৩১ জানুয়ারী ২০২২

কুকুরটা

দেবব্রত সরকার

হালকা শীত। থোকা থোকা কোয়াশার ঝাঁক। মাঝে মাঝে দলা পাকিয়ে ভাসছে। রাস্তায় লোকেদের আনাগোনা কম। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাতেই দেখি সাতটা।

তাড়াহুড়ো করে শরীরে জামাটা গলিয়ে ঘরের দরজায় তালা ঝোলাতেই কয়েকটি কুকুরের বাচ্চা সাথে তাদের মা, আমার চারপাশে এসে কুঁ কুঁ, কেউ-কেউ শুরু করে দিয়ে ল্যাজ নাড়ছে। তাদের দিকে অশ্রুপূর্ণ নজর রেখে সোজা হ্যান্ডেল সাইকেলটাই চরে বসি। একশো মিটার দূরত্ব পর্যন্ত কুকুরের বাচ্চাগুলো আমার সাইকেলের পিছন পিছন ছুটে আসে। এটা এখন নিত্য দিনের ঘটনা। বহরমপুর গোরাবাজার নিমতলায় দাঁড়িয়ে ‘অমি’কে একটা ফোন করি। তৎক্ষণাৎ অমি তার মেস ছেড়ে একটি ক্যারিব্যাগ হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে।

শীতের সন্ধ্যা। অমি'র গায়ে একটি চাদর। আমি কেবল মাত্র ফুলপ্যান্ট আর একটি কমদামি টেরিভয়েলের জামা পড়েই চলে এসেছি। চারদিকে ঘন অন্ধকার। শীতের কুয়াশার দল আমাদের দু'জনকে আহ্বান করছে ঠোঁটে ঠোঁট মিলতে। লাইটপোস্টের আলোগুলো বেজায় জোর। সদ্য ভেপারের বাল্ব পরিবর্তন করে গেছেন স্থানীয় পুরসভার কর্মী। 

অমি আর আমি দু'জনে গল্প করতে করতে এগিয়ে গিয়ে ভাগীরথীর ধারে ছাতিম গাছের নীচে সান বাঁধানো সিঁড়ির উপর বসি। কিছু মুহূর্ত দুই হৃদয়ের প্রেমালাপ জমে উঠতেই ক্যারিব্যাগটা থেকে একটা টিফিন বাক্স বার করে অমি। অমি'র হাতের তৈরী সব খাবারই আমার খুব ভালো লাগে। ওর নিজের হাতে তৈরী করে আনা চাওমিন দুইজন মিলে গভীর সুখে তৃপ্তির সাথে একে অপরকে খাইয়ে দিই। আস্তে আস্তে অন্ধকার থেকে গোল চাঁদ কুয়াশাশরীর ভেঙে মৃদু আলো বিকিরণ করে। 

ভাগীরথীর পবিত্র জল কলতান তুলে ছোটো বড় মাছ শুশুকদের নড়ে ওঠার দৃশ্য আমাদের মধুর মিলনের চিহ্ন হয়ে উঠছে। অমি'র কোলে মাথা রেখে অনেক দুর গগনের স্বপ্ন দেখি। ছাতিম গাছের পাতার ফাঁক ভেঙ্গে মৃদু জ্যোৎস্নালো এক নব জীবন নিয়ে আমার দিকে ধেয়ে আসে। ভাগীরথীনদীবুকে জলে ডিঙি বেয়ে ফাঁস জাল পেতে কোন এক অচেনা জেলে তার আপন লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে ঝিলমিল জ্যোৎস্না গায়ে।  

অমি, আমাকে হঠাৎ-ই বলে ওঠে তার মা-বাবার কথা, দিদির কথা, এমন কিছু গোপন...কথা যার কারণে তার চোখে জল এসে যায়। টানা সজল চোখে টলটল জল জ্যোৎস্নার আলোয় এক নতুন দিশার চেতনা তৈরী করছে। 
তার কোঁকড়ানো চুলগুলি ঘাড় থেকে ক্রমশই এগিয়ে আসছে আমার চোখে। তার চোখের জল আমার ঠোঁটে এসে পড়ে। হৃদয়ে অদ্ভুত আঘাত এসে ধাক্কা মারে। তর্জনী আঙুল দিয়ে তার চোখের জল মুছে আমার জিভে তুলে নিই । সঙ্গে সঙ্গে সেই কষ্টের মুখে প্রেমহাসি হেসে অমি কি যেন আহ্বান করে আমার কাছ থেকে। হৃদয়ন্তরটা বার বার নড়ে ওঠে। ওর হৃদয়টা কি বলতে চায় তা একান্তে আমার হৃদয়ের গোপনযাদুতে মিশে যায়। অমির চোখ দুটি মুছিয়ে দিয়ে ঘাড়টা কাত করে ঠোঁটে আলতো ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করি। এ যেন শরীরের নবউন্মোচন। নিত্যপ্রবাহে ভেসে ওঠে। কোথায় আকাশ, কোথায় বাতাস, কোথায় মাটি সব যেন ভর শূন্য যাদুতত্ত্বে প্রবেশ করছি। যা কেবলই আনন্দ। মূহুর্তের আনন্দ। সব চাওয়া পাওয়ার থেকে অনেক দুরে। যেখানে কেবল প্রেম খেলা করে। কুয়াশা ছাড়া মেঘ নতুন হয়ে ডেকে আনছে পুষ্পদল। কয়েকশো মাইল দূরের হিমালয় যেন তার ভূষার বর্ষণ করে আহ্বান করছে তার দরবারে। বলছে সু-স্বাগতম প্রেমোদেবমৃতা। নিমিষেই সমস্ত দুঃখ কষ্ট দূরে বহুদুরে মিলিয়ে গেল। সে বলে উঠল-'এ ভাবেই চিরদিন তুমি আমার পাশে থাকবে তো! কখনও আমাকে ধোকা দিয়ে চলে যাবেনা তো তুমি? তোমার জন্য আমি সমস্ত কিছু করতে... পারি। শুধু তুমি যেন আমার থেকে দূরে সরে যেওনা।

এমন সব প্রশ্নের কি উত্তর হয় হে সর্বপ্রেমময় পুরুষ প্রেমী পুরুষ তা সবই তোমাদের জানা। আমি তাকে সেই মুহূর্তে উত্তর করি –‘তুমি যদি না যাও আমি তোমার প্রেম ছেড়ে কখনই যাবো না। বাতাস যেন মধু মন্থন করলো এই যুগলের। খুশি হল প্রকৃতি। নব চেতনায় মুখরিত হল চার দিক। নতুন প্রেমপর্বের সূচনা হল এই চিরাচরিত পৃথিবীর বুকে। যে প্রেমে কোন মোহ নেই কোন ক্ষুধা নেই ঋপুর ধারক, ঋপুর বাহক সেই প্রেমধর্মে অধিকার কেবল অঞ্জলিব্রতপ্রেমিক প্রেমিকার।

ভাগীরথীর জল হতে দলা দলা শিশির ধোয়া ধেয়ে আসে আমাদের দিকে। ওপারে ভেসে ওঠে সাদা আলো। অমির স্বপ্ন সে টিভিতে খবর পড়বে। কোন এক দিন পড়বেই। কিন্তু তার পরিবারে বাঁধা। কারণ বর্ধিষ্ণু পরিবারে বড় হয়েছে মেয়ে। বিয়ে দিতে হবে। আর এই ঘরের মেয়ে কখনই কোনদিন এমন কাজ করবে তা ভাবাই পাপ। সৎ চরিত্রবান মেয়ে সরলতায় মোড়া চুলের ডগা থেকে নোেখ। আর ইচ্ছা যে ইচ্ছা পূরণ করা খুব সহজ হয়। এই ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামাজিক কোন আইন এই বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনা। অতএব সে টিভি তে খবর পড়বেই। তা যে কোন ভাবেই হোক । তার জন্য পরিবারে বাবার সঙ্গে নিত্যদিন বচসাও হয়। আমার কপাল বেয়ে তার নরম হাতের আঙুলগুলি স্পর্শ করে ছোট্ট ছোট্ট চুলে। নরম আঙুলের নোখ দিয়ে বিলি কেটে দেয় সেই। ভাগীরথীর জলের দিকে দু'জনে শপথ নেয় যে-যত কষ্টই হউক কেউ কাউকে কোন দিনই ভুল বুঝবোনা। একে অপরকে ছেড়ে কোন দিনও যাবোনা। কখনওই না, কোন দিনও না। তার শরীরে ঢাকা চাদরটি আমার শরীরও ঢেকে নেই। এক চাদরের ভেতর উঠতি যুবক যুবতি। আমার বুকের ভিতর মাথা গুঁজে বিড় বিড় করে কি যেন বলতে থাকে। আর তখনই শরীরের বয়ে চলা রক্তস্রোত ভাগীরথীর বয়ে যাওয়া জলের মত কলতান তোলে। রাস্তার ভেপারের আলো যে ভাবে ধিরে ধিরে হিট তৈরী করে আলো প্রদান করে ঠিক যেন সেভাবেই আমার শরীরে আলো জেগে উঠছে। এখন আমার শরীর সকালের উদিত সূর্যের তেজের মত ক্রমশ বেড়ে চলেছে মধ্যাহ্নে প্রহরে। জানিনা তার কীরূপ অনুভূতি তবে এটুকু বুঝতে পারছি। কোন এক খালি পাত্র খানি জল ঢেলে পূরণ করতে চাই। যেমন ফাঁকা কলসি জল পূর্ণ হলে তার আত্মতৃপ্তি ঘটে। মরা নদীতে জল এলে যেমন খুশীতে ভেসে ওঠে। ফাটা পুকুরগুলি যে ভাবে জল পেলে বেঁচে ওঠে। বারি বর্ষণ হলে ধরা যে তৃপ্তি যে আনন্দ লাভ করে। ভীষণ খরায় তৃষ্ণার্ভ প্রাণের খালি অংশ জল দ্বারা পূর্ণ করে আনন্দ উপভোগ হয়। পূর্ণিমার আলোর মত তার শরীরে জেগে উঠেছে শরীরীবাহার।

চোখে-চোখে, মুখে-মুখে, বুকে বুকে, কিছু ক্ষয়ের জন্য একে অপরের নিবিড় সান্নিধ্য লাভ। দুটি মনে, দুটি প্রাণে, দুটি দেহে, জাগিয়ে তোলে আনন্দহিল্লোল। চোখের তারায় নামে সুখের বিহ্বলতা। শ্বাস প্রশ্বাসে ছড়িয়ে পড়ে পারিজাতের সৌরভ...। দুই ভিন্ন লিঙ্গ ক্রমশই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় শরীরের সমস্ত অঙ্গের বিষ তুলে। শরীরের বয়ে চলা শূন্যবলয়ের ক্ষিপ্ত সমুদ্রের সমস্ত ঢেউ সামলে, অমি কে বলে উঠি-‘এবার আমাদের বিয়েটা সেরে ফেলা উচিৎ। আমি আমার বুকের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়।' বলে ওঠে-'আমার পরিবার কিছুতেই মেনে নেবে না!” –চলনা আমরা দুজনে মিলে কিছু একটা উপায় খুঁজে বার করি। এক কাজ করি আমরা দু'জনেই তোমার বাবা-মা কে আমাদের

সম্পর্কের কথা বলি।

-না তা হয়না। বাবা তাহলে আমাকে আর এখানে রাখবেনা।

এক চা ওয়ালা চা...! চা...! করে হাঁক ছাড়তে ছাড়তে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ভেপারের আলোয় চা-ওয়ালার মুখটা ভেসে উঠতেই তা দেখে চাদরে মুখ ঢাকে অমি। আমি জিজ্ঞাসা করি – “কি হল। চা ওয়ালাকে দেখে এমন করে মুখ ঢাকলে যে?? ফিস্ ফিস্ করে বলে উঠল- এই চা কাকুটা আমাদের বাবাদের অফিসে চা বিক্রি করতে যায়। ও আমাকে ভালো ভাবে চেনে। আর এ ভাবে দেখে ফেললে বাবাকে কাল বলে দেবে।

এভাবে প্রতিদিন কি ভাবে যে নটা বেজে যায় দু'জনে বুঝতেই পারিনা। সেদিনের মত ভাগীরথী, ভাগীরথী ঘেষে বয়ে চলা রাস্তা, ছাতিমগাছ, ভেপারআলো, স্নিগ্ধ বাতাস, মনমুগ্ধ জ্যোৎস্না, ছাতিমজোনাকি, দল বাঁধা কুয়াশাকে বিদায় জানিয়ে উঠে পড়ি। এক হাতে সাইকেল আর এক হাতে অমির হাত পথ চলছি। ওকে ওর মেসে পৌঁছে দিয়ে আমি এগিয়ে যেতে যায়। তখনই ওর গায়ের চাদরটি আমাকে দিয়ে বলে এটা ঠিক ভাবে গায়ে জড়িয়ে তারপর যাও। আর কাল থেকে এভাবে শীতের পোষাক না নিয়ে বেড়বে না। হৃদয় প্রিয়া মানে প্রেয়সীর কথা আমি কি ভাবে ফেলি—“যো আজ্ঞা ম্যাডাম!” ও মেসে চলে যায়। আমি ইন্দ্ৰপ্রস্থে গৌতমের চায়ের দোকান হয়ে ঘরে ফিরি। দরজার কাছে এসে সাইকেল থামিয়ে ঘরের তালা খুলতেই কুকুরের বাচ্চাক’টি তার মাকে সঙ্গে নিয়ে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে হাজির। কেউ...কেউ... করতে থাকে । পাচেটে আদর করে। কেউ প্যান্ট কামড়ে আবার কেউবা দু’পা উঠিয়ে দেয় গায়ে। কুঁ... কুঁ...! করতে থাকে। ঘরে ঢুকে বয়াম থেকে কয়েকটি বিস্কুট তাদের ছুঁড়ে দিই তারা মহা আনন্দে, খুশি হয়ে সেগুলি কাড়া কাড়ি করে খাচ্ছে।

এমন ভাবেই দিন কাটে। মাস যায়। অমি'র খবর পড়ার সুযোগও হয়ে যায়। ভুল বোঝাবুঝির কারণে, কাজ কৰ্ম্ম নিয়ে মাঝে মধ্যে মন কষাকষি। ফোনে একাধিক বার বচসাও বাঁধে। ও অফিস থেকে বেড়িয়ে এলে পায়ে পায়ে পথ চলি। একদিন চোয়াপুর সেরিকালচারের ভিতর দিয়ে দু'জনে হাত ধরে আসছি। এমন সময় আবদার করে সরকারী চাকুরীর কথা উল্লেখ করে অমি। আমার মুখ থেকে আনন্দ হাসি দেখে খুশিও হয়। বচসার রেশ থেকে যায়। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনেরও পরিবর্তন ঘটতে থাকে তার। ফেলে আসা স্মৃতি গুলি অমিকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। ব্যর্থ হই। আমি এখনও বেকার তবুও পূর্ণপ্রেমিকপুরুষ তার জন্য চকলেট কিংবা বিস্কুট, কেক ইত্যাদি নিয়ে যেতে ভুলি না। একদিন অমি বলে ওঠে-“ এসব এনে মায়া সৃষ্টি করবার চেষ্টা করছো!

আকাশ ভেঙে পড়ে মাটিতে। তার কথার ধাক্কায় বুকের পাঁজড় ছেড়ে যায়। খুব কষ্ট পাই, বুঝতে দিইনে। মনে মনে ভাবি আর প্রার্থনা করি হে বিধাতা ওর শুভ হোক। ওর জীবন রঙিন স্বপ্নে ভরে উঠুক, ওর যাতে আনন্দ লাভ হয় ও তাই করুক । ওকে কখনও কষ্টে রেখোনা প্রভু। ওর কষ্ট যদি হয় তাহলে তোমার সাথে আমার হবে। এই সমস্ত কথা ভাবতে ভাবতে ঘরে ফিরি। সেই সমস্ত নিশুতি জাগা কুকুরগুলি আমাকে সঙ্গ দেয়। অঝর অশ্রু আর হৃদকাপা বদ্ধ কন্ঠস্বর আমাকে প্রবল ধাক্কা মারতে থাকে । সেই ধাক্কা খেতে খেতে সাইকেলটা থেকে নেমে ঘরে ঢুকে বয়াম থেকে কয়েকটা বিস্কুট নিয়ে এসে রাস্তায় ছড়িয়ে দিই। তারা মহা উল্লাসে কাড়াকাড়ি করে খেতে থাকে।

হঠাৎ জীবনে ঝড় ওঠে, অমি’র ক্ষোভ অভিমান। সমস্ত প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে এখন অন্য পথ দিয়ে হেঁটে যায়। আমার পথ আর ওর পথ এখন আলাদা। ও সরকারী চাকুরীর... খোঁজে...। আর আমি অমির খোঁজে একে অপর দিকে হারিয়ে যায়। দিন কাটে মাস কাটে বছর ঘুরে যায়। অমির আর ফোন আসে না। অমি আর চুলে বিলি কাটেনা। আমি আর সেই আদুরে ভাষা দিয়ে বুকে টানেনা। কিন্তু, সেই কুকুর গুলি এখন যুবক। কয়েকটা কুকুর রোগে ক্ষুধার জ্বালায় মারা গেলেও যে কুকুরটি জীবিত ছিল সে প্রতিদিনই আমার দরজার সামনে সে কেউ... !কেউ...! করে ডাক ছাড়ে আর আমি দরজা খুলে বয়াম থেকে বিস্কুট বার করে দিই। সে উল্লাসে মহাআনন্দে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে কুরমুর করে চিবিয়ে যায়...।
@@@@@@@
কুকুরটা @@@

২৯ জানুয়ারী ২০২২

শ্রীমতী সুপর্ণা চ্যাটার্জী'র মুক্ত্যগদ্য




অতিমারির ইতি

শ্রীমতী সুপর্ণা চ্যাটার্জী


                                   শৈশব,কৈশোর ও যৌবন পেড়িয়ে যখন অবসরের প্রাক্কালে তখন এক ভয়ংকর অতিমারি ‘করোনা ভাইরাস’ এর আবির্ভাবে কোভিডের স্বীকার আমরা সবাই।।সারা বিশ্ব আজ জর্জরিত। গবেষণা করে জানা গেছে এ এক ভাইরাসজনিত অসুখ।পৃথিবীর জনংখ্যা কমানোর জন্য এ এক আধুনিক ব্যবস্থা বিশ্বের সবকটি স্বাস্থ্যসংস্থার যৌথ উদ্যোগে।আজ প্রায় দুবছর যাবৎএই মারণ রোগের কবলে ধনী দরিদ্র সকলে। 
       সারা পৃথিবীতে বিপুল সংখ্যক মানুষের সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীবৃন্দ আজ অসহায় ও মৃত্যুমুখী।কে কাকে দেখবে। এর আবার তিনটি ভেউ।প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে হারাতে হলো কত প্রিয়জনকে সারা বিশ্ব জুরে। আর এখন যখন তৃতীয় ঢেউ চলছে তখন আবার সেই একই আতঙ্ক সকলের চোখে মুখে। 
   বহু গেষণাও এর উৎস সন্ধানে ব্যর্থ। তবে উপায় একমাএ লকডাউন। কিন্তু তাতে সারা দেশের অর্থনীতিতো একেবারেই ভেঙে পড়ছিল। এমতাবস্থায় মানুষ মরিয়া হয়ে উঠল। সকল বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কিছু অসচেতন মানূষ সম্পূর্ণ পঙ্গু করে ফেলল। তাই সরকারি ও বেসরকারি তরফে প্রচার শুরুহলো এ রোগের চিকিৎসা বাড়িতে থেকেই সম্ভব।কারণ হসপিটালে বেড খালি নেই। নিজেকে একেবারে নির্বাসন দেওয়াই একমাএ সুস্থ্য হয়ে ওঠার অবলম্বন।
    আসলে একটা চলতি কথা আছে, যার যায় তার যায় মানুষ করে হায় হায়।আসল সত্যটা যে কী তা না জেনে না বুঝে আমরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছি,শুধু বাঁচার তাগিদে।
      শুধু যদি মাস্ক পড়লে,দূরত্ত বজায় রাখলেই এর মারণ ভাইরাসের হাত থেকে যদি রক্ষা পাওয়া যেত তাহলে তো যারা একেবারেই বাড়ি থেকে বেরোয় না,পরিবারে কত্তা গিন্নী দুজন,তারা কেন আক্রান্ত হচ্ছে?
     সত্যই এ এক বড়ো জিজ্ঞাসা।আবার এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয় যারা যাযাবর,পথেই যাদের জন্ম,মৃত্যু ও বেঁচে থাকা কোই তাদের মুখেতো মাস্ক নেই, সামাজিক দূরত্ত্বের ধার ধারেনা তাহলে তারা কিভাবে এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে!!
    সত্যই এই দুইয়ের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। সমগ্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আমার একটাই আবেদন, সারা বিশ্বের জন সংখ্যা হ্রাসই যদি তাদের একমাএ উদ্দেশ্য হয় তাহলে মানুষকে এতো যন্ত্রণা না দিয়ে এমন কোনো ওষুধ আবিস্কার হোক যা সেবন করলে বয়স্ক এবং মধ্যবয়স্ক মানুষ স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারে যাদের প্রয়োজন সমাজের কাছে একপ্রকার ফুরিয়ে গেছে।তাহলে অন্তত আগামী ভবিষ্যতে আমাদের বতর্মান প্রজন্ম নির্ভয়ে বাঁচার পথ খুঁজে পাবে।আর আরও নতুন নতুন গবেষণার দ্বারা এই মারণ ভাইরাসকে পৃথিবীর বুক থেকে একেবারে  নিশ্চিহ্ন করে এক নতুন পৃথিবীর জন্ম দেবে। আশা করি এই ত্যাগ স্বীকারের জন্য আমাদের মতো মধ্যবয়স্ক ও পূর্ণ বয়স্ক প্রতিটি মানুষই যারা আজ দাদু ঠাকুমা,দিদিমার আসনে অধিষ্টিত সকলেই রাজি হবেন।
   

২৪ জানুয়ারী ২০২২

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা



আমাদের কোন বসন্ত নেই

রুকসানা রহমান


আজ বসন্তেরজোয়ারে হলুূূদ আর লাল আবিরের প্রজাপতির ঢেউএর মিছিল শহর ময়। 
আর ঐ -ফুটপাতের মেয়েটি মাকে বললো ওরা একটা ফুল দিলোনাগো মা। 
মাথায় হাত রেখে বলে -ঐদিকে  তাকিওনা,এই যে দেখছো আকাশ
 সেই ছাদের নীচে ধুলো মাটি আবর্জনা আমরা
আমাদের আকাশের রঙ নেই,স্বপ্ন নেই। 

ওদের সাথে আকাশ আর মাটির মতন দুরন্ত
 ঐযে চাঁদ, ওটা ও ফ্যাকাসে আত্মার আলো নেই।

 এই শহরের, ঝলমলে রাতের শহর ও অন্ধকার  ঐযে দেখছো, ভদ্রলোক যারা
আমাদের ঘৃণা করে ওরাই রাতের আঁধারে নারী খেকো হায়না।কখন যে তোকে আমাকে ছিঁড়ে খাবে তাও জানিনা।
আমাদের সম্বল শুধু নিংশ্বাস।
তাই আমাদের জীবনে কোন বসন্ত কোনদিন আসবেনা।

কবি মীরা সুলতানা'র কাবিতা




আধখান শশ
মীরা সুলতানা 

দিগন্তে বালিয়ারীতে হেঁটে যায় সতর্ক পা চোরাবালির নিমগ্ন  হাতছানি দিগন্ত জোড়া

সৌরকিরন  ভরে রাখে  বুক পকেটে 
আহ্লাদী জ্যোৎস্নায় গা ভাসিয়ে কেউটেরা আনন্দ খুঁজে!

একাকী রাতের প্রহর তাঁরা অবিচল     স্তব্ধতায় খাবি খায় ষোড়শী ঢল!

সামুদ্রিক  ফেনা রাশির  ধেয়ে আসা ঘাম
শুদ্ধতার প্রমান নিয়ে  এলো নীল খাম। 

মায়াবী আকাশের ভেজা ঠিকানায় 
আদ্রতা শুষে নেয়া ডাকপিয়ন, নিমিষে  পৌছায়;
 
মধ্য বয়সী নারীর হৃৎপিন্ডে বুলেট বিঁধে কাঁপে থরথর ,
করতলে ধীর পায়ে হেঁটে চলে  কুয়াশা যাযাবর। 

 পৃথিবীর  বুক ঘেষে বয়ে চলা এক সরীসৃপ পাল,
 কস্মিন কাল ছুঁয়ে বয়ে আসে এক অতীত মহাকাল! 

কেউটেরা স্বর্বেস্বর্বা সর্ব জ্ঞানী, মহাঋষী
আঙ্গুলের ফাঁক  গলে  উঁকি মারে  আধখান শশী ।

কবি নীলাঞ্জন কুমার এর কবিতা




অভাব 

নীলাঞ্জন কুমার 

অভাবের ভেতর থেকে যদি 
জমে ওঠে হতাশা 
তবে নিঃস্ব হওয়ার চিত্রকলা 
চোখের সামনে ভেসে ওঠে ।


অভাবী জীবন নিয়ে আমাকে 
কেউ কোন কথা বলে না।
শুধু ছুঁয়ে থাকে চোখ বাসনায় 
যা অবলীলায় ধরা পড়ে যায় ।




উপন্যাস 


টানাপোড়েন৯৮

দুঃসহ আঠারো বছর

মমতা রায়চৌধুরী


নদী অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে মায়ের কেবিনের দিকে তাকিয়েছিল, কখন ডাক্তারবাবু বেরোবেন একটা মনের ভেতরে অশান্ত উদগ্রীব কাজ করছিল ।  তবে  যাই করে থাকুন না কেন মায়ের এই কন্ডিশনে উনি তো পাশে আছেন ।আজকে আর কোনো বিরক্তি, ঘৃণা কিছুই নেই ,লোকটার প্রতি ।আজকে শুধু মনের ভেতরে একটাই প্রতিক্রিয়া তার মায়ের সুস্থ হওয়া।
হঠাৎই ডাক্তারবাবুর কথা কানে আসলো মিস্টার মালহোত্রা জিজ্ঞেস করলেন  'কী বুঝছেন ডাক্তারবাবু?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'আপনাদের তো আগেও বলেছিলাম যে ঠিক আছে, উনাকে এখন টেনশন মুক্ত রাখুন ।কোন অবস্থাতেই যেন কোনো টেনশন না কাজ করে ,হাসি খুশিতে রাখুন আর আমরা তো নার্সিংহোমে রয়েছি..।'
মিস্টার মালহোত্রা বললেন ' এবার কী আমরা ভেতরে ঢুকতে পারি?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'অবশ্যই পারেন তবে এক সঙ্গে কেউ জটলা করবেন না?'
 মালহোত্রা বলেন' থ্যাংক ইউ ডাক্তারবাবু।'
মিস্টার মালহোত্রা ডাক্তার বাবুর সঙ্গে কথা বলার পর প্রথমে তিনিই এগোতে লাগলেন মায়ের কেবিনের দিকে।
নদী  সব দেখতে লাগল। কিন্তু আজ যেন নদী প্রতিবাদ করতে পারলো না  ।নদীর প্রতিবাদী হওয়া উচিত ছিল ,সেই প্রথম মায়ের কাছে যাবে বলে ।কিন্তু আজকে  সমস্ত বিরক্তি, রাগ , দ্বেষ, ঘৃণা, আক্রোশ, কোথায় ধুলিস্যাৎ হলো ?শুধু মনের ভেতরে রয়ে গেল মায়ের জন্য শুভকামনা।'

মিস্টার মালহোত্রা কেবিনে একা ঢুকেছেন ।মায়ের সঙ্গে কি কথা হচ্ছে ,নদী সেসব ভাবতেই চাইল না।
তারপর নদীর বন্ধুরা বলল' হ্যাঁ রে, নদী ,আমরা তাহলে চলি । আন্টি তো আগের থেকে ঠিক আছেন। কালকে খোঁজ নেব কেমন থাকেন না থাকেন।
 বন্ধুরা সবাই বলল' 'প্রয়োজন হলে ডাকিস কেমন, কোন দ্বিধা করিস না?'
এরমধ্যে বন্ধুরা ফিসফিস করে কথা বলতে লাগলো, যেটা নদীর কানে আসলো ।
রথীন বলল ' হ্যাঁ রে মালটা কে রে আন্টির কেবিনে ঢুকলো?'
তীর্থ বলল 'আরে বাবা, আন্টি যে অফিসে কাজ করেন ,সেই অফিসের বস।'
প্রত্যেকে কেমন যেন একটা আলাদা ইঙ্গিতে হেসে উঠলো। সমুদ্র অবশ্য ওদের কথায় কোন রেসপন্স করে নি।
নদীর কানটা যেন গরম হয়ে উঠলো কথাগুলো শুনে কিন্তু তারপরও নদী যেন কেমন নিষ্প্রাণ,নির্বাক হয়ে রইল। তার ভেতর থেকে যেন কোন কথা বের হয়ে আসলো না।
রথীন তীর্থ সবাই সমুদ্রকে বলল  'কিরে তুই কি এখনো তীর্থের কাকের মত বসে থাকবি?'
সমুদ্র কি বলতে যাবে তার আগেই রথীন বলে উঠলো 'না না তুই একটু থাক। আমরা এগোতে থাকি ।একটা অদ্ভুতভাবে হেসে উঠলো।'
নদীর এ কথাগুলো হজম করতে বেশ সময় লাগলো।
সমুদ্র রথীনদের উদ্দেশ্যে বলল  'আমিও তো যাবো ,ওয়েট কর না একটু।'
সমুদ্র নদীকে বলল  'আমি চলে যাব নদী ,নাকি থাকবো ?
তোকে বাড়ি পৌঁছে দেব?'

নদীর মনে মনে তার বন্ধুদের কথা ভাবছিল এরা তার প্রকৃত বন্ধু না। এরা প্রকৃত বন্ধু হতে পারে 
না ।সাময়িক হতে পারে। যদিও সমুদ্র ওদের থেকে অনেকটাই আলাদা। সমুদ্রর খামখেয়ালিপনা রয়েছে ভেতরে। মাঝে মাঝে বড্ড
ছেলে মানুষি কাজ করে ফেলে সমুদ্র।
নদী শুধু একটুখানি হাসল সমুদ্রের প্রতি আর মনে মনে ভাবল,তবু সমুদ্রের ভেতরে একটা সরলতা আছে।
নদী শুধু ঘাড় নেড়ে  সম্মতি জানালো ।
এর মধ্যেই ঝরনা মাসি বলে ওঠে' মামনি ,মামনি , আমরা কিসে ফিরব?
নদী কেমন অবাক হয়ে যায় ।কিসে ফিরবে মানে, অ্যাম্বুলেন্সে এসেছিলে তো?
ঝর্ণা বললো' হ্যাঁ?
নদী বলল 'হয় কোন ট্যাক্সি ধরব, না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে যেতে হবে।'
এরমধ্যে মিস্টার মালহোত্রা বেড়িয়ে আসলেন।
মিস্টার মালহোত্রা বললেন 'নদী তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবে?'
নদী শুধু ঘাড় নেড়ে তার মতামত জানাল।
মিস্টার মালহোত্রা বলল ' ঠিক আছে যাও। তুমি গিয়ে তোমার মাকে দেখে এস আর তোমাদের বাড়ি ফেরার জন্য একটা গাড়ি বলে দিচ্ছি কেমন?'
নদী শুধু ঘাড় নাড়লো আরেকটু ম্লান হাসলো।
মিস্টার মালহোত্রা বেরিয়ে গেলেন যাওয়ার সময় ঝর্নাকে বলে গেলেন আপনাদের জন্য গাড়ি ওয়েট 
করবে। আপনারা বাড়িতে চলে যাবেন।'
 ঝরনাও ঘাড় নাড়লো 
মিটার মালহোত্রা চলে যাওয়ার দিকে ঝরনা আর নদী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।
 ঝর্না এবার নদীকে কাঁধ ধরে ঝাঁকালো ', চলো, চলো মামনি, তোমার মায়ের কাছে।
নদীর যেন চমক ভাঙ্গলো তারপর বলল 'হ্যাঁ, মাসি চলো।'


ঝরনা আর নদী পর্দা সরিয়ে কেবিনের ভেতরে ঢুকলো।
নার্স বললেন' বেশি কথা বলবেন না আর আপনারা একসঙ্গে দুজন ঢুকলেন কেন?'
ঝরনা আর নদী রুপসার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
কেবিনে ঢুকতেই নাকে একটা মৃদু ওষুধের গন্ধ কেমন যেন একটা নীল চাদরে ঢাকা রূপসার লম্বা গোলাপি ফর্সা শরীর বিছানায় যেন অসহায় নিষ্প্রাণ। জানলার দিকে মুখ করে আছে।
কেবিনে ঢুকে ঝর্ণা বললো' বৌদি, ও বৌদি?'
রুপসা মুখ ফেরাল ঝরনা আর নদীর দিকে।
ঝরনা আর নদীকে দেখে রুপসা হাসার চেষ্টা  করলো
ঝর্ণা বললো 'এখন কেমন?'
রুপসা ঘাড় নেড়ে জানাল একটু ভালো।
রূপসা নদীর দিকে তাকিয়ে। নদী মায়ের দিকে তাকাতে পারছে না। কেন যে সেদিন মাকে এতগুলো কথা বলতে গেল নদী এটাই বারবার ভাবছে।
রুপসা ঝর্ণার দিকে ইঙ্গিত করল মেয়েকে কাছে আসার জন্য।
ঝর্ণা বললো' মামনি, মায়ের কাছে
 যাও । একটু  বসো মায়ের কাছে।'
ঝর্ণা নদীকে হাত ধরে টেনে মায়ের কাছে বসালো।
নদী মায়ের কাছে বসলে রুপসা নদীর হাত দুটোকে চেপে ধরল।
নদীর দুচোখ বেয়ে তখন জল পরছে। নদী শুধু বলল _ব্যাথাটা এখন কম?'
রুপসা একটু অন্যমনস্ক ভাবে ঘাড় নাড়ল।
রুপসা তখনও নদীর হাতদুটো বুকের কাছে নিয়ে আছে। রুপসা কেমন অসহায় ভাবে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। নদী মাকে দেখার পর কেমন যেন একটা অনুভুতি হল।
নদীর চোখে জল দেখে রুপসা হাত দিয়ে জল মোছার চেষ্টা করল।
নদী মায়ের হাত দুটো চেপে ধরল। এই দুটো হাত পরস্পর পরস্পরের কাছে এতটাই চেপে বসে আছে যে অসহায় দুটো জীব যেন পরস্পর পরস্পরের কত কাছে একে অপরের ভরসার পাত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
নদী মায়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল ' একটু বেটার?'
রুপসার যেন মনে হলো তার গোটা আকাশটা তার ওইটুকু মেয়ের 
ভেতরে ,সেটাই হাতের মুঠোয় ধরার চেষ্টা করতে লাগলো। তার ওইটুকুই আকাশের ফালি নিয়ে সে সারাটা জীবন বাঁচতে চায়।
রূপসার ভেতরে যে মেয়েকে নিয়ে ভয়ের একটা আলোড়ন তৈরি হয়েছিল, একটা যন্ত্রণা সেটা দাঁতে  ঠোঁট কামড়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিল।
আর নদী ও তার চোখের সামনে দেখতে পেল তার সামনে রাখা ক্যানভাসে মায়ের অভিব্যক্তি যেন একটা দুটো রঙের
 আচড়কাটছে, তুলিতে ধরা দিতে
 চাইছে। সে আছে তার মায়ের ,মা আছে তারই সঙ্গে ।দুটো চোখ একে অপরের দিকে পলকহীন । কোন নেশা তার বুকের ভেতরে চেপে বসেছিল মাকে না মানার। 
মনে পড়ে যায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা লাইন
'' আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ,
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি।
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ,
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয়উঁকি।
আঠারোবছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা  নোয়াবার নয়।
হয়তো এই বয়সের জন্য এসে করেছি ভুল মায়ের প্রতি বিশ্বাস আস্থা সব এক নিমেষে হয়েছিল বিলীন।
তাই আজ মাশুল দিতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে শুধু মাকে হারানোর ভয়। দুচোখ তাই জলে ভরে ওঠে। চোখের ভাষাতে সেকথাই সে বোঝাতে থাকে।
রুপসা মেয়ের চোখের ভাষা বুঝতে পারে তাই মেয়েকে তার বুকের কাছে টেনে নিতে চায়। তাই আচমকাই নদীর বুক যেন হুহু করে ওঠে ।নিজের খেয়ালে 18 বছরের  নদী একটা খেলা খেলতে চেয়েছিল ।আজ তাই তার বুকে বুমেরাং হয়ে গেছে ।তাই নির্ভয়ে চোখ শুধু বিশ্ব ঘুরে এসে দেখছে তার কাছের , ভরসার  শৈশবের সেই মাকে খুঁজে পেতে চাইছে।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬





ধারাবাহিক উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
মনি জামান
(পর্ব ছয়)

আজ সকাল থেকেই যেন মেঘের আনা গোনা গোটা আকাশ জুড়ে,নিলয় মেবিন আর চারু সকালের নাস্তা সেরে নিয়েছে। চারু ড্রাইভার কে ফোন করলো গাড়ি বের করতে,তারপর মেবিন ও নিলয়কে গুছিয়ে নিতে বলে চারু নিজের রূমে চলে গেল।একটু পরে ওরা তিনজন নিচে নেমে এলো ড্রাইভার অপেক্ষা করছিল ওরা এলে গাড়ির দরজা খুলে দিলো সবাই গাড়িতে উঠে সীটে বসে বেল্ট পরলো,ড্রাইভারঃ আপুমনি কোথায় যাবেন,
চারুঃ মার্কেটে যাব।
গাড়ি স্টার্ট হলো এবার চলতে শুরু করল প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি মার্কেটে এসে পৌছাল,নিলয় মেবিন আর চারু গাড়ি থেকে নেমে চারুঃ নিলয় এসো ভিতরে ওরা মার্কেটের ভিতরে একটি দোকানে গিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলো তারপর বাইরে বেরিয়ে এলো তিনজন, তখন আকাশ মেঘে অন্ধকার হয়ে আছে মাঝে মাঝে বিকট গর্জন করছে আকাশ।
চারুঃ মেবিন আকাশের অবস্থা খুব খারাপ চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি,
মেবিনঃ চল ঝড় বৃষ্টি হতে পারে,আকাশের অবস্থা খারাপ দেখে ওরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলো,ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল আধাঘণ্টা পর ওরা বাসায় ফিরে এলো।তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে বিদ্যুত্ চমকাচ্ছে আর বিকট শব্দে বজ্রপাত হচ্ছে।বাসায় এসে ওরা তিনজন ফ্রেস হয়ে ওয়েটিংরুমে গল্প শুরু করলো,আজ যেন কোথাও হারিয়ে যেতে মানা ওদের।
আস্তে আস্তে মুসুল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো প্রায় দুই ঘন্টা মত বৃষ্টি হয়েছে ওরা আজ আর কোথাও বেরুতে পারলো না।
দুপরের খাবার খেল সবাই আকাশ একটু একটু ভালোর দিকে যাচ্ছে,কিছুক্ষণ পর আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল।
চারুঃ যাক অবশেষে আকাশ ভালো হয়ে গেল এবার চলো আমরা সমুদ্র সৈকত দেখতে বেরোয়,
মেবিনঃ হ্যাঁ চল বলে ওরা তিনজন যার যার রূমে গিয়ে সব গুছিয়ে নিতে নিতে প্রায় দুইটা বেজে গেলো,ড্রাইভার এলো গাড়ি নিয়ে ওরা তিনজন গাড়িতে উঠলো।চারুঃ ড্রাইভারকে বলল সমুদ্র সৈকত যাব আপনি গাড়ি ছাড়েন,ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগলো ওদের সমুদ্র সৈকতে পৌছাতে।গাড়ি থেকে নেমে ওরা হাটা শুরু করলো সমুদ্র সৈকতের বালুর উপর দিয়ে হালকা হালকা ঢেউ এসে যেন ওদের পা দুটো ছুঁয়ে দিয়ে গেলো।
চারুঃ মেবিন তুই আর নিলয় তোরা ঘুরে দেখ আমি কিছু কিনে তারপর আসছি বলেই হন হন করতে করতে অন্য প্রান্তে চলে গেলো।
নিলয় মেবিনের হাতটা ধরে হাঁটছে খালি নগ্ন পা ওদের দুজনের অন্যরকম এক অণুভূতি হচ্ছে আজ দুজনের ভিতর,সমুদ্রের পাগলা হাওয়া ওদের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে কখনো বা দুর্বার গতিতে ধেয়ে আসা সমুদ্রের বিশাল ঢেউ ওদের পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, অপূর্ব সুন্দর মূহুর্তটা দুরে ঝাউ বন যেন সবুজ বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে।
জল কবুতর আর গাঙচিলের আনা গোনা অদ্ভূত ভালো লাগার একটা পরিবেশ
ওদের দুজনকে আড়োলিত করলো, সমুদ্রের গর্জন আর একটার পর একটা ঢেউ আচড়ে এসে পড়ছে,
মেবিনঃ নিলয় তুমি আর এই সমুদ্র আমার কাছে এক মনে হচ্ছে,
নিলয়ঃ কেমন সেটা কাক পাখি।
মেবিনঃ তুমি যেমন আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষ তেমনি এই সমুদ্রটাও আমার কাছে আজ খুব প্রিয় লাগছে,
নিলয়ঃ একগাল হেসে তোমার দর্শনটা ভালো দেখো আবার যেন দার্শনিক না হয়ে যাও।
আজ সকালের বৃষ্টি শেষে আকাশটা লাল আভা ছড়াচ্ছে অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজকের সমুদ্র সৈকতের বিকেলটা,
নিলয় আর মেবিন হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র সৈকতে একটা সি বেঞ্চে বসলো দুজন। সমুদ্র জয়ের উন্মত্ত বাসনায় গাঙচিলের উড়া চলা সারা সমুদ্র জুড়ে,এটা নিলয় আর মেবিন অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।
একের পর এক ঢেঁউ আছড়ে পড়ছে ওদের পায়ের উপর,যতদুর ওদের দৃষ্টি প্রসারিত হচ্ছে ততো দুর শুধু দেখতে পাচ্ছে সমুদ্র আর ঢেউ যেন এক সাথে মিলে মিশে একাকার।
আকাশ আজ গোধূলি রঙ ছড়াচ্ছে নিজের মত করে,সমুদ্রের নীল জলরাশি আজ ভয়ানক উত্তাল এক একটি দানব যেন ঢেউ হয়ে ধেয়ে আসছে তীরের দিকে।
অদ্ভূত রোমাঞ্চ জাগিয়ে দিচ্ছে নিলয় আর মেবিনকে,পরস্পর গা ঘেঁসে বসে আছে ওরা দুজন আর সমুদ্রের নোনা জলের স্পর্শ মাখছে দু'পায়ে।
হঠাৎ মেবিন দেখতে পেল কি যেন একটা লাশের মত ভাসছে ঢেঁউয়ের সাথে এবং ওদের দিকে ভেসে আসছে।
মেবিনঃ নিলয়কে ডেকে বলল এই দেখ ঐ যে ওটা কি?নিলয় মেবিনের আঙুল অনুসরণ করে ভাল করে লক্ষ করে দেখে বললঃ মনে হয় এটা কোন মানুষের লাশ।ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে ওরা যেখানে বসে আছে ঠিক তার সামনে এসে বালুর উপর আটকে পড়লো লাশটা,নিলয় ভাল করে খেয়াল করে দেখে মেবিনকে বললঃ এটা একটা বিশ পঁচিশ বছর বয়সী একটা মেয়ের লাশ হবে,লাশটা এখনো প্রায় অক্ষত কিন্তু ফুলে গেছে কিছু কিছু জায়গায় পচন শুরু হয়েছে,কোথাও কোথাও খুবলে খেয়েছে জলজ মাংসাশী কোন প্রাণীরা।
মেবিনঃনিলয়কে বলল কি জানি কোন হতভাগী কোন মেয়ের লাশ হবে হয়তো এটা,কোন নির্যাতন সইতে না পেরে হয়তো আত্মহত্যা করেছে অথবা যৌতুকের বলি হয়ে হয়তো কোন পাষণ্ড স্বামী হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
নিলয় বললঃ হয়তো হবে তবে এই মৃত লাশ দেখে আমার আজ একটি কাহিনীর কথা খুব মনে পড়ছে,আমি দৈনিক কাগজে পড়েছিলাম খুব মর্মান্তিক ছিল সে কাহিনী।
মেবিনঃ তাই!বলো কি সেই কাহিনী আমি শুনবো,
নিলয়ঃ ঠিক আছে বাসায় ফিরে বলবো,
মেবিনঃ না এখন বলো আমি শুনবো,
নিলয়ঃ পরে এক সময় তোমাকে সব বলবো। 
কিন্তু মেবিন নাছোড়বান্দা সে কাহিনীটা শুনবেই,
নিলয়ঃ এই কাক পাখি এই জন্য তোমাকে আমি কাক পাখি বলি,বলছি তো বাসায় যেয়ে সব বলবো।
মেবিনঃ অভিমানের সুরে বলল ঠিক আছে আমি আর শুনবো না তোমার সেই কাহিনী,বলেই মুখটা ভার করে বসে রইলো অন্য দিকে মুখ করে।
নিলয়ঃ মেবিনকে কাছে টেনে নিয়ে আর অভিমান করতে হবে না সোনা পাখি আমার দিকে ফিরে তাকাও আমি বলছি।
মেবিন নিলয়ের বুকে আলত করে মাথাটা রেখে আবেগ মাখা কন্ঠে মেবিনঃ বলো নিলয়,
নিলয় মেবিনের মাথায় হাতটা রাখলো এবং চুলের ভিতর আঙুল গুলো খেলা করতে শুরু করলো,মেবিনের মনে হলো পৃথিবীতে বোধহয় ভালোবাসার মানুষের বুকটাই একমাত্র নির্ভাবনার,এ বুকে যেন সারাজীবন সে এমনিভাবে মাথাটা রাখতে পারে,নিলয়ের ভালবাসা মেবিনকে এতটাই আপ্লুত করেছে যেন যুগ যুগ ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল মেবিন।
নিলয়ঃ কাহিনীটা তুমি শুনলে কাঁদবে না তো আগে বলো,
মেবিনঃ কেন কাঁদবো আমি কি শিশু !নিলয় আদর করে মেবিনের চোয়ালটা আলতো করে টেনে দিয়ে বললোঃ এই জন্য তোমাকে এত ভালোবাসি,মেবিন নিলয়কে আজ খুব আদর মাখা কন্ঠে বললঃ প্লীজ বলনা সেই কাহিনীটা আমি শুনবো,
নিলয়ঃ ঠিক আছে কাক পাখি বলছি তবে আমাকে একটু আদর করে দাও,
মেবিনঃ হেসে বললো তুমি ইদানিং খুব দুষ্ট হয়ে গেছো,বলার সাথে সাথে নিলয় হেসে উঠলো এবং বললঃ তাহলে কাহিনী শোন,নিলয় কাহিনীটা বলতে শুরু করলো,ভবদা গ্রামে আসমা নামের এক মেয়ের করুন কাহিনী।


চলবে....

কবি তাহমিনা সিদ্দিকা ' র কবিতা





প্রেম বিভ্রাট
তাহমিনা সিদ্দিকা

শব্দের হাটে অপূর্ব তুমি,
দু'চোখের বিভ্রাট হয়তো 
ভুল ছিল আমার।
চাঁদকে ভেবেছি আমার দেবতা,
কিন্তু উপমার সব শব্দ অভিধান শূন্য।
আকাশ গগনে দেখি প্রিয়তমার মুখ,ভাবনার তরীতে বড় অদ্ভূত।
শব্দ বিশেষণে ধৃষ্ঠতা আমার,
কবিতার খাতা আজ যেন সব ফাকা।
অদ্ভূত সুন্দর ঐ দুটি চোখ,বাহুলতায় পেলবতা মধু মাখা মুখ।
ঝিরি ঝিরি বাতাস অপূর্ব দুলুনি,শব্দ বিভ্রাট আজ সব কবিতার খাতা।
চঞ্চলতায় অগ্নি পুরুষ,
ভিরু ভিরু মনে যেন জ্বলে কামনার আগুন। 
অসহনীয় করে রাত্রি দিন,
কালপুরুষ সে। 
চোখে প্রেম তার প্রেম,
অপূর্ব আহবানে সে আমায় ডাকে
বারে বারে।
শব্দ হাটে সব শব্দ বিভ্রাট, 
যেন কবিতার সব উপমার আকাল,
আশার রথে কবিতা আজ সব
ফাকা।
প্রেম খোঁজে শব্দের হাটে,
প্রেম বিভ্রাটে।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৫৬





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৫৬)
শামীমা আহমেদ 

উত্তরা থেকে একঘন্টার মধ্যেই উবার জিগাতলায় পৌছে গেলো।শিহাব উবারের ভাড়া চুকিয়ে শায়লাকে নিয়ে তাদের বাড়ির গেটে নামল। দুজনেই গাড়ি থেকে নামলো।শিহাব দেখলো সবুজ শাড়িতে শায়লাকে খুব সুন্দর লাগছে। শায়লা তাকিয়ে দেখলো বাড়ির গেটটি বেশ বড় আর খুব সুন্দর!  শায়লার প্রথমেই ভালো লেগে গেলো। উপরে তাকাতেই  দেখলো  দক্ষিনমুখী চারতলা বাড়ির সামনের বারান্দা।শিহাব তাকে এগিয়ে নিলো।
শিহাব দরজায় নক করতেই বাড়ির কেয়ার টেকার রুহুল আমিন দরজা খুলে দিলো। শিহাব শায়লাকে রুহুল আমিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আজ অনেক বছর যাবৎ রুহুল আমিন চাচা আমাদের বাড়িতে।সেই আমাদের ছোটবেলা থেকে।আমাদের বিল্ডিং এর পিছনের যায়গায়  তার ফ্যামিলি  নিয়ে থাকে।মা ওদের ঘর তুলে দিয়েছে। শায়লা খুব মনযোগ দিয়ে শিহাবের কথা শুনছিল। শায়লাকে দেখে রুহুল আমিনের চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠেছে! কিন্তু তেমন একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ নেই একেবারে! 
রুহুল আমিনকে উদ্দেশ্য করে  শিহাব বললো, চাচা ও শায়লা।আজ আমাদের সাথে সারাদিন বেড়াবে। চাচা মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।  শিহাব শায়লার হাত ধরে বাড়ির ভিতরে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেলো।জানালো,আমাদের বাড়িটি অনেক বছরের। সেই  আমাদের স্কুলে পড়বার সময় বাবা এই বাড়িটি বানিয়েছেন।বাবা তখন আমেরিকায় থাকতেন।  বাড়িতে লিফটের ব্যবস্থা করা হয়নি। তোমাকে কষ্ট করে পায়ে হেঁটে উঠতে হবে। শায়লা চোখের ভাষায় জানালো,কোন অসুবিধা নেই।শিহাব জানালো, নিচতলা আর দোতালায় ভাড়াটিয়া আছে।তিনতলায় বড় ভাইয়া ও ভাবির ফ্ল্যাট আর চারতলায় আমার জন্য।মা বাবা আরাফ সেখানেই থাকে। আর ছাদে ভাবীর করা চমৎকার বাগান আছে।বিকেলে সেখানে বসে আমরা চা খাবো। শায়লা তোমার কি ভালো লাগছে এখানে এসে?আমার কিন্তু অনেক ভালো লাগছে।আজ সকাল থেকেই জীবনটা অন্য রকম হয়ে গেছে।বহুদিন পর এই বাড়িতে আমি, দুজন মিলে একসাথে এলাম। আর হ্যাঁ, শায়লা তোমাকে জানিয়ে রাখি,চারতলায় আমার রুমটা কিন্তু তেমনি আছে।বাবা মা অন্য রুমে থাকছে। যদিও বাড়ির ফিটিংসগুলো বেশ আগের তবুও সিঁড়ির স্পেস অনেক চওড়া ।বাইরে থেকে সূর্যের আলো সিঁড়িতে পড়েছে।দিনের বেলা লাইট লাগছে না একেবারেই। নীচতলা দোতালা পেরিয়ে ওরা তিনতলায় পৌছুতেই দেখলো দরজায় সুমাইয়া ভাবী দাঁড়িয়ে। শায়লা যেন শিহাবের আড়ালে লুকাতে চাইছে। শিহাব শায়লাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ভাবী ও শায়লা। শায়লার কথা তোমাকে তেমন করে বলা হয়নি।কেমন করে যেন খুব দ্রুতই  সব কিছু ঘটে গেলো।তুমি কিন্তু মনে কিছু রেখোনা৷ শায়লা খুব ভালো মেয়ে।কথা বললে তোমার ওকে খুব ভালো লাগবে।শিহাব একা একা বকেই যাচ্ছে। ভাবী একেবারেই নিরুত্তর। কেমন যেন চোখে মুখে থমথমে ভাব"। শিহাব ভাবলো প্রথম দিন একটু এমনি হবে।সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।অনেকক্ষন কি যেন ভেবে সুমাইয়া এবার কথা বলে উঠলো। কেমন আছো শায়লা? দেখো কতক্ষন হলো, তোমাদের দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেছি।প্লিজ তোমরা ভেতরে আসো।
শিহাব মৃদু আপত্তি জানালো। এখন না ভাবী।আগে মায়ের সাথে শায়লার দেখা করিয়ে আনি। শায়লা
আরাফকেও দেখার জন্য খুব আগ্রহ করে আছে। সুনায়রা আর আরুশ ওরা কোথায়? ওদের ডাকো।ওদের জন্য খেলনা আর চকলেট এনেছি।বলেই শিহাব ভাবীকে ব্যাগ এগিয়ে দিলো। ভাবী বেশ জোর দিয়েই বললো, না, শায়লা প্রথম এসেছে আমাদের বাসায়। এভাবে উপরে যাবে না।তোমরা আমার এখান থেকে সকালের নাস্তা করে তারপর উপরে যাবে। ভাবী এত করে বলছে। শিহাব তাই মেনে নিল। আর তাছাড়া শায়লাই তো আজ অতিথি। ভাবী তাকে আপ্যায়ন করতে চাইছে সেটাতো গ্রহন করতেই হয়।আরাফের জন্য ভাবী এতদিন পর্যন্ত  মায়ের সব ভুমিকাই পালন করেছে।আজ শায়লাকে দেখে হয়তো আরাফের জন্য মায়াটা কষ্ট  দিচ্ছে। শিহাব শায়লাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসলো।ভাবী, ভাইয়া উঠেনি? উঠেছে।বাইরে গেছে।তোমাদের ভাইয়ারা কয়েকজন মিলে একটা কন্সট্রাকশন ফার্মে ইনভেস্ট করছে। তারই একটা মিটিং হচ্ছে আজ গুলশানে একজনের বাসায়।শিহাব ভাবলো, ভাইয়া চিরকালই তার ব্যাপারে উদাসীন। এটা কি শিহাবের প্রাইভেসি মেইন্টেন করা নাকি নিজেকে দুরত্বে রাখা শিহাব বুঝে উঠতে পারে না। ভাবী  শায়লা শিহাবকে ডাইনিং টেবিলে ডাকলো।অনেক নাস্তার আয়োজন! ভাবী বেশ যত্ন করে ওদের নাস্তা করালো।শিহাবের মনের ভেতর আরাফকে দেখার জন্য অস্থির লাগছে। এখনো কি ঘুম থেকে উঠেনি আরাফ? শিহাবের প্রশ্ন সুমাইয়াকে। হ্যাঁ,উঠেছে তো।একবার আমার এখানে ঘুরে গেছে ওর দাদীর সাথে।এখন বোধহয় খেলছে।শিহাব বুঝতে পারছে না অন্যদিন আরাফ তার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। কখন আসবো কল করতে থাকে অথচ আজ চুপচাপ হয়ে আছে। সুমাইয়া ওদের চা দিলো।দুজনে চায়ে চুমুক দিতেই শিহাব  শায়লাকে জানালো,
শায়লা, ভাবী আমাদের পরিবারের জন্য একজন নিবেদিত প্রান মানুষ।ভাইয়াকে দেখে, নিজের সন্তান সংসার দেখেও বাবা মা আরাফেরও সমান যত্ন নেয়।তারপর বাড়ির যাবতীয় ঝুট ঝামেলা সবই ভাবী সামলায়। আমাদের জীবনে ভাবী একটা আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন।সুমাইয়া শিহাবকে থামিয়ে বললো, এভাবে বলছো কেন? এটাতো আমারও সংসার। সবাইকে নিয়ে থাকতে আমার  ভালো লাগে। 
ভাবী আরাফকে নিয়ে তোমার অনেক ঝামেলা আর ব্যস্ততায় দিন গেছে। এখন থেকে শায়লা আরাফের সব দায়িত্ব বুঝে নিবে।শায়লা আরাফকে না দেখেই অনেক আপন করেছে।আজ তাই দেখাতে নিয়ে এলাম।শিহাব বুঝতে পারছে না,ভাবী কথার মাঝে বেশ অন্যমনস্ক কখনো বিষন্ন আবার কখনো কেমন যেন ভীত চোখে মেইন দরজার দিকে তাকাচ্ছে। শায়লা নাস্তা পর্ব সেরে ভাবীর হাত ধরে বললো,ভাবী
আজ থেকে আরাফকে আমি মায়ের আদরে আপন করে নিবো।আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন। এবার সুমাইয়া বলে উঠলো, শুধু আরাফ? আরাফকেই আপন করবে? আরাফের বাবাকে, আমাকে আপন করবে না? 
ভাবীর দুষ্টুমিতে শায়লা লাজ রাঙা হয়ে উঠলো। ওরা বিদায় নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে এলো।
শিহাব আরাফকে দেখার জন্য বেচায়েন হয়ে উঠলো!
ভাবীকে এড়িয়ে দ্রুতই বেরিয়ে এলো। শায়লা ভাবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শিহাবের পিছু নিলো। পেছনে  দরজায় সুমাইয়া বেশ উৎকন্ঠিত চোখে শায়লা আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইল।
শিহাব বেশ দ্রুতই সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গেলো।আরাফকে দেখার জন্য আর তার দেরি সইছে না। শায়লা শিহাবকে ফলো করে  একরকম দৌড়েই  পিছু পিছু গেলো।চারতলার দরজা খোলাই ছিল।শিহাব বাসায় ঢুকে পড়লো। ড্রইং ডাইনিং এ কেউ নেই।শিহাব শায়লাকে সরাসরি  মায়ের ঘরে নিয়ে গেলো।মা বিছানায় শুয়েছিলেন। শিহাব মায়ের কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখতেই মা জেগে উঠলেন। শিহাব মাকে উঠে বসালো। শায়লাকে মায়ের কাছে নিয়ে গেলো।বললো মা দেখ ও শায়লা।দেখো কি মায়া ভরা মুখটা। মা তুমি আরাফের জন্য মা চেয়েছিলে,আমাকে সংসারী  হতে বলেছিলে। মা দেখো তোমাদের সবার চাওয়া ইচ্ছে আজ পূরণ হবে। শায়লা আমাদের সবার খুব আপন হয়ে থাকবে।আরাফ তার মায়ের আদর পাবে যেটা তুমি সবসময় চাইতে। শায়লা মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করলো।মা শায়লার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলো।
ভালো থাকো মা।বসো, বলেই শায়লাকে কাছে টেনে নিয়ে বিছানায় তার পাশে বসালেন। শায়লার হাত ধরলেন।কিন্তু পরক্ষনেই মা কেঁদে উঠলেন।শিহাবের জীবনটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমার দুইটি সন্তান তাও খোদার হিসেবে কেমন দুজনের ভাগ্য। আজ শায়লাকে পেয়ে হয়তো মা আনন্দে  কেঁদে ফেলছে। 
শিহাব বারবার ঘরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,মাকে প্রশ্ন করলো,মা আব্বাকে দেখছিনা,আব্বা  কোথায়? তাছাড়া আরাফ কোথায়? আজ যে আরাফ আমার কাছে দৌড়ে এলোনা? মা প্রসঙ্গ পাল্টে 
খুব হালকা স্বরে বললেন, তোর বাবা একটু বাজারের দিকে গেছে।
শিহাব এ কথা শুনে বেশ রাগান্বিতই হলো।
বেশ শাসনের সুরেই বললো,
মা বাবাকে কেন একা বাজারে যেতে দাও?এখন বয়স হয়েছে।রাস্তাঘাটে কখন কোন বিপদ হয়।রুহল আমিনকেতো বাসায়ই দেখলাম। ওতো বাবার সাথে যেতে পারে।
শিহাবের কথার জবাবে  মা বললেন,
ও গেলে গেটের খেয়াল কে রাখবে? পানি ছাড়তে হয়।ভাড়াটিয়াদের কত রকম চাওয়া থাকে। রুহুল আমিনের ছেলে রফিককে নিয়ে গেছে।
শিহাবের উৎসুক চোখ ঘরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
মা, আরাফকে দেখছিনা।আজ আমার কাছে আসছে না কেন? ও কোথায়? ওর জন্য খেলনা এনেছি,চকলেট এনেছি,নতুন ড্রেস এনেছি। শায়লা আরাফকে দেখতে এসেছে । শায়লা আরাফকে মায়ের আদরে আমাদের কাছেই রাখবে। শায়লাকে তোমাদেরও খুব ভালো লাগবে মা। ও খুব ভালো মেয়ে।
শিহাবের এমন কথায় শায়লা সলজ্জ হয়ে মাথা নিচু করে মায়ের পাশে বসে রইল।
শিহাব আরাফ আরাফ করে ডাকতেই মা বললেন আরাফ তোর ঘরে আছে।
আমার ঘরে? একা একা কি করছে? তোমরা ওকে একা ছেড়ে দিয়েছো কেন? বলেই শি্হাব হনহন করে মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।শিহাব না থাকলেও ওর ঘরটা আগের মতই সাজানো আছে। জিগাতলায় এলে শিহাব পারতপক্ষে নিজের রুমে যায় না। শিহাব মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় মা বেশ অস্থির হয়ে উঠলেন।শায়লা লক্ষ্য করলেন মা খুব শক্ত করে শায়লার হাতটি ধরে রাখলেন।চোখে মুখে একটা আতংক ভাব! 
মায়ের রুমের পাশের রুমটাই শিহাবের। শিহাব  দরজায় যেতেই দেখে আরাফ তার বিছানায় বসে একা একা খেলছে।বিছানায় অনেক খেলনা ছড়ানো।জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়া।বিছানায় রোদ এসে পড়েছে।শিহাব বুঝতে পারছে না,বাচ্চাটিকে একা একা কিভাবে মা ভাবী এভাবে বিছানায় রেখে চলে গেছে?  শিহাব আরাফ বলে ডাকতেই বলে উঠলো,আব্বু মা এসেছে।
শিহাব বুঝতে পারছে না, আরাফতো এখনো শায়লাকে দেখেনি,কিভাবে বলছে মা এসেছে।
শিহাব কথাটা ভালোভাবে বুঝতে আবার বলে উঠলো,কোথায় তোমার মা? 
আরাফ হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল্য, ঐ যে!
শিহাব সেদিকে তাকাতেই একেবারে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়লো।
রিশতিনা!  কখন এলো?
রিশতিনা চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে।
আরাফ বলেই চলেছে ঐ যে মা,ঐ যে মা!
শিহাব কতকটা সময় যেন স্থির হয়ে রইল।নির্বাক নিরুত্তর।
রিশতিনার দিকে তাকাতেই রিশতিনা বলে উঠলো,  হ্যাঁ আমি,ভুল দেখছো না।আমি আজ সকালে এসেছি। আমি আমার স্বামী সংসার আর সন্তানের কাছে ফিরে এসেছি।আরাফ আমার সন্তান।আমিই আরাফের মা।
আরাফ ক্রমাগত বাবা বাবা ডেকেই চলেছে। রিশতিনা আর আরাফের মাঝে  শিহাব কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।


চলবে....

২৩ জানুয়ারী ২০২২

কবি সালমা খান এর কবিতা





অধরা
সালমা খান

তুমি  যদি  হও নদী  
তোমার  স্রোতের  ধারায় চলবে
আমার  গতি
দুকূল ভেঙে যায়  যদি,
তবু  ও চলবো নিরবধি । 
তুমি  যদি  হও শিশির বিন্দু 
ভোরের  আলোয় চুষে  নেব তোমার অশ্রু বিন্দু ।
ধুলাঝরা কুয়াশায় খেলবে রোদের পাতা
মনের গহীনে লুকিয়ে  রাখি  বুক 
ভরা  সব ব্যথা ।
যদি হও বৃক্ষ  ,আমার 
নিঃশ্বাসে তোমার  নির্যাস ।
তোমার সবুজ  পাতায় জমানো রয়েছে আমার দীর্ঘশ্বাস । 
যদি  হও মৃত্তিকা
তোমার  জঠরে শস্য দানা হয়ে  জড়িয়ে 
রাখবো আমার  গায়ে ।
নিখাদ বিশ্বাস নিয়ে নির্জীব মাটির 
রুক্ষতাকে সাজাই সরেস ফুলে।
যদি হও শুষ্ক মরুভূমি 
আমি  লু - হাওয়ায় ধুলো উঠা ঝড় ,
হয়ে, ভরিয়ে  দেব আকাশ  চূমি।
ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণি  পাকে  কাটবে 
আমাদের  বেলাভূমি ।
সমুদ্র হয়ে যদি  এসো  
ঢেউ হয়ে তোমার বুকে ভাসবো 
সারাবেলা 
পর্যটক রা করবে ভিড়,শিশু রা 
করবে খেলা ।
মাছের নেশায়, পাখিরা করবে 
মেলা ।

কবি অভিজিৎ রায় এর কবিতা




সাধন-সঙ্গী
অভিজিৎ রায় 

মৌনতা চরম ধর্ম!  এই মেনে চুপ আছ তুমি?
নাকি এসব সাধনা? তুমি কি বলতে পারো বোষ্টমী?

আমার সাধনসঙ্গী হবে বলে জন্ম নিয়েছিলে?
অথচ ভরেছ মুঠো শুধু গর্ভ নিরোধক পিলে।

যন্ত্রণা শব্দের আর ছন্দ চিনে মায়াবী পৃথিবী 
ভিখারিকে প্রশ্ন করে, বল আর কী কী নিবি?

চুপ করে আছে সব; চারপাশে কত লোভ, মোহ
অথচ শব্দের খেলা হৃদয়ে চলছে অহরহ।

এত কথা কোন পথে হারানোর রাস্তা খোঁজে জানো?
তুমি কি সাধন সঙ্গী নাকি শুধু পথ হাতড়ানো? 

শব্দ শুধু প্রশ্ন করে; উত্তর দেবে কি নীরবতা? 
অথচ কান্নার দাম লিখে রাখে চেনা কথকতা। 

অনন্ত মুহূর্ত নিয়ে গর্ব করে, যদিও মুহূর্ত 
ঈর্ষার ডানায় ভর দিয়ে রোজ পরজন্মে উড়ত।

ধাতব মাটির সুরে বেজে ওঠে সব আর্তনাদ 
মৌনতার প্রবঞ্চনা নিয়ে বাঁচে সাধন-প্রমাদ।

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস ৯৭




উপন্যাস 

টানাপোড়েন৯৭
অসহায়তা

মমতা রায়চৌধুরী


নদী উদভ্রান্তের মতো ছুটে এসেছিল নার্সিংহোমে। সমুদ্র দ্রুত বাইক চালিয়েছিল কিন্তু তাতে কি হবে ট্রাফিক জ্যাম ও প্রচুর। 
নদী শুধু সমুদ্রকে বলতে লাগলো 'একটু তাড়াতাড়ি চল?'
সমুদ্র বলল 'আমি চেষ্টা করছি তো বাবু।'
নদী আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগল
'আমার জন্যই বোধহয় সবকিছু হলো।'
সমুদ্র মেডিকেল কলেজ থেকে  ছুটে গিয়েছিল নদীকে ধরার জন্য ।তারপর দ্রুত বেগে গাড়ি নিয়ে উডল্যান্ড নার্সিং হোম এর দিকে। 
রূপসার হঠাৎ ভীষণভাবে গল গল করে ঘাম  দেখে ঝরনা ঘাবড়ে  যায় ঠিকই কিন্তু দ্রুত ছুটে এসে বলতে থাকে 'বৌদি ,বৌদি ,কি হয়েছে তোমার? কি হয়েছে বলো ,একবার আমাকে বল?'
রূপসার তখন বুকের ভেতরে একটা তীব্র যন্ত্রণা যেন কাঁকড়া বিছের  মত কামড় তার হৃদপিন্ডে বসিয়েছে। কোনমতে তার নিজের বুকটাকে হাত দিয়ে দেখাতে পেরেছে ঝর্নাকে।
ঝরনা অত্যন্ত উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারিণী। সে কাল বিলম্ব না করে তার বৌদির ফোন থেকে ফোন করেছে তাদের অফিসের বস মিস্টার মালহোত্রাকে।'
রূপসার ফোন থেকে ফোন যেতেই মিটার মালহোত্রা অত্যন্ত প্রসন্ন কণ্ঠে বলেন 'হ্যাঁ রেস্ট হলো ,কেমন আছো?'
এ প্রান্ত থেকে ঝরনা বলে ওঠে ' আমি রুপসা বৌদির বাড়ির কাজের মেয়ে।'
মিস্টার মালহোত্রা বলেন' ও ।কিছু কি হয়েছে?'
ঝরনা বলে' হ্যাঁ ,স্যার ।বৌদির হঠাৎ করেই বুকে যন্ত্রণা ।কি করব বুঝে উঠতে পারছি না?'
মিস্টার মালহোত্রা বলেন 'সেকি কথা ইমিডিয়েট অ্যাম্বুলেন্স খবর করুন। আচ্ছা, ঠিক আছে আপনাকে করতে হবে না ।আমি এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
ঝরনা ভরসার কন্ঠে বলে 'ঠিক আছে, স্যার। তাই হোক  কোথায় নিয়ে যাবেন?'
মিস্টার মালহোত্রা বলেন 'উডল্যান্ড নার্সিং হোম।'- বলেই ফোনটা কেটে দেন।
অ্যাম্বুলেন্স আসার মাঝের সময়টিতেই ঝরনা ফোন করে দিয়েছিল নদীকে, তার মায়ের কন্ডিশনের কথা জানিয়ে।
এর মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়ে
 যায়। রুপসাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স  দ্রুতগতিতে নার্সিংহোমে পৌঁছে যায়। 
ওখানে পৌঁছাতেই মিস্টার মালহোত্রার তদারকিতে রুপসাকে প্রথম ইসিজি করা হয়। ইসিজি রিপোর্টে দেখা যায় এটা ততটা মারাত্মক নয় । হার্টে ধাক্কা লেগেছে ঠিক ই কিন্তু প্রাচীর তার অক্ষত
 আছে। তখন সবাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস 
ফেলে ।
ডাক্তারবাবু ,মিস্টার মালহোত্রাকে বলেন 'এটা এতটা মারাত্মক নয় ।টোটাল বেডরেস্ট এর প্রয়োজন আর শরীর মনটাকে ঠিক রাখার জন্য এখন ডাক্তারদের তদারকিতে রাখতে হবে ।সে ক্ষেত্রে নার্সিংহোম সবথেকে উপযুক্ত নিরাপদ জায়গা।'
মিস্টার মালহোত্রা বললেন ' আপনারা যেটা বুঝবেন ,সেই ভাবেই কাজ করা হবে।'

সমুদ্র নদীকে নিয়ে বাইক দ্রুতগতিতে চালিয়ে মেডিকেল কলেজ থেকে রবীন্দ্রসদনে পৌঁছায় উডল্যান্ড নার্সিং হোমে।
নদী  উদভ্রান্তের মতো এসে নার্সিংহোমে যখন ঢোকে, তখন দেখতে পায় নার্সিংহোমের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে ঝরনা। একটা অশান্ত উদ্বেগ চোখেমুখে।
নদীকে দেখে ঝরনা বলে'
'মামনি ,বৌদি ভিতরে। এখন কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। বাইরে ওয়েট করো।'
নদী ঝর্ণাকে বলে' মাসি আগে বলো মা কেমন আছে?'
ঝরনা বলে 'বললাম তো ঠিক হয়ে যাবে , অতটা মারাত্মক নয়।'
নদী বলে 'কি হয়েছে মায়ের?'
ঝরনা বলে' হার্ট অ্যাটাক।'
নদী খেয়াল করল মিস্টার মালহোত্রা এসেছেন। কিন্তু আজকে মিস্টার মালহোত্রাকে দেখে নদীর কোন বিরক্তি চোখে মুখে নেই। শুধু এই টুকুই প্রত্যাশা মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।
বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সকলে। নদীর যেন মনে হলো তার মায়ের থেকে সে আলোকবর্ষ দূরে আছে।
ঝর্ণা নদীকে বলল 'তোমার মাসিমনিকে ফোনটা করো খবরটা জানাও। দাদুকেও  খবর টা জানাও।
তোমার কাকাকে আমি ফোনটা করে দিয়েছি।'
নদীর পেছনে নদীর বন্ধুরাও এসে হাজির হয়েছে। মাসিমনির ফোনটা নম্বর ডায়াল করল রিং হতে লাগলো । একবার বেজে যাবার পর আবার রিং করলো ।
এবার অপরপ্রান্ত থেকে ফোনটা রিসিভ করে বলল ' হ্যালো।'
নদী বলল  'মাসিমনি আমি নদী বলছি।'
টুকাই ফোন ধরে বলল ', দিদিভাই তুমি ভালো আছো?
নদী বলল  'হ্যাঁ ,আছি একরকম। মাসিমনি আছে রে?'
টুকাই বলল' এক্ষুনি ডেকে দিচ্ছি তুমি একটু হোল্ড করো দিদিভাই।'
'মা ,মা.আ.আ.আ,মা…
বিপাশা রান্নাঘর থেকে আওয়াজ দিল
' কি হলো এভাবে চিৎকার করছো কেন?'
টুকাই বলল 'দিদি ভাই ফোন করেছে।'
বিপাশা বলল' হ্যাঁ ,যাচ্ছি দাঁড়া।'
বেসিনের কল টা বন্ধ করে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে তাড়াতাড়ি চলে আসলো এবং ফোনটা রিসিভ করে বললো' হ্যাঁ বল স্রোতস্বিনী। কেমন আছিস?'
নদী ডুকরে কেঁদে উঠে ।
বিপাশা বলে' কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বল আমাকে?
নদী বলে 'মাসিমনি, মা ,মা, মা বলতে বলতেই গলা ধরে আসে।
বিপাশা বলে" কি হয়েছে দিদি র।'
নদী বলে মাকে ' নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।'
বিপাশা বলে 'সে কিরে ?এখন কেমন? ঠিক আছে সব?'
নদী বলে 'ডাক্তারবাবু বলেছেন অতটা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। মাকে এখন চেকাপ করা হচ্ছে  কমপ্লিটলি নাকি বেড রেস্টে থাকতে 
হবে ।অবজারভেশনে থাকবে নার্সিংহোমে।
বিপাশা বলে 'থ্যাংকস গড ।ঠিক আছে কাঁদিস 
না ।আমরা আগামীকাল যাব ।রাতে খবর নেব কেমন থাকে বলিস ।'
নদী বলল 'কালকে আসবে মাসিমনি?
বিপাসা বলল 'এত রাত হয়ে গেছে, বাচ্চাদের নিয়ে...।'
নদী বুঝল 'তাই তো মাসিমনি ও   সংকটের মধ্যে আছে।'
 তারপর বলল  'ঠিক আছে।'
ইতিমধ্যে মিস্টার মালহোত্রার সঙ্গে ডাক্তারবাবু হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন ঘরে ।
নদীর হাতের  চাপ অজান্তেই ঝরনার হাতের ওপর পড়েছে ।খরস্রোতা নদীতে মানুষ যখন ডুবে যেতে বসে তখন যেমন সে ভাসমান কচুরিপানা দেখলে তাকে আঁকড়ে ধরতে চায়, ঠিক তেমনি।
কতটা অসহায়ত্ব ছুঁয়েছিল নদী আর ঝর্ণাকে। ঝরনা বুঝেছিল সত্যিই ঝর্নার না যতটুকু বিপদ হবে , বিপাশা না থাকলে, তার থেকে বেশি বিপদ হবে নদীর ।কারণ ঝরনা একটা জীবন পার করে এসেছে ।সে নিজেকে কোনমতে মানিয়ে নিতে পারবে কিন্তু এই বিপুলা পৃথিবীতে নদীর কি 
হবে? কারণ নদী যতই মাকে নির্লিপ্ত ভাবুক না  কেন ?তার মাথার উপর ছাতা হয়ে রয়েছে। 'শিকড় উপড়ানো অসহায়তার কাছে নিজের কষ্ট অভিমানগুলো সবকিছুই যেন মনে হলো আজ তুচ্ছ।
দুজন অসহায় জীব পরস্পর পরস্পরকে হাতে হাত রেখে জীবনের গিরিখাত , ধ্বস পার করতে চাইছে। চলো দুজনে বলতে চাইছে ' আয় বেঁধে বেঁধে থাকি"।
মিনিট দশেক পরে ডাক্তারবাবু বেড়িয়ে আসলেন এবং বললেন ঘাবড়াবার কিছু নেই ।একটা টেনশন থেকে বোধ হয় এরকম কিছু একটা ঘটেছে।
মিস্টার মালহোত্রা এসে নদীর মাথায় হাত রেখে বললেন 'টেনশন নিও না। আমরা আছি।'
যে লোকটার প্রতি এতটা বিরক্ত, এতটা ঘৃণা জমে ছিল ,নদীকে সেই লোকটাই  মাথায় হাত রেখে আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছেন ।নদীর মুখ যেন অনেকটা স্বাভাবিক ।শুধু মাঝে মাঝে ঠোঁট দুটো অল্প নড়ে উঠলো ।কিছু বলতে পারলো না।
ঝরনা খেয়াল করছিল নদীকে। নদী আবার না কোন সিনক্রিয়েট করে ফেলে ?
কিন্তু না, নদী আজ কিচ্ছু করে নি। নদীর সে অবস্থাও নেই ,সেরকম কিছু করার। আজকে তার কাছে তার মায়ের মুল্য অনেক বেশি মনে হয়েছে।
 আজ নদীর বুকে উথাল পাথাল ঢেউ ঢেউ। কি করলে  শান্ত হবে  , ঝড় থেমে যাবে ,বৃষ্টির বেগ কমে যাবে । নতুন ভাবাবেগের উচ্ছ্বাসে  মেতে উঠবে আবার স্রোতস্বিনী। নাকি কোনো অন্ধকার অধ্যায় শুরু হবে তার জীবনে ?সে কি হারিয়ে যাবে কোন পঙ্কিল আবর্তে যেখানে সহস্ত্র শৈবালদাম এসে বাসা বাঁধবে। নিজের মনের আশঙ্কা ছাপিয়ে তাকে যেন ক্রমশ সেই অসহায়তা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। নদী শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার মায়ের কেবিনের দিকে। নদীর চোখ জলে ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে ।সে শুধু মনে মনে ভাবে তার মায়ের উপর নির্ভর করছে তার জীবনটা। সে কি এবার বিশাল জনসমুদ্রে একলাই হাঁটবে নাকি তার মা তার পাশে থাকবে সর্বদা ।সন্ধ্যায় শহরে যখন রাস্তার বাতিগুলো এক এক করে জ্বলে
 ওঠে ।তখন মনে হয় নদীর এই শহরে কেউ এমন  কি আছে যে তার সত্যি কারের বন্ধু হতে
 পারে ?হৃদয়ের জমা কষ্ট, অভিমান, যন্ত্রণা গুলোকে তার কাছেই শুধু বলতে পারে।

কবি আলেয়া ফয়সাল এর কবিতা




বাবাদের ইতিকথা
আলেয়া ফয়সাল

নিয়ে কাঁধে সংসারের বোঝা 
দাঁড়িয়ে যিনি থাকেন সোজা 
বাবা তাঁর নাম। 
সয়ে কষ্ট হাসি মুখে
লুকিয়ে দুঃখ রাখতেন বুকে
শ্রমে তাঁর রক্ত হয়েছে ঘাম।
বাঁচতে ভুলে নিজের জন্যে
আরাম, অবসর করে পণ্য
বিকিয়ে দিতেন রোজ।
কার,কখন,কি প্রয়োজন 
সেই বিষয়ে সারাক্ষণ 
 ঠিকই রাখতেন খোঁজ। 
ধরে হাল শক্ত হাতে 
সামলিয়েছেন সংসার দিনেরাতে 
উফফফ করেন নাই তবু।
আশা-ভরসার শীতলছায়া
 ছড়িয়ে দিতে স্নেহের মায়া 
 ক্লান্ত হয় নাই কভু।
সকল বাবা থাকুক ভালো 
সঙ্গে নিয়ে খুশির আলো 
দুঃখ করুক জয়। 
আছে  বাবা  যত
আমার বাবার মত 
যেন তাঁরা সেরা বাবা হয় ! 
বাবা তুমি ভালো  থেকো  ঐ 
আকাশের বুকে। 
মিস করি বাবা তোমায় আমি তুমি নাই বলে।

কবি জাবেদ আহমেদ এর কবিতা




নবোদয় 
জাবেদ আহমেদ 

এই  বারবার
শতবার
লক্ষকোটি বার
উদয় হও আমার আকাশে। 

এই নিশিতে পূর্ণিমার চাঁদ
শুভ্র তারা 
প্রাণবন্ত সকাল হও।

বেলিফুলের মালা হও
বর্ষার আকাশে
মেঘ কেটে হাসো।

শরতের সকালে
দূর্বাঘাসের উপরে
ছিকছিক করো

বসন্তের বাগে
ফুল ফোঁটাও।

নদীর খুলে জলমল
জল হয়ে গীস্মে থাকো।

বারবার সুখ ষাতনায়
তোমারই নবোদয় হোক
প্রাণের চাওয়া এই আমার নন্দিনী। 

ভালোবাসা'র নবোদয় তুমি
এই,,,শুনছো কি তুমি!
অনুভূতির পাগলিনী।

শামীমা আহমেদ এর ধারা বাহিক উপন্যাস পার্ব ৫৫





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৫৫)
শামীমা আহমেদ 

রাহাতের সাথে কথা শেষ  করে তাকে বাসায় নামিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে শিহাবের  প্রায়  রাত সাড়ে দশটা বেজে গেলো। সপ্তাহ শেষে   দুজনে  একসাথে আজ বেশ কিছুটা সময় কাটালো  "টেবিল টপ" রেস্টুরেন্টটায়। শিহাব রাতের মত কিছু খাবার খেয়ে নিয়েছে। সেখানে রাহাতকে ডিনার করাতে চাইলেও একেবারেই রাজি  করানো গেলো না।রাহাত জানালো,সারাদিনের ক্লান্তির পর সে বাসায় ফিরবে।মা আর শায়লা আপুর সাথে রাতের খাবার খাবে।শিহাব জানালো,আমার জন্যতো এখানে আর কেউ অপেক্ষায়  নেই। আমাকে এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে।এভাবেই মানিয়ে নিতে হচ্ছে।
রাহাত শিহাবের কষ্ট  বুঝতে পারলো।তাকে আশ্বাস দিলো, শীঘ্রই আপু আপনার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে। দিনশেষে আপনি যখন ঘরে ফিরবেন আপু আপনার দরজা খুলবে। আপনাকে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতে কাপড় এগিয়ে দিবে।আপনার পছন্দের খাবার রান্না করবে।আপনারা একসাথে বসে কফি খাবেন।একসাথে ঘুরে বেড়াবেন! রাহাতের কথায় শিহাবের চোখ চকচক করে উঠছিল!  সুন্দর আগামীর আশায় তার মনে স্বপ্নেরা উঁকি দিচ্ছিল।শিহাব বুঝতে পারলো হয়তো এতদিন সে রাহাতের মতই কাউকে মনে মনে খুঁজছিল যার কাছে মন খুলে সব কথা বলা যায়। যে তার না বলা কথাগুলোর বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য এগিয়ে আসবে।চমৎকার কিছু সময় কাটলো দুজনের। শিহাব মনের ভেতর অপার এক আনন্দ নিয়ে আজ ঘরে ফিরলো।মনে হলো সত্যিই পৃথিবীটা খুবই সুন্দর! এখনো সব বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ভালবাসার জন্য মানব হৃদয় উদ্বেলিত হয়।এখনো নিঁখাদ ভালোবাসার মূল্যায়ন হয়। তার  মনে হলো  নিজের প্রতিজ্ঞা ভেঙে সে কোন ভুল করেনি।হয়তো এমনই হয়,খারাপ সময় খুব বেশিদিন থাকেনা।শুধু শক্ত মনে দুঃসময়টাকে মোকাবেলা করতে হয়।শিহাব শায়লাকে ভেবে স্বপ্নের দোলায় দুলছে আজ।মনে হচ্ছে শায়লা তাকে ঘিরে আছে।শায়লার নিঃশ্বাস,শায়লার মাঝে গোলাপের সুরভির উন্মাদনা খুঁজে পাচ্ছে। খালি ঘরটাতে ঢুকেও  শিহাবের মনটা  আজ  আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আছে! যেন ঘরময় শায়লার উপস্থিতি সে টের পাচ্ছে।যেন এক্ষুনি শায়লা এসে বলবে, আহ! শিহাব,কত ক্লান্ত তুমি আজ, এ কথা বলেই হাতটা এগিয়ে সবকিছু নিয়ে শিহাবকে ভারমুক্ত করবে। আর শিহাব শায়লার অমন অপরূপ মায়াভরা কান্তির মুখাবয়াবে তাকিয়ে দিনের সব ক্লান্তি ভুলে যাবে। চট করে সে এক টানে শায়লাকে বুকে টেনে নিবে।শায়লার শত আপত্তিতেও একটি গাঢ় চুম্বনে তাকে আবেশিত করবে। শায়লার ছাড়িয়ে নেয়ার শত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে শিহাব শক্ত করে তাকে বুকের সাথে বেঁধে রাখবে। যেন কত যুগের জমাটবাঁধা ব্যথার বরফ শায়লার বুকের উষ্ণতায় গলতে শুরু করবে। 
রাহাত আজ এমনি করে শায়লাকে কাছে পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।বয়সে ছোট হলেও  রাহাত সবই বুঝতে পারছে।শিহাবের মন চাইছিলো রাহাতকে অতীতের সব খুলে বলতে কিন্তু রাহাত যেন শিহাবের সব কষ্ট বুঝে নিয়ে তা লাঘব করার জন্য নিজেকে প্রত্যয়ী করে তুললো। শিহাব ভাবলো,
রাহাতের মত এমন একটা ছোট ভাই আছে বলেই শায়লাকে পাওয়ায় আর কোন বাধা থাকলো না। আর শায়লার মত বোন যার আছে সেই ভাইতো পৃথিবীর ভাগ্যবানদের একজন। এমনি নানান ভাবনায় শিহাব মনের অজান্তেই নিজেকে শায়লার পরিবারের একজন ভেবে নিলো। বহুদিন শিহাব নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।মা,বাবা,আরাফ, ভাবী,ভাতিজা, ভাতিজি, ভাইয়া  সবাইকে ভীষণভাবে মিস করছে আজ। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা নিজেদের বাড়িঘর এলাকা সব ফেলে এসে অচেনা মানুষজনের সাথে থাকতে হচ্ছে।তবে শিহাব আশায় বুক বাঁধলো,শায়লাকে নিয়ে আবার তাদের পরিবার হাসি আনন্দে মেতে উঠবে। রিশতিনার সেই ঘটনাটির পর শিহাবদের পরিবারের আনন্দ যেন থমকে আছে।শায়লার প্রতি শুধু শিহাবের অগাধ বিশ্বাস শায়লা সবাইকে আপন করে নিবে,মা ভাবী তারাও শায়লার আপনজন হয়ে উঠবে! শিহাবের মনে হলো চারদিকের ছড়ানো ছিটানো সব দুঃখ কষ্ট গুলো যেন নিমেষেই দূর হয়ে যাচ্ছে, এক সুখের হাতছানিতে সবকিছু  এক কেন্দ্রে একীভুত হচ্ছে। শিহাবের মনের ভেতর নানান কথার ঝড় উঠেছে।শায়লাকে সব বলতে হবে।আজ রাতেই শায়লাকে সব বলবে সে।
শিহাব ফ্রেশ হয়ে স্লিপিং স্যুট পরে নিলো। ঘুমানোর আগে এক কাপ র'কফি হলে দারুন হতো।কিন্তু আলসেমিয়ে তা আর হলোনা।এখন শায়লার দিকেই মনের পাল্লা ভারী হয়ে আছে।কাল সকালে শায়লাকে নিয়ে জিগাতলার বাসায় যাবে। শায়লার সাথে এ ব্যাপারেও একটু কথা বলে নিতে হবে।ওকে মানসিকভাবে তৈরি  করে নিতে হবে।তবে বাসার সবকিছু আগে থেকে জানাবে না,তাহলে শায়লার কাছে কোন কিছুই নতুন মনে হবে না। আরাফের সাথে শায়লার প্রথম দেখা হওয়ার ক্ষণটার জন্য শিহাব উদগ্রীব হয়ে আছে। শায়লাকে বলবে কাল তুমি সবুজ রংয়ের একটা শাড়ি পরবে।শিহাবের মায়ের সবুজ রংটা খুব পছন্দ।
শিহাব ঘড়ি দেখলো। রাত প্রায় বারো টা ছুঁইছুঁই।নিশ্চয়ই শায়লা অপেক্ষায় আছে।শিহাব দেখেছে যত রাতেই শায়লাকে সে নক দেয় না কেন,শায়লা থেকে তার রিপ্লাই আসবেই।কিভাবে যে  ঘুমায় বুঝিনা! সে নাকি জেগে জেগে ঘুমায়! এ এক অদ্ভুত জীবনযাপন!
শায়লা ঘুমিয়েছো?
উহু,,
কেন ঘুমাওনি?
তোমার জন্য অপেক্ষায়। 
আমি যদি নক না দিতাম?
সারারাত অপেক্ষায় থাকতাম।জেগে থাকতাম।
কি বলো? এমনটি করলে শরীর খারাপ করবে।
হউক,তোমার জন্য আমি জেগেই থাকবো।
তারপর সারাদিন ঘুমাবে? তাহলে সংসার দেখবে কে? 
রাতজেগে থাকাটাই আমার আসল সংসার বুঝলেন জনাব।
শিহাবের হাতে মেসেজ লিখে যেন মন ভরছে না। লেখায় কি আর সব অনুভুতি প্রকাশ করা যায়? শিহাব কল দেবার অনুমতি চাইল।
শায়লা সম্মতি জানাতেই মেসেঞ্জারে শিহাবের মুখটা ভেসে উঠলো।যে মুখটা দেখবার জন্য শায়লা দিনরাত অপেক্ষায় থাকে,কিছুদিন না দেখলে আকুল হয়ে উঠে,একটিবার দেখবার জন্য মন ছটফট করতে থাকে।
শায়লার নীরবতায় শিহাব কথা বলা শুরু করলো,
শায়লা তুমি কি বুঝতে পারছো আমরা একটু একটু করে কোনদিকে এগিয়ে যাচ্ছি?
কোনদিকে আবার? ভাললাগছে এটাইতো সব! এই যে কথা বলছি, আর কি লাগবে ?
নাহ,এটাই সব না। কাল আমাদের পরিবারের সবার সাথে পরিচয় হবে এরপর তুমি শুধুই আমার হবে,শুধুই আমার।
কথাগুলো বলতে বলতে যেন শায়লাকে তার খুব কাছে পাওয়ার অনুভুতিতে  শিহাব ওপ্রান্ত থেকে অস্ফুট এক মায়াজড়ানো কন্ঠে শায়লাকে জড়িয়ে নিতে চাচ্ছে।বারবার বলছে,শায়লা আমি টের পাচ্ছি তুমি আমার খুব কাছে চলে এসেছো। আমি তোমার সবটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছি । 
শায়লা বুঝতে পারছে না শিহাবের এই মনের অবস্থায় তার কি করা উচিত। তার ভেতরেও অনেক কিছু ভেঙে মুচড়ে যাচ্ছে। অনেক অপ্রকাশিত অনুভুতির প্রকাশে শায়লাকে আপ্লুত করে তুলছে। দেহের শিরা উপশিরায় রক্তের স্রোত বাড়ছে। হৃদ কম্পনের আওয়াজ যেন শুনতে পাচ্ছে,আর তা ক্রমশই বেড়ে চলছে। শায়লা বুঝতে পারছে না কেন তার নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।অন্ধকারেও শায়লার চোখ শিহাবকে দেখতে পাচ্ছে।মনে হচ্ছে শিহাব তার খুব কাছে এসে বসেছে।খুব কাছে,নিঃ শ্বাসের দূরত্ত্বে তাকে উষ্ণতায় বাঁধতে চাইছে। শায়লা শক্ত করে চোখ বন্ধ করে অনুভবের পূর্ণতায় এক সুখানুভবে নিজেকে ভরিয়ে নিলো।
দুজনেই কিছুক্ষন নীরব  রইল। শায়লা কল কেটে দিলো। বেড সুইচে ঘরে আলো জ্বালালো। মুখে হাত বুলিয়ে দেখলো বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। নিজেকেও কেমন যেন নিস্তেজ লাগছে। গলা শুকিয়ে কাঠ! শায়লা পাশে রাখা এক গ্লাস পানি গলায় চালিয়ে নিলো।ভীষণ ইচ্ছে করছিল,এখন শিহাবকে কাছে পেতে। হঠাৎই আয়নায় চোখ পড়লো শায়লার।নিজেকে দেখে নিযেই লজ্জা পেয়ে গেলো।শায়লা দ্রুত ঘরের  বাতি নিভিয়ে দিয়ে দু'হাঁটুর উপর মাথা গুঁজে বসে রইল।ভেতরে এক চাপা উত্তেজনা।যেন শিহাবের ছুঁয়ে যাওয়া অনুভব! শায়লার ভেতর থেকে কান্নার সাগর উগড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।নিজেকে অসহায় লাগছে।শিহাবের কাছে আশ্রয় খুঁজে ফিরছে। শায়লা মনের অজান্তেই কয়েকবার শিহাব শিহাব বলে ডেকে উঠলো।কিন্তু শব্দগুলো যেন কন্ঠ থেকে বেরুলো না তবুও শায়লার এ ডাক যেন শিহাবের কানে গিয়ে ঠিকই পৌছুলো। 
তক্ষুণি শিহাবের মেসেজ এলো।
শায়লা কি করছো?আমি তোমার ডাক শুনেছি।এইতো আমি, দেখো তাইতো সাড়া দিলাম!
শিহাব এক মূহুর্ত দেরি না করে  আবার মেসেঞ্জারে কল দিলো। শিহাবের ভরাট কন্ঠে 
শায়লা ! ডাকটিতে শায়লা যেন আরো বেশি আবেগাপ্লুত হলো! শায়লা বুঝতে পারে  না, কেন, যত রাত বাড়ে আর ততই আবেগের এমন চেপে বসা। এমন আবেগী কন্ঠে নিজেকে সঁপে দেয়া।বাইরে রাতের আঁধার যতই ঘন হতে থাকে চাওয়া পাওয়ার প্রাবল্য ততই যেন ঘিরে ধরতে থাকে ।মনে হয় যেন শত্রুপক্ষের প্রবল আক্রমণে প্রতিপক্ষকে জয় করে নিতে চাইছে।শায়লা বুঝেনা,  দিনের আলোয় লুকিয়ে থাকা অনুভুতিগুলি যেন রাত হলেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ওদের পাওনাগুলো বুঝে নিতে চায়। বিনিময়ে জীবনাতিপাতে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়।শায়লা জীবনের এই বাঁকগুলো  ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।কেন দিন আর রাতের এই বৈষম্যের খেলা? কেন একজন মানুষের ক্সছেই সবটা সমর্পিত থাকে।কেন হাজারো মানুঢের চলাচলেও শুধু একজিন মানুষই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এসবের উত্তরে শুধু শিহাব ন্সমটই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে! শায়লা কোথায় যেন  ভাবনার অতলান্তে ডুবেছে সাথে কিছু লজ্জাও মিশেছে।
শিহাব ওপ্রান্তে অপেক্ষায়।শায়লা,আমি তোমার জন্য নতুন করে বাঁচবার প্রেরণা পেয়েছি।তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না।


চলবে....

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা





গ্রামের ছেলে
 সেলিম সেখ 
 

ওই যে চলে গ্রামের ছেলে
মেঠো পথ বেয়ে,
মনের সুখে কাটায় দিন
পল্লী গীতি গেয়ে।

গ্রামের ওই পুকুরেতে 
দিচ্ছে তারা ডুব,
গ্রামের ছেলেরা মিলে 
করছে মজা খুব।

গ্রামের ওই ছেলেরা দেখি
করছে কৃষিকাজ আজ,
এভাবে দিন কেটে যায় 
নেইকো তাদের লাজ।

গ্রামের ওই রাস্তা ঘাট
সবই তাদের চেনা,
গ্রামের ওই ছেলেগুলো
হয় যে দেশের সেনা।

গ্রামের ওই গাছগাছালি
মেটায় মনের সুখ,
এভাবেই যায় গো দিন 
থাকেনা কোন দুঃখ।

গ্রামের ছেলের মনেতে
থাকে না কোন খেদ,
সকল কাজের পিছেই থাকে 
তাদের উদ্যম-জেদ।

গ্রামের ছেলে বলে আজ 
করছো তাদের হেলা,
ভেবে দেখো ওদের সাথেই 
কাটিয়েছ শত বেলা।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ৫ম পর্ব




উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
(৫ম পর্ব)

মনি জামান


নিলয় আর মেবিন সারাদিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যার একটু আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে তারপর চারুর সাথে বের হলো ওরা তিনজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুটো রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে পড়লো চারুঃ নিউ মার্কেট মোড় যাবো,কিছুক্ষণ পর ওরা তিনজন রিক্সা থেকে নেমে শহরের একটি কফি হাউজে ঢুকলো,ঢুকেই চারু মেবিন ও নিলয় একটি টেবিলের পাশে চেয়ারে বসলো।
চারু তিনটে কফির অডার করলো বয় একটু পর কফি দিয়ে গেলো,ওরা কফি খেয়ে আবার বের হলো কফি হাউজ থেকে, তারপর শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরলো ঘুরতে ঘুরতে সময় কখন পার হয়ে গেল ওরা বুঝতেই পারিনি।
চারুঃ ঘড়ি দেখে বলল অনেক রাত হয়ে গেছে মেবিন,চল বাড়িতে যায় মা আবার অস্থির হয়ে পড়বে কালকে দিনের বেলায় এসে আমরা আবার ঘুরবো।
মেবিনঃ চল চারু বলেই ওরা বাড়িট দিকে রওনা হলো,কিছুক্ষণ পর রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো তখন রাত নয়টা বাজে।বাসায় এসে ওরা যার যার মত ফ্রেস হয়ে সোফায় এসে বসলো,চারুর মা ওদের খেতে ডাকলো ওরা খাবার টেবিলে এসে বসে পড়লো অনেক খিদে পেয়েছে মেবিনের।
চারুর মা খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন করলো,চারু ওর মায়ের সাথে নিলয় ও মেবিনের সম্পর্কের কথা নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিল,নিলয় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো তারপরও পরিচিত হয়ে খুশিই লাগছে ওর।চারুর মা খুব অমায়িক এবং প্রাণ খোলা একজন মানুষ অনেক কথা জিজ্ঞেস করলো নিলয়কে,নিলয়ের মায়ের কথা বাবার কথা ওদের বাড়ির কথা,নিলয় সব বলল,চারুর মা সব শুনে খুব খুশি হল  তারপর বলল,তোমরা খেয়ে তারপর তিজন বসে গল্প কর এবং মনে করবে এটা তোমাদের বাড়ি বলেই উনি চলে গেলেন।
ওরা তিনজন খাওয়া শেষ করে চারুর রূমে  এসে বসলো,তারপর সমুদ্র সৈকত নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করলো কাল কখন যাবে সমুদ্র সৈকতে,সিদ্ধান্ত হল কাল বিকালে ওরা সমুদ্র সৈকত দেখতে যাবে।
চারুঃ তাহলে ড্রাইভার কে ফোন করে জানিয়ে দেই গাড়ি আনতে কাল বিকালে আমরা সমুদ্র সৈকতে যাব এটা,মেবিনঃ হ্যাঁ তাই বলে দে,চারুঃ ফোন করলো ড্রাইভারকে জানিয়ে দিল আগামীকাল বিকালে সমুদ্র সৈকতে যাবে সে কথা আপনি গাড়ি রেডী রাখবেন।
ড্রাইভারঃ ঠিক আছে আপা কালকে স্যারকে বলে গাড়ি নিয়ে আসবো।
চারু ফোনটা কেটে দিয়ে নিলয়ের রূমটা ঠিক করে দিয়ে তারপর মেবিনকে সাথে নিয়ে ওর রূমে ডুকলো,চারুঃ রাত অনেক হয়েছে মেবিন চল শুয়ে পড়ি,মেবিনঃ হ্যাঁ চল চারু আর মেবিন ওদের রূমে গিয়ে দুজন শুয়ে পড়লো,নিলয় তখন অন্য রূমে
একা একা শুয়ে ভাবছে মেবিনের কথা,ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেলো, ভোরে ফজরের আযান হচ্ছে নিলয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল ঘুম থেকে উঠে নিলয় অযু করে ফজরের নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পড়লো এবং মনে মনে ভাছে মেবিন উঠেছে কি না, ভাবছে ট্রেন জার্ণির সেই রোমাঞ্চকর সময়ের কথা।
একটু পরে জানালার ফাক গলে ভোরের সূর্যের আলো নিলয়ের রূমে উকি দিল,নিলয় উঠে পড়লো এবং দরজা খুলে বাইরের রেলিং এ এসে দাঁড়িয়ে বাইরের অপূর্ব সকালের অপূর্ব দৃশ্য দেখে আবির্ভূত হয়ে গেলো,একদম নিরব শহর মনে হয় শহর ঘুমিয়ে আছে হয়তো একটু পরেই জেগে উঠবে আর কোলাহল নগরীতে পরিণত হবে।শহর প্রাণ ফিরে পাবে শহর হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন টোকা দিয়ে  চারুঃ এই যে মিষ্টার এখানে একা একা কি দেখছ,নিলয় পাশ ফিরে দেখলো চারু দাঁড়িয়ে আছে।
নিলয়ঃ মেবিন উঠেনি?চারুঃ উঠেছে তবে তোমাকে ডাকছে মিষ্টার,নিলয়ঃ চল তাহলে  বলে মেবিনের রূমে প্রবেশ করে দেখলো মেবিন শুয়ে আছে,নিলয় মেবিনের পাশে বসলো।
নিলয়ঃ ওর গায়ে হাত দিয়ে ডাকলো এই কাক পাখি এখনো শুয়ে আছো কেন উঠো,মেবিন নিলয়কে কাছে টেনে নিয়ে মেবিনঃ খুব মিস করছি সোনা তোমাকে।নিলয় ছোট্ট করে মেবিনের কপালে একটা চুম্বন দিলো, হঠাৎ চারু চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো,মেবিনঃ আর সময় পেলিনা চা নিয়ে আসার,চারুঃ  সামনে অনেক সময় পাবি মেবিন তখন----!
নিলয়ঃ হো হো করে হেসে উঠলো,চারুঃ হয়েছে চা খেয়ে উঠে পড় মনে আছে সমুদ্র দেখতে যাব আজ।
মেবিনঃ তোর কেমন লাগে নিলয়কে বলবি একটু,চারুঃ  নিলয় আসলেই সুন্দর মনের একটা ছেলে সেই প্রথমেই তো তোকে বলেছিলাম প্রেম করলে এমন ছেলের সাথে কর বলেই চারু হাসলো।
মেবিনঃ থাক হয়েছে আর গুনকির্তন করতে হবে না তোকে,চারুঃ ওমা সেকি কথা আমি কখন কির্তন গাইলাম।
মেবিনঃ হয়েছে তুই এক কাজ কর আমার জন্য পারলে এক কাপ গরম পানি নিয়ে আয় ঔষধ খাবো।
চারুঃ তোর এখনো ঔষধ খেতে হয়, মেবিনঃ জার্নি করলে একটু খেতে হয় ঠান্ডা লাগে আমার,চারু উষ্ণ গরম পানি আনতে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো,এই সুযোগে নিলয় মেবিনের কাছে এসে বসলো,তারপর মেবিনকে জড়িয়ে ধরলো,মেবিনঃএই ছাড়ো ছাড়ো চারু এখুনি এসে যাবে ও যা শয়তান দেখলে আস্ত রাখবে না।
নিলয়ঃ চারু জানে আমাদের সম্পর্ক ও কিছু বলবেনা,মেবিনঃ ওহ নিলয় ছাড়ো না প্লীজ,এমন সময় দরজার বাইরে থেকে চারু দরজায় নক করলো,মেবিন তাড়াতাড়ি উঠে বসলো নিলয় ও মেবিনকে ছেড়ে দিয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে দিল,চারু তখন মুচকি মুচকি হাসছে।


চলবে.....

২২ জানুয়ারী ২০২২

মমতা রায় চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস ৯৬ পর্ব





উপন্যাস 


টানাপোড়েন ৯৬
স্তম্ভিত
মমতা রায় চৌধুরী

উদভ্রান্তের মতো নদী ছুটে এসেছিল হাসপাতালে। চোখেমুখে ছিল এক আতঙ্ক। অজানা ভবিষ্যতের জন্য একরাশ আশঙ্কা আর মনের ভেতরে জমে থাকা অপরাধে  নদীর মনে হচ্ছিল সেই কি তবে তার মায়ের একমাত্র মানসিক চাপ ? কেমন সবকিছু হয়ে গেলো। নদী কি তাহলে একটা হিংস্র জন্তু? যেমনি করে হিংস্র জন্তু দের হাত থেকে গ্রামের মানুষ তাদের নিরীহ জীবগুলোকে ক্যানেস্তারা পিটিয়ে বাঁচায়।
অরুনাভদাকে হসপিটাল থেকে দেখে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছিল আর ভেবেছিল, যাক একটু স্টেবল আছে। 
ডাক্তার বলেছেন রক্ত বেরিয়েছে তো? ভয়ের কিছু কারণ নেই, তবে স্ক্যান করাতে হবে। অবজারভেশন থাকুক। নদী যখন অরুনাভদার কাছে গেছিল ,তখন নদীর চোখ দুটো ছল ছল করে উঠেছিল। উচ্ছল অরুনাভ সেদিন কত কথাই না বলেছিল।
আর আজ দেখো কেমন অসহায় শিশুর মতো পড়ে আছে।
অরুনাভদাকে  দেখে নদী আনমনে মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকের ফুটপাত ধরে
 হাঁটছিলো ।এতটাই অন্যমনস্ক ছিল যে কোন পথচারী যদি হঠাৎ তার সামনে এসে যায় খেয়াল করতে পারবে না। তীর্থ, সমুদ্র, মেঘলা,রথীন সবাই ওরা একটু নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিল। ঠিক,সেই সময় নদী বেরিয়ে পড়ে। মেঘলা রথিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে 'হ্যাঁ রে, নদী কোথায় গেল?'
তীর্থ ,সমুদ্র, তো একেবারে হা হয়ে গেল কথা শুনে।
তীর্থ বলল'অরুনাভদার কেবিনে ছিল,দেখ ভালো করে গিয়ে।'
মেঘলা বলল-'আমি না দেখে কি আর তোদেরকে বলছি ।'
আজকাল নদী যেন কেমন  হয়ে যাচ্ছে।
সমুদ্র বলল  'চল, চল ,চল দেখি। খুঁজে দেখি।
তীর্থ বলল- ', হ্যাঁ , তুই তো বাইক আরোহী ছিলি
 বাবা ।কিছু হলে বুঝতে পারছিস.. বলেই রথিনকে চিমটি কাটলো।'
সমুদ্রের মুখটা ক্ষণিকের জন্য কেমন পানসে হয়ে গেল ।
সমুদ্র বললো 'তোরা যাবি ?না, আমি একাই 
যাবো ?'
উত্তরের প্রত্যাশা না করেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করল।
রথীন  বলল  ', আরে, আরে, তুই যাচ্ছিস, তোর বাইকটা কি ফেলে রেখে যাবি ?'
সমুদ্র আবার ফিরে এসে বাইকের কাছে দাঁড়ালো ,বাইকটা স্টার্ট করে ছুটল।
রথীন পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল "আরে, আরে, আমাদের নিয়ে চল?'
তারপর হাঁপাতে শুরু করল 
তীর্থ হেসে বলল' কোন লাভ নেই ব্রাদার। সমুদ্র এখন নদীর খোঁজে। চলো আমরা হাঁটতে শুরু করি।'
মেঘলা বলল' আর আমাকে রেখে দিয়ে তোরা চলে যাচ্ছিস তার বেলা?'
তীর্থ রথিনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল' হ্যাঁ ,তাই তো রথীন তোকে নিয়ে যাবে। বলেই রথীনের কাঁধদুটোকে ঝাঁকালো।'
সমুদ্র বেশ খানিকটা পথ এগিয়েছে কিন্তু নদীকে দেখতে পাচ্ছে না।
 এবার সমুদ্র কায়দা করে  মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকের পথ ধরল।
কিছুটা পথ যাবার পরই দেখতে পেল নদীকে  দূর থেকে দেখতে পেল নেবি ব্লু কালারের জিন্স প্যান্টের উপরে লাল কুর্তি। হাঁটার স্টাইল দেখে তো মনে হচ্ছে নদী।'
সমুদ্র একদম নদীর পাশে গিয়ে বাইকটাকে থামালো। আর কাছে গিয়ে বলল 
'কি ব্যাপার ,তুই একা একা যাচ্ছিস যে বড়ো ।আমি তো তোকে নিয়ে আসলাম ।আমাকে তো বলতে পারতিস?'
নদী কোন উত্তর দিচ্ছে না। হেঁটে চলেছে সমুদ্র সাইডে সাইডে যাচ্ছে আর বলছে
' কি ব্যাপার, উত্তর দিচ্ছিস
 না। কি হল তোর হঠাৎ?'
নদী এবার বলল 
'কেন রে সব সময় তুই আমার পেছনে আসিস?আমি কি যেতে পারবো না আমার বাড়িতে?'
সমুদ্র নদীর কথাতে কিছুটা হকচকিয়ে যায় । তারপর আস্তে আস্তে বলে ' কেন পারবি না?  আমি তোকে নিয়ে 
এসেছি।  আমারও তো একটা দায়বদ্ধতা আছে বল?'
 নদী এবার একটা সাইডে দাঁড়ালো।
 তারপর সমুদ্রকে একটা সিগারেট দিয়ে বললো
' নে ধর ,অনেকক্ষণ পিছু নিয়েছিস তো এটা তোর
 বকশিশ ।'
সমুদ্র প্রত্যাখ্যান করে বলল 'আমি খাব না সিগারেট?'
নদী একটু অবাক হয়ে বললো "হ্যাঁ, ভুতের মুখে রাম নাম?'
সমুদ্র তখনও চুপ করে 
দাঁড়িয়ে।
নদী এবার সমুদ্র পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে ওর চোখে মুখে দিতে লাগল। তারপর বলল
' কি রে'এখনো না বলবি?'
এ তো মনে হচ্ছে বিড়ালের কাছে মাছ রেখে ,মাছ পাহারা দেবার কথা বলার মতো অবস্থা।'
সমুদ্র এবার হাত বাড়ালো ।
নদী সমুদ্রকে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিল।
এরমধ্যে নদীর ফোনে ফোন বেজে উঠল। রিং হতে লাগল''নদীর যেমন ঝর্ণা আছে..


সমুদ্র বলল হ্যাঁরে ফোনটা রিসিভ কর।
নদী বলল' ওই তো ফোন করবে হয় তো ঝরনা মাসি ।বলবে রাত হচ্ছে বাড়ি এসো খাওয়া-দাওয়া করবে ।নানা রকম কথা।'
সমুদ্র বলল' শুধু কি তাই? অন্য কোন মেসেজ দেবার ও তো থাকতে পারে ,দেখ না ফোনটা ধরে।'
নদী বলল 'বাবা ,তুই তো অনেক বেশী জেনে গেছিস রে?'
আবার ফোনে রিং হতে লাগল।
সমুদ্র এবার বলল 'এই ফোনটা ধর না রে বাবা ।'
নদী তখনো নিরুত্তর সিগারেট শেষে আরেকটা সিগারেট ধরিয়েছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।
 সমুদ্র নদীর ব্যাগের চেন খুলে হাতরে হাতরে ফোন বার করার চেষ্টা করছে।
নদী বলল' অন্যের ব্যাগ পারমিশন ছাড়া যে হাত দেয়া যায় না জানিস না তুই?'
সমুদ্র বললো 'সব জানি  কিন্তু তখনই সেই ব্যাগে হাত দেয়া যায় যখন নিজের মনে করা যায়।'
নদী বললো 'থাক তোকে অত ঘাটতে হবে না, আমি দেখছি।'
সমুদ্র বলল-'ইয়ে হুয়া না বাত।'
নদী এবার ফোনটা রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে বলল "তোমার মাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।তুমি তাড়াতাড়ি এসো।'
নদীর কাছে এইরকম একটি মেসেজ অপ্রত্যাশিতভাবে আসাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।
 সমুদ্র বলল' কি হয়েছে রে? কি ব্যাপার?'
নদীর হাত থেকে সিগারেট পড়ে যায় শুধু বলে' মা,মা, মা।'
সমুদ্র বলে কি হয়েছে
 আন্টির? মা, মা করছিস যে?'
নদী বলে' মাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে?'
সমুদ্র বললl' সে কিরে? কোন হসপিটাল, সেটা শুনলি?'
নদী শুধু ঘাড় নেড়ে না করলো।
নদী হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আসলে আজ মায়ের সঙ্গে ওরকম বিশ্রী ভাষায় কথা বলার পর….

মনে পড়ে গেল 'মাকে ও অনেক উল্টোপাল্টা কথা বলেছিল। তুমি ফুর্তি কর, ফুর্তি করো তুমি অফিসে? মেয়ের জন্মদিনে তোমাকে ফিরতে হয় অসুস্থ হয়ে?'
তখন রুপসা বলেছিল' আমার কত যন্ত্রণা ,তুই সেটা কখনও বুঝবি না?'

নদী আরও বলেছিল 'আমাকে জন্ম দেবার সময় তোমার মনে ছিল না?'
চিৎকার শুনে ঝরনা মাসি ছুটে এসেছিল আর বলেছিল' মায়ের সঙ্গে এই ভাষায় কথা বলছ মামনি?'
নদী বলেছিল 'আর মাসি তুমি মা দেখিও না ।মাকে মার মত হতে হয়।'
মেয়ের এই মূর্তি দেখে রুপসা একেবারে বিমূঢ় হয়ে গেছিল। আর মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চুলের মুঠি ধরে সপাটে চড় মেরেছিল মেয়ের গালে।
চড় খেয়ে নদী কিছুটা মুহূর্ত হতভম্ব হয়ে গেছিল ।তারপর সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এসেছিল নিজের রুমে। আর ঠিক তখনই সমুদ্রের ফোনে ফোন এসেছিল অরুনাভদার অ্যাক্সিডেন্টের।
আবার  মাও হসপিটালাইজড এই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে নদী ।অনুতপ্ত হতে থাকে।
এখন কান্নার সময় নয় মাথা ঠান্ডা কর ।
সুমুদ্র বলে 'দেখি ফোনটা লাগা ঝর্ণা 
মাসিকে ।কোন হসপিটালে নিয়ে গেছে ।সেখানে আমরা যাই,  গিয়ে দেখি কি হচ্ছে?'
নদী বলে' আমি কিছু ভাবতে পারছি না ।সমুদ্র আমি কিছু ভাবতে পারছি না ।আমার বাপি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি মাকে হারাতে চাই
না ।আমি মাকে হার্ট করতে চাই নি সমুদ্র ,বলেই সমুদ্রের বুকে নিজের মাথাটা রাখে।
রথীন ,তীর্থ ইতিমধ্যে এসে 
গেছে ।
রথীন তীর্থকে একটু গায়ে চিমটি কেটে টিপ্পনী কেটে বলে 'দেখ ,দেখ ,দেখ, লাভ সিন কাকে বলে দেখ। একেবারে রাস্তায়।'
তীর্থ বলে  'রথীন এটা কিন্তু লাভ সিন নয় ।ভালো করে দেখ নদী কেমন আকুলি-বিকুলি করছে। কিছু একটা হয়েছে। চল, চল ,চল যাই।'
রথীন বলে' ও মাঝে মাঝে এরকম নাটক করে?'
এই রাখালের গল্পটা পড়িস নি রোজই রাখাল বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করত। আর বোকা বানাতো। শেষে যেদিন সত্যিকারের বাঘ ধরল তার কি পরিণতি হয়েছিল?'
চল না, যাই। গিয়ে দেখি না কি হয়েছে?'
রতিন আর কোন কথা না বাড়িয়ে তীর্থর পেছ পেছ গিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সমুদ্র দেখে বলে এই আংটি হসপিটালাইজড চল। আমরা এখন ওখানে যাব।
তীর্থ শুনে বলে ' কি বলছিস? কি হযেছে? কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে! কখন হয়েছে?
সমুদ্রহাত তুলে ওদেরকে বলে ', 'থাম ,থাম এত প্রশ্ন তো একসঙ্গে করলে আমি উত্তর দিতে পারবো না ।একটু ওয়েট কর ,তোরা  নদীকে ধর।'
একটা ফোন করে নিই নদীরবাড়িতে।
সমুদ্র ফোন লাগায় নদীর ফোন থেকে রিং হতে থাকে কেউ রিসিভ করে না ।
তারপর আবার ঢং করে অপরপ্রান্ত থেকে বলে "হ্যালো'
সমুদ্র বলে ঝরনা মাসি আমরা নদীর বন্ধু বলছি আন্টিকে কোন হসপিটালে নিয়ে যাওয়া  ?
ঝরনা মাসি বলে
'হসপিটালে না ।নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উডল্যান্ড নার্সিংহোম।
সমুদ্র বলল ', ওকে ।আমরা এক্ষুনি পৌঁছে যাচ্ছি।'
ঝরনা  মাসি উদ্বেগ কন্ঠে বলল' ঠিক আছে।'

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা




সন্তান কখন হয় শয়তান?
 শিবনাথ মণ্ডল


পিতা মাতা সন্তানদের বড়ো করে
খাইয়ে বুকের সুধা
তাদের মুখে হাসি ফোটাতে
লুকায় নিজেরক্ষুদা।
কষ্টকরে লেখাপড়া শিখিয়ে 
চাকুরী দিলে কিনে
বিয়ের পরে কিছু ছেলেরা 
বাবা মাকে রাখেনা মনে।
পিতামাতাকে ভাত দেয়না
বিদেশি কুকুর পোষে
সর্ব হারা বাবা মা এখন
চোখের জলে ভাষে।
চালাঘরে জায়গা দেয়
নতুবা সিঁড়ির তলায়
বাবামাকে খেতে দেবনা
বলে জোড় গলায়।
বন্ধু বান্ধব এলেপরে
তাদের যত্ন কত
বাবা মা চাইলে খেতে
গালি দেয় যত।
কষ্টকরে সন্তান মানুষ করে
পেলাম এই ফল
মরার সময় তোদের হাতে
চাইনা খেতে জল।।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা





বীর সৈনিক
সেলিম সেখ


ওহে বীর সৈনিকের দল তোমরা অবিচল,
রক্ষা করতে জন্মভূমিকে বদ্ধপরিকর।

তোমরা রণবীর,করনি নত শির,
দেশের মান রক্ষা করতে হয়েছো সৈনিক। 

 শত্রুদের করেছো পরাজয়,
তাই আজ করছে তারা ভয়। 

সৈনিক তুমি তোমার সাহসে দেশ যে সাহস পাই, 
দেশের ভিটে রক্ষা করো প্রাণ যদি চলে যায়। 

ওই দেখো ভাই বীর সৈনিক হারাচ্ছে আজ প্রাণ, 
ওদের রক্ত সাক্ষ্য দেবে আমরা দিয়েছি বলিদান। 

দেশরক্ষায় লিখিয়েছে নাম ওরা সকলেতে, 
তাইতো আজ পড়ে রয়েছে দেশের কোলেতে। 

ওদের বুকের ওপর থাকবে যেদিন দেশের পতাকা, 
ফুল দিয়ে শেষ বিদায় দেবে, দেবে শহীদের মর্যাদা। 

যুদ্ধের সময় তোমরা যদি না দেখাতে বীরত্ব, 
দেশ আজ হতোনা পরাধীনতা থেকে মুক্ত। 

তোমাদের আত্ম বলিদান ভুলবে না কভু দেশ, 
যতদিন থাকবে এই প্রাণটুকু অবশেষ।

২১ জানুয়ারী ২০২২

কবি আব্দুস সালাম এর কবিতা




রূপকথার বক
আব্দুস সালাম 


করোনা মাখানো শ্বাসকষ্টের সংসার শব্দহীন যাতনাগুলো   বৃষ্টিবাদলে   ঝাপটা খায়
 চুমু খায় বিপন্ন বিশ্বাস 

শব্দের আলনায় টাঙিয়ে রাখি স্বপ্ন
 রক্তাক্ত বিবেক চড়ে জীবনের পিঠে 
চুরমার হওয়া মানুষ ভাষণ শোনে অন্ধকারের
  তার পর আত্মক্ষরণের পুকুরে  সেরে নেয়  স্নান 

 বসবাসের ঠিকানায় দাফন হয় সভ্যতা ভাবের ঘরে রুদালীরা  আসে
  অলীক কান্নার বাষ্পায়নে মুখর করে মহল্লা
 দুঃখের প্রহসন সাজায় ,
মৃত শবের উপর ভনভন করে মাছি
ভাঙা রেলিঙে বসে শিকার খোঁজে প্রত্যাশার বক

 আমাদের আশ্বাস গুলো ঢেউয়ে ঢেউয়ে মাতোয়ারা 
 প্রার্থনার ঘরে বসে আছে অলীক ভগবান বিশ্বাসের চাতালে  মাথা ঠুকি দুবেলা
 নিদ্রালু চোখে পুরোহিত ছিটিয়ে দিচ্ছে শান্তিজল 
রূপকথার পাতালপুরীতে তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের  সব আহ্লাদ




১২/০১/২০২২

কবি সুবর্ণ রায় এর কবিতা




প্রেম
 সুবর্ণ রায়


একটা ঘর থেকে আর একটা ঘরে 
একটু একটু করে চলে যাচ্ছে অন্ধকার…

একটা ঘরে একটু একটু আলোর ছায়া
একটা ঘরে দীর্ঘ হচ্ছে আঁধারের মায়া

দুয়ারে এসে দাঁড়িয়ে আছে ভোরবেলা
তুমি আড়মোড়া ভাঙবে না প্রিয়!

২০ জানুয়ারী ২০২২

কবি মুনতাহা জামান মনি  এর কবিতা




এলোমেলো পথ
মুনতাহা জামান মনি 


বলেই তো ছিলেম আমি!
আমার পথ এতটা মসৃণ  নয়
যতটা তুমি ভাবো।

বহুদূর  হাঁটা তো দূরের কথা 
হয়ত একটু  হেঁটেই হোঁচট  খাবে
যতটাই কাছে টানো দূরত্ব  বাড়াই তবে।

দেখোনা নিজের  দৃষ্টিতে - আমাকে
বড্ড  গোলাটে  মনে হবে,
আমার দৃষ্টিতে  দেখতে জানলে
সুন্দর  সঠিক  লাগবে অনুভবে।

মানুষ  হলে-ও  মানুষ  আলাদা নিজের  মত
পূস্প যেখানে  গোছায় গোছায়
কাটা ও বিরাজমান  তত।

কড়া  নেড়ে  হৃদ দূয়ারে
জোর  খাটানো  ইচ্ছে গুলো
মরে গেছে  সে-ই  কবে। 

এই তো  বেশ আছি
হেসেই  ব্যাথা  উড়াবো,
যখন  আমি বন বিলাসী   হব
ফুল কুড়াবো -ছেড়ে  দিলেই  তবে।

মানি জামানের ধারাবাহিক উপন্যাস /৪





ধারাবাহিক উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
( ৪ র্থ পর্ব ) 
মনি জামান


মেবিন আর নিলয় অপেক্ষা করছে চারুর জন্য,ট্রেন থেকে নেমে ষ্টেশনে ওরা দুজন প্রায় তিরিশ মিনিট বসে আছে কিন্তু চারু এখনো এলো না।মেবিন ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন করলো ওর বান্ধবী চারুর কাছে চারু ফোন রিসিভ করে বলল,কোথায় তোরা এখন,মেবিন বলল,ষ্টেশনে বসে আছি প্রায় আধা ঘন্টা হবে।আমরা ট্টেন থেকে নেমেই তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
চারু বলল,নিলয় এসেছে নাকি ওর তো আসার কথা,মেবিন বলল,কি জানি,চারু বলল,তোরা অপেক্ষা কর আমি এখুনি চলে আসছি তোদের নিতে।
মেবিন ফোনটা কেটে দিলো চারুর আসবার অপেক্ষায় নিলয় আর মেবিন বসে রইলো আর বার বার ঘড়ি দেখছে মেবিন।নিলয় আর মেবিন দুজনেরই ট্রেন জার্নিতে রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি মেবিন নিলয় স্বপ্ন ঘুমে আছন্ন ছিল গোটা রাত জুড়ে।
প্রায় আধা ঘন্টা পরে চারু ওর বাবার গাড়ি নিয়ে হাজির হলো স্টেশনে,নিলয়কে দেখেই চারু মেবিনকে বলল,তুই যে বললি নিলয় আসিনি এইতো নিলয় খুব ভালো লাগছে নিলয়কে দেখে।
মেবিন স্বভাব সুলভ হেসে বলল,আরে বললে তুই তো প্যাচাল করতি তাই তোর জন্য সারপ্রাইজ রেখেছিলাম,চারু এক গাল হেসে বলল,হয়েছে এবার গাড়িতে উঠে বসো বস,নিলয় আর মেবিন চারুর গাড়িতে উঠে বসলো,চারু ড্রাইভারকে  বলল,গাড়ি ছাড়তে ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো।মেবিন চারুকে বলল,স্টেশন থেকে  তোদের বাসায় যেতে কত সময় লাগবে
চারু বলল,মাত্র আধা ঘন্টা কেন সমস্যা হচ্ছে তোর মেবিন বলল,খুব ঘুম পাচ্ছে গো চারু বলল,কি ব্যাপার সারারাত বুঝি!মেবিন চারুকে একটা ছোট্ট চড় দিয়ে বলল,খুব ফাজিল হয়েছিস তাই না।
চারু আর মেবিন দুজনেই হেসে উঠলো,
চারু আবার বলল,সত্যি করে বল আমাকে সব মেবিন বলল,কি বলবো সেটাই তো বুঝতে পারছিনা গো।চারু বলল,না বুঝার ভান করছিস না সব আমাকে বল চারু একটু অভিমানের সুরে বলল ঠিক আছে না বলিস শুনবো না আর তোদের কথা।
আমি তো তোর বেষ্ট বান্ধবী হতে পারলাম না,মেবিন চারুকে বলল,এই ফাজিল এখানে শুনবি না বাসায় চল তারপর সব তোকে বলবো।
চারু আর মেবিনের কথোপকথনে সময়টা কখন যে পার হয়ে গেলো একটুও টের পাইনি,এর মধ্য গাড়ি এসে থামলো চারুদের বাসার সামনের গেটে।
চারু গাড়ি থেকে নেমেই মেবিনকে বলল, নিলয় আর তুই নেমে আয়,মেবিন ও নিলয় দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।চারু ড্রাইভারকে বলল,ব্যাগ পত্র নামিয়ে বাড়ির ভিতর আসতে,বলেই নিলয় আর মেবিনকে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো।চারুর মা ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল ওদের দেখেই স্বাগতম জানালো এবং নিলয় আর মেবিনকে জিজ্ঞেস করলো তোমরা কেমন আছো,বাড়ির সবাই কেমন আছে নিলয় আর মেবিন সব বললো,চারুর মা মেবিনকে বলল,এই বুড়ো মেয়েটার কথা বুঝি মনে নেই আজ মনে পড়লো।
মেবিন বলল,মনে আছে আন্টি আর আছে বলেই তো মেয়েকে দেখতে এলাম।
চারুর মা চারুকে বলল,তুই ওদের নিয়ে রুমে নিয়ে আয় আমি নাস্তা নিয়ে আসি বলেই রান্না ঘরে চলে গেলো।
নিলয় আর মেবিন চারুর রূমে এসে বসলো,চারু নিলয় আর মেবিনকে ওয়াস রূম দেখিয়ে দিয়ে বলল,তোরা ক্লান্ত তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নে মেবিন আর নিলয় দুজন ওয়াস রূমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর এসে সোফায় বসলো,চারু মেবিন আর নিলয় খোশ গল্পে মেতে উঠলো,চারু হেসে বলল,কেমন কেটেছে তোদের দুজনের বল শুনি একটু,মেবিন বলল,কেমন কাটবে আর সবার যে রকম কাটে আমাদেরও তাই কেটেছে,এমন সময় চারুর মা ওদের জন্য নাস্তা বানিয়ে এনে টেবিলে দিয়ে বলল,নাস্তা সেরে নাও তারপর তোমরা গল্প কর বলেই রূমের দিকে চলে গেলো,চারু মেবিন ও নিলয়কে মেবিনকে সাথে নিয়ে নাস্তার টেবিলে এসে বসলো,তারপর নাস্তা পরিবেশন করার ফাকে ফাকে চারু দুষ্টমির তীর ছুড়ছে মেবিনের দিকে।
চারু নিলয়কে বলল,দুলাভাই কেমন কাটলো তোমার লং জার্নিটা বলো শুনি নিলয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না বলে দিলো ফাটাফাটি।চারু হেসে বলল,ওটা অমন বলেই,,,আবার হাহাহা করে হেসে উঠলো। মেবিন চারুকে বলল,শোন ইদানীং খুব ফাজিল হয়েছিস তুই!এটা ভালো হচ্ছে না কিন্তু।চারু বলল,ওমা কি বলিস সত্যকে সত্য বলা কি মহা অন্যায়!মেবিন বলল,হয়েছে এবার থাম তো তুই।
চারু আবার নিলয়কে বলল,দুলাভাই আরব্য রজনীর হাজার রাতের গল্পটা তুমি বলো আমি শুনি আমি জানি মেবিন কখনো বলবে না আমাকে,নিলয়ের কেন জানি দুলাভাই শব্দটা মারাত্মক ভালো লেগে গেলো কি একটা যাদু যাদু ভাব আছে দুলাভাই শব্দটার ভিতর।
চারু বলল,কি হলো দুলাভাই বলো শুনি!মেবিন চারুকে বলল,থামবি চারু পরে একসম সব শুনিস,চারু মেবিনকে বলল,আমি চিনি না তোকে তুই বলবি আর আমি শুনবো,আমি তো চিনি তোকে।নিলয় মেবিন আর চারু নাস্তা শেষ করলো তারপর চারু মেবিনকে বলল,আয় তোর রূম দেখিয়ে দেই এখন ঘুমাবি ঘুম থেকে উঠলে ঘুরতে বের হবো,চারু নিলয়ের রূমটাও দেখিয়ে দিল মেবিন আর নিলয় ওদের রূমে গেল ঘুমাতে।

চলবে.....

মমতা রায় চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস ৯৫ পর্ব




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৯৫

অপ্রত্যাশিত
মমতা রায় চৌধুরী

নদীর মনের ভেতরের তারগুলি ক্রমশ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন একটা বেসুরোভাব । হৃদয়তন্ত্রীতে যেন আর কোনো সুরেলা সুর  বেরোবে না। তার সঙ্গেই কেন এরকম হচ্ছে। নদীর স্বচ্ছন্দ গতিপথ কেন বারবার আটকে যাচ্ছে?তার ভেতরের সাজানো বাগান টা কেন এমনি করে তছনছ হয়ে যাচ্ছে?'
অনেক রাত অব্দি জানলার কাছে দাঁড়িয়ে  সিগারেটের পর  সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে ।ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছে চারিদিকটা। তার জীবনটা তো এরকম হওয়ার কথা ছিল না।
প্রথমে তার জীবন থেকে তার সব থেকে কাছের মানুষ তার বাপি চলে গেল। বাপিকে তো আর সেখান থেকে ফেরানো যাবে না। ইচ্ছে করলো বাপি কে স্পর্শ করা যাবে না।
এরপর মা ও তার থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।
হঠাৎই নিচে ঝর্ণা মাসির কথার আওয়াজ পাওয়া গেল। 'বৌদি এখন কেমন বোধ করছ?'
নদী কথাগুলো না শোনার চেষ্টা করছিল। তবুও কথাগুলো কানে শোনা যাচ্ছিল ভাসা ভাসা।
রুপসা অনেক ক্লান্ত স্বরে বলল' ভাল ।'
তারপর হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে কাঁচের জলের ক্লাসটা নিতে যাচ্ছে ।
তখনই ঝর্ণা ছুটে এসে বলল' একি আমি রয়েছি তো ?তুমি কেন নিতে যাচ্ছো আবার কিছু একটা অঘটন ঘটাবে নাকি?'
রুপসা একটু মলিন হেসে বলল' তুমি আর কত করবে ঝর্ণা?'
ঝর্ণা বললো 'আমি তো কাজ করতেই এসেছি।'
রুপসা বলল 'তা হলেও তুমি না থাকলে আজকে আমি নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারতাম না।'
তারপর উৎসুকভাবে এদিক-ওদিক দেখতে 
লাগল ।কাউকে খোঁজার চেষ্টা করছে যেন।
ঝর্ণা বললো 'তুমি কি মামনিকে  খোঁজ করছ?'
রুপসা বলল 'আজকের জন্মদিনটা মাটি হয়ে গেল ।জন্মদিনটা মাটি হয়ে গেল ঝরনা।'
ঝর্ণা বললো 'সব ঠিক হয়ে যাবে বৌদি?'
রুপসা বলল 'আমি জানি আমার মেয়েটা আমাকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না।'
ঝরনা একটু চুপ করে রইলো।
রুপসা জানলার দিকে তাকিয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে চারপাশটা যেন মনে হচ্ছে শুধু ফাঁকা, শুধুই অন্ধকার, শুধুই অস্তিত্বহীন টিকে থাকা।
ঝর্ণা বললো' বৌদি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।'
রুপসা বলল 'কি করে হবে ঝরনা? আমার মেয়ের একটা স্পেশাল দিন। আমি মা হয়ে তার কাছে থাকতে পারলাম না ।এর থেকে কষ্ট আর কি আছে বলতে পারো তুমি?'
ঝর্ণা বললো 'আজকে তুমি অফিস থেকে বের হতে পারলে না কেন বৌদি?'
রূপসার চোখে জল। 'তোমার দাদা মরে গিয়ে আমাকে মেরে গেছে। কেন যে আমি এই অফিসে চাকরি নিলাম?'
ঝর্ণা বললো 'কিছু খারাপ কিছু ঘটেছে?'
রুপসা তখনও শূন্য দৃষ্টিতে বিহ্বলভাবে তাকিয়ে আছে ঝর্ণার দিকে।
ঝর্না এবার বৌদির কাছে এসে  মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল' কি করবে বলো ?আমরা তো নারী। আমরা জানি আমাদের শত প্রতিবন্ধকতা জীবনে আসে ।এই প্রতিবন্ধকতাকে ঠেলে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। সমাজ আমাদেরকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে।
রুপসা বলে' আমি এভাবেই একদিন শেষ হয়ে যাবো জানো?'
ঝরনা বৌদির মুখে হাত দিয়ে বলে' খবরদার বৌদি এভাবে কথা বলবে না তুমি?'
রুপসা বলে 'ঝরনা আজকে তুমি আমার কাছে আছো বলে ,তোমার সঙ্গে দুটো কথা বলে আমি শান্তি পাই।'
ঝরনা বলে' তুমিও তো আমাকে কোন পাঁক থেকে তুলে এনেছ বৌদি ।আমার নতুন জীবন দিয়েছ।'

রূপসা বলে 'কিন্তু আমার জীবন যে পাঁকে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।'
ঝরনা বলছে 'বৌদি তুমি এভাবে কেঁদো না ।আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে।'
রূপসা বলছে' আমার হৃদয়খানা টুকরো টুকরো হয়ে গেছে ঝরনা। আমার একমাত্র মেয়ে সে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় । আমি বাঁচতে পারব না।'
ঝরনা বলছে 'না না আমাদের মামনি সে রকম মেয়েই না। ঠিক তোমাকে বুঝতে পারবে। একদিন দেখো বৌদি।'
রুপসা কেমন হাপুস নয়নে কাঁদছে ঝরনার বুকে মাথা রেখে।
' আমি আজকে যা কিছু করছি সব আমার মেয়ের জন্য করছি। আমার জীবনের কি আছে তুমি বল তো?'
ঝরনা বলছে' কেঁদো না বৌদি।  মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ক্রমশ সান্তনা দিচ্ছে। আর বলছে চুপ চুপ।'
নদীর হঠাৎ করেই কথাটা কানে আসে। নদী ভাবতে থাকে তাহলে কি সে মামনিকে কী ভুল বুঝছে?'
ভাসা-ভাসা কথাগুলো কানে আসছে। একটু কৌতুহলী হয়ে উঠছে নদী।
সবকিছু যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে
 যাচ্ছে ।নদীর হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে
 গেল ।আর ইচ্ছে করলো না তুলে আর একবার সুখটান দিতে। আজকাল তো এই সুখটানেই বেঁচে আছে নদী।
এমন সময় সমুদ্র ফোন করে। রিং হয়ে যাচ্ছে নদীর ফোনে। নদী তাকিয়ে দেখে সমুদ্রর ফোন। 
আর মনে মনে বলে'এই শালা, আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না এক দন্ড।
কারণে-অকারণে ফোন করতেই হবে।'
নদী ভাবছে সত্যিই আজকাল ও যেন কি সব শব্দ উচ্চারণ করে ফেলে ,এটা তো তার ডায়রিতে কখনো ছিল না। দ্রুত কি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে নদী। তবে কি এখনো তার ভেতরে একটু-আধটু সংস্কার বা নীতিবোধ কাজ করছে? যার জন্য এই শব্দ উচ্চারণ করার পরও কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছে।'
আবার পরক্ষনেই নদী ভাবছে 'একটু বেশিই  রিয়াক্ট করে ফেলছে সমুদ্রের প্রতি। ওই তো আপদে-বিপদে অনেক থেকেছে।  তাই বলে নদীর জীবনে কোন প্রাইভেসি থাকতে পারে না?'
দু'তিনবার রিং হয়ে কেটে গেল। আবার ফোন বাজছে।
এবার নদী বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করল বলল 'কেন রে তুই ,সবসময় আমাকে এত জ্বালাস ?কি দরকার তোর?'
সমুদ্র একটু হকচকিয়ে যায় তারপর কিছুক্ষন নিরুত্তর থেকে বলে 'একটা খারাপ খবর আছে নদী?'
নদী বলল 'কোনো সুখবর থাকে না আমার জন্য।
তবুও বল শুনি?'
সমুদ্র বলল' এক্সিডেন্ট'।
নদী যেন আকাশ থেকে পড়ে ছিঃ ছিঃ ছিঃ।না জেনেবুঝে কেন সমুদ্রকে এতগুলো কথা শোনালো ।
তারপর একটু নরম সুরে বলল  'কার এক্সিডেন্ট?'
সমুদ্র বলল'আজ অরুনাভদার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে?'
নদী বলল 'কি বলছিস তুই?
নদীর কাছে এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত তাই হতভম্ব ভাবে প্রশ্ন করল
'কখন ,কিভাবে?'
সমুদ্র বলল 'মেডিকেল কলেজের সামনেই। মারাত্মক চোট পেয়েছে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।'
নদী বলল 'এ বাবা, কি কথা শোনাচ্ছিস?'
সমুদ্র বলল 'আমরা প্রায় সবাই যাচ্ছি।  তুই কি আসবি?'
নদী বলল' আলবত যাব।'
সমুদ্র বলল 'অরুনাভদা কতটা প্রগ্রেসিভ জানিস তো সমস্ত ব্যাপারে ?পড়াশোনা বল ,কালচারাল বল...।'
নদী বলল' ঠিক আছে। তুই আমার বাড়ির সামনে চলে আয় ।আমি তোর সঙ্গে বাইকে চলে যাব।'
সমুদ্র বলল' ওকে।'
নদী ভাবছে  'এই তো কদিন আগে অরুনাভদার সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলো ,কত মজার কথাই জানে। মন খারাপের দিনগুলোতে অরুনাভদা যেন মুশকিল আসান।
 ওয়ারড্রব থেকে জিন্সের প্যান্ট টা বের করে পরতে গিয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে ভাবছিল এসব কথা।
সঙ্গে একটা কুর্তি পরে নিল আর একটা উইন চিটার পরে নিল।, ঠান্ডা আছে, বাইকে গেলে লাগবে ঠান্ডাটা।
এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে নিল প্যান্টের 
পকেটে । সমুদ্র আর তীর্থ যা হ্যাংলা ।ওদের কাছে চাইলেও সহজে পাওয়া যাবে না ।যদিও চটাতে চাইবে না ।দেবে। তবুও লক্ষীর ভান্ডার পূর্ণ করে নিয়ে যাওয়া ভালো।
দরজাটা লক করে ফোনটা বুকপকেটে নিয়ে তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নামছে, জুতোর আওয়াজ শুনে রুপসা ঝরনাকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাপারটা বোঝার জন্য বাইরে যেতে বলল ইশারায়।
এরমধ্যে গেটের কাছে এসে হর্ণ বাজাচ্ছে সমুদ্র।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে নদী হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল
ঝরনা মাসিকে দেখে।
ঝর্ণা বললো 'কোথায় যাচ্ছো মামনি?'
নদী বলল' একটু দরকার আছে মাসি ,বেরোচ্ছি।'
ঝর্ণা বললো' রাত হয়ে যাচ্ছে এখন বেরোলে?'
নদী একটু বিরক্ত হয়ে বলল 'ঝরনা মাসি কলকাতা শহরে এই সময়টা রাত নয়। বলো সন্ধ্যে। তারপর ঝর্নাকে বলল 'সরো ,সরো ,
সরো ।আমার তাড়া আছে।'
সমুদ্র তখনও হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে।
নদী বলল চেঁচিয়ে 'এই দাঁড়া নেমে গেছি।'তারপর মুখ ফিরিয়ে ঝরনা মাসিকে বলল'আমার ফিরতে দেরী হতে পারে?'