১০ ডিসেম্বর ২০২০

মমতা রায় চৌধুরী


বেলা শেষে স্কুল স্মৃতি 


আজ আমার স্কুলের শেষ বেলায় 

পড়েছে টান হৃদয়বীণায় ।

মনের কোনে দক্ষিণা বাতাস 

দিল যখন দোলা, তখন

হৃদয় উদাস করা ডাক মরমে কোন

হতাশ এনে বেদনা দিল নিবির করে। 

হায়ার সেকেন্ডারীর রেজাল্ট হাতে

একবার গিয়ে দাঁড়ালাম পড়ন্ত বিকেলের 

কামরাঙা গাছের স্মৃতি বিজড়িত স্নেহাঞ্চলে ।

মনের কোনে উঁকি দিল বিদায়ের ডাক, 

আর জমে থাকা হৃদমাঝারে সঞ্চিত ছবি, 

স্মরণ করালো প্রতিদিনের আলোড়িত স্মৃতি। 

সেই প্রথম দুরু -দুরু বুকে আসা -

পঞ্চম শ্রেণীর প্রথম 'ক' বিভাগের ক্লাস -

নূতন দিদিমণির গাম্ভীর্যপূর্ণ মুখচ্ছবি, 

ধীরে ধীরে স্নেহের বন্ধনে কবে 

পড়লো বাঁধা ভালোবাসার দুটি আঁখি। 

সহপাঠীর আদর জড়ানো হৃদস্পন্দন 

অনুভূত হয় বেলা শেষে তার প্রতি ক্ষন। 

মনে পড়ে - 

করবী, গোলাপ, গাঁদার একরাশ আতর মেখে

ছুটি শেষে হল্লা করে ঘরে ফেরার তাগিদ। 

আবার স্কুল চত্বরে দিদিমণিদের চোখ বাঁচিয়ে 

বসতো যখন টিফিন মজলিস ,

তখন প্রতি পল কাব্যিক হয়ে উঠতো। 

আবার কখন‌ও কাব্য এসে ভিড় জমাতো

রবীন্দ্র - নজরুল জন্মতিথিতে অথবা 

বর্ষামঙ্গল ভাষাদিবসের ছন্দ গাঁথার বাণীতে। 

আবার সরস্বতী পুজোটা হতো অন্যমাত্রার -

ঘর সাজাতে ছবি আলপনাতে, 

তাই দোতলার ঘরে জানলার কাছে 

কখন‌ও দাঁড়িয়ে প্রেমিককে খুঁজতাম 

প্রাক্ ভ্যালেন্টাইন ডেজের প্রস্তুতিতে। 

আবার কখন‌ও স্কুল স্পোর্টসের মাঠে 

'গো অ্যাজ ইউ লাইকেতে'- স্বাতন্ত্র মন্ডিত করে, 

অথবা অ্যাংকারিং এ নূতনত্বের ছোঁয়ায় 

কালচারাল প্রোগ্রামকে দীপ্তিময় করতে। 

কখন‌ও বা বসন্ত উৎসবে রঙীন করে সেজে উঠতাম 

সহপাঠীর হলুদ - সবুজ, লাল রাণীর আবিরে,

আর

আগুন রাঙা লাল পলাশের ফুলের আতর মেখে। 

ঋতু চক্রের আবর্তনের রঙে

আমরা বদলাতাম তার‌ই ছন্দে। 

হৃদয়ের একুল ওকুল দুই তীরে 

আজ বিদায় লগ্নে 

বাঁজছে বাঁশী হৃদযন্ত্রে ।

আমাকে যেতে হবে স্নেহের নীড় ছিন্ন করে, 

ব‌ইবে শুধু স্কুল স্মৃতি ফল্গুধারায় বেলাশেষে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much