০৪ নভেম্বর ২০২০

তুষার ভট্টাচার্য

নিরুদ্দেশ যাত্রায় 

শীতের হিম কুয়াশা মাখা শুনশান চরাচর, ধান মাঠ, আলপথ পেরিয়ে অবশেষে চোখের সামনে ভেসে উঠছে যে অচেনা অন্ধকার ভুতুড়ে স্টেশন, সেখানে কোনও স্টেশন মাস্টার নেই, যাত্রীদের কোনও  কোলাহল নেই, হকার নেই।
শুধু ঝাঁকড়া চুলের একটা বৃদ্ধ পাগল চোখে হলুদ লন্ঠন জ্বেলে নৈশ প্রহরীর মতন ঘুরে বেড়াচ্ছে প্ল্যাটফর্মের এদিকে ওদিকে ।ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে তাঁর জ্বলন্ত চোখে শুধুই প্রশ্ন জেগে উঠছে  - এত রাত্রিরে আপনি মশাই কোথায় যাবেন,কোন ঠিকানায়? এখন কোনও ট্রেন নেই;

                         বরং আমার সঙ্গেই চলুন ।ওই যে একফালি সরু কোপাই নদী, তার পাশেই ছোট্ট শ্মশান; জঙ্গলে জেগে আছে কয়েকটা ক্ষুধার্ত শেয়াল আর শকুন;

                   একটা রাত এখানে কাটালেই বুঝতে পারবেন -এই পৃথিবীতে মানুষ কত একা, নিঃসঙ্গ; এখানে এই যে দেখছেন ইস্টিশন আর নিঝুম শ্মশান!

শুধুই ক্ষণিকের আসা আর যাওয়া।মাঝখানে মাত্র কয়েকটা দিন; তারপরে সবকিছু ফেলে দিয়ে চলে যেতে হবে   দিকশূন্যপুরে, একাকী নিরুদ্দেশ যাত্রায় ।

               আপনার বুঝি এখনও রয়ে গেছে শিকড়ের মায়াটান? তবে ফিরে চলে যান; ভাবছেন সংসারে দু'দণ্ড শান্তি খুঁজে পাবেন!
                   শান্তি যদি কোথাও থেকে থাকে তবে এই ইস্টিশন আর নীরব  শ্মশান।স্নেহ, মায়া মমতা, ভালবাসা বলে কিছু নেই এই পৃথিবীতে; সবকিছুই অলীক বাসনা, মিথ্যের মায়াজাল ।

      '   কোথাও শান্তি নেই,ভালবাসা নেই'
নিঝুম শীত রাত্রির হিমেল বাতাসে শুনশান স্টেশন জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছে পাগলের কণ্ঠস্বর  -  কোথাও শান্তি নেই, ভালবাসা নেই;
তাঁর চিৎকারে জঙ্গলে জেগে উঠছে কয়েকটা শেয়াল , নিম ডালে বসে ডানা ঝাঁপটায় কয়েকটা শকুন ;
     আর     ফিকে চাঁদ ঘুম দেয় টলটলে নদী জলে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much