স্মৃতির জানালায়
(শেষ পর্ব)
রাবেয়া পারভীন
স্যারের শোবার ঘরের দড়জার সামনে গিয়ে দড়োজায় টোকা দিল মাহতাব। ভিতর থেকে স্যার আওয়াজ দিলেন -
- কে ? ভিতরে এসো !
মাহতাব ভিতরে ঢুকল। খালাম্মা খাটের উপর মশারী খাটাচ্ছিলেন । খাটের পাশে চেয়ারে বসে স্যার পান চিবুচ্ছিলেন। মাহতাবকে দেখে খাট থেকে নেমে এলেন খালাম্মা । মাহতাবকে জিজ্ঞেস করলেন
- কি বল্লো শবনম ?
এই দুটি সরল পিতা মাতার সাথে না সূচক কথাটা বলতে ইচ্ছা করছিলো না তার । তারপরেও ভয়ে ভয়ে বলল
- এই বিয়েতে শবনমের মত নেই খালাম্মা
স্যার খুব অবাক হয়ে বল্লেন
- কেন কি হয়েছে ?
মুখ ভার করে খালাম্মা উত্তর দিলেন
- কি জানি কেন শবনমের খুব মন খারাপ। ঠিক করে ভাতও খেল না তাই মাহতাবকে পাঠিয়েছিলাম ওর মত জানতে। এখন বলছে বিয়েতে ওর মত নেই।
স্যার মাথা নীচু করে করে কি যেন ভাবলেন তারপর বললেন
- আচ্ছা ঠিক আছে এখন ঘুমাতে যাও, কাল সকালে দেখা যাবে কি ব্যাপার। যাও মাহতাব গেস্ট রুমে বিছানা করা আছে , শুয়ে পড়োগে।
স্যারের ঘর থেকে বেরিয়ে শবনমের ঘরের সামনে দিয়ে যাবার সময় দেখল শবনম আলো নিভিয়ে ঘরের দরোজা বন্ধ করে দিয়েছে।
সে সব অনেক পুরনো কথা তবু কোন কথাই ভুলে যাননি তিনি। মনের আয়নায় বন্দী হয়ে আছে সব। শবনমকে তিনি নিজোর করে পাননি কিন্তু তাঁর জীবনের সফলতার পিছনে শবনমের অবদান অনেক। সেই সেদিনের সাধারণ মাহতাবকে আজকের এই অসাধারণ মাহতাব সাহেবে পরিনত করেছে। শবনমকে না পাওয়ার তীব্র দহন তাকে পথ চলার গতি দিয়েছে।
-স্যার আসবো ?
মেনেজারের ডাকে চমক ভাংলো মাহতাব সাহেবের। এতক্ষনে তিনি টের পেলেন তাঁর দুই চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছে। মেনেজারের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলেন তিনি। পকেট থেকে রুমাল বের করে তারাতারি চোখ মুছলেন। মাথা নেড়ে মেনেজারকে ভিতরে আসতে সম্মতি জানালেন। ভিতরে এসে বড় সাহেবের সামনে জরুরী কিছু ফাইল মেলে দিতে দিতে আড়চোখে সাহেবের দিকে তাকালো মেনেজার। নরম গলায় প্রশ্ন করল
- স্যার। আপনার কি শরীর খারাপ ?
ফাইল দেখতে দেখতে মেনেজারের প্রশ্নের উত্তরে মাথা ঝাঁকালেন তিনি।
- তাহলে ফাইলগুলু আজকে থাক স্যার। কালকে বরং দেখলেই চলবে।
- না না আজকেই দেখব। আপনি বরং আমাকে একগ্লাস পানি দিন।
পানি খেয়ে, ফাইলগুলি দেখে মেনেজারের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে চোখ বুজলেন। মনে হলো ঘন্টা দুয়েক ঘুৃমাতে পারলে ভালো হতো।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much