০৫ নভেম্বর ২০২০

অরু চট্টোপাধ্যায়

 হাসপাতাল থেকে কয়েকটা প্রলাপ 

 


(১)

সিঁড়িটা ঝক ঝকে, উঠে যাচ্ছে উপরের দিকে,

কিছুটা থমকে যাই, আমিও, নিষ্প্রাণ পুতুল ,

রক্ত কিছু দিতেই হবে l শার্সির  ওপরে কিছু মেঘ -

আমি বাধ্য শিশুর মতো অসহায় এক নিস্তব্ধতা -


ডাক্তারবাবু এখন ঈশ্বরের মতো আবেগহীন পুতুল 

কি যে বললেন ? মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে যায় -

বসেই রয়েছি l কখন যে ডাক আসবে ...

এখন ঢুকে যাবো, কি সব পরীক্ষা নেবে, যন্ত্রের মন-

একটা লাইন কবিতা নেই 

কার কাছে আয়ু চাইবো দশটা বছর l 


যন্ত্রের ভাষা এ জীবনে শেখাই হলনা l 


(২)

আমাকে বসিয়ে রেখে, কারা যেন চলে গেছে দূরে -

পাশে যে বসে আছে, তাঁর ভাষা আমি বুঝতে পারিনা ,

হাসপাতাল কোন কালে মন্দির ছিলোনা l 

একটা কথা বলছেনা কেউ, সারি সারি স্টিলের চেয়ার -

শুশ্রূষার ভাষা এখন অভিধানে নেই -

মুখ ফেরানো কার অভিমান ?

দেখা যাক যন্ত্র কি বলে ?


আমি বসেই রয়েছি l 

আশ্চর্য এক অপেক্ষায় কাল, আমাকে অপদার্থ অচল করেছে l 


(৩)

আমার চারপাশে কবিতার বই নেই,

শব্দ আছে রোগহীনতার, এখানে ভাষণ নেই l 

কাউন্টারে টাকার বান্ডিল I 

রিপোর্ট বগলে করে ঢুকে যাই ঈশ্বরের ঘরে l 

কয়েকটা ওষুধ লিখে দেন l 


শরীর থেকে কেন যে বেরিয়ে যাচ্ছে সমস্ত আমিষ ?


আমি সারাদিন নিরামিষ কবিতার কাছে থেকে থেকে 

আমিষ শব্দ শিখতেই পারিনি l 


ঝকঝকে স্টিলের চেয়ারটা আমার ব্ন্ধু মনে হয় l 


(৪)

বেরিয়ে এসেছি রাস্তায় l এক কাপ কফি চলতে পারে -

দ্রুত গতিতে ধাবমান রাস্তার সময় -

আমি এখন গতিমান কোনো বস্তু পৃথিবীর নই,

হতাশার জল বিন্দু নেই, আকাংখার সিঁড়ি নেই আর -

এই মুহূর্তে শুধু কফির কাপ এবং চিনিহীন উষ্ণতা, 


সামনে হাসপাতালের বিসাল বিল্ডিং , তাজমহলের মত জেগে আছে l 

আমি সব গেট পার হই l তেঁতো কপি রক্তের ভিতর -

সাদা এ্যাপ্রোন ডেকে নেয় , দেখি বোবাদের ঘর -

সচল হয় USG মেশিন l পর্দায়  নীল ছবি কবিতা আঁকেনা 


কয়েকটা মুহূর্ত আমি কফিনের শব -

য়ার স্বপ্ন l কয়েকদিন বাঁচা ছাড়া আর কিছু নেই 


সামন্য সময় , মনে হয় অনন্ত আলোকবর্ষের কোন জীব l 


(৫)

তিনটে ওষুধ ছমাস খাবেন,

আমি তিন ভুবনের কথা ভাবি -

আমার ভ্রমণে হাসপাতাল যুক্ত ছিলনা ,

কবিতার বইয়ের বদলে ,দিন গুনে গুনে ,নিতে হবে নিম ক্যাপসুল -


আমার ব্ন্ধু প্রেমিকা কি গান পাঠালো ? 

আকাশে কান পেতে, জানাই হলো না ,


তপ্তদিনের উদ্দেশ্যে বলি , আমি ভালো আছি কিনা বোঝাতে অক্ষম ,

তোমার চন্দন গন্ধ জ্যোৎস্নায় ভিজিয়ে দিও l 


বাইরে বেরিয়ে দেখি , দিনের কুসুমে স্বপ্নের গন্ধ লেগে আছে -

সাদা এ্যাপ্রোন পরে কে যেনো দাঁড়িয়ে অদৃশ্য ছায়ায় 


(৬)

হাসপাতাল সৌন্দর্য নেই , সাধ আছে বেঁচে থাকবার -

নিভু নিভু প্রদীপের মতো l 

শরীর মহাশয় ছিলো l  আরও কিছু যত্ন যত্ন খেলা !

এবেলা ওবেলা কিছু করেছি কি ?

মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে , কথাহীন , কি যে বলবে ?

আধুনিক যন্ত্রের ভাষা ?

কিছুই বুঝিনা আমি ,

পড়ে আছে মন খারাপের খাতা , শূন্য স্থান নেই -


বোবা আয়নার কাঁচে দুটো কথা লিখে রাখি -

যে কথা উচ্চারণ হয়নি জীবনে -

লেখা হয়নি , লেখা হয়নি ,জীবন্ত গাছের মতো আয়ু .....


(৭)

রাষ্ট্রের মতো প্রতিশ্রুতি দিতে শিখেছে 

হাসপাতলের নিজস্ব প্রতি রক্তের কনা ,

গিলছে সবাই l এ জীবন , এই বেঁচে থাকা খুবই সুন্দর l 

তাই এই ছোটা ছুটি l দুরন্ত আবেগ l 


এখানে জমিয়ে আছে মহাজাগতিক বেচা কেনা , ভালো হয়ে যাবে -

যন্ত্র বলছে, দেবে শত বর্ষের আয়ু ....


বেঁচে থাকা বড় বিস্ময় l 

ব্যাসদেব লিখেছেন কবে ? তার চোখে ছানি নেই 

তার দেখা স্থির হয়ে আছে l 


লাল এবং সবুজ আলো সর্বত্র ছড়ানো -

আমি ধীরে ধীরে সবুজ আলোর কাছে যাই l

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much