাব এমনিভাবে অতীত আর বর্তমানের টানাপোড়েনে অসহ্য এক যন্ত্রণায় যেন শরবিদ্ধ ডানা ঝাপটানো পক্ষীর মত ছটফট করছিল।এক চাপা বেদনায় শিহাবের বুক ভারী হয়ে উঠলো।কেন তার জীবনটা এরকম অস্বাভাবিক হলো আর সবার মত সঅহজবার স্বাভাবিক হলো না। সেতো শায়লাকেই আরাফের মা করে চেনাবে।অথচ ঠিক তখুনি রিশতিনার আগমন। শিহাব কিপ্ রিশতিনার সাথে দেখা করবে? আদৌ কি তার কোন প্রয়োজন আছে। শায়লাই এখন তার জীবনে সত্য।শায়লাকে নিয়েই তার আগামী ভাবনা।
শিহাব নিজেকে কিছুটা স্থির করে নিলো।কত কাজ পড়ে আছে। আজ আর নাস্তা করা হলোনা।শিহাব কবিরকে ডেকে লাবাম্বা থেকে একটা চিকেন স্যান্ডউইচ আর সাথে কোক আর কলা। এইতো খুবই সামান্যই তার চাওয়া আর পাওয়া!
শিহাব এই ফাকে মেসেঞ্জারে চোখ বুকিয়ে নিলো। শিহাবের মেস্রজে শায়লার কিস দেয়া ইমোজি! মনের অজান্তেই শিহাব হেসে উঠলো"!
কবির স্যান্ডউইচ নিয়ে এলো। আর শিহাবের টেবিলে তা রাখতে রাখতে বললো, স্যারসে মিলন ছেলেটা কিন্তু এখনো যায় নি।বাইরে বসে আছে।সে নাকি আপনাকে না নিয়ে যাবে না.
শিহাব ভীষণ অবাক হলো! কিন্তু কথাটি না শোনার ভঙ্গিতে নিজেকে সংযত করে বলে উঠলো, অনেক বেলা হয়েছে।হাতে বেশ কাজ!সময় নষ্ট করা একেবারেই ঠিক হচ্ছে না।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much