প্রিয়জন না প্রয়োজন
আজ কোর্ট এর রায় বেরোবে। সকাল থেকেই খুব টেনশন এ আছে মনামী। কয় দিন ছুটি নিয়েছে। প্রাইভেট সংস্থা, সহজে ছুটি দিতে চায় না। তাও আবার বেশি দিন হয়নি কাজ। বাধ্য হয়েই অবশ্য কাজটা নিয়েছে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য। এই ভাবে যে জীবনটা পাল্টে যাবে কোনদিন ও ভাবে নি।
স্কুল থেকেই দীপেশকে চেনে মনামী। একই স্যারের কাছে টিউশন, যাওয়া আসা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া সব কিছু। তখন ঠিক প্রেম বা ভালবাসার ব্যাপারটা ছিল না। বন্ধুত্বটা বেশি ছিল। দুজনের ভালোলাগা গুলোও ছিল একই রকম। ছবি আঁকা, গান, সাঁতার দুজনেই ভীষণ ভালোবাসত। ক্রমশ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মনামী কলেজ , দীপেশ এগ্রিকালচার নিয়ে ভর্তি হল উড়িষ্যায়। দূরে চলে যাওয়ার জন্যই দুজনেই অভাব অনুভব করল । বুঝতে পারল দুজনে দুজনকে ভালোবাসে।
কিন্তু কেউ কাউকে সেই ভাবে বলে উঠতে পারল না । ফোনে কথা বলা, চ্যাট ভিডিও কল নিয়মিত হত। এইভাবে মনামী কলেজ পাস করল। দীপেশ ও ক্যাম্পাসিং এ ব্যাঙ্ক থেকে সার্ভিস পেয়ে গেল। একদিন দীপেশ ঠিক করল একটা বড় রেস্টুরেন্টে পার্টি দেবে। সেখানে সারপ্রাইজ আছে, মনামীকেও ইনভাইট করল। যথারীতি ওইদিন মনামী পার্টিতে উপস্থিত হল। দীপেশ ওই দিনই তার ভালোবাসার কথা জানায় এবং বিয়ের প্রস্তাব ও দেয়। যা ছিল মনামীর কাছে অভাবনীয়। তবে খুশিই হয়ে ছিল। কারন সেও তো কোন দিন বলে উঠতে পারেনি তার ভালোবাসার কথা।
দীপেশ ভালো চাকরি করে, মনামী ও যথেষ্ট সুন্দরী, তাই দুই বাড়ি থেকে কেউই আপত্তি করেনি। যথারীতি ওদের বিয়ে ও হল। বেশ আনন্দেই কাটছিল দিনগুলো। স্বপ্নের মতো। দীপেশকে যে এইভাবে এত কাছে পাবে ভাবতেই পারে নি। কারণ কলেজ পাস করার পর , দীপেশের তখনও একবছর বাকি ছিল কলেজ শেষ হওয়ার, এরই মাঝে বাড়ি থেকে সম্বন্ধ দেখা শুরু করে দিয়েছে। দীপেশকে বলেছিল, কিন্তু কোন উত্তর দেয়নি। কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না।তাই দীপেশ যখন নিজেই প্রস্তাব দিল একটু অবাকই হয়েছিল।
কিন্তু কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল, বিয়ের ছয় মাস না যেতে যেতে দীপেশ কেমন যেন পাল্টে গেল। রাত করে বাড়ি ফিরতে লাগল, জিজ্ঞেস করলে গালাগালি করা শুরু করল। ক্রমশ সেটা বাড়তে বাড়তে গায়ে হাত তোলা ও শুরু করল। সব কিছুই মেনে নিয়ে ছিল মনামী। কিন্তু যে দিন দেখল দীপেশের মোবাইলে তারই কলিগের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি। আর মেনে নিতে পারেনি মনামী। মাত্র একবছরের সংসার জীবন তাদের। সব ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে আসে। কেন জানে না দীপেশ ও বাধা দেয়নি। আরও বলেছে মনামীকে নাকি বোরিং লাগে। দীপেশই ডিভোর্সের মামলা করেছে। একবছর ধরে মামলা চলার পর আজ রায় দেবে।
ইস্ খুব দেরি হয়ে গেল। মনামী ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে পড়ল। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। আজ ও তো একমাত্র দীপেশকেই ভালোবাসে। তার জীবনে অন্য কোন পুরুষ নেই। সেই তো সব থেকে প্রিয়জন ছিল দীপেশের জীবনে। আজ কি তবে প্রয়োজন ফুরিয়েছে ?
কিছুই আর ভাবতে পারছে না... আনমনে হেঁটে চলে মনামী... অনিশ্চিত জীবনের পথে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much