আসবেই দিন সূর্যিত আলোর
ভর দুপুরে মজিদ বারে বারে আকাশের দিকে তাকায় সূর্য তার মস্ত ঘড়ি সুর্য দেখে মজিদ একদম সঠিক সময় বলে দিতে পারে সেই ছোট বেলা থেকেই। পূর্ব পুরুষ থেকে জমিজিরাত না পেলেও এই গুণ পেয়েছে, মজিদের দাদা মোবাশ্বের নাইয়ার এই সূর্য দেখে সময় বলে দিতে পারার গুণ ছিলো বিধায় দাদাকে গ্রামের মানুষ জ্ঞানী ব্যক্তি মনে করতো। দিন বদলাইছে মজিদ সূর্য দেখে সময় বলতে পারে এই কারণে গ্রামের বন্ধুরা দুষ্টুমি করে ওকে ডাকে " ঘড়ি মজিদ "।
মজিদের বাবার নিজের জমিন ছিলো না মেম্বারের বাড়িতে ফরমায়েশ খাটতো,
মেম্বার সাহেবের মা বেগম আয়নামতির খুব দয়ার শরীর ছিলো তিনি মৃত্যুর আগে তার বাগান বাড়ির কিছু অংশ মজিদের বাপের নামে সাফ কওলা করে লিখে দিয়েছিলেন, ঘর তুলতে একটা বড় গাছও দিয়ে বলেছিলে ঘর বান্দিস মফিজ কতদিন মানুষের ঘরে থাকবি সংসার ছেলেপুলে হইলে কি আর আমার বাড়ি থাকতে পারবি? আয়নামতি বেগমের দয়ার কারণেই একখান ভালো ঘরে থাকে মজিদ বউ বাচ্চা নিয়া। সমস্যা হয় যখন বছরের একটা সময় কোন কাজ থাকেনা তখন সুদে টাকা আনতে হয় ভাতের জন্যে। যখন ধান পাটের কাজ থাকে তখন ভালোই আয় হয় কিন্ত সুদের টাকা শোধবোধ করতে সব শেষ হয়ে যায়।
মজিদ মনে মনে ভাবে দাদার মতো নাও লইয়া জাল লইয়া নদীতে যাইতে পারলে অভাব থাকতো না সূদে টাকা আনা লাগতো না। নিজের জীবন যেমন গেছে আর কয়দিন পরে সন্তান আসতেছে সেও যেনো মজিদের মতো কষ্টে না থাকে তারে স্কুলে পাঠানো আর নিজের ছোট একখান জমিনের স্বপ্ন ছাড়া মজিদের আর কোন কিচ্ছু চাওয়ার নাই আল্লার কাছে।
রাত্তিরে বিছানায় শুয়ে নিজের স্বপ্নের কথা যখন বউকে বলে নুরবানু তখন তাকে সাহস দেয়। মজিদ ভাবে এতো সুন্দরী আর এমন জ্ঞানী বউ আল্লায় তারে কেমনে মিলাইয়া দিলো।
হুনেন আফনে এতো চিন্তা কইরেন নাতো
আমারে মায় বিয়ার সময় এক জোড়া মুরগী দিছিলো দ্যহেন এহন আমার চৌদ্দডা মুরগী,
আল্লায় দিলে অবস্থা ঘুরতে সময় লাগে না।
তয় আমার একটা স্বপ্ন আছে,
কি স্বপ্নরে বউ কওতো গরীব হইলেও মন তো গরীব নারে বউ,
যদি কোন দিন সুযোগ হয় তোর স্বপ্ন আগে পূরণ করবো।
আমারে একটা গাভী কিননা দিবেন এইযে দুইডা মুরগী দিয়া চৌদ্দডা মুরগী তেমনি একটা গাভী দিয়া অনেক গাভী হবে দুধভাত খাবে আমাদের সন্তান আর দুধ বেঁচা টাকা জমাইয়া আমরা ছোড একখান চাষের জমিন কিনমু।
স্বপ্ন সংক্রামক রোগের মতো নুরবানুর স্বপ্ন মজিদ নাইয়ার মস্তিষ্কের ভেতরে ধাক্কায় দিনরাত।
মজিদ - নুরবানুর পাঁচ বছরের মুজিব স্কুলে যায় ফ্রী প্রাইমারী স্কুলে যায়, মজিদ মিয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়
আজকাল শরীরে আগের মতো শক্তি পায়না মজিদ বউ রাত্তিরে কপালে হাত দেয় প্রত্যেক রাত্তিরে মজিদের শরীরে জ্বর আসে। ক্ষেতের কাজে যেতে পারেনা মজিদ
সূদের টাকা বাড়ে মজিদের অসুখ বাড়ে....একদিন ভোরে মজিদের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা।
সূদের টাকা শোধ দিতে নুরবানুর ঘর মুরগী সব মহাজনের কাছে..এক হাতে কাপড়ের পোটলা অন্য হাতে মুজিবের হাত ধরে রাস্তায় নামে নুরবানু গন্তব্যহীন
ও মা আমরা কই যাই?
জানিনা বাপ
ও মা আমার ইশকুল?
গরীবের পেটে ভাত নাই স্কুলে কেমনে যাবি বাপ!
মা তুমি কাইন্দো না একটু খাড়াও আমার বইগুলা নিয়া আসি
কি করবি বই দিয়া!
তুমি চিন্তা কইরো না আমি ক্লাশ থ্রিতে পড়ি
একটা না একটা কাজ করা যাবে
দেইখো মা একদিন আমাগো আবার ঘর হবে
আমি একখান জমিন করবো নিজের জমিন
এত্তোবড় আল্লার দুনিয়ায় আমাগো জন্য কোথাও না কোথাও জমিন আছে মা
হ রে বাপ স্বপ্ন আছে তো আমাগো.....
ক্লান্ত নুরবানু হাঁটতে হাঁটতে মুজিবের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মুজিবের চেহারা অবিকল মজিদ মিয়ার মতো। কথা বলার ভঙ্গি, স্বপ্ন দেখার সময়ে মজিদের চোখগুলো যেমন জোনাক পোকার মতো জ্বলজ্বল করতো মুজিবের চোখ গুলাও ঠিক তেমন জ্বলছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much