উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৩০
পরান বীণা সুরে সুরে ভরে যাক
মমতা রায় চৌধুরী
যাক বাবা শেষ পর্যন্ত রাজি করানো গেল।এবার শুভস্য শীঘ্রম। শেষ পর্যন্ত পরিণতি পাক এটাই প্রার্থনা। আজকে পার্থ কত খুশি ছিল ।সত্যিই তো তাই। মনের মানুষকে যদি কাছে পায়,আরো আপন করে পায় । তার চেয়ে সুখী আর কে আছে। রেখা মনে মনে বারবার বলতে থাকলো
'ভগবান ওদেরকে সুখী করুন। ওদের দাম্পত্য জীবন মধুর হোক,সুখের হোক ,আনন্দের হোক,বিশ্বাসের হোক ,বন্ধুত্বের হোক। এভাবে ওদের পরান বীণা সুরে সুরে ভরে যাক।
এসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ঢুকছে। বাড়ির দরজা হাট করে খোলা।কে এসেছে রে বাবা।
রেখা আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢোকার মুখেই শুনতে পেল মনোজের মগজ ধোলাই হচ্ছে।
'এত আস্কারা দিস না বউকে।একে তো চাকরি করে, তারপর সব ব্যাপারে যদি সাপোর্ট করিস বুঝতে পারছিস??'
মনোজ বললো 'ওএমন কিছু করে না তো যার জন্য ওকে সাপোর্ট করবো না?'
', মা ভাইকে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই। ওর ভালো ও বোঝে না। ওরে আমরা কি তোর শত্রু।'
'কি বলব বলো তো?'
'এই যে পাড়া-প্রতিবেশী যে যখন ডাকছে অমনি তাকে চলে যেতে দিস ।পাড়া-প্রতিবেশীরা ওর মাথা খেতে পারে না ?'
'কি যে বলো না মা ,এতদিনকার সম্পর্ক পার্থদের সঙ্গে। ওর মা রেখাকে ভালবাসে ।যেতে দেবো না?'
''তোকে কে বোঝাবে বল বাবা। তোকে যে বুঝিয়ে রেখেছে এর বাইরে তো তুই যাবি না । যোগ,বিয়োগ গুন ,ভাগ সবই করে রেখেছে আর কি করবি?'
মনোজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে । ভূত দেখার মত দেখে রেখা কে।
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে' তুমি কখন আসলে?'
'এইতো এক্ষুনি ঢুকলাম।'
'ও আচ্ছা।'
'মিলিরা কিছু খেয়েছো গো?'
'না কিছু বিস্কিট দিয়েছি ওদের।'
রেখা যেসব কথা শুনতে পেয়েছে মনোজকে হাবে ভাবে বুঝতে দিলে হবে না।
বিষ যেমন করে কন্ঠে ধারণ করেছিল নীলকন্ঠ, ঠিক তেমনি করেই রেখা ও মনের ভেতরে সব রেখে দিল।
মনোজ মনে মনে ভাবল 'যাক শুনতে পায়
নি ।না হলে কি ভাবতো? থ্যাংকস গড।'
জোড়হাত করে প্রণাম করে ভগবানের উদ্দেশ্যে।
রেখা বলল' কি হল?'
মনোজ বলল হেসে' কিছুই না।'
'কি খাবে তোমরা আজকে?'
'কি আবার রুটি।'
'কী সবজি বানিয়েছ গো সকালে?'
"ব্রকলি উইথ আলুভাজা।'
"বাহ, বেশ বেশ ।'
"মায়েরা কি খাবে?'
'দাঁড়াও জিজ্ঞেস করি।'
বলেই মনোজ ঘরের ভেতরে গিয়ে বলল
' মা ,দিদি তোমরা কি খাবে রাত্রে?'
'আমরা তো ভাত খাই।
ভাত করবে আর দুপুরে তরকারি করাই ছিল।'
মনোজ বলল 'ঠিক আছে'
।মনোজ রেখাকে এসে বলল ' ভাত খাবে?
রেখা বলল' ঠিক আছে। রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। আবার ফিরে এসে বলল শোনো একটা কথা আছে।'
উৎসুকভরে মনোজ বলল' কি কথা গো?'
'কালকে কিন্তু আমি স্কুলে যাব কামাই করব না।'
'হ্যাঁ অবশ্যই যাবে।'
"রান্নাবাড়া?'
'যেটুকু পারবে তুমি করে রেখে যাবে। বাকি মা
দিদিরা করবে ।'
'ঠিক আছে এটাই বলার ছিল।'
রেখা রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো এমনিতেই লেট হয়ে গেছে। ভাত চাপিয়ে দিয়ে মিলিদের
তরকারি গরম করলো। তারপর মিলিদের খাবারটা দিতে গেল।
"পাইলট তুলি উঠে পড়ো সোনা খাবার খেয়ে নাও।
সবাই লেজ নাড়তে নাড়তে এসে আগে রেখাকে একটু আদর করল তারপর খাবার খেতে শুরু করল।
ইতিমধ্যে রেখা পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে মনোজ এসে দাঁড়িয়ে।' একি তুমি?'
'হ্যাঁ l দেখতে আসলাম।'
'তাহলে তুমি দেখো। আমি যাই।'
রেখা চলে যাচ্ছে, তখন মনোজ বললো
" অ্যাই রেখা ,শোনো, শোনো।'
রেখা পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে' কি হলো?"
মনোজ কাছে এসে ফিসফিস করে বলল 'এই পার্থদের ওই ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে মাসিমা?'
রেখা হেসে বললো 'অনেক কষ্টে রাজি করে নিয়েছি ।দেখা যাক।'
এদিকে মনোজ আর রেখা খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলছে ,সেটা মনোজের দিদি আর মা দেখে মনোজকে একসাথে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারছিলো না । কিন্তু মনে মনে গজগজ করতে করতে ঘরে ঢুকে গেল। মনোজ বলল 'তাহলে এতদিনের স্বপ্ন ওদের পূরণ হবে বলো?'
রেখা বলল'সে রকমই তো হবার কথা। আজকে পার্থকে দেখে যেটা আমার মনে হয়েছে, এতোদিন একটা চিন্তায় ছিল ওদের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে কিনা সংশয় ছিল মনে। তবে আজ ওকে দেখে আমার যেটা মনে হল ওর সমস্ত হৃদয় আকাশ সোনালীর ভালোবাসা। মনোজের স্বপ্নচূড়া জুড়ে রয়েছে।'
'যাক একটা ভালো খবর শোনালে।'
অন্যদিকে মনোজের মা বাজখাই গলায় বলল'হ্যাঁরে মনু তোদের গল্প হল ।এদিকে ভাতের অবস্থাটা কি হচ্ছে দেখতে বল বৌমাকে।'
এতক্ষণে গায়ের জ্বালাটা যেন পারলো
জুড়াতে ।
রেখা দ্রুত রান্না ঘরে এসে দেখলো ভাতের জল অনেকটা কমে গেছে।
তাড়াতাড়ি ভাতে জল দিল।
এমন সময় রেখার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের আর্তনাদে রেখার শাশুড়ি মা বিরক্ত হয়ে বলল
"হ্যাঁরে মনু কার ফোন বাজছে?'
"মনু অ্যাই মনু ,মনু…"
মনোজ বাথরুম থেকেই সাড়া দিলো 'আমি বাথরুমে আছি মা'।
রেখা ঘরে গিয়ে ফোনটা ধরল।
'হ্যালো'
'হ্যাঁ বৌদি, পার্থ বলছি।"
"হ্যাঁ বল ভাই।'
'অনেক ধন্যবাদ।'
'ও বুঝেছি আগে পুরো কাজটা করতে দাও।'
'মনে তো হচ্ছে পুরো কাজটাই হবে।'
'ঠিক আছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে হবে না।
তোমাদের ভালোবাসা পরিণতি পেলে আমারও খুব ভালো লাগবে।'
'এই জন্যই তো এতটা দিন অপেক্ষা করছি বৌদি।
ওকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে গ্রহণ করতে পারতাম না।"
'তবে একটা কথা বলি ভাই সোনালীকে বলে দিও এ বাড়িতে এসে মাসিমার সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করতে।মাসিমাকে আপন করে নিতে চেষ্টা করে যেন।'
"সে কথা আমি ওকে বলেছি বৌদি ।'
'কিছু মনে করো না ভাই । কেননা মাসিমার মনে তো একটু দ্বিধা আছে ,হয়তো মাসিমা তাড়াতাড়ি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে না ।সোনালীকে চেষ্টা করতে হবে সেটা।'
'একদম ঠিক কথা বলেছো বৌদি।'
'ঠিক আছে ভালো থেকো সবাই।'
মনোজ টাওয়ালে হাত মুছতে মুছতে বলল
"কে ফোন করেছিল গো।'
ফোনটা কেটে রেখা বলল 'ও পার্থ করেছিল।'
"খুব খুশি না পার্থ ।'
রেখা একগাল হাসল।
'শোনো শিখার বিয়েতে কিন্তু যেতে হবে।'
'কবে বিয়ে আছে গো?'
'এই তো এ মাসেই বিয়ে।'
'দেখি কি হয়?'
'দেখলে হবে না সুরো কিন্তু ভীষন রাগ করবে আর মাধুও ।'
"শিখা তো তোমার একজন পরম ভক্ত। না গেলে হয়।'
রেখা ঘাড় নাড়লো তারপর বললো' ঠিক আছে যাই ,ওদিকে ভাত হয়ে গেলো তোমাদের খাবার ব্যবস্থা করি।'
রেখা রান্নাঘরে গিয়ে ভাতের ফ্যান ঝরিয়ে ঝটপট রুটি করে ফেলল।
আবার ফোন বেজে উঠলো মনোজের ফোনে।
মনোজ ফোনটা ধরে বলল ''হ্যালো'।
"হ্যাঁ রে সুরো বলছি।'
'হ্যাঁ বল সবাই ভালো আছিস?'
'ভালো আছি। আজকে রেখাকে পাবো তো নাকি রে।"
'পাবি রান্নাঘরে আছে ।দেখছি দাঁড়া।'
মনোজ চেঁচিয়ে বলল ', রেখা, রেখা, অ্যাই রেখা তোমার ফোন আছে।'
'যাই ।আবার কে ফোন করল?'
বেসিনের কল টা ছেড়ে আটার হাতটা তাড়াতাড়ি ধুয়ে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ছুটে আসলো
' কে ফোন করেছে?'
'ফোনটা ধরো তাহলেই বুঝতে পারবে।'
' হ্যালো'।
"রেখা আমি সুরঞ্জনদা বলছি।'
:'হ্যাঁ দাদা বলুন ভালো আছেন সবাই।'
'সবাই ভালো আছি আরো ভালো থাকবো, যদি তোমরা সবাই আমার বাড়িতে আসো শিখার
বিয়েতে। শিখার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো তো?'
"হ্যাঁ, দাদা শুনলাম।'
"শুনলে তো হবেনা এবার এসে তো সবকিছু অ্যারেঞ্জ করতে হবে ।মাধু একা পড়ে যাবে
তো । তোমরাএসো তাহলে খুব ভালো লাগবে আর না কথাটা কিন্তু শুনবো না ।ঠিক আছে।'
"তা অবশ্যই চেষ্টা করব।'
'চেষ্টা করব কথাটা বলো না রেখা। বলো যাব আর শিখা কিন্তু তোমার একজন পাঠক হিসেবে ভীষণ ভক্ত। সুতরাং তুমি না আসলে ও খুব কষ্ট পাবে।'
'হ্যাঁ দাদা যাব। শিখাকে আমার অনেক ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা জানাবেন।'
'সে আমি জানিয়ে দেবো কিন্তু তোমাকে কাছে এসে জানাতে হবে।'
রেখা হো হো হো করে হাসতে শুরু করলো তারপর বললো '
"মাধু বৌদি কেমন আছে দাদা?'
' শিখার বিয়ে বলে কথা ।ওকে তো ননদ হিসেবে কখনো দেখেনি ।মেয়ে হিসেবে দেখেছে। আনন্দ যেমন হচ্ছে তেমনি ভেতরে একটা কষ্ট রয়েছে চলে যাবে শ্বশুর বাড়ি সব মিলিয়ে রয়েছে।'
'ঠিক আছে রাখছি তাহলে। তোমাদের কিন্তু অবশ্যই এক সপ্তাহ আগে আসার কথা। তোমারা সেই ভাবে প্রিপারেশন নিয়ে আসবে।'
রেখা আশ্চর্য হয়ে বলল' কি ?এক সপ্তাহ!'
সুরঞ্জন বলল' আমি বলেছি যখন…..আমি কোন কথা শুনব না ।রাখলাম ।সবাই ভালো থেকো আর তাড়াতাড়ি চলে এসো।'
মনোজ বলল 'দেখলে না গেলে হবে?'
রেখা সংশয় আর চিন্তাগ্রস্থভাবে বলল 'সে তো বুঝলাম কিন্তু আমার এই বাচ্চাগুলোর খাবার দাবারের ব্যাবস্থা।'
মনোজ বলল' সে ভাবনা তোমাকে ভাবতে হবে
না ।আমি সেটা ভেবে রেখেছি ।সেটা করেও দেবে দরকার হলে কিছু টাকা পে করে দেব?'
রেখা বলল' কে গো?'
"কেন আমাদের গৌরী সেন দা",।
রেখা হাসতে হাসতে বলে' তুমি পারোও বটে। এসো এসো খাবে এসো। সে পরে ভাবা যাবে।'
কতদিন পরে যেন রেখার মনে হল প্রাণখুলে মনোজ হাসল। রেখার মনের থেকে চাপ অনেকটা কমলেও মনোজকে এভাবে হাসতে দেখে খুব খুশি হলো রেখা। মনজ কি কোন কিছুতে জড়িয়ে আছে ,যার জন্য মাঝে মাঝে এরকম ব্যবহার করে পরিষ্কার করে তো কিছু বলেও না।'
যাক টানাপোড়েনে মনের কালিমা দূরীভূত হোক।
সকলের হৃদয় বীণা সুরে সুরে ভরে উঠুক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much