২১ ডিসেম্বর ২০২১

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৩৬





শায়লা শিহাব কথন

অলিখিত শর্ত( পর্ব ৩৬)

শামীমা আহমেদ 



সারাদিন শায়লার আর কোন খবর পাওয়া হলো না। সন্ধ্যায় কল দিয়েও ফোন রিসিভ না করাতে শায়লার শারীরিক অবস্থাটা জানা হলো না। একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে শিহাব বিছানায় গেলো। সারাদিন ভীষণ অস্বস্তিতে কেটেছে। আজ যতকিছু পূর্ব নির্ধারিত এপয়েন্টমেন্ট ছিল শিহাব সব ক্যান্সেল করে দিয়েছিল। শায়লার এমন অবস্থায় শিহাব কোন দিকেই যাবে না।
আরো কয়েকবার কল করেও শায়লার ফোনটা বন্ধ পাওয়া গেলো আর সেটাই স্বাভাবিক। অসুস্থ রোগীর ফোন বন্ধ রাখাই উচিত।শিহাবের বেশ অস্থির লাগছিল। কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে।একটু শায়লার সাথে কথা বলা যাবে।বুঝিয়ে বলা যাবে, তুমি যা ভেবে এতটা আকুল হয়েছো তা তোমার বুঝবার ভুল। এমনি  নানান ভাবনায় শিহাবের দু'চোখ বুজে এলো। কখন যেন মনের অজান্তে ঘুমিয়ে গেলো। 
সকালের রাউন্ডে এসে ডক্টররা জানালেন রোগী এখন বেশ স্টেবল।প্রেসার পালস হার্টবিট নরমালে আছে। শারীরিক সবকিছু স্বাভাবিক
চলছে।  ঘুম খাওয়া স্বাভাবিক হয়েছে।ডক্টর  জানালেন  স্যালাইনটা শেষ হলেই চাইলে আজ দুপুরে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।
রাহাত বাধভাঙা আনন্দে ভেঙে পড়লো। আপুকে বাসায় নিয়ে ফিরবে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে! মা ও ভীষণ খুশি! সকালে রাহাত কেবিনে এসে শায়লার ফোনটা চার্জে দিয়ে রেখেছিল। এখন ফোনটা হাতে তুলে নিলো আর ইচ্ছে করেই শায়লার সামনে শিহাবকে কল দিলো। বেশ উচ্চস্বরেই কথা বললো, শিহাব ভাইয়া আপু আজ মাশাল্লাহ  বেশ সুস্থ। আমরা আজ দুপুরেই হাস্পাতাল ছাড়ছি।
শিহাব অফিসে যাওয়ার  জন্য তৈরি হচ্ছিল।খবরটা পেয়ে যেন অনেকটাই মনটা শান্ত হলো। তবুও শায়লার সাথে দেখা করার অপেক্ষায় রইল। শিহাবের সাথে কথা বলার সময় রাহাত শায়লার মুখের অভিব্যক্তিটা বুঝে নিলো।ডাক্তারের পরামর্শ মত রাহাত এখন থেকেই আপুর সাইকোলজিক্যাল বিষয়গুলো খেয়াল করছে।রাহাত  ওর এক বন্ধুকে কল দিয়ে হাসপাতাল রিলিজের কথা জানালো। বন্ধু জানালো গাড়ি পাঠিয়ে দিবে  ওরা যেন এম্বুল্যান্স না নেয়। মাকে সবকিছু গুছিয়ে নিতে বলে রাহাত বিল সেকশনে গেলো। হাসপাতালের সব  রকম প্রসেস মত বিল চুকিয়ে কেবিনে আসতে রাহাতের প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেলো। রাহাত রুহি খালাকে জানিয়ে দিল আজ আর হাসপাতালে খাবার না পাঠাতে। আমরা সবাই বাসায় ফিরছি আর বাসায় ফিরেই  দুপুরের খাবার খাবো।
মা আর শায়লাকে নিয়ে রাহাত ব্যাগপত্র গাড়ির ব্যাকডালায় দিয়ে রাহাত গাড়িতে উঠল। ড্রাইভারকে জানালো আগেই বাসায় নয় গাড়িটা একটু এয়ারপোর্টের দিক থেকে ঘুরিয়ে আনুন। এখুনি বাসায় যেতে মন চাইছে না। মা আর শায়লা বেশ খুশি হলো! 
আসলে রাহাত চাইছে আপুর ভেতরের দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে যেন আবার বাসায় না ঢুকে।যতটা মাথা থেকে তা ঝেড়ে ফেলা যায়। 

আর কাউকে দিয়ে নয়, রাহাত ভাবলো সে নিজেই আপুর সাথে ফ্রিলি সব কথা বলবে, শিহাবের ব্যাপারে জানতে চাইবে। আপু নিশ্চয়ই সব খুলে বলবে। তারপর দ্রুতই কানাডার প্রসেসটা শুরু করতে হবে।
বাসায় ফিরে শায়লা বেশ ভালো অনুভব করছে। রাহাত আপুর দিকে খুব তীক্ষ্ণ  দৃষ্টি রাখছে। আপাততঃ আপুর হাতে ফোনটা দেয়া যাবে না। ফোনের কথায় আবার আবেগাপ্লুত হয়ে যেতে পারে বা অন্যরকম কোন মানসিক আঘাত আসতে পারে। রাহাতের মনে একটা বিষয়  ঘুরপাক খাচ্ছে। কে এই শিহাব? তার সম্পর্কে  জানতে হবে। রাহাত শায়লার ফোন থেকে শিহাবের নম্বরটা
টুকে নিলো।
দুপুরে মা ও রুহি খালা বেশ যত্ন করে শায়লাকে খাবার খাওয়ালো। রাহাত মাকে আগেই জানিয়ে রেখেছে  আপাতত আপুকে নিজের ঘরে একা যেতে দিবে না। মায়ের ঘরে আজ রাতটা থাকবে। তাছাড়া শায়লার ঘরের দরজার লকটা সেদিন ভাঙা হয়েছিল।সেটাও ঠিক করাতে হবে। সাথে একটা ছোট্ট এসি লাগয়ে দিতে হবে।সেদিন আপু কেমন করে ঘেমেছিল!কতটা অস্থিরতায় না যেন কষ্ট পেয়েছে। 
শায়লা মায়ের ঘরে ঢুকলো। 
বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। ঘুমের ঔষধের প্রভাব এখনো আছে। শায়লা মায়ের বিছানার কাছে গেলো।অনেকদিন পর আজ এই ঘরে ঘুমাচ্ছে।বিয়ের পর থেকে একা একা একটি রুমে থেকেছে।শায়লা ভাবলো,আমরাতো জানি মানুষ  বিয়ের পর দুজন হয়,একা থাকার দিন শেষ হয়।তার জীবনে উল্টো  হলো। বিয়ের পরই মায়ের ঘর ছেড়ে  নিজের ঘরে একা হয়ে গেলো। এমনটি ভাবতেই তার শিহাবের কথা মনে পড়ে গেলো।না, সেতো একা ছিল না।তার সাথে শিহাব ছিল। নাহ! আর শিহাবকে নিয়ে ভাবা যাবে না। সেতো আমার একটা খোঁজও নিলো না।আমিতো প্রায় মরেই যাচ্ছিলাম।আমাকে একটু দেখতেও এলোনা। শিহাবের কথা মনে হতেই ভেতর থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। শায়লা মায়ের বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লো।
রাহাত আর মা একসাথে দুপুরের খাবার খেতে বসলো। সাথে রাহাত শায়লাকে নিয়ে মাকে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা জানিয়ে রাখল। 
মা যেন শায়লার দিকে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখে। যদিও শিহাবের কথাটা মাকে জানালো না। রাহাত বিষয়টি নিয়ে ভীষণ চিন্তামগ্ন হলো। বুঝাই যাচ্ছে শায়লা আপু কোন দ্বন্দের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। 
খাবার খেয়ে রাহাত নিজের রুমে চলে এলো। সারাক্ষনই ভাবছে  আপুর সাথে কিভাবে কথা বলা শুরু করবে। তবে আজ থেকেই নয়। আগে শিহাব সাহেবের সাথে পরিচিত হতে হবে।লোকটি কেমন সেটা জাজ করে আপুর কথা শুনতে হবে।মেয়েদের পক্ষে একটা ছেলের সবদিক বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। মেয়েদের কাছে তারা শুধু ভালোটাই দেখায়।আর খারাপ দিকটি আড়াল করে রাখে।কোমলমতি মেয়েরা সেটা ধরতেই পারে না।এইজন্য মেয়েরা প্রতারিত হয় বেশী। নিশ্চয়ই আপু শিহাব সাহেব থেকে এমন কোন ভাবে প্রতারিত হয়েছে। রাহাত আর কৌতুহল  দমিয়ে রাখতে পারছে না।তাছাড়া আপুর খবরটাও তো দিতে হবে। রাহাত নিজের ফোন থেকে শিহাবকে কল করলো। একবার দুবার পূর্ন রিং হয়ে থেমে গেলো। কি ব্যাপার ফোনটা রিসিভ করলো না কেন? অবশ্য হতে পারে আননোন নাম্বার তাই রিসিভ করলো না।কিন্তু ছেলে মানুষরা কি আর আননোন 
নাম্বারকে ভয় পায়? শিহাবকে নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনায় ডুবে রইল রাহাত। আবার উল্টো করেও ভাবছে শিহাবকে নিয়ে, আচ্ছা এমনও তো হতে পারে শিহাবসাহেব লোকটি খুবই ভাল। নয়তো কি আর আপু তার সাথে পরিচিত হতো? আসলে খুব তড়িঘড়ি করে আপুর বিয়েটা হয়ে যায়।আগপিছ না ভেবে। অবশ্য তখন কি আপুর শিহাব সাহেবকে চেনা ছিল? তাহলে কেন বলেনি। তাহলে এত দূরদেশে আপুকে বিয়ে দিতে হতোনা। আজ আর এত জটিলতাও  হতো না।কি জানি সব কেমন ঘোলাটে লাগছে। শায়লা আপুর মত মেয়েরা আজো মুখ ফুটে নিজের পছন্দের কথা বলতে পারে না। আপুর সাথে যে একবার মিশবে আপুকে পছন্দ না করে থাকতেই পারবে না।হঠাৎই শিহাবের নাম্বার থেকে কল ব্যাক হলো।
রাহাত ধরতেই শিহাব জানতে চাইল কে বলছেন? দুঃখিত আমি বাইক চালাচ্ছিলাম।তাই কলটি ধরতে পারিনি।কে বলছেন? 
রাহাত জানালো, আমি রাহাত। শায়লা আপুর ছোট ভাই।আপনার সাথে দুবার কথা হয়েছে।এটা আমার নাম্বার।আপুর ফোনটা আপাতত বন্ধ রয়েছে।
শিহাব জানতে চাইল, শায়লা এখন কেমন আছে?
ভালো। দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে। 
বেশ ভালো। ওর রেস্ট প্রয়োজন। 
রাহাত জানতে চাইল, আচ্ছা আমি যদি আপনাকে মাঝে মাঝে কল করি কিছু মনে করবেন নাতো?
আরে নাহ! কেন মনে করবো? যখন ইচ্ছে কল করবেন। আচ্ছা ভাইয়া, আমি রোড সাইডে বাইক থামিয়ে কথা বলছি।আমাকে একটু গাজীপুরের দিকে যেতে হবে।  যদি,,
ওহ! শিওর।  
শিহাব বাইকে স্টার্ট দিল। রাহাত নিজেও একটু  বিশ্রাম নেয়ার জন্য চোখটা বন্ধ করলো। 



চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much