২৯ মার্চ ২০২১

মমতার রায়চৌধুরী




মা তোমায় মনে পড়ে



মনের অলিন্দে কষ্টের চোরাবালির

পাহার জমে যখন উঠেছে বারবার।

মাগো, তুমি এসেছো ভরসার,

হাতছানি নিয়ে জীবনে বারবার।

সংসারের যাঁতাকলে চলেছি ঘুরে 

হতাশা যন্ত্রনাকে নিত্য সঙ্গী করে।

তখন আঁকড়ে ধরে প্রাণপণে ,

 বাঁচতে চেয়েছি  মনপ্রাণে,

শুধু মরীচিকা হয়ে গেছে ।

মাগো , তোমায় বড্ড মনে  পড়ে।

জানি আজ আমি অনেক দূরে,

 হৃদয়ে ছবি অাঁকি স্নেহসুধা ভরসা করে।

তোমার আশীষে অন্ধকার সরে,

ছড়িয়ে সূর্যমুখী আলোর ভোরে।

মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ




 চুরি বাঁচাও



ছুটছাট কারনে কেনো করি,দলাদলী আর তান্ডব।

সমাজ কলুষিত হয়,বুঝেও বঝোনা সব।

নিজে নিজেরাই মাতি রক্তের হুলি খেলায়

পিতৃ মাতৃর গর্ভে দেখো,অন্তরে অশ্রুজল।

এই ভেবে,এই ভেবে গাধার দলেরা বুঝবে কবে।

দেশ চুরির উৎপাত বাড়ছে যে দেশে

এ খবর ক'জন নেয়,ক'জনই বা জানে!

স্বপ্নের বাসভবন করবে চুরি অন্যজন।

মানুষ নয় ওরা,মানুষ নামে নরপিচাস

এতে নেই মাথা ব‍্যাথা,নেই কি নয়নে জল?

নেশার ঘোর কাটবে কবে,কবে হবে উওাপ

আগুন জ্বালাও অন্তরে অগ্নিকুন্ঠে।


মুশারি(মশারি) ছিদ্র থাকলে,প্রবেশ করে মসা।

রক্ত চুসে নিলে,তবেই হয় বেঘুমের হুঁশ।

জানতে,তবু হয়নি ক্ষমতা তোমার সারা।

তাইতো নিলো চুসে, এক ফোটা রক্তের কনা।

দেশ আজ হচ্ছে,মুশারির মতো

কি হবে পরে,একবার ভেবে দ‍্যাখো।

সমস্ত ছিদ্রটাকে মারো তালি

বাঁচাও স্বপ্নের দেশ মাতৃ ভূমি।

চাল চোরের পিছনে দিতে গিয়ে সময় 

দেখো দেশ চুরি করছে,গড়ছে সন্ত্রাস।

আর নয়,আর নয় গর্জে ওঠো সব

মাতৃভূমির রক্ষার জন‍্য,করো তীব্র প্রতিবাদ।

তাতে,দিতে হয় দেবো আত্মবলিদান

তবু মাতৃভূমিকে হারাতে দেবোনা প্রান।।

মোহাঃ হাসানুজ্জামান

 


  মমতাময়ী


অসাধারণ তুমি সদাই তুলনাহীন

নেই তোমার মনে কোন বিদ্বেষ,

বিধাতার কৃপায় মমতাময়ী রুপ

সবার প্রিয় তুমি আমার শ্রদ্ধাভাজন।



থাক সর্বক্ষণ সংসার স্রোতে ব‍্যাস্ত

ঈশ্বর প্রেরিত সুখের কাণ্ডারি,

অক্লান্ত পরিশ্রম করো সারাজীবন

তুমি ধরণীর অপরাজেয় সৈনিক।



শুভ্র বরফের মতো নির্মল হৃদয়

তোমার স্পর্শে আলোকিত ত্রিভূব,

স্বার্থের গোলকধাঁধায় নিশ্চিহ্ন হও না কভূ

অন্তরে পরিপূর্ণ তোমার মূল‍্যবোধ।


ভাবনার আকাশে উজ্জ্বল মনোবৃত্তি

অপূর্ণতাও যেন পায় পূর্ণ রূপ,

মনের সীমানায় তোমার সফলতার সুত্র

নীরবে কর শুধু শান্তির খোঁজ।


সৌন্দর্যের রানী তুমি হৃদয় ভরা মায়া

গর্ভজাত সবাই তোমার পরিপূর্ণ বসুন্ধরা,

ন‍্যায় নীতি তোমার বিশ্ব-কোষে

তোমার স্নেহে অতিবাহিত হোক সবার জীবন।

পার্থ ব্যানার্জ্জী




ভোটের লড়াই


মাঠে মিষ্টি করে দুষ্টু হেসে

বললো মোটা দাদা,

আমার দলে নাম লেখা রে

মনটা আমার সাদা।

আমার ডিফেন্স ভীষণ ভালো

গুজরাটেতে দেখিস,

হাফলাইনটা আসানসোলের

দেখে একবার আসিস।

ফরওয়ার্ডে মেদিনীপুর আর

হাওড়া জুটি জোর,

যখনতখন গোল করবে

কাটবে দিদির ঘোর। 


ওদিক থেকে চেঁচান দিদি

আমিই গোলে আছি,

আমায় পার করবে কে রে

দেখি, আসুক কাছাকাছি।

মাঠের যেথায় তাকাবি বোকা

সব জায়গায় আমি,

ভুসো-ধুসো প্লেয়ার পালায়

সামনে আমার ড্যামি।

ইস্টুপিটরা ভাবছে কেবল

চেঁচিয়ে করবে মাত,

বাংলার মেয়ে আমিই কেবল

সতর্ক দিন-রাত। 


আরেকটা দল জোট করেছে

নামবে লীগের খেলায়,

নিঃশব্দে ভীড় বাড়িয়ে

একসাথে দল চালায়।

দিনাজপুর আর মুর্শিদাবাদ

আটকাবে সব খেলা,

হুগলি আর বর্ধমানের

আসবে তরুণ পোলা।

স্ট্রাইকারটার বয়স বেশী

অভিজ্ঞতায় ভরা,

অনেকদিনই খেলছে ভালোই

তবু থাকছে গোল ছাড়া। 


পাঁচ বছরের ট্রফিখানা

কার দখলে যায়,

দলগুলো সব যতই চেঁচাক

মানুষ দেবে রায়।

জনতা না-কি রেফারি হবে

পাহারা দেবে পুলিশ,

জমবে খেলা একপক্ষের

ভয় পেলে সব ভ্যানিশ।

ভোটের খেলা ঘোটের খেলা

জোটের খেলা ভারি,

বেচাকেনা দরাদরি দখলদারির

দেখছি বাড়াবাড়ি।

         

সোমা বিশ্বাস



2020 সাল

শুধু বিষ শুধু বিষ দাও 

অমৃত চাইনা !


(শিল্পী নচিকেতার কথা ও গানটা আরও অনুভূত হল এই বছরে)


অনেকগুলি শব্দ বা বিশেষণ পুরানো হলেও; নতুন করে 

বার বার আরও জমাট বাঁধল, ধাক্বা  মারল বা মারছে....

ছলনা, মিথ্যে, প্রতিশ্রুতি, কৃত্রিমতা, অসহায়তা,

হারানো ভালবাসা বা প্রিয়জন, চাহিদা, চটুলতা,

লোভ, কৃতজ্ঞতা, অন্ধকার, কর্মহীনতা, রাগ

কেমন যেন আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে

যেখানে হ্নদয় বা আন্ত‍রিকতার বড়ই অভাব!

তবুও মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায় -যদিও এটির অন্তমিল

অনেক তাৎপর্যপূর্ণ; বিস্তর ফারাক -ও!

ঠিক যেন আদিখ্যেতা আর আন্তরিকতার যতটা পার্থক‍্য-

হাসি, এটি জীবনের স্ফুলিঙ্গ, তাই কখনো হাসতে ভূলনা যেন;

আজই হঠাৎ , রাস্তাপার হতে গিয়ে জুতোর শোল খুলে যাওয়া-

তারপর পেছন থেকে কিছু ব‍্যক্তি বা বাইকের কাছে দাড়িয়েথাকা;

ব্যক্তিটির সিগারেট খেতে খেতে অদ্ভুত হাসি! এরকম; 

আজ থেকে দশ বছর আগে ঘটলে নিজেকে বোকা মনে হত!

এখন এগুলো বেশ উপভোগ করি; নিজেও হেসে ফেললাম।

আসলে, মন খুলে হাসাটাও একটা টনিকের মত কাজ করে!

2020- এর  শেষে এসে মনে হচ্ছে 'করোনা' - অনেককিছু

বদলে দিয়েছে,সেই সঙ্গে অনেকিছু শিখিয়েছে; যা বাস্তব!

শুধু এতো বিষন্নতার মাঝে, মুগ্ধতা যে বড্ড কম হোয়ে গেল!-


(বিশেষ দ্র্যস্টব্য: লেখাটি পুরোটা ব্যক্তিগত নয়, অন্যদের অনুভূতি বা অভি‍জ্ঞতা নিয়েও লেখা ☺️)

শ্যামল রায়




চোখে ধরা পড়ে


উত্তরের হাওয়ায় জানালার পর্দাটা

সরালে দেখা যায়

নানান ধরনের গাছপালার ফাঁকে

গজিয়ে ওঠা নতুন পাতাদের

জোসনা রাতে ভারি মজা লাগে।

আর চারপাশে একাধিক কয়েক তালার বাড়ি

কাছাকাছি ছাদে হঠাৎ দেখা হয়েছিল

সদ্য বিবাহিত নারীকে

দু চোখে ধরা পড়েছিল তার মুখ।

নতুন । ভিতরে আতঙ্ক কাজ করছিল

অথচ দেখতে পেয়েছিলুম তার ইশারা

আমাকে ভাবিয়েছিলো, ঘুম আসেনি 

একদিকে যমুনা ছিল অন্যদিকে গঙ্গা ভাগিরথী

দুয়ের মাঝে ঢেউ খেলেছিল সারাটি রাত

দু চোখে ধরা পড়েছিল তার মুখ।

হঠাৎ মুখোমুখি

নতুন কিছু করার নতুন কিছু বলার থাকে

এসব উধাও। সময় নেই বিবাহিত স্বামীর

সময় কাটে না, ভিতরে যন্ত্রনা

এ যেনো ঘন একটা অন্ধকারের জালে জড়িয়ে পড়া 

শুধুই আলোর পথ খুজছিলাম

তুমি যদি আলো হও আমি হব দিশা।

আমার বেড়ানো ছাদ হয়ে উঠুক

বৃষ্টিতে ভেজা নীল শাড়ির আঁচল

তুমি থেকো সারাক্ষন চোখে চোখ রেখে

শুধুই আমার জন্য --+।

ওয়াহিদা খাতুন




সনেট চরিত্র


গভীর আত্মবিশ্বাস,চিন্তার বিকাশ

স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব নৈতিক চরিত্র

আদর্শ মতাদর্শী সর্বদায় পবিত্র ;

 মনের জগত যার বিস্তীর্ণ আকাশ ;

সংকীর্ণতার উর্দ্ধে যে করে বিচরণ--

স্বার্থত্যাগী,প্রতিবাদী অন্যায় সমরে;

উন্নত মস্তকে চলে কভু নাহি ডরে;

সাম্য-মন্ত্রে প্রজ্বলিত তার আচরণ--!


অপবাদের কলঙ্কে কিবা আসে যায়--

শ্যেনের পিছু না ছুটে স্পর্শে দেখো কান;

কুত্তার কামড়ে দিয়োনা নিজ সম্মান;

বিকৃত মনুষ্যত্বের এ কাঠগড়ায়--


ব্যক্তিত্বহীন চরিত্র-ই কাপুরুষতা--!

যতো দুর্বল হবে হারাবে কদর্যতা--!!


রচনাকালঃ-২৬/০২/২০২১ দুপুর ১২টা ১ মিনিট (সনেট নং ৯১)!

স্বপন কুমার ধর

 


প্রতিদিনের জীবন


সূর্য যখন ডুবি ডুবি,

আঁধার এগিয়ে দিচ্ছে উঁকি,

নামবে সে যে ঘনিয়ে কালো,

দুর হবে সব দিনের আলো।


ফুটবে তারা আকাশেতে,

ছড়িয়ে দিতে আলো।

জোনাকীর মত মিটমিটিয়ে,

দেখতে লাগে ভাল।


শ্রমের শেষে ক্লান্ত দেহে,

মানুষ যখন ঘুমায়,

বন্য পশু রাত্রি জেগে,

নিজের খাদ্য জোগায়।


গ্ৰাম্য নদী শান্ত বেগে,

চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে,

এগোচ্ছে যে বলতে কথা,

সাগর-মোহনার পানে।


ছড়াবে সুবাস ভোরের আলোয়,

ফুটবে অনেক ফুল,

গাইবে পাখি আনন্দেতে,

উড়ে নদীর দু-কূল।


রবির কিরন আসবে দোরে,

শুরু হবে নতুন দিন,

এমনি করেই শুরু হচ্ছে,

আমাদের প্রতিদিনের জীবন।

তহিদুল ইসলাম




আমার ভয় করে




তুমি বলে ছিলে, বৃষ্টি ভালোবাসো

কিন্তু বৃষ্টির সময় আশ্রয় খুঁজে নাও।

তুমি বলে ছিলে, সূর্য ভালোবাসো

কিন্তু সে যখন জ্বলজ্বল করে জ্বলে

তুমি ছায়া খুঁজে পাও।

আমি বড় চিন্তিত, তুমি যখন বলো,

" আমি তোমাকে ভালোবাসি"।


তুমি বলে ছিলে ,চাঁদ ভালোবাসো

আবার পূর্ণিমা রাতে  কলঙ্ক খুঁজতে চাও।

তুমি বলে ছিলে, গোলাপ ভালোবাসো

কিন্তু তার কাঁটা দেখে থমকে দাঁড়াও।

আমার ভয় করে তুমি যখন বলো,

" আমি তোমাকে ভালোবাসি"।

                

আবদুস সালাম




মুক্ত গদ্য টি পাঠালাম ওতার সাথে দুটো কবিতা



বর্ষ শেষের ডায়েরী

  


“বিদায়” শব্দটা তিন অক্ষরের হলেও এটার বেদনা কত টুকু তা আমরা এখন বুঝতে পারছি।। বিদায়ে এত বেদনা কেন? কেন এত কান্না, এত কষ্ট? এত হাহাকার? কেন? বিদায় মানে কি তবে বিরহ? বিদায়ের অন্য অর্থ কি তবে বিচ্ছেদ? বিদায় মানে কি প্রিয় মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলা? বিদায়ের ক্ষণটি সে জন্যই কি ব্যথাভরা? সে জন্যই কি বিদায়বেলায় কারো ‘সজল করুণ নয়ন’ নত হয়ে থাকে বেদনায়? কিন্তু আমরা যে চাই হাসিমুখে বিদায় নিতে। কারো চোখের পানিতে বিদায়ের পথটি ভিজে কর্দমাক্ত হয়ে উঠুক, তা যে চাই না। সে জন্যই কি আকুতি- ‘মোছ আঁখি, দুয়ার খোল, দাও বিদায়।’ সে জন্যই কি চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে বলি- ‘শুভ বিদায়’?



 

বিদায়েরও কি তবে কিছু দায় থাকে? বিদায়ে কি শেষ হয়ে যায় সব? নাকি বিদায়ের পর শুরু হয় আরেক নবতর যাত্রা? অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর থাকে না। জীবনভর কত বিদায়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয় আমাদের! শৈশবকে বিদায় দিয়ে কৈশোরে পৌঁছাই; কৈশোরকে বিদায় দিয়ে যৌবনে। যৌবন বিদায় হলে প্রৌঢ়ত্ব, আর প্রৌঢ়ত্বকে বিদায় জানিয়ে আসে বার্ধক্য। সবশেষে অনিবার্যভাবেই এই ইহজীবনকে বিদায় জানিয়ে না-দেখা কোনো অনন্ত জগতের পথে যাত্রা! যে জগৎ থেকে ফিরে এসে কেউ কখনো জানায়নি- কী আছে ওই পারে। ফলে ওই বিদায়ে সীমাহীন অনিশ্চয়তার ভয় থাকে। থাকে দ্বিধা, থাকে অনিচ্ছা। কিন্তু হায়! তবু নিতে হয় বিদায়। ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় অংশ নিতে হয় নিঃশেষ হবার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়। এভাবেই দিন আসে দিন যায়।

ক্যালেন্ডারের পাতায় লেখা হয় নতুন সংখ্যা।

বাড়িতে টাঙানো ক্যালেন্ডারটির উপর নতুন ক্যালেন্ডার টি শোভা দেয় । এমন করে পুরাতন দিনের সব কথা বাক্সবন্দী হয়।

নতুনদের ছেড়ে দিতে হয়  সব----

২৬ মার্চ ২০২১

দেবব্রত সরকার



বেদনা 



তোমরা সবাই লড়াই করো

আমাদের যত যন্ত্রনা

তোমার সবাই মিথ্যে বলো

আমাদের সত্য সত্য না


তোমরা আমরা শব্দ বেঁধে 

আমার তোমার লাভটা কি

তোমরা হাস আমরা কেঁদে

বলো কুর্শি পেয়ে ফলটা কি


নিজের আখের অক্ষরেতে

নেতা ! জনগণের দরদ কই 

 হচ্ছ জয়ী তাদের ভোটে

অথচ থালা হাতে আমরা ওই ।

জারা সোমা




মালী



বোঝাপড়াগুলো পাড়ি জমায় পাহাড়ে

তারপর  জমে ওঠে খাঁজ প্রতিখাঁজে


  নিরেট ব্যথার একক গল্পগুলো 


প্রিয় আঙুল ছুঁলেই গলে জল 

শোকের দর্পণে জীবনের জলছাপ 


গুটিপায়ে মাঘ আসে দোরগোড়ায়


শহুরে  বনফায়ারের ধোঁয়া ও ছাই

 কীভাবে যেন হারিয়ে ফেলে আলাপচারিতা


উত্তরে বাতাসের কানে কেউ যেন বলে ওঠে


প্রেম এসে গতিপথ বদলে ফিরে গেছে মেঘমুলুকে

 আদাব ও আদর করার মালীর অভাবে।

গোলাম কবির




খুব জানতে ইচ্ছে করে 


এই অখণ্ড ভারত একবার ভেঙেছিলো ১৯৪৭ এ, যুদ্ধে যুদ্ধে তারা স্বাধীনতা অর্জন করেনি, করেছিলো সেই পুরাতন ইস্যু হিন্দু এবং মুসলিম।  হয়েছিলো কতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা -
ভাঙার আগে ইতিহাস বলে সে কথা, 
আমি বলি না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার 
সেই কালো থাবা ছুঁয়ে গেছে আমাদের নোয়াখালীতেও, ইতিহাসই বলে সে কথা। 
তারপর? দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রিয় স্বদেশ ছেড়েছিলো কতো বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান, 
কেউ পরিচয় পেলো ঘটি আবার কেউ বাঙাল। দেশভাগের অভিশাপে ভাগ হলো পাঞ্জাবও, 
ভারত ও পাকিস্তানে হৃদয় ভাঙা কষ্ট নিয়ে 
চলে গেলো তারা এতোটা বছর! 
কিন্তু সেই হৃদয় ভাঙা কষ্ট গেলো না 
এখনো কোথাও! মানুষ আর মানুষ হলো না, 
হিন্দু নয় তো মুসলমানই থেকে গেলো! 
শিক্ষা হলো না শাসক গোষ্ঠীর কোথাও, 
এখনো আবার সেই একই ইস্যুতে ষড়যন্ত্রে মেতেছে ষড়যন্ত্রকারী শাসক গোষ্ঠী, 
ওরা কী মানুষের হৃদয়ের আবেগ ও কান্না 
শোনে না, নাকি অন্ধ ও বধির! 
খুব জানতে ইচ্ছে করে, 
খুব জানতে ইচ্ছে করে!

প্রেমাংশু শ্রাবণ




বর্ষা ও বসন্তের বিলম্বিত

 
কাছে এসো,
বাড়াও চিবুক
তোমার মধ্যমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি
সবুজ অরণ্য। 

বাড়াও দু'হাত
মাপি আঙ্গুলের যৌথ আয়োজন 
ওষ্ঠ ও অধরে লিখি
অন্তর্লীন অশান্ত অভিধান। 

আরো কাছে এসো,শুনি
চুলের গভীর ঘন বনে
কি সুঘ্রাণে-------
বয়ে চলে বর্ষা ও বসন্তের বিলম্বিত। 

শরীরে সঙ্গীত দাও
হারাবো সে নৃত্য ভঙ্গিমায়, 
আসনের উপাত্ত রেখে

মমতা রায়চৌধুরী


 


বসন্ত এসেছে



দেখো, আজ বসন্ত এসেছে

ওই রাঙা পলাশ পথে।

তাই ফাগুনের দোল,

লাগলো হৃদয় তটে।

দেখো, আজ কৃষ্ণচূড়া, পলাশ

শিমুল ডাকছে কেমন তোমায়

আজ বসন্ত এসেছে,

তোমার আমার হিয়ায়।

বন মেতেছে, মন মেতেছে,

বসন্তের উত্তাল হাওয়ায়।

আজ ফাগুনের নেশা লাগল

ভালোবাসার ছটায়।

বসন্ত এসেছে আজ

তোমার আমার হিয়ায়।

ওয়াহিদা খাতুন




বসন্তছোঁয়া


শনশন বাতাস বহে মহুয়ার ওই বনে--

উদাস বাউল মনটা আমার কুহুকুহু শুনে--

মাতলা নদীর উধাও হাওয়ায় মনটা ভেসে যায়--

বলগা হরিণ নেচে চলে দূরে বনো-ছায়--

আবির মাখা কুহুধ্বনি ওঠে প্রতিক্ষণে;

শনশন বাতাস বহে মহুয়ার  ওই বনে--!


বনোমালী গেয়ে চলে কেয়াগাছের ডালে;

নাচছে সবাই কোমর বেঁধে ঝুমুর গানের তালে;

ঝুমঝুম ঝুম নূপুর বাজে সুরের মোর্ছনায়--

হাড়িয়া আর মাদল নিয়ে হেতালের তলায়--

বসন্তেরি কিযে যাদু লাগলো সারা মনে--!

শনশন বাতাস বহে মহুয়ার ওই বনে--!! 


রচনাকাল:-২৫/০৩/২০২১ সকাল ৯টা ৫৩ মিনিট! (গান নং ৪৫)

অলোক দাস




ভালোবাসা হীন পাথর

একটি বহু প্রাচীন বটগাছ I দিয়েছে মানুষকে অক্সিজেন, পক্ষিকুলকে দিয়েছে আশ্রয় I গ্রীষের তাপে দিয়েছে আশ্রয় পথিককে I বটগাছ আর দিতে পারে না অক্সিজেন, ওর সব পাতা ঝরে গেছে I ওর আয়ু শেষ I ও একটা ভালোবাসা হীন পাথর I কেউ আসে না ওর কাছে I ওর পাশে বকুল, টগর, শিউলি পলাশ I নীচে সবুজ গাসের আরণ্যক I কোকিল আসে ভোরে, বসে পলাশ বোনে I মানুষের ভালোবাসা সীমাবদ্ধ I যে নারী মা, দেরি হোলে বাড়ি ফিরতে, দাঁড়িয়ে থাকতো ! যে বলতো খোকা আজ এতো দেরি? বাবা বলতো খোকা খুব খাটাখাটুনি হচ্ছে না? এটাই ভালোবাসা I

স্বপন কুমার ধর


 


একাকীত্ব



একা ঘরে আমি, বসিয়া রহিয়াছি,

করিয়া রুদ্ধ দ্বার,

ভাবিতেছি মনে সঙ্গী না থাকিলে,

জীবন-টাই কী অসার!


বহুদিন পরে, কিছুদিনের তরে,

গিয়াছে যে সে, বাপের বাড়ি,

জননী যে তার,থাকে একা একা,

বাড়িটি যে তার , লাগে ফাঁকা ফাঁকা।


একদা তাহার সবাই যে ছিল,

ছিল না একাকীত্ব,

জীবিকার তরে, আজ যে তারা,

রয়েছে ভীষন ব্যস্ত।


মনে ভাবি হায়! সকলের-ই কী কপাল,

"মা" থাকে একা দূরে,

ইচ্ছে থাকিলেও, পারেনা থাকিতে,

মা'র কাছে সদা কেহ।


ঘুরিবে যে কাল, আসিবে এদিন,

আমাদের সবার-ই জীবনে,

বুঝিব এ ব্যথা, যাহা সহিতেছে মাতা,

আপন বার্ধক্য কালে।

মোঃ হাবিবুর রহমান ( নিবন্ধ )




ইথা‌রে লুপ্ত মূল্যবান ভাবতত্ত্ব


     

জীব‌নে কত শতবার যে ম‌নের অতল গভীর হই‌তে বি‌ভিন্ন সম‌য়ে নি‌জের অজা‌ন্তেই অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভা‌বেই অ‌নেক দামী দামী কথা উৎসা‌রিত হইয়াছে তাহার বু‌ঝি কোন ইয়ত্তা নাই। 


            যখনই এই সমস্ত মূল্যবান কথাগু‌‌লি নি‌জের অজা‌ন্তেই নি‌জের মন হই‌তে বা‌হির হইয়া আ‌সি‌তো তখনই ম‌নে হইত যে আহা! ইহা য‌দি রেকর্ড করিয়া রাখা যাই‌তো তাহা হই‌লে কতই না ভা‌ল হ'য়ত। 


             সময়, সু‌যোগের অনুকুল কিংবা ম‌নের য‌থেষ্ট দৃঢ়তার অভা‌বেই তাহা বু‌ঝি সেই মুহূ‌র্তে আর রেকর্ড করা সম্ভব হয় নাই‌ কিংবা লি‌খিবার মন মান‌সিকতা গ‌ড়িয়া না উ‌ঠিবার কার‌ণেই বু‌ঝি উহা চিরত‌রের জন্য তখন ইথা‌রে হারাইয়া গিয়া‌ছে। 


              মন হই‌তে হঠাৎ হঠ‌াৎ উৎসা‌রিত এই সমস্ত মহামূল্যবান ভাবতত্ত্ব সম‌য়ের বিবর্ত‌নের সা‌থে সা‌থে নানান অনুকুল ও প্র‌তিকুল প‌রি‌বেশ প‌রি‌স্থি‌তি‌তে স্থান, কাল, পাত্রের উপর ভি‌ত্তি ক‌রিয়া ই‌তিপূ‌র্বে অতী‌তে নানান সম‌য়ে উৎসা‌রিত হ‌ইয়াছিল। 


               বোধ ক'‌রি আজ‌কের মত তথ্য-প্রযু‌ক্তির য‌দি এত উন্ন‌তি সা‌ধিত হইত তাহা হই‌লে হয়তবা ঐ সমস্ত লুপ্ত মূল্যবান ভাবতত্ত্বসমূহ আমরা চিরস্থায়ীভা‌বে আজও বু‌ঝি দু‌নিয়া‌তে ধরিয়া রা‌খি‌‌তে পারিতাম। 


                তাই মা‌ঝে মা‌ঝেই ম‌নে হয় আহা! আমার কোন উদীয়মান একজন বৈজ্ঞা‌নিক ভাই য‌দি এমন কোন যন্ত্র তৈরী ক‌রি‌তে সমর্থ হইত কিংবা ‌অালাউ‌দ্দি‌নের চেরা‌গের যাদু-ম‌ন্ত্রের ব‌দৌল‌তে হয়ত য‌দি আমরা পূ‌র্বের মু‌ছে যাওয়া বা আমা‌দের মন হই‌তে অবলীলায় তাৎক্ষ‌ণিকভা‌বে হা‌রি‌য়ে যাওয়া সমস্ত অব্যক্ত কথারা‌জি আর অপ্রকা‌শিত ম‌নের সেই অমূল্য ভাবতত্ত্বগু‌‌লি আবারও নতুন করিয়া ফি‌রিয়া পাইতাম তাহা হই‌লে আজ কি মজাই না হইত!


                 আর আজ য‌দি সত্যি স‌তিই তাহা ফি‌‌রিয়া অা‌না সম্ভব হইত তাহা হই‌লে উহা লোকচক্ষুর সম্মু‌খে উন্মুক্ত ক'‌রি‌তে পা‌রি‌লে তাহা বোধ ক‌রি কতই না মজার হইত যাহা মা‌ঝে মা‌ঝে ভা‌বিয়া যেন কল্পণার রাজ্য হই‌তে ঘু‌রিয়া আ‌সিয়া এ‌কেবা‌রে শুন্য হা‌তে ফি‌রি‌লেও ‌তাহা ভা‌বি‌তে বেশ ভালই লা‌গিয়া থা‌কে। 


                  ইহা যেন এমন যে, আজ হয়ত তাহা সম্ভব হই‌তে‌ছে না ঠিকই কিন্তু দুই‌ দিন প‌রে যে উহা সম্ভব হই‌বে না তাহা কিন্তু মো‌টেই‌‌ সেই রকম ন‌হে। তাই ভ‌বিষ্য‌তের নতুন আ‌বিষ্কা‌রের আন‌ন্দে মনটা যেন এখন‌ই কেমন একরকম উ‌তলা হ‌ইয়া উ‌ঠিয়া ম‌নের গভী‌রে এক নতুন আব‌হের সৃ‌ষ্টি ক‌রে আর ঠিক তখ‌নি যেন বেজায় পুল‌কিত হইয়া নি‌জেকে বেশ ভাগ্যবান ও ধন্য ব‌লিয়া ম‌নে হয়।


                   বর্তমা‌নে তথ্য প্রযু‌ক্তির উন্ন‌তির সা‌থে সা‌থে বু‌ঝি যু‌গের হাওয়া অ‌নেকখানিই পাল্টাইয়া‌ গিয়া‌ছে। য‌দিও ব‌য়োঃবৃ‌দ্ধির সা‌থে সা‌থে মানু‌ষের কিছু স্মৃ‌তিভ্রম ঘ‌টিয়া থা‌কে কিংবা স্মরণ শ‌ক্তি একটু লোপ পাইয়া থা‌কে তথা‌পি প্রযু‌ক্তি যেন তাহার সেই ঘাট‌তিটি একবা‌রেই শতভাগ পূরণ ক‌রিয়া দিয়া‌ছে। 


                    কোন বিষ‌য়ে কিছ‌ু মনে রাখা আজ ‌তাই কোন ব্যাপারই নয়। ক‌ম্পিউটার, এন‌ড্রয়েড কিংবা নানান ধর‌নের মু‌ঠো ফো‌নের উদ্ভাব‌নের মাধ্য‌মে তাহা যেন এ‌কেবা‌রেই জল‌বো তরলো হইয়া গিয়া‌ছে।


                     আজ আমার দুই-এক কলম লি‌খিবার সামান্য ‌যে‌হেত‌ু অভ্যাস হইয়া দাঁড়াইয়াছে তাই এখন লি‌খিবার প্রাক্কা‌লে সেই সমস্ত লুপ্ত অার অব্যক্ত ভাবতত্ত্বগু‌লি য‌দি আজ হা‌তের গোঁড়ায় থা‌কিত তাহা হই‌লে বোধ ক‌রি তাহার এক‌টি এক‌টি ক‌রিয়া লইয়া অ‌তি সযত‌নে আর সহ‌জেই দুই-এক কলম লি‌খিয়া জনসমু‌ক্ষে অনায়া‌শেই হা‌জির ক‌রি‌তে পা‌রিতাম। 


                      শুধু বু‌ঝি আ‌মি নয়; আমার মত এই বি‌শ্বের শত সহস্র মানব মানবীর ম‌নেও ‌হয়তবা একই ধর‌নের চিন্তা বা অনুভূতির সৃ‌ষ্টি হইয়া‌ছে কিন্তু আ‌মি তাহা আগ বাড়াইয়া সর্বা‌গ্রে সবার অ‌ক্ষির সম্মু‌খে তু‌লিয়া ধ‌রিয়া নি‌জে‌ নি‌জেই ইহার কৃ‌তি‌ত্বের দাবীদার ব‌লিয়া দাবী ক'‌রি‌তে আজ তাই সাহস পাইলাম।

২৪ মার্চ ২০২১

আশিস চক্রবর্তী



প্রতিশ্রুতি


এখনো ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে তোমার উপস্থিতি

 শরীরের ওপর চড়ে শোনাচ্ছো বাসি প্রতিশ্রুতি।


তোমার মঞ্চের তলায় রোদহীন হলদেটে ঘাস।

অমূল্য কার্পেটে হারিয়েছে সহস্র মানুষের শ্বাস।


বিশাল সম্ভাবনায় লেগেছে আজ মড়কের ঘ্রাণ

ছেঁড়া পকেটের নীচে ধুঁকছে ভবিষ্যতের প্রাণ।


দুর্গন্ধের মতো শোনায় তোমার সমস্ত ভাষণ।

অজান্তে উধাও দেখো তোমার সাধের আসন।


তোমার উদ্ধৃত দৈব বাণী যেন ধ্বংসের পরিচয়

তোমার হাতের রেখায় লেখা আসন্ন পরাজয়।


দিকে দিকে ওই শোনা যায় সময়ের ভ্রুকুটি

ভাগাড়ে শকুনের মতো ওড়ে বাসি প্রতিশ্রুতি।

রীনা ঘোষ




সমুদ্রকান্তা 



তুমি ছলাৎ ছলাৎ এগিয়ে চল খোঁপায় কাশফুল,

তুমি আগমনীর নতুন সাজে ছাপিয়ে দুই কূল।


তুমি ইছামতি ইচ্ছেপূরণ রাত রুপোলি জল,

তুমি সূর্য সাথে সোনার বরণ বইছো যে কলকল।


তুমি মেঘ মেদুরে ঝগড়া করে অম্বু ডাকো তাই,

তুমি টাপুর টুপুর অঙ্গে মাখো আগুন করো ছাই।


তুমি তন্বী তোমার চলার গতি সর্পিল বাঁকাপথ,

তুমি নিষ্পাপ সে পুষ্প সমান তোমার পবিত্র শপথ।


এই আকাশ জানে বাতাস জানে দৈব জানে সব,

ময়ূরপঙ্খী প্রাচীনতরু জানে তোমার কলরব।


তুমি যেমন খুশি তেমন সাজো নীল কালোয় সে 

ডুব,

সোনা রূপা ধুলার রঙেও মানায় তোমায় খুব।


সরিৎ তুমি মন্দাকিনী তোমার কল্লোলিনী মন,

সমুদ্রের কান্তা তুমি, তোমার বিস্তার ত্রিভুবন।

বিধান সাহা



বলিষ্ঠতা


বলছিল বটে
সব করে দেবে
কিন্তু করে দেওয়ার মত
সবিশেষ বলিষ্ঠতা
হয়তো ছিল না

চেনা অচেনার
স্রোত পা্র হয়ে
অনন্ত জীবনে
পৌঁছনোর মত
কায়দা কানুন
হয়তো বা ছিল

তবু জানি
তেমন বলিষ্ঠতা
মোটেই ছিল না
যা দিয়ে জীবনের
একেবারে শেষ প্রান্তে
চলে যাওয়া যায় ....

গোলাম কবির




প্রেমে পড়া বারণ 


চোখের সামনেই হৃদয় যাচ্ছে পুড়ে, 
কে জানে সে কথা আর আমি ছাড়া? 
অথচ চোখে ছিলো পারিজাত স্বপ্নের ভিড়।
 এতো যে ভালোবাসি সেই প্রিয় নদীটা ও
 জানেনা এই হৃদয়ের খবর। 
যে তোমাকে আমি ভালোবাসি সেই তুমিই
 কী জানো কবে ঘটেছিল সেই হৃদয়ের
 হত্যাকান্ড? হয়তো তুমিও জানো সে কথা! 
 তবুও বলে যাই এই নৃশংসতার কথা,
 বিভৎস হৃদয়ের ক্ষতচিহৃ বুকে নিয়ে তবু
 এখনো বেঁচে আছি, ভালবাসি বলে জীবন,
 যদিও জানতাম প্রেমে পড়া বারণ।

প্রেমাংশু শ্রাবণ




চৈত্রের শেষ বেলা



বাতাবী লেবুর ফুল
প্রজাপতি ফড়িং আর ভ্রমরের খেলা
দেখেছো কি তুমি?
অনন্ত গোধূলি আর চৈত্রের শেষ বেলা।

আমাদের দীর্ঘশ্বাস জমেছে দ্যাখো----
ক্লান্ত কৃষকের পোড় খাওয়া পিঠে মুক্তোদানার মত
তবু আজ চৈত্রের শেষ বেলা
অভিমানী কিশোরী বউ তার
করেছে অবহেলা।

আগুনের হল্কা মাখা গরম নিঃশ্বাসে
তিরতির কাঁপছে তার নাকের নোলক
দ্যাখো--লকলকে ভালোবাসাও জমেছে ঠোঁটের ডগায়
নাগর দোলায় উঠছে নামছে অভিমান।

গেলো বছর আর আগামীর সন্ধিক্ষণে 
হাতে তার পাওয়া না পাওয়ার হালখাতা।

উঠোনে ছড়ানো শাশ্বত বাংলার রুপ
এখনো শূন্য ধানের গোলা তবু----
বেতের ধামা ভরা বিন্নি ধানের খই,
খেজুর গুড়, তালপাখার বাতাস
(নবান্নের আয়োজনে বাংলাদেশের মেয়েরা আজও বুকের উত্তাপ দিয়ে খই ভেজে রাখে)

উঠনে খেলছে শিশু, 
এইতো বাংলার বহুকালের জমানো ফসল।

দেনা পাওনার হিসাব মিটেছে
চৈত্রের বেলা শেষে---
অবশেষে 
ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলে
শোঁ-শোঁ শব্দে বাতাস আসে ঢের
কিশোরীর শরীরে আবার ফসলি আবাদ হয়।

যেনো বঙ্গোপসাগরের তীরে
আছড়ে পড়া ফেনীল উচ্ছ্বাস। 
মাটির বিছানায় তারা এখনো পাশাপাশি শোয়।

দেবব্রত সরকার




বসন্তপলাশ



দেখ দেখি চোখ উঠিয়ে লজ্জা ভেঙে অমি প্রিয়া

রঙের খেলায় হৃদয় পুড়ায় এ কেমন তর হিয়া

জানো তুমি কি যে কখন আমার উলটো পালটা দাবি

প্রেমে পড়ে দিয়ে ছিলাম তোমায় হৃদয় পাড়ের চাবি


এই পরে আর ওই পরে সব বসন্তকাল এলেই

পাতার মতন তোমার প্রেমের আগুন জ্বালায় সেই

তোমার প্রেমের প্রশ্ন উত্তর হারিয়ে যাবার আগে

চোখ নদী কে জানতে চাইলেই তোমারই অনুরাগে 

হারিয়ে যাওয়া ঝরাপাতা আবার উঠুক বেঁচে

বুকের ভেতর  ভাঙছে পাথর একা ভালোবেসে

সাজিয়ে দিলাম মানিয়ে নিলাম পলাশ তিয়াস জুঁই

তোমার বুকে মাথা রেখে হাজার বাছর শুই

এই তো ছোট্ট স্বপ্ন আমার আর কি চেয়ে ছিলাম

মাথার মধ্যে যা কিছু সব হৃদয় দিয়ে দিলাম

তবুও আমায় ভাসিয়ে একলা কোথায় যে যাও রানি 

দেখ চেয়ে  সেই তোমার জন্য একা দাঁড়িয়ে আছি আমি


অথচ আজও গভীর ভাবের তুমিই অমর নারী

তোমার ভেতর দেখেতে পেতাম আমার বেঁচে থাকার বাড়ি

এখন তুমি অবাক প্রিয়া হারিয়ে গেলে কই 

তাই তো লিখি তোমার কথা বেঁচে থাকার সই


এই গল্পের শেষ হবে না শেষ হবে না প্রেম 

এ কবিতা পড়ছো যারাই জেনে যাও তার শেষ

আমি যাকে ডেকে ছিলেম আমার সর্বনাশে 

বেশ কিছু দিন কাটিয়ে পালায় এই বসন্ত পলাশে

তহিদুল ইসলাম





দারিদ্র



ঘরে সন্ধ্যা দেয়ার তেল নেই

দিনে প্রদীপ জ্বেলে আগুন পোহায়

একটা অভাব মিটলে,আরেকটা এসে পড়ে

বিয়ের পরে সুখ নাই

ঈশান কোণে মেঘ নিকষ কালো

চোখাঁধারি অন্ধকার,আসন্ন ঝড়ো হাওয়ায়

কটা মুদ্রা পর্ণের সাথে উড়ে এলো

কুঁড়ে ঘরের দেউড়িতে

আমি বেমুখ হয়ে দাঁড়িয়ে রইনু

স্নেহের একমাত্র মেয়ে , চোখের জলে

মহাজনের গাড়িতে গিয়ে উঠলো।

তারপর,মেঘ ডেকে বৃষ্টি নামলো।

ঘরদোর খাঁ,খাঁ করছে

ক'টা টাকা দিয়ে ক'টা দিনই বা চললো

ক'দিন হলো উনুনে  হাঁড়ি চড়েনি

টাকা!  বেচে দেবো ,সব বেচে দেবো

বৌ'য়ের হাটে বৌয়ের নিলাম

তোমরা,কে কত দিবে তার দাম?

পাড়ায় পাড়ায় কানাকানি

বাতাস এসে বলে গেল

শ্রাবণের জলেও মাটি শুকনো

ভিজার কোনো  লক্ষন নাই

চোতের আগুনে পুড়ে অঙ্গার কালো

ভালোবাসা বেচে দেবো

বেচে দেবো জ্বলন্ত পৃথিবীটাকে

সুখের সন্ধানে,

হাজার বছর পথ হাঁটবো

আরেকটা পৃথিবীর সন্ধানে

________________________

স্বপন কুমার ধর




সরে যাক ভয়


 অজানা,অচেনা,অলীক

এই তিনেতেই যে রয়,

না-জানা, না-চেনা, কল্পিত,

সব ধরনের ভয়।

বিশেষ বিষয়ে অধিক চিন্তা,

দেহে আনে মানসিক অবসন্নতা,

ঘিরে ধরে হানির আশঙ্কা,

হয়ে পড়ি ভীত, সন্ত্রস্তা।

প্রাণী ভীত হয়ে পড়লে,

বাঁচার আশা যে, তার যায় চলে,

অন্ধকারের অক্টোপাস ঘিরে ধরে,

নীরব আর্তনাদে গুমরে মরে।



ভয়কে অবশ্যই করতে পরাজয়,

মানসিকভাবে সবল হতে হয়,

অশিক্ষা, কুসংস্কার,বহু প্রচৃলিত ধারণা নয়,

চাই যুক্তি,তর্ক বিশ্লেষণে;পর্যবেক্ষন ও সিদ্ধান্তগ্ৰহণ।

অজানাকে জানো, অচেনাকে চেনো,

অলীকের খোঁজো যথার্থতা,

বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমানিত তথ্যেই,

ভয় সরবে,বাঁচবে বাস্তবতা।

ফরমান সেখ




শিশু


শিশু মোদের ফুলের মতো

    কিংবা দূর্বাঘাস,

যেমন তুমি গড়বে তাকে

    ছড়াবে সে সুবাস|


প্রকৃতি যার চলন দাতা

    মাতা-পিতা আশ্রয়|

অসৎ পথে ডেকোনা তার

    দিয়োনা সে প্রশ্রয়!


ভালোবাসায় কাছে টানো

    দিয়ে দুটি চুম্বন,

দেখবে তারাই জীবন দেবে

    রাখতে তোমার সন্মান।


তাকে নিয়ে করো যদি

    বড়ো কোনো আশা,

দিয়ো তারে মনের থেকে

   স্নেহ-ভালোবাসা।

অলোক দাস

 


নন্দন 


সকালটা অন্য দিনের মতো নয় আজ I বাতাসে শুধু শব্দ চয়ন I কি কোরে বাতাস বয়, কে জানে I আমরা শুধু ছন্দের পূজারী I মেঘ আজ নীলাকাশ ডেকেছে I বাঁ চোখ যেদিকে চায়, সেথা কোকিল  ডাক সোনা যায় I বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যায় মোন I যেখানে শুধুই আনন্দ I ডানদিকে যেই তাকাই সব ধোঁয়া I সূর্য আলো দিচ্ছে অনন্তকাল I যা দেখি ভবিষৎ তা অজানা I বর্তমান  যেন বালির স্রোত I আমি ও আমার মোন অস্থির I তবুও দেখি পলাশ I ইচ্ছে ডানা মেলে উড়ে যায় মোন I যেখানে পলাশ অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা, সে আমার শান্তিনিকেতন I তাই ভাবি ভালোবাসা ভালো নেই I হাসতে ভুলে গেছে মোন I তাই বসাই কবিতার আসর মাঝে মাঝে I

২১ মার্চ ২০২১

সৌমিত বসু

 



মায়া বৌ - ৭১


বন জঙ্গলের ভেতর পড়ে রইলো আমাদের বাড়ি

গৃহপ্রবেশ হয়ে উঠলোনা আর

অনেক যত্নে পাতা দিয়ে তৈরি করা ঘর

ওপরে গোলপাতার ছাউনি

যার ফাঁক দিয়ে চাঁদ এসে 

দুটো শরীরে ঘটিয়ে দিতো দেহপ্রবেশ

মাঝরাতে অলৌকিক জ্যোৎস্নায়

সমুদ্রের তীর ধরে ছুটে চলা, 

কাঁধের ওপর মেয়ে

তারপর ধীর পায়ে 

নেমে যাওয়া সমুদ্রের ভেতর।


প্রতি পূর্ণিমায় সমুদ্র যখন 

ফুঁসে ওঠে উন্মাদের মতো

ঝাউজঙ্গলের ভেতরকার বাড়ি 

অনবরত ডেকে চলে আমাদের

আর দু-ডানা ছড়িয়ে 

পাড়ে পাড়ে কেঁদে চলে গৃহপ্রবেশ।

ছবি ধর




ফাল্গুনী


বসন্ত রাগিণী বাজে মন্দ মন্দ সুরে

   রাখালের বাঁশি ওই বেজে ওঠে দূরে।

     ফুল হারে সজ্জিত

     নানা রঙে রঞ্জিত 

আগুন ফাগুন গুলাল বাতাসে ওড়ে।

অর্কদীপ সরকার

 


আদর


শীতের আদর, গরম চাদর 

কাঁচা ঘুম, ভাঙা চোখ । 

বুক ছোঁয়ানো, নরম ঠোঁটে 

আদরের জয় হোক ।।


বোতাম ভাঙা, সাদা জামা 

লিপস্টিকে হল লাল । 

ব্যস্ত অফিস, গরম টিফিনে 

আদুরে  সাতসকাল ।।


রোদে পিঠ পাতা, ছুটির দিন 

অগোছালো শাড়ী, সেফটিপিন। 

ঘুরতে যাওয়া, কফির ভাঁড়

আদুরে হাঁটা, রাস্তা পার ।।


মাথায় বালিশ, হাজার নালিশ 

খুনসুটি মাখা, কান ফিসফিস । 

কপালে চুমু, ঘুমে মাখা চোখ 

 আদরের জয় হোক।।

ওয়াহিদা খাতুন




সনেটসনেট  রজনী-সুখ



প্রকৃতির ঘুমচোখে রজনী নিঃঝুম;

শীতের কাঁথা মুড়ে বিশ্ব ঘুমাচ্ছে শুয়ে--

জ্যোতিস্ক-জ্যোৎস্নায় তন্দ্রাপুরী যায় ছুঁয়ে--

মহাকাশ-তলী শহরে নেমেছে  ঘুম;

মরণকাঠিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন জীবকুল--

নিশিস্বপ্নে ভেসে সুখমগ্নে করে খেলা;

তন্নি নদীর তীরে কাটে কামনার বেলা;

দংশিত কীটের দহনে স্খলিত ফুল--!


নিদ্রাসুখে শ্রান্ত শরীর রজনী কোলে ;

নিশুতি চাদরে প্রণয়ের শয্যা মেখে--

মধুচন্দ্রিমা বিরহ কাব্যকথা লেখে--

নক্ষত্র-আসরে রতিশাস্ত্র পৃষ্ঠা খোলে;


অভিসার-অভিধানে শুধু প্রিয়-মুখ--!

ব্যথিত চিত্তে চলে যায় রজনী সুখ--!।


রচনাকালঃ-১২টা ১৬ মিনিট (সনেট নম্বর ৯৬)

মমতা রায়চৌধুরী



চিরসাথী কবিতা


কবিতা তুমি আমার,

ভালবাসার ভাললাগার,

মনের চাবি কাঠি।

দুঃখ যন্ত্রণা অবসানে

এক পশলা বৃষ্টি।

আবার দগ্ধ মনে

হারিয়ে যাওয়া বসন্তে,

ফিরে আসো  মনে 

হাজারো রঙে প্রতিচ্ছবি।

কবিতা তাই তুমি আমার,

ভালোবাসার গহন মনের

চোরা কুঠুরির চিরসাথী।

স্বপন কুমার ধর




 মনের মানুষ


মনের মানুষ পেয়েও যদি,

হারাতে হয় তাকে,

ইচ্ছে সবই চাপা পড়ে যায়,

নীরবে বুকের মাঝে।



হয়তো কারো দোষ ছিলনা,

তবুও হারাতে হয়েছে,

ছিন্ন হয়েও জীবন দুটিই,

মিশেছে বাস্তবতে।



অতীত এখন স্মৃতির পাতায়,

স্থান করেছে নিয়ে,

ফেরানো তাকে যায়না যে আর,

বহুমূল‌্য দিয়ে ।



বাধ্য হয়েই মেনে চলেছি,

বিধাতার এই লিখন,

হয়তো এভাবেই শেষ হবে একদিন,

বর্তমানের জীবন।

মুন চক্রবর্তী




আমি আর তুমি 


অনেক দূরে হাঁটছি আমি আর তুমি 

পাশাপাশি  শব্দের নৈসর্গিক ভালোবাসায়

মৌণ মায়াজাল মাকড়সার শিল্প আর শিল্পীর

হাজার কিলোমিটার রাস্তা পার করে নিঃশব্দে 

ভাবনাগুলো এক মঞ্চে উচ্চারিত পৃথিবী 

দূরের কথারা কাছে আসে কবিতায় 

 রাত্র নিশিথে অজনার টানে পাতায় আলিঙ্গন করে

 শব্দেরা রামধনু হলে আমি আর তুমি কবিতার কাছে আসি--কাছে আসি।

মিলন ভৌমিক


 


সুন্দরবন


বাংলার দখিন প্রান্তে

বিখ্যাত বন নাম সুন্দর বন.

দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে

অসংখ্য নদ নদী

বিরাজ করছে অরন্য সুন্দরী.

বিষধর সাপের সাথে

ধূত শিয়ালের খেলা,

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের

বাসভূমি এটা.

অনেক দ্বীপ রয়েছে

নদ নদীর ভিতরে,

জনমানবহীন হয়ে.

 নাম না জানা পাখিরা 

রাজত্ব  করছে ,

মনের কথা বলে.

জীব জন্তুর দেশ

ভীতরে ঢুকতে নিষেধ.

নয়নাভিরাম প্রকৃতি দেখে

মন যাবে ভরে,

ইচ্ছা হবেনা আসতে.

প্রকৃতি প্রেমিকের অভাব নেই

এই পৃথিবীতে,

সব প্রেমিকের জায়গা এখানে.

নৌকা বিহার বড়ই ভালো

যদি থাকে প্রাণের মানুষগুলো.

নিম'ল আকাশ বাতাস

গভীর জঙ্গল, মিলে মিশে,

এযেন মানুষের মিলন.

কোনা জালে ,

রুপালী মাছ দেখে

আনন্দ লাগে মনে.

জেলে যদি পরে যায়

বাঁচবে কিভাবে ?

কুমির ও কামটের  হাত থেকে.

বাঘ কে দেখতে

ইচ্ছা ছিল মনে,

বাঘ দেখতে পেলো সবাইকে.

দিন দিন নৌকায়

বাড়ছে দুষণ,

সরকারের দৃষ্টি প্রয়োজন.

বিশেষ পযাটক কেন্দ্র

গড়তে হবে এখানে,

পৃথিবীর পযাটকরা

দেখবে মানচিত্রে.

( কল্পনা সঠিক, সুন্দরবন সম্পর্কে)

অলোক দাস




বসন্ত চলিয়া যাইবে


বসন্ত চলিয়া যাইবে, আসিবে আবার I 

যৌবন চলিয়া যাইবে, আসিবে না আর I

 পাতা তো গড়িবে ঝরিয়া এ বসন্তে I 

মিশিবে মাটিতে I 

এটা কোনো যন্ত্রনা নয় I 

নতুনের আহ্বান, আবার ফুল ও পাতা গজিবে I

 পুরানো পাতারা পাবে মুক্তির অনাবিল আনন্দ I 

আর আনন্দ লাভ ই তো আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য I 

ইচ্ছে ডানা মেলে যাও সুদূরের সন্ধানে I


ফিরোজ আহমেদ জুয়েল


 


গল্প:জীর্ণ জীবন(পর্ব-১)


গল্পের শিরোনাম : অতিরিক্ত রাগ,জিদ, অহংকার ও ইগো মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।

এবং আত্মসম্মান এর চেয়ে বড় আর কিছুই নেই,যেটি হারিয়ে গেলে বেঁচে থাকাটাও দূর্বিষহ হয়ে পড়ে এবং জীবন্ত মানুষও জীবন্ত লাশ হয়ে যায়।

এই দুইটি উক্তির সমন্বয়ে রচিত লেখা জীর্ণ জীবন।

এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে কিভাবে একটি মানুষ তথা পরিবার হারিয়ে বিবাগী হয়ে যায়,তারই বাস্তবোচিত কাহিনী তুলে ধরা।

নির্দোষ হয়েও একজন নিরাপরাধ যুবক  আইনের কাছে আসামী এবং ২য় দফায় সাজা ভোগ করে। বিচারাধীন অবস্হায় কতোটা কষ্ট ও ঘৃনা পেলে একজন যুবক চিৎকার করে বিচারককে বলতে পারে মাননীয় জজ সাহেব,আমাকে নির্দোষ প্রমানের জন্য মুক্তি দিন না হয় সাজা দিন তবুও আমার সহধর্মিণীর সাথে যেতে বাধ্য করবেননা প্লিজ প্লিজ প্লিজ.......! চলমান

১৯ মার্চ ২০২১

অর্কদীপ সরকার




চাকরি 


সবটুকু উজার করেও, ব্যর্থতা প্রতিক্ষনে 

কলমে আসেনা কথা, শব্দেরা অনশনে। 

লেখার টেবিলে ছেঁড়া চিরকুট, স্বপ্ন বুনে কাঁদে 

ঘড়ির কাঁটায় বয়স বাড়ে, চাকরিতে বাঁধসাধে।।


লালবাতি গাড়ি মিটিং-মিছিল, ব্যর্থতা অবিরত 

মদের বোতলে গ্রাস করেছে বেকারত্বের ক্ষত। 

ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ডিগ্রীগুলো মেধাতালিকায় বাদ সিগারেটের কালো ধোঁয়ায় বেকারের আর্তনাদ।।

জারা সোমা




ঘুম


কোলাহল শুরু হতেই পাখি 

   খুঁজতে থাকে বাসা


 মরানদীতে আচমন সেরে

   ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের জমায়েত 


অবাধ্য স্বপ্নভঙ্গের চাবুক কষিয়ে 

    ঘা লাগাতেই,ঘোর কাটে 


হরকা সময় ভাসিয়ে দেয় হরেক

 বায়ানাক্কা শেষপ্রায় বিন্দু ছুঁলেই 


 পালা বদলের খেলার জমজমাট আসরে

     বেচতে থাকি  মুখোশ ও  মালা 


কানহা মুঠো খুলে কালো ফাগ ছুঁড়তেই 

   চাঁদকে বলি একটা জম্পেশ  চুমু খেতে 


    কলঙ্কের কোলে মাথা রাখলেই

        বড্ড ঘুম পায় .....

মিলন ভৌমিক


 


শিশু শ্রমিক


নবজাতকের জন্ম নি়য়ে

মধুর ২ স্বপ্ন থাকে,

মানুষের মনে.

ফুটফুটে ছেলেটি স্কুলে যাবে

বাবা মায়ের হাতধরে.

ধীরে ধীরে বড় হবে

দুঃখ,কষ্ঠ,লাঘব হবে.

সমাজের পিছিয়ে পরা

মানুষের কথা একটু ভাবো,

আছে স্বপ্নের ফেড়ি

সফল হয়না অথ'ভাবে.

দশ বছর হলোনা বয়স

বসে আছে ফুটপথে,

বাবুদের জুতো পালিশ করবে.

অফিস বাবুরা চলে যাচ্ছে

না দেখার ভান করে.

সরকারের আইন আছে

শিশুশ্রমিক নিষিদ্ধ এদেশে.

কাজ করানো যাবেনা যে.

গরিবী হঠাও দেশ থেকে

নেতারা সব বলে,

সত্তর বছর পরেও 

হলোনা সমাধান যে.

নববষে' সমাজ কে

নিতে হবে শপথ,

স্কুল ছুট,পথ শিশু

থাকবেনা এদেশে.

মানুষই পারে সমাজকে

পরিবত্তন আনতে.

মমতা রায়চৌধুরী




আগে দেখা হলে



আরো আগে দেখা হলে,

অনেক কিছু ঘটতে পারতো।

অনেক বসন্ত একসঙ্গে

কাটাতে পারতাম।

অনেকগুলো সূর্যমুখী

সকাল উপহার দিতাম।

আরো আগে দেখা হলে ,

নদী, সমুদ্র, পাহাড় হয়ে

নানা রূপে ধরা দিতাম।

আলতো ছোঁয়ায় পরতে পরতে 

ভালোবাসার গান ছড়িয়ে

দিতাম হৃদয়বীনায়।

আরো আগে দেখা হলে,

হয়তো ঘর বাঁধতাম।

হয়তো বা ভালোবাসার

 কুঞ্জবনে আনন্দ উচ্ছ্বাসে

ঢেউ তুলতাম।

অলোক দাস




বলতে পারো      


সবায়ের কোরো যাওয়া সেবা, হয় নাকো বার্থ I যদিও মোন জানে, কেউ আমার নয় I বলতে পারো কে সেই পুরুষ এনেছিলেন নোবেল বিদেশ থেকে প্রথম I বলতে কি পারো কে সেই বীরপুরুষ বলেছিলেন, যে কাজ করি, সেখানে একটা ভুল থাকবেই I কে বলে যার যা কাজ সে করবেই I কে বলেছিলেন না  বলে কিছুই নেই I আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি, এ বাণী কার I তুমি আসবে বলে, পুলিশ টা ঘুষ খায় নি I সবই পরিষ্কার শুধু তোমারি জন্যে I

স্বপন কুমার ধর




নারী, তুমি স্বপ্নে 


তোমায় আমি যতই দেখি,

করি ততই কল্পনা,

মনের ফানুস উড়িয়ে দিয়ে

বাড়িয়ে দিই জল্পনা।

কখনো দেখি শিশুর মত,

কাঁদছো একা ঘরে,

কখনো আবার প্রেয়সীরুপে,

জড়িয়ে ধরছো মোরে।

কখনো দেখি মাতৃ রুপে,

করছো শিশুর পালন,

কখনো আবার রুদ্ররুপে,

করছো তাদের শাসন।

কখনো দেখি অন্যায়ের বিরুদ্ধে,

প্রতিবাদের ধ্বজা ধরো,

কখনো আবার মানিয়ে নিয়ে,

সংসার প্রতিপালন করো।

দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন,

তুমিই করতে পারো,

মানব সৃষ্টির চলমান ধারা,

গর্ভে ধারণ করো।

দেখি স্বপ্নে এত রুপ তোমার,

বিশ্বাস করা দায়,

বাস্তবে আজ ও শোষণে পিষ্ট,

তুমি যে নারী, হায়!

ওয়াহিদা খাতুন




সনেট  রজনী-সুখ


প্রকৃতির ঘুমচোখে রজনী নিঃঝুম;

শীতের কাঁথা মুড়ে বিশ্ব ঘুমাচ্ছে শুয়ে--

জ্যোতিস্ক-জ্যোৎস্নায় তন্দ্রাপুরী যায় ছুঁয়ে--

মহাকাশ-তলী শহরে নেমেছে  ঘুম;

মরণকাঠিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন জীবকুল--

নিশিস্বপ্নে ভেসে সুখমগ্নে করে খেলা;

তন্নি নদীর তীরে কাটে কামনার বেলা;

দংশিত কীটের দহনে স্খলিত ফুল--!


নিদ্রাসুখে শ্রান্ত শরীর রজনী কোলে ;

নিশুতি চাদরে প্রণয়ের শয্যা মেখে--

মধুচন্দ্রিমা বিরহ কাব্যকথা লেখে--

নক্ষত্র-আসরে রতিশাস্ত্র পৃষ্ঠা খোলে;


অভিসার-অভিধানে শুধু প্রিয়-মুখ--!

ব্যথিত চিত্তে চলে যায় রজনী সুখ--!।


রচনাকালঃ-১২টা ১৬ মিনিট (সনেট নম্বর ৯৬)

মোঃ হা‌বিবুর রহমান



 তু‌মি আস‌বে ব‌লে তাই


আকু‌তি নি‌য়ে চে‌য়ে‌ছিলাম 

তোমার সুদূর প‌থ পা‌নে,

দীর্ঘ সময় প‌রে হ‌বে দেখা 

বহুদিন ধ‌রে ভে‌বে‌ছি তাই।

অ‌পেক্ষায় প্রহর গু‌ণে‌ছি

তু‌মি আস‌বে ব‌লে তাই।

ভে‌বে ভে‌বে তন্দ্রায় প‌ড়ে‌ছি 

বেশ অ‌নেক অ‌নেকবার।

মা‌ঝে মা‌ঝে সু‌যোগ বু‌ঝে 

ছোট দু'ডানার দূর্দান্ত মশারা

তন্দ্রার ভিত‌রেই খে‌য়েছে রক্ত

বেশ ‌বেশ কয়েকটি বার,

তাদের ছোট্ট পেট ভ‌'রি। 

তু‌মি আস‌বে ব‌লে তাই 

অ‌নেকগু‌লো রাত ক‌'রে‌ছি গুজরান,

কখনও জে‌গে কখনও বা অর্ধঘু‌মে।

অব‌শে‌ষে আস‌লে যখন তু‌মি

দে‌খেই হ'লাম একদম ‌নিশ্চুপ হতবাক। 

যেমন‌টি কল্পলো‌কে এঁ‌কে‌ছিলাম তোমা‌য়

হুবহু একটুও ফারাক হয়‌নি 

তোমার চাঁদ বদনখা‌নি।

আকুবাকু হৃদয়‌টি হ‌লো শীতল ঠান্ডা

মনটা হ‌লো ভীষণ খুশী

তোমার চাঁদ বদন‌টি হে‌রিয়া।

সুলতানা চৌধুরী পারু ( ইংল্যান্ড )




 শত বাধা 


আহ্লাদি মেয়ে কত যে সখ ছিল 

ছবি আঁকবে বলে ,পারেনি সে আর

তার ছবি আকা বারণ ছিল ! মুখেতে নেকাব

মেয়েদের ছবি অংকন নাকি পাপ ! সেই তো মহাপাপ !


গাছে উঠবে পাখির ছানাদের সাথে 

কথা বলবে ! কত কি ? 

সেই কথাটিও কাউকে তার আর বলা হয়নি 

হয়তো সেটিও পাপ কিংবা মহাপাপ ! সে বুঝতে পারেনি !


পাখিরা যে নিষ্পাপ  

কাউকে ধোঁকা দিতে জানেনা 

যা কিছু শুনে নিজের মনেই রাখে 

তাইতো মেয়েটির পাখি এতো প্রিয় ! খুব প্রিয় বলবে কাকে !


কত যে সখ  ছিল মেয়েটির 

পুকুরে সাঁতার কাটবে প্রতিযোগীতা করবে

কিন্তু তাও কি সম্ভব কত মতবাদ ! শত অপবাদ 

সে যে শুধুই মেয়ে ! মেয়ে হয়ে জন্মিয়েছে সেটাই তার অপরাধ !


আহ্লাদি মেয়ে সারাক্ষণই অপেক্ষার প্রহর গুনে  একদিন সে বড় হবে ! স্বামির ঘরে যাবে আল্পনায় ছবি আকবে ..

তবে কি সেখানেও অপবাদ তার পিছু নিবে ! নিজের মনের স্বাধীনতা কি থাকবে !

শাশুড়ির রক্ত চোখ ! শাড়ি পড়তে হবে ! সংসার ধরম মেনে চলতে কি তার হবে !

আজও তার নারী হিসেবে যেভাবে চলতে হয় ! হয়তো সেই ভাবেই বাকি জীবনটা একদিন মানিয়ে নিবে !

১৪ মার্চ ২০২১

সৌমিত বসু


 


মায়া বৌ - ১১


একটা মানুষ আর একটা মানুষকে ডাকতে গিয়ে দেখে 

দুটো মানুষের মধ্যে দিয়ে চলে যাচ্ছে

এক তীব্র মালগাড়ি।

এক একটি বগির ফাঁক দিয়ে 

সে দেখার চেষ্টা করে ,কিন্তু 

ঝাপসা ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না ।


তখন সে ফিরেও যেতে পারেনা আবার পাতের ওপর ঝাঁপিয়েও পড়তে পারে না।সে নিশ্চিত ট্রেন চলে গেলে

তার জন্য পড়ে থাকবে শুধুই হুইসেল।


তখন সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আত্মহত্যা  করে।



মধুমিতা রায়




ইচ্ছেকথা...


কখনও ইচ্ছা করে

এলোমেলো সমস্ত ভাবনা নিয়ে

নদীর কাছে বসি


রুক্ষ যে পথটা 

চলে গেছে দূর থেকে দূরে

নদীর পাশে এলে

সেও খানিক নরম হয়ে ওঠে।


তারও ইচ্ছে জাগে

তার দুপাশে কৃষ্ণচূড়ার মায়া থাকুক

যত্নমাখা ছায়া থাকুক।


ভাবনাগুলো আকাশের সাথে

গল্পে মাতে

পানকৌড়ির মত ডুব দেয়

তারপর পথকে বলে....

ভালবাসি তো!


রুক্ষ পথটা কঠিন হবার চেষ্টা করেও

হেরে যায়

মায়া আর ছায়া তাকে কখন যেন

ভিজিয়ে দিয়ে গেছে!