২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

জাফর রেজা'র ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত "

আজ  থেকে শুরু হলো নতুন ধারাবাহিক লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত




ক্ষণিক বসন্ত


( ম পর্ব ) 

                       সারাদিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টির পর, এখন যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। এয়ারপোর্টে কিছু কাজ ছিল, কাজ শেষ করতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল। বাসায় ফিরছি, বৃষ্টির  জন্য গাড়ি আস্তে চালাচ্ছিলাম।
লন্ডনের ফাকা রাস্তা বৃষ্টির জন্য মনে হয় আরও ফাকা হয়ে গেছে।
হটাৎ চোখে পরলো বাস ষ্টপে একটি মেয়ে হাত তুলে লিফট চাইছে। দ্বিধা দন্ধ নিয়ে গাড়ি থামালাম, আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো আপনি কোন দিকে যাবেন, কোথায় যাব বলতেই সে বললো তার বাসাও ঐ দিকেই, বাসের জন্য অনেক্ষন অপেক্ষা করছে কিন্তু বাস পাচ্ছেনা, এখন আমি যদি দয়া করে তাকে লিফট দেই খুব উপকার হয়। দরজা খুলে দিয়ে বললাম উঠুন।
মেয়েটির দিকে তাকালাম, সম্ভবত বাংলাদেশী অথবা ভারতীয় হবে। আলাপচারিতায় জানলাম উনি ভারতের জলপাইগুড়ির মেয়ে, এখানে পড়ালেখা করতে এসেছে। দেশ থেকে যা শুনে এসেছে এখন দেখছে তার সাথে কোন মিলই নেই। এখানে থাকার মতো মুটামুটি একটি জায়গাও নেই, এক রুমে ওরা ৪ জন থাকে।  একটা চাকুরীও যোগার করতে পারেনি। ওর কথা শেষ হতে হতে তার বাসার সামনে এসে পরলাম। 

           ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম, নামার আগে বলল ধন্যবাদ, আমার সেল নাম্বারটি চেয়ে নিল। ওর বাসা আমার বাসা থেকে দুরে নয় মাত্র ৫ মিনিটের ড্রাইভ। কেটে গেল দুটো দিন। বিকালে অফিসে হিসাব মিলাচ্ছি এমন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে কল, রিসিভ করলাম, অপরিচিত মেয়েলি কন্ঠ, নাম জানতে চাইলাম, বলল, বুলা বলছি, সেই রাতে যে লিফট দিয়েছিলেন, মনে নেই, জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন, বলল ভাল নেই আমাদের কি একটু দেখা হতে পারে?  বললাম কোথায়, বলল হোয়াইয়চ্যাপলে একটা কফি সপ আছে ওখানে চলে আসুন ঠিক ৬ টায়, বললাম ঠিক আছে। কফি সপের সামনে গিয়ে দেখি বুলা দাড়িয়ে আছে, জিজ্ঞেস করলাম দাড়িয়ে কেন ভিতরে বসলেই পারতেন, বলল,  কোন অসুবিধা হচ্ছেনা,   বললাম চলুন ভিতরে গিয়ে বসি। দুজনে মুখোমুখি বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম কফির সাথে কি খাবেন? বললো শুধু কফি। বুলা ভারতের জলপাইগুরির মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে , বাবা সরকারি চাকুরীজীবি মা গৃহিনি দুই ভাই বোন, ভাই ওর ছোট, কলেজে পরে। বাবার জমানো টাকা আর কিছু ধার দেনা করে স্টুলন্ড ভিসায় লন্ডন এসেছে। লন্ডনে এক রুমে ও আর তিন মেয়ে থাকে। বুলা একটি পার্টটাইম  কাজ করে, সাপ্তাহিক বেতন খুবই সামান্য যা দিয়ে ওকে হিমসিম খেতে হয়। ওর কথা শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম,  বুলা বললো কিছু বলছেন না যে, আমি বললাম এখানে মোটামুটি ভাবে চলতে গেলে আপনাকে পড়ালেখা ছাড়তে হবে,  আমার কথায় আপনি যদি আঘাত পেয়ে থাকেন তবুও এটাই বাস্তবতা। কারন আপনি না দিতে পারবেন টিউশন ফি না পারবেন ঘর ভাড়া আর খাওয়া ও যায়ায়ত খরচ তো আছেই।  বুলা অনেক্ষন চুপ করে থেকে বলল এখন আপনই বলুন আমার কি করা উচিৎ। পড়া লেখা যে চালিয়ে যেতে পারবেন না তা তো অবশ্যই বুজতে পারছেন, এখন কি করে এই দেশে  একটু ভালভাবে থাকা যায় সেই চেস্টাই করা উচিৎ।  বুলা আবারও অনেক্ষন চুপ করে রইল তারপর মুখ তুলে আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল,  পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারবনা তা জানি।


        
    অলঙ্করণ : প্রীতি দেব

                              বুলার দিকে তাকালাম, সাধারণ এক বাঙালী মেয়ে, কিন্তু মুখখানি যেনো ভোরের সূর্যের মতো, মায়াবী চোখ দুটোতে যেনো নতুন দিনের ইশারা।
ভাবলাম এই মেয়ে যার ঘরে যাবে, তার ঘর আলোয় ভরে যাবে।
বললাম, এখন কি করবেন ঠিক করেছেন ? আবারো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, কি আর করবো একটা ফুল টাইম কাজ নেবো, তারপর দেখি।
আমরা দুজনেই চুপ করে রইলাম। নিরবতা ভেঙে বুলা জিজ্ঞেস করলো, আপনি কোথায় থাকেন?  বললাম আপনার কাছাকাছি।
জিজ্ঞেস করলাম, এখানে আপনার আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কেউ নেই ? বললো, আছে দূরসম্পর্কের এক পিসি যোগাযোগ নেই।
জিজ্ঞেস করলাম উনি জানেন আপনি লন্ডন আছেন ?
বললো, তা জানেন।
বুলা চলুন উঠা যাক।
রাতে শোবার আয়োজন করছিলাম এমন সময় বুলার কল, জিজ্ঞেস করলো শুয়ে পরেছেন, বিরক্ত করলাম না তো ?
বললাম, না এখনো শুইনি, শোবার আয়োজন করছিলাম, বুলা আপনি বলুন।
--- একটি কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো ?
--- বুলা আপনি বলুন।
বুলা খুব অসহায় কণ্ঠে বললো, আপনি কি আমাকে একটা কাজ যোগার করে দিতে পারবেন ?  যাতে মোটামুটি ভাবে চলতে পারবো । 



ক্রমশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much