কে আইছে
গাছতলার ঠেকে পৌঁছতেই দেখি জাপান বাউরীকে সঙ্গে নিয়ে হরেন ঠাকুর যাচ্ছে । কী হরেন কোথায় গিয়েছিলে এদিকে ? আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই জাপান বলে উঠল—কে আইছে ? আমি তাকে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিই—কেউ আসে নি । হরেন হেসে বলল—কী যে বলে জাপানটা । কে আইছে নয় । কে ওয়াই সি । ঐ যে ব্যাঙ্কে নাড়ি নক্ষত্র জমা দিতে হয় না ? আর বলবেন না কাকা । এ ব্যাটা তো লিখতে পড়তে জানে না । তা আবার ইংরিজি । এই নিয়ে তিনবার ওর কে ওয়াই সি ফিল আপ করে দিয়ে এলাম । এক এক বার দিই আর বলে ঠিক আছে যান । কিছু দিন পর আবার চিঠি আসে – তোমার কে ওয়াই সি দেওয়া নেই । অবিলম্বে জমা দাও ।
প্রথমবার এক নেপালি অফিসারের হাতে জমা দিয়েছিলাম । তিনি দেখে বললেন-- ঠিক আছে যান । কিছুদিন পর আবার যখন সেই একই কথা তখন গেলাম ব্যাঙ্কে । গিয়ে শুনি সেই নেপালি অফিসার বদলি হয়ে গেছেন আর জাপানের কে ওয়াই সি-র কোনো হদিস নেই ।
মাঝের বার যে অফিসারের কাছে জমা দিয়েছিলাম তিনি অবশ্য বদলি হন নি । তবে তাঁর স্মৃতিভ্রংশ হয়েছিল । তিনি কিছু মনেই করতে পারলেন না --দিয়েছিলেন বুঝি ! আমাকে ? আমি তো কিছুই মনে করতে পারছি না । যাই হোক ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আর একবার দিয়ে দিন । বুঝলাম তিনি সেটিকে রেফার টু ড্রয়ার করে দিয়েছেন । এর পর আবার ফর্ম ফিলাপ এবং জাপানের বিলাপ –- দেখুন কেনে আবার আইসতে হবেক । সেবার এক মহিলা অফিসার । তাঁকে এই সুদীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা করে বসে থেকে কাজটা করিয়ে নিয়ে গেলাম । একজন নিরক্ষর মানুষকে সাহায্য করতে পেরে আমার মনে খুব তৃপ্তি হল -- বলল হরেন ঠাকুর ।
তত দিনে জাপান বাউরীর মোবাইল হয়েছে । শেষের কে ওয়াই সিতে প্যান আধার মোবাইল সব গেঁথে গেছে । হরেন ভাবল যাক নিশ্চিন্ত । জাপান আর ঘ্যানঘ্যান করবে না । কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার জাপান। মোবাইল বাড়িয়ে । মেসেজটা পড়া হল । সেই একই--কে ওয়াই সি দেবার সাদর আমন্ত্রণ ।
সেই একই মহিলা । আপনার কে ওয়াই সি জমা আছে তো । তাহলে , কেন এসেছেন ? কেন ? এই দেখুন আপনাদের নেমতন্ন পত্র । মহিলা অফিসার আকাশপাতাল ভেবে যাচ্ছেন এমন ভুল কী করে হল । অফিসার জিজ্ঞেস করলেন -–আপনার কোনো চেঞ্জ থাকলে বলে যান । জাপানকে ক্ষেতের কাজ ছেড়ে আসতে হয়েছে বলে এমনিতেই ভেতরে ভেতরে ফুটছিল । এই প্রশ্ন তো ইন্ধন । জাপান গম্ভীর মুখে বলল--- হঁ চ্যাঞ্জ আছে তো । বাপের নাম আর জনমদিন এই দুটো চ্যাঞ্জ হবেক । লিখে লেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much