ইউএন মিশনে হাইতিতে গমন
৩য় পর্ব
মোঃ হাবিবুর রহমান
মার্কিনীরা যে প্রক্রিয়াজাত খাবার প্যাকেট ক'রে রাখে তা অবশ্য অনেকদিন ধ'রেই খাওয়া যায়। এটাকে বলে এমআরই (MRE অর্থাৎ 'Meal Ready to Eat'). এমআরই খাওয়ার বিড়ম্বনা হ'ল যে, দু'-তিন রকমের এমআরই এর মধ্যে কোনোটা শুধুমাত্র বিফ কিংবা বা গরুর মাংশ আবার কোনোটাতে পুরোটাই পর্ক বা শুকরের মাংশ মেশানো আবার কোনো-কোনোটাতে বিভিন্ন রকমের মিশ্রণও আছে। তাই মনে প্রগাঢ় বিশ্বাস নিয়েই খেতে হবে। অনেকেই বলে "বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর"। সবই ঠিক আছে কিন্তু খাওয়াদাওয়ার উপর আমার বিশ্বাস বেশ আগের থেকেই কম।
একবার শুনেছিলাম ঢাকার কোন এক হোটেলে নাকি কাষ্টমারদেরকে কুকুরের মাংশ দিয়ে আপ্যায়ণ করা হ'য়েছিলো। তাছাড়া, ফার্মের মুরগী দেশে আসার পর মরা মুরগী সমাধিস্হ না ক'রেই সৃষ্টির সেরা জীব মনুষ্যজাতিকে আপ্যায়ণ হারের আধিক্যটি নাকি বহুলাংশে বেড়ে গেছে। এটাই নাকি আমাদের বাংলাদেশের রীতি হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। এরা নিজেরা ঠিকই জীবিত খায় আর মরাটা অন্যেকে খাওয়ায়। বিচিত্র বাঙালী। আমরা বীরের জাতি এটা অবশ্যই ঠিক আছে কিন্তু মাঝে-মাঝেই নিয়ম-নীতির একেবারেই যেন থোড়ায় তোয়াক্কা ক'রে থাকি। হয়তবা দেশের প্রতি এদের মায়া তথা দেশপ্রীতি এত বেশী যে এরা খামাখা দেশকে লসের ভিতর ফেলতে চায়না তাই বুঝি মরা মুরগীর মায়া এরা ঠিক সামলাতেও পারেনা।
যাক, আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক দীক্ষা দিন। এসব কথা আপাতত থাক। চলুন আবার অন্তরীক্ষ থেকে ঘুরে আসি। পেট চো চো থেকে এবার লম্বা সময় ধরে পেটে শব্দ ক'রে ডাকা শুরু ক'রেছে, সোজা বাংলায় বলে পেটে পাক দেওয়া শুরু হ'য়েছে আর কি! এবার আর বুঝি রক্ষে নেই। মানুষের বুঝি দুই মন থাকে, এ মূহুর্তে আমার আরেক মন ব'ললো "রাখতো তোর এসব গোড়ামী? আগে তোর পেট সামলা", যেন আপনি বাঁচলে বাপের নাম আরকি!
তাই প্রথমে খাবোনা বলে মানা ক'রে থাকলেও এ অবস্হায় লাজ-লজ্জ্বা-হায়া সব ত্যাগ ক'রে আবার ডাকলাম এক আমেরিকান সার্জেন্টকে যেন বাংলাদেশে যাত্রা পথে ঝালমুড়িওয়ালাদের ডাকার মত। সার্জেন্ট সাহেব হয়ত মুচকি হেসে মুখটি চেপে মনে মনে বলেছে, "এই বাঙ্গালী, খুবতো ব'লেছিলে অভিমানের সুরে খাবোনা? দাঁড়া! পেটের কাছে পৃথিবীর সুবৃহৎ প্রাণী হাতি আর তিমি মাছও যখন কাবু আর তুইতো মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির একজন অতিকায় ক্ষুদ্র বাঙ্গালী তাও আবার সুশৃঙ্খল বাহিনীর একজন সদস্য"।
যাক, পেট ঠান্ডা হ'লো। ঘণ্টা দুই না খেলেও চ'লবে কিন্তু বিপত্তি অন্য জায়গায়। এমআরইতে যে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হ'য়েছে এ গন্ধটা তো এরই ভিতর মুখে স্হায়িত্ব পেয়েছে যেন চিরস্হায়ী বন্দোবস্তের মত। ভাবলাম, খাওয়ার মজা এক বছরের মত বুঝি শেষ। কোথায় পাবো পাবদা, ইলিশ, রুই-কাতলা কিংবা শৈল-মাগুরের ঝোল? এভাবেই একটা সিষ্টেম ক'রে নিতে হবে আরকি! এরই মধ্যে আরও তিন ঘণ্টা গত হ'য়েছে। আমাদের মার্কিণী পঙ্খিরাজ ছুটে চ'লেছে সাঁয়-সাঁয় করে যেন প্রশান্তকে নীচে সাক্ষী রেখে।
সূর্যি মামার হাসিটা তখন বেশ বেড়েছে তাই জানালা দিয়ে মহাসাগর দেখার চেষ্টা ক'রছি যেন নীল পানির উপর মাঝে-মাঝেই সেই ডিঙ্গি নৌকাসম কিছু সমুদ্রযান চ'লছে কোনোটা আগে আবার কোনোটা পরে। ছোট বেলায় প'ড়েছি, পৃথিবীর তিন ভাগের দু' ভাগই নাকি পানি, সৃষ্টিকর্তা তাই বুঝি সেই সত্যতা আমাকে চাক্ষুশ দর্শনে এনেছেন তাঁর সাত মহাসাগরের সবচেয়ে গভীরতমের উপর দিয়ে উড়ে চলতে চলতে আর যেন সেই মূল্যবান জীবনসম পানির জরীপ করতে করতে। আহা! পৃথিবীতে বুঝি ডাঙ্গা বা স্হলভাগ ব'লতে কিছুই নেই এমনটিই ঠিক যেন বার বার মনে হ'চ্ছিল। হঠাৎ করেই আবার বাম্পিং শুরু হ'লো। আবার সেই চিরাচরিৎ সিটবেল্ট বাধার হুশিয়ারী।
ঢাকা থেকে শুরু করেছিলাম সকাল ১০ টায় কিন্তু এগার ঘণ্টার মত গত হ'লেও তখন বাজে স্হানীয় সময়ে জোর সকাল সাতটার মত। আমাদের আপাতত গন্তব্য হাওয়াই দ্বীপের রাজধানী হনুলুলুতে। সিনিয়াররা বলতে লাগলেন এখনও ছয় ঘণ্টার মত বাকী। বুঝতে পারলাম কেন মার্কিনীরা শত মানুষের জানের ঝুকি নিয়ে ঘণ্টা সাতেক আগে তারা আকাশে এক প্লেন থেকে অন্য প্লেনে জ্বালানী মওজুদ ক'রে নিয়েছিলো। আসলে মার্কিনীরা বড্ডই বুদ্ধিমান।
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much