৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"১ম পর্ব

 আজ থেকে শুরু  হলো নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।    




উদাসী মেঘের ডানায়       
                                                     (ম  পর্ব)
 

ভিঁজে বালুচরে উদাসী মেঘের পড়ন্ত বিকেলে একহাত
শাড়ির কুচি আলগোছে একটু উচু করে ধরে দাঁড়িয়ে
অগনিত ঢেউয়ের জলরঙে চোখ মেলে দিলো।
আরও কিছুটা সময় থেকে মৃদু পায়ে এগিয়ে গেলো
আর একটু সামনে।
মনটা কেন জানি ঐ জলতরঙ্গের ঢেউয়ের মতোন
একরাশ কান্না গুমরে উঠতেই, থমকে গেলো ডাক শুনে
ঃ তৃষ্ণা তুমি এখানে?
তৃষ্ণা কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকলো, চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো
ঃ হুম দেখতেই পাচ্ছো
    তুমি এখানে অপু? 
ঃ আমি ও কিছুটা সময় কাটাতে এসছি,একা এসেছো।

ঃ একা আসা যায়না বুঝি। 

ঃ বেশ ভালো লাগছে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবার
ফিরে দেখা তুমি তেমনই আছো ,শুধু  ভ্রমর কেশে
কাশঁফুলের ছোঁয়ায় বেশ লাগছে। 
ঃএই সেরেছে অপু, এই বয়সে ও কাব্য ভাণ্ডার   আছে দেখছি। 

ঃ বয়স হয়তো সময়ের হিসেবে বাড়ে,কিন্ত মনের কি
বয়স বাড়ে। যাক কোথায় উঠেছো? 

ঃ রেষ্ট হাউজে, একটা সেমিনারে এসছি, ভাবলাম
ছুটি নিয়ে সামিয়া আর আমি দুদিন থাকবো।
তুমি কোথায়? 
ঃ ঔ-তো সায়মনে, বেশ লাগছে আমার তোমার সাথে
দেখা হয়ে, কত বছর হলো বলো  একটা কল ও
করোনা কেন?
কি হবে বলোতো দেখা করে,কল করে জীবন কি পাল্টে যেতেো। 
ঃ তৃষ্ণা জীবন পাল্টে যায়না, আমরা পাল্টে ফেলি জীবনের চাওয়া,পাওয়া গুলি সমাজের দায়বদ্ধতা আমাদের আঁকড়ে ধরে তাই। তবুও কেন
জানি জীবনের গল্পগুলো চাপা থাকে নিভৃত মনে। 

তৃষ্ণা দু'চোখ মেলে ঢেউ গুনছে যেনো জীবনের পরতে
পরতে ঢেউ ভাঙ্গা খেলা ঘর ভেসে যায় অজান্তে এমন সময় মৌনতা ভেঙ্গে ডাকলো অপু
ঃ এসোনা একটু বসে দেখি সূর্য ডোবার এই গোধুলি
সময় টুকু, একটু থেমে, আপত্তি  আছে? 
ঃ  তা বসা যায়।
ঃ আর হয়তো দেখা হবে কিনা জানিনা,তবে 
দেখা হবার আনন্দ টুকু নিয়ে না হয় ফিরে যাবো আমরা। 

বসে রইলো দুজনই চুপ, কেউ কথা বলছেনা
অপু নিরবতা ভেঙে বললো -এখনো একাই আছো
নিজের দিকে একবার ও দেখলেনা ভাবলেনা একার
জীবন বয়ে বেড়ানো কি কষ্ট তা আমি এখন বুঝি 
সাহস হয়নি তোমাকে ফোন করি, ঐ সময়টা তোমার পাশে ছিলাম ঠিকই  কিন্ত সমাজ তোমাকে এতোটাই
কঠিন করে ফেলেছিলো, যে একটা বছর স্বামির সংসার করেছিলে, উনি রোড আকসিন্ডেটে মারা
গিয়েছিলো, সবাই অপয়া বলাতে সেই সব কথার
ভিতরই বন্দী হয়ে থাকলে। 

ঃকি আর করা বলো,তবে বেশ আছি। 
ঃ মনে আছে  জিগ্যাসা করেছিলাম তোমার কি কোন
আবেগ নেই? 

ঃকথার মাঝে তৃষ্ণা বলে উঠলো-মনে আছে বলেছিলাম। 
না,কোন আবেগ নেই,যে সংসার অপমানে অপবাদে
জর্জিরিত করে স্বামির মৃত্যুর দায়ভার চাপিয়ে শশুর
বাড়ি থেকে বের করে দেয়,একা করে দেয়
তার আবেগ সব স্বপ্ন স্রোতে ভেসে যায়,তার আবার আবেগ।
আমি চাইনি আমার মতন আর কোনো নারী কষ্ট পাক,
তাই বুঝতে পেরেছিলাম একসাথে কাজ করেতে করতে তুমি ভালোবেসে ফেলেছিলে, আমিও হয়তো
বুঝতে দেইনি কখনো,তোমার বউ আছে কি লাভ লুকোচুরি খেলায় 
তবে কেন আমি এতো কষ্টো নিবো নতুন করে স্বপ্ন দেখার,কেনইবা আমি
আর একটা সংসার ভাঙার পাপ নিজের ঘাড়ে নিবো
তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম বলতে সেদিন।
সরে ও গিয়েছিলাম এই চাকরীটা ছেড়ে অন্য জায়গায় কাজের ব্যাস্তটা দেখিয়ে। 

যাক দীর্ঘ সময়ের পরও জানতে পারলাম ভালোবাসতে। কিন্ত আমার সংসারের কথা ভেবে
দুরে সরে থাকতে, হুমম, তখন হয়তো আমি 
সংসার সামলাতে যেয়ে আরোও বেশি কষ্ট দিতাম
দুটো নারীকে।
আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে স্যালুট জানাতে। 

ঃ কি যে বলোনা অপু বন্ধুকে তো ভালোবাসে
সবাই,তাই বলে পাবার জন্য নিজের স্বার্থের জন্য
কেউ ঘর ভাঙে। 

ঃ যাক আজ কিন্ত আমার সাথে ডিনার করে তারপর যাবে, এখন আপত্তি নেই তো আমার সংসার
ভাঙারও ভয় নেই,ও চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। 

চমকে উঠে বললো - কবে, কি হয়েছিলো? 
আমাকে বলো প্লিজ। 

-ঃ ওর বিয়ের আগ থেকেই হার্টের সমস্যা ছিলো, প্রথম
ছেলেটা হবার সময় আমি জানতে পারি, তারপর
আর বাচ্চা নেইনি দেশের বাহিরে ও নিয়ে যেতাম
চিকিৎসা করাতে, লাভ হয়নি,হঠাৎ লাঙে পানি এসে
যাওয়াতে বাচাঁতে পারেনি ডাক্তার,তা প্রায় পাচঁ বছর হলো ও নেই, পরে সবই বলবো তোমাকে যদি শুনতে
চাও।
ঃঅবশ্যই শুনবো আজই শুনবো, মনটা খুবই অস্হির 
হয়ে উঠলো। 
তৃষ্ণা চুপ করে সব শুনে বললো- আমাকে তুমি 
কল করে জানাতে পারতে। 

ঃইচ্ছে করে জানাইনি, তু্মি আবার কি ভাববে তাই। 

ঃ সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, এখন না হোক ফেরা যাক।
    তারপর   সব শুনবো। 

ঃচল পৌঁছে দিয়ে আসি রেষ্ট হাউজে
আটটার সময় তৈরী থেকো নিতে আসবো...


     ]

                                                                                                                                           (.চলবে।...)

রাবেয়া পারভীন এর ধারাবাহিক ছোট গল্প "কালো ক্যনভাস"৪

  নতুন  ধারাবাহিক "কালো ক্যনভাস "
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।  



                    কালো ক্যনভাস 
                                                                                        ( র্থ পর্ব)

ক্ষনিকের জন্য নীলার দৃস্টি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো।  পনেরো বছর আগের সময়টা  মনে হলো তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।  তের বছর বয়সের এক মিষ্টি কিশোরী।  জীবনের কোন জটিলতা  তাঁকে তখনো স্পর্শ করেনি । রঙিন প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করে। সপ্তম  শ্রেনীতে পড়ে।  এমন সময় তাঁদের বাসায় গৃহশিক্ষক  হয়ে আসে  এই  ইশতিয়াক আহমেদ। লম্বা  ছিপছিপে গড়নের যুবক। ইউনিভার্সিটি তে পড়ে। নীলা আর  ছোট ভাই নয়ন কে পড়ানোর  জন্য  ইশতিয়াক স্যারকে  নিয়োগ দেয়া হয়।  পড়ানোর ফাঁকে মাঝে মাঝেই  নানান ছু্ঁতোয়  নীলার হাত ধরত  ইশতিয়াক।
- বাহ্ !  তোমার হাতটা তো খুব সুন্দর আর খুব নরম।
নিজের হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে  জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতো নীলা।  তখন ইশতিয়াক হেসে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলত
- কি হয়েছে নীলা , ভয় পাচ্ছ কেন ?  
একদিন  নয়ন পড়তে এলোনা। নীলা একা পড়ছিলো  ইশতিয়াক  হঠাৎ নীলাকে জরিয়ে ধরে ওর গালে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসল। নীলার সারামুখমন্ডল  লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

জাফর রেজা'র ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত "৬

স্বমহিমায় লিখে চলেছেন নতুন ধারাবাহিক লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত 
মতামত দিন  আপনাদের  একটি  কমেন্ট লেখকের ১০০ লেখার  সমান মূল্যবান। 




ক্ষনিক বসন্ত 
( ৬ ষষ্ঠ পর্ব ) 
 

দেশে দিনগুলি মোটামুটি কেটে যাচ্ছিল, কিন্তু কোথায় কেন যেন একটা শুন্যতা অনুভব করি, কি যেন কি নেই।
বুলার সাথে প্রতিদিন কথা হয়, ও অনেক কথার মাঝে একটি কথা প্রতিদিনই বলে __ শরীরের যত্ন নেবেন। 

কিছুদিন যাবৎ বুলা বেশ আনমনা,  কোন প্রশ্নের উত্তর সাথে সাথে পাইনা।
বুলা কি হয়েছে,  আপনি এত অন্যমনস্ক কেন, আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল কবে আসবেন ? 
আপনি বললে আমি কালই চলে আসবো।
কালই আসার দরকার নেই তবে তারাতারী আসুন।
চারদিন পর চলে গেলাম। বুলা এয়ারপোর্টে এল, কিন্তু ওর মুখে সেই হাসি নেই, ওকে খুব বিষণ্ণ লাগছিল।
কি হয়েছে বুলা ?
উত্তর দিলনা বলল__ চলুন যাওয়া যাক।
যাবার পথেও খুব কম কথা বললো। তারপরও জিজ্ঞেস করলাম__ বুলা কি হয়েছে ?
উত্তর দিলনা।
কাল আপনার সময় হবে?
কেন বুলা ?
আমাকে একটু নদীর পাড়ে ও পার্কে নিয়ে যাবেন ?
অবশ্যই নিয়ে যাব, কখন যাবেন।
সকাল থেকে সারাদিনের জন্য। 

আমরা নদীর পাড়ে হাটছি, কিন্তু বুলা আগের মত কথা বলছেনা। আমার একটু কাছে এসে বলল
একদিন আপনাকে একটা কথা বলেছিলাম, মনে আছে ?
কি কথা বুলা ?
__ বলেছিলাম, এই সামাজ ও সমাজের আইন গুলোতো আমাদেরই সৃষ্টি, তাই না; তবে এই সমাজ কেন আমাদের সুন্দর স্বপ্নগুলোতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আবার জিজ্ঞেস করলাম বুলা কি হয়েছে ?
বুলা কোন উত্তর না দিয়ে বলল__ চলুন অন্য কোথাও যাই।
আমরা হাটছিলাম একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে। 

                                                                                                                                চলবে...

মোঃহা‌বিবুর রহমান এ‌র লেখা "সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা"১১তম পর্ব (ধারাবাহিক মুক্তগদ্য)




                                                     সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা 
                                                                              (১১তম পর্ব)

মানুষ সামা‌জিক জীব অার সে সব সময় সঙ্গ চায়। একজন স্বামীর সব‌চে‌য়ে ভাল সঙ্গী হ‌লো তার সহধ‌র্মিণী আর স্ত্রীর সব‌চে‌য়ে ভাল ও কা‌ছের সঙ্গদাতা বা বন্ধু হ‌লো তার প্রিয়তম স্বামী। সৃ‌ষ্টির সেরা জীব- মানু‌ষের বি‌বেক-বু‌দ্ধি আ‌ছে ব‌লেই তারা নি‌জের ভালমন্দ অ‌তি সহ‌জেই বুঝ‌তে পা‌রে এবং অ‌ন্য প্রাণী‌দের ভালমন্দের বিষয়‌টিও অনুধাবন কর‌তে পা‌রে বা অান্দাজ কর‌তে সক্ষম হয়।

‌বি‌য়ে জি‌নিস‌টি হ‌লো স্বামী স্ত্রীর ম‌ধ্যে সারা জীব‌নের আত্মার বন্ধন। তাই এর গুরুত্ব অপ‌রিসীম। এটা বাঙ্গালী সমা‌জের মানুষ‌দের জন‌্য বি‌শেষভা‌বে প্রযোজ‌্য। পাশ্চা‌ত্যের অ‌নেক দে‌শেই আজকাল ঘন ঘন জীবনসঙ্গী প‌রিবর্তনের একটা রেওয়াজ সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে।

একবার ভাবুন‌তো-একজন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার বু‌ড়ো বয়‌সের কথা। এমন একটা বয়সে মানুষ উপনীত হয় যখন প্রতি‌টি মানুষই বেশ কিছুটা বোধ শ‌ক্তি হা‌রি‌য়ে ফে‌লে অ‌নেকটা ছোট্ট মাসুম শিশুর মত হ‌য়ে যায়। এ সময় নিজ সন্তা‌নেরাও তা‌দের তেমন পাত্তা দেয় না। (কোন কোন ক্ষে‌ত্রে কিছুটা ব‌্যতিক্রম তো অবশ‌্যই থা‌কে)। ছে‌লের বউ‌য়েরা কিংবা না‌তিপু‌তিদের কোন কা‌জে কিংবা প্রয়োজ‌নে ডাক‌লে বা কোন কিছু চাই‌লে তারা ঝা‌মেলা ম‌নে ক‌রে। এমন‌কি কেউ তখন তা‌দের‌ দি‌কে ফি‌রেও তাকা‌তে চায় না। এমতাবস্থায়, য‌দি বৃ‌দ্ধের সহধ‌র্মিণী জী‌বিত থা‌কেন তাহ‌লে ঐ বয়‌সেও কিন্তু তি‌নি তার প্রিয় স্বামীর প্রতি নজর রা‌খেন।

বৃদ্ধ বয়‌সে মানুষ নি‌জে‌কে বড় অসহায় ভা‌বে এবং কার‌ণে অকার‌ণে সহ‌জেই আ‌বেগপ্রবণ হ‌য়ে প‌ড়ে। এমতাবস্থায়, স্বামী স্ত্রীর ম‌ধ্যে পরস্পর হৃদ‌্যতার কার‌ণেই এ‌কে অপ‌রের জন‌্য তারা অনুভব ক‌রে থা‌কেন আর এ কার‌ণেই তা‌দের অসহায়ত্ব কিন্তু বহুলাং‌শেই দূরীভূত হ‌য়ে যায়।

জানিনা পশুপা‌খিদের ম‌ধ্যে আ‌দৌ এধর‌নের কোন অনুভূ‌তি আ‌ছে কিনা? মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব তাই তা‌দের অনুভূ‌তি সমূহ প্রখর হয় এবং তারা মু‌খের ভাষায় তা প্রকা‌শ কর‌তে পা‌রে। অন‌্যদি‌কে, পশুপা‌খি‌রা অঙ্গভ‌ঙ্গির মাধ‌্যমে অনুভূ‌তি প্রকাশ ক‌রে থা‌কে যা শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ তা উপল‌ব্ধি কর‌তে পা‌রে।

সু‌খে দুঃ‌খে বিপ‌দে আপ‌দে একজন সহধ‌র্মিণী সদা তার স্বামীর পা‌শে অবস্থান ক‌রে থা‌কেন। একইভা‌বে স্বামী তার সহধ‌র্মিণীর পা‌শে থে‌কে আজীবন তা‌কে সাহস যু‌গি‌য়ে ভালমত বেঁচে থাকার অনু‌প্রেরণা যু‌গি‌য়ে যান।

দীর্ঘজীবন চলার প‌থে সহধ‌র্মিণী তার স্বামী ব‌্যক্তি‌টির জীব‌নের সা‌থে একদম জো‌কের মত লে‌গে থা‌কেন আর সম‌য়ে সম‌য়ে তা‌কে হুঁ‌শিয়ারী বার্তা দি‌য়ে সাবধান ক‌রে স‌ঠিক প‌থে চল‌তে সহায়তা ক‌রেন। তাই ছন্দ মি‌লি‌য়ে বল‌তে হয় স্বামী স্ত্রী যেন একটা মা‌নিক জোড় তারা শুধুই দুজন দুজনার।




ক্রমশ

সজল কুমার মাইতি'র দুটি কবিতা







নিশ্চিহ্ন

আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তায় 
রোজ একটা কুকুর মাঝরাতে
রাস্তার মধ্যিখানে ঘুমিয়ে থাকে।
আগে আবছা আলোয় দেখা যেত
কেমন এক স্বপ্নালু মায়াবী দৃশ্য মনে হোত।
এখন স্ট্রিটল্যাম্পের আলোগুলো বদলে দিয়েছে 
উজ্জ্বল দিনের মতো।
এখনো সে ঘুমিয়ে থাকে ঠিক মাঝরাতে
রাস্তার মাঝখানে।
বড়ই নিশ্চিন্ত, বড়ই সহজ সরল
হয়তো কোনো দিন কোনো মত্ত নেশাগ্রস্ত গাড়িচালক
চাকার তলায় পিষে দিয়ে যাবে 
ধীরে ধীরে রক্তের দাগ 
চাকার থেকে ও নিশ্চিহ্ন হবে একদিন।






সুখের পায়রা

কয়েকটা পায়রা রোজ পাশের বাড়ির চারতলায় 
ভাঙা জানালায় বসে বকম বকম করে।
কখনো সখনো ভাঙা জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়
ভেতরে হয়তো বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা হয়।
কোন একদিন ভাড়াটে আসবে ঐ ঘর পরিষ্কার হবে 
ওদের তাড়িয়ে দেবে। সুখের পায়রা ঘরছাড়া হবে 
পায়রা সত্যি সুখের খোঁজ দিতে পারে?

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৬

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 




                                               উপন্যাস টানাপোড়েন 
                                                                                                                           পর্ব (১৬)

                                                                           লোভ

                                  

                                       নেক দিন টানা বৃষ্টির পর রোদ উঠেছে।গতরাতে পার্থ ও  সোমদত্তার চিন্তায় ঘুম হয় নি। সকালে একবার পার্থর খবর নেবে বলে সমদত্তাকে ফোন করলো।রিং হলে ওপারের গলা এলো 'হ্যালো'।
রেখা বলল  'পার্থ কেমন আছে  রে?'
সমু বলল ' ভালো।'
রেখা আর কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে বলে ফোন ছেড়ে দিল। এমনিতেই রেখার অস্বস্তি হচ্ছিল সোমদত্তা সঙ্গে কথা বলতে। কারণ সকাল-সকাল রেখা তার মেজাজটাকে বিগড়াতে   চায় নি। ফোন কেটে দিল। আজকে রেখাকে স্কুলে যেতে হবে। রিম্পা দির সঙ্গে এ কটা দিন সেভাবে ভালো করে কথা বলাই হয়নি।মনে হচ্ছে যেন এক যুগ রিম্পাদির সঙ্গে কথা বলা হয় নি ।মনটা ছটফট করছে। এজন্য স্কুলে যাবে । যে কটা দিন রিম্পাদির সংস্পর্শে থাকা যায়। সেই লোভটা রেখা কিছুতেই সামলাতে পারছে না ।তাই ক্লান্ত-অবসন্ন শরীর নিয়েও স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। না হলে আজকের দিনটা রেস্ট নিতো। এদিকে সকাল-সকাল মনোজ গেছে পুটুর বাড়িতে ।খোঁজ লাগাতে কি হয়েছে? মনোজের আসার টাইম হয়ে গেছে কিন্তু আসছে না কেন ?এদিকে রেখাকেও স্কুলে যেতে হবে। রেখা দ্রুত হাতের কাজগুলো সেরে, স্নান করে ,পূজা পাঠ করে রেডি হয়ে নিল। মনোজ আসলে ওকে  ব্রেকফাস্ট দিয়ে দেবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রেখা ভাবছে না আর দেরী করা যাবে না ।মনোজকে একটা ফোন করে নিল রেখা। 
হ্যালো'। তুমি কখন আসবে? আমাকে ট্রেন ধরতে হবে তো?
মনোজ বলল 'তুমি বেরিয়ে যাও?'আজকে তো আমি অফিস যাব না।'
রেখা বলল ' ও দিকে পুটুর খবর কি?'
মনোজ বলল 'পুটু কদিন কাজে আসতে পারবে না?'
রেখা বলে  'তাহলে কি হবে?'
মনোজ বলল  'ওকে বলে এসেছি নিজে আসতে না পারলে অন্য কাউকে কাজে ঢুকিয়ে দে।'
রেখা বলল  'কী বলল?'
মনোজ বলল  'তুমি স্কুলে বেরিয়ে যাও, পরে কথা হবে।'
রেখা বললো  'একটা চাপ থেকে যাচ্ছে ।ঠিক আছে আমি স্কুলে চলে যাচ্ছি। তোমার ব্রেকফাস্টটা রাখা আছে ।খেয়ে নেবে ।দেখো বাড়িতে আছো বলে আবার ১টা বাজিয়ে দিও না বেকফাস্ট খেতে। আর দুপুরের খাবারটা ঠিক সময়ে খেয়ে নিও।'
মনোজ বলল  ,'হ্যাঁ ,রে বাবা। আমি ঠিক সময়ে খেয়ে নেব ।তুমি অত টেনশন নিও না। আর সাবধানে যেও।'
রেখা বলল  'ঠিক আছে ।দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।
না, এখন যদি না বের হতে পারে তাহলে এই ট্রেনটা সে মিস করবে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটল অটো অটো বলে।
অটোতে উঠে পরল ।বাবা আজকে অনেক ভিড়।রেখাকে যে লোকটার পাশে বসতে হলো তার গায়ের থেকে ভোটকা দুর্গন্ধ ,সঙ্গে ঘামের গন্ধ। রেখার যেন মনে হলো অন্নপ্রাশনের খাবারগুলো সব বেরিয়ে আসবে।রেখার কেমন অস্বস্তি হতে লাগল। কিন্তু কিছু করার নেই ।যেতে হবেই। এরমধ্যে পাশে বসে থাকতে-থাকতে রেখা অনুভব করল অচেনা লোকটি যেন ক্রমশ সরে আসছে, আলতো করে ওর সাথে নিজের স্পর্শ ,আস্তে আস্তে কুনুটা যেন রেখার বুকের কাছে ।রেখা কিছু বলতে পারছে না ।শেষ পর্যন্ত রেখা অটোওয়ালাকে বলল ' একটু তাড়াতাড়ি চলুন না।'
 অটোওয়ালা বলল  'এর থেকেও দ্রুত কি করে যাব দিদি ?আমার আটোতে তো আর এরোপ্লেনের পাখা লাগানো নেই।'
এই কথা শুনে সেই অসভ্য লোকটি হো হো হো্করে হেসে উঠলো।
রেখাও বুঝল যে সে বোকার মত কথাটা বলেছে ।অটোওয়ালা ঠিক তার গতিতেই যাচ্ছে কিন্তু রেখার মনে হচ্ছিল একটু তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারলেই লোভী মানুষটার হাত থেকে নিজেকে কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে নিতে পারতো। এই জন্য তাড়া দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অটো স্টেশনে থামলো। ততক্ষণে খবর হয়ে গেছে ট্রেন ঢুকছে ।অটোওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে ছুটতে শুরু করলো ওভারব্রিজ পার হয়ে যেতে হবে। যখন ওভারব্রিজ পার হলো তখন ট্রেন হুইসেল দিয়েছে এবার সে আরো দ্রুত ছুটতে শুরু করলো ।কোনরকমে সে  ট্রেনটায় উঠলো ।সেই সময় ওর হুঁশ ছিল না যে ,তাকে লেডিস কম্পার্টমেন্টে উঠতে হবে। তাড়াহুড়োতে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়েছে। ভেতরের দিকে যাবার চেষ্টা করলো ভিড় ঠেলে ঠেলে কোন রকমে লাগেজগুলোকে নিয়ে একটা সাইড করে দাঁড়াতে চেষ্টা করল।
ট্রেনের ভেতরেও সে লক্ষ্য করলো এই ভিড়ের মধ্যে তার পায়ের উপরে কোন একটি পা যেন ঘষছে ।তাকিয়ে দেখল সেই অটোতে বসে থাকা লোকটি। রেখা এবার আরো বেশি অস্বস্তি অনুভব করল।  নিজের পা টা সরিয়ে নিল । কিন্তু কি রকম নির্লজ্জ লোকটা ।ঠিক রেখার পায়ের কাছেই আবার পা টা রেখেছে ।রেখা ভাবছে কি করে এই লোকটার পাশে এসে দাঁড়াল? রেখা ভাবতেই পারে নি। রেখা এবার সিটে বসে থাকা লোকদের জিজ্ঞেস করলো কে কোথায় যাবে ?এর মধ্যে একজন বলল ' পালপাড়া নামবে।'
 রেখা বলল  'জায়গাটা বুক রইল।'
 লোকটা শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। পরক্ষণেই চোখ বুজে ঘুমাতে থাকল।
অস্বস্তি ক্রমশ বাড়িয়ে দিলো পাশের ওই লোকটা। এবার রেখা বাধ্য হয়েই বললো ' দাদা একটু ঠিক জায়গায় পা রাখুন।'
 লোকটি নির্লজ্জের মতো বলল  'আপনার প্রাইভেট কারে আসা উচিত ।এত ভিড়ের মাঝে একটু এদিক ওদিক হতেই পারে ।'
রেখা কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। কি বলছে এই লোভী মানুষ। রেখার পাশেই কি আবার বসবে..? ভাবতে পারছে না রেখা ।গা টা যেন ঘৃনায় ঘিন ঘিন করতে লাগলো। পুরুষ মানুষগুলোই কি এরকম কে জানে বাবা ।মেয়ে দেখতে পেলে তারা স্থির থাকতে পারে না ।
রেখা মনে মনে ভাবতে লাগল না না সব পুরুষকে দিয়ে বিচার করলে কি হয় ,এটাও একবার পুরুষদের প্রতি সহানুভূতির সঙ্গে ভাবল। এমনি সময় ট্রেন এসে পালপাড়ায় থামল ।রেখা তার নির্দিষ্ট বুকিং সিটে গিয়ে বসলো আর হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অসভ্য লোভী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলো না বলে ।কোনরকমে সে জায়গাটায় বসলো ।কিছুক্ষণ পর সে অনুভব করতে লাগলো সে যার পাশে বসেছে পাশে আরেকটি ভদ্রলোক ? না ভদ্রলোক বলবো না। আরেক লোভী ক্রমশ যেন রেখার গায়ে ঢুকে পড়তে চাইছে ।রেখা ভাবছে আজকের দিনটাই রেখার খারাপ ।তাই এই ধরনের লোভী মানুষদের চক্করে রেখাকে পড়তে হয়েছে ।অথচ মুখ ফুটে বলতে গেলে কি রকম কথা শোনাচ্ছে ।রেখা এবার পাশে থাকার লোকটির দিকে একটু বিরক্তি চোখে তাকালো ,বুঝিয়ে দিতে চাইল, যে কাজটি করছে মোটেই পছন্দ নয় ।বরং লোভী লোকটা একবারে রেখার দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষা বুঝে নিয়ে ইতঃস্তত বোধ করল। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যাচ্ছে পাশের লোকটি  কনুই দিয়ে ধাক্কা মারছে। রেখা ভাবছে এ তো বড্ড জ্বালা হল ।পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ মানুষগুলোই কি তাহলে এরকম? এমন সময় আরেক ভদ্রলোক তিনি নেমে গেলেন ।পাশে এসে বসল সেই অটোতে বসা লোভী কামাতুর লোকটা। রেখা ভাবল বসে থাকাটাই তার অসম্ভব ব্যাপার। দুটো অসভ্য লোভী মানুষের পাশে বসে রেখার তখন স্যান্ডউইচ হবার কথা ।তাই রেখা উঠে  সে এগিয়ে গেল গেটের কাছে। ট্রেন চলেছে বাইরে সবুজ দিগন্ত মাঠ কদিনের বৃষ্টিতেও যে জল থইথই করছিল ।এক দিনের টানা রোদে জল যেন অনেকটা নিচে নেমে গেছে। ভালই লাগছিল প্রকৃতির এই কান্ড কারখানা ।কদিনের বৃষ্টিতে রেখা যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল অথচ এই বৃষ্টি রেখার খুব পছন্দের। এরই মধ্যে ফোন বাজতে শুরু করল রেখা হাতরে হাতরে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করল ।দেখল ।রিম্পাদির কল। রেখা রিং ব্যাক করল রিম্পাদি 'হ্যালো 'বললো।
 রেখা বলল 'ট্রেনে আছি ।স্কুলে যাচ্ছি।'
রিম্পাদি বলল  'আমি এটা জানার জন্যই তোকে ফোন করেছিলাম ।যাক সাবধানে আয় ।অনেক কথা জমে আছে ।তোকে কাছে পেলে সব বলবো।'
রেখা বলল আমিও তোমাকে আজকের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলব।
রিম্পাদি বলল 'কেন রে কিছু অস্বস্তিকর ঘটনা?'
রেখা বলল  'একদম ঠিক ধরেছ।'
রিম্পা দি বলল কেন তোর কাছে সেফটিপিন ছিল না। তোকে তো অনেক আগে আমি এই টিপস দিয়েছিলাম। আরে অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে তো।'
রেখা এত অস্বস্তির মধ্যে ও হাসতে হাসতে বললো 'ঠিকই বলেছ ।তোমার টিপস কাজে লাগাই নি বলেই আজকে এতটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল ।এবার থেকে কথাটা মাথায় রাখবো।'
 রিম্পাদি বলল  'আমার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটেছিল তোকে তো কবে বলেছি না? সেই  চাঁদু সেফটিপিন এর জ্বালা কিরকম হাড়েহাড়ে বুঝতে পেরেছে ।বুঝেছিস ?বলেই দুজনে হাসতে শুরু করলো।
রেখা মনে মনে ভাবল সত্যিই রিম্পাদির কাছে আছে কিছু স্টক। এরইমধ্যে ট্রেন এসে থামল নির্দিষ্ট স্টেশনে। এক ধৈর্যহীন অতৃপ্ত যুবা ট্রেন না থামতেই নামতে যাচ্ছিল ।
এক ভদ্রলোক তাকে টেনে ধ'রে বলেন !'এত তাড়া কিসের ?এইজন্যেই তো যত অঘটন ঘটে।'
রেখা মনে মনে ভাবছে সত্যিই পৃথিবীতে কত ধরনের লোভ কাজ করে। কারোর ভেতরে কামলোভ ,কারোর ভেতরে আগে যাওয়ার লোভ, কারোর ভেতরে কাউকে ভালোবাসার লোভ, কারোর ভেতরে কাউকে বিশ্বাস করার লোভ, কারণ ইর্ষার লোভ। এই লোভ জিনিসটা বড্ড বেশি। আর এটা আছে বলেই একটা প্রতিযোগিতা চলে।



ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৬ ক্রমশ

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের তিনটি কবিতা



যোগচিহ্ন
 
 বিয়োগ বলে কিছু নেই
সবই যুক্ত আমাদের দিন আনা দিন খাওয়া
                          নুন তেল মশলার জীবনে
যাকে তুমি বিয়োগ বলছো 
তা আসলে ঋনাত্মক যোগ 

(a-b) 
এ শুধু দেখার ভুল, অন্যভাবে লেখা
বিভ্রম মেশানো কিছু আধখেঁচড়া অলীক প্রলাপ 
আসলে এটাই সত্য  a+(-b) 

যে প্রেম ভেঙে গেছে 
যে বন্ধু চলে গেছে দূরে 
যে মানুষের ছায়া পৃথিবীতে আর বেচে নেই
এ কেন বিয়োগ হবে ?

এ সকলই অভিজ্ঞতা যুক্ত হওয়া নতুন অধ্যায়। 





উচ্ছেদতন্ত্র

এমন উড়ন্ত দিনে নিজেকেই তুলে ফেলি শেকড়ের থেকে
 
পকেটে সূর্যের আভা নিভে গেছে উদ্বাস্তু বিকেলে 
হাততালি দিয়ে উঠল পুরোনো চিঠির মোহ 

বাক্সের প্রাচীরে সেই সোঁদাগন্ধ রঙিন কবিতা
সমুহ উত্তাপ নিয়ে একান্ত হাতের কাছে উল্লাস চেয়েছে 

বাঁশি,  তুমি কতটুকু সুর গুঁজে দাও
এই বৈভবের হারানো সন্ন্যাসে।












হালখাতা 

ধার থাক যত খুশি  
কিছুতেই হরগিজ  এই ক্ষত শুকোবার নয় 
নিজেই নিজের কাছে প্রতিদিন কেনা বেচা করি 
         থেকে যায়  নিজেরই ঘামের কিছু দেনা 
চুপি চুপি লেখা থাকে গোপন খাতার নিচে অ-গণিত 
সংখ্যাচিহ্ন, মুদ্রাদুষ্ট অঙ্কের সীমানা 


নতুন বছর এলে স্পর্শ করি ধার বাকি
অপরিশোধ্য এই  ঋণ  জানি ফুরোবে না। 

মাধুরী বিশ্বাস




স্বপ্ন প্রেত
                 

তুমি কী এখনও স্বপ্ন দেখো ?
স্বপ্ন ... 
গলিত চাঁদের জোৎস্না মাখার 
জলপরি আর পদ্মপাতার।
এখনও কী রাত জাগো রূপকথার দেশে ? 
স্বপ্নে দেখো.... এলোকেশ, ডাগর চোখ, ঠোঁট, শুভ্র-দেহ, আমন্ত্রণ.... আর স্পর্শ ??

আমি নবীন স্বপ্ন দেখি না বহুদিন 
নিদ্রাহীন রাত জাগা চোখ দেখে--
কবেকার প্রিয় এক স্বপ্ন-প্রেত।
বার বার....

সানি সরকার




চিরন্তন 



প্রতিটি অক্ষর শেষে কোনও যতিচিহ্ন রাখতে নেই 

ভালবাসার জন্যে দ্বন্দ্ব নয়, ধোঁয়া নয় 
একটি প্রাণ আর হাসিই যথেষ্ট

অবাক হব না তোমার কাছে সবই আছে 

আমি তো জানি

দেবব্রত সরকার




হেরাফেরি 

কিছুটা আঘাত এসে খেলা করে মনে আমি তো মনের বালক কিন্তু পরে পরে 
এই দেখ ভুলে আছি তোমাদের থেকে নিয়ে আছি বেশ কিছু ভালোবাসা থেকে
আর বাকি মায়া দিয়ে নিয়ে আসি জল নোনতা জলের মাঝে চোখ টলটল
কি আর বলি কাকে আমার যা আছে তোমাদের কথা মতো চলেছি  বিরাজে

কিছুটা ঘরানা হলেও কিছুটা বদলাবে কিছুটা সময় মতো পিছে পিছে যাবে
রাতের আধার থেকে নিয়ে আসি ভয় মাটির কাছের থেকে জেগে মনময়
বোঝার উপায় নেই কোনো কাজ ফেলে সব্বাইকে ছেড়ে দিয়ে একা একা এলে
এই ধর আর বেশি কথা নয় দেরি এই খানে যা কিছুই করি হেরাফেরি

গোলাম কিবরিয়া শরীফ




নূপুর



হাতে মেহেদী, পায়েতে নূপুর -
কাঁদিছে নতুন বৌ, 
ঘোমটার আড়ালে ঝড় বয়ে যায় -
জানিতে পারেনা কেউ। 

দৃশ্যপট -

সেদিন হঠাৎ বাবা ফিরিলেন -
হাতে দুই হাড়ি দই, 
হাসি হাসি মুখে, চেঁচামেচি করে, 
"রূপসী" র মা যে কই? 

"আরে বাপু, আসিতেছি আমি -
শুনিবো সকল কথা ;
হাতের কাজটা শেষ হতে দাও -
মেয়েটা পেয়েছে ব্যাথা। "

পানের কৌটা হাতে নিয়ে মা যে -
সুধালো বাবাকে এসে;
এইবার বলো হয়েছে কি তবে-
তুমি- বরাবরই একপেশে। 

আরে, খুশির খবর "রূপসী" র তরে-
খুব করে দোয়া করো, 
খুব ভালো ছেলে, নাম ডাক ও আছে,
শিক্ষায়ও বেশ বড়। 

প্রস্তাব দিলো শহরের ছেলে -
ক'জনা এমন পায়? 
বেশ  ভয়ে বাবা, পাছে ফিরে যায় -
যদিও দিয়েছে সায়। 

ওপাশ হইতে কান পেতে শোনে -
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে ;
রূপসীর  মনে হারানোর ভয় -
"পড়েছি এ কোন ফাঁদে! "

অবশেষে এলো সেই শুভক্ষন -
বিয়ের আসরে বর ;
মনে মনে ভাবে,  জানিনা কি লাভে -
বাবা যে করিলো পর। 

পাড়া প্রতিবেশী,  আত্মীয় সব -
আাসিলো অনেক সেজে, 
ঘোমটার আড়ালে রূপসী কাঁদিছে -
জ্বলছে দ্বিগুন তেজে। 

আয়োজন শেষে, জমাবে যে পাড়ি-
শহরের পানে কনে, 
এইবার বাবা দিশা ফিরে পায় -
চোখ মোছে ক্ষনে ক্ষনে।

মোটরের গাড়ি ছাড়িয়া দিয়াছে -
ছোট বোন সাথে তার,  
হাউমাউ করে কাঁদিছে রূপসী -
পিছু ফিরে বার বার। 

তিন মাস পর -

"অসুখ শরীরে বাঁধিয়াছে বাসা -
সারক্ষন কাঁদে মন ;
আমরা  হয়তো শহরে আসিবো -
রোগ হবে নিরূপন।" 

বাবার চিঠিতে বিব্রত মেয়ে -
পতি কে যে ভয় পায়, 
"বাবার অনেক অসুখ হয়েছে -
শহরে আসিতে চায়! "

ক্ষেপিয়া উঠিলো শিক্ষিত ছেলে -
বেকুবের মত হাঁকে ;
"তাদের সমাজ মিলিবেনা হেথা -
না - বলো আসিতে তাকে। "

বিব্রত বাবা, বিব্রত মেয়ে -
বিব্রত বিধাতা, 
অশিক্ষিতের আলোর আড়ালে -
শিক্ষিত জামাতা। 

বাজার হইতে নূপুর আনিয়া 
বলেছিলো বাবা ওরে,
যখনই আমাকে পড়বে যে মনে -
পড়বি যতন করে। 

নূপুর পায়েতে, নিয়তিকে দোষে -
আর শুধু একা হাঁটে, 
লাথি মেরে দিলো শিক্ষার মুখে-
একাকী জীবন কাটে।

ফরমান সেখ




হে আমার ভারতবর্ষ

হে আমার ভারতবর্ষ
হে আমার জন্মভূমি
তোমার বুকে যারা, নৃশংস ভাবে কেটেছে আঁচড়
নিকৃষ্ট হিংসু জানোয়ারের মত 
বসিয়েছে থাবা
তোমার বুকে অনর্গল চালিয়েছে গুলি
বহিয়েছে রক্তের স্রোত,
হা-পিত্যেসের মত যারা, তোমার ইজ্জত নিয়ে খেলেছে রঙের খেলা 
কেড়েছে গাঁয়ের আঁচল
মিথ্যা অপবাদ দিয়ে  তোমার করেছে কলঙ্কিত
আবর্জনা দিয়ে ভরিয়েছে আঁচল
যারা তোমার রক্ত কণিকায় জ্বালিয়েছে হোমানল 
ঝরিয়েছে অশ্রুজল

আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাবো,
প্রতিবাদী কণ্ঠে ভরিয়ে দেবো সর্বত্র
প্রাণ দিয়েও ছিনিয়ে নেবো তাদের কাছ হতে তোমাকে
আসবে নতুন প্রজন্ম,
নতুন স্বাধীনতা
তোমাকে পরিয়ে দেবো- রানীর ভূষণ আমরা ফিরিয়ে আনবো তোমার সুখের এক নতুন সকাল
মুখের একগুচ্ছ স্বচ্ছ হাঁসি
সম্পদে ভরিয়ে দেবো তোমার আঁচল-
শান্তি বিরাজ করবে তোমার ছায়ায়
আর বেশির দেরি নয়
আসবে খুব শিগগির,
খুব শিগগির.....

dafda

LOVE

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৫

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 




                       টানাপোড়েন (১৫)

                                 সুখের মাঝে চোরা দুঃখ


সারা রাস্তা রেখা শুধুমাত্র সোমদত্তার কার্যকলাপ নিয়ে ভেবে আসছিল, আরো ভেবে একসার হচ্ছিল পার্থ এমন কি করেছে ,যার জন্য তাদের সাত বছরের সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, তাসের ঘরের মতো। মেয়েরা তো সবকিছু মানিয়ে নেয়। সোমদত্তা অন্তত ছেলেটির কথা চিন্তা করে তো পারতো ,সংসার টিকিয়ে রাখতে। পার্থর চোখের জল দেখে তো মনে হচ্ছে না ,যে পার্থর ভেতরে এমন কিছু অপরাধবোধ আছে; যার জন্য সোমদত্তা ওকে ছেড়ে দিচ্ছে। ওর চোখের অভিব্যক্তি দেখে তো বোঝা যাচ্ছে সোমদত্তাকে  কতটা ভালবাসে। চোখ বুজে এই ভাবনাগুলোই রেখাকে কুকুর তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। মনোজ রেখাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলল  'রেখা নাও নেমে পড়ো  ।বাড়ি এসে গেছ।'
 রেখা বলল  'ও এসে গেছি ।চলো।'
মনোজ বলল ''তুমি যাও। তোমাকে আজ খাবার করতে হবে না ।আমি হোম ডেলিভারি অর্ডার দিচ্ছি ।এসে দিয়ে যাবে। কি খাবে বল? বিরিয়ানি অর্ডার দেব?
রেখা বলল 'আমি কিছু জানি না। যা ভালো বোঝো তাই করো। '
মনোজ বলল  তুমি  বিরিয়ানি খেতে ভালোবাসো তো। তাই দুটো মটন বিরিয়ানি অর্ডার দিয়ে দিলাম সোনা। আর শোনো কোন ঘরের কাজ এখন তোমায় করতে হবে না। কালকে আমি ছুটি  নিয়ে পুটুর বাড়িতে যাব ‌। ও যদি কাজে না আসে তাহলে, অন্য ব্যবস্থা করে আসব ।ঠিক আছে। তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে পারলে একবার রিম্পাদিকে ফোন করে নাও ।এতবার করে ফোন করেছে তো ,খারাপ দেখায়।'
রেখা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।'সত্যি মনোজ খুব কেয়ারি।এজন্যই তো কখনো রেখা অন্য কোন কিছু ভাবতে পারে নি ।জীবনে তো তার কম প্রপোজাল আসে নি ।কি বিয়ের আগে, কি পরে। হ্যাঁ মনোজের ভেতরেও কিছু নেগেটিভ গুন আছে কিন্তু ওর যা পজিটিভ গুন আছে তাতে সব ঢাকা পড়ে যায়। আর তাছাড়া এটাই তো জীবনে বড় জিনিস যে মানিয়ে নেওয়া।'এত অবসাদ এত ক্লান্তি তার পরেও মনোজের দিকে হেসে তাকিয়ে রেখা ঘরে ঢুকে গেল।
মনোজ পার্থকে ডেকে বলল ' কত দিতে হবে?'
পার্থ বলল ' আপনি তো জানেন দাদা। দিন না ।আপনাদের সঙ্গে কোন অসুবিধা হয়েছে কোন ব্যাপারে।'
মনোজ হেসে বলল 'আচ্ছা ,ঠিক আছে। রাখ । বলে ভাড়া মিটিয়ে দেয় ।
পার্থ হেসে বলে ' দাদা ,বৌদির কোন অসুবিধা হয় নি তো রাস্তায় ?আসলে নতুন ড্রাইভার ছিল তো আর বৌদি বরাবর হাদুর গাড়িতে যাতায়াত করেছে ।ফলে বৌদি একটু ভয় পাচ্ছিল ।'
মনোজ ব্যাঘ্র ভাবে বলল 'না, না ।কোন অসুবিধা হয় নি ।খুব ভালো ড্রাইভার।ঠিক আছে অনেক উপকার করেছ পার্থ ভাই।'
পার্থ বলল 'না ঠিক আছে দাদা ।এটা তো আমাদের ডিউটি।'
মনোজ পার্থর হাতে হাত রেখে বলল 'ঠিক আছে পার্থ ।অন্য সময় এসো। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিই কেমন।তোমার কিন্তু চা পাওনা রইল।'
পার্থ হেসে বলল 'ঠিক আছে দাদা ।আসুন।'
মনোজ  ঘরে ঢুকেই রেখা ,রেখা ‌‌..খা.আ..আ ডাকতে লাগল।
বাথরুম থেকে রেখা সাড়া দিলো  'কি বলছ..? '
মনোজ বলল 'ও আচ্ছা ,ঠিক আছে ।আজকে স্পেশাল কফিটা আমি বানাবো তোমাকে করতে হবে না।'
রেখা বলল ' কেন তুমিও তো টায়ার্ড না? '
মনোজ বলল 'ঠিক আছে। আজকে আমি করি না ? আজ কফি খেতে খেতে গল্প করবো ।মনে হচ্ছে যেন তোমার সঙ্গে বসে গল্প করি।'
রেখা বাথরুম থেকেই সাড়া দিলো ' ঠিক আছে।'ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রেখা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এসে বলল 'তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও ।আমি সন্ধ্যেটা দিয়ে দিই।'
মনোজ   বললো  'ওকে ম্যাম। জো হুকুম (চিবুক ধরে)। 
রেখা হেসে ফেলল আর বলল 'যাও যাও যাও।'
মনোজ বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল  ' একটা কথা বলবো রেখা ?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ।বলো না ,কি বলবে?
মনোজ'বলল 'তুমি কখনও সমুর মতো বলবে না তো ,আমাকে ছেড়ে দেবে? '
রেখা অবাক ও জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলল 'এমনি মন মেজাজ ভালো নেই ।তার মধ্যে তুমি অলক্ষুনে কথা কেন বলছ? '
মনোজ বলল  'না  চিন্তা হয়।'
 রেখা বললো  'যদি তাই হয়। তুমি নতুন করে নিজের জীবনটাকে সাজাবে ।তুমি অন্যের জন্য কেন নিজের জীবনটাকে স্যাক্রিফাইস করবে?'
মনোজ  কেমন অবাক হয়ে যায়। সে ভাবতে পারে নি এ ধরনের কোনো কথা শুনবে। বলে-' না ,না ,রেখা ।আমার জীবনে একজন ই  রেখাপাত করেছে ।সেটা তুমি ভালোই জানো। আমার মাথায় হাত রেখে বলো কখনো এসব কথা বলবে না । একদম কাছে গিয়ে মনোজ রেখার হাত দুটি ধরে হাঁটুগেড়ে মিনতি জানায়।'
রেখা বলল  'বাহ রে ,আমি কোথায় বলতে গেলাম। তুমি বললে, তাই বললাম। আর আমাকে কি পাগলা কুকুরে কামড়েছে? '
মনোজ বলে 'আসলে সমাজ ,পরিস্থিতি, সময়,মন, মানুষকে কোথায় কখন নিয়ে যায় কে বলতে পারে বল রেখা ? আরও বলল যে  সমুর কথা কখনো ভাবতে পেরেছ?'
রেখা একটু রেগে গিয়ে বলল  'ওর মতো বাজে মেয়ের কথা  ছাড়ো।নিজের বোন বলে নয় ,সত্যিই চিরকাল এমন কি  আমার সঙ্গে হিংসে করে এসেছে। কাকু কাকিমা আমাকে একটু ভালবাসত বলে। যাও আমার সন্ধ্যে দিতে দেরি হয়ে যাবে। তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও।' সদ্য স্নান করে রেখার চুলে তখনো জলটা লেগে রয়েছে ।একটা অসাধারণ তৃপ্তি, স্নিগ্ধ ভাব ওর মুখে মুখে চলে যাওয়ার সময় জলের ছিটে মনোজের  চোখে মুখে ছড়িয়ে গেল । এখনো যেন আগের মতো পাগল হয়ে যায়।আর যতবার দেখে ততবার রেখাকে মনে হয় যেন , ওকে নতুন করে আবিষ্কার করে।এই দুটো দিন বাড়িতে না থাকার জন্য যেন মনে হচ্ছে কত যুগ রেখাকে দেখে নি ।কেন হয় যে ওর এরকম তার সে জানে না ,ভাবতে ভাবতে মনোজ বাথরুমে চলে যায়। ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে ব্ল্যাক কফি করে নিয়ে আসে ।তখন রেখা ঠাকুর ঘর‌ থেকে সদ্য পুজো করে বেরিয়েছে ।ওকে হাত দুটো ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে  কাপটা সামনে ধরে।'
রেখা কেমন যেন ফুরফুরে হয়ে উঠল ক্ষণিকের জন্য ।এই কফির গন্ধে যেন মাথা ধরা ছেড়ে গেল সে‌ thanks জানাল।
 মনোজ  বলল ' এত ফরমালিটি কেন?'তখন হেসে বলে না না না সরি লটস অফ লাভ। ক্ষণিকের জন্য যেন কেমন হয়ে গেল রেখাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নিল বলল  এই ভালোবাসা থাকুক নিরন্তর তোমার আমার জন্য ,বলে গাল দুটো টিপে দিল আর নাকে নাক ঘষে দিল। রেখাও যেন কেমন হয়ে গেল ও  যে অবসাদ, ক্লান্তি ,অনুভব করছিল এক নিমিষে মনোজ সবকিছু যেন দূরে সরিয়ে দিল। মনোজ  রেখাকে আদর করে বারবার ডাকতে লাগলো আর চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিল। মনোজ যেন অনুভব করে রেখার পা গরম হয়ে উঠছে ,হাত উষ্ণ।মনোজের ভেতরে যেন আরো ব্যাকুলতা বেড়ে যায়। তার শুধু মনে হয় সে রেখাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় সুখের সাগরে। যেখানে তারা দুজন সাঁতার কাটবে। এমনি সময়ে আবার ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা রিসিভ করতেই ভেসে আসে রিম্পাদির গলা'রেখা তুই ঠিক আছিস?
'হ্যাঁ রিম্পাদি 'রেখা বলে।
রিম্পাদি বলে ' যাক তাও ভাল। কি করছিলি ?তার আগে কতবার তোকে ফোন করেছি। তুই তো জানিস তোর গলা শুনতে না পারলে আমার ভালো লাগে না।
সত্যিই যে বিষাদ যে দুশ্চিন্তা তার মনকে  গ্রাস করেছিল ।সেজন্যেই সে রিম্পাদির ফোনটা রিসিভ করে নি।।এখন যেন সে একটা আলাদা সুখ অনুভব করছে সেই মানুষটির জন্য। তার স্বামী মনোজ সেই পারে রেখাকে আদরে যত্নে সোহাগে তাকে ভরিয়ে দিতে।
 রিম্পা দি আবার বলে কিরে তুই বেশি কথা বলছিস না? 
রেখা অনুভব করে আর জন্মে রিম্পাদি যেন রেখার দিদি ছিল। তা না হলে এই আত্মিক সম্পর্ক কখনো গড়ে উঠত না। তাই রিম্পা দি  চলে যাওয়ার ঘটনাটা তাকে সুখের মাঝেও বড্ড পীড়া দেয়। রেখার জীবনের সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। সর্বদাই তার ভয় যাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে উঠতে থাকতে চেয়েছে, তারা সবাই তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। এখন চলে যাবে রিম্পা দি। ভাবতেই রেখার চোখে জল চলে আসলো সে চোখ মুছে নিল তারপর বলল  'তোমাকে পরে সব বলব।
রিম্পাদি ।ঠিক আছে ভালো থাকিস ফোন রাখছি।
বুক জোড়ায় অশান্ত অন্ধ সংগ্রাম যেন রেখাকে কুরে কুরে খেতে লাগলো। রেখা ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো এতক্ষণ ধরে তার যে কান্নার বাদ চেপে রেখেছিল সেই বাঁধ ভেঙে যেন কান্না ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইছে টেবিলে মাথা রেখে সে প্রায় কেঁদে উঠলো। ওদিকে মনোজ এসে রেখাকে বলল ' কি হয়েছে রেখা? তুমি আমার সঙ্গে শেয়ার করো।রেখা উঠে গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে যতটুকু আকাশ দেখা যায় সেটুকু দেখার চেষ্টা করছিল তার মনে হয়েছিল আজকের আকাশে যেন দীপ্তিময়ী নয়। রেখার চোখ ভিজে ।হঠাৎ মনোজ এসে তাকে কাছে টেনে নিল ।রেখা ঝাঁপিয়ে পড়ে মনোজের বুকের উপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ।সোমদত্তাকে নিয়ে যে ঝড় উঠেছে সেই ঝড়ে এক পশলা বৃষ্টি কি পার্থর জীবনটাকে ভিজিয়ে দেবে? রুক্ষ শুষ্ক প্রাণ কি আবার সজীব  হয়ে উঠবে? আশেপাশের যারা আছে. তারা কি সেই আনন্দযজ্ঞে সামিল হতে পারবে?তার সুখের মাঝে চোরা দুঃখ কি এভাবেই থেকে যাবে?





       অলঙ্করণ : সানি সরকার 


ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৫ ক্রমশ

আমিনা তাবাসসুম




মায়া চাদর 
 


আস্কারা নিয়ে যায় ভুল পথে
যেখানে ভূমিষ্ঠ হয় মিথ্যে শব্দ
কল্পনার দূষিত বাহুডোর!

অথচ এ অন্ধকার নিবিড়তা ডাকে
লুব্ধ চাতকের মতো...

বেলাশেষে জন্ম নেওয়া এ চাঁদের
সব আলো জীবন দেয় না
যেটুকু নিঃশেষিত
যেটুকু ছুটে আসে ভোর

তাতে মিশে থাক কোনো লালদীঘি
কোনো মায়া দীঘল চাদর।




     অলঙ্করণ : প্রীতি দেব 

সুবর্ণ রায়



সম্পর্ক 


সম্পর্ক অহেতুক এক মাত্রা-- 
মায়া আর বিস্তারেই সব ঘনত্ব। 
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেখানে যেখানে 
আমি হ্রস্ব আর দীর্ঘ নিঃশ্বাসে 
কাটিয়ে গেলাম সম্পর্কহীন এক গরমিলের বেঁচে থাকা।


               অলঙ্করণ : প্রীতি দেব 

রাবেয়া পারভীন এর ধারাবাহিক ছোট গল্প "কালো ক্যনভাস" ৩য় পর্ব

  নতুন  ধারাবাহিক "ক্যানভাস "
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।  





কাল ক্যানভাস / (য় পর্ব)

 
                                     নীলার মনে হচ্ছিল  পায়ের নীচে মাটি  দুলছে। এই সেই লোকটা, নীলা ঠিক চিনে ফেলেছে। চেহারাটা একটুও বদলায়নি।  শুধু মোটা হয়েছে আর কপালের  দু পাশে চুলে পাক ধরেছে। চোখে মোটা ফ্রেমের  চশমা।  অধ্যক্ষ সাহেব পরিচয় দিলেন।
- ইনি  জনাব ইশতিয়াক  আহমেদ,  রসায়ন পড়ান।
নীলার তীর্যক দৃস্টির সামনে বিব্রত বোধ করলেন ইশতিয়াক সাহেব। থতমত খেয়ে বললেন,
- আপনি বসুন নীলা।
নীলা  পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল। খুব অবাক হয়েছেন অন্যান্য  শিক্ষকেরা  একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন। নীলার  ডানদিকের চেয়ারে বসা  অধ্যাপিকা নাজনীন আক্তার  তিনি হাত ধরে টান দিয়ে নীলাকে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।
-বসুন তো  এখানে।  আপনার কি শরীরটা খারাপ ? ইশ্ !  ঘেমে  গেছেন দেখছি।
তারপর তিনি উচ্চকন্ঠে  পিয়ন কে ডাকলেন
- এই তাজুল। একগ্লাস পানি নিয়ে এস।
পিয়ন পানি নিয়ে এলে গ্লাসটা  নীলার ঠোঁটের কাছে তুলে ধরল  নাজনীন।
- এই নিন  পানিটা  খেয়ে নিন।
গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢক ঢক  করে এক চুমুকেই সবটুকু পানি খেয়ে নিল নীলা। তারপর নাজনীনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল
- সরি মেডাম।
প্রত্যুত্তরে  নাজনীনও হাসলেন
- ঠিক আছে ন তো ?
হ্যাঁ সূচক  মাথা ঝাঁকালো নীলা।
- যাক বাঁচালেন , খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম দিনেই এই অবস্থা । এবার বলুন তো  ভয় পেয়েছেন  কেন ?   
নীলার মন থেকে অস্বস্তি  তখনো দুর হচ্ছিল না। 
  


      অলঙ্করণ : সানি সরকার 

                                                                                                                               চলবে ...।

জাফর রেজা'র ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত "৫

     
স্বমহিমায় লিখে চলেছেন নতুন ধারাবাহিক লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত 
মতামত দিন  আপনাদের  একটি  কমেন্ট লেখকের ১০০ লেখার  সমান মূল্যবান। 



                  ক্ষণিক বসন্ত 
                                                                                  ৫ম   পর্ব 


                ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, বুলার ফোন। 
বললাম আমিই কল দিতাম ভাবলাম আপনি হয়তো ব্যাস্ত তাই আর দেইনি।
-- তেমন ব্যাস্ত না, রান্না শেষ করে  দেশে মায়ের সাথে কথা বলছিলাম, আপনার ঘুমের প্রয়োজন তাই কল । এখন কেমন লাগছে ? 
-- আগের চেয়ে অনেক ভালো।
-- সকালে অফিসে যাবার সময় দেখে যাব। খাবার সব সাজিয়ে রেখেছি শুধু ওভেনে গরম করে নেবেন। খাওয়ার পর সাইড টেবিলে যে ট্যাবলেট রেখে এসেছি সেটা খাবেন তারপর দুধ। 
-- বুলা এতো অত্যাচার কেন ? 
-- হেসে বললো, অত্যাচার!   অত্যাচার তো এখনো শুরু হয়নি। আর কোন কথা নয় এবার খেতে যান, বুলা ফোন রাখলো না, কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো একটা প্রশ্ন করি ? 
-- করুন।
-- আপনার শরীর যে এতো খারাপ 
আমাকে জানাননি কেন ? 
- কাউকে কষ্ট দিতে আমার ভালো লাগে না বুলা,
অনেকটা অভিমানী কণ্ঠে বল,  আমি কে, আমি কি অন্য কেউ।
বুলা আপনি রাগ করেছেন ? 
-জানিনা, মনে রাখবেন এখন থেকে আর এলোমেলো জীবন নয়, আমি আপনার জীবনটা গুছিয়ে দেবো, জানেন গতরাতে খুব চিন্তা হচ্ছিল, লোকটা গেলো কোথায়, একটা কলও করলো না, জানিনা কখন যে চোখে জল এসে পরেছিল। অনেক হয়েছে এবার ঘুমান, সকালে কি খাবেন       
..বুলা আপনার কষ্ট করে আসার দরকার নেই, আমি কিছু একটা খেয়ে নেব।
__ আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি কি খাবেন।
__ কিছু একটা হলেই হলো। 

বুলা এলো ওর সহজাত স্নিগ্ধতা নিয়ে, কপালে হাত রাখল, বলল__ জ্বর নেই। এখন ঝটপট খেয়ে নিন আমার অফিসে যেতে হবে, ও হ্যা টিকেট কেটেছেন ? 
__ এখনো কাটিনি, তবে সিট বুকিং হয়ে গেছে, কেন বুলা ?
__ আপনি কয়েকদিন দেশের থেকে ঘুরে আসুন, ভাল লাগবে।
__ বুলা আমি কাল অফিসে যাব।
বুলা মিনতি ভরা গলায় বলল কাল না গিয়ে পরশু গেলে হয়না।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম, ও ব্যাস্ত ছিল আমার খাবার নিয়ে, হায়রে মমতাময়ী নারী।
__আমি চললাম, বিকালে এসে শরীর মুছে দেব।
বুলা চলে গেল। 

একটু দেরি করেই বুলা এল।
দরজা খুলে যাকে দেখলাম সে আমার পরিচিত বুলা নয়, এ অন্য এক বুলা। এই প্রথম ওকে আমি শাড়ি  পড়া  দেখলাম, সাধারণ শাড়ি,  সামান্য সাজ। আমার মনে হল যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে সে আমার সমস্ত সত্বাকে, অনুভুতিকে অবশ করে দিয়েছে, পৃথিবীর সব রূপ  নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল__ অফিস থেকে বাসায় গিয়েছিলাম, স্নান সেরে এলাম, আজ একটু বেশি সময় থাকব।
আমি তখনো ওকে মুগ্ধ চোখে দেখছিলাম, বললাম __ আপনি শাড়ি  পড়েন না কেন ?
__ হেসে বলল, এখানে এতো ঠান্ডায় শাড়ি পড়ে কি চলা করা যায়।
__ বুলা আপনার সাথে আমার আরও আগে দেখা হলনা কেন।
__ আবারো হাসি, আগে দেখা হলে কি হত ?
__ কি হত জানিনা, তবে জীবনটাকে নিয়ে অন্য ভাবে চিন্তা করতে পারতাম।
আমার পাশে এসে বসল, বললো ভাবার সময় শেষ হয়ে যায়নি জীবন আপনি যখন থেকে শুরু করবেন, তখন থেকেই শুরু হবে, মনে করুন অন্য আর একটি নতুন জীবন শুরু হয়ে গেছে।
বুলা কফি নিয়ে এল।
ও বেশ কিচ্ছুক্ষণ চুপ করে রইলো।
__ কবে যাচ্ছেন ? 

দেশে যাবার দিন বারন করা সত্তেও বুলা এয়ারপোর্টে এলো। বোডিং পাস নিয়ে বললাম__ ভাল থাকবেন।
_ শরীরের উপড় অত্যাচার করবেন না, কবে আসবেন ? 
আমি চার সপ্তাহের জন্য যাচ্ছি, মনে হয় থাকতে পারবনা, ওর একা সামলাতে অসুবিধা হবে ( আমার পার্টনারের কথা বললাম)।
বুলা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল।
__ আপনি হঠাৎ  চুপ হয়ে গেলেন কেন।
__ কিছুনা এমনিই।
__ না, বুলা কিছু একটা হয়েছে, আমাকে কি বলা যায়না ?
বুলা মাথা নিচু করে বলল__ শুধু কি ব্যাবসার জন্যই তারাতাড়ি  আসতে হবে ?
আমি হেসে ফেললাম__ না শুধু ব্যাবসার জন্য নয়, অন্য কারণ আছে, আর সেটাই বেশী জরুরী।
__ কি কারন।
__ এই প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছেই আছে, নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন উত্তর পেয়ে যাবেন।
বুলা আমাকে এখন যেতে হবে, শেষ কল করা হয়ে গেছে, আমি যাই। 



          অলঙ্করণ : সানি সরকার 

                                                                                                                                                চলবে....

মোঃহা‌বিবুর রহমান এ‌র লেখা "সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা"১০

ঘরের ভিতর থেকে কবি ধরেছেন দৃশ্যকথা গদ্যের ভাষায় ধারাবাহিক ভাবেই প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁর অসাধারন সৃষ্টি। লিখতে সহোযোগিতা করুন লাইক ও কমেন্ট করে । পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল পাঠক পাঠিকা লেখক লেখিকা সকলের জন্য রইলো অনন্ত শুভেচ্ছা




সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা 
                                                                                              (১০ম পর্ব)


স্বামী স্ত্রীর দম্পতি সম্পর্ক নিয়ে কবি সাহিত্যিকগণ যে কত ধরনের মজার মজার বাণী ও উ‌ক্তি উপহার দিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই।

বিশ্বক‌বি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব‌লে‌ছেন, "যে স্বামী সকালে ঘুম থেকে উঠে স্ত্রীকে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট জড়িয়ে ধরে রাখে তাঁর কর্মক্ষেত্রে বিপদের আশংকা থাকে কম"। সুনীল গঙ্গপাধ্যায় ব‌লেন, "স্ত্রীদের যথেষ্ট পরিমাণে সময় দিন, নাহলে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্বাস করুন। সংসার আর যুদ্ধক্ষেত্র মনে হবে না" ।

‌বি‌দ্রোহী ক‌বি কাজী নজরুল ইসলাম উ‌ক্তি করেন, "সেই কাপুরুষ যে স্ত্রীর কাছে প্রেমিক হতে পারেনি"। আবার সত‌্যজিৎ রায় ব‌লেন যে, "প্রতিদিন একবার স্ত্রীকে ”আমি তোমাকে ভালোবাসি” বললে মাথার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়"।

সম‌রেশ মজুমদার ব‌লেন "স্ত্রীকে সপ্তাহে একদিন ফুচকা খাওয়াতে এবং মাসে একদিন ঘুরতে নিয়ে গেলে স্বামীর শরীর সাস্থ‌্য ভালো থাকে"। 

বড় বড় বিশ্বন‌ন্দিত ক‌বি সা‌হিত‌্যকগণ এভা‌বেই স্বামী ও স্ত্রী তথা সহধ‌র্মিণীর সম্পর্ক রক্ষার বিষ‌য়ে নানা ধর‌নের হাস‌্যরসাত্মক উ‌ক্তি ক‌রে‌ছেন। আস‌লে ভাল ব‌্যবহার ও আচর‌ণের কোনই বিকল্প নেই। বি‌শ্বের বড় বড় শ‌ক্তিশালী দেশগু‌লির ম‌ধ্যে পরস্পর সুসম্প‌র্কের অভাবে তা‌দের ম‌ধ্যে মা‌ঝে মা‌ঝে নানা টানা‌পে‌ড়েন দেখা দেয়। আর বি‌শ্লেষণ কর‌লে দেখা যা‌বে যে, দুদু‌টি বিশ্বযু‌দ্ধের অন‌্যতম কারণটিও হ‌লো বোধ ক‌রি দেশগু‌লোর ম‌ধ্যে সুসম্পর্কহীনতা।

আজ‌কের পর্বটি লেখার সময় সহধ‌র্মিণী একনজর প‌ড়ে মুচ‌কি হাস‌লে আ‌মি তা‌কে জি‌জ্ঞেস করলাম- তাঁর হাসার কারণ কি? তি‌নি বল‌লেন সবগু‌লিই তো পুরুষ ক‌বি কিংবা সা‌হি‌ত্যিকের উ‌ক্তি তোমার লেখায় স‌ন্নি‌বে‌শিত কর‌লে কিন্তু কোন নারী লেখ‌কের উ‌ক্তি তো তোমার লেখায় কোথাও দেখলাম না। উত্ত‌রে বললাম যে, আ‌মি তো একজন নারীর হু‌ঁ‌শিয়ারী বার্তা নি‌য়ে আজ দশম পর্ব লিখ‌ছি। তু‌মি সেটা ভু‌লে গে‌লে না‌কি? আর এজন‌্যই তো যত পুরুষ ক‌বি সা‌হি‌ত্যিকের উ‌ক্তি আমার এ লেখনী‌তে ঠাঁই পে‌য়ে‌ছে। সহধ‌র্মিণী বল‌লেন- ওহ্ আচ্ছা! 

সারা‌দিন অ‌ফি‌সের কা‌জে সময় ক‌রতে পা‌রি‌নে আর তাই আমার যত লেখা‌‌লে‌খি শুরু হয় রাত নয়টার পর। স্বভাবতই শু‌তে শু‌তে অ‌নেক রাত হ‌য়ে যায়। এমন এক প‌রি‌স্থি‌তি‌তে সহধ‌র্মিণীর মূল‌্যবান উ‌ক্তিটি ছিল এমন যে, "রাত জাগ‌লে শরীর খারাপ হ‌বে আর শরীর খারাপ হ‌লে লেখা চা‌লি‌য়ে যা‌বে কিভা‌বে"? 

একজন আদর্শ সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা বোধ ক‌রি এমনই হয়।


     অলঙ্করণ : প্রীতি দেব 



ক্রমশ

রুকসানা রহমান




সতী দাহ 


উত্তুরে হাওয়া তখনো যৌবন ছোঁয়নি
তবু লাল বেনারশি আর সিঁথীতে সিঁদুর পড়ে
চলে যেতে হলো অচেনা সংসারে।

যৌবনের কড়া নাড়তেই, সাদাথান আর ঘটি ভর্তি
জলের ধারায় ধুয়ে দিলো সব সিঁদুর।
তারপর প্রস্তুতি নিতে হলো সহপমরণের।

ধর্মের নামে চলে নারী হত্যার মহাজজ্ঞ
সতীত্ব রক্ষার নামে জীবন্ত তুলে দেয় জলন্ত চিতায়। মানুষ তো নই ছিলাম যেন পুরুহিত তন্ত্রের দাসী 
ওরা মানুষ হওয়ার আগেই পুরুষ হয়ে ওঠে, ধার্মিক হওয়ার আগে পুরুহিত সাজে।

নিষ্ঠুর-নির্মম প্রথার বলি হতে সাজালো বিধবাকে লালশাড়ি আর সিঁদুর পড়িয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেলো গঙ্গার পাড়ে,
যেখানে সাজানো চিতায় স্বামীর মরদেহ,
ওখানে ছুঁড়ে ফেলা হবে লেলিহান আগুনের কুন্ডে
জীবন্ত শরীর।

তখনই তোমাকে খুব মনে পড়ছিলো মা, আর
চিৎকার করে ডাকছিলাম তোমায়, 
মা দেখো, তোমার আদরের মেয়ে বিয়ে নামক দাসত্বের বলি, জীবন্ত পুড়ছি আমি আর আমার নারীত্ব।

বাচঁতে বড় ইচ্ছে করে মা,
এখনো হয়নি যাওয়া মল্লিকা বনে, মেঘচুলে জড়াইনি শিউলির মালা।

তুমি শুনবে না জানি, পৌঁছুবেনা অস্ফুট স্বর,
তবু তোমার নামের জপ করি।
হয়তো,সেদিন ঈশ্বরের চোখে ছিলো জল।
তাইতো নির্মম-নির্দয় আর নিষ্ঠুর প্রথার অবসান করতে ঈশ্বর পাঠালেন এক মানব দূত।

নারীর আর্তনাদ তাকে ব্যথিত করে তুলেছিলো,
এই জঘন্য কুপ্রথার বিরুদ্ধে বিল্পব করে বন্ধ করেছিলেন সতীদাহ,
দেখালেন আলোকিত সমাজের দিশা,
এনে দিলেন বেঁচে থাকার অধিকার।
তাইতো হে রাজা রামমোহন তুমি আজও নারীত্বের অলঙ্কার।


              অলঙ্করণ : সানি সরকার 

মিঠুন চক্রবর্তী




স্মৃতি



ঘর নেই, পাশাপাশি মাথাউঁচু ইটের দেয়াল
প্রতিটি একাকী শ্বাস
অরণ্য মাড়িয়ে যেন চলে যায় দীর্ঘ শীতকাল

চাঁদ নেই, চাঁদোয়ায় পরিপাটি ডানা
ভেতরে বিষণ্ণ দ্বীপ, ছাদে দীপাবলি

তবু, এসো, দেখে যেও
ভীষণ কুয়াশা চিরে উঠোনের মাঝে
এখনো দাঁড়িয়ে আছে পাখির কূজন জানা গাছ





শহিদ মিয়া বাহার




দু:খগুলো নুপুর হয়ে বাজে


অনুগামি কিছু দু:খ নেমে গ‍্যাছে 
কোন এক  যুবতির গাল বেয়ে পায়ের  নুপুরে
তারপর বিরহ-ছন্দ, 
ব‍‍্যথার আবহ রিদম--
দু:খ- নুপুর ! 

শুনতে কী পায় কেউ
পৃথিবীর ছায়াপথে অকাশের দুয়ারে         
এস্রাজ-রাগিণীর কান্নার মত 
দু:খগুলো নুপুর হয়ে বাজে  ; 

আমি মহুয়ার বনে শুনি ছন্দিত নুপুরের সাঁওতালি সুর
পাখির আওয়াজ
পাতার কাঁপনে। 

অনাচারী কিছু লাল শরাবী গাঙচিল  
কফির আলাপন নিয়ে এসেছে 
শান্ত এ চরের বালু আর বনের প্রান্তিকে---
তারা সব মেতেছে দু:খ দাদনের উৎসব মিলনে! 

কলমিলতার নরম ঠোটের তিরতির জৌলুস নিয়ে
উৎসবে উৎসবে
যুবতীরা চলে গ‍্যাছে হেঁটে হেঁটে বহুদূর---
শপিংমল, জনারণ‍্য আর বেদনার সাঁকো পেরিয়ে 
সমুদ্রের কাছে নীল আর লবনের উন্মাদ গহীনে
ঢেউয়ের অবাধ‍্য নাগরদোলার অনন্তে। 

আলোর ইশারা নিয়ে কেউ আর ঘরে ফেরেনি। 

এখনো সারারাত দু:খের খেয়াল দিয়ে নুপুরের ভাটিয়ালী বাজে ।

জাভেদ জাভেদ




মায়ার কথা 


পড়ে রইলো লম্বা নিশি-
দীপক নিভু নিভু!
স্বাধের সকাল মেঘাচ্ছন্ন! 
কার প্রেমেতে মগ্ন মজনু! 
লাইলি কি জানে তাঁর প্রেমের-
মজনু হাই হাই,,,,,,,,!
আগুন  ও নাই রৌদ্র ও নাই
তনু মনে একি জ্বালা? 
কোন্ খেলাতে কাদা মাখলাম-
সারা গায়,
যাবি যদি এই নিষ্ঠুর খেলাতে-
জড়ালে কেন আমায় -
প্রাণের মজনু , 
যাসনে তুই কালো করে
আমার দিন, 
দীপক নিভু নিভু,,,,,,,, 
আমি ও দুর্বল প্রায়-
ক্লান্ত রে তোর প্রেমে!
বলে যা যাবি যদি-
কি ছিল কমি!
জানিনা তোর মন কেন-
এত লোভী! 
আমার চেয়ে কই পাবি-
এত আপন  
ক্ষণিকের সুখে হারালি অনন্ত প্রেম,
ছলনা ভরা ছিলো তোর মন-
তুই হতে পারবিনা কারো আপন
কলংকিত মজনুরে তুই মধু পিয়াসী ভোমর যেমন।

adafdad

LOVE

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

মোঃহা‌বিবুর রহমান এ‌র লেখা "সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা"৯

ঘরের ভিতর থেকে কবি ধরেছেন দৃশ্যকথা গদ্যের ভাষায় ধারাবাহিক ভাবেই প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁর অসাধারন সৃষ্টি। লিখতে সহোযোগিতা করুন লাইক ও কমেন্ট করে । পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল পাঠক পাঠিকা লেখক লেখিকা সকলের জন্য রইলো অনন্ত শুভেচ্ছা







সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা 
                                                                               (ম পর্ব)


                                             স্বামী ও স্ত্রী দু‌টি ‌বিপরীত লি‌ঙ্গের মানু‌ষ যারা আলাদা আলাদা সামা‌জিক প‌রি‌বেশ ‌থে‌কে এ‌সে‌ ঘর বাঁ‌ধে এবং যা‌দের পা‌রিবা‌রিক পটভূ‌মিও ভিন্ন থা‌কে। বলা বাহুল‌্য যে, স্বামী স্ত্রী উভয়ই মানুষ হ‌লেও সৃ‌ষ্টিকর্তা দু‌টি পৃথক লি‌ঙ্গের অ‌ধিকারী ক‌রে তা‌দেরকে সৃ‌ষ্টি ক‌রে‌ছেন। তাই তা‌দের উভ‌য়ের ম‌ধ্যে শারী‌রিক গঠনের ভিন্নতা ছাড়াও চিন্তা‌ চেতনার ম‌ধ্যেও ভিন্নতা থাকাটা খুবই স্বাভা‌বিক ও যু‌ক্তিসঙ্গত। 

বিবাহ নামক ধর্মীয় চু‌ক্তির মাধ‌্যমে এক‌জন মানব ও অপর এক মানবী আজন্ম একসা‌থে ঘরসংসার ক‌রে একসময় এ দু‌নিয়া থে‌কে চিরবিদায় নি‌য়ে পরকা‌লের অজানা ও অ‌চেনা এক জগ‌তে তা‌দের‌কে পা‌ড়ি জমা‌তে হ‌লে উভ‌য়ের ম‌ধ্যে পরস্পর হৃদ‌্যতা বিদ‌্যমান থাকার পাশাপা‌শি কার‌ণে অকার‌ণে ছাড় দেবার মন মান‌সিকতার বি‌শেষ প্রয়োজন হ‌বে। আর এমন মন মান‌সিকতার অভাব থাক‌লে দীর্ঘ দু‌টি জীবন একসা‌থে একই ছা‌দের নি‌চে কাটা‌নো কোনক্রমেই সম্ভব নয়।

কোথাকার কোন এক ছে‌লে অ‌চেনা এক মে‌য়ের সা‌থে পরস্পর বিবাহ বন্ধ‌নে আবদ্ধ হ‌য়ে আজীবন কা‌টি‌য়ে দেয়। এটা তা‌দের নি‌জে‌দের স‌দিচ্ছা, সংক‌ল্পে দৃঢ়তা ও স‌র্বোপরী সৃ‌ষ্টিকর্তার একান্ত ই‌চ্ছে ছাড়া কোনভা‌বেই সম্ভব নয়।

সহধ‌র্মিণীগণ ঘরসংসার সামলান ও সন্তান প্রতিপালন করেন। আবার কেউ কেউ চাকুরী বাক‌ুরীও যে ক‌রেন না সেটা বল‌বো না ত‌বে আমা‌দের বাঙালী সমা‌জে সচারাচর ছে‌লেরাই চাষাবাদ, চাকুরী কিংবা ব‌্যবসা বা‌ণিজ‌্য ক‌রে অর্থ উপার্জনের মাধ‌্যমে প‌রিবা‌রের সক‌লের ভরণ পোষণ সহ উত্ত‌রোত্তর আয় উন্ন‌তির দা‌য়ি‌ত্বে ন‌্যস্ত থা‌কেন।

সুতরাং, এসব‌কিছ‌ু বি‌শ্লেষণ কর‌লে এক‌টি সিদ্ধা‌ন্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আস‌লে স্বামী বা সহধ‌র্মিণী কেউ কা‌রো চে‌য়ে কম নয়। সংসা‌রে উভ‌য়ের অবদান সমান সমান। প‌রিবা‌রের জন‌্য সহধ‌র্মিণীর অবদান যেমন মূখ‌্য তেম‌নি একজন স্বামীর অবদানও অনস্বীকার্য। একজন সু‌শি‌ক্ষিত ও বি‌বেকবান স্বামী তার স্ত্রী‌কে যেমন বুঝ‌তে পারেন অ‌তি দ্রুততার সা‌থে তেম‌নি সুন্দর ম‌নের প‌রিপক্ক একজন রমনী তার স্বামী‌কে জান‌তে বা চিন‌তে পা‌রেন খুব অনায়া‌সেই। 

ত‌বে সব‌চে‌য়ে যে বিষয়‌টি না বল‌লেই নয় সে‌টি হ‌লো-দু‌টি ম‌নের ম‌া‌ঝে অবশ‌্যই বিশ্বাস থা‌কতে হ‌বে অগাধ নই‌লে দৈবাৎ এক‌টি ঝড় এ‌সে সংসার নামক ঘর‌টি কাঁ‌চের ঘ‌রের মত সহসাই ভে‌ঙে খান খান ক‌রে ফেল‌বে যা আর কোন‌দিনই জোড়া লাগা‌নো সম্ভব হ‌বে না।


ক্রমশ

জাফর রেজা'র ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত " ৪

স্বমহিমায় লিখে চলেছেন নতুন ধারাবাহিক লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত 
মতামত দিন  আপনাদের  একটি  কমেন্ট লেখকের ১০০ লেখার  সমান মূল্যবান। 




                   ক্ষণিক বসন্ত 
                                                                                র্থ পর্ব 

                                   কিছু ফল আর কি কি জানিনা এনে টেবিলে রাখল। আমার পাশে বসে বলল আমি বিকাল পর্যন্ত আছি, এখন কিছু খাবেন তারপর কোন কথা নয় শান্ত ছেলের মত ঘুম। বললাম আপনি কি করবেন, বললো আমার অনেক কাজ আছে, কি কাজ জানতে চাইলে বললোএমন মানুযের পাল্লায়ই পরেছি যে অপরের জন্য কাজ তৈরি করে রাখে। বুলা এত জঞ্জাল আপনি একা পরিস্কার করতে পারবেন না, আমি কালকের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাব, তারপর একসাথে মিলে সব গুছিয়ে নেব। বুলা কিছু না বলে রান্না ঘরে গিয়ে আপেল আংগুর নিয়ে আমার পাশে বসল। সব গুলো খেতে হবে। খেতে ইচ্ছা করছিলনা তবুও যতটা পারলাম খেলাম। কপালে হাত দিয়ে বলল আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি এবার ঘুমান। এমনেতেই আমার খুব দুর্বল  লাগছিল,  কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা। 
লম্বা ঘুম দিয়ে উঠলাম। 

এটা কি আমার ঘর, এই দেশে এতো পরিপাটি সাজানো ঘরে আমি কখনো ছিলাম না, সাইড টেবিলে নতুন ফুলদানিতে অনেক তাজা ফুল সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা।
বুলা আপনি এসব করলেন কখন, হেসে বললো আজ থেকে আর এলোমেলো ভাবে থাকা চলবে না, আমি প্রতি সপ্তাহে এসে ঘর গুছিয়ে দিয়ে যাবো, এবার উঠুন ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন, আমি খাবার দিচ্ছি।
জিজ্ঞেস করলাম মন্টু কি উঠেছে ? 
উনি কাজে চলে গেছেন তবে যাবার আগে যা বলে গেছেন তাতে আপনার শাস্তি পাওনা রইলো। আপনি কি কখন ওনার রুমে গিয়েছেন? 
-- কেন যাবনা 
ওনার রুমটা কি আপনি দেখেছেন কেমন পরিপাটি করে সাজানো।  

বুলার কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম--- আপনি খাননি ? ---না কেনো ? 
--- এখন কয়টা বাজে, ৫ টা আপনি এতক্ষণ না খেয়ে আছেন ! 
বুলা হাসলো কিছু বললো না।
ওর জন্য মনের কোথায় যেন কিছু একটা অনুভব করলাম, ডাকলাম --- বুলা,  উত্তর নেই, আবার ডাকলাম বুলা --- এবারও উত্তর নেই শুধু মুখ তুলে তাকালো, বললো এখন আমাকে যেতে হবে, কাল আপনার কাজে যাওয়া চলবে না, আমি অফিস থেকে  বিকালে চলে আসবো। বুলা চলে গেল। আমি একা ঘরে পরে রইলা।   

বুলা কে যে আমার গতানুগতিক জীবনধারা এলোমেলো করে দিলো, নিজেকে এতো শূন্য মনে হচ্ছে কেন ? এমন অনেক ভাবনার জালে জড়িয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা। 



ধারাবাহিক "ছোট গল্প " ক্রমশ 
     

রাবেয়া পারভীন এর ধারাবাহিক ছোট গল্প "কালো ক্যনভাস" ২

  নতুন  ধারাবাহিক "ক্যানভাস "
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।    





কালো ক্যানভাস 
 
                                                 (ম পর্ব) 



                                         নীলার দিকে তাকিয়ে মন ভরে গেল জালাল সাহেবের। বিগত দিনগুলিতে  কত কষ্টই না করেছে মেয়েটা। সব বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে এই পর্যন্ত যে আসতে পেরেছে সে জন্য  তিনি  মনে মনে আল্লার কাছে শুকরিয়া জানালেন।
- কৈ আব্বু  তুমি তো বল্লেনা  আমাকে কেমন লাগছে ?  
হেসে মেয়ের দিকে তাকালেন  জালাল সাহেব
-খুব সুন্দর লাগছে,  আমার মা বলে কথা । আমার মা পৃথীবির সেরা সুন্দরী।
- আব্বু !  বাড়িয়ে বলছো কেন ?
-দুর কেন বাড়িয়ে বলব, যা সত্যি  তাই বলেছি। বাবা মেয়ে দুজলেই  হো হো করে হেসে উঠল। মেয়েকে কলেজ গেটে নামিয়ে দিয়ে  জালাল সাহেব  চলে গেলেন। 
নীলা এসে অধ্যক্ষের  রুমে ঢুকল
-আসবো স্যার।?  
-আসুন নীলা ।  বসুন। 
সালাম দিয়ে  অধ্যক্ষের  সামনে  বসলো নীলা।
কুশল  বিনিময়ের পর  অধ্যক্ষ  নীলাকে সাথে নিয়ে  টিচারদের কমনরুমে এলেন।  বড় গোলটেবিল ঘিরে বসে আছেন সব শিক্ষকেরা। সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে অধ্যক্ষ সাহেব  বল্লেন 
-সবাই  আছেন  দেখছি, ইনি  নীলা  চৌধুরী, আপনাদের নুতন সহকর্মী । আজকেই জয়েন করেছেন। দেখতে  ছোট কিন্তু  বিসিএসে  খুব ভালো রেজাল্ট করেছেন।
সবাই  একসাথে নীলার দিকে তাকালো । নীলাও চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবাইকে দেখছিলো। হঠাৎ  একজনের  মুখের  উপর  দৃস্টি  এসে আটকে গেল  তাঁর। এক মুহূর্তের  জন্য সারা শরীরে কাঁটা  দিয়ে উঠল । কে উনি ?  কে ?


                                                                                         চলবে...

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৪

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "।  





                                              টানাপোড়েন (১৪)

                                                                     দংশন

                                   সারা রাত রেখা দু 'চোখের পাতা এক করতে পারে নি। এরইমধ্যে ফোনটা বেজে চলেছে। রেখা ক্লান্ত শরীর ,তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে ফোনটা কোনরকমে ধরল এবং বলল'হ্যালো'।
ওপার থেকে সোমদত্তার কন্ঠে ভেসে এলো'দিদি, পার্থকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি । কেন কি হয়েছে ওর? হ্যালো হ্যালো।  ফোনটা কেটে দিলো ?'
এবার রেখা কি করবে? এ দিকে মনোজও ‌ বাড়িতে নেই ।সঙ্গে সঙ্গে মনস্থ করলো , মনোজকে ফোন করবে। ভেবে রিং করল।ফোনটা ওপার থেকে রিসিভ করে বলল ' হ্যালো কি হয়েছে বল?'
রেখা বলল  'কি করে জানলে কি হয়েছে?
মনোজ বলল  'এত সকালে তো তুমি ফোন করবে না তোমার তো কাজে থাকার কথা।'
রেখা বলল ' ঠিকই ধরেছো পার্থকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।এখন আমার কি করা উচিত ।এখন এই মুহূর্তে আমি ট্রেন তো পাবো না।
মনোজ বলল 'পার্থ! কোন পার্থর কথা বলছো?
রেখা এবার একটু রাগ আর বিরক্তির স্বরে বলল পার্থ ।পার্থকে চেনো না ।আমার ভগ্নিপতি।
মনোজ বলে ' যা কিছু মনে করো না। আসলে আমি ভেবেছি পাশের বাড়ির ওই পার্থ। কেন কি হয়েছে ওর?'
রেখা বলল  ' কি হয়েছে সেটা তো জানি না ।গতরাত্রে সোমদত্তা ফোন করেছিল ।তাতে‌ ও যা বলেছিল ,ওর নাকি পার্থর সাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না ।আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু আজকের মধ্যেই এই ঘটনা ভাবতে পারো?'
মনোজ বলল  'হ্যাঁ যাও ।তবে  কাকু কাকিমাকে এই মুহূর্তে কিছু বলার দরকার নেই। বয়স হয়েছে তো ?একে তো ছেলেটা অমানুষ ।সে তো মা বাবার খোঁজ খবরই রাখে না ।আবার এইদিকে মেয়েটারও এই অবস্থা ।ঠিক আছে ।আমি দেখছি। আমি পাশের বাড়ির পার্থকে বলে দিচ্ছি ।ও গাড়ি করে দিচ্ছে। তুমি বেরিয়ে যাও।'
রেখা বলল  'বাবান কেমন আছে?'
মনোজ বলল  'আগের থেকে ভালো আছে। বিপদের ঝুঁকি নেই ।এ যাত্রায় বেঁচে গেল।'
রেখা বলল 'যাক, তবু একটু আশার কথা শোনালে।'
মনোজ বলল 'ঠিক আছে তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও ।পুটু এসেছে?'
রেখা বলল   'না, কত জ্বালা হয়েছে বলো দিকি নি?'
মনোজ বলল  'ঠিক আছে। আমি বাড়ি যাই । তারপরে ওর বাড়িতে যাবো । খোঁজ খবর নেব ।না হলে অন্য লোকের ব্যবস্থা করতে হবে ।এখন তুমি মাথা ঠান্ডা করে ,যেখানে যাচ্ছ ,সেখানে যাও ।আমি এদিক দিয়ে বেরিয়ে যাব।'
রেখা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল  'কি হবে? ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।'
এরই মধ্যে গাড়ি এসে হাজির।বাইরে থেকে কয়েকবার বৌদি বৌদি করে ডাকার আওয়াজ।
রেখা জানলার পর্দা সরিয়ে জিজ্ঞেস করল কে?ও পার্থ।
পার্থ বলল   'নুতন ড্রাইভার কিছু সমস্যা হলে ব'লো।'
রেখা বলল  'কেন হাদুর কি হলো? এমনিতেই অসুবিধার মধ্যে আছি, আবার যদি কিছু গন্ডগোল হয়।'
পার্থ বলল  'না ,বৌদি চিন্তা ক'রো না ।এমনিতে ও পাকা ড্রাইভার। সেরকম হলে আমাকে একটু ফোন করে নিও।ঠিক আছে। গড়িয়া স্টেশনের কাছে সোমদত্তাদের  বাড়ি যাবে তো ?অনেকদিন আগে একবার গিয়েছিলাম ।আমিই নিয়ে গেছিলাম। ওর হাজব্যান্ড খুব ভালো মানুষ ।তাই না বৌদি? '
রেখা শুধু এক কথায় ' হ্যাঁ ,বলে সম্মতি জানালো।'
গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় চৈতির মা বলল  'দিদি কোথাও বেরোচ্ছ? কারো কি কিছু হলো? রেখা শুধু বলল  'হ্যাঁ একটু বেরোচ্ছি ।'
চৈতির মা বলল  'ঠিক আছে সাবধানে।'
রেখা ভাবছে চৈতির মার একটু বেশি বেশি সব ব্যাপারে ।কোথায় যাবো ?কি করবো? সর্বক্ষণ যেন একটা নজর । বাবা রে কি বেয়াক্কেল মেয়ে । সোমদত্তা কে ফোন করে যাচ্ছি ।ফোনই ধরছে না ।কি মেয়ে জানে না ,যে চিন্তা হয়। ভাবতে-ভাবতে যাচ্ছে এমন সময় মনোজ ফোন করল   'কত দূরে আছে ।'
রেখা বলল 'এইতো প্রায় ঢুকবো ঢুকবো।'
 মনেজ বলল  'সে পৌঁছে গেছে।'
 রেখা বলল  'বাবা ,তুমি পৌঁছে গেছো ।ওদিকে কি ব্যাপার বুঝছ?পার্থ ঠিক আছে ?'
মনোজ বলল  ,'আরে পার্থ অব্দি পৌঁছাতে পেরেছি ?কোথায় বাড়িতে আসলাম -দেখি কেউ নেই । সমুকে ফোন করলাম ও ঠিকানা দিলে, সেখানে যাচ্ছি ।আমি তোমাকে টেক্সট করে দিচ্ছি। তুমি সেই ঠিকানায়  পৌঁছে যেয়ো কেমন,?'
 রেখা বলল  'ঠিক আছে। নির্দিষ্ট হসপিটালে গিয়ে পৌঁছালো ।সোমদত্তা আর ঐ ছেলেটাকে দেখতে পেল ।মাথা গরম হয়ে গেল কিন্তু মাথাটা ঠান্ডা রাখে। 
রেখা বলে  'পার্থ কেমন আছে রে? '
সোমদত্তা বলল  'যাও না দেখে এসো। 
রেখা বলল   'আমি তোকে জিজ্ঞেস করছি ,একটা কথা সোজা করে উত্তর দিতে পারিস না?'
সোমদত্তা বলল ' কি ভুল বলেছি ।তুমি যাও না নিজেই দেখতে পাবে ।আমার বলার চেয়ে নিজের চোখে দেখা টা অনেক বেশি বাস্তব বলে মনে হবে না? '
রেখা কথা না বাড়িয়ে সোজা ঢুকে গেল নির্দিষ্ট কেবিনে । দেখে মনোজ বসে আছে। 
রেখা  বলল  'কেন এমন করেছিলে?'
 পার্থর চোখে জল ।একটু হেসে কথা বলার চেষ্টা করছিল ,।
তখন মনোজ বলল  'এখন এসব কথা থাক।'
রেখা শুধু বললো  'সব ঠিক হয়ে যাবে।'
পার্থ ভরসার চোখে রেখার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
রেখার ও  চোখ ফেটে জল আসছিল।
মনোজ বলল ‌' তোমরা একটু কথা বল আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।'
ফিরে এসে মনোজ ইশারায় রেখাকে যা বলল তাতে মোটেই প্রীতিকর ঘটনা কিছু ঘটছে না।যেভাবে সমু
ছেলেটার সঙ্গে ঢলে আছে, তাতে আমার ভীষণ বিরক্তি লাগলো ।ও পুরো নির্লজ্জ হয়ে গেছে, ওর স্বামী যেখানে ভর্তি।'রেখার কথাগুলো শুনে কান গরম হয়ে উঠলো এবং সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসলো।
এসে যা দেখল ,তাতে রেখা মাথা ঠান্ডা রেখে বলল' 
'যা না তুই পার্থর কাছে। কাছে গিয়ে একটু বোস।'
সোমদত্তা বলল  'যা বলার তো তোমাকে গতকালকে দিদি বলেই দিয়েছি ।ওর সঙ্গে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।'
রেখা বলল 'তোর কোথায় সমস্যা? তোদের ক্রাইসিস টা কি? কেন? সেগুলো আমাদেরকে বল। আমরা চেষ্টা করে দেখি। তাছাড়া পাবলো ছোট ওর একটা ভবিষ্যৎ আছে। নিজের সুবিধার জন্য তুই এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারিস?'কথা বলতে বলতেই দেখতে পেল ছেলেটা হাঁ করে সমস্ত কথাগুলো যেন গিলছে।
রেখা তার দৃষ্টি দিয়ে যেন ছেলেটিকে ভস্ম করতে চাইল ।বুঝিয়ে দিতে চাইল ।এখানে থাকাটা তার অনুচিত।
ছেলেটি বুঝতে পেরে সোমদত্তাকে বলল'তোমরা কথা বলো ।তোমাদের ফ্যামিলি মেম্বাররা আছে। এখানে থাকাটা আমার ঠিক নয়।'
সোমদত্তা রেখার দিকে' বিরক্তি ও জিজ্ঞাসা চোখে তাকিয়ে ছেলেটাকে বলল  'এখানে কেউ ফ্যামিলি মেম্বার নেই ।আমার যা বলার আমি শাশুড়ি মাকে বলে দিয়েছি।'
ছেলেটি একটু মুচকি হেসে পাশেই বসে রইল।
এত অসহ্য লাগছিল। রেখা শুধু বলেছিল  তুই এতটা নির্লজ্জ, বেহায়া ।আমি কখনো কল্পনা করতে পারি‌ নি যে আমাদের ফ্যামিলিতে এইরকম একটা কালচারের মেয়ে আছে? কাকু কাকিমা কতটা কষ্ট পাবে একবারও ভাবলি না ।ছোট্ট পাবলো নিষ্পাপ ওর কথা ও একবার ভাবছিস না।'
সোমদত্তা বলল 'দেখো দিদি আমি বাবা তোমার মত অত ভ্যালুজ ,মরালিটি বুঝি না। যা করতে মন চায় না আমার কাছে সেটাই অন্যায় ।কারণ মন ই  আমার কাছে গড ।আমার কাছে নীতি-টিতির কোন মূল্য নেই।'
কথাগুলোতে যেন রেখার মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগল ।তার বুকে সজোরে এসে যেন ধাক্কা মারলো ।সে ধাক্কা তার কলেজ জীবনে সিদ্ধার্থ র প্রপোজ করার ধাক্কার চেয়ে অনেক বেশি। রেখাকে টানতে টানতে মনোজ নিয়ে আসলো আবার ভেতরে। আর মনোজ বলতে লাগলো  'পৃথিবী মনে হচ্ছে অনেক নিচে নেমে গেছে, নাকি পৃথিবীর মানুষগুলো অনেক নিচে নেমে গেছে ,।সবকিছু যেন ভেঙেচুরে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। মনোজ  বলল  'পার্থর সঙ্গে দেখা করে ,চলো বাড়ি ফিরতে হবে। তোমার অনেক ধকল গেছে। পার্থকে বিদায় জানিয়ে যখন রেখা ও মনোজ বেরিয়ে গাড়িতে বসলো ।তখন রেখার মনে হল সে যে পার্থকে কথাগুলো বলল সবকিছুই মেকি। আদৌ সেগুলো  বাস্তবায়িত হবে না। গাড়িতে বসার পর ফোন বেজেই যাচ্ছে। মনোজ ফোনটা দেখে বলল রিম্পাদি ফোন করছে ,রিসিভ করো। রেখা ঘাড় নেড়ে অসম্মতি জানালো। সে শুধু ভাবতে লাগলো কাকু কাকিমা কিভাবে নেবে ব্যাপারটা,? তাছাড়া ওইটুকু বাচ্চার কি রকম রিয়াকশন হতে পারে ?একবারও ভাবার চেষ্টা করল না ।রেখার ভেতরে যেন এই দংশন ক্ষতের আকার নিল। ছেলেটার বউ বাচ্চা আছে। ও কি সুখের সাগরে ভাসতে চলেছে কে জানে?


ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৪ ক্রমশ