৩০ আগস্ট ২০২১

সানি সরকার


 

কবির বারান্দা 


মুক ও বধির হয়ে থাকি... 

যেমন ওই গাছ, ওই শীতল  প্রাচীর, 

ঠাণ্ডা জলের মতন অতল ছুঁয়ে আছি 

আর কী নেবে 


খুব শান্ত ও ধীর আমাদের চাষাবাদ

খাদানের ভেতর নেমে আসি 

ওই আমাদের শস্যবীজ

ওই আমাদের অনন্ত কাঁচা মাটির গন্ধ

ওই আমার শস্যদেবী পাথর হয়ে গিয়েছে 


এখন মাঠের মধ্যিখানে খেলা করছে সার্কাস বালক

রিং নিয়ে, ঘোড়া নিয়ে, প্রাচীণ দড়ির ওপর

আর কুচকুচে কালো বুক ফুলে আছে

হাসি লেগে আছে ঠোঁটের সমস্তটায়

এতটাই চঞ্চল সে, পৃথিবীটিকে হাতের ওপর নিয়ে

ঘুমন্ত মানুষের মতো ক'য়েকবার ঘুরিয়ে দিল 


এইসব তোমার গোচরে আসে না

তবলার স্থির তালের ভেতর

আস্তে-আস্তে চাঁদের দু'পিঠ পরিক্রমণ করলে এক্ষুণি

এতটা-ই আস্তে, যেন মাথা থেকে পা-বেয়ে 

একটি-একটি করে সরীসৃপ যাতায়াত করল

এবং তুমি কিছুই টের পেলে না মুহূর্তের জন্যেও 


মুক ও বধির এই বিদ্যানিকেতনে

কেন যে কোনও ব্ল্যাকবোর্ড নেই, নৌকো নেই…

শুধু একটি ব্ল্যাকহোল, যে-যেমন আসে

আর তেমনি চলে যায় 


কবিতার মুক্তির পথের দিকে

কবির তর্জনী নির্দেশ করা... 

এইভাবে কবির কলঙ্ক জমা হয়

আত্মা ও পরমাত্মার মাঝের বারান্দায় 

কবির সার্কাস বালক ঘুমকে সিলিংয়ে টাঙিয়ে

ট্রেনের হুইশেল আর দেয়াল ঘড়ির শব্দ গুনছে 

                                          রাত্রি পৌঁনে চারটেয়...

আয়শা সিদ্দিকা




তুই নেই বলে 


তুই নেই বলে

অসময়ে বৃষ্টি এলে আজ ভিজতে যায় চলে 

তুই নেই বলে

পুরোনো কিছু স্মৃতি আর তোর মুখখানা আজও আমায় সমানভাবে  করে বিচলিত

তুই নেই বলে 

এখন কেউ মায়া দেখাতে এলে আমি অনেকটাই থাকি অাড়ালে 

তুই নেই বলে

বসন্ত এসেও বসন্ত মুখ ফিরিয়ে গেলো 

তুই নেই বলে 

কবিতার ছন্দগুলোও আজ বেশ এলোমেলো 

তুই নেই বলে

কেউ আর শাসন করে না, বকে না আমায় হাসি ঠাট্টার ছলে 

তুই নেই বলে

জানিস আজকাল কথা বলতে খুব জড়তা হয় 

তুই নেই বলে 

বালিশটা এখন রোজই ভিজে 

চোখের কিছু জলে

তুই নেই বলে 

সুখ পাখি এসে দূরে গেল চলে

তুই নেই বলে 

শ্রাবণ ধারার মেঘে,আবেগেরা আছে মুখ ঢেকে

তুই নেই বলে 

এ শহর আজ চলে মিথ‍্যে কাব‍্যের ছলে। 

প্রমি জান্নাত


 


যদি এমন হয়


ধরুন কোনো এক ভোরে ঘুম ভাঙতেই জানলেন আমি নেই!

তারপর?  আমি হীনা সকাল গুলো কেমন কাটবে আপনার?


কোনো এক মধ্যদুপুরে হঠাৎ আমার কথা মনে পড়ল ভীষণ 

কিন্তু তপ্ত দহনে পুড়াবার জন্য আমাকে আর খুঁজে পেলেন না ; আমি নেই আর, কেমন লাগবে তখন?


কোনো এক বরষায় হঠাৎ যদি আমার সাথে গল্প মাখতে ইচ্ছে হয়। আমি তখন ইহলোকের গল্পের উর্ধ্বে হারিয়ে গিয়েছি ; কি করবেন তখন?


কোনো এক গোধূলি বেলায় আমাকে নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা দেয়া ছিল হয়তো তবে নির্দিষ্ট সেই গোধূলি আলো আসবার আগেই আমি সন্ধ্যার ঠিকানায় নাম লিখালাম। 


আমার সাথে হারিয়ে যাওয়া হলো না আর।


আমার অপেক্ষায় সময় কাটাবেন তখন? নাকি অন্য কোনো স্পর্শ আপনাকে আমার স্মৃতি টুকু থেকে ও নিয়ে যাবে দূরত্বে!


আসবেন বলে বলে কাছে আসার তারিখ টা কেবল পিছিয়ে দিলেন অথচ ভুলে গেলেন মৃত্যু অপেক্ষার ধার ধারে না। আপনার অবহেলা, অপেক্ষা টুকু উপেক্ষায় ফেলে যদি মৃত্যু নামক অতিথি আমাকে ডেকে নিয়ে যায়!! 


জানেন তো আপনাকে মনে পড়লেই আমি আজকাল আকাশ দেখি। আপনাকে বলতে না পারা কথা গুলো, আক্ষেপ, অভিযোগের কাব্য গুলো কেবল মেঘেদের ঠিকানায় উড়িয়ে দেই।


মন খারাপ হলেই শূণ্যতা দেখি। আমার আর তখন নিজেকে শূন্য মনে হয় না। বিশালতার আকাশের মাঝে ক্ষুদ্র আমি টা পরিপূর্ণ।



The sky cannot be seen from the Grave..

The Sky cannot be seen From the grave..


সেমন্ত, আপনি আমার আকাশ হবেন? যে আকাশ টা বুকে পুষে অতল অন্ধকারে হারিয়ে গেলেও আকাশ দেখতে না পারার দুঃখবোধ আমায় আর পোড়াবে না।

হা‌বিবুর রহমান হা‌বিব




দগ্ধ দীর্ঘশ্বাসঃ


দীর্ঘশ্বা‌সের অ‌তি দীর্ঘ দগ্ধ গু‌লো,

যতই কা‌ছে যাই,ততই দূ‌রে পাই,

দি‌কে দি‌কে শুধু ভরা হাহাকার ,

নাই শুধু নাই ।

চৈ‌ত্রের দ্বা‌হে পোড়া শুস্ক কান‌ণে,

বিরস ক‌ন্ঠে শুধু পা‌খির ডা‌কের আর্তনাদ ।

তৃ‌ষিত বুক ফাটা পিপাসায় চে‌য়ে থাকা,

অ‌গ্নি আকা‌শের পা‌নে আর পা‌নে ।।।

শিবনাথ মণ্ডল


অসুস্থ‍্য  পৃথিবী


মাটির নীচেজল কমছে

ডাঙায় জলোচ্ছৃস

আর কটাদিন পরে মানুষ

চাঁদে করবে বাস।

              বারে বারে নিম্মচাপ

                      প্রকৃতির কি খেলা

                   হরকা বানে ঘরবাড়ি  ভাসে

                         গাঙে যেন ভেলা।

মেঘ ভাঙা বৃষ্টি কোথাও

    যেখানে সেখানে ধস্

কোথাও আবার দাবানল

      মাটিতে নেই রস।

                      হিমালয় পড়ছে গলে

                              সূর্যের বেড়েছে তাপ

                         সমূদ্র থেকে উঠেআসে

                                  গভীর নিম্মচাপ।

গাছ গাছালী হচ্ছে কাটা

        বাড়ছে গাড়ী বাড়ি

পৃথিবীর ভারসাম্য এবার

দেবে আকাশ পাড়ি।। 

২৯ আগস্ট ২০২১

নাজনীন নাহার



 প্রিয়_স্বাধীনতা 


প্রিয় স্বাধীনতা, 

তোমাকে নিয়ে লেখার সাহস আমার বরাবরই কম।

সকলে কত শত ভালোবাসায় আদৃত করে,

তোমাকে নিয়ে লিখে যায়।

আমার কেবল মনে হয়,

তোমায় নিয়ে লেখার সুযোগ্য আমি নই। 


তবুও সকলের ভালোবাসায় লেখার দুঃসাহস করি আমি।

আজ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস।

আজ ২৬ শে মার্চ।

কত আয়োজন কত উদযাপন,

কত কত গল্প, গান,  কবিতা তোমাকে নিয়ে।

তুমি আমাদের  পরিতৃপ্তির এক মহা প্রণয়,

তুমি আমার ও আমাদের ভালোবাসা।

আমাদের সম্মান আর গৌরবের আনন্দ তুমি। 


হে প্রিয় স্বাধীনতা ,

তুমি আমাদেরকে একখানা বাংলাদেশ দিয়েছ।

দিয়েছ লাল সবুজের পতাকার উজ্জীবন।

দিয়েছ বিশ্বের মানচিত্রে নাম, মান আর সম্মান। 


আমি জানি,

ত্রিশ লক্ষ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে,

অগুনতি মা বোনদের ইজ্জত ও আব্রুর বিনিময়ে ; আমরা তোমাকে পেয়েছি।

আমরা তা ভুলিনি।

আমরা তা ভুলব না কোনদিন প্রিয় স্বাধীনতা। 


তবুও তোমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো যখন তারিখ হীন দুঃসময় হয়ে সময় কাটায়, 

সময় কাটায় বেকার যুবকের হতাশার আতঙ্ক নেশায়।

ধর্ষিতার আজন্মের গ্লানিময় বিভীষিকায়,

আর দুর্নীতির ক্যাসিনো নিশীথের কাব্যে।

তখন তোমার অভিতাপের আগুনে পুড়ে,

নিঃশেষ হতে হতে পরাধীনতায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে জাতীয়তা আমাদের। 


জানো স্বাধীনতা!

তোমার মুখটা মাঝে মাঝে অবুঝ শিশুর নরম গালের মতো লাগে,

তখন তোমার চোখ ভর্তি আকাশে আমারা স্বপ্নের রংধনু  উড়তে দেখি। 

আমরা আবারও আমাদের ধমনীতে তোমাকে ধারণ করি,

পাঁচ ঘোড়া সাত ঘোড়ার অশ্বশক্তিতে আমরা দৌড়াতে থাকি।

দৌড়াতে থাকি ক্ষুধা দারিদ্র্য মারি আর সব রকম প্রহসনের বিপরীতে। 

আমরা আবারও স্বগৌরবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি,

আমরা আবারও শূন্যতার ব্যভিচারে হাত ফসকে তোমাকে হারিয়ে ফেলি।

তোমাকে হারিয়ে ফেলি হে প্রিয় স্বাধীনতা! 


আচ্ছা কেন এমন হয়! 

কেন এমন হয় প্রিয় স্বাধীনতা আমার!

আমাদের স্বপ্নের আকাশ মুছতে মুছতে দেখি,

শীতল দীর্ঘশ্বাসে গড়াগড়ি খাচ্ছে;

গৃহবন্দী আমাদের উত্তর আধুনিক জেলখানায় আটক বেহিসাবি সময়।

যদিও কেউ কেউ বেহিসাবি পরাধীন সময়ের গহ্বর থেকে কুড়িয়ে নেয়,

বেঁচে থাকার মৌন সম্মোহন। 


হে আমার স্বাধীনতা! 

তোমাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাস্তবতা আমাদেরে ছোবল মেরে বিষ ঢেলে দেয়,

আমাদের জীবন বিশ্বাসের রক্ত নালীতে ছড়িয়ে পড়ে বীভৎস দহন।

আমাদের জীবন থেকে উড়ে যায় সবগুলো স্বাধীন ভোর।

আমি ও আমরা আর এগুতে পারি না, 

সার্কাসের বিশালদেহী হাতীটির মতো,

আমরা এক শলতে দঁড়ির গিঁটে আবদ্ধ থাকি নির্দিষ্ট স্বাধীন পরাধীনতায়।

এভাবেই আমাদের অধিকাংশের স্বাধীনতারা, 

উৎসবের রঙিন গ্লাসে পরাধীনতার বিশ্বাস গুলে খায়। 


আমাদের মন ও মগজের অলিতে গলিতে মৌন মিছিলের স্লোগানে উচ্চারিত হয়,

হে স্বাধীনতা! 

তোমার মাঝবয়সী চোখ কী করে ভার্জিন হয়!

যেখানে টুইনটাওয়ার থেকে ফিলিস্তিন, 

ফিলিস্তিন থেকে ইরাক যুদ্ধ সমাপ্ত করে;

আই এস এর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তোমার চোখের সন্মুখে! 

যেখানে তর্ক বিতর্কে জর্জরিত অণুজীবের তাণ্ডবে টালমাটাল পুরো পৃথিবী! 

তারপরও কি মৃত্যুর কাছে পরাজিত হতে হতে তুমি বলবে!

আমরা স্বাধীন বাঁচি!

আমরা স্বাধীন আছি! 


তবুও হে প্রিয় স্বাধীনতা আমার,

চোখ ভর্তি আকাশ নিয়ে গৃহবন্দী থাকার পরেও,

তুমি যেভাবে নীল চিনো।

আমরাও তেমনি তোমার জানলায় রোদের পাল্কিতে 

নেমে আসতে দেখি গোটা আকাশ।

যার শরীর থেকে কুড়িয়ে নেই নতুন স্বপ্ন সমৃদ্ধ ভোর।

এই তো তুমি, 

এই তোমাতেই বিভোর আমরা;

হে প্রিয় স্বাধীনতা।

মিতা নুর


আমার কিছু স্বপ্ন আছে


কেবল জানি 

          তোমায় নিয়ে, 

আমার কিছু 

              স্বপ্ন আছে;

প্রাপ্য আছে

           বিনিদ্র রাত, 

কাটিয়ে দেবার 

              গল্প আছে, 

  হাজারো হাজার 

তোমার জন্যে 

         ব্যাকুল  হৃদয়;

একটুখানি 

        পুরোপুরি,

শর্তবিহীন

         তোমায় 

 কাছে পাবার !! 

আসাদুল্লাহ গালিব




অভিসাপ



আমাকে ভুল ভেবে কতকাল আর অভিসাপ দিবে,রোদের উত্তাপ আর মরুভূমির তৃণলতাহীন

খসখসে মরণফাঁদ অম্লান তোমার অভিসাপে৷

আর কতকাল?

কলমের ডগায় খুচাখুচি,

নিমগ্ন রাতের গভীরে নির্ঘুমদের সারিতে উদ্দাম দেহে হজম করি সব৷

আমাকে ভুল ভেবে আর কত বাক্য সৃষ্টি করবে

মেঘেরা সূর্যকে লুকানোর অবয়ব দেখে

সন্ধা ভেবে নেওয়া অবিচার৷

আর কত অস্পৃশ্যা থেকে নিজেকে মিটাতে চাও না পাওয়ার মাঝে৷

উদোম গায়ে আমাকে খুটিয়ে দেখো নির্মল গঠন

কৌতুহলী হৃদয় ছাড়া কিছুই পাবে না আর

তবে আর কত অভিসাপের বাণী উচ্ছারিত

তোমার যবানিকা থেকে৷

অপেক্ষায় আগামি প্রভাতের নতুন অভিসাপের

প্রীতির ডোরে আগলিয়ে আছে শতাব্দির সেরা চরিত৷ 

মমতা রায় চৌধুরী 'র গল্প - অপত্য স্নেহ


 অপত্য স্নেহ



বুলু কাকিমা পুলিশ অফিসারের মেয়ে, নার্সিংহোম মালিকের স্ত্রী ,ঝকঝকে গাড়ি  করে যাতায়াত। আমি জয়িতা যখন প্রথম বউ হয়ে মল্লিকবাড়িতে ঢুকি। আমাকে দেখতে এসে একগাল হেসে বলেছিলেন -'বাঙাল ঘরের মাইয়া আনছো, একটু মানাইয়া, গোছাইয়া লইও কল্যাণী'।কথাটার মানে সেদিন বুঝতে পারি নি। আজ হারে হারে টের পাচ্ছি। আসলে আমি শাশুড়ি মার যতই আপন হবার চেষ্টা করেছি ১৪বছরে একটুও সক্ষম হই নি। ভেবেছিলাম এ বাড়িতে নতুন করে মাকে পাব। মেয়ের মত তিনি আমাকে কাছে টেনে নেবেন। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি মায়ের স্নেহ তো কপালে জুটল না। অনেক প্রত্যাশা ছিল মনের ভেতর। বড়লোক বাড়ি বিয়ে হয়েছিল। ঝি চাকরাই সব কাজ করে। তবে আমার ভাগ্য অতটা সুপ্রসন্ন ছিল না। সব কাজ আমাকে করতে হতো। তাতে অবশ্য আমার কখনো কষ্ট হয়নি। কষ্ট হতো যখন বাবা-মা বা আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমাকে যখন তখন অপমান করা হতো ,অসম্মান করা হত। আসলে 'এই জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি'-এই কথাটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে আমার শশুর -শাশুড়ি মার ক্ষেত্রে। ছেলেটি হুট করে বিয়ে করে ফেলবে ,তা তাদের স্বপ্নের ও কল্পনার অতীত ছিল। ভেবেছিলেন যে ছেলেকে তারা এত ভালবাসেন মা বাবার কথা মত পছন্দসই পাত্রী র সঙ্গেই তার বিবাহ হবে। কিন্তু তা হয়নি। তাই  উচ্চশিক্ষিতা বৌমার‌ প্রশংসায় প্রতিবেশীরা পঞ্চমুখ হলেও তাঁরা খুশি হতে পারেন নি।কত সম্ভ্রান্ত বাড়ির ইতিহাসে লুকিয়ে আছে ,এরকম অত্যাচারের কাহিনি। কোনদিন হয়ত সেগুলো চার দেয়ালের বাইরে বের হতেই পারে না। অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায় সন্তান না হওয়াতে। অলক্ষী ,বাজা এ তো উঠতে-বসতে কপালে জুটতো। এমনকি ছেলেকে অন্যত্র বিয়ের জন্য তোড়জোড় চলতে থাকে। আমি শুধু চোখের জল ফেলি নীরবেএবং স্বামীকে একদিন বলে ফেলি ,সত্যিই তো আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারলাম না ।এতে তোমার ফ্যামিলির কোন দোষ নেই।তুমি বরং অন্যত্র বিবাহ করে বংশের মুখ রক্ষা করো। স্বামী অবশ্য মুখ কাচুমাচু করে বলে এসব কথা তুমি ব'লো না ।মুখে হয় তো বলে কিন্তু ভেতরে হয়তো আছে তার অন্যরকম খিদে। সেটা ক্রমশ প্রকাশ হতে থাকে। কিন্তু আমার তো কোথাও যাবার জায়গা ছিল না ।তাই মুখ বুজে আমাকেও সব মেনে নিতে হয়। অনেকে ভাবে উচ্চশিক্ষিতা সে এসব কেন সহ্য করে, সে তো চলে যেতে পারে বা প্রতিবাদ করতে পারে?স্কুল জীবনে যখন আমি এই অত্যাচারের কথা শুনতাম তখন ভাবতাম কেন প্রতিবাদ করে না। এখন বুঝি প্রতিবাদ আমরা অনেকেই করতে চাই কিন্তু পরিবেশ প্রতিকূলতায় সব সময় তা হয়ে ওঠে না ।বিশেষত যদি সেই মেয়েটি আত্মনির্ভরশীল না হয়ে থাকে।

ভেতরে ভেতরে এবার আমি আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কথাই ভাবছিলাম। কেননা স্বামীর প্রতি যার গভীর আস্থা ,শেষ পর্যন্ত সেও যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়। তার থেকে দুঃখের একটি মেয়ের জীবনে আর কি হতে পারে? আমার জীবনে চলতে থাকে মা না হতে পারার তীব্র যন্ত্রণা। সন্তান জন্ম দিয়ে নাকি সংসারের ভর্তি হওয়া যায় মল্লিকবাড়ির ধারণা অনুযায়ী। এভাবেই কাটতে থাকে বছর আমিও এ বাড়িতে স্বামী শ্বশুর শাশুড়ি মার সেবা -যত্ন, আর তীব্র অসম্মান নিয়ে সময় কাটাতে থাকি। আবার সন্তান থাকলেও সে মায়ের কত যন্ত্রনা ,আমি আমার জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছি চারপাশের ঘটনা দেখে ,বিশেষত বুলু কাকিমাকে দেখে। কাকা মারা যাবার পর বুলু কাকিমার যা-কিছু ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল সমস্ত কিছুই মেয়েরা কাকিমাকে বুঝিয়ে নিজের নামে করে নেয়। আস্তে আস্তে সেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বুলু কাকিমাকে আমি দেখতে পাই অন্য মাত্রায়। বুলু কাকিমা শ্বশুরমশাইয়ের বন্ধুর স্ত্রী হওয়ার জন্য সেই সুবাদে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসতেন আর আমার সঙ্গে গল্প করে যেতেন। এতে শাশুড়ি মা অসন্তুষ্ট হতেন। বুলু কাকিমা বাঙাল হওয়ার জন্য হয়তো আমার প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল ছিলেন।এরপর বুলু কাকিমার কপালেও জুটল মেয়েদের থেকে লাথি-ঝাঁটা। এমন কি খাবার খেতে না দেওয়া ।শেষমেষ একদিন তো আমার কাছে এসে কেঁদেই পড়লেন এবং বললেন তুমি আমার মেয়ের মতো ,তাই তোমাকেই বলছি। আমাকে একটু খেতে দেবে? আমি বললাম -'সে কি কথা ,কাকিমা ?অবশ্যই অতিথি নারায়ন। আমি আরো সাহস করে বলতে পারি কারণ আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মা তার মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন প্রায় দুমাস হল। তখন সংসারের সমস্ত কিছুই আমার হাতে বিশেষত হেঁশেলের। তাই যখন কাকিমা দুপুরবেলায় একদিন হন্তদন্ত হয়ে আসলেন ,চুলগুলো উসকো খুসকো ,চোখের কোণে কালি এবং কেঁদে ফেললেন। আমি বললাম কাকিমা কি করবেন আপনাকে বাঁচতে হলে তো আপনাকে আইনের দ্বারস্থ হতেই হবে ।কি করে বৌমা ? তাহলে তো আমার পরিবারের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি সব বেরিয়ে পড়বে ।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন -'তুমি পারবে তোমার পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলতে? আমি তোমার সব কিছুই জানি ।একদিন আমিও  হয়তো তোমাকে বলেছি যে একটা সন্তান জন্ম দিতে পারলে না । সন্তানসুখে গর্বিত মা হিসেবে বলেছিলাম তখন। তবে আজ বুঝি তোমার সন্তান হয় নি ,তুমি ভালো আছো ।আমার সন্তান হয়েও তো আমি ভালো নেই । অপত্য স্নেহ এমন যে, তারা ভুল করলেও তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বলতে পারি না। ওপরে থুতু ফেল লে তো মাটিতেই পড়ে ।এরা আমার সন্তান ।সুখে দুঃখে ভালো-মন্দে আমি জড়িয়ে আছি ।তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলব?আমি অবাক হয়ে গেলাম আর ভাবলাম মা এমনই হয়। উদাসী হাওয়া গায়ে এসে লাগল ।দোলা দিয়ে গেলো মনে প্রানে। তার দুদিনের মধ্যে শশুর শাশুড়ি মা বাড়িতে আসলেন। শাশুড়ি মা ,দেখি আদর করে আমাকে ডাকছেন ।আমি একটু অবাক হলাম বটে। তবে ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় করে। তবুও খুব খুশি হয়েছি যে এভাবে এত স্নেহের সুরে আমাকে ডাকছেন । এক নিমিষে যেন জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট ঘুচে গেল। মরা নদীতে বান ডেকে গেল।আমি গদগদ ভাবে যখন তার কাছে দাঁড়াই। উনি বললেন -'দেখো বৌমা তোমাকে আমি অনেক কটু কথা বলেছি কিছু মনে করো না। তবে তোমার কাছে অনুরোধ তুমি আমার ছেলেকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাও।  নইলে আমার বংশ রক্ষা হয় না। তুমি তো উচ্চশিক্ষিতা নিশ্চয়ই আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। তার জন্য যা করতে হয় আমি তার ব্যবস্থা করে দেবো। শুধু তুমি আমার ছেলেটিকে মুক্তি দাও। কথাটা শুনে আমার পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল, আমি যেন আমার চোখের সামনে তখন সর্ষেফুল দেখছি। তারপর নিজেকে শক্ত করলাম আর ভাবলাম তাই তো আমার স্বামী একটি সন্তান‌‌ প্রত্যাশা  করে। কিন্তু আমি সেটা দিতে পারি নি।আমাদের মধ্যে সম্পর্কটায় যেন আস্তে আস্তে অনেকটাই দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। ভেবে দেখলাম আমাকেও প্রমাণ করার দরকার আছে। আমি কিছু করতে পারি আমার আইডেন্টিটি তৈরি করতে পারি। সারাটা রাত ভাবলাম খোলা জানালায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম ,যখন চাঁদের স্নিগ্ধ মধুর আলো আমার শরীরে এসে পড়ল। ভাবলাম শাশুড়ি মার কথাটাই মেনে নেওয়া উচিত। পরেরদিন সকালবেলায় শাশুড়ি মাকে বললাম আমি রাজি । শাশুড়ি মা বললেন-বাহ ভাল ভাবনা। আমিও তোমার জন্য ভেবে রেখেছি। তুমি তো খুব ভালো গান করো। এ বাড়িতে তো তুমি সেভাবে গান করার সুযোগ পাওনি। তোমার জন্য একটা গানের স্কুল খুলে দেবো। জয়িতা খুব খুশি হলো। যে  গান একসময় তার প্রাণ ছিল। কলেজে গান গেয়ে কতজনার হৃদস্পন্দনে পরিণত হয়েছিল সে। শুধুমাত্র সজলকে ভালোবেসে এতটা সেক্রিফাইস করেছিল। তাই আজ শুধু সে নিজের জন্যই ভাববে। শাশুড়ি মা বৌমার মধ্যে একটা যেন চুক্তি হয়ে গেল। তবে মনে রয়ে গেল পুরুষ জাতির প্রতি একটা তীব্র ঘৃণা। এ কেমন ভালোবাসা ,সন্তান জন্ম দিলেই কি শুধু ভালোবাসার অস্তিত্ব রক্ষা করা যায়? সন্তান ই কি শুধুমাত্র দুজনকে বেশি নিবিড় করে বাঁধে?  আজ সন্তান হয়নি বলে সে সুখী হতে পারলো না সজলের সাথে। আর বুলু কাকিমা তার সন্তান থাকা সত্ত্বেও সেও সুখী হতে পারলো না। সন্তান না থাকার জন্য একটা সংসার ভেঙে যাচ্ছে ।আবার সন্তান থাকার জন্য অসহায় মা চোখের জল ফেলছে। এ কেমন অপত্য স্নেহ যার জন্য ভালোবাসার মানুষটিও হাতছাড়া হয়ে যায়। আজ জয়িতার বারবার মনে পড়ছে গানটি-"আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ' সজলের সঙ্গে বাঁধা ছিল তার গান। আজ তাল কেটে গেলো ,সুর বেসুরো হলো। তবে আজ নতুন করে নিজেকে বেঁধে ফেলতে চাইলো গানের অপত্য স্নেহে। জয়ীতার চলার পথে থাকল শুধু গান আর গান।

আফসানা মিমি


বাবা


আব্বু আমি তোমার মুখের মিষ্টি আম্মু ডাকটা আজও অনুভব করি।

আব্বু আমি তোমার মুখের মিষ্টি মৃদু হাসিটা আজও অনুভব করি।


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

তুমি ভালবেসে ডাকতে আমায় "মিতু" আম্মু কোথায় রে? 

আমি বলতাম এইতো আব্বু তোমার পাশে।

ফজর ও মাগরিবের ওয়াক্ত নামাজ পড়ে

বলতে আমায়,আম্মু একটু চা বানাতে পারবি কি?

বলতাম আমি,বসো তুমি আনছি আমি চায়ের সাথে সরিষা তেল আর লবনের মুড়ি মাখাটি।

মুচকি হাসি তুমি দিয়ে,

এইতো আমার লক্ষ্মী আম্মুটি।


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

টেবিলে খাবার খেতে বসে আমার আচল দিয়ে তোমার মুখের ঘাম মুছিয়ে দেওয়ার স্মৃতি!!

মনে পড়ে তোমার,হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে কতবার আমার হাত থেকে পাখাটা পরে গেছে,তুমি তখন বলতে আম্মু আর লাগবে না।

আমি তখন,মুখে হাসি নিয়ে একটুও থামতাম না...


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

পড়াশোনা করতে করতে কখনো ঘুমিয়ে পরলে আম্মুকে ডেকে বলতে ওর দ্বারা পড়াশোনা হবে না,

আরও বলতে লেখাপড়ায় এতো আরাম চলে না, অনেক সাধনা করতে হয়,অনেক কষ্ট করতে হয়।

 সময় আছে মেয়েকে বোঝাও!!

আর আমি তখন,আহারে কি ঘুম হা হা...


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

তোমার চশমা,জামাকাপড়,পান সুপারি,মেডিসিন ইত্যাদি সবকিছুর দায়িত্ব আমি নিয়েছিলাম।

আর তুমি বলতে আমার পাকনা 

আম্মুটি সবকিছুতে অলরাউন্ডার।

আমি তখন বলতাম কার মেয়ে দেখতে হবে না 

          হা হা....


আব্বু তোমার মনে পড়ে এসব পুরানো স্মৃতি?

নাকি সবটা ভুলে আমাদের ভুলে নিশ্চিন্তে আছো?

আব্বু মনে পড়ে এসব ভালবাসার কাহিনী?

নাকি সবটা ভুলো খুব আনন্দেই আছো?

               আব্বু!আব্বু!ও আব্বু!!...

এসব যে আমার খুব মনে পড়ে,ভুলতে পারি না এই মায়ার বাধঁন!


 কেন বললে না?ফোনটি করে আম্মুরে "মিতু" আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি বাসায় রওনা হয়ে আয়?

কেন বললে না? তুমি সহস্র কষ্ট আঘাত একা বুকে নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছো?

 

আব্বু ও আব্বু সত্যি কি

 এসব এখন আর মনে পড়ে না?

আব্বু আমি তোমার মুখের মিষ্টি আম্মু ডাকটা আজও অনুভব করি।

আব্বু আমি তোমার মুখের মিষ্টি মৃদু হাসিটা আজও অনুভব করি।


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

তুমি ভালবেসে ডাকতে আমায় "মিতু" আম্মু কোথায় রে? 

আমি বলতাম এইতো আব্বু তোমার পাশে।

ফজর ও মাগরিবের ওয়াক্ত নামাজ পড়ে

বলতে আমায়,আম্মু একটু চা বানাতে পারবি কি?

বলতাম আমি,বসো তুমি আনছি আমি চায়ের সাথে সরিষা তেল আর লবনের মুড়ি মাখাটি।

মুচকি হাসি তুমি দিয়ে,

এইতো আমার লক্ষ্মী আম্মুটি।


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

টেবিলে খাবার খেতে বসে আমার আচল দিয়ে তোমার মুখের ঘাম মুছিয়ে দেওয়ার স্মৃতি!!

মনে পড়ে তোমার,হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে কতবার আমার হাত থেকে পাখাটা পরে গেছে,তুমি তখন বলতে আম্মু আর লাগবে না।

আমি তখন,মুখে হাসি নিয়ে একটুও থামতাম না...


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

পড়াশোনা করতে করতে কখনো ঘুমিয়ে পরলে আম্মুকে ডেকে বলতে ওর দ্বারা পড়াশোনা হবে না,

আরও বলতে লেখাপড়ায় এতো আরাম চলে না, অনেক সাধনা করতে হয়,অনেক কষ্ট করতে হয়।

 সময় আছে মেয়েকে বোঝাও!!

আর আমি তখন,আহারে কি ঘুম হা হা...


আব্বু তোমার মনে পড়ে,

তোমার চশমা,জামাকাপড়,পান সুপারি,মেডিসিন ইত্যাদি সবকিছুর দায়িত্ব আমি নিয়েছিলাম।

আর তুমি বলতে আমার পাকনা 

আম্মুটি সবকিছুতে অলরাউন্ডার।

আমি তখন বলতাম কার মেয়ে দেখতে হবে না 

          হা হা....


আব্বু তোমার মনে পড়ে এসব পুরানো স্মৃতি?

নাকি সবটা ভুলে আমাদের ভুলে নিশ্চিন্তে আছো?

আব্বু মনে পড়ে এসব ভালবাসার কাহিনী?

নাকি সবটা ভুলো খুব আনন্দেই আছো?

               আব্বু!আব্বু!ও আব্বু!!...

এসব যে আমার খুব মনে পড়ে,ভুলতে পারি না এই মায়ার বাধঁন!


 কেন বললে না?ফোনটি করে আম্মুরে "মিতু" আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি বাসায় রওনা হয়ে আয়?

কেন বললে না? তুমি সহস্র কষ্ট আঘাত একা বুকে নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছো?

 

আব্বু ও আব্বু সত্যি কি

 এসব এখন আর মনে পড়ে না?

মুন চক্রবর্তী




ধ্বস্ত পৃথিবী 



ছায়াপথ ধরে হাঁটছে বিস্ফোরণ 

রেখে ছিলাম মল্লিকা বনের ঠিকানা

তবে কি রাস্তা ভুল করেছে ভূলুণ্ঠিত উড়ানা?

ধর্মের আস্ফালনে জ্বলছে কোমল শরীর

ব্যর্থতা নিয়ে ঘরে বসে আছে কৌশলী কারিগর 

মৃত্যুর পৃথিবী দেখার আগে, ভূমিকম্প আগ্নেয়গিরি উল্কাপাত সুনামি আসুক।

তবুও তো বেঁচে যাবে কোনো বাবার দেওয়া শাড়ির সম্মান

বেঁচে যাবে দেশ ছাড়ার যন্ত্রণা,নরক ভোগের দাসত্ব 

কোটি কোটি মৃত্যুতে লেখা থাকবে না ধর্ষন।

ধ্বস্ত পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা করি একবার পশু হও

মানুষ শব্দটি পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন না হলে

বনানীর উৎসব দেখবে না কোনো গ্রহ তারা

কত আর্তনাদের কান্না ঝরে পরলে নদী শুকিয়ে যায়।

ছুটির আয়োজন কর প্রকৃতি তোমার মৃত্যুতে দাঁড়াব নির্ভয়ে বাবার শাড়ি উপহারে।

২৮ আগস্ট ২০২১

দুর্গাদাস মিদ্যা


 

দোদুল্যমানতা 


 উড়ন্ত পর্দার মতো দুলতে থাকা এই জীবন

কখন যে ঝুপ করে ঝরে পড়ে মাটিতে! 

আত্মানুসন্ধানে রত থাকা মানুষ যদি চলে যায় মাটির মায়া ছেড়ে তবে বড় ভয় হয়। 

তবে কি মাটি এতই বিষময় হয়েছে দিনে দিনে। 

নাকি চিনে নিতে ভুল হয়েছে

জীবনের ধারা তাই এতো হাহাকার শোনা যায় মাটির দাওয়ায়। 

কী ভীষণ দোদুল্যমান মনে হয় এ জীবন!

মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ


 

  স্বাধীনতা কি?


স্বপ্ন আমাদের পূর্বপুরুষেরা দেখেছিল তাই ১৯৪৭সালে ১৫ই আগষ্ট অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ত্রনেছিলেন তারা স্বাধীনতা।স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ ও হয়েছিল।কিন্তু স্বপ্ন ভাঙার চর জাগেনি সর্বত্র।মুক্তি হয়নি কলমের ভাষার।বাংলা ভাষা মুক্তি পেলেও মুখের ভাষা,মনের ভাব প্রকাশে মানুষ পিছিয়ে পড়েছে।মানুষ কার্বনে ঢাকা যে কাগজে স্বাধীনতা কথাটি লিপিবদ্ধ করেছিল তার অনুরুপ কাগজে ধরা দেয়নি। ধরা দিয়েছে শুধু মানুষের মুখে।ধরা দিয়েছে শুধু মানুষের ইচ্ছায়।মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে।সার্বভৌমত্ব পেয়েছে।তবে অর্থপূর্ন স্বাধীনতা পায়নি।আমরা মুক্তির অর্থ বুঝেই মুক্তি চেয়েছিলাম।

তবে অর্থপূর্ন মুক্তি পায়নি।স্বাধীনতা শব্দের অর্থ যদি শুধু একটা পরিচয় হয়,তাহলে জাতির কাছে আমাদের নতুন কোনো প্রত‍্যাশা নেই।কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ বলতে যদি মানুষের মৌলিক চাহিদার অধিকার আদায়ের অর্থ হয়,তাহলে বলতে চাই ঘুষবিহীন চাকরি চাই,চাঁদা না দিয়ে শান্তিতে ব‍্যবসা করতে চাই।আমার যে রোগ হয়েছে শুধু সেই রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে চাই।শাহবাগে গলা উঁচিয়ে ক‍্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ পরাধীদের ফাঁসি চাই এবং ত্রকথা বলার পরও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই।যোগ‍্যতার বলেই চাকরি পেতে চাই।যোগ‍্যতার বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই।আমি আমার জমিতে ফলানো ফসলের ন‍্যায‍্য মজুরি চাই।আমি আমার মতো করে কথা বলতে চাই।

দিলারা রুমা ( ইংল্যান্ড )



যতোক্ষণ চোখ খোলা থাকে 


যতোক্ষণ চোখ খোলা থাকে 

ততোক্ষণ কাজের শেষ নেই

শেষ নেই ব্যস্ততার। 


যতোক্ষণ চোখ খোলা থাকে 

ডান ডাকে বাম ডাকে 

বাঁকে বাঁকে অস্থির! অস্থির!


যতোক্ষণ চোখ খোলা থাকে 

স্বজনের অভাব নেই সুহৃদের অভাব নেই

অভাব নেই বিরহ অসুখের 

আবছানি মায়াজাল দিয়ে থাকে 

এইতো সময়।


যতোক্ষণ চোখ খোলা থাকে 

কতজনেই ডাকে দুনিয়ার মৌচাকে 

সুর তুলে গায় গান 

মান আর অভিমান। 


যতোক্ষণ চোখ খোলা থাকে 

ভাবনারাও জড়িয়ে রাখে 

গ্রীষ্ম বর্ষা বৈশাখে। 


যতোক্ষণ চোখ খোলা থাকে 

ধান শালিকের মাঠ সবুজের হাট 

কাছে টানে 

নদী সাগরের জল জ্যোৎস্নার সিঁথানে। 


চোখ বুঁজে গেলেই সব দূরে যায় 

দূরে যায় সব,

হায়! অস্তবেলা উড়ে যায় উড়ে যায়

থেমে যায় রব।

মাসুদ রানা


বরণ 



কোন দিন খুব ভোরে

দরোজার কলিংবেল টিপে

আমাকে জাগিয়ে দেয় তোমার পিয়ন

তার হাতে থাকে 

আমার সারা রাতের মধুর স্বপ্ন মাখা

তারকা খচিত নীল খাম

আমি তার গলায় 

শিশির ভেজা শিউলি ফুলের মালা দিয়ে 

তোমার হাতের লেখা চিঠি  বরণ করি


কোন দিন ঠিক মাঝ রাতে 

তুমি সারা গায়ে জোছনা মেখে

অন্ধকারে এসে আমার বারান্দায় দাঁড়াও 

আমার দিকে অপলক চেয়ে চেয়ে 

মিটি মিটি হাসো অনন্ত কাল

আমি চাঁদের বুকে চুমু খেয়ে 

শার্টের বোতাম খুলে 

তোমাকে বরণ করি 

শিবনাথ মণ্ডল



শরৎ-এর পরশ 


এসেছে শরৎ ভাদ্র মাসে

  শিউলী ফুলের গন্ধ

পাকাতাল পড়ছে ঝড়ে

নেচেছে তাই নন্দ।

             আশ্বিনে পূজোর আনন্দ

                     কচি ধানের দোলা

              দিনরাত্রি চলছে শুধু

                      মেঘ বৃষ্ঠি খেলা।

দক্ষিণ হাওয়ায় দোলা দেয়

            মুকুট পরা কাশ

সাদা মেঘ ঢেকে দেয়

        ঐ নীল আকাশ।

              বিকেল বেলা সোনালী রোদে

                     মেঘের পাহার ভাষে

              শরৎ এলো বোঝা গেলা

                       ভাদ্র আশ্বিন মাসে।।

২৭ আগস্ট ২০২১

আপনারা সরাসরি ফেসবুক পেজে পৌঁছে যান লাইক করুন ,ফলো করুন

https://www.facebook.com/111857043746381/posts/374568980808518/ 


লাইভ কবি ও কবিতা গল্প পাঠে আপনি আসুন ।

প্রেম ও কিছু কথা / সজিব আল হাসান



প্রেম ও কিছু কথা



                            প্রেম করতে কে না চায়। মনের মত মন খুঁজে সত্যিকারের প্রেম করা এক ধরণের শিল্প। যদিও প্রেম করলেও জ্বালা প্রেম না করলেও জ্বালা। মুখে বললেও প্রেমের মানে বুঝতে সারা জীবন লেগে যায়। তাই প্রেমের কোনও নিদিষ্ট বয়স হয় না। পদার্থ বিজ্ঞানে যা আকর্ষণ মানবিক বিদ্যায় তাই প্রেম। পদার্থ বিজ্ঞানে যা বিকর্ষণ মানবিক বিদ্যায় তাই ঘৃনা। আগের চেয়ে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। আবার অহরহ সম্পর্ক ভেঙেও যাচ্ছে। প্রেম মানেই ভালবাসা, অবেগ ও মায়ার সম্পর্ক। প্রেম মানুষকে তার ভেতরের সুপ্ত বৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। সত্যি প্রেমের অনুভূতি অনেক আনন্দের।


প্রেম কাকে বলে

কোন ব্যক্তি বা জিনিসের উপর মায়া,

ভালোবাসা ও আসক্তি বেড়ে যাওয়াই হলো প্রেম। একজন নারী বা একজন পুরুষ তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে যখন একে অপরকে জানার জন্য খুব কাছাকাছি আসে কোনো রকম শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া, তখন তাকে প্রেম বলে। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের দুজনের মধ্যে একে অপরকে ছাড় দেবার মন মানসিকতা থাকতে হবে। সাইকোলজিস্ট রবার্ট স্টেনবার্গ প্রেমকে তিনটি উপাদানের মধ্যে ভাগ করেছেন। সেই উপাদানটিকে একটি ত্রিভুজের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছেন। তিনটি উপাদান হল- আবেগ অর্থাৎ সঙ্গীর প্রতি যৌন ও রোমান্টিক আকর্ষণ, অন্তরঙ্গতা হলো গভীর অনুভূতি এবং সহানুভূতি যা কিনা শুধুমাত্র সম্পর্ককে রক্ষা করাই নয়, তাকে সসম্মানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

পৃথিবীর আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত, মানব জন্মের ইতিহাস আর প্রেমের ইতিহাস একইসূত্রে গাঁথা। পৃথিবীর প্রথম নর-নারী আদম-হাওয়া পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। এ কারণে আল্লাহর নিষেধ অমান্য করে আদম তাঁর সঙ্গিনী হাওয়ার অনুরোধ রক্ষা করেছেন। এই ভালবাসা যেমন সত্য তেমন শাশ্বত। এছাড়া শ্রী রামচন্দ্রের পতিব্রতা স্ত্রী সীতার প্রেমে পড়েছিলেন রাবণ। এজন্য তিনি সীতাকে অপহরণ করে অশোক কাননে বন্দি রেখে দেহ মনে পাবার সমস্ত কলাকৌশল অবলম্বন করেছিলেন। রাবণের ভালবাসা ছিল একতরফা, তাই এই ভালবাসা আদম হাওয়ার মতো পবিত্র নয়। অপূর্ব সুন্দরী হেলেনের প্রেমে পড়েছিল গ্রিক পুরাণের প্রেমিক পুরুষ প্যারিস। হেলেন তখন রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। তাই এই ভালবাসা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় স্বীকৃত ছিল না। ফলে ধ্বংস হয়েছিল ট্রয় নগরী। একজন পুরুষ হয়ে পুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত বীর আলেক্সজান্ডার দ্য গ্রেট। এই প্রেম ছিল নিষিদ্ধ। আজও পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানে তা স্বীকৃতি পায়নি। যা পাপ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। প্রেম শব্দটি এক হলেও পৃথিবীতে তার বিস্তার ঘটেছে এমন নানামুখী সম্পর্কের ভেতর দিয়ে। এর মধ্যে কোনো কোনো সম্পর্ক যুগে যুগে মানুষ শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করেছে। আবার কোনো কোনো সম্পর্ক পাপাচার আখ্যায়িত করে প্রেমের পাত্র পাত্রীকে চড়িয়েছেন শূলে।

সাধারণত দুইজন বিবাহিত বা অবিবাহিত নারী পুরুষের মধ্যে যে প্রেম গড়ে ওঠে, পৃথিবীতে প্রায় সকল সমাজে এই প্রেমকে শাশ্বত এবং পবিত্র বলে ধরে নেওয়া হয়। পৃথিবীতে শুধু ভালোবেসে অমর হয়েছে এমন সাহিত্য পুরাণ ও বাস্তব জীবনের উল্লেখযোগ্য প্রেমিক জুটি হল – সাইকি-কিউপিড (গ্রিক); রাধা-কৃষ্ণ (ভারত উপমহাদেশ); লাইলী-মজনু (পারস্য); বেহুলা-লখিন্দর (বাংলাদেশ); প্যারিস-হেলেন (গ্রিক); রোমিও-জুলিয়েট (রোম); ওডিয়াস-পেনেলোপ (গ্রিক); পিরামাস-থিসবি (গ্রিক); পিগম্যালিয়ন-গ্যালাটিয়া (গ্রিক); দেবদাস-পার্বতী (ভারত); ভিক্টোরিয়া-আলবার্ট (ব্রিটেন) প্রমুখ।

আমরা জানি প্রেমে শরীর থাকবেই।

নারী ও পুরুষের মাঝে জৈবিক কারণে হলেও শরীর চলে আসে। কিন্তু প্লেটোনিক ভালবাসা হল শরীরবিহীন প্রেম। অর্থাৎ এই ভালবাসা শরীরী নয়, অশরীরী। এখানে দুই প্রেমিক এবং প্রেমিকার মাঝে কোনো যৌন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় না। এই শুদ্ধতম ভালোবাসায় কামনা বাসনার কোনো স্থান নেই। এ শব্দটির উৎপত্তি মূলত প্লেটোর ‘প্লেটোনিজম’ মতবাদ থেকে; যাতে বলা হয় এমন প্রকার ভালোবাসার কথা যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবাসা ডিভাইনিটির দিকে উঠে যাবে। শরীর নামক বস্তুটি থাকবে অনুপস্থিত। এমন নিষ্কাম ভালবাসা, যে ভালবাসা রাজাধিরাজের মতো দু’হাত ভরে শুধু দিয়ে যায়, নেয় না কিছুই। বাস্তবে নারী পুরুষের মাঝে এমন প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হওয়া আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে।


প্রেম ভালবাসার নির্দিষ্ট কোনো প্রকারভেদ নেই।তবে যে প্রকারভেদ গুলো উল্লেখ করলাম সেগুলো সাধারনত সংঘটিত হয়ে থাকে ।


১. প্রথম প্রেম: জীবনের প্রথম প্রেম সবার কাছেই স্মরনীয় হয়ে থাকে। প্রথম প্রেমের কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই তবে অনেকের ক্ষেত্রেই খুব কম বয়সে প্রথম প্রেম এসে থাকে। প্রথম প্রেম বেশিরভাগ সময়ই আদতে প্রেম হয়না, সেটা হয়ে থাকে Infatuation। প্রথম প্রেম হতে পারে কোন বাল্য বন্ধু, হতে পারে গৃহশিক্ষক বা স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকা, হতে পারে বয়সে বড় কোন আপু, হতে পারে কোন ফিল্মের নায়ক বা নায়িকা, হতে পারে পাড়ার কোন হ্যান্ডসাম তরুনী বা বড়ভাই। কারো কারোক্ষেত্রে আবার জীবনের প্রথম প্রেমই একমাত্র প্রেম।


২. প্রথম দেখায় প্রেম/Love at First Site:প্রথম দেখাতেই এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেম অনেক ক্ষেত্রেই একতরফা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়। প্রথম দেখাটা হতে পারে কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে, শপিং মল, কলেজ,ভার্সিটি, কোচিং সেন্টারে, স্যারের বাসায়, বন্ধু আড্ডায়। এমনকি বন্ধুর মোবাইলে ছবি দেখেও এ ধরনের প্রেমের শুরু হতে পারে। এ ধরনের প্রেমে প্রায় অবধারিতভাবেই তৃতীয় পক্ষের (বন্ধুকূল বা বড়ভাই) সাহায্যের দরকার পড়ে। এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাতে রূপ সৌন্দর্য্য ও দৈহিক সৌন্দর্য্যের ভুমিকাই বেশি।


৩. বন্ধুত্ব থেকে প্রেম: এই ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিক ও প্রেমিকা দু’জনেই প্রথমে বন্ধু থাকে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব কালের বিবর্তনে প্রেমে রূপ নিতে থাকে,অনেক সময়ই দু’জনেরই অজান্তে। তবে আশেপাশের মানুষ (বিশেষত বন্ধুকূল) কিন্তু ঠিকই খেয়াল করে। দুঃখজনকভাবে এধরনের প্রেম অনেক সময়ই অকালে ঝরে যায় কোন একতরফা সিদ্ধান্ত বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। অনেকে বন্ধুত্বের এই রূপান্তর মেনে নিতে পারেনা বলে অনুশোচনায় ভোগে – বিশেষত মেয়েরা।


৪. একরাতের প্রেম/One Night Stand:এগুলোকে প্রেম বললে পাপ হবে। ৯০% ক্ষেত্রেই ছেলেরাই এ ধরনের প্রেমের আয়োজক। দৈহিক বাসনাকে পূর্ণতা প্রদান করাই এই প্রেমের প্রধান উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য পূরণের পূর্বে কিছু নাম মাত্র ডেটিং হতে পারে। উদ্দেশ্য পূরণের জনপ্রিয় স্থান: কোন হোটেল, খালি ফ্ল্যাট, সমুদ্রতীরবর্তী কোন শহর। এই ধরনের প্রেমের মূলমন্ত্র হলো: “আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোনোদিন নয়……..”


৫. বিবাহোত্তর প্রেম: এই প্রেম শুধুমাত্র স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দেখা যায়। বিয়ের ঠিক পর পর প্রথম কয়েক মাস এই প্রেম প্রবল থাকে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পূর্বপরিচিত নয় এমন দু’জনের মধ্যে এ্যারেন্ঞ্জ বিয়ে হলে এই ধরনের প্রেম প্রবল রূপে পরিলক্ষিত হয়। প্রেম করে বিয়ে হলে সেক্ষেত্রে বিবাহোত্তর প্রেমে ভাঁটা পড়ে বলে একটি মতবাদ প্রচলিত আছে, কবে এর সত্যতা পরীক্ষিত নয়। বিবাহোত্তর প্রেম ফলাতে হানিমুনের জুড়ি নেই।


৬. পরকীয়া প্রেম: বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ বা মহিলার সাথে প্রেমকেই পরকীয়া প্রেম বলে। পরকীয়া প্রেমের মূল কারনগুলো হলো:ক. সময়ের সাথে সংসার জীবনের প্রতি অনাগ্রহ বা তিক্ততা চলে আসা।খ. শারীরিক চাহিদা পূরণে স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি একঘেঁয়েমি চলে আসা।গ. শারীরিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর অক্ষমতা বা অপূর্ণতা।ঘ. নিতান্তই এ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়তা, লুকিয়ে প্রেম করার স্বাদ অনুভব করা।  মহিলাদের মধ্যে পরকীয়া এদেশে এখনো ততোটা জনপ্রিয় নয় যতোটা পুরষদের মধ্যে। পুরুষদের পরকীয়া প্রেমের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যাক্তিটি কম বয়সী কোন অল্প বয়সী মহিলা এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে যুবতীও হয়ে থাকেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যাক্তিটি সাধারণত কোন মধ্যবয়সী পুরুষ হয়ে থাকেন। ৩০-৪৮বছর বয়সীদের মধ্যে পরকীয়া প্রেম বহুলভাবে পরিলক্ষিত হয়।


৭. অপরিণত প্রেম/কম বয়সে প্রেম/না বুঝেই প্রেম: এ ধরনের প্রেম সাধারণত স্কুলে পড়ুয়া অবস্থায় হয়ে থাকে। মেয়েরাই এ ধরনের প্রেমে বেশি পড়ে। তবে ছেলেরাও পড়ে। প্রেমিক প্রেমিকাদের দু’জনই সমবয়সী হতে পারে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেমিক তার চেয়ে বয়সে বড়ও হতে পারে। তবে এ ধরনেরপ্রেমের সাফল্যের হার কম – অর্থাৎ এ ধরনের প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় খুব কম ক্ষেত্রেই।


৮. কর্মক্ষেত্রে প্রেম: কর্মসূত্রে দু’জন মানুষের পরিচয়ের মাধ্যমে এ ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। উক্ত দু’জন হতে পারেন কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর দু’জন কর্মকর্তা অথবা কোন প্রজেক্টে পরস্পরের পার্টনার। অফিসে নতুন জয়েন করেছেন এমন কোন মেয়ের সাথে এরূপ প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য অফিসের পুরুষ কর্মকর্তাদের মাঝে তাগিদ দেখা যায়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।


৯. মোবাইল প্রেম: বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে বা ফোনবুক থেকে চুরি করে, পাড়ার ফ্লেক্সির দোকান থেকে সংগ্রহ করে, অন্য কোন সুত্র থেকে নাস্বার পেয়ে বা নিতান্তই মনের মাধুরী মিশিয়ে কোন নাম্বার বানিয়ে তাতে ফোন করে কোন মেয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। অনেক সময় মোবাইলে এভাবে কথা বলে ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমের সফলতার হার খুবই কম। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলতা এ ধরনের প্রেমের মূল উদ্দেশ্য নয়।


১০. ইন্টারনেটে প্রেম: ইন্টারনেটে চ্যাটিংয়ে বা সোসিয়্যাল মিডিয়া সাইটে (যেমন – ফেইসবুক,মাইস্পেস) দু’জনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। অনেক ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের একজন বিদেশে অবস্থান করে। এভাবে পরিচয়ের পর ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমে উভয়পক্ষেরই ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে অনেক। অনেক সময়ই কোন ছেলে মেয়ে সেজে অন্য কোন ছেলের সাথে এমন সম্পর্ক চালিয়ে যায়। আর তাই অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের সম্পর্ক প্রতারণায় পরিণত হয়। পূর্বে এ ধরনের প্রেমের সাফল্যের হার বেশি থাকলেও বর্তমান সময়ে এসে সাফল্যের হার কম।


১১. ত্রিভূজ প্রেম: এ ধরনের প্রেমকে বলা যেতে পারে একজন মেয়েকে নিয়ে দু’জন ছেলের টাগ-অফ-ওয়ার বা দড়ি টানাটানি। একই মেয়ের প্রতি দু’জন ছেলেরভালোবাসা এই প্রেমের মূলকথা। উক্ত মেয়েকে পেতে দু’জন ছেলেই মরিয়া থাকে। ত্রিভূজ প্রেমের ক্ষেত্রে প্রায়শঃই মেয়েরা মানসিক দ্বন্দে ভোগে – কাকে পছন্দ করবে এই নিয়ে। অনেক সময়ই ছেলে দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা রূপ নেয় মারামরিতে। দু’জন মেয়ে আর একজন ছেলের মধ্যেও ত্রিভূজ প্রেম লক্ষিত হয়। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা মারামারিতে নয় বরং রূপ নেয় চুলোচুলিতে।


১২. বহুভূজ প্রেম/Multi প্রেম: একই মেয়ে বা ছেলের প্রতি ২ এর অধিক ব্যাক্তির অনুরাগই মূলতঃ বহুভূজ প্রেম। এক্ষেত্রে উক্ত মেয়ে বা ছেলেটি স্বভাবতই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। সবাই তার সাথে প্রেম করতে চায় এই বিষয়টি তাকে ব্যাপক আনন্দ দেয়।


১৩. অসমবয়সী প্রেম: এ ধরনের প্রেমের বৈশিষ্ট্য প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে বয়সের উল্লেখযোগ্য ব্যবধান। যদিও মেয়ের চাইতে ছেলে কয়েক বছর বড় হলেও তা স্বাভাবিক প্রেম হিসেবে ধরা হয়, তথাপি, যদি পার্থক্য খুব বেশি হয় – যেমন ১২ বছর তবে তা অসমবয়সী প্রেম হিসেবে ধরা হয়। মজার ব্যাপার হলো ছেলের চাইতে মেয়ে এক বছরের বড় হলেও তা অসমবয়সী প্রেম হয়ে হিসেবে ধরা হয়। অসমবয়সী প্রেমকে এ সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়, বিশেষত যদি মেয়ে ছেলের চাইতে বয়সে বড় হয়। অসমবয়সী প্রেম বিয়েতে রূপ নিলে দাম্পত্য জীবন শান্তিপূর্ণ হয় না বলে একটি মতবাদ এদেষে প্রচলিত আছে, কিন্তু এর কোনসত্যতা পাওয়া যায়নি।


১৪. শারীরিক প্রেম/শরীর সর্বস্ব প্রেম: প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে শরীরি আকর্ষণই এই প্রেমের মূল উপাদান। আবেগ ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।


১৫. দুধের মাছি প্রেম/অর্থসর্বস্ব প্রেম: “যতোদিন টাকা আছে, ততোদিন সম্পর্ক” – অনেকটা এই নীতির বলে এই ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। অবশ্যই ছেলেরাইটাকা ব্যয় করে থাকে এসব ক্ষেত্রে। ধনীর ঘরের ছেলেদের পক্ষে এই ধরনের সম্পর্ক বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। তবে মোটামুটি আয়ের ছেলেরা খরচেরঠেলায় অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠে, সম্পর্কও আর বেশিদিন থাকেনা। তখন ঐসব মেয়েরা অন্য ছেলের খোঁজে বেরোয়।


১৬. ঈর্ষাণ্বিত প্রেম: “অমুক ছেলে প্রেম করে, আমাকেও করতে হবে” বা “অমুকের বয়ফ্রেন্ড আছে,আমারো চাই” – অনেকটা এমনতর মানসিকতা থেকে এসব প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেমগুলো অনেক সময়ই সাময়িক হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময়ইবয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড মনের মতো না হলেও প্রয়োজনের তাগিদে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া হয়।


১৭. জেদের বশে প্রেম: পূর্ববর্তী বা বর্তমান বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে অনেকটা দেখিয়ে দেয়ার (“তুমি ছাড়াও আমার প্রেম করার লোকের অভাব নেই…….”) উদ্দেশ্যে যাকে সামনে পাওয়া যাবে ধরে তার সাথে প্রেম করাই এ ধরনের প্রেমের মূল লক্ষ্য। মনের মতো লোক পাওয়ার বিষয়টি এখানে নগণ্য।


১৮. চড়িয়ে খাওয়া প্রেম/গাধাখাটুনি প্রেম/ঘানি টানা প্রেম: প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছ থেকে কোন বিশেষ সুবিধা লাভই এ ধরনের প্রেমের উদ্দেশ্য।ক্লাসের ভালো রেজাল্ট করা মেধাবী ছাত্রটি এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় শিকার হিসেবে পরিগণিত হয়। মেয়েদের মধ্যে এ ধরনের প্রেমের প্রচলণ বেশি দেখা গেলেওছেলেদেরকেও মাঝে মাঝে করতে দেখা যায়।


১৯. অব্যক্ত প্রেম/না বলা প্রেম: নীরবে এক অপরকে ভালোবেসে গেলেও পরিস্থিতি, সময় বা মনোবলের অভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকার মধ্যে কেউই একে অপরকে কোনোদিন বলেনি। অব্যক্ত প্রেম হারানোর বেদনা খুব কষ্টদায়ক, জীবনের অন্যতম বড় ভুল হিসেবে মনে থাকে।


২০. সুপ্ত প্রেম: একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু কেউই কাউকে বলছে না, পুরো ব্যাপারটাই লুকিয়ে যাচ্ছে এমন প্রেমই সুপ্ত প্রেম। সুপ্ত প্রেম আজীবন সুপ্ত থেকে গেলে তা পরিণত হয় অব্যক্ত প্রেমে।


২১. চুক্তিবদ্ধ প্রেম: এ ধরনের প্রেম হয় পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে। সাধারণ অর্থে প্রেম বলতে যা বোঝায় তা এই ধরনের প্রেমে অনুপস্থিত থাকে। কোনভবিষ্যৎ থাকেনা এসব সম্পর্কের। মূল উদ্দেশ্য হলো কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে নিজেদের মধ্যে প্রেম দেখিয়ে কোন বিশেষ স্বার্থ চরিতার্থকরণ। শোবিজ ও মিডিয়ার তারকাদের মধ্যে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।


২২. মিথ্যে প্রেম/অভিনয় প্রেম: এ ধরনের প্রেমে প্রেমিক বা প্রেমিকার দু’জনের যেকোন একজন প্রেমের অভিনয় করে যায়। যখন প্রেমিক বা প্রেমিকার কেউ একজন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে আরম্ভ করে তখন এই প্রেমের সমাপ্তি ঘটে। এ ধরনের প্রেমের পরিণতিও যেকোন একজনের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।


২৩. ২য় ইনিংস প্রেম/Old is Goldপ্রেম/Revived প্রেম: পূর্ববর্তী বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে পুনরায় জুড়ে গিয়ে এই প্রেম করা হয়।


২৪. ব্ল্যাকমেইল প্রেম/অনিচ্ছাপূর্বক প্রেম/জোড় খাটানো প্রেম: এটাকেও প্রেম বললে পাপ হবে। জোড়পূর্বক এসব প্রেম করা হয়ে থাকে। এর শিকার হয়ে থাকে মেয়েরাই। পাড়ার বখাটে ছেলে বা বড় ভাই, কলেজের বখাটে ছাত্র, কর্মক্ষেত্রে উপরস্থ কর্মকর্তা বা বস প্রধানত এরাই এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হন।


২৫. গায়ে পড়ে প্রেম/নাছোড়বান্দা প্রেম: মেয়ে কোন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয় তবুও ছেলে জোড় চেষ্টা চালিয়ে যায় এমন প্রেমে। অনেক সময়ই এমনপরিস্থিতিতে মেয়েরা সরাসরি না বলতে পারে না যার মাশুল তাদেরকে পরে দিতে হয়।


২৬. বিদেশী প্রেম/পরবাসী প্রেম: এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের মধ্যে অন্ততঃ একজন বিদেশী হয়।


২৭. অসাম্প্রদায়িক প্রেম: এ ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে দু’জনে দুই ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অনুসারী হয়ে থাকে। সমাজ এ ধরনের সম্পর্ককে সমর্থন করেনা। বিশেষতঃ হিন্দু-মুসলমান ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করে।


২৮. চাঞ্চল্যকর প্রেম/আলোচিত প্রেম: এ ধরনের প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকা যাই করেন না কন তা মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য হিসেবে প্রচার করা হয়। সাধারণত শো-বিজ আর মিডিয়ার তারকা ও সেলিব্রেটিরা এ ধরনের প্রেম করে থাকেন।


২৯. ঐতিহাসিক প্রেম: এইসব প্রেমের কাহিনীর অবসান ঘটেছে অনেক আগেই কিন্তু আজো রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। এখনো এসব প্রেমকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়।


৩০. ভাড়াটে প্রেম/ভ্রাম্যমাণ প্রেম/Roamingপ্রেম: এ ধরনের প্রেমের প্রেমিক বা প্রেমিকারা বলতে গেলে ভাড়া খাটে। তারা সকালে একজনের গার্লফ্রেন্ড তো বিকেলে আরেকজনের। কোন নির্দিষ্ট ঠিক ঠিকানা নেই। ব্যাপারটা অনেকটা মাসে মাসে মোবাইল হ্যান্ডসেট চেন্ঞ্জ করার মতো।


৩১. প্রেমময় প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক আর প্রেমিকা দু’জনেই একজন আরেকজনের দিকে প্রেমময় ভঙ্গিতে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকেন, হাত ধরে বসে থাকেনকোন রেস্টুরেন্টের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে, সারাক্ষণ I Love You বলে আর শুনেও ক্লান্তি আসে না তাদের। সারাদিন প্রেমের পর মোবাইলে ১২টার পরও কম জান না তারা।


৩২. ঝগড়াটে প্রেম: সারাক্ষণ দু’জনের মধ্যে খিটির-পিটির লেগে থাকাটা এই প্রেমের বৈশিষ্ট্য। কিছুক্ষণ হয়তো দু’জনে শান্ত থাকে, তারপর আবার কিছু নাকিছু একটা নিয়ে একজন শুরু হয়ে যায়। এ ধরনের প্রেমে ঝগড়াগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু খুব ঘনঘন হয়। ঝগড়াগুলো অধিকাংশই হয় ফোনে। বন্ধুকূল সর্বদা দু’জনের ঝগড়া মিটাতে ব্যস্ত থাকে। মেয়ে তার সখীদের কাছে এই ঘনঘন ঝগড়ার কথা বলে বেড়ায়।


৩৩. সমলিঙ্গীয় প্রেম: আমাদের দেশে এখনো খুব একটা প্রচলিত না হলেও বাইরের অনেক দেশেই এই ধরনের প্রেমের প্রচলণ আছে। দু’জন ছেলের মধ্যে হলে তাদেরকে Gay বলে আর দু’জন মেয়ের মধ্যে হলে Lesbian।


৩৪. অমিল প্রেম/দুনিয়াছাড়া প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে কথাবার্তা, মত, পছন্দ,অপছন্দ কোন দিক দিয়েই কোন মিল থাকেনা, তারপরও কিভাবে যেন সম্পর্ক টিকে থাকে।


৩৫. ‘আজো তোমায় ভালোবাসি’ প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ ঘটেছে আগেই। তবুও আজো তারা একে অপরকে ভালোবাসেন। নীরবে চেয়ে যান সেই মানুষটির সঙ্গ যার সাথে একসঙ্গে জীবন কাটাতে পরিস্থিতিই ছিলো একমাত্র ও সবচেয়ে বড় বাধা।


৩৬. ব্যর্থ প্রেম: এবং সবশেষে আছে ব্যর্থ প্রেম। এ প্রেম শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। ব্যর্থ প্রেমিকার চাইতে ব্যর্থ প্রেমিকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। ব্যর্থ প্রেমের শেষটা হয় প্রস্তাব প্রত্যাখান দিয়ে। কখনো কখনো ছেলেদের ভাগ্যে জোটে থাপ্পড়, মেয়েদের জুতার বাড়ি আর কখনো কখনো গণধোলাই। অনেক সময়ই ব্যর্থ প্রেমের পরিণতি হয় করুন। কেউ দেবদাস হয়ে যায়, কেউবা মেয়েদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে ও “দুনিয়ার সব মেয়ে এক” এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। দুর্বল মানসিকতার কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নেয়।

রেবেকা সুলতানা ( রেবা )


 গুরুত্ব দিতে শেখ 


জীবনের আন্ধকারে 

           হারিয়েছো বারে বারে,

মনেরি সেই এলোমেলো টাকে

   কেউ আসেনি গুছিয়ে নিতে

         চাওয়া পাওয়ার হিসাব গুলো মেলানো থাক না বন্ধ। 


যে যেমন ভাবে ভাবছে তোমায়

 ভাবতে দাও,

তুমি খুঁজে নিও বাঁচার মানে

     দেখে নিও ধীরে ধীরে

        বদলাবে জীবন  

না  মিলুক ছন্দ।


জীবন টা থাকুক অগোছালো

এক জীবনে সবার আশা পূরন হয় না।

লোকের কথার গুরুত্ব দাও 

কম

অনেক মূল্যবান সময় তুমি 

নষ্ট  করেছো লোকে কি ভাববে এই ভেবে,

অন্যের ভাবনার গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ভাবনা ভাবো

শুধু তুমি তোমার মতো করে 

থাকতে শিখে নাও।


সময় করে  উল্টেপাল্টে  নেও নিজের  ভাবনা গুলো,

জীবন টা  খুব ছোট

নিজের ভাবনার গুরুত্ব দিতে শেখ।

গোলাম কিবরিয়া ( শরীফ)


 চাকর


পেটের তাগিদে তোমার প্রাসাদ -

মুছি আমি দুই হাতে ;

মায়ের আদর আমি ও তো চাই, 

কোল খুঁজি প্রতি রাতে।


তোমার মত আমারও তো বোন 

আঁচলে নয়ন মোছে ;

পথ চেয়ে থাকে ভাইয়ের আশায়-

তাকায় যে আলগোছে।


ছোট্টবেলায় মা বলিতেন -

খোকা বেশ বড় হবে ;

রোজ তোমাদের বকুনিতে সব -

ভুলে গেছি সেই কবে! 


সারাদিন বাবা সাহস দিতেন -

"পড়াশোনা করো বাবা, "

বৈশাখী ঝড়ে বাবা চলে গেলো -

এলো অভাবের থাবা।


মায়ের কান্না, লুকোচুরি খেলা -

সইতে পারিনি আমি ;

পড়াশোনা তাই "বিলাসিতা" হলো,

জীবনের চেয়ে দামী।


ছোট্ট বোনের অবুঝ আবদার 

ফিরাতে পারি নি তাই ;

তোমার কথায় কষ্ট পেয়ে ও-

নিরবে-ই  সয়ে যাই। 


সেদিন সাহেব বলিলেন এসে -

বাড়ি যেতে হবে তোর ;

মায়ের হয়েছে বড্ড অসুখ, 

তোকে ডেকে রাত ভোর।


মেম সাহেবের বাঁকা চাহুনিতে -

সাহেব গেলেন থেমে, 

আড়াল করিলো আসল খবর, 

আদর করিলো নেমে। 


বলিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে -

মনযোগে কাজ করো ;

বাড়ি যদি যাও, মেম সাহেবের -

বিপদ হবে যে বড়।


নিশ্চিত খোকা কাজে মজেছিলো, 

অসুখ যাবে যে কমে;

সুস্থ হয়ে ই জননী আবার -

কাজে যাবে পুরোদমে। 


গতকাল রাতে অভাগিনী বোন -

কান্না জড়ানো চোখে ;

আসিয়া বলিলো,  "মা" তো আর নেই দেখতে চেয়েছে তোকে।


কেঁদে কেঁদে বলে -


"খবর দিয়াছি সাহেবের কাছে-

বলেনি হয়তো জানি ;

বড় সাহেবেরা, বড় বলে কথা -

নিরুপায়, তাই মানি" ।

ইকবাল বাহার সুহেল ( ইংল্যান্ড )



ব্যর্থতার পদাবী 


বলতে পারো ছবি যে আঁকব, রং কই

একা একা শব্দ গুলো বিড়বিড় করে কবিতা লিখবো ..

দেবদূত আমাকে একটি কলম দাও চিৎকার করে কান্নার ভাষা বলে যাবো !


কবিতার প্রতি অক্ষরের সঙ্গে মিশিয়ে দিব জীবনের আয়ু খানিকটা দীর্ঘশ্বাস, কয়েক ফোঁটা অশ্রু

আর স্বপ্ন থেকে নিংড়ে আনা রং .. বলতে পারো ছবি যে আঁকব, রং কই ! রোদের রংটুকু, শিশিরের শব্দটুকু আমার পরিত্রাণ, আমার নির্বাণ ..


শিরোধার্য করে রেখেছি দেবদূত ! কবি হওয়া মানেই ব্যর্থ হওয়া, আর কবিতা মাত্রই ব্যর্থতার বশংবদ .. বেদনাময় প্রতিটি ইট আর কংক্রিটের দেওয়াল নির্মাণ !!

ইয়াছমিন রহমান শিউলি


 স্বপ্ন 


এ কেমন ভালোবাসা

কুয়াশার মতো 

রোদের স্পর্শে

কোথায় হারায় ?

এ কেমন ভালোবাসা

জোৎস্না  আলোয়

স্বপ্ন বিলায় ?


এ কেমন ভালোবাসা

হৃদয় গভীরে 

থাকে সে

চোখ মেললে

কোথা পালায় ?

এ কেমন ভালোবাসা

কাছে ডাকলে 

আসেনা সে

কপট  লোচনে

হৃদয় নাচায় ?

এ কেমন ভালোবাসা

আলিঙ্গনে ডাকি তাঁরে

মিষ্টি হাসিতে

মুক্ত ঝড়ায় ?

এ কেমন ভালোবাসা

যতোই ডাকি 

আসেনা সে

বিভোর স্বপ্নে

ছবি আঁকায় ?

মহুয়া দাস



 আজকাল


রোজ মধ্যরাত পেরোলেই,

যখন কুকুরগুলো তাদের ঘর গেরস্থালির কথা আদান-প্রদান শুরু করে,

ঠিক তখনই রাতের নিঃশব্দ প্রহর হাতড়ে 

বিপুল উচ্ছ্বাসে ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে তোমার লেখা।

আমিও তখন গুণে চলেছি হয়ত প্রহর-

মধ্যরাত ১, মধ্যরাত ২, মধ্যরাত ৩।

রাত বাড়লেই কড়া নাড়েন রবীন্দ্রনাথ, শক্তি,সুনীল।

আরও রাত ঘনালে,গ্রেগরি পার্ডলো কিংবা ম্যাগি নেলসন।

তোমার অস্থির লেখারা ঠিক তখনই গ্রাস করে নিতে চায় আমাকে।

আমি সেই আপাতনিরীহ লেখার পেছনে রাতের দ্রুত কড়া নাড়া টের পেয়ে যাই ঠিক।

দরজা খুলতে ইচ্ছে করে না আজকাল,

কারণ নীলাভ কবিতার গাঢ় ফেনা

আমাকে ইতিমধ্যেই ডুবিয়ে নিয়ে গেছে হয়ত বা

চাঁদের আলোয় ধুয়ে যাওয়া চরাচর থেকে

হিমশীতল জলের অন্ধকারে।

শীত শীত করে আজকাল রাতের দিকে।

কথা বলতে ইচ্ছে করে না।

কি করব বলো?

মিতা নুর



বর্ষার শেষ বৃষ্টিধারা

                        

মন কেমনের মধ্যরাত দাঁড়িয়ে আছি,

দেখো হাত বাড়িয়ে...! 

          যায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টির জল, 

স্মৃতি উড়িয়ে...!

            হাসনাহেনার গন্ধে বিভোর, 

রাতের আঁধার...

        আজ না-হয় রইলে তুমি একটুখানি,  

 তন্দ্রাহারা...! 

       জোছনা ওযে পাগলপারা, 

আমি ছড়িয়ে দিলাম শরীর জুড়ে,  

         আদর নিলাম, 

গাল বাড়িয়ে...!

আজ রাতের হাওয়া সঙ্গী এরা, 

             সবকিছুরই সাক্ষী রইলো, 

বর্ষার শেষ বৃষ্টিধারা !! 

গীতা চক্রবর্তী



 সময়


সময়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চললাম,

তবু ভিড়ের মধ্যে কখন কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি!


রোদের দেওয়ালে ভিজে পাতা

আকাশের নীলে মেঘলা ডানায় উড়ছে;

ঈশ্বর দরদী হতে চাইছে অনন্ত বিশ্বাস।


চারদেওয়াল ডাকে আমায় দ‍্যাখ চোখ মেলে,

সময়ের অভাবে গুটিয়ে রাখা খোলস-

রঙ বুনতে স্বাধীনতা মুল্যবান হয়  তবু অর্থ লাগে...

ভিড়ের মাঝে কলমে নদী হোক কখনও।


                           

আপেল মাহমুদ




 ভালো নেই ভালোবাসা


তুমি ভাল নেই 

ভাল নেই আমিও

আমার শহর ভিজেছে 

তোমার কান্নার জলে

আর্তচিৎকারে ভারী হয়েছে

আমার প্রিয় গন্ধ মাখানো বাতাস


তুমি ভাল নেই শুনে 

কষ্টে ভরেছে আমার এ নষ্ট মন

চেয়েছি কাছে যেতে

চেয়েছি ভাঙ্গা বুকটা পেতে দিতে


সমস্ত দুঃখ বেদনা আকন্ট পান করে

সুখের ফুলগুলো কুড়োতে চেয়েছি নোংরা দু হাতে...


তুমি ভাল নেই শুনেছি যখন

চাপা কান্নায় ভিজেছে আমার

স্বার্থপর চোখের দুটি কোন...


ভেবোনা কষ্ট পায়নি... 

তুমি বিশ্বাস করো...

কিন্তু পারিনি....

বিচলিত মন, অস্থির হৃদয়,উৎকন্ঠিত নয়ন,

থমকে গেছে মুহুর্তেই ভয়ংকর সে অতীত ভাবনায়....


পাছে যে আমি আবার হারিয়ে যাবো

মহা মুল্যবান আত্বসম্মান,ব্যক্তিত্ব নামক ইগো আর নিদারুন সেই অ ব হে লা য়.....

জান্নাত সুইমী


 সম্পর্কের তিক্ততা

     

একটা সম্পর্ক যখন ভেঙে যায়

তখন সেই মানুষ দুটোকেই সবাই দোষ দেই,

কখনো খুঁজে দেখে না কেন ভেঙে গেল?


একটা সম্পর্ক যখন জন্ম নেই ভালোবাসায়

জন্ম দেয় মায়া,টান,যত্ন,আদর,সোহাগ,

এতো কিছু জন্ম দেয়ার পরেও যখন আলাদা হয়ে যেতে হয় তখন সেই মানুষ দুটোই বোঝে তাদের ভেতরের যন্ত্রণা।


আসলে সম্পর্কে যখন তিক্ততা চলে আসে ঠিক তখনি বিচ্ছেদের ঘন্টা বাজে,

যতক্ষন পর্যন্ত তিক্ততা জন্ম না আসে ততক্ষন বিচ্ছেদের মত বিষয়টা ও আসেনা।


কিন্তু কেন এই তিক্ততার জন্ম??

অবিশ্বাস,সন্দেহ,কেউ কাউকে সম্মান না দেয়া,

কথায় কথায় গালিগালাজ করা, অযথায় হাতাহাতিমার সুইসাইড নাটক।


 একে অন্যকে মেরে ফেলার চেষ্টা, 

আরও কত কত কারণ তিক্ততার জন্ম দেয়,

ফুলসজ্জার বিছানা থেকে শুরু করে ভালবাসার জন্ম।


সেই বিছানা যখন আলাদা হতে বাধ্য করে

তিক্ত কথার ভাজে থাকে ঘ্রিণার জোয়ার

সেই তিক্ত সম্পর্ক আকড়ে ধরে কতক্ষন অভিনয় করে যাওয়া যায়??


সব সম্পর্ক কি অন্য একটা সম্পর্ককে আকড়ে ধরে বিচ্ছেদের কারন ঘটায়?

কিন্তু না - সেটা শুধুই সন্দেহ থেকেই জন্ম নেয়

সন্দেহের লেশ ধরেই অসম্মান অমর্যাদা অবহেলা

গালিগালাজ মারধর মুর্খের মত আচরন, কালো যাদুর খেলা শুরু করা তীব্র ক্ষতির লক্ষ্যে।


শুধরানোর চেষ্টা করা বাদে বিরত থেকে 

বিচ্ছেদের সূচনার জন্ম দেয়,

সত্যি ভালোবাসার সম্পর্ক যখন তিক্ততায় পরিণত হয় ঠিক তখনি বিচ্ছেদের ঘন্টা বাজে।

মাহবুবা আখতার





 চিন্ময়ী 



এসো চিন্ময়ী, জোছনা কুড়িয়ে নিই দু'হাত ভরে, 

জোছনার অলংকারে সাজিয়ে দেবো তোমাকে ভালোবেসে। 

খোঁপায় দেবো রঙধনুর রঙ ঝলমলিয়ে উঠবে তোমার পৃথিবী। 


চিন্ময়ী কোনো কালের সীমাবদ্ধতাকে মিলিয়ে নিয়োনা প্রিয়,

ছোপ ছোপ কষ্টের দাগে ক্ষত-বিক্ষত হয়োনা,

তাচ্ছিল্যে মাড়িয়ে দিয়ো অপূর্ণতার গোপন বাঁশির লয়।


এসো চিন্ময়ী, শ্রাবণ আকাশকে ভালোবেসো ধুয়ে দেবে কষ্ট, হৃদয় পোড়ানো গন্ধ,অব্যক্ত ব্যথা।

চিন্ময়ী প্রয়োজনে পুড়িয়ে তছনছ করে দেবে তাবৎ জল,স্থলভাগ,ঝলসে দেবেনা কখনো। 


এসো চিন্ময়ী, সব পাখি ঘরে ফিরুক,সব পথ হোক অচেনা ক্লান্ত, নক্ষত্রেরা জ্বলে উঠুক নীল চাঁদোয়ায়,হোক জোছনার প্লাবন, শ্রাবণাকাশ প্রলয়ের তাণ্ডব খেলুক, 

রাশিরাশি ফুল ফুটুক, সুবাস উন্মাতাল হোক। 

নানন্দিকতায় ভরে উঠুক পুরো বসন্ত, বাতাস থেমে যাক,

এসো চিন্ময়ী, এসো ভালোবাসার নৈবেদ্যে যজ্ঞ রাখি।

তুমি হবে  হিরন্ময়ী প্রেম।

আমি শুধু ব্যাকুল ভাঙচুরে তোমাকে ছুঁয়ে দেবো,তুমি 

ভালোবাসার মোহন মোহরে সুশোভন শুশ্রূষায় ঋদ্ধ হও

শর্তহীন সখ্যতায় তুমি নির্লোভ যোগী।

২৬ আগস্ট ২০২১

স্ত্রী কি শুধুই একজন স্ত্রী,




স্ত্রী কি শুধুই একজন স্ত্রী

( প্রবন্ধ )  মোঃ হা‌বিবুর রহমান



এ যেন এক অপূর্ব লীলা‌খেলা সৃ‌ষ্টিকর্তার। কোথাকার এক ছে‌লে আর কোথাকার এক মে‌য়ে জোড়া দি‌য়ে গ‌ড়ে‌ছে সংসার। হ‌'য়ে গে‌ছে যেন দুজ‌নে দুজনার। এ সম্পর্ক বা বন্ধন স‌ত্যিই মধুর ও স্বর্গীয়ও ব‌টে।


পশু পা‌খি‌দের সংসার আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে খুব একটা দৃশ্যমান না হ‌লেও কিন্তু সৃ‌ষ্টির সেরা জীব না‌মে খ্যাত মানু‌ষদের স্বামী-স্ত্রীদের ম‌ধ্যে এই সম্পর্ক বা স্বর্গীয় বন্ধনটি সারা বি‌শ্বেই ‌কিন্তু কম‌বেশী চালু বা বিদ্যমান আ‌ছে।


আল্লাহ্পা‌কের কি এক অপূর্ব ম‌হিমায় এই বন্ধন‌টি টি‌কে থা‌কে একটানা বছ‌রের পর বছর, যু‌গের পর যুগ এমন‌কি আজীবন ও একদম আমৃত্যু পর্যন্ত। ‌


কি যেন এক অদ্ভূত আর অভূতপূর্ব এক মায়া আর মো‌হে দু‌টি ভিন্ন আর বিপরীত লি‌ঙ্গের স্বত্মা‌ধিকারী মানব-মানবী জু‌টি ক‌'রে ঘর বেঁধে সুন্দর সংসার সাজায়।


আর অতঃপর তা‌দের উভ‌য়ের রক্ত দ্বারা সন্তান-সন্তানা‌দি ক‌লিজার টুকরার মত অ‌তি আদ‌রের পরম ধন জন্ম গ্রহ‌ণের পরপরই তা‌দের সম্প‌র্কের সেতুবন্ধন আরও দৃঢ় থে‌কে দৃঢ়তর হ‌য়। সৃ‌ষ্টিকর্তার এই দেওয়া বিধান স‌ত্যিই অপূর্ব! 


অথচ, প‌রের ঘ‌রের মে‌য়ে এ‌সে‌ছে সম্পূর্ণ অ‌চেনা এক ঘ‌রের প‌রের ছে‌লের সা‌থে মা‌নিক জোড় সৃ‌ষ্টির ল‌ক্ষ্যে। তাই এই বি‌য়ে নামক সামা‌জিক স্বীকৃ‌তি‌টি দু‌টি ঘ‌রের প‌র ও অ‌চেনা দু‌টি ছে‌লে আর মে‌য়ে একাত্ম হ‌'য়ে সৃ‌ষ্টি ক‌রে‌ছে যেন মহাআপ‌নের এক অদ্ভূত দৃষ্টান্ত।


একদম পর ও দুজন অ‌চেনা মানব-মানবীর আপ‌নজ‌নে প‌রিণত হবার এ যেন স্রষ্টার দেওয়া বিশ্বজনীন এক মহাকৌশল। স্বামী ও স্ত্রীর র‌ক্তের ভাগাভা‌গি‌তে ক‌লিজার টুকরো সন্তা‌নের জ‌ন্ম লা‌ভের পর থে‌কেই যেন তাদের দুআত্মা একাত্মায় রূপ নেয়। 


প্র‌তি‌টি সুখ, প্র‌তি‌টি দুঃখ ও বেদনা ‌যেন সমানভা‌বে উপ‌ভোগ কিংবা সহ্য ক‌রে দুজ‌নেই একই উপল‌ব্ধি নি‌য়ে। 


এ‌যেন বিধাতার এক অ‌মোঘ অ‌ভিপ্রায় যা বু‌ঝি বাস্ত‌বে কার্যকরী করা হয় অ‌চেনা দুই প‌রের ঘর থে‌কে আসা দুই মানব-মানবীর ম‌ধ্যে বি‌য়ে নামক প্রচ‌লিত সামা‌জিক ও ধর্মীয় রী‌তিনী‌তি অনুযায়ী চু‌ক্তির মাধ্য‌মে। 


পর পরই এ কথা‌টি য‌থেষ্ট সত্য কিন্তু এটাও সত্য যে স্বামী-স্ত্রীর ম‌ধ্যে বিবাহ বন্ধ‌নের পর এই থি‌য়ো‌রি‌টি কেন যেন একদমই অ‌কে‌জো হ‌য়ে যায় কিংবা কোন কোন ক্ষে‌ত্রে কেন যেন এ‌কেবা‌রেই দূর্বল আর ফি‌কে হ‌'য়ে যায়। 


সন্তান-সন্তানা‌দির জনক জননী হবার পর প্রকৃ‌তির অ‌মোঘ নিয়‌মেই তারা স্বামী-স্ত্রী দুজ‌নেই‌ যেন অ‌চেনা দু‌টি পৃথক প‌রিবার থে‌কে আসা স‌ত্বেও এক‌বারে পর থে‌‌কে পরমাত্মীয়‌তে প‌রিণত হ‌য়ে যায়। আর তখনই বু‌ঝি স্ত্রী আর পর থা‌কে না, হ‌য়ে যায় একবা‌রে রক্তীয় বা অ‌তি আপন স্বজন। 


প্রকৃ‌তির নিয়‌মেই একটা প‌রিবা‌রের সব মে‌য়েরা চ‌লে‌ যায় প‌রের ঘ‌রে, ছে‌লেরা বি‌য়ে ক‌রে প‌রের সংসার থে‌কে বউ নি‌য়ে আ‌সে আর বা‌ড়ির কর্তা, গৃ‌হিণী, বাপ ও মা তো এক সময় ব‌য়োঃবৃদ্ধ হ'য়ে হাপানী কাশানী‌তে প‌ড়ে। তাই ছে‌লেরা স্বভাবতই নি‌জের স্ত্রী-সন্তানা‌দি নি‌য়ে বহলত‌বিব‌তে পু‌রোদ‌মেই সংসার শুরু ক‌রে।


আর তখ‌নই বু‌ঝি প‌রের ঘ‌রের মে‌য়ে‌টি প‌রিবা‌রের কত্রী হ‌'য়ে সংসা‌রের হাল ধ‌রে। এই এক‌টি জাগায় অ‌ন্য প‌রিবার থে‌কে আসা প‌রের মে‌য়ে‌টি আর ‌মো‌টেই আর পর থা‌কেনা বরং হ‌'য়ে যায় আপ‌নের চে‌য়েও আপন। 


তা‌কে ছাড়া স্বামী ‌বেচারা কোন সিদ্ধান্ত নেবার মান‌সিক সাহসও পায়না। যৌথ প‌রিবার হ‌'লে তো বা‌ড়ির বৌ‌টিই শ্বশুর-শ্বাশুড়ী থে‌কে শুরু ক‌'রে পুরো প‌রিবা‌রের সবার উপরই কর্তৃত্ব কর‌তে থা‌কে আর এটা তখন সম‌য়ের দাবী হি‌সে‌বেই চরমভা‌বে অনুভূত হয়।


পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে সুন্দর সম্পর্ক হ‌লো স্বামী স্ত্রীর মধুর দাম্পত্য সম্পর্ক। আর এই সম্পর্ক গ‌ড়ে উঠার একটাই কারণ হ‌লো-স্বয়ং‌ক্রিয়ভা‌বে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা গ‌ড়ে উ‌ঠে আপ‌নের চে‌য়ে আপন। স্বামী য‌দি ই‌জ্ঞিন হয় তাহ‌লে স্ত্রী অবশ্যই হ‌বে ঐ গা‌ড়ির চে‌সিস। 


এখা‌নে গা‌ড়ি‌টি একটা সংসা‌রের রূপক অ‌র্থে ব্যবহৃত হ‌য়ে‌ছে। সুতরাং, সব কথার মোদ্দা কথা হ‌লো স্ত্রী প‌রের ঘ‌রের একজন মে‌য়ে হ‌লেও সে আস‌লে পর নয়, বরং সে পরমাত্মীয় ও অ‌তি নিকটজন। 


আর এজন‌্যই হয়তবা স্ত্রী‌কে অর্ধাঙ্গিনী হি‌সে‌বে আখ‌্যা‌য়িত করা হ‌য়ে‌ছে।

মিতা নুর



 এক টুকরো নিশ্চুপ পাথর

                      

কি সুখ পেলে তুমি এমন করে...?

আমি যে প্রতি মুহূর্তে পুড়ে ছাই হচ্ছি তোমার জন্য, 

তবুও কোনোদিন তোমাকে অভিশাপ দেবোনা। 

আমার প্রাণের ঘরে যে আগুন তুমি  জ্বালিয়ে দিলে! 

ঐ আগুনে পুড়ে ছারখার হচ্ছে আমার কলিজা,

যে কলিজায় তোমায় রেখেছি.....! 


আমার খুব  ইচ্ছে ছিল ! 

তোমার আমার  স্বপ্নে  ঘেরা সংসার হবে, 

সেখানে থাকবে ভালোবাসা পরিপূর্ণ... 

আমার অধিক বিলাসিতার  ইচ্ছে ছিলো না,  

ছিলো না টাকা পয়সার লোভ,

আমি চেয়েছিলাম ভালোবেসে সুখী হতে।


আজ সব আবেগের  কৌটা বন্ধ ঘরে  আটক হলো, 

ভালোবাসা   জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল, 

আজ নিজেকে মনে হচ্ছে.... 

যেন হাজারো অভিযোগের ভীড়ে,আমি'

এক টুকরো নিশ্চুপ পাথর !!

উম্মে হাবীবা আফরোজা




প্রতীপদর্শিনী



নির্ভরতার আশ্রয়ে, 

বিভীষিকাময় তপ্ত হৃদয়ে,

সভ্যতার শৃঙ্খলে, বিমূর্ত এক নাম "নারী"


ধ্বংসস্তপের মিছিলে, 

ছেঁড়া মানচিত্রের বীরাঙ্গনা বেশে,

কখনো তমু,কখনো বা নুসরাতের পাঁজর ভাঙ্গা আর্তনাদে

অভিমানি এক প্রতিচ্ছবির নাম " নারী"


প্রত্যাখানের বিষাদ অনুরাগে,

ব্যাকরণের জটিল সমীকরণে,

হত্যাযজ্ঞের তান্ডবলীলায়, ঘাত-প্রতিঘাতের

বিচূর্ণ এক নাম "নারী"


অসীম ব্যবধানে, সংকটের কংক্রিটে,

মূমুর্ষু শহরের নাগরিক কোলাহলে,


পুতুলরুপী আলোকসজ্জার নাম "নারী"।


মিথ্যামায়াজালের গার্হস্থ্যনীতিতে,

অবহেলিত কঙ্কাল মূর্তি

অবয়বের আরেক নাম"নারী। 


তীব্র দহনে দগ্ধ হয়েও যে জ্বলে উঠেছো দীপ্ত আহ্বানে,

পুষ্পিত ভালোবাসায় সিক্ত ও ত্যাগের মহীমায় আলোকিত করেছো এই জগৎ সংসার,,,,

সেই হলো মহীয়সী এক নারী।


সমস্ত ব্যবধান  ভোলে আজ

প্রজন্ম হোক সমতার,অধিকার পাক সমস্ত প্রতীপদর্শিনী।

নাসিমা জোহা চৌধুরী


উৎকণ্ঠা 

 

প্রিয়তম,

মরুগোলাপ পামিরা পাঁপড়িশূন্য হয়ে — 

মরাডালে লটকে আছে, 

প্রজাপতিরা আজ পামিরা বিমুখ! 

তুমিও কি পামিরার ভাগ্যবরন করতে যাচ্ছো?


পামিরার পাখিরা ফেরেনি আর ;

তুমিও কি পাখিশূন্য হতে যাচ্ছো? 


বাজপাখি উড়ছে চক্রাকারে —

সোল্লাসে মেতে ওঠে শকুন, শেয়াল। 


বিহ্বল চিত্তে দিকবিদিক ছুটা হরিণশাবকের মতো ;

তুমিও কি কেবল হারাচ্ছো পথ?


প্রিয়তম, 

'সময় গেলেে সাধন হয় না '

মাসুদ করিম




ইতি 


  আর নয় অপেক্ষা

নয় পথ চেয়ে থাকা,

        আর নয় ভালোবাসা

        নয় মিছে স্বপ্ন দেখা।

আর নয় প্রেমের কথা

নয় কোন মিছে আশা।

        আর নয় রাত জাগা

        নয় নিরবে অশ্রু ঝরা,

আর নয় কবিতা

নয় কোন গান শুনা।

        আর নয় কাছে আশা

        নয় আর ছবি আঁকা,

ইতি টানলাম আজি

হলাম শুন্য সব ঝেড়ে।

        মিছে সব প্রেম,

        মিছে ভালোবাসা।

মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ




গোলাপি মানুষ

  


হে ত্রিভুবনের মানুষ 

ভাবিয়া করছোটা কি!

দাঁড়িয়ে যাও একটু খানি

দাঁড়িয়ে আছো যে ত্রিভুবনে।

ভাববার সময় কি নি,তাকে নিয়ে,

কি অপরাধ এই ত্রিভুবনের!

ভাববার সময় কি নি তাকে নিয়ে?

জীবনকে গড়ে তুলুন

গোলাপের মতো সৌন্দর্য করে।।


মমতা রায় চৌধুরী'র


 

গল্প

'পরশপাথর'

( পবিত্র শিক্ষক দিবস উপলক্ষে লেখা )

আজ দিশার মনটা চৈত্র মাসের মাটির মতো বুকফাটা চৌচির হয়ে গেছে। সে ভাবতে পারে নি তার সাথে এমনটি  হবে। আজকের দিনটা এমনিতেই দিশার কাছে ছিল খুবই স্পেশাল। আজ ৫ ই সেপ্টেম্বর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। পবিত্র শিক্ষক দিবস। ভুলবেই বা কি করে? আজ তার জীবনে যা কিছু সবকিছুর মূলে রয়েছে তার সেই প্রাণপ্রিয়া শিক্ষিকার হাত। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে দিশা মাতৃত্বের স্বাদ খুঁজে পেয়েছে তার শিক্ষিকার মধ্যে।

নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে তার বাবা মেধাবী মেয়েটির পড়াশোনার জন্য খুবই আগ্রহী কিন্তু যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখনই তার বাবা মারা যায়। জেঠিমা জ্যাঠামশাই এর দয়া-দাক্ষিণ্যে লাথি-ঝাটা খেয়ে সে বড় হতে থাকে। তাই যেদিন অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য বিদ্যালয়ে আসে তখন তার কাছে বেশি টাকা ছিল না। জ্যাঠামশাই বলেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি কিছু কম করেন তাহলে মেয়েটি পড়াশোনা করতে পারে।  ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষিকারা শুনে বললেন -'পুরো টাকা না দিতে পারলে তো ভর্তি নেয়া যাবে না। তাছাড়া আজ বড়দি আসেন নি। তাই ভর্তি নেয়া হবে না। 'কথা শুনে জ্যাঠামশাই বলেন গরিব মানুষ একদিন কাজ না করতে পারলে আমাদের সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।  কাজ কামাই করে ভর্তি করতে... একটু মানবিকতার সঙ্গে দেখলে ভালো হতো।এই কথাবার্তা চলার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন মন্দিরা দিদিমনি। তিনি ব্যাপারটা শুনে বললেন 'আজই ভর্তি হবে দিশা। টাকার জন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে না ।আমি দেবো টাকা'। মন্দিরা দিদিমনির কথায় দিশার জ্যাঠামশাই ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন দিদিমণিদের কাছে গেলে ,তারা বললেন আজকে ভর্তি নেয়া যাবে না  আজকে সময়  শেষ।' অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও ভর্তি করানো গেল না। তখন দিশা কাঁদতে লাগলো। কিন্তু চোখের জলে দিদিমণিদের মন গলল না। পরের দিন ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা গেল দিশা ভর্তি হতে আসে নি। তাতে কিন্তু অন্য দিদিমণিদের কোনো হেলদোল নেই।মন্দিরা দিদিমণি  সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন অসুস্থ। প্রচন্ড জ্বর। আর সেই দিনই ছিল লাস্ট ভর্তি প্রক্রিয়া। দিশা তখন মন্দিরা দিদিমণিকে দেখে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল সে কি আর পড়াশোনা করতে পারবে না? মন্দিরা দিদিমণি  আশ্বাস দিলেন নিশ্চয়ই পারবে। লেখাপড়ার প্রতি যার এত আগ্রহ, তাকে কি কখনো দমিয়ে রাখা যায়? আমি তোমার ভর্তির ব্যবস্থা করব। যথারীতি ভর্তি হয়ে গেল। ক্লাস শুরু হয়ে গেল। মন্দিরা মাঝে মাঝে দেরি করে আসতো। এবার সেটা যেন নিয়মে দাঁড়িয়ে গেল। এর জন্য তাকে শাস্তি পেতে হতো। কিন্তু ক্লাসটিচার তার মনের খবর কখনো নেন নি। তার এই মনোভাবের জন্য অন্যান্য ছাত্রীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত ,বিদ্রুপ করত। সে সবসময় ক্লাসে ভয়ে ভয়ে থাকত। কেউ তার সঙ্গে কোনো কথা বলত না, নোট শেয়ার করত না। এমনিতেই স্কুলটি ছিল বড়লোক শ্রেণীর মেয়েদের জন্য।স্বাভাবিকভাবেই মেয়েটির রেজাল্টের জন্য সেই বিদ্যালযয়ে স্থান পেয়েছিল। কিন্তু মনের কথাগুলো কখনো কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারত না। এরই মধ্যে ক্লাস টিচার চেঞ্জ হয়ে মন্দিরা দিদিমনি হলেন। দিশার চোখে খুশির বিজলি খেলে গেল। ক্লাস শেষে দিশার কাছ থেকে দিশার দেরি করে আসার সমস্ত খবর জানলেন যে বাড়ির সমস্ত কাজ করে তাকে আসতে হয়। মন্দিরা দিদিমনি ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন ।কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এও বললেন -'বিদ্যালয়ের তো একটা নিয়ম আছে তোমাকে কিন্তু এই টাইমের মধ্যে ঢুকতে হবে ,সেটা খেয়াল রেখো। আর পড়াশোনা কিন্তু ঠিক করে করতে হবে ।তোমার উপর আমার অনেক আস্থা আছে।তবে তুমি কোন কিছু গোপন করবে না ।তোমার যা কিছু মনে আসে তুমি আমার সঙ্গে শেয়ার ক'রো। প্রথমে মন্দিরা দিদিমণিকে গম্ভীর ,রাশভারী বলেই মনে হতো। কিন্তু তাঁর মনের ভেতরে যে একটা খুব সুন্দর স্নেহমাখা হৃদয় আছে ,সেটা দিশা মন্দিরা দিদিমণির সঙ্গে মিশেই বুঝতে পেরেছিল। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিবস উপলক্ষে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে।তাদের ক্লাস থেকেও অংশগ্রহণের জন্য বেছে বেছে নাম নেয়া হয়েছে কিন্তু দিশা হাত তুললেও তাকে নেয়া হয়নি ।আসলে তারা ভাবতেই পারে নি যে ,দিশার ভেতরে কোনো সম্ভাবনা থাকতে পারে। অন্যরা টিপ্পনী কাটে -তুই কি করবি রে ,তোর ভেতরে কি এমন আছে, না পারিস আঁকতে , না পারিস গান করতে? দিশা শুধু চোখের জল ফেলে।অবশেষে শিক্ষক দিবসের দিন নিজের হাতে একটা সুন্দর কবিতা আর ছবি তার প্রিয় দিদিমনিকে উপহার দিল। প্রত্যেকের সুন্দর সুন্দর উপহারের মাঝে তার উপহারটা অত জমকালো নয় ।তাই সে একটু ইতস্তত করছিল। কিন্তু মন্দির দিদিমণি সাহস করে তাকে বললেন -'তুমি কি কিছু বলতে চাও'? মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তখন সে নিজের হাতে লেখা কবিতা আর একটা ছবি দিদিমণিকে দেয়। কবিতার ভিতর এত সুন্দর ছন্দ আর ভাব নিয়ে তার দিদিমণিকে সম্মানপ্রদর্শন করেছে ,প্রত্যেকে দেখে অবাক হয়ে গেছে। ঐদিন মন্দিরা দিদিমনি দুটো বই তাকে উপহার দিলেন আশীর্বাদ হিসেবে।এরপর আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ বার্ষিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা ।তাতে দেখা গেল দিশা প্রথম স্থান অধিকার করেছে স্বাভাবিকভাবেই আস্তে আস্তে সে নিজের জায়গাটা বুঝিয়ে দিতে  পারল। আর এটা সম্ভব হয়েছে তার মন্দিরা দিদিমনির জন্য। যখন সে ১২ক্লাস পরীক্ষা দেয়, তখন মন্দিরা দিদিমণি বলেছিলেন কোন প্রলোভনে পা দেবে না ,তোমাকে আত্মনির্ভরশীল হতেই হবে ।আমি রবি ঠাকুরের আর স্বামী বিবেকানন্দের যে দুটো বই তোমাকে দিয়েছিলাম। যত দুঃখ, বাধা-বিঘ্ন আসুক না কেন ,এই বই দুটো তোমাকে সাহস যোগাবে। আর তুমি তোমার লেখা ছেড়ো না ।তোমার ভেতরে একটা অন্য প্রতিভা লুকিয়ে আছে।তারপর যতবার শিক্ষক দিবস  এসেছে ততবার শিক্ষিকার পরম আশীর্বাদ স্বরূপ বই দুটি তার চোখের সামনে রেখে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এরপর সে নিজেও একজন শিক্ষিকা হয়েছে ,বিয়ে হয়েছে, ঘর-সংসার হয়েছে। কিন্তু সংসারের যাঁতাকলে তার লেখনি সত্তা হারিয়ে যেতে বসেছে। সারাদিন স্কুলে পরিশ্রম করে এসে বাড়িতে তাকে খাটতে হতো হাড়ভাঙ্গা খাটুনি। তার অন্যান্য জায়েরা সব বড়লোক বাড়ির মেয়ে ।তাই তাদের সমাদর হয়েছে ।কিন্তু দিশা গরীব ঘরের মেয়ে তার সম্বল শুধু তার চাকরিটুকু ।তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তাই বড়লোক বাড়িতে এসে জায়গা পেয়েছে। নইলে নাকি আরো সুন্দর মেয়ে এবাড়ির ছোট ছেলের বউ হতে পারত। এরকম টিপ্পনী তাকে মাঝেমাঝে শুনতে হয়। কিন্তু তাই বলে বইপোকা দিশা কখনো ভাবতে পারিনি তার সঙ্গে এরকম একটা ঘটতে পারে। আগামীকাল শিক্ষক দিবস ।তাই ছুটির দিন রবিবার হওয়াতে সে তার শিক্ষিকার বই দুটি আলমারি থেকে বের করে আর একবার স্নেহ স্পর্শ পেতে চায় আর মনের দিক থেকে আরো একবার আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাবার চেষ্টা করে। কিন্তু কি সর্বনাশ বইগুলোকে উইপোকা কেটে দিয়েছে। তার জীবনে অনেক ঝড় বয়ে গেছে কিন্তু এই ঝড় যেন তার অস্তিত্বকে কেড়ে নিতে চেয়েছে। কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারে না তার ঘরে উইপোকাটা আসলো কি করে? পরে অবশ্য বই খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পায়, একটা অজানা বই । এই বইটা তো সে রাখেনি তার আলমারিতে।সেই বইয়ের ভেতরে ছিল উইপোকা আর তা থেকেই তার সমস্ত বইগুলোকে কেটেছে। এবং এর পেছনে তার জায়েদের হাত সে কথাও সে জানতে পেরেছে। সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। সে তো কিছু চায় নি ।এবাড়িতে তো সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করছে। যদিও তার স্বামী বলেছিল তারা আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু দিশা সেটা চায়নি। সে ভেবেছিল এ বাড়িতে এসে সে নতুন করে তার শাশুড়ি মাকে মা হিসেবে পাবে। আর জায়েদের ভালোবাসা সে পাবে। সেই জন্য সে হেরে যেতে চায়নি। কারণ তার শিক্ষিকা বারবার বলেছেন জীবন থেকে পালিয়ে গিয়ে কোন কিছুর সমাধান করা যায় না। সব সময় সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। ধৈর্য ধরতে হয়। সারাদিন দিশা কিছু খাবার খায়নি।  অন্য জায়েরা টিপ্পনী কাটছে, সামান্য বইয়ের জন্য কেঁদে একদম ভাসাচ্ছে, না জানি কি জীবনে ঘটে গেছে। তার স্বামী তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে আবার সে তাকে দুটো বই কিনে এনে দেবে।কিন্তু কোনো কিছুতেই সে সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছে না। বই হয়তো পাবে কিন্তু সেই পরম আশীর্বাদ স্নেহের পরশ সে কোথায় পাবে? যে পরশ পাথরে হাত দিলে সব কিছুই সোনা হয়ে যায়।পরের দিন ৫ ই সেপ্টেম্বর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এবং তার প্রিয় শিক্ষিকা মন্দিরা দিদিমনির ছবির সামনে জলভরা চোখে পুষ্প অর্পণ করে আর বলে সে যেন সবকিছু কাটিয়ে উঠতে পারে। সেই শক্তি যেন ফিরে পায়। ইতিমধ্যেই পোস্টম্যান এসে একটি পার্সেল দিয়ে যায়। পার্সেলটা খুলতেই দেখতে পায় তার সেই প্রিয় দিদিমণি দুটো বই পাঠিয়েছেন। শিক্ষক দিবসে এইরকম একটি পাওনা সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিল এবং সে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো । আর আজকের দিনে যেন তার সেই পরম শ্রদ্ধেয়া দিদিমণির সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করলো ।বইয়ে লেখা ছিল -'স্নেহের দিশা, এই বই দুটো যখন তোমার হাতে যাবে ,হয়তো আমি তখন তোমার থেকে অনেক দূরে থাকবো ।কিন্তু আমার আশীর্বাদ তোমার সঙ্গে সব সময় থাকবে, ভালো থেকো।' দিশা পুরোনো ডায়েরি খুলে ফোন নম্বরটা খুঁজে তাতে রিং করল। ফোনের ওপার থেকে অজানা একটি কন্ঠস্বর ভেসে এলো ' উনি অসুস্থ,ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ।হসপিটালাইজড। 'দিশা দেরি না করে হসপিটালের ঠিকানা যোগাড় করে দিদিমণিকে দেখতে গেলে ভিজিটিং আওার শেষ হয়ে যাওয়াতে সে দিন দেখা হয় না। পরের দিন ভিজিটিং আওয়ার শেষ হবার  ১৫মিনিট আগে পৌঁছে গেল দিশা। সঙ্গে কিছু সুন্দর রজনীগন্ধার ফুল । দিদিমনির খুব প্রিয় ছিল।সেখানে পৌঁছাতে শোনা গেল যে দিদিমণি নীরবে, নিঃশব্দে ভরা নদী থেকে নৌকা খুলে যেমন যায়, ঠিক তেমনি ভাবে জীবন পারাপারের তির অতিক্রম করে পৌঁছে গেছেন অমৃতলোকে। ১০ নম্বর বেডের দিকে তাকিয়ে দিশা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো আর ভাবতে থাকলো হয়তো এরকম করে একদিন তাকে চলে যেতে হবে।একজন নার্স এসে তার চেতনা ফেরায় ,বললেন -'আপনি কি কেউ হন? ভালোই করেছেন মৃতের পাশে প্রথম আপনিই ফুল রেখেছেন। সেভাবে তো কেউ আর শেষের দিকে দেখতে আসতেন না বাড়ি থেকে। একজনার নাম বার করে বলছিলেন দিশা দিশা..। আপনি দিশা?' আমি ওনার ছাত্রী। ও আচ্ছা। একজন শিক্ষিকা এতটা ছাত্রীদরদী হতে পারেন । উনার মুখ থেকে বারবার শুনেছি। এবার দিশা যেন  দিশাহারা হচ্ছে। এভাবে আর কজন দিশা কে বুঝতে পারবে? যার পরশে সব কিছুই সোনা হয়ে যায়। কতদিন সে না খেয়ে থেকেছে, আর ঠিক সেই সময় দিদিমণি এসে তাকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাইয়েছেন। দিদিমণি কি অন্তর্যামী ছিলেন, তার সমস্ত দুঃখ কষ্টের কথা কিভাবে বুঝবেন আর সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে হাজির হয়ে যেতেন?আজ আর ভাবতে পারছে না দিশা। পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে তার মনে হলো। কাকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে উঠবে দিশা। কে এমন করে তাকে আগলে রাখবেন। অথচ এই দিদিমনির সংকটময় অবস্থায় সে একটিবারও তার কাছে থাকতে পারে নি ।এটা তার জীবনের সব থেকে কষ্টের আর দুর্ভাগ্যের। দিদিমণি অবিবাহিত ছিলেন শেষ জীবনটা নিঃসঙ্গতার মধ্যে দিয়ে কেটেছে, এটা ভেবেই সে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল।আর ভাবলো হয়তো একদিন তারও পাশে প্রাণহীন বালিশের নিচে এরকমই কেউ অজানা ,অচেনা পুষ্পস্তবক রেখে যাবে। দিদিমণিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে সে বাড়ি ফিরে আসলো। তার জন্য অপেক্ষা করছিল তার কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের প্রিয় দিদিমণিকে শিক্ষক দিবসের শ্রদ্ধা ,ভালোবাসা উজার করে দিল। তবুও দিদিমনির চোখের জল দেখে কচিকাঁচাদের মধ্যে একজন বলে উঠল -'আপনি কাঁদছেন?'তাকে জড়িয়ে ধরে মন্দিরা বলল -'আমার পরশপাথর হারিয়ে গেল।'

২৫ আগস্ট ২০২১

সিদ্ধান্ত খুকু




চেতাবনী ফাঁদ



দূরের পাহাড় আমায় ডাকছে আবার--

চলো যাই আকাশের উচ্চতায়,

কুয়াশার মতো মেঘ যেন ছুঁয়ে যায় চোখের পাতায় !

চারপাশে বৃষ্টিস্নাত সবুজের হাতছানি,

সময়ের বাঁশি বাজে চিরচেনা সুরে !

ভয় হয়---বেঁচে ফেরা হবে তো আবার ?

জানো তো , ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘেও ডরায় !

ঝরনার উচ্ছলতা বিবাগী মন ছুঁয়ে দেয়,

ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কোন সুখের মোহনায় !

তবুও আশায় বাঁচি--

সব প্রেমে তো আর তঞ্চকতা নেই !

দুচোখ স্বপন; ঢাকাই শাড়ি ললাটে সূর্য !

ফারজানা আফরোজ




ক্ষনিকের অতিথি


সৃষ্টি যেন স্রষ্টার পুতুল খেলা

রাজ্যে,দেশে দুনিয়া জুড়ে

পৃথিবীর এই রঙের মেলায়

অভিনয় করি নতুন সব চিত্রনাট্যে।

নাটাই বিহীন ঘুড়ির মত উড়ছি

পৃথিবীর পথিক হয়ে হাঁটছি সবে

অনেক হেঁটেও পথগুলো যেন অচেনা।

কভু আশঙ্কায় কাটে জীবনের প্রতি ক্ষণ

নিস্তব্ধতার ছন্দে,অদ্ভূত নীরবতায়,

বাঁশরী সুর শোনা যায় সমীরনে।

অতৃপ্ত মন নিয়ে হেঁটেছি ভ্রমের পথে

জীবন পর্দায় কত যে ছবি অঙ্কিত।

হঠাৎ স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়

নতুন স্বপ্নে হই পুনরায় বিভোর-

তীর হারা তরীর মত ঘুরি

হঠাৎ কখনো পেয়ে যাই কিনারা।

ধূসর বর্ন  ফিরে পায় তার রং

সময় বয়ে চলে আপন ধারায়।

অতীত নীরবে বলে অচল হয়েছি আজ

ভুলে গেছে সবে আমাকে

অনেক দূরে আছি না ফেরার দেশে

এ ভূবনে সৃষ্টির আশা যাওয়া চলে বারো মাস।

আজকে যা স্মৃতি কালকে হবে তা ইতিহাস

জোয়ার ভাটার নিত্য খেলা ধরনী মাঝে

জীবনের রহস্যের চাবিকাঠি বিধাতার হাতে

আমরা হলাম ক্ষনিকের অতিথি পৃথিবীর তরে।

রায়হান চৌধুরী


 কাঠপেন্সিল



আমি তো জানি এখানে বেশিদিন নয়

মায়ার হিসাবনিকাশ, ভালোবাসার লেনদেন

মুছে যাবে সব, হবে নিঃশেষ

যেদিন আসবে জীবনের শেষ ট্রেন। 


আমি জানি আমি এখানের নয়

পথ হারিয়ে ফেলা পতিত মুসাফির,

আমাকে ফিরতে হবে শেষ ট্রেনে

যেখানে যাওয়ার কথা, যা চিরস্থির। 


যাত্রাকালে মেখে দিও সুগন্ধি পরাগ

জমা রেখো অযাচিত চোখের জল,

যে মায়া আমি পাই নি কোনোকালে

তা দেখাবে না যখন আমি নিষ্প্রাণ অচল। 


কেউ নয় আপন, কেউ নয় পর

যে আছে যেমন, যত প্রিয়জন

জীবনের গল্পে দাঁড়ি বসলে,

সব কিছু থেকে যাবে, সব কথা লেখা থাকবে

শুধু আমার স্থান হবে অন্ধকার কবর।