২৯ আগস্ট ২০২১

নাজনীন নাহার



 প্রিয়_স্বাধীনতা 


প্রিয় স্বাধীনতা, 

তোমাকে নিয়ে লেখার সাহস আমার বরাবরই কম।

সকলে কত শত ভালোবাসায় আদৃত করে,

তোমাকে নিয়ে লিখে যায়।

আমার কেবল মনে হয়,

তোমায় নিয়ে লেখার সুযোগ্য আমি নই। 


তবুও সকলের ভালোবাসায় লেখার দুঃসাহস করি আমি।

আজ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস।

আজ ২৬ শে মার্চ।

কত আয়োজন কত উদযাপন,

কত কত গল্প, গান,  কবিতা তোমাকে নিয়ে।

তুমি আমাদের  পরিতৃপ্তির এক মহা প্রণয়,

তুমি আমার ও আমাদের ভালোবাসা।

আমাদের সম্মান আর গৌরবের আনন্দ তুমি। 


হে প্রিয় স্বাধীনতা ,

তুমি আমাদেরকে একখানা বাংলাদেশ দিয়েছ।

দিয়েছ লাল সবুজের পতাকার উজ্জীবন।

দিয়েছ বিশ্বের মানচিত্রে নাম, মান আর সম্মান। 


আমি জানি,

ত্রিশ লক্ষ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে,

অগুনতি মা বোনদের ইজ্জত ও আব্রুর বিনিময়ে ; আমরা তোমাকে পেয়েছি।

আমরা তা ভুলিনি।

আমরা তা ভুলব না কোনদিন প্রিয় স্বাধীনতা। 


তবুও তোমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো যখন তারিখ হীন দুঃসময় হয়ে সময় কাটায়, 

সময় কাটায় বেকার যুবকের হতাশার আতঙ্ক নেশায়।

ধর্ষিতার আজন্মের গ্লানিময় বিভীষিকায়,

আর দুর্নীতির ক্যাসিনো নিশীথের কাব্যে।

তখন তোমার অভিতাপের আগুনে পুড়ে,

নিঃশেষ হতে হতে পরাধীনতায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে জাতীয়তা আমাদের। 


জানো স্বাধীনতা!

তোমার মুখটা মাঝে মাঝে অবুঝ শিশুর নরম গালের মতো লাগে,

তখন তোমার চোখ ভর্তি আকাশে আমারা স্বপ্নের রংধনু  উড়তে দেখি। 

আমরা আবারও আমাদের ধমনীতে তোমাকে ধারণ করি,

পাঁচ ঘোড়া সাত ঘোড়ার অশ্বশক্তিতে আমরা দৌড়াতে থাকি।

দৌড়াতে থাকি ক্ষুধা দারিদ্র্য মারি আর সব রকম প্রহসনের বিপরীতে। 

আমরা আবারও স্বগৌরবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি,

আমরা আবারও শূন্যতার ব্যভিচারে হাত ফসকে তোমাকে হারিয়ে ফেলি।

তোমাকে হারিয়ে ফেলি হে প্রিয় স্বাধীনতা! 


আচ্ছা কেন এমন হয়! 

কেন এমন হয় প্রিয় স্বাধীনতা আমার!

আমাদের স্বপ্নের আকাশ মুছতে মুছতে দেখি,

শীতল দীর্ঘশ্বাসে গড়াগড়ি খাচ্ছে;

গৃহবন্দী আমাদের উত্তর আধুনিক জেলখানায় আটক বেহিসাবি সময়।

যদিও কেউ কেউ বেহিসাবি পরাধীন সময়ের গহ্বর থেকে কুড়িয়ে নেয়,

বেঁচে থাকার মৌন সম্মোহন। 


হে আমার স্বাধীনতা! 

তোমাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাস্তবতা আমাদেরে ছোবল মেরে বিষ ঢেলে দেয়,

আমাদের জীবন বিশ্বাসের রক্ত নালীতে ছড়িয়ে পড়ে বীভৎস দহন।

আমাদের জীবন থেকে উড়ে যায় সবগুলো স্বাধীন ভোর।

আমি ও আমরা আর এগুতে পারি না, 

সার্কাসের বিশালদেহী হাতীটির মতো,

আমরা এক শলতে দঁড়ির গিঁটে আবদ্ধ থাকি নির্দিষ্ট স্বাধীন পরাধীনতায়।

এভাবেই আমাদের অধিকাংশের স্বাধীনতারা, 

উৎসবের রঙিন গ্লাসে পরাধীনতার বিশ্বাস গুলে খায়। 


আমাদের মন ও মগজের অলিতে গলিতে মৌন মিছিলের স্লোগানে উচ্চারিত হয়,

হে স্বাধীনতা! 

তোমার মাঝবয়সী চোখ কী করে ভার্জিন হয়!

যেখানে টুইনটাওয়ার থেকে ফিলিস্তিন, 

ফিলিস্তিন থেকে ইরাক যুদ্ধ সমাপ্ত করে;

আই এস এর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তোমার চোখের সন্মুখে! 

যেখানে তর্ক বিতর্কে জর্জরিত অণুজীবের তাণ্ডবে টালমাটাল পুরো পৃথিবী! 

তারপরও কি মৃত্যুর কাছে পরাজিত হতে হতে তুমি বলবে!

আমরা স্বাধীন বাঁচি!

আমরা স্বাধীন আছি! 


তবুও হে প্রিয় স্বাধীনতা আমার,

চোখ ভর্তি আকাশ নিয়ে গৃহবন্দী থাকার পরেও,

তুমি যেভাবে নীল চিনো।

আমরাও তেমনি তোমার জানলায় রোদের পাল্কিতে 

নেমে আসতে দেখি গোটা আকাশ।

যার শরীর থেকে কুড়িয়ে নেই নতুন স্বপ্ন সমৃদ্ধ ভোর।

এই তো তুমি, 

এই তোমাতেই বিভোর আমরা;

হে প্রিয় স্বাধীনতা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much