উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৬১
অনিন্দিতার বাচ্চা
মমতা রায়চৌধুরী
ও বাপরে বাপ আমি কিছুতেই পারছিনা।
কি হলো? হলো টা কি? আর আমার মান্থলি টিকিট কার্ড পাচ্ছি না।
দেখ ওখানে আছে তোমার যে ভুলোমন।
তুমি কি ব্যাক চেঞ্জ করেছিলে?
'হ্যাঁ করেছিলাম। তাতেও নেই।'
নেই মানে টা কি ?
মনোজ তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে ড্রয়ার টা খুলল। ভালো করে জিনিসপত্র সরিয়ে সরিয়ে দেখলো, তারপর বললো "এই দেখো ,বলেই কার্ডটা রেখার কাছে নিয়ে গিয়ে দেখালো।'
রেখা বলল 'আশ্চর্য আমি তো ড্রয়ার টাও খুঁজলাম।'
"ঠিক আছে, চলো ট্রেন পাবে না কিন্তু
এর পর ।আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।'
"তোমার লেট হয়ে যাবে না।"
"না,না, আমার পরের ট্রেনে গেলেও হবে আজকে।"
Ok
"ঠিক আছে তুমি গাড়িটা বের করো আমি দরজা লাগিয়ে আসছি।"
মনোজ গাড়ি বের করতে করতে চিৎকার করে বলল" আসার সময় বিস্কিট নিয়ে এসো, না হলে কিন্তু ছাড়া পাবে না ওদের কাছ থেকে।".
রেখা হাতে করে বিস্কিট এনে আগে বাচ্চাগুলোকে দিল, মিলিকেও দিল।"
তারপর মনোজ রেখাকে নিয়ে গাড়ি করে স্টেশন এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির খবর হয়ে গেল রেখা তাড়াতাড়ি ওভারব্রিজ অতিক্রম করে ট্রেন ধরার জন্য ছুটলো।
মনোজ বললো 'সাবধানে।'
রেখা বললো' তুমিও সাবধানে যেও।'
ওভারব্রিজ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেন ঢুকে গেল। রেখা ট্রেনে উঠে বসলো। সে ভেবেই নিল
জায়গা পেলে ঘুমোতে ঘুমোতে একেবারে কৃষ্ণনগর জংশন।
অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে জায়গা না পেলেও কিছু দুরে গিয়ে জায়গা পেল। রেখা সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজলো।
গাড়ি কৃষ্ণনগর জংশন এর পৌঁছালে ঘুম ভাঙলো তারপর রেখা টোটো ধরে স্কুলে পৌঁছালো।
অ্যাটেনডেন্স দিতে গিয়ে রেখা দেখল "বড়দি মুচকি মুচকি হাসছেন।"
রেখা ভাবল "তার ড্রেসে কি কিছু অবিন্যস্ত ভাব ধরা পড়েছে ?"
বড়দি সেটা বুঝতে পেরে বললেন' না ,না ,আমি হাসছি ।তুমি দেখছি নির্দিষ্ট টাইমেই এসে পৌঁছে গেছে এইজন্য।"
রেখা বলল "ও আচ্ছা ।না ,দিদি কি করবো খামোকা লেট করে ।আমার যদি সত্যিই খুব অসুবিধে থাকতো, তাহলে নয় ঠিক ছিল।
ইচ্ছে করে শুধু সুবিধা নেব বোলে দেরি করে আসব, সেই মানসিকতা আমার নেই।'
বড়দি বললেন "আমি জানি তা হলেও যেহেতু কালকে অত রাত্রে ফিরেছো তো ,তাই তোমাকে বলেছিলাম।এজন্যই তো তোমাকে এত ভালো লাগে।'
রেখা বলল' আপনি আমাকে স্নেহ করেন তাই।"
এরপর বড়দি একটু চিন্তার মধ্যে ঢুকে গেলেন।
রেখা বলল 'ও বড়দি কিছু সমস্যা?'
বড়দি রেখার দিকে তাকিয়ে বললেন' কিছু বলছো?'
'না মানে আপনি চুপ করে গেলেন তো তাই।"
বড়দি বললেন "ভাবছি কাল থেকে আবার ভ্যাকসিন শুরু হয়ে যাচ্ছে।'
"এবার কাদের বড়দি?'
"ওই যে 12 থেকে 15 বছর বয়সের মধ্যে।"
"ও আচ্ছা, আচ্ছা।'
"কিন্তু দেখো অনিন্দিতা তো ক্লাস এইট এর ক্লাস টিচার । ও তো আসছেই না।
"ওকে তো অ্যাটেনডেন্স শিট তৈরি করতে হবে। কুপন তৈরি করতে হবে।এই কাজগুলো তো করতে হবে।"
"ওর ছেলের খবর কি দিদি?"
ওই তো ফোন করেছিল বলল" দিদি, আমরা এসএসকেএম হসপিটাল এ নিওনেটোলজি বিভাগে দেখাচ্ছি।"
"ও আচ্ছা তারমানে কতগুলো টেস্ট হবে তো?'
'হ্যাঁ ,সেরকমই তো বললো।"
"প্রথম দিন নাকি জেনারেল স্টাডিজ হয়েছে বাচ্চার ।অবশ্য বাবা -মার ও কাউন্সেলিং হচ্ছে।
গতকাল নাকি বাচ্চার সেন্স এর উপর ও টেস্ট হয়েছে।'
"ও বাবা তাই?"
এখনো ও কে কিছুদিন বাড়িতে থাকতে হবে। ও সিসিএল এর জন্য অ্যাপ্লিকেশনও দিয়েছে।
ও তাই বুঝি?"
"এখন বাচ্চার কি কিছু ইমপ্রুভ বুঝতে পারছে?"
"ওই তো ,ও যেটা বলেছে যে ,এটা আপনাদের দোষ । এরকম হয়েছে আপনাদের জন্যই। বাচ্চা এমনি সুস্থ স্বাভাবিক আছে কিন্তু কথা বলার শুরুতে যে কোশ্চেনগুলো বাচ্চার ভেতরে লক্ষ্য করা যায় সেগুলো ও করেছিল কিনা ?"
"তখন ওরা নাকি বলেছে মানে?'
*মানে বাচ্চা কোন কিছুর মধ্যে ইনভলভ হয়ে ইন্টারেকশন করতে চেয়েছে কিনা মা-বাবার সঙ্গে?"
তখন অনিন্দিতা আর ওর বর নাকি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।
তারপর বলেছিল যে ওর একটা ভিডিও করে রেখেছে এসবের।
বাবুরা নাকি একটু কৌতূহলী হয়েছিলেন। অনীনদিতা বলেছে ও যে ভিডিও করে রেখেছিল
সেগুলো ফোনের থেকে দেখায়। বাচ্চা কোন বয়সে ও ঝাঁটা নিয়ে ঝাঁট দিতে গেছে। মানে ও সময় বাচ্চা ইন্টারেকশন করতে
চেয়েছে বাবা-মায়ের সাথে ।কিন্তু সে সময় মা-বাবা তাকে গুরুত্ব দেয় নি ।'
মা-বাবা ও কর্ম ব্যস্ত মানুষ ছেলের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি শুধু খাওয়ানো ,ঘুমপাড়ানো ছাড়া।'
ডাক্তারবাবুরা বলছেন তাই হেলদি হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাচ্চার এই গ্রোথ টা ঠিক হয়নি।
তখন নাকি অনিন্দিতা এরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।
তখন ডাক্তার বাবু বলেছেন চিন্তার কোন কারণ নেই একটু দেরি হয়েছে কিন্তু খুব দেরি হয়নি এখন ধৈর্য ধরে বাচ্চার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।
ডাক্তারবাবুরা যেগুলো বলছে সেগুলো ভালো করে ফলো করতে হবে।
কিরকম দিদি?
আরো জিজ্ঞেস করেছেন ডাক্তারবাবুরা যে "মোবাইল নিয়ে বসে থাকে কিনা বাচ্চা?
'অনিন্দিতা বলেছে "হ্যাঁ মোবাইল ছাড়া খাবে না তাছাড়া মোবাইলটা ইচ্ছে করে বাচ্চাকে এক সময় ওরাই দিয়েছে কাজের সুবিধার্থে।'
ডাক্তারবাবুরা বলেছেন মোবাইলে একদম দেয়া যাবেনা বাচ্চাকে তাতে সে যতই কান্নাকাটি করুক বা খাবার দেওয়া না খাক।
রেখা বলল 'কী সাংঘাতিক?'
তারপর ডাক্তারবাবুরা বলেছেন ও আগে যে খেলনা গুলো দিয়ে খেলত সেগুলো একটাও দেয়া যাবে না ।ডাক্তারবাবুরা যে সমস্ত খেলনার কথা বলবেন শুধু সেইগুলোকে কিনে দেয়া হবে আর ওর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কথা বলতে হবে ।মানে নিজেরাই কথা বলতে হবে নিজেরাই উত্তর দিতে হবে এবং ওটা দেখে দেখেই ও শিখবে।'
কি অদ্ভুত ব্যাপার হলো দিদি দেখুন যে বাচ্চার স্বাভাবিক ছন্দে সমস্ত কিছু শিখতে চেষ্টা করছিল সেটা কে ওরা গুরুত্বই দেয় নি।
বড়দি বললেন 'আসলে সত্যি সত্যিই মা বাবারাই কিন্তু বাচ্চার ভালো করতে গিয়ে কখন যে খারাপ করে ফেলেন সেটা বুঝতেও পারেন না।
একেবারে স্লো পয়জন' এর মত কাজ করে।
যাই হোক ওর বাচ্চা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনাই করি।
ঠিক বলেছ রেখা।
সেজন্য একটু চিন্তিত আছি ওর কাজগুলো কাউকে না তো কাউকে করতেই হবে।
আপনি এত চিন্তা করছেন কেন আমি তো আছি তো?
সে আমি জানি রেখা কিন্তু তবুও ভাবছি আবার sযদি ওয়ার্কশপ হয় তাতেও তো তোমাকেই যেতে চলো রেখার লাইনের জন্য ধার করা সবাইকে চলো রেখার লাইনের জন্য মেয়েদের সঠিক ভাবে দাঁড় করিয়ে দাও হবে।
তাই এই ক্ষেত্রে আমি তোমাকে একটু ছাড় দিতে চাইছি।
আর কোন টিচার ফাঁকা পাওয়া যায়।
গান তুই যদি না পাওয়া যায় তখন তো তোমাকে পাঠাতেই হবে।
আর অনিন্দিতাকে যেহেতু কিছুদিন বাচ্চার টেক কেয়ার করতে হবে তাই ভাবছি ওঁকে কিছুদিন সি সি এল দিয়ে দিতে হবে।
দেখো পেয়ার লাইনের ঘন্টা পড়তে চলেছে কজন টিচার পেয়ার লাইনে দাঁড়ায়।
"এজন্যই কঠোর নিয়ম জারি করতে
রেখা বলল ঠিক তাই একজন দুজনের জন্যে বাকি সবার উপর করতে এসে পড়ে।
মেয়েদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে সবার কাছে গিয়ে দেখতে হবে স্কুল ইউনিফর্ম পড়েছে কিনা?
ওকে দিদি।
"আর দেখো না আজকে টিচার লেট করে আসলে লেট মার্ক খাইয়ে দেবো আমি।"
মেয়েরা সব জাতীয় সঙ্গীত শুরু করো।
তারপর যে যার রুমে চলে যাও
রেখার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ অনিন্দিতা আর ওর বাচ্চার কথাই ঘুরপাক খেতে লাগল।
লেখার একটা প্রিয় গান মনে পড়ে গেল
"যার কথা ভাসে মেঘলা বাতাসে ,তবু সে দূরে থাক ,সে কথা মানে না…। "গানটা বার বার মনে পড়ছে রেখার। অনিন্দিতা সঙ্গে মনের দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে কিন্তু তবুও অনিন্দিতা আর ওর বাচ্চার ভালো হোক সেটাই চায় বরাবর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much