১২ ডিসেম্বর ২০২১

রাবেয়া পারভীন /১১তম পর্ব)





স্মৃতির জানালায় 
(১১তম পর্ব)
রাবেয়া পারভীন 



                              বুকের ভিতরটা দারুনভাবে তোলপাড় করে  উঠল মাহতাবের। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে।  দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে  ফেলল  সে।  মনে  হলো শবনমের  দৃষ্টি  থেকে নিজেকে  আড়াল করতে পারলেই যেন  বাঁচে। এবার  ঝাঁঝালো  কন্ঠে  শবনম  আবার বলল
- চুপ করে আছো কেন ?  জবাব দাও।
মাহতাবের  দুই  চোখ ভরে গেল  পানিতে। কি জবাব  দেবে  সে  শবনমের  প্রশ্নের। ওর  প্রশ্নের  উত্তর  দেবার মত কোন জবাব সে খুঁজে  পেলনা। হাত দিয়ে মুখ ঢাকা অবস্থায়  সে টের পেল  শবনম  তাঁর  খুব  কাছে  এসে দাঁড়িয়োছে। মাহতাবের  মাথায়  একটা  হাত  রাখল  সে। এই অল্প  একটু স্পর্শ , শবনমের  পদ্মকলির মত আংগুল  ছুঁয়ে আছে  মাহতাবের  চুল। ওর শারা শরীর  থর থর করে কেঁপে  উঠল। শরীরোর প্রতিটা লোম খাড়া হয়ে গেছে। মনে হচ্ছিলো সে  খাট থেকে নীচে পরে  যাচ্ছে । শুধুমাত্র। মাথায় হাত রেখেই  মাহতাবের  পুরো অবস্থাটা  টের  পেল  শবনম।  আস্তে আস্তে  বলল
- কেন এত ভীতু  তুমি ?  নিজের জিনিস সাহস করে চাইতে পারোনা ?
ফুপিয়ে কেঁদে উঠল  মাহতাব।  ডানে বায়ে মাথা দুলিয়ে বলল  
- না শবনম না, সে সাহস আমার নেই।
- কেন নেই ?  নিজের  জিনিস  অন্যে নিয়ে গেলেও নেই ?  
- না তোমাকে চাইবার যোগ্যতা  আমার নেই
- আমার দিকে তাকাও মাহতাব , তাকিয়ে বলো  আমাকে চাওনা ?
মুখ থেকে হাত সড়িয়ে করুন দৃস্টিতে  শবনমের দিকে তাকালো মাহতাব। শবনম তার ডান হাত প্রসারিত  করে দিল  মাহতাবের সামনে। বলল
- ওদের দেয়া এই আংটি  তুমি হাত থেকে  খুলে দাও,  তারপর আব্বার সামনে  গিয়ে বল, তুমি আমাকে চাও।
বিস্ময়ভরা চোখে শবনমের  মুখের দিকে তাকিয়ে রইল মাহতাব।  শবনমের  চোখে  কোন দ্বিধা নেই  কোন মলিনতা নেই।  তার সিদ্ধান্তে  সে একেবারে  অটুট।  কিন্তু  যে স্যারর তাকে  নিজের ছেলের মত ভালোবাসেন, তাকে বিশ্বাস  করে  নিজের  মেয়ের  সাথে  মিশতে  দিয়েছেন  সেই  দেবতুল্য  মানুষটির কাছে গিয়ে  সে  কি করে এই অন্যায়  আবদার  করবে ?  না না  এটা সে মরে গেলেও পারবেনা । সে অসহায়ের মত শবনমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আবার তাগিদ দিল শবনম।
- কৈ  খোলো  আংটি !  
- না শবনম  আমি এটা  পারবোনা।
- তুমি তো  আমাকে  ভালোবাস তাহলে কেন পারবেনা ? সত্যি  করে বলো  তুমি আমাকে ভালো বাসোনা ?
-অস্বীকার  করলে মিথ্যা বলা হবে
-তাহলে ?  
-তবুও। আমি পারবোনা।
- তবে  আমার এতদিনের  ভালোবাসা কি ভুল ?  আমি কি আমার প্রানের  অর্ঘ  ভুল মানুষকে  সমর্পণ  করেছি ?
- হয়তো ।
মাহতাবের  কথায় একটা  দীর্ঘশ্বাস  ছাড়ল শবনম  তারপর  নিজেই নিজের হাতের আংটি  খুলে ছুঁড়ে  দিল  টেবিলের  উপর। তারপর বল্ল
ঠিক আছে তোমাকে কিছু বলতে  হবেনা  আমিই আম্মাকে বলব  যা বলার ।
মাহতাব  বলল
- কিন্তু  খালাম্মা যে  আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছিলেন  তোমার মতামত জানার  জন্য !  
- ওহ্ হো তাই নাকি  তাহলে যাও  গিয়ে বলো  এ বিয়েতে  আমার  মত নেই।
- এসব কি তুমি  ভেবে চিন্তে বলছো ?
- অনেক আগেই৷ ভেবেছি  আর ভাবতে পারবোনা।
দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে  শবনমের ঘর থেকে বেরিয়ে  খালাম্মার  ঘরের  দিকে গেল  মাহতাব। রাগে দুঃখে  ওর চলে যাওয়া  পথের দিকে  চেয়ে রইল শবনম।



 চলবে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much