১৩ ডিসেম্বর ২০২১

শামীমা আহমেদ/পর্ব ৩০




শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৩০)
শামীমা আহমেদ 

চোখে মুখে একরাশ কষ্টবোধ আর থমথমে একটা ভাব নিয়ে শায়লা শিহাব দুজনে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো। যেমন পাশাপাশি হেঁটে দুজনে ঢুকেছিল এখন ঠিক  সেভাবেই বেরিয়ে এলো। মাঝের সময়টাতে যেন দুজনার মনে বয়ে গেলো এক টর্নেডো ঝড়। সে ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেলো শিহাবকে ভেবে শায়লার শত যত্নে গড়া স্বপ্নবাগান। শায়লার ভেতরে যেন এক বিশাল পাহাড় ধ্বস হয়ে গেছে। আর শিহাবও অনুচ্চারিত এক  বোবা পাহাড়। ভেতরে শত ব্যথা কষ্টের বোঝা নিয়েও অটল অজেয় পর্বত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন। শায়লা দাঁড়ালো,  শিহাব পার্কিং থেকে হেলমেট পড়ে বাইক নিয়ে এগিয়ে এলো। শায়লা স্থির হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল। শায়লা এই ভেবে ভীষণ  অবাক হচ্ছে যে কত সহজ করেই শিহাব সবকিছুর ইতি টেনে দিলো। শায়লা তার  জীবনের জন্য এটা বুঝে নিলো যে, আমরা যেখানে স্বপ্নতোরণ সাজাই আসলে সেটা শুধুই একটা কল্পনার ভাবাবেগ।বাস্তবতার সাথে  তা  একেবারেই বৈশাদৃশ্য। শিহাব বাইক থেকে নেমে শায়লাকে এক ঝলক দৃষ্টি দিয়ে লুকিয়ে দেখে নিলো। পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,, চলো তোমাকে নর্থ টাওয়ারে নামিয়ে দিচ্ছি।তোমারতো কেনাকাটা বাকী। কিন্তু শায়লার ভেতরে যেন কোন কথাই প্রবেশ করছে না। শিহাব এবার একটু জোর দিয়েই বললো, শায়লা চলো তোমাকে নামিয়ে দেই।
এবার শায়লার মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো, না, আমি আজ আর কেনাকাটায় যাবো না।আমার ভাল লাগছে না শিহাব।শিহাব বুঝতে পারলো তার কথাগুলো শায়লাকে বেশ আহত করেছে।তবে এভাবে না বললে সময় বয়ে যাচ্ছিল দুজনেই ভুল করবার পথে হাঁটছিলাম। শিহাব রিকশার জন্য এগিয়ে গেলো।শায়লা তার পিছু পিছু হেঁটে চললো। শায়লা জানেনা কেন শিহাব সামনে এলে সে নিজেকে এতটা গুটিয়ে নেয়! কেন সহজ সাবলীলতায় কথা বলতে পারে না। শায়লার ভেতরে ভেতরে শুধু জমানো কথার স্তুপ।এই রিকশাতো সে নিজেই করে নিতে পারতো  কিন্তু কেন শিহাবের উপর এত নির্ভরতা। শিহাবের ইঙ্গিতে শায়লা সেই  রিকশাতেই উঠে গেলো।
শায়লা মেইন রোডের বাঁক নিতেই এতক্ষণে শিহাবের বাইকের আওয়াজ পাওয়া গেলো।তবে কি শিহাব এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল,দাঁড়িয়ে শায়লার রিকশাটা যতদূর দেখ যায় তা দেখছিল।
শিহাব বাইকে স্টার্ট  দিল। মনটাকে বদলে নিয়ে একটা কাজের উদ্দেশ্যে  গুলশানের দিকে এগিয়ে চললো।পুরুষদের বোধহয় এমনি হতে হয়।লৌহ কঠিন মন।যেখানে  মৃতের বাড়ি থেকে ফিরেও আবার কথার বরখেলাপ না করে কোন উৎসব আনন্দেও যোগ দিতে হয়।তাইতো যেখানে ভালবাসা অংকুরিত হয়েছিল নিমিষেই তা ধুম্রকাঠির মত পিষে ফেলে সব নিশানা মুছে ফেলতে পারলো শিহাব।
শায়লার  রিকশা এগিয়ে চললো।শায়লার অনুভুতিতে নিজেকে নিঃসাড় ভাবছে।সে কোথায়?  বা সে কোথায় যাচ্ছে কিছুই খেয়ালে নেই। হঠাৎ ভাঙা রাস্তায় রিকশার এক ঝাঁকুনিতে শায়লা  নিজের মাঝে ফিরে এলো। রিকশাকে নির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিলো।বাড়ির দরজায় ভাড়া মিটিয়ে দোতলায় উঠে এলো।
শায়লা কেনাকাটা থেকে এত দ্রুত ফিরে আসাতে মা বেশ অবাক হলো।সাধারণত এ ক'দিন  সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই করে শায়লা বাসায় ফিরেছে। শায়লা কোন কথা না বলে মায়ের ঘরে শপিংগুলো রেখে নিজের রুমে চলে এলো। দরজা লক করে বিছানায় বসলো।শায়লার কাছে পৃথিবীটা আজ মিথ্যা লাগছে।মনে মনে  এই পৃথিবীকে সে তিরস্কার করছে।
সে যেন শায়লার সুখ সহ্য করতে পারছে না তাইতো একঝাঁপি দুঃখ আজ তার উপর ঢেলে দিয়েছে। শায়লা ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে নিলো। শিহাবের প্রোফাইলে গিয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল। নানান কথা স্মৃতি বিস্মৃতি হয়ে আসতে লাগলো। এতটা কাছে এসেও হঠাৎ  অচেনা হয়ে যেন পাড় ভাঙনে শায়লার সব কিছু তলিয়ে গেলো। বানভাসি মানুষের মত স্রোতের তোরে ভেসে গেলো যত চাওয়াপাওয়া ইচ্ছার অনুভুতিগুলি। শায়লার চোখ থেকে অবিরল ধারায় জল পড়তে লাগল। শায়লার একে একে মনে পড়তে লাগলো শিহাবের সাথে পরিচয়ের সেই প্রথম দিনের কথা। কিভাবে এত দ্রুত সময়ে দুজনের মনের এতটা মিলে এতটা কাছাকাছি হওয়া! 

শিহাব গুলশানে গিয়ে একজন অপেক্ষমান ব্যক্তির সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে ব্যবসায়িক কথাগুলো সেরে নিলো।খুব একটা বেশি সময় সেখানে বসা গেলো না। শিহাব দ্রুতই কথা শেষ করলো। লোকটি বুঝতে পারছে না যেখানে শিহাবের ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য এই দেখা হওয়া সেখানে তার যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। শিহাব সেখানে বেশীক্ষন থাকতে অস্বস্তিবোধ করছিল।
শিহাবের পাশের টেবিলে বুঝাই যাচ্ছিল গুলশান এলাকার ধনীর ঘরের কন্যা 
ভীষণ স্মার্ট গেট আপে মোবাইল স্ক্রল করছে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে।শিহাবকে আজ সেইরকম 
সুন্দর লাগছিল ।  মেয়েটির তাকিয়ে থাকায় দোষ ধরা যাবে না।শিহাব তার সানগ্লাস চোখে মেয়েটির গতিবিধি সব খেয়াল করছিল। শিহাব লোকটির সাথে কথা শেষ করে হ্যান্ড শেক করে বেরিয়ে এলো। হেলমেট পরে নিয়ে বাইকে স্টার্ট দিল। শিহাবের মনের ভেতর ভিন্ন এক অনুভুতির মিশ্রন । বাইক গুলশান দুই নম্বর  গোলচক্কর ক্রস করে বনানীর দিকে এগিয়ে উত্তরার পথে এগুচ্ছে । শিহাবের অনুভুতিতে মনে হচ্ছে শায়লা তার পেছনে বসা। শিহাব সামনের লুকিং মিররে তাকাতেই শায়লার হাসিমাখা মুখটা দেখে চমকে উঠল!



চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much