০৮ নভেম্বর ২০২০

কাকলী দাস ঘোষ এর অণুগল্প

  

নীলকণ্ঠ মায়া 

অনন্ত এক নীল সরোবরে স্নান করছিল। হঠাৎ সেখানে এল এক নীলকণ্ঠ পাখি। পাখিটা খুব কাঁদতে কাঁদতে গান গাইছিল। অনন্তর পাখিটাকে  দেখে খুব মায়া হল। ও পাখিটার কাছে গিয়ে বলল , 

"নীলকণ্ঠ পাখি, তুমি কাঁদছ কেন?"

পাখিটা বলল, "দেখ মা দুর্গা যেকদিন আমার পৃথিবীতে ছিল আমি রোজ মায়ের পূজা দিতাম। আর মায়ের কাছেই থাকতাম। কত গল্প করতাম মায়ের সঙ্গে। সবাই মাকে দেখতে এসে আমাকেও দেখত। আর এখন ওরা আমাকে মায়ের থেকে দূরে উড়িয়ে দিল । মাকে বিসর্জন দিল। এখন  কেউ আমার দিকে দেখে না। আমার নীলকান্তমণির মত রঙ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এই অখ্যাত জীবন নিয়ে আমি আর বাঁচতে চাই না। তাই এই সরোবরে ডুবে আমি প্রাণ বিসর্জন দেব।"

অনন্ত পাখির কষ্ট বুঝল। আসলে ও-ও যে মাহারা।  ও পাখিকে বলল, 

"তুমি কেঁদো না। খ্যাতি অখ্যাতি সব সাময়িক। ভেবে দেখ তো সেই বহুযুগ আগের কোন সভ্যতা -হয়তো বা সুমেরীয় সভ্যতা -সেখানে কে কজন বিখ্যাত ছিল আজ কে বা মনে রেখেছে? আর মা যে তোমার হৃদয়ে আছে গো। ওরা তো মায়ের মূর্তি ভাসিয়েছে। এটা নিয়ম। এই মহাবিশ্বের সব অণু-পরমাণুতেই যে মায়ের বাস।  তুমি চোখ বন্ধ কর। মায়ের মুখটুকু ভেবে গান ধর। দেখবে মা তোমার কাছে আসবে। আর একদম মৃত্যু চিন্তা করবে না। আত্মাহুতি মহাপাপ।"

নীলকণ্ঠ পাখি অনন্তর কথা শুনল। ও সত্যি সত্যি সরল বিশ্বাসে চোখ বুজে মাকে ডাকল। অনন্ত অবাক হয়ে দেখল হঠাৎ চারিদিক আলো হয়ে উঠল। সরোবরে সব পদ্ম যেন সোনার হয়ে গেল আর দুই সোনার বালা পরা হাত পাখিকে জড়িয়ে নিল।"

অনন্ত দুই হাতজোড় করে অজ্ঞান হয়ে গেল। যখন চেতনা এল সব শুনশান। অনন্ত এ ঘটনার কথা কাউকে কখনো বলেনি। মানুষকী কখনো ওই পাখির মত ঈশ্বরকে ভালবাসতে পারবে? যেদিন পারবে সেদিন সবাইকে ও এই গল্প বলবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much