মোবাইলে টাইম পাশ, সম্বৃদ্ধ উল্লাস সাহিত্য হাসি ঠাট্টা খুনসুটি বিন্দাস পড়তে হবে নইলে মিস করতেই হবে। মোবাইল +91 9531601335 (হোয়াটসঅ্যাপ) email : d.sarkar.wt@gmail.com
২৯ অক্টোবর ২০২১
২৮ অক্টোবর ২০২১
মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩৫
একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "।
টানাপোড়েন ৩৫
চোখের বালি
সারারাত জ্বরে কাতরিয়েছে রেখা। কাশিটাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। মনোজ সেই যে ফোন নিয়ে অশান্তি করলো ,তারপর ওষুধগুলো কাছে রেখে দিয়ে কোথায় যে আছে কে জানে?
রেখার খুব জল তেষ্টা পেয়েছে ।কোনরকমে উঠে দেখছে টেবিলের ওপর জলটা আছে ।গ্লাস টেনে নিয়ে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিল। শরীরটা প্রচন্ড উইক লাগছে। বাথরুমে যেতে হবে। কোনরকমে উঠল রেখা ।উঠে বাথরুমে গেল। এসে আবার খাটের উপর বসে পড়লো ।বসে বসে ভাবতে লাগল 'মনোজ কোথায় গেল,?রাতে কি তবে এই ঘরে শুতে আসে নি। '
রেখা ভাবতে ভাবতে আবার শুয়ে পড়লো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা বাজে। ভোর হয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে মর্নিংওয়াক করা পথচারীরা কথা বলতে বলতে যাচ্ছে।
তাহলে মনোজ কোথায় গেল?
না ,সত্যি কালকে রেখার ফোন ধরাটা উচিত হয় নি।
মনোজ সাধারণত রাগ করে না কিন্তু এবার যে কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
৫ .৩০তে কলিংবেল বেজে উঠল"জয় গনেশ ,জয় গনেশ, জয় গনেশ দেবা...।"
সাত সকালে কে আসলো,? আমার তো ক্ষমতা নেই উঠে গিয়ে দরজা খোলার। মনোজ কি শুনতে পাচ্ছে না আওয়াজটা। বেজেই চলেছে। কি আশ্চর্য। দরজা নক করে ডাকছে " বৌদি ,বৌদি"।
রেখা কান খাড়া করে শোনে'।আরে ,এতো, সুমিতার গলা মনে হচ্ছে। নির্ঘাত সুমিতা।
বাবা ,সাতসকালে এসে হাজির। কি ব্যাপার, কে জানে? পরে রেখার মনে পড়ল আজকে তো সুমিতা মাইনে চেয়েছিল অ্যাডভান্স, এবার বুঝতে পারল ।কেন এত তাড়াতাড়ি সে কাজে এসেছে?
কোনরকমে উঠে গিয়ে দরজাটার কাছে গেল। দরজাটা খুলল 'কি ব্যাপার সুমিতা ,এত তাড়াতাড়ি আসলে?''
সুমিতা বলল 'ও বৌদি, আমি বাড়ী থাকবো না ।এক জায়গায় যাব। সে জন্যই তাড়াতাড়ি আসলাম।"
রেখা মনে মনে ভাবল টাকা নেওয়ার না থাকলে আজকে কাজে ই আসতো না।
সুমিতা বলল ' বৌদি তোমার শরীর খারাপ?'
রেখা বলল ' হ্যাঁ গো। তুমি আজকে ফিরবে তো?'
সুমিতা বলল 'দেখি।'
রেখা বলল 'তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো যে আমার শরীরটা খুব খারাপ। কাজে না আসলে কতটা অসুবিধায় পরবো বলো তো?'
সুমিতা বলল 'যদি ফিরি, তাহলে কাজে আসব।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,একটু চেষ্টা ক'রো।'
সুমিতা কোন কথার উত্তর না দিয়ে ঝাঁটা দিয়ে
ঝাঁটাতে শুরু করল।
রেখা ও কোন কথা বাড়ালো না । আস্তে আস্তে ড্রইংরুমের দিকে গেল, দেখল মনোজ শুয়ে আছে।
টেবিলে Black label পাশে কাঁচের গ্লাস। ফোনটা সমানে বেজে যাচ্ছে।
এ সমস্ত দেখে রেখা আকাশ থেকে পড়ল। এ কোন মনোজকে দেখছে। এই কি তার স্বপ্নের পুরুষ যাকে এত ভালবেসেছে? মনে হচ্ছে যেন রেখা ওখানেই পড়ে যাবে ।নিজেকে সামলাতে পারছে না। সঙ্গে সঙ্গে মনোজের পাশে খাটে গিয়ে বসে পড়ল। চোখ থেকে জল পরছে। আর কি কি যে আছে কপালে, কে জানে? কেন হচ্ছে এসব? কি করেছে রেখা?'
রেখা কি ফোনটা রিসিভ করবে?'
ফোন নিয়ে যা অশান্তি হয়েছে গত রাত্রে ।তাতে রেখা সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু এখন তো মনোজ অঘোরে ঘুমোচ্ছে ।ফোনটা রিসিভ করলে ,ও টের পাবে না।
কিন্তু ছলনার আশ্রয় নেওয়া কি ঠিক হবে? নাকি একবার সুরঞ্জনদাকে ফোন করবে? মাথায় কিছুই খেলছে না। এমন সময় 'বৌদি বৌদি বৌদি ইইইই'।'
রেখা ভাবলো 'সূমিতা এত চেঁচাচ্ছে কেন?'
কোন রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রেখা সাড়া দিল - 'কি হলো সুমিতা। সাতসকালে এত চিৎকার করছো কেন?'
সুমিতা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল 'কলতলায় যেতে পারছি না ।মিলি চিৎকার করছে।'
রেখা অবাক হয়ে বলল 'কেন? ও তো তোমাকে দেখে কিছু তো বলে না ।হঠাৎ আজকে কেন তোমাকে দেখে চিৎকার করবে? তুমি কিছু করেছ নাকি?'
সুমিতা বলল 'না গো বৌদি, ওর বাচ্চাগুলো যেখানে আছে, ওখানে ছাইয়ের কৌটো আছে। তাই ছাই আনতে গেছিলাম।
রেখা বলল 'তাই বলো ।তুমি ছাই আনতে গেছ তো ,তুমি আমাকে বলবে তো?এ সময় ও কাউকে এলাও করবে না ।বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আগলে বসে থাকে।
রেখা বলল 'ঠিক আছে ,আমি যাচ্ছি ।আমার শরীরটা খারাপ জানো , তবুও আমাকে এত তোমরা হয়রানি করাচ্ছ না? '
আস্তে আস্তে মিলির কাছে গেল রেখা । কাছে গিয়ে ডাকল 'মিলি ,মিলি ,মিলি ।' মিলি তখন লেজ নাড়ছে। রেখা গিয়ে ছাইয়ের কৌটোটা আনলো। মিলি কিন্তু কিচ্ছু বলল না।
সুমিতা অবাক হয়ে দেখল আর বলল 'ও বৌদি ,ও কিচ্ছু বলল না তোমাকে?'
রেখা বললো 'আমাকে কেন বলবে? তোমরা নিশ্চয়ই ওর সঙ্গে কিছু বদমাইশি করেছ।।
সুমিতা বলল 'না গো বৌদি?'
রেখা বলল 'ঠিক আছে ।আর কথা বাড়িও না ।কাজ করো।
সুমিতা আপন মনে গজগজ করতে করতে বাসন মাজতে লাগলো।
রেখার মনে এখন সন্দেহের বীজ দানা বাঁধতে লাগলো । এমন কি নিজের শরীর খারাপের কথাও এখন ভুলে গেল। মনের ভেতর যেন একটা আলাদা জোর এসেছে ।এই রহস্য তাকে উদ্ধার করতেই হবে।
রেখা আবার মনোজের ঘরে ঢুকলো ফোনটা তেমনি বেজে চলেছে ।
এবার রেখা ফোনটা রিসিভ করল কিন্তু 'রেখা কোন কথা না বলে চুপচাপ থাকলো।
অপরদিকের কন্ঠ ভেসে এলো 'তুমি ফোনটা রিসিভ করছো না কেন? আজকাল আমার ফোন ধরতে তোমার খুব কষ্ট হয় ,তাই না?
রেখা তো অবাক হয়ে যাচ্ছে ।এ যে এক মহিলা কন্ঠ।এসব কি বলছে ?ফোনটা কি ক্রস কানেকশন হয়ে গেছে ।তবু কান পেতে শোনে আর কি বলে।
'আমার এখন কি উপায় হবে তার ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে।'
রেখা ভাবছে ' ব্যবস্থা কি ব্যবস্থা?'
আবার বলছে মেয়েটি 'কি হলো মনোজ ?কথার সাড়া দাও ।শুধু আমি বকে যাচ্ছি। তুমি চুপ করে থাকলে তো চলবে না।'
রেখার তো এবার শরীর কাঁপতে লাগল ।পায়ের তলার মাটি যেন সরে যেতে লাগলো ।আকাশ যেন তার মাথায় ভেঙে পড়ছে ।কি শুনছে? কে এই নারী ?যে মনোজকে তুমি তুমি করে কথা বলছে। কে ?কী রহস্য ?কিছুই বুঝতে পারছে না।
রেখা ফোনটা ধরে রাখতে সাহস পেলো না ।আর কি কথা বলে ফেলবে কে জানে ?ফোনটা রেখে দিল।
রেখা সেখানেই কিছুক্ষণ বসে চিন্তা করতে লাগল।কী পরিণতি এর, কিছুই জানে না? কেন তার স্বামী এরকম করছে আর মেয়েটির সঙ্গে তার স্বামীর ই বা কি সম্পর্ক ?কাকে জিজ্ঞেস করবে ?এই মেয়েটি কি তার চোখের বালি হয়ে যাবে শেষপর্যন্ত ?তার সুখ-শান্তির সংসারে কি আগুন লাগতে চলেছে ।যার জন্য আজ মনোজ রেখার সঙ্গে এত দুর্ব্যবহার করছে ।অথচ রেখা জীবনে মনোজকে এতটা প্রাধান্য দিয়েছে ।রেখার জীবনেও তো কম পুরুষের আগমন হয় নি । কিন্তু সেভাবে তো কিছুই ভাবে নি। তার সমগ্র হৃদয়াকাশে হয়তো কেউ কেউ জায়গা করতে চেয়েছে কিন্তু বিরাজ করেছে মনোজ ই ।ভাবতে পারছে না কি করবে?
এরমধ্যে সুমিতা এসে বলল ' বৌদি আমার মাইনের টাকাটা দাও।'
সুমিতা তাড়াতাড়ি উঠে এলো তার মধ্যেও দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল সুমিতা।
সুমিতা বলল 'ও বৌদি, দাদা আজকে ওই ভাবে শুয়ে আছে কেন গো ?তোমাদের মধ্যে কি কিছু অশান্তি হয়েছে নাকি ?বাবা ,আমরা ভাবি শুধু আমাদেরই ভিতর অশান্তি আছে ।তোমাদের ও ভিতর অশান্তি?'
রেখা বলল 'কি বলছ? কিসের অশান্তি হবে আমাদের মধ্যে ?আমার শরীর খারাপ ছিল, তাই একটু নিশ্চিন্তে এই ঘরে এসে শুয়েছে । এতে অশান্তির কি আছে সুমিতা ?আগ বাড়িয়ে বেশি কথা বলো না তো ?এই নাও তোমার মাইনে । (রেখা ২000 টাকা হাতের মধ্যে ধরিয়ে দিল)।
রেখা জানে তো কাজের মেয়েগুলো এরকম ই ।এরা যা দেখবে সারা পাড়া গিয়ে রটাবে।
কিন্তু শেষরক্ষা কি হবে? রেখার' চোখের বালি'যে কখন অজান্তে বোপিত হয়েছে এবং তা বৃক্ষে পরিণত হতে চলেছে। তা বুঝতেই পারে নি। রেখার হৃদয়াকাশে কালোমেঘের ঘনঘটা। হয়তো রেখাকে অতি বর্ষণে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ?রেখা কি তরী তীরে নোঙ্গর বাঁধতে পারবে? নাকি ভেসে যাবে কোন অজানায়।নিজেকে কি বাঁচাতে পারবে?
রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"২০
চলছে নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের পড়তে সহযোগিতা করুন লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম লেখার।
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে লিখতে সহযোগিতা করবে।
উদাসী মেঘের ডানায়
( পর্ব২০)
রাস্তার ঘটনাটা তৃষ্ণাকে খুব ভাবিয়ে তুললো কি হচ্ছে
এসব,সামান্য এক ড্রাইভার এতোটা সাহস কোথা থেকে পায়, কারা ওরা?
হঠাৎ মায়ের ডাকে ভাবনা ছুটে গেলো
- তৃষ্ণা খাবিনা মা রাগ প্রায় দশটা বাজতে চললো
তখন থেকে দেখছি বাসায় ফিরে কি ভাবছিস
তৃষ্ণ- চলো খাবো কিছু ভাবছিনা মা, অযথা চিন্তা করোনা।
খাওয়া শেষ করে দেখে সারে দশটা বাজে অপু এখনো
ফোন করছেনা আজ নিজেই কল করে অপুকে সারপ্রাইজ দেবে এই ভেবে ফোন করলো।
অপু- সরি তৃষ্ণা একটু রাত হয়ে গেলো জানি প্রতিক্ষায় ছিলে।
তৃষ্ণা- মোটেই তা নয়, এমনি ফোন দিলাম আজ।
অপু- সত্যি বলতে লজ্জা পাচ্ছো,তাহলে রেখে দেই।
তৃষ্ণা- না রেখোনা, অপেক্ষা করিতো, রাত হয়ে গিয়েছে ফোন করছোনা, শরীর খারাপ হলো কিনা
জানার জন্য।
অপু-আমি দিব্যি ভালো আছি, যাক তাহলে আমার জন্য তোমার চিন্তা হয়।
তৃষ্ণা- এবার কিন্ত আমি লাইন কেটে দিবো।
অপু- না মহারানী না, রাখবেনা, আমি ছাদে বসে ছিলাম কখন যে খোলা প্রকৃতির হাওয়া আমাকে
আনমনা করে তুললো,রিংটোনটা বাজতেই ভাবনা ছুটে গেলো,দেখি তুমি, এও এক বিরাট পাওয়া আমার
জীবনে আজ তুমি নিজে কল করলে।
তৃষ্ণা- উদাসী হাওয়ায় কি ভাবছিলে?
অপু- ভাবছিলাম আমার জীবনের সাথে তেমাকে জড়ানো কি ঠিক হলো, আবার এও ভাবছি ভালোবাসার অধিকার কি আমার নেই।
তৃষ্ণা- অবশ্যই আছে, একটি প্রতারণার জ্বালে দীর্ঘ পাচঁটি বছর তুমি যে ধোর্যের পরিচয়,দিয়েছো তার পুরস্কার ও তুমি পাবে।
অপু- পুরস্কারটা বিধাতা দিয়েছেন সে হলো তুমি
হয়তো দেরি হলেও দূর্বিসহ জীবনের এতোটা পথ পাড়ি,দিয়ে আজ মুক্তির পথে দুজনাই হাঁটছি এও কি
কম পাওয়া,,আমার জীবনে বিশাল কিছু পাওয়া।
আর তোমার গুছানে সুন্দর কথা গুলোই আমার বেঁচে
থাকার অনুপ্রেরণা।
তৃষ্ণা- আমিও সব স্বপ্ন হারিয়ে ছিলাম ভেবেছি কষ্টের
জলে স্বপ্নরা বাঁচেনা, সেই জল থেকে ভাসালে তুমি
নতুন স্বপ্ন একেঁ।
অপু- তোমার প্রতি দিনদিন আমি এক তীব্র আকষর্ণে
জড়িয়ে থাকি কবে আসবে তুমি আমার ঘরে
অয়কান্ত মনির মতন তুমি আমাকে কেবলই টানছো।
মাঝেমাঝে বড় ভয় হয়।
তৃষ্ণা-কিসের ভয়?
অপু- তোমাকে সুখী করতে পারবোতো।
তৃষ্ণা- কেন পারবেনা, এসব ভাবতে নেই,আমিও যদি
একই কথা বলি।
অপু- তুমি আমাকে যা দিয়েছো পাচঁটি বছর নিরবে সরে গিয়ে কয়জন পারে দিতে সুখ শান্তি সবই দিয়েছো,বাকি আছে আমার কাছে একেবারে চলে আসা,আসবেনা?
আসবো খুব তাড়াতাড়ি, মা ও তাড়া দিচ্ছে,সামনের
মাসে ছাড়া ছুটি পাবোনা, একটা মাস আর একটু
ধোর্য ধরো।
ধরেই আছি গো মোনালিসা।রাত একটা বাজে সকালে
অফিসে যেতে হবে আমাদের আজ রাখি
ভালো থেকো
তৃষ্ণা- তুমিও
চলবে...
নওশাদ আলম
মানবপূজা
মানবপূজার সেরা মন্দিরে ঢুকছে মানুষ দলে-দলে,
চামচামি আর চাটুকার হয়ে ঈমান হারায় ছলেবলে।
জানোয়ার রূপে সম্মান পেতে সামনের সারি করে ভারী,
কুলষের নীড়ে শিরক জমিয়ে বিবেক করছে মনোহারি।
সবখানে দেখি ব্যক্তির পূজো শিরক হচ্ছে ছড়াছড়ি,
খাদ্য জ্বালায় মরছে মানুষ ধূলোর বিছানায় গড়াগড়ি।
মানবপূজারি তারাতো কখনো দেখায় না কেউ মানবতা,
স্বার্থের দোর দিবানিশি খুঁড়ে গরিবের বুকে দেয় ব্যথা
কুর্ণিশে তার নেই সংকোচ পদোন্নতির পেলে চিঠি,
পায়ের ময়লা চেটেপুটে খায় ভেবে অমৃত মাখা পিঠি।
স্কুল-কলেজ অফিস কাছারি সবখানে দেখি একরেশ
স্বাধীনতা সব করেছে হরণ, পশুতে চালায় যেই দেশ।
স্বার্থপ্রেমিক আমলার কাছে প্রতারিত হয় দেশবাসী,
বংশের ছাঁইয়ে মাখন মাখিয়ে "দিবস" তৈরি করে রাশি।
রাজস্বখাতে লালবাতি জেলে মানবপূজাকে করে জয়,
দেশের কপালে দুর্দশা দেখে দেশবাসী মনে পোষে ভয়।
মুসলিম দেশে মানবপূজারি তারাকি পড়েনি কোরআন?
কুরআনহীন মানব শরীরে বসত করে যে শয়তান।
মানবপূজারি শয়তান থেকে মুক্তির রাহে পথধরো
কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে শিরকমুক্ত জীবন গড়ো।
লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ১৬
চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"
বনফুল
( ১৬ তম পর্ব )
জুঁই ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে কতো কি ভাবছে,প্রথম দিনের হঠাৎ দেখা, তারপর থেকে আজকে রেস্টুরেন্টের বিল মেটানো।
পলাশের পরিক্ষার দিনগুলোর কথা।
ঐ দিকে পলাশও জুঁইয়ের কথা ভাবছে পড়ার টেবিলে।
তারই ফাঁকে তিথিও শিমুলের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিল সে।
এমন সময় পলাশের ফোন বেজে উঠল, পলাশ বন্ধু সৈকতের ফোনে আনন্দে আত্মহারা.... রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সৈকত," দোস্ত কেমন আছিস? "
উত্তরে পলাশ বললো ভালো, দোস্ত তুই কেমন আছিস? ভালো, কিন্তু পরিক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে সময় কাটছে না।
পলাশ বললো দোস্ত এক কাজ করতে পারিস, তুই ঢাকা চলে আয় মজা করে সময় কাটানো যাবে।
সৈকতের বাড়িও ঢাকায় বাড্ডা তে। স্কুল থেকে কলেজ এক সাথে পড়াশোনা...
সৈকতের বাবার বদলি হয়ে যাওয়ায় সৈকতে আর ঢাকা ভার্সিটিতে পড়তে পারেনি। বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়তে হলো।
সৈকত বাবা-মার একমাত্র ছেলে।
যেই কথা সেই কাজ ব্যাগে কিছু জানা কাপড় গুছিয়ে সকালের ট্রেন ধরে চলে এলো সৈকত।
পলাশের মা শাহানা খাতুন বললেন বাবা এইবার অনেক দিন পরে এসেছো।
সৈকত বললো আন্টি পড়াশোনার চাপ ছিলো তাই আসা হয়ে উঠেনি, তবে যখনি পলাশের সাথে ফোনে কথা হতো আপনাদের সবার খবরাখবর নিতাম।
সৈকত তোমার আব্বু আম্মু ভালো আছেন? জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ।
দুই বন্ধুতে জমিয়ে আড্ডা হচ্ছিল, রাত এগারোটা হয়ে গেছে, পলাশের ছোট ভাই শিমুল এসে বললো ভাইয়া আম্মু তোমাদেরকে খেতে ডাকছে।
শাহানা খাতুন সাধ্য মতো ভালোমন্দ রান্না করেছেন, সৈকত ডাইনিং টেবিলে খেতে খেতে বললো আন্টি অনেক দিন পরে আপনার হাতের মজার রান্না খাচ্ছি।
খাওয়া শেষ হলো, আরো কিছু সময় ধরে গল্পগুজব হলো, শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওরা,ঠিক সেই সময়ে পলাশের ফোন বেজে উঠল।
ওপাশ থেকে জুঁই, হ্যালো কিরছো? আজ যে আমাকে ফোন দাওনি!
জুঁই আমার এক বন্ধুর কথা তোমাকে বলেছিলাম, চট্টগ্রামে থাকে নাম সৈকত,
ও এসেছে আজ সন্ধ্যায়, একটু ব্যস্ত ছিলাম।
স্যরি জুঁই...
জুঁই বললো ঠিক আছে স্যরি বলার কিছু নেই, আমি রাখছি সুইট হার্ট।
পলাশ বললো সেইম টু ইউ।
চলবে....
নূরুজ্জামান হালিম
অপেক্ষা
প্রজার স্বপ্ন ভঙ্গের পরেও
বিশ্বাসঘাতক রাজা পাশাতেই ব্যস্ত।
নিরুপায় মধ্যবিত্ত
আলু, পটল অথবা ধান গমে নিরাশ বারোমাস,
স্বচ্ছলতা নেই কোথাও কানাকড়ি।
প্রেমে একলা চল নীতি একেবারেই মূল্যহীন
ন্যূনতম দুজনকে চলতে হয় হাতে হাত রেখে।
কেউ কেউ পা চাটা কুকুর পোষে
কেউ কেউ পা চাটা কুকুরও হতে চায়
উচ্ছিষ্ট ক্ষমতার লোভে।
উন্নয়ন অনেক হয়েছে,
উন্নয়নের রোশনাই ঝলমল করছে চতুর্দিকে,
তবুও বৃদ্ধ বাবা- মা অবহেলায়
বীতশ্রদ্ধ হয়ে চলে যাচ্ছে
অসীম আকাশে।
প্রজারা কাতর রাষ্ট্রীয় অ্যাজমায়।
একটি ঘুড়ি হাতে অবোধ বালক বসে আছে
মৃয়মান সবুজ দিগন্তে
আকাশে বাতাসের বালাই নেই
তবুও নিরন্তর অপেক্ষা রোজ।
কাউসার আলী ( সিডনি অষ্ট্রেলিয়া )
অনুভবের অনল
কত দুরের পথ, তবুও পথ চলা,
শ্রান্ত নয়নে চেয়ে থাকা ।
আঁকা বাঁকা মেঠো পথ,
মস্তিস্কের কুটিলতায় বিরামহীন অপেক্ষা !
আঁটসাঁট বাঁধি মন,
যৌবনের ঝাউবন জৌলসতার।
আবৃত্তে ঝলসানো সাটার খুলে অপলক,
দেখি তেল চিটচিটে গহীন সুখ রুদ্ধ!!
ফুল ফোটাবো সন্তে মার্চের হানাদার,
কালো আঁধারের প্লাবিত শুষ্ক কপল।
তবুও ভাঙে না বাঁধ-
দুকূলের পাঁড় বেশ পুরু!
এলোবাতাসে উড়ছে পরাজল,
চুষে নিয়ে হয় ঝিঙ্গেল।
কায়ার মাঝে হিয়া, হিয়ার মাঝে পাষাণ,
জল বিনে জানি নিভেনা অনল;
জল অনলে হৃদয় দহন!!
রবি শসির খেলার মাঝে চোখ ধাঁধানো,
রঙিন চশমা বিহনে-
অদ্য উন্মোচিত ভূ-মন্ডলের মরিচিকার থুপ্পা।।
যতকাল বুনিছে হৃদয় বাবুই পাখির বাসা,
অতি যত্নে লালিত পরক্ষণে ঠুনকো নিগুড় ভালোবাসা
ফুরাবে না পথ জানি, দিতে হবে দিগন্ত পাড়ি ।
বটমূলের শীতল ছায়ায় অবসাদের সুখ পেতে-
নীলিমার নীলপরী স্বপ্নের বারতায় বুলি দ্ব্যর্থহীন,
সময়ের চাহিদা যেখানে মূখ্য !!
পবিত্র ভালোবাসা, স্বতীত্ব সেখানে অর্থহীন।
লুৎফুর রহমান চৌধুরী রাকিব ( ইংল্যান্ড )
কুলষিত
তাজা ফুলে গাঁজার গন্ধ
কেউ পারেনা বলতে
ভালো মন্দ বলতে গেলে
দেয়না কভু চলতে।
সমাজ করে খুব কুলষিত
হর হামেশা নিত্যে
সত্যে কথার ধার ধারেনা
থাকে নির্ভীক চিত্তে।
লুটতে গিয়ে পয়সা কড়ি
হয়ে যায় হন্য
ভাতের জন্য জাত মারিয়া
নিজে হয় ধন্য।
গলায় ধরে মারে টিপা
বুকে পাথর চাপা
কষ্ট গুলো যায়না দেখা
যায়না কভু মাপা।
শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"৭
শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব৭)
শামীমা আহমেদ
আজকাল মোবাইলের কল্যাণে অনলাইন শপিংয়ের মত অনলাইন বন্ধুও বেছে নেয়া যায়।তা সে চেহারা দেখে,বা না দেখেও বন্ধু হবার অনুরোধ পাঠানো যায়, তারপর চলে চেনা জানা, দেখাশুনা, চাই কি তা অনেকের অনেকদূর পর্যন্তও গড়ায়। তবে শায়লার জীবনে তেমন কোন মিরাকল কিছু ঘটবে না সে ব্যাপারে শায়লা নিশ্চিত। কারণ শায়লা কোন কিছুই সহজে পায়নি। তেমন কোন বন্ধুও পাওয়া হয়নি আজ পর্যন্ত । শায়লাতো তার স্বাভাবিক জীবন থেকে দলছুট হয়ে গেছে।সবার জীবনের মত তার প্রতিটি ধাপ মেনে চলেনি।
আগের যুগের মানুষের, শুরুতে দেখাশুনা হতো,চেনা জানা চলাফেরা তারপর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা। এখন সবই পালটে গেছে।তবে আগের দিনে যে পত্রমিতালী হতো,আজকাল তার ডিজিটাল ভার্সন হচ্ছে টেক্সট, মেসেজ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার!
বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার কী মানুষের আবেগ বাড়িয়েছে নাকি কমিয়েছে?নাকি ভার্চুয়াল জগতে মিথ্যের চর্চা চলছে, নাকি অচেনাকে চিনে নিতে সহজ করে দিয়েছে!
শায়লার মনের ভেতরের নানান দ্বিধাদ্বন্দ্ব
সত্ত্বেও সেই ছবিটায় "সততায় শিহাব" এই আরোপিত নামের প্রোফাইলে বন্ধু হবার অনুরোধ রাখল। শায়লা ভাবলো, দেখি এবার নিজেই নিজের ভাগ্যটা একটু যাচাই করে নেই। তবে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কোন রকম আবেগে ভাসা যাবে না। কোন ধরণের কথায় বাঁধা পড়বে না কারণ শায়লা খুব কাছে থেকে ওর এক মেয়ে কলীগকে দেখেছে।ফেসবুকে পরিচয়ে অচেনা মানুষের জন্য কেমন আকুল হতে।তারপর যখন সে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে,সেকি তার দুরবস্থা, সারাক্ষণ অস্থিরতায় ভুগা। ভালোবাসার সম্পর্ক যতটুকুই আগাক তারচেয়ে বেশী আহত করে মিথ্যে দিয়ে সাজানো কথামালা আর একদিন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাওয়া। সে এক অসহ্য যন্ত্রণা। মানুষ অভ্যাসের দাস, আর এখনতো মানুষ যন্ত্রের দাস! আবেগকে রিমোট কন্ট্রোলের মত নিয়ন্ত্রণ করে মোবাইল যোগাযোগ।
নিজেকে মানসিকভাবে বেশ শক্ত করে নিয়ে শায়লা অনুরোধ গ্রহণের অপেক্ষায় রইল।
তবে শায়লা ভেবে রেখেছে কিছুতেই তার নিজের জীবনের সবকিছু বলবে না।কারো দয়া বা সুযোগ নেয়া সহজ করে দিবে না। চেষ্টা করবে লোকটিকে জানতে।
এখন রাত প্রায় একটা। লোকটি কি জেগে আছে? থাকতেও পারে নাও পারে। তবে পাশে নিশ্চয়ই স্ত্রী থাকবে, তাহলে হয়তো সাড়া নাও মিলতে পারে।অবশ্য আজকাল স্বামী স্ত্রী একই বিছানায় যার যার মোবাইল নিয়ে পাশ ফিরে রাত কাটায়। যেন এক শান্তি চুক্তি ঘোষণা! শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। দিনে দিনে বন্ধনগুলো কেমন যেন হালকা হয়ে যাচ্ছে।মানুষ আপন ছেড়ে অচেনা পর মানুষের জন্য বেশি ব্যাকুল হচ্ছে। শায়লার এ ধরনের কোন সমস্যা নেই।সেতো আর কাউকে ঠকাচ্ছে না।বরং সেই ঠকেছে আর বিনা নালিশে পরাজয়ও বরণ করেছে।
এখন আর নোমান সাহেব নক দেন না। বলটি এখন শায়লার কোর্টে।শায়লা ইচ্ছে করলে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ে তা ছুঁড়ে দিতে পারে তার সম্মতি জানিয়ে, নয়তো স্বেচ্ছায় এ খেলা ত্যাগ করা যায়। এ ব্যাপারে শায়লা এখনো মতদ্বৈততায় আছে। মাঝে মাঝে তার উদাস দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ঐ দূর আকাশে, চাইলে সেখানে উড়োজাহাযে উড়তে পারে নয়তো মাটিতে থেকে আকাশের রংয়ের খেলা দেখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।
শায়লা "সততায় শিহাব" প্রোফাইল থেকে কোন উত্তর এলো কিনা বারবার তা তাকিয়ে দেখছে।নাহ! এত রাতে এভাবে নক দেয়াটা ঠিক হয়নি।আবার এটাও বুঝে নেয়া যায় খারাপ মানুষ হলে এই রিকুয়েষ্ট লুফে নিতো! আবার হয়তো বিবাহিত মানুষ বউয়ের সামনে ভালো সেজে আছে, সকালে অফিসে পৌছেই কিংবা গাড়িতে, বাসে বসে রেস্পন্স করবে। শায়লা প্রায়ই ভাবে, যে সাক্ষী রেখে বিয়ে করা হয়, পুরুষরা তার কতটুকু মূল্য ধরে রাখতে পারে? কতটুকু সৎ থাকতে পারে তাদের স্ত্রীদের প্রতি। শায়লার মনে অজান্তেই এই ভাবনাটা এলো। পরনারী কিংবা অচেনা অজানা নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ানো যেনো পুরুষের মজ্জাগত চরিত্র। সংসার সন্তান দিয়ে স্ত্রীকে ব্যস্ত রেখে নিজে শিকারির চোখ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
এমনি নানান ভাবনায় শায়লা ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুমের মাঝে শায়লা প্রায়ই সেই দৃশ্যটা দেখে, একটা লাল ফ্রক পরে শায়লা তার বাবার কোলে।বাবা বারবার তাকে উপরে ছুড়ে দিচ্ছে আর নামাচ্ছে।আর শায়লা কলকল করে হাসছে। বাবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক! দূরে দাঁড়িয়ে মা ভয় আর আতংকে বাবাকে বারবার বারণ করছে এমনটি করতে। তখন কি মা ভেবেছিল তার এই শায়লাকে নিয়ে তাদের এত স্বপ্ন আনন্দ, আহলাদ সবই একদিন মিথ্যা হয়ে যাবে?
বিধাতার বেধে দেয়া ছকে আমাদের শুধু রোলপ্লে করে যেতে হবে। শায়লা তার নিজের প্রোফাইলে ঘুরে এলো।নাহ, এখনো এক্সেপ্ট করেনি,,,
চলবে...
২৭ অক্টোবর ২০২১
শান্তা কামালী
বনফুল
( ১৫ তম পর্ব )
দুজনেই বেশ চুটিয়ে গল্প করছে, পলাশ মাঝে মাঝে গভীর ভাবে জুঁইয়ের দিকে তাকাচ্ছে, তবে এই তাকানোতে কোনো পাপ নেই, আছে একে-অপরকে জানা, বুঝার নিবিড় ভালোবাসা।
এরইমধ্যে খাবার চলে এলো, ওয়েটার খাবার পরিবেশন করতেই জুঁই আশ্চর্য!
এতো সব জুঁইয়ের পছন্দের খাবার অর্ডার করেছে......
পলাশ একটু মুচকি হেসে বললো জুঁই আমি তোমার কিছু কিছু পছন্দ জেনে গেছি।
জুঁই বললো হুম তাইতো দেখছি......
দুজনেই খেতে শুরু করলো,
পলাশ বললো জুঁই এখনতো বলো, কি সুখবর দেবে বলেছিলে?
জুঁই বললো আগামী শুক্রবার তুমি আমাদের বাসায় আসছো, বাবা-মা'কে তোমার কথা বলাতে ওনারা তোমাকে আসতে বলেছেন।
এবার পলাশ বুকে হাত রেখে বললো জুঁই এখন আমার সত্যি সত্যিই ভয় লাগছে, আমাকে ডেকে নিয়ে না জানি কি অপমান করবে..........
জুঁই বললো তুমি না পুরুষ মানুষ?
পুরুষেরা এতো ভিতু হয় জানতাম না!
পলাশ বললো জুঁই তুমি বুঝতে পারছনা,
জুঁই বললো আমার এতো বুঝে কাজ নেই, তুমি শুধু শুক্রবারে আসবে।
ব্যাস, বাকী সব কিছু আমি বুঝে নেবো।
পলাশ বললো জোহুকুম রানী সাহেবা.....
কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ হলো,
পলাশ ওয়েটারকে ডেকে বিল নিয়ে আসতে বললো।
পলাশ বললো জুঁই আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে...
জুঁই বললো আবারো একবার এই কথাটা!
পলাশ বললো ও বলেছিলাম বুঝি?
জুঁই বললো জ্বি মহাশয় বলে ছিলে।
ওয়েটার বিল নিয়ে আসতেই পলাশ মানিব্যাগ থেকে দুটো একহাজার টাকার নোট বের করে দিলো।
জুঁই বললো এসব কি হচ্ছে তুমি বিল দিচ্ছো কেন?
পলাশ উত্তরে জুঁইকে বললো জুঁই আজকের বিলটা যদি আমি না দিই কবে দেবো সেটা বলতে পারো?
তুমি আজ এতো ভালো খবর দিয়েছো আর আমি তোমাকে কিছু খাওয়াতে পারবো না! তাহলে আমি কিসের পুরুষ মানুষ হলাম বলো? এই বলেই হাহাহা হাহাহা হাহাহা হাসলো পলাশ...
জুঁই বিষয়টা বেশ উপভোগ করলো।
ওয়েটার টাকা আর বিলের কাগজ ট্রেতে করে নিয়ে এলো, পলাশ একটা পঞ্চশ টাকার নোট ট্রেতে রেখে জুঁইকে বললো চলো এখন যাওয়া যাক।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো, জুঁই পলাশকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় এলো।
জুঁই তার মাকে বললো, আম্মু আমি খেয়ে এসেছি, তুমি বাবা খেয়ে নিও। এই বলে জুঁই বলে উপরে উঠে গেলো নিজের ঘরে।
রুকসানা রহমান
উদাসী মেঘের ডানায়
( ১৯ তম পর্ব )
তৃষ্ণা তৈরী,হয়ে,বিকেলের দিকে মাকে বললো
- মা,আমি একটু রাাইফল স্কয়ারে যাচ্ছি,মজিদ,কেন
বলো,ও যেনো ছয়টার আগে ময়নাকে নিয়ে ডাক্তার
দেখিয়ে,আনে।
মা,- তুই কিসে যাবি?
তৃষ্ণা- এখান থেকে কাছেই রিকসায় যাবো।
তুই নিয়ে,যা,গাড়ি
তষ্ণা -আজ,ড্রাইভ করতে,ইচ্ছে হচ্ছেনা,কতকাল
রিকসায় উঠিনা।
এই বলে বের,হয়ে গেলো।
টুকটাক কেনাকাটা,করে বের হয়ে,বাসার গলির কাছে
এসে রিকসা ছেড়ে দিয়ে কিছু ফল কিনে
হাঁটতে থাকলো।
কোচিং সেন্টারের সামনে দিয়ে যাবার সময় দেখলো একটা উঠতি বয়সি মেয়েকে একটি প্রাইভেট গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে উত্তেজক ভাষায় কথা বলছে মেয়টির
সাথে। তৃষ্ণা চলে যেতে চেয়েও কি মনে করে গাড়িটির
সামনে দাঁড়াতেই মেয়েটি ছুটে এসে তৃষ্ণার পাশে দাঁড়ালো।
তৃষ্ণা বললো - কি হয়েছে, গাড়ি কি তোমার?
মেয়েটি মাথা নেড়ে বললো না।
তৃষ্ণা- তাহলে কি হয়ছে।
মেয়েটি বললো - আধাঘণ্টা ধরে আমাকে আটকিয়ে
রেখেছে, যেতে দিচ্ছেনা।
তৃষ্ণা- কেন?
-আমি ওড়না পড়িনি কেন তাকে কথা দিতে হবে আমি এখন থেকে ওড়না পরবো তারপর আমাকে যেতে দিবে।
তৃষ্ণাএবার লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো- আপনি কি গাড়ির মালিক ?
- জ্বি না আমি ড্রাইবার।
তৃষ্ণা-কোথায় পেলিএতো সাহস?
ড্রাইভার- না মানে আমার মেয়ের বয়সি তাই উপদেশ
দেওয়াটা কি দোষের।
তৃষ্ণা রাগত কন্ঠে বললো- তুই কি ওর গার্জেন, তের এতো মাথা ব্যথা কেন, কোথায় তোর মালিক ডাক।
মালিক আসেনেি উনার ছেলেকে নিয়ে কোচিং করাতে
আসছি।
তৃষ্ণা এবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো
-তুমি এতোক্ষণ এই অসভ্যটার সাথে তর্ক না করে ইউ
ল্যাব ভার্সিটি ছেলেরা সবাই আড্ডা দিচ্ছে তুমি তাদের
ডাকনি কেন? বেশ আমি ডাকছি।
ড্রাইভার এবার ভয় পেয়ে বললো- মাপ করবেন ওদের ডাকবেননা।
এখন তোর গার্জেন গিরি মিটিয়ে দিতাম আর যেনো দেখিনা এই রোডে কোন মেয়েকে আটকিয়ে কে কি পরবে সে বিষয় মাথা ঘামাতে।
এবার মেয়টির দিকে তাকিয় বললো - তোমার বাসা কেথায়?
এইতে এই গলিতে।
তৃষ্ণা-এসো আমার সাথে।
মেয়েটিকে বাসার গেটে পৌচ্ছে দিয়ে বললো-
এদের কাছে ভয় পেলে পেয়ে বসবে বুঝতে পেরেছো
সাহসী হতে প্রতিবাদি হতে চেষ্টা করবে তাহলে আর
এরা সাহস পাবেনা কথা বলতে মনে রেখো।
এই বলে নিজর বাসার দিকে পা বাড়ালো।
চলবে...
শামীমা আহমেদ
শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত
(পর্ব ৬)
শামীমা আহমেদ
---শায়লার মা ভাই বোন আত্মীয়স্বজনেরা অপেক্ষায়, কবে শায়লার ভিসার কাগজপত্র আসবে আর শায়লা কানাডায় পাড়ি জমাবে।শায়লা কাউকে বলতে পারছে না তার জীবনে কি ঘটে গেছে!যে আত্মীয়রা এতদিন নিশ্চুপ ছিল আজ সেই মামী চাচীরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। যেন শায়লার জন্য তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে । মেয়েকে বিয়ে দিয়ে উদ্ধার করেছে, এবার স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে পিতৃহারা মেয়ের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছে। সবার দৃষ্টি এখন এমন বিদেশি পাত্রের দিকে। সবার ঘরেইতো মেয়ে আছে।ইতিমধ্যে শায়লাকেও জানিয়ে রেখেছে, কানাডা গিয়ে ছোট বোনদের কথা যেন ভুলে যেও না। তোমার কাছাকাছি রেখো।যেন শায়লা কানাডা গিয়ে ফ্যাক্টরি থেকে পাত্র বানিয়ে বানিয়ে সাপ্লাই দিবে।শায়লার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় রুহি খালাকে জিজ্ঞেস করতে কেন এমন প্রতারনা করলেন আমাদের সাথে!কেন সব কিছু জেনেও,, পরক্ষণেই নায়লা,মা আর রাহাতের কথা মনে পড়ে যায়।সবার জন্য তাকেই তো ভাবতেই হতো!
রুহি খালা পুরান ঢাকার মেয়ে।ঢাকাইয়া বাপের একমাত্র মেয়ে।বাপের যত প্লাস্টিক আর চুড়ির কারখানা সবই পেয়েছেএই
মেয়ে ।যেমন অগাধ টাকা রুহি খালা আর তার বাপের, মনও তেমনি দিলদরিয়া।ইচ্ছে করেই তিনি ঘর জামাই রাখেননি যেন মেয়ের মনমত সংসার সাজাতে পারে। শায়লার ভাই রাহাতের পড়াশুনার খরচ নিঃস্বার্থভাবে তারাই দিয়েছে। উদার মনমানসিকতার এই পরিবারটি খুবই সহজ সরল। কে জানে নোমান সাহেবই কি তাদের কাছে সবকিছু আড়াল করেছিলো কিনা! তবে শায়লাদের পরিবারের সবচেয়ে ভালো তো তারাই চায়।এখানে শায়লার কী ভালো করলো সে তা বুঝে না।
কেন যে শায়লা কিছু না ভেবেই মত দিয়েছিলো?সেই তার একার জীবন একাই রয়ে গেলো।নিজের জীবনের কিছুই যেন মিলে না।অবচেতন মনে বারবার নোমান সাহেবের প্রোফাইলটা ঘুরে আসে।অজানা মানুষটা অজানাই রয়ে গেলো। একটা মেয়ের উন্নত বিশ্বের একটি দেশে সংসার হবে। এতে মাতৃস্থানীয়রা অনেক খুশি হয়ে যান! তাদের মত যেন সারাজীবন সন্তান পালন আর হেঁসেল ঠেলে জীবন না কাটে এমন ভাবনায়।কিন্তু ওরা বুঝতে পারে না এর চেয়েও আরো অনেককিছু জীবনকে সুন্দর করতে প্রয়োজন হয়।মনের এমন অবস্থায় হঠাৎ করেই একদিন শিহাবের সাথে পরিচয়টা ঘটে গেলো! ফেসবুকে প্রোফাইল পিকে সানগ্লাস পরা নায়ক ভাবের একটা ছবি। যদিও এইসব ছবি ফেইক থাকে। কিন্তু ফেসবুক বায়োতে লোকটির কথাটা শায়লাকে বেশ টেনে নিলো।চমৎকার লেখনী।
"পেছনের একার জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলছি এই একা আমিই"।
কথাটা শায়লার মনে ধরে যায়। তাইতো! কথাটাতো তারও!
তবে কি লোকটিও তারই মত একা! অবশ্য মেয়েদের একাকীত্বের সুযোগ নিতে অনেকেই এইসব আবেগী কথা দিয়ে রাখে। শায়লা ভাবলো,নক দিয়ে দেখা যাক কেমন হয়। ভালো মানুষ না হলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবো। নোমানের ভাবনা থেকে মনকে সরাতে হবে নয়তো তাকে নোমান সাহেবের স্ত্রী হয়ে, নয়তো তার সন্তানদের ন্যানী হয়ে জীবন কাটাতে হবে।অবশ্য শায়লা না জানালে বিষয়টি কেউই কোনদিন জানতে পারবে না। আসলে এরা দেশে আসে শিক্ষিত কাজের বুয়া খুঁজতে। বিয়ে একটা বাহানা।ওখানে নেয়ার পর চলে নির্মম আচরণ। তবুও মেয়েরা বিদেশ থেকে হাসিমুখে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে।বুঝাতে চায় আমি এখানে অনেক সুখী। বাবা মা তোমরা আমাকে অনেক ভালো বিয়ে দিয়েছো।
চলবে...
মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩৪
একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "।
টানাপোড়েন
ফোন বিভ্রাট
রেখার শরীরটা ভালো নেই। প্রচন্ড জ্বর ভুলভাল বকছে। কিন্তু মনোজ কোথায়?
মনোজ একবার এসে রুমে দেখে -রেখা শুয়ে আছে ।প্রথমদিকে অতটা গা করে নি। পরে যখন আবার রুমে ঢোকে ,তখন দেখে রেখা একইভাবে কাতরাচ্ছে ।গায়ে হাত দিয়ে দেখে প্রচন্ড জ্বর। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার কে ফোন করে।
'হ্যালো'।
নমস্কার আমি মনোজ বলছি ডাক্তারবাবু। আসলে আমার স্ত্রীর প্রচন্ড জ্বর ওকে কি নিয়ে যাবো ,না আপনি ফোনেতে ওষুধ বলবেন?'
ডাক্তারবাবু ' আমি ওষুধ বলছি লিখে নাও।
মনোজ বলল 'এক মিনিট একটু হোল্ড করুন ডাক্তারবাবু ,পেনটা নিচ্ছি।(পেন নিয়ে আর একটা প্যাড নিয়ে)। হ্যাঁ বলুন।'
ডাক্তারবাবু বললেন
cifran500,paracetamol 650,ambrolite -s,syrup
মনোজ বলল 'কিভাবে খাওয়াবো?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'cifran 500 দিনে দুবার খাবার পর।
Paracetamol ,650 এখনি একটা খাইয়ে দাও। জ্বর থাকলে পরে আর একটা খাইয়ে দেবে।
Ambrolite-s,syrup দিনে ৩ বার খাবার পর।'
মনোজ বলল 'অসংখ্য ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু।'
ডাক্তারবাবু বললেন 'আরে ,না ,না ,মনোজ। এটা তো আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য। রেখা কেমন থাকে আমাকে জানিও।'
মনোজ বলল 'অবশ্যই ডাক্তার বাবু। আর তাছাড়া আপনি তো আমাদের পারিবারিক সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন অনেকদিন ধরে ।আপনার উপরে আমাদের সব ভরসা। ভালো থাকবেন।'
ডাক্তারবাবু হেসে বললেন 'ফোনটা রাখছি কেমন ।তোমরাও ভালো থেকো সবাই।'
মনোজ ফোনটা রেখে ওষুধটা রেখাকে খাইয়ে দিল।
একটু জলপটিও দিয়ে দিল।
রেখা চোখ খুলে মনোজের দিকে তাকিয়ে ।
মনোজ দেখছে চোখ দিয়ে জল পড়ছে।
রেখা মনোজকে দুই হাত দিয়ে ধরে হাত দুটোকে জড়িয়ে রাখল।
মনোজ রেখার দু চোখের জল মুছে দিল। আর বলল 'কাঁদছো কেন? নিজের দিকে দেখিয়ে বলল আমি আছি তো।'
এর ই মধ্যে আবার ফোন বেজে উঠলো। মনোজ এবার বিরক্ত হচ্ছে। রিং হয়েই যাচ্ছে।
রেখা বললো 'ফোনটা তুমি ধরো। তোমার কাজের ফোন হতে পারে। আমি ঠিক আছি। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।'
মনোজ বললো 'বাজুক। তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।'
রেখা মনে মনে ভাবতে লাগল 'মনোজের সম্পর্কে কি না কি ভেবেছে? এরকম ভাবাটা একদমই উচিত হয় নি।
স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। সে আরো মনে মনে ভাবল সুস্থ হয়ে মনোজকে সব কথা বলে দেবে ,মনোজের সম্পর্কে যা ভেবেছে এবং ক্ষমা চাইবে?''
এরমধ্যে আবার ফোন বেজে উঠলো বিরক্ত হয়েই মনোজ ফোনটা রিসিভ করল এবং বলল 'আমি যখন ফোনটা ধরছি না ,তাহলে বুঝতে হবে যে ,আমি কোন জরুরী কাজে আছি।'
তখন অপরপক্ষ বললে 'কিরে এত রেগে যাচ্ছিস কেন ?আমি আবার কখন ফোন করলাম এতবার। কে তোকে এতবার ফোন করছে রে ?রসিকতার সঙ্গে সুরঞ্জন বলল।
মনোজ এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ' ও তুই সুরো?'
সুরঞ্জন বলল 'আমি । সুরঞ্জন সেন। কলকাতার বালিগঞ্জ..।'
মনোজ বললো 'থাক আর পরিচয় দিতে হবে না। ক্ষমা চাইছি।'
সুরঞ্জন হেসে হেসে বলল'এবার বল তো বন্ধু তুই কাকে প্রত্যাশা করেছিলি?'
মনোজ বললো 'তোকে আমি পরে সব কথা বলব ।আমি ভীষণ সমস্যায় পড়ে গেছি তোর হেল্প চাই ভাই।'
সুরঞ্জন বলল 'মনোজ বসু আমার হেল্প নেবে, সে তো একাই একশ। কলেজ লাইফ থেকে দেখে আসছি।'
মনোজ বলল 'না রে ,সুরো, আমি একটা বিপদের মধ্যে আছি আবার একটা এখন নতুন বিপদ।'
সুরঞ্জন বলল 'দুটো নূতন বিপদ? কেমন যেন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি ।একটু খুলে বল তো? রেখা ভালো আছে তো রে?'
মনোজ বলল 'বন্ধু ।নতুন বিপদের মধ্যে একটা বিপদ হচ্ছে রেখা।'
সুরঞ্জন বলল ( অবাক হয়ে) 'রেখা! রেখার মতো ভালো মেয়ে হয় না ।ওর বিপদ হতে যাবে কেন?'
মনোজ বলল 'আরে ,আমি কি বলেছি রেখা বাজে মেয়ে? ওর প্রচন্ড শরীর খারাপ।'
সুরঞ্জন একটু চিন্তিত ও ব্যাঘ্র ভাবে বলল 'কেন রে কি হয়েছে? ডাক্তার দেখিয়েছিস?'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান সিতাংশু কাকাকে ফোন করেছিলাম ।উনি ওষুধ বলে দিয়েছেন ,সেটাই খাওয়াচ্ছি।'
সুরঞ্জন বলল 'ও জ্বর বাঁধালো কি করে রে?,'
মনোজ বলল 'আর বলিস না ।গত কাল স্কুলে যেতে হয়েছিল ।প্রচন্ড বৃষ্টি ।তাতে ভিজেছে ।তারমধ্যে সকাল সকাল উঠে পুজোর জন্য স্নান ,কাজকর্ম সারা এরমধ্যে তো আবার যে নতুন কাজের মেয়েটি আছে সে তো অর্ধেক দিন কাজেই আসে না । ন্যাচারালি ওকেই করতে হচ্ছে।'
সুরঞ্জন বলল 'সব জায়গায় কাজের মেয়েদের নিয়ে সমস্যা জানিস তো ?এদিকে মাধু ও ভুগছে। বাপের বাড়ি থেকে এসে সমানে কাজ করে যেতে হচ্ছে ।কাজের মেয়ে ছুটি।'
মনোজ বলল 'বৌদিকে সাবধানে থাকতে বলিস আর এত সকাল সকাল উঠে কাজকর্ম করতে বারন করিস।'
সুরঞ্জন বলল ' হ্যাঁ বলবো।তবে এবার পুজোর কটা দিন শ্বশুরবাড়িতে খুব ভালো কাটালাম জানিস তো। তোকে আসতে বললাম ।আসলে ভালো লাগতো। মাধুও অনেকবার বলছিল।'
মনোজ বলল 'যাক তোদের দিনগুলো তাহলে ভালোই কেটেছে শুনেও ভালো লাগলো।'
সুরঞ্জন বলল 'তোদের কেমন কাটলো?'
মনোজ বলল ' আরে নতুন বিপদ। রেখার দিকে একটু তাকিয়ে দেখে নিল তারপর আস্তে আস্তে বলল আরে সেই পুরনো...? ফিরে এসেছে রে?'
সুরঞ্জন বলল 'এই আমি কিছু বুঝতে পারছি না খুলে বল।'
মনোজ বলল 'পুরোটা খুলে বলতে পারছি?? তুই বুঝতে পারছিস না ,।কলেজ লাইফে চলে যা ।কি ঘটেছিল সেটা স্মরণ কর।'
সুরঞ্জনা অবাক হয়ে বলল ' দীর্ঘ দশ বছর পর।'
মনোজ বলল 'কোন মানে হয় ,তুই বল? এখন আমার পক্ষে সম্ভব?'
রেখার কথাটা আবার কানে গেল। নির্মল আকাশে হঠাৎ করে যেন কালো অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো ।মনে হচ্ছে যেন সারা পৃথিবী তাকে গ্রাস করে ফেলবে ।ভয়ানক অন্ধকার। আকাশ থেকে বৃষ্টি হবে ।বজ্রপাতে এক্ষুনি সমস্ত কিছু তছনছ করে দেবে, ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে ।ঝড়ঝঞ্জা যেন এসে উপস্থিত হলো।
রেখা ফ্যালফ্যাল করে মনোজের দিকে তাকিয়ে রইল।
মনোজ কথা বলতে বলতে হঠাৎ সুরঞ্জনকে বলল 'তোকে আমি পরে বলব ।দাঁড়া, দেখি তো কি হলো রেখার?'
মনোজ রেখাকে বলল 'কি হয়েছে? ঠিক আছে তুমি?'
রেখা হঠাৎই যেনো কেমন আচরণ করতে লাগলো ওর যেন হঠাৎ করে বুকে কষ্ট শুরু হয়েছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
মনোজ অধীরভাবে বলল ' কি হয়েছে রেখা ?এই নাও জল খাও ।(তাড়াতাড়ি জলের গ্লাসটা এগিয়ে নিয়ে কাছে ধরে)।কষ্ট হচ্ছে ?কোথায় ?আমাকে বল।'
সুরঞ্জন তখনও ফোনটা ধরে আছে বলল 'কি হলো রে ?কি হলো রেখার? আমি ফোনটা রাখছি। তুই এখন রেখাকে দেখ।'
ফোন কেটে গেল ।মনোজ রেখার পাশে বসে রেখার বুকে পিঠে ভালো করে হাত বুলাল। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ' রেখা শান্ত হও ।কি হয়েছে ?আমাকে বল। অনেকক্ষণ পর রেখা শ্বাসটা ঠিক করে নিল।'
মনোজ ভাবছে 'রেখা কি কিছু আন্দাজ করতে পারছে ?যার জন্য ওর শরীরের ভেতরে একটা কষ্ট জমাট বেঁধে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।'
রেখা দুই হাত দিয়ে মনোজকে আবার আঁকড়ে ধরল। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।
মনোজ বলল 'রেখা তুমি এরকম করছ কেন? আমি তো তোমার পাশেই আছি।'
রেখা আবার বললো 'তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না'।
মনোজ রেখাকে দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে বুকের কাছে মাথা রেখে বলল 'আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাব রেখা, তুমি কেন এসব ভাবছো? তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো ।তোমার মিলির বেবিরা কিন্তু তোমাকে খুব মিস করবে আর মিলি তো তোমাকে দেখতে না পেলে কেমন করে তুমি জানো?'
রেখা বললো 'মিলিকে খেতে দিতে হবে।'
মনোজ বলল 'কটা বাজে তাই?'
রেখা ঘড়ির দিকে আঙুল দিয়ে দেখাল।
মনোজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে ছয়টা বাজে।
'আরে ,তাই তো ওর তো খাওয়ার টাইম হয়ে গেছে রেখা ।ঠিক আছে তুমি কিন্তু ব্যস্ত হবে না। চুপ করে শুয়ে থাকবে ।আমি ওদের খেতে দিয়ে আসি কেমন?'
রেখা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।
মনোজ হাসিমুখে রেখার কপালে একটা চুম্মা এঁকে চলে গেল ।কিন্তু ফেলে গেল ফোনটা।
হঠাৎই আবার ফোন বেজে ওঠে ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
বেশ কয়েকবার বেজেই চলল। রেখা বাধ্য হয়েই ফোনটা রিসিভ করল 'হ্যালো, হ্যালো হ্যালো'।
ও প্রান্ত থেকে কেউ কোনো সাড়া দিল না কিন্তু ফোনটা কিন্তু ধরেই আছে। রেখার একে তো শরীর ভালো নয় ।তবুও বলল ' কে বলছেন আপনি? কাকে চাইছেন?'
অপরপক্ষ কিন্তু চুপ।
এরইমধ্যে মনোজ চলে এসেছে। রেখার হাতে ফোনটা দেখে মনোজ ক্রোধে ফেটে পড়লো আর বলল 'তুমি আমার ফোন কেন ধরেছ? স্পাই গিরি করছো? তোমার না শরীর খারাপ ।তোমার লজ্জা করে না ফোন ধরতে । ফোন যখন রিসিভ করছ তখন তোমার কিন্ত শরীর খারাপের কোন লক্ষ্মন দেখা যাচ্ছে না।'
রেখা শুধু আস্তে আস্তে বলল 'অনেকবার বেজে যাচ্ছে তো তাই?'
মনোজ বলল 'বাজুক ফোন ।তোমার শরীর খারাপ তোমাকে বলেছিলাম চুপ করে শুয়ে থাকতে।'
রেখা বললো 'আসলে আমি ভাবলাম যদি তোমার কোন আর্জেন্ট ফোন হয়ে থাকে ।সেজন্য ..দিয়ে আবার খকখক করে কাশতে শুরু করল।'
মনোজ তো সমানে বলে যেতে লাগলো 'আমার আর্জেন্ট ফোন আসলে সেটা আমি বুঝব রেখা ।তোমাকে কেউ ফোকর দালালি করতে বলে নি।'
মনোজের মুখ থেকে এই সমস্ত শব্দ শুনে রেখা কেমন যেন ভয় পেয়ে যেতে লাগল ।কি বলছে এসব মনোজ রেখাকে।
রেখা শুধু বলল 'আমি আর তোমার ফোন ধরবো না ।প্লিজ আর তুমি আমাকে এসব কথা বলো না। আমি নিতে পারছি না।'
মনোজ বলল ' অত ন্যাকামো তুমি করো না তো ।অনেক ন্যাকামো দেখেছি। অসহ্য লাগছে।'
রেখা শুধু বলল- 'আমাকে তোমার অসহ্য লাগছে। রেখার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।'
রেখা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি মনোজ যেভাবে রেখাকে কথাগুলো বলবে ,সামান্য একটা ফোন ধরাকে নিয়ে ।রেখার জীবনে তাহলে কি অশান্তির বীজ বপন হয়ে গেছে? কি হবে পরবর্তী ক্ষেত্রে ?সে চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠল।
২৬ অক্টোবর ২০২১
মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩৩
একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "।
টানাপোড়েন (৩৩)
অজানা আতঙ্ক
আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। সকলে ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করবে ,যাতে গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি শান্তি বজায় থাকে । রেখা গতকাল স্কুল থেকে ফেরার সময় একটু বৃষ্টিতে ভিজেছিল। মনে হচ্ছে গা টা সকাল থেকেই একটু ম্যাচ ম্যাচ করছে ,মাথা যন্ত্রণা করছে, জ্বর জ্বর ভাব। এসব উপেক্ষা করে লক্ষ্মী পূজার জোগাড়ে মেতে উঠেছে ।সকাল থেকে কাজ গুছিয়ে নিয়ে ,স্নান করে মা লক্ষ্মীর ভোগ রান্না করে ,তারপর পুজোয় বসেছে ।এর মধ্যে একবারও মনোজ কোন খোঁজ খবর নেয় নি। সারাক্ষণ ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তা 'যেন একলা আকাশ থমকে গেছে কোন এক....।' পুজোর জোগাড় করছে বটে ,কিন্তু মনোজের জন্য খুব টেনশন হচ্ছে ।আজকাল ঘনঘন মনোজের ফোন আসে। যদিও কোনো কালে রেখা ফোনের ব্যাপারে কৌতুহলী হয় নি ।তবে আজকে একটা কথাতে রেখার মনে খটকা লেগেছে ।কি হতে পারে?
মনোজ কেন ওই কথাটি বলল 'এখন আমার পক্ষে সম্ভব নয়।'
'ভাবতে ভাবতে কাজে ভুল হচ্ছে। ওদিকে সকালের সব কাজ গোছানোর পর সুমিতা এসেছে। কিন্তু তাকে কিছু বলার প্রবৃত্তি রেখার আজকে হয় নি ।কি বলবে ?পুটু চলে যাবার পর থেকেই এই মেয়েটি কাজে এত দেরি করে আসে ।আবার কোনদিন আসলোই না। কামাইও প্রচুর। এই জন্য রোজ রোজ কথা বলতে ভালো লাগে না ।আজকে তো ইচ্ছেই করছে না। বাসন গুলো ছিল ,সেগুলো মেজে দিয়ে চলে গেছে। যাবার সময় বলল ' বৌদি বৌদি বৌদি।'
রেখা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল 'চিৎকার করছো কেন?'
সুমিতা বলল 'কালকে আমাকে মাইনের টাকাটা দিয়ে দেবে?,'
রেখা বলল ' এখনো তো মাস শেষ হয়নি?'
সুমিতা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল 'আমার খুব দরকার তাই..?'
রেখা বলল 'ঠিক আছে। নিয়ে নিও। সবকিছুই ঠিক আছে সুমিতা। তুমি কাজে কেন এতো লেটে আসো ?আবার যেদিন আসো না ,সেদিন বলেও যাও না। এতে যে আমাকে কত অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় ,সেটা যদি তুমি একটু বুঝতে?'
সুমিতা শুধু পায়ের উপর পা ঘষে যেতে লাগল আর চুপ করে থাকলো।
কালকের দিনটা সুমিতা যে কাজে আসবে ,রেখা নিশ্চিত হয়ে গেল। কারণ কালকে ও টাকা নেবে।
ওদিকে কে যেন মনোজ মনোজ করে ডাকছে। তার আগে কলিং বেল বাজল। কিন্তু মনোজ কী করছে?
কোনো সাড়া শব্দ নেই ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল।
রেখা দরজা খুলেই দেখে 'সৌম্যকান্তি শুভ্র বস্ত্র পুরোহিত মশাই।'
পুরোহিত মশাই বললেন 'কখন থেকে কলিং বেল বাজাচ্ছি বৌমা'। কারোর কোন সাড়াশব্দ নেই। মনোজ কোথায়?
রেখা একগাল হেসে বলল 'ক্ষমা করবেন। আসুন ভেতরে আসুন। ও কাজ করছে বোধহয় ভেতরে।'
পুরোহিত মশাই বললেন ,'আজ লক্ষ্মীপুজো কত জায়গায় পুজো আছে জানো, একটুও সময় এদিক ওদিক হলে চলে না।'
রেখা মনে মনে ভাবল যতবারই যেকোনো পুজোতেই আসুন না কেন একই কথা?যদিও কোজাগরীতে পুজের সংখ্যাটা একটু বেশি থাকে।
পুরোহিত মশাই বললেন ' সব জোগাড় আছে তো মা?'
রেখা বলল ' হ্যাঁ।
পুরোহিত মশাই বললেন 'জানি তোমার বাড়িতে পুজো করতে এসে আমাকে কিছু জোগাড় যন্ত্র করতে হয় না তুমি সব গুছিয়ে রাখো ।তবু একবার জিজ্ঞেস করলাম। তোমরা স্বামী-স্ত্রী লক্ষীনারায়ন।' এরপর শুরু করলেন পুজো।
এরইমধ্যে রেখা ভাবতে লাগলো আরতি করার সময় হোমের সময় মনোজ থাকে পাশে। সত্যিই খুব সুন্দর দু'জনে মিলে পূজা করে। এবারটা যে কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। পুজো করতে বসেও মনে শান্তি নেই। একটু পরে আরতী শুরু হবে মনোজ কী আসবে? না কি ডাকতে যেতে হবে? বলতে বলতেই শঙ্খ বাজাতে শুরু করলো, উলু ধ্বনি দিল।
রেখা আবার ভাবছে 'মনোজ এর জন্য একটা নতুন পাজামা -পাঞ্জাবী বের করে রেখেছে। স্নান করে এসে ওটা পরবে তো?'
পুরোহিত মশাই বললেন 'মনোজকে ডাকো, বৌমা ।আরতী শুরু হবে ।নইলে তো আবার রাগ করবে।,'
রেখা বলল 'হ্যাঁ যাই ।ডেকে আনছি।'
ওদিকে জানলা দিয়ে চৈতির মা ডাকছে ও দিদি, ও দিদি ,পুরোহিত মশাই এসে গেছেন গো?
রেখা জানলাটার কাছে দাঁড়িয়ে বলল ,' হ্যাঁ।
চৈতির মা বলল 'দিদি একটু পুরোহিত মশাইকে বলবেন তো ,এরপরে যেন আমাদের বাড়ির পুজোটা করে দেন।'
রেখা শুধু ঘাড় নাড়ল আর বলল ,'দিদি প্রসাদ নিও,আমাদের বাড়িতে এসে।'
চৈতির মা হেসে বলল 'আজ সবার বাড়িতে পুজো আপনারাও আসবেন আমার বাড়িতে।'
অন্যদিকে পুরোহিত মশাই ডাকছেন 'বৌমা ,বৌমা দেরি হয়ে যাচ্ছে।'
রেখা গলা বাড়িয়ে বলল 'হ্যাঁ ,যাই কাকাবাবু।'
চৈতির মা বলল 'না, না ,দিদি। বেশি কথা বলব না। যান ওদিকে দেরি হয়ে যাবে।'
রেখাও বললো 'হ্যাঁ, দিদি ।বলেই চলে গেল।
মনোজকে খোঁজ করতে গিয়ে দেখে, ঘর অন্ধকার ।ড্রইং রুমে বসে ফোনে কথা বলছে।'
রেখা বলল 'তুমি আরতী করতে আসবে তো?'
মনোজ না তাকিয়ে ঘাড়টা নাড়লো।
রেখা বলল আরতি শুরু হয়ে গেছে একটু তাড়াতাড়ি এসো ।ওদিকে পুরোহিত কাকা তাড়া দিচ্ছেন ।এরপর হোম আছে।-বলেই রেখা চলে গেল পুজোর ঘরে। যেন কুকুর তাড়া করেছে।
রেখা লক্ষ্মী পূজার দিন খুব সুন্দর করে সাজে গয়নাগাটিতে ।পায়ে নুপুর পরে। নুপুরের আওয়াজে সারা বাড়ি যেন নেচে ওঠে।নুপুরটা মনোজের জন্য ই পরে।
অথচ একবারও আজকে মনোজ বলল না ,নুপুর পরে গয়নাগাটিতে তোমাকে কত সুন্দর লাগছে। মনোজ প্রতিবার এই কথাটা রেখাকে বলে ।আজ কি করে ভুলল। পুজোর ঘরে গিয়ে বসে বসে ভাবছে।
পুরোহিত মশাই বললেন 'মনোজ আসলো না? আর কতক্ষন ওয়েট করবো বৌমা ?এবার তাহলে হোম শুরু করে দেব?'
রেখা বলল 'আসলে শরীরটা একটু খারাপ তো?'
পুরোহিত মশাই বললেন 'ও তাই বুঝি ।এই জন্যই আজকে মনোজ পুজোর ঘরে নেই ।আমি ভাবলাম কী জানি ,আবার কি হলো। ডাক্তার দেখিয়েছো তো।
তাহলে ওকে না ডাকলেও হয়। ও রেস্ট নিক বুঝলে বৌমা?'
রেখা শুধু ঘাড় নাড়ল।
এরমধ্যে হোমের জোগাড় করে ,হোম শুরু হয়ে গেল। রেখা করজোড়ে ঠাকুরকে ডাকতে লাগল 'ঠাকুর সবাইকে ভালো রেখো। আর তার জীবনে সবকিছু ঠিক করে দাও ।মনোজের মনে যদি কোন কষ্ট থাকে ।সেগুলো দূর করে দাও । সুখ শান্তিতে ভরিয়ে তোলো ।ভালো রেখো।'
হঠাৎই মনোজ পুজোর ঘরে প্রবেশ করে। রেখার তখনও দু চোখে জল। প্রণাম করে উঠতেই মানোজকে দেখতে পেয়ে, চোখে আবার আনন্দাশ্রু বেয়ে পরে।
পুরোহিত মশাই বললেন 'বাবা মনোজ শরীর ঠিক আছে তো ?এসো ,এসো বাবা ।বসো।'
হোম অর্ধেক হতেই একটা ফোন আসে, মনোজ বেরিয়ে যেতে চায় ।
তখন রেখা বলে 'হোম শেষ না করে উঠতে নেই ।তুমি তো জানো?'
অগত্যা মনোজ বসলো। ফোনটা বেজেই যেতে লাগলো।
রেখা বলল ' ফোনটা একটু সাইলেন্ট করে দাও।
রেখা লক্ষ্য করলো মনোজ সেই নতুন পাজামা -পাঞ্জাবীটা পরে নি ।পুরোনোটাই পরেছে ।চোখে মুখে যেন একটা বিষন্ন দুশ্চিন্তা।
পুজো শেষ হয়ে গেল পুরোহিত মশাই একে একে তার সমস্ত জিনিস ঝোলায় পুরে নিতে লাগলেন। বরাবরই ভালো ভালো মিষ্টি ,নাড়ু যা থাকে ,সব ই তুলে নেন দু-একটা রেখে ।বড় বড় গোটা গোটা ফলগুলো তুলে নেন। তারপর দক্ষিণা।
যাবার সময় প্রতিবার বলেন ' পরেরবার দক্ষিণা আরেকটু বাড়িও মা।'
একটু পরেই বাড়িতে পার্থ (পাশের বাড়ির), তার পাশের বাড়ির সকলেই প্রসাদ নিতে চলে আসে। রেখা
সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করে। চৈতিদের বাড়িতে প্রসাদ পাঠিয়ে দেয়। সুমিতার জন্য আলাদা করে প্রসাদ ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেয়।
এরই মাঝে পার্থ জিজ্ঞেস করেছিল 'বৌদি ,মনোজদা কোথায় গেল? দেখতে পাচ্ছি না। আজকে আমিও বেশিক্ষণ বসবো না ,আমার একটু তাড়া আছে, বৌদি।
রেখা বলল 'কাজে ব্যস্ত আছে তো?'মনে মনে ভাবল কতজনকে বলবে এই একই কথা? আর ভাবলো ভালোই হলো পার্থ বেশিক্ষণ বসবে না।না হলে হাজার প্রশ্ন উঠে আসত।
সবাই চলে যাবার পর রেখা মনোজের ঘরে প্রসাদ নিয়ে গেল ।তখনো মনোজ ফোনে কথা বলে যাচ্ছে রেখার একটু অদ্ভুত লাগছে । কি এমন আর্জেন্ট কথা আছে ,সব সময় ফোনে এরকমটা তো আগে কখনো হয় নি।
মনোজ রেখাকে দেখে একটু চমকে উঠলো। ইশারায় বলল-'প্রসাদটা রেখে যেতে।'
রেখা প্রসাদের থালাটা নামিয়ে রেখে ,এবার নিজে প্রসাদ খেয়ে ,জল খেয়ে নিল ।প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। এই জন্য মনোজ কী করছে ,না করছে রেখার সেসব দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ।শরীর নিয়ে জেরবার হয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে আবার মিলিদের খেতে দিতে হবে ।কাজেই ঐসব দিকে রেখার থাকলে হবে না। অনেকক্ষণ থেকেই মিলি চেঁচাচ্ছে খাবার জন্য। বাচ্চা হবার পর ওর খাবারের চাহিদা বেড়েছে। এবার রেখা মিলিদের খেতে দিতে চলে গেল। ভাবলো আর নয় এবার একটু রেস্ট নেবে ।পুজোর বাসনগুলো কালকে তো সুমিতা আসবে ,ওই মেজে নেবে।
রেখার নিজের ঘরে রেস্ট নিতে যাবার সময় মনোজের হটটক শুনতে পেল। 'আমি তো বারবার বলছি ,আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপরেও জোর করলে তো হবে না ।এখন অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে। সেটা তোমাকে বুঝতে হবে।'
রেখা নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে ভাবছে 'সব ঠিক আছে। 'তোমাকে বুঝতে হবে ?'তুমি' বলতে কাকে বোঝাতে চাইছে?'রেখা ভাবছে, এবার রেখা পাগল হয়ে যাবে ।রেখার জীবনে নূতন কোনো ঝড় আসতে চলেছে কিনা? নতুন করে সেই ঝড় সত্যিই সে সামলে উঠতে পারবে তো? বারবার তার গা শিউরে উঠতে লাগলো অজানা অচেনা আতঙ্কে।
ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৩৩ক্রমশ
সাফিয়া খন্দকার রেখা
বাজপাখি ছুটে আসছে
( কৃতজ্ঞতা রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, একটি লাইন কবিতার প্রয়োজনে ব্যবহার করেছি এই কবির)
ল্যাম্পপোস্টর মতো অনাদর আর হাহাকারে কাঁদছে উৎসবের বর্ণীল আয়োজন।
এখানে ওখানে বর্ণহীন নিষ্প্রভ সময় এখন।
ঘুমন্ত মানুষ নয় বিপ্লবীর খুব প্রয়োজন আজ।
মৃত্যুর মিছিলের পথ আগলে যে দাঁড়াতে পারেনা
সে আমৃত্যু ঘুমিয়ে থাকুক।
অন্ধকার ঠেলে দাঁড়ানো পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির পোড়া গন্ধে কাঁদছে দূর্বাদল,
ওদের কান্না অবিকল তোমার আমার মতো।
গনতন্ত্রের ভণ্ডামিতে সংবিধান ফিরে যেতে চাইছে বাহাত্তরে।
সেদিন আর দূরে নেই
বাজপাখির মতো ছুটে আসবে নতুন প্রজন্ম।
ঘুমিয়ে থাকা মানুষেরা জড়ায়ু ঠেলে ভূমিষ্ঠ হবে অন্ধ সময় তাড়াতে।
গাঢ় সে সন্ধ্যায় জোৎস্না লুটোপুটি খাবে দ্রোহের উত্তাপে,
আমাদের কবর কিংবা চিতায় অলৌকিক মায়া ফেলবে
মানবতার দীর্ঘ মিছিলের ছায়া।
আদিগন্ত ফসলের ক্ষেত ছেড়ে পালাবে
মাজড়া পোকার মতো জ্যান্ত মালিকানা।
মায়েরা পড়াতে ভুলে যাবে শিশুদের
" ভোর হলো দোর খোল
খুকুমণি ওঠোরে"
শিশুরা তখন পড়ছে...
আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বণ্টন,
আমরা ফিরিয়ে এনেছি পৃথিবীর ভারসাম্য,
আমরা ছিড়েখুঁড়ে ফেলেছি ধর্ম নামের মুখোশ,
আমরাই বাজেয়াপ্ত করেছি
মানবতার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র।
জি,এম,লিটন
কষ্টের জীবন
হাজার সুখের পশরা সাজাই,
দুঃখেই কাটে দিন।
আঁধার,কালো পথেই দেখি,
শুধু স্বপ্নগুলোই রঙ্গিন।
জীবন কাটে যুদ্ধ করে,
বাস্তবতার সাথে---
সুখের ফেরিওয়ালা সাজি আমি,
হাজার কষ্টের মাঝে।
দিন চলে যায়,মাস চলে যায়,
বছর আসে ঘুরে।
সুখ পাখিটা দেয়না দেখা---
থাকে অচিন পুরে।
জীবন চলার পথে আমার
আসে শুধু বাঁধা,
যতই সামনে যাই এগিয়ে ---
দেখি গোলকধাঁধা।
জীবন সংগ্রামে,মাঝেমাঝে ---
পথ হারিয়ে ফেলি।
তবুও,কষ্টটাকে বুকে চেপে,
হাসি মুখেই চলি।
জীবনের দুঃখ, দেখলে অনেকেই--
সামনে, আড়ালে হাসে
সান্ত্বনাতো দেয় না কেউ,
কেউ থাকেনা পাশে।
তবুও জীবন যায়না থেমে,
চলে অবিরাম।
কষ্টের জীবন কেটেই চলে---
পাইনা কোন দাম।
তবুও জীবন সবার কাছে---
অমুল্য এক সম্পদ,
জীবন ঘড়ির জং আসিলে,
বাড়ে যে বিপদ।1
দেহের মাঝে থাকবে যতক্ষণ---
প্রাণেরই স্পন্দন।
প্রভুর মতে সাজিয়ে নিও---
তোমারই জীবন।
পাঁচ স্তম্ভে সাজালে কেউ---
আপনও ভুবন।
সার্থক সদা জেন তুমি,
মহিমান্বিত সেই জীবন।
রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"১৮
চলছে নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের পড়তে সহযোগিতা করুন লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম লেখার।
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে লিখতে সহযোগিতা করবে।
উদাসী মেঘের ডানায়
( পর্ব ১৮ )
পরদিন সকাল থেকে সামিয়া একভাবে বমি করছে। বড় আপাকে কল করতেই চলে এলো বাসায়
সৈকত কে বললো ডাক্তারের কথা সৈকত বললো-
আমার আজ ভীষণ কাজের চাপ আপা আপনি যখন
এসেছেন আপনিই বরং নিয়ে যান।
বড় আপা বিকেলে নিয়ে গেলো ডাক্তারের চেম্বারে
ডাক্তার দেখেই বললো জন্ডিস খুব বেশি বিলোরবিন টেষ্ট করিয়ে ভর্তি করুন এখনই স্যালাাইন দিতে হবে।
ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে,সৈকত কে সব বললো
সৈকত-জন্ডিস হলে আা্বার ভর্তি হতে হয় নাকি আপা
কিযে করেন আপনারা আমার বাসার রান্নাবান্না কে করবে।
বড়আপা- বুয়া আছেনা আপাতত বুয়ার হাতে খাও
আমি রাখছি।
এভাবে তিনদিন গেলো বিলোরবিন এখনো তেমন একটা কমেনি সৈকত রাতে বাসায় ফিরে যাবার সময়
দেখে যায় আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ডাক্তার
কে বলতে ছেড়ে দিতে বাসায়।
সামিয়া বললো - বিলোরবিন আর একটু না কমলে
ছাড়বেনা, আমি বলেছি।
সৈকত- ডাক্তার তোর স্বামি না আমি। দুদিন সময় দিলাম,হাসপাতাল না,ছাড়লে ডিভোর্স দিবো তারপর
ডাক্তারের সাথে চলে যাস, এই বলে বেরিয়ে গেলো
সামিয়া স্তব্ধ হয়ে শুয়ে,রইলো কেবল চোখ থেকে জল গড়িয়ে,পড়লো এই নিরব যাতনার কান্নার কোন সাক্ষী
নেই, কেবল ইউনিভার্স ছাড়া।
ডাক্তার ছেড়ে দিলো বন্ড সই করিয়ে প্রেসক্রিপশন কাগজপত্র রেখে ভালো হলে দিবো আগামি সপ্তাহে
টেষ্ট করিয়ে যেনো রিপোর্ট দেখায়।
বাসায় ফিরে এলো কিন্তু এবার বারবার কানে বাজছে
ডিভোর্স এর কথাটা, মন থেকে সরাতে পারছেনা কিছুতেই। আর ভাবছে এভাবে আরও কত বছর কাটাবে নিষ্ঠুর মানুষের সাথে।বাববার ওর আত্মসন্মানের উপর আঘাত করেই যাচ্ছে, এর শেষ
কোথায়? তাহলে কি এর উত্তর সামিয়াকেই দিতে হবে।
চলবে...
শাহিদা ফেন্সী
কবি কি তবে সত্য বলেছেন
বাঙলার মানচিত্র জুড়ে আজ নৃশংসতার দাবানল
পুড়ে খাক হচ্ছে হরিকেল বঙ্গ পুন্ড্র গৌড় সমতট
নীল খুনে রঞ্জিত পলিমাটি থেকে রাজপথ
ফিরে এসেছে চেঙ্গিস বখতিয়ার পাবলো,গারাভিতোর দল
মানুষের ভয়ে মানুষ হবে বুঝি আবার গুহাবাসী
বিস্মিত ঘৃণায় তাকিয়ে দেখবে অবাক প্রাণীকুল!
আমার সাধের মাতৃভূমি আজ মাতৃহারা
পিতৃত্বের পৌরুষ আজ বেহিসেবি উদ্ধত একরোখা
দিকে দিকে রাক্ষস-খোক্ষসের নখ দন্ত জ্বলজ্বলে জ্বলন্ত
আজ রাষ্ট্রের অপর নাম হতাশা বিষাদ শোষণ ভয় আতংক
ত্রিশ লক্ষ শহীদের ষাট লক্ষ চক্ষু হতে ঝরছে আক্ষেপাশ্রু
সাধের জীবন মোরা করেছি দান এ কোন সন্তানের জন্য।
নয় ড্রোন যুদ্ধ বিমান পারমাণবিক অস্ত্র ভূমিকম্প,
চীন ভারত আমেরিকা রাশিয়া হামলা করেনি কোন
জঙ্গিরা ঘটায় সিরিজ বোমা, আগুনে পুড়ে ছাঁই হয় গৃহ
মানুষের ‘হাতে’ মানুষ মরছে সান্ত্বনা পাবো কেন?!
অন্যায়ের এক হাত উঠলে কেন দশ হাত এক হয়
প্রতিবাদের কণ্ঠ কেন তোমায় আমায় সাথে না পেয়ে
মাঠেই মারা যায়! মিথ্যা কেন অট্ট হাসে সত্য গুমরে মরে
কবি কি তবে সত্য বলেছেন,সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে ?
লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"১৪
চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"
বনফুল
( ১৪ তম পর্ব )
জুঁই বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বাবা-মার সাথে দুপুরের খাবার খেতে বসে অনেক গল্প করতে করতে ভাবলো এই সুযোগ, বাবা-মা দুজনেই আছে,এখনই প্রস্তাব টা....।
যেমনটা ভাবা তেমনটা কাজ,সে বললো -
আমি আমার এক বন্ধুকে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছিলাম, তোমরা কি বলো?
ওয়াজেদ সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে একঝলক দেখে নিয়ে স্ত্রী মোনোয়ারা বেগমের দিকে তাকালো,তারপর জুঁইকে বললো ঠিক আছে আগামী শুক্রবারে আসতে বলো। এবার জুঁই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, খাওয়া শেষ করে জুঁই উপরে উঠে গেলো, ওয়াজেদ সাহেব স্ত্রীকে বললেন অনেক দিন ধরেই কিছু বলবে বলবে করে বলতে পারছিলনা।
ওর হাসি খুশি চলাফেরা দেখছিলাম তখনই আমার কিছু একটা মনে হচ্ছিল....,দেখা যাক, কি বলে!
মনোয়ারা বেগম ও বললেন আমারও তাই মনে হচ্ছিল,ও কিছু একটা বলতে চেয়েও পারছিলো না।
জুঁই উপরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে পলাশকে ফোন করলো।
পলাশ হ্যালো বলতেই জুঁই বললো ভালো খবর আছে। পলাশ জুঁইকে প্রশ্ন করলো কি খবর?
-না বলবো না, আগে বলো কি ট্রিট দিচ্ছো.....?
পলাশ বললো, বলো তারপরে দেখাা যাবে।
জুঁই বললো আজ বিকেলে চলো কোথাও বসে কফি খেতে খেতে কথা বলা যাবে। পলাশ বললো আচ্ছা ঠিক আছে।
জুঁই বললো আমি তোমাকে ফোন দেবো, পয়েন্টে চলে এসো।
বিকাল চারটায় জুঁই ফ্রেস হয়ে এসে নেভিব্লু গোলাপি পাড়ের শাড়ির সাথে সবকিছু ম্যাচিং করে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে সাজগোজ করে নিচে নেমে এলো। বাবা-মা দুজনেই খুব আশ্চর্য হয়ে জুঁইকে দেখছিলো, আর মনে মনে ভাবছিলো মেয়ে সত্যি সত্যিই বড় হয়েছে......।
জুঁই বাবা-মাকে বললো আমি একটু বেরোচ্ছি।
জুঁইয়ের ফোন পেয়ে পলাশ যথা সময়ে পয়েন্টে এলো। তার মিনিট পাচেঁক পরই জুঁইয়ের গাড়ি এসে দাঁড়ালো। পলাশ গাড়িতে উঠে বসলো, ফিসফিসিয়ে বললো আজ তোমাকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে জুঁই।
জুঁই থ্যাংকস জানিয়ে ড্রাইভারকে ভালো চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চলুন।
দুজনে পাশাপাশি বসে বেশ প্রেমলাপ হচ্ছিলো।
ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে বললো মেমসাব, আমরা এসে গেছি।
জুঁই আর পলাশ গাড়ি থেকে নেমে লিফটে করে পাঁচতলায় উঠে গেলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটা কর্ণারে টু-সিটার টেবিল দেখে নিয়ে বসলো, জুঁই পলাশকে বললো আজ তোমার পছন্দের অর্ডার করে দাও।
পলাশ ও জুঁইয়ের পছন্দ মতো অর্ডার করে দিলো।
জুঁই পলাশকে জিজ্ঞেস করলো দু-তিন মাসের মধ্যে তো তোমার রেজাল্ট বেরোবে, তারপর কি করেবে কিছু ভেবেছো?
- না কিছু ভাবিনি, আগে রেজাল্ট বের হোক তারপর দেখা যাবে।
চলবে....
শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"৫
অলিখিত শর্ত ( ৫ম পর্ব)
শায়লা শিহাব কথন
শামীমা আহমেদ
নীচতলার রুহি খালাম্মা এসেছেন।আজ বোধহয় একটু সুস্থ বোধ করছেন।নানান ধরণের রোগের বসতি নিয়েছে তার দেহে। রোগের নাম জানতে হলে ডাক্তারী পড়ুয়ারা শুধু তাকে জিজ্ঞেস করলেই অন্তত দশটা রোগের নাম অনুভুতি,উপসর্গ সহকারে বিস্তারিতভাবে জেনে যাবে, যা সে বহন করে চলেছে বছরের পর বছর ধরে।
---ধরতে গেলে সম্পর্কে তিনি এখন শায়লার চাচী শাশুড়ি।সে নিজের দুই মেয়েকে সেই কোনকালে বিয়ে দিয়ে বিদেশি জীবনে পাঠিয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ মনে করছেন।এই বাড়িতেই একে একে দুটো মেয়ের বিয়ে দেয়া। পিঠাপিঠি দুটো বোন সবেমাত্র স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে।দু'বেণী ঝুলিয়ে শায়লাদের ছাদে তখনো এক্কাদোক্কা খেলে।শায়লার থেকে বয়সে অনেক ছোট। ওদের মায়ের ধারণায় মেয়েদের বিয়ে দিতে দেরি করলে তাদের চোখমুখ ফুটে যায়।কি হতে কি হয়! আবার কোন
পছন্দের ছেলে এনে হাজির করে!কার সাথে না আবার ভেগেই যায়! তাই সে সুযোগ তার মেয়েদের তারা দেয়নি।অবশ্য খালু সেখানে একেবারেই বক্তব্যহীন।সংসারের চালিকা খালাম্মা একাই একশো।
তিনিই শায়লার জন্য বিয়ের প্রস্তাবটি আনেন।জানিয়েছিলেন তার এক দূর সম্পর্কের দেবরের ছেলে আজ প্রায় চৌদ্দ বছর হলো কানাডায় আছে। বাড়ি গাড়ি নিজের ব্যবসা সব করেছে।তাই বয়সটা কোনদিক দিয়ে বেড়ে গেছে খেয়ালই করেনি।এখন বিয়ে থা করে সংসার করায় মন দিতে চায়।বিয়ে করতে দেশে আসবে।মেয়ে খুঁজছে। তা শায়লার জন্যতো ভাবতে হয়। আর কতো ঘরে বসিয়ে রাখবেন?বয়সতো আর বসে থাকে না।
-----আসলে যখন বাড়ির মালিকের চেয়ে ভাড়াটিয়ার আর্থিক অবস্থা ভালো হয় তখন বাড়ি বয়ে এসে তারা নির্দ্বিধায় এভাবেই দু'কথা শুনিয়ে যায়।গায়ে পড়ে এইসব মহিলাদের মায়া কান্না শায়লার একেবারেই পছন্দ নয়। কিন্তু তারতো নিজের পছন্দ অপছন্দে কিছু আসবে যাবে না। তাকে ভাবতে হবে ভাইবোনের কথা। নায়লারও বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে।আর যেখানে তাকে এমন ধনী ছেলের পছন্দ! সেখানে শায়লাতো দেয়াল হয়ে থাকতে পারেনা।ওদের কথাতো ভাবতে হবে।নিজেকে পথ ছেড়ে দিতে হবে। কিছুদিন পর রাহাতের বিষয়টিও এসে যাবে। আসলে এইসব মহিলাদের অপছন্দ করলেও এরা কিন্তু সেই মাটিতে কেঁচোর মত। মাটির উর্বরতার মত সমাজের কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে।কথায় আছে না---নিন্দুকের বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো। শায়লার মায়ের চোখে মুখে এক তৃপ্তির ছায়া! শায়লাকে পাত্রস্থ করা অতি জরুরী। বয়স হয়ে যাচ্ছে। এদেশে বেশি বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেয়া যেনো রীতিমত একটা যুদ্ধক্ষেত্র। কতভাবেই না মেয়ে পক্ষকে বিনীত হতে হয়।আর মায়ের স্বস্তির কাছে শায়লার অমতে থাকা, এটা যেন শায়লার বৈশিষ্ট্যতে একেবারেই নেই।
চলবে.....
ফাহমিদা ইয়াসমিন ( ইংল্যান্ড )
প্রীতির ঘুড়ি
ডানে-বামে উড়ছে কতো নানা রঙের ফানুস
এ সব কিছু দেখছি আমি কারণ আমি মানুষ
দেখতে হবে চোখের সামনে বাবার নিথর লাশ
একটু পরেই খাবার খেতে ফিরতে হবে পাশ
চোখের সামনে ঘটবে কতো বাহারি ঘটনা
আমায় নিয়ে কাছের মানুষও ছড়াবে রটনা
তবুও ভালোবেসে উড়াতে হবে প্রীতিরঘুড়ি
এই ভাবে ঠিক বাঁচতে হবে, গড়তে স্বপ্নপুরি।
২৫ অক্টোবর ২০২১
রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়" ১৭
চলছে নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের পড়তে সহযোগিতা করুন লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম লেখার।
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে লিখতে সহযোগিতা করবে।
উদাসী ডানার মেঘ
(পর্ব ১৭)
বাসায় এসে মাত্র সুস্থ হয়েছে সামিয়া ঘরের গোছগাছ শেষ না হতেই সৈকত ফোন করে,বললো বাসায়,আজ সারারাত তাস খেলবে দুই বন্ধু ভাবিদের নিয়ে আসবে
বাসায়,যেয়ে রান্না করো তাড়াতাড়ি একটু পায়েস করো এই বলে ফোন রেখে দিলো।
সামিয়ার কান্না পেলো শরীরটাএখনো দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি অফিসে যেতে হয় ভাবছে কি ভাবে কি করবে রান্না
তৃষ্ণার টেবিলের কাছে যেয়ে বললে- তোর গুছানে শেষ? তাড়াতাড়ি চল চেকআপ করাতে হবে আবার
সমিয়া - কিসের চেক আপ
তৃষ্ণা- ডাক্তার দেখাবে চলো
সামিয়া- মাথা খারাপ তোর একা ডাক্তারের কাছে
গেলে আর রক্ষা আছে আমার।
তৃষ্ণা- আমার সাথে চলো
সামিয়া - না আরও বাজে কথা বলবে,বাসায় তাসের আড্ডা বসবে কাল পুজোর বন্ধ তাই বন্ধুরাও তাদের বউ নিয়ে রাতে খাবে।
তৃষ্ণা- এতো দূর্বল কি ভাবে করবি রান্না
সামিয়ায়- সে হবেনে তের ভাবতে হবেনা।
তৃষ্ণা সামিয়াকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো তাড়াতাড়া করে,কাপড় চেন্জ করে হাতমুখ ধুয়ে রান্না ঘরে এলো, রান্না করতে পারছেনা আাবার মাথাটা ঘুরচ্ছে। বুয়া মাথায় পানি দিয়ে বললো আমাকে দেন
আপা আমি বাকি গুলো করে ফেলি।
সামিয়া কিছুই বললোনা রান্না শেষ করে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই ওরা চলে এলো।
চা নাস্তার পর্ব শেষ করিয়ে সামিয়া কিছুটা সময় কথা
বললো ওরা ও তাস নিয়ে বসে পড়লো
সৈকতকে বললো কিছু প্রয়োজন হলে যেনো ডাকে।
বুয়াই চা দিলো কয়েকবার এবার সামিয়া দেখে রাত এগারেোটা প্রায় বাজে উঠে এসে বললে টেবিলে( খাবার দিবে।সৈকত দিতে বললো একসাথে সবাই খেতে বসলো সামিয়া খেতে পারলোনা ভালো লাগছেনা খেতে
সবার সামনে তাই নাড়াচাড়া করে উঠে পড়লো।
আবার চায়ের পালা শেষ হতেই বসে পড়লো খেলতে
ভোর হতেই সব চলে গেলো। সামিয়ার শরীর ভর্তি
রেশ উঠেছে সৈকত ঘুমাচ্ছে। আজ বন্ধ ডাক্তার ও পাবেনা। কষ্ট পাচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত,লাগছে।
চলবে.....
লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ১৩
বনফুল
( ১৩ তম পর্ব )
জুঁই পলাশের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে, এক ঘুমে সকাল আটটা বেজে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জুঁই তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুম ঢুকে ফ্রেস হয়ে এসে ফোন দিলোপলাশ কে,হ্যালো গুডমর্নিং...
জবাবে পলাশ জুঁই কে বললো গুডমর্নিং ডিয়ার, আজ তোমার এতো আর্লি ঘুম ভাঙ্গলো, ব্যাপার কি?
-কি করবো বলো তুমি তো আজ ফোন দাওনি।
পলাশ বললো ভেবেছিলাম ফোন দিই আবার ভাবলাম যদি তুমি ঘুমে থাকো তাহলে ঘুমটা ভেঙ্গে দেওয়া ঠিক হবে কি না,এই ভেবে ফোন দিইনি।আচ্ছা সুইট হার্ট আর ভুল হবে না।
- এখন ছাড়ছি রেডি হতে হবে।
পলাশ বললো ঠিক আছে । জুঁই ফোন রেখে ড্রেস চেঞ্জ করে চুল আঁচড়ে সুন্দর একটা ইযার রিং কানে পড়লো, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক দিলো, সাজগোছ শেষ করে জুঁই নিচে নেমে এলো, টেবিলে নাস্তা পরিবেশেন করাই ছিলো , নাস্তা শেষ করতেই মা মনোয়ারা বেগম জুঁইকে জিজ্ঞেস করল তুমি কি চা নেবে না কফি?
জুঁই বললো কফি দিতে বলো। কফি শেষ করে জুঁই বললো আমি বেরোলাম।
বাবা-মা দুজনেই বললো সাবধানে যেও,
ক্লাসের অনেক আগেই গেটে পৌঁছালো জুঁই, মনে মনে খুশিই হলো, অনেকটা সময় পাওয়া যাবে, পলাশের সাথে সময় কাটানো যাবে।
গেটে ঢুকে একটু সামনে এগোতেই দেখতে পেলো পলাশ গতকালের জায়গায় বসে আছে। জুঁই হাসি হাসি মুখ এগিয়ে এলো পলাশের দিকে , পলাশও জুঁইকে দেখে খুব খুশি হয়েছে... পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মতো আড্ডা মারলো।পলাশ জুঁইকে বললো চলো ক্লাসের সময় হয়ে গেছে, জুঁই হুম বলে উঠতে গেলে তখন তার কেমন যেন মাথাটা ঘুরে উঠলো। জুঁই মাথায় ধরে বসে পড়লো।
পলাশ ব্যস্ত হয়ে বললো, জুঁই কি হলো?
জুঁই বললো না তেমন কিছুই না মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠলো।
পলাশ বললো ক্লাস করবে না কি বাসায় চলে যাবে?
জুঁই বললো আরে এমন কিচ্ছু না আমরা ক্লাসে যাই... বলে দুজনেই পাশাপাশি হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে জুঁই দোতলায়, আর পলাশ তিনতলায় চলে গেলো।সোয়া একটায় দুজনেই এক সাথে নেমে এসে গাড়িতে উঠলো।
এভাবেই গল্প করতে করতে দুজন দুজনার বাসায় পৌঁছে যায়। এভাবেই হাসি আনন্দে কেটেগেলে চারমাস। পলাশের পরিক্ষা খুব ভালো হয়েছে।
চলবে....
মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩২
টানাপোড়েন (৩২)
বৃষ্টিভেজা দুপুর
রেখা কত কিছু ভেবে রেখেছিল পুজোটা খুব এনজয় করবে। রিম্পাদির আসার কথা ছিল বাড়িতে। একদিনের জন্য এসেছিল।রিম্পাদি আসার দিন টা আনন্দে কেটেছে এতসব বিশৃঙ্খলাতার মধ্যেও।
বাড়িতে তুমুল অশান্তি। একদিকে মিলি(স্ট্রীট ডগ) ওর বাচ্চা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। রেখা ও মনোজ এক চুলও বাড়ির এদিক ওদিক হতে পারে না। তাহলেই কপালে ওদের কষ্ট । সুরঞ্জন ফোন করেছিল পুজোতে যেতে । কিন্তু পারে নি। অন্যদিকে যৌথ সম্পত্তির টানাপোড়েন। রেখার শ্বশুর মশাইকে ঠকিয়ে ,জ্যাঠাশ্বশুর সব নিজের এবং তার সন্তানদের নামে যৌথ সম্পত্তি দখলে রেখেছেন। তাই রোজ অশান্তি। এরমধ্যে মিলির বেবি হওয়াতে ওদের কাজের লোকগুলোকে অব্দি এমনভাবে শেখানো হয়েছে, যাতে মিলিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় ।রেখা শুধু ভাবে এরা আর কত নীচে নামবে । মিলির সিঁড়ির নিচে বাচ্চাটা হওয়াতে । বাচ্চাগুলোর চোখ না ফোটায় সিঁড়ির নিচেই থাকবে। ।কিন্তু অজুহাত দেখিয়ে মিলিকে বের করে দেবার ওরা বাহানা খুঁজছে। যেহেতু মিলি বাচ্চাগুলোকে আগলে রাখে ,কোন ব্যাগ পত্র দেখলে বাচ্চাগুলোকে চুরি করে নিয়ে নেবে ভেবে 'ও' ঘেউ ঘেউ আওয়াজ করে ।কিন্তু যারা নিয়মিত চলাচল করছে ,তাদের কিন্তু কিছুই বলে না ।অথচ সেদিন পদিপিসি,কাজ না করে বাড়ি চলে গেছে।
আর রেখার জা , যা চিৎকার করে বলছে 'এখন আর মানুষ নয় বুঝলে,কুকুরের বাড়িঘর হয়ে গেছে।'
(ফোড়ন কেটে কথা বলছে)। এর জন্য কেউ বাড়িতে ঢুকতে পারবে না। বাসনপত্র রয়েছে ,কে মাজবে ?বাসি উঠোন কে ধোবে?
'অনেকক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচির পর ,কেউ কোনো সাড়া দেওয়াতে । চুপ করেছে।
মনোজ রেখাকে এসে বলল 'মাথা ঠান্ডা রাখ। এখন যে করেই হোক এই দিনগুলোকে পার করতে হবে ।পরে ওর ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।''
কিছুক্ষণ পরেই রেখার জা (রীতা ) হন্তদন্ত হয়ে রেখার দিকে ধাবিত হল।মনে হলো মৈনাক পর্বত ছুটছে।ইন্দ্রজিৎ যেমন রণ সাজে সজ্জিত হয়ে রামচন্দ্রকে বধের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল, ঠিক তেমনি।
রেখাকে এসে ডাকছে 'রেখা রেখা।।
রেখা রান্নাঘরে রান্না করছিল, শুনে সাড়া দিল "কি দিদিভাই?'
রীতা বলল ' একটু বাইরে এসো।'
রেখা বলে ' হাতটা ধুয়ে আসছি।'
আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রীতা সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো ' কি বলছো, বলো?'
'রীতা বলল 'পদিপিসি মিলির জন্য কাজ না করে চলে গেছে । 'এখন এইসব কাজকর্মগুলো কে করবে বল?'
রেখা বলল-'কেন ?মিলি কি করেছে?'
রীতা বলল ' কি করে নি বলো? (দুই হাত তুলে দেখালো) ঘেউ ঘেউ করে বাড়ি মাথায় তুলে নিয়েছে। পদিপিসি ভয় পেয়ে গেছে।'
রেখা বলল 'পদিপিসীকে তো মিলি চেনে। ওনাকে তো কিছু বলার কথা নয়। আর যদি ঘেউ ঘেউ করেই থাকে। তাহলে ,আমাদেরকে ডাকতো ।সেটা করলেই তো হতো। চলে যাবার কি আছে?"
রীতা বলল "অত কথা তো আমি বাপু বলতে পারব না। তবে এখন কাজগুলো কে করবে?'
তখন রেখা বাধ্য হয়ে বলল 'ঠিক আছে ।সে বাসি উঠোন ধুয়ে দেবে ।তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই
এই কথা বলার পর রীতা চলে গেল।'
আসলে এইভাবে রেখাকে জব্দ করছে। মিলি যেহেতু সদ্যজাত মা।সন্তানের প্রতি সবসময় একটা নিরাপত্তার দায়িত্ব ওর ওপর। মায়েরা সন্তানের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে ।তাই সে অবলা জীব হলেও তার মাতৃত্বকে অস্বীকার করা যায় না ।সেজন্যই বলা হয়েছিল কোন অসুবিধা হলে রেখা বা মনোজকে ডাকতে। কিন্তু তা না করে বাড়ি চলে গেছে। আসলে এগুলো যে পুরোটাই নাটক ,তা বুঝতে অসুবিধে হয় নি রেখার।
নানা কারণে একটা কি রকম যেন একটা বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।বাড়িতে রেখার মনেও বিন্দুবিসর্গ শান্তি নেই। মনোজের সঙ্গেও চলছে একটা যেন টানাপোড়েন ।আগামীকাল লক্ষ্মী পূজার প্রস্তুতি। রেখা কালবিলম্ব না করে নিচে গিয়ে উঠোনটা ধুয়ে দিল। আর উপর থেকে জেটি শাশুড়ি, রেখার জা ,ভাসুর সবাই দেখতে লাগলো আর হাসতে লাগল নিজেদের মধ্যে।
রেখার একটুও কষ্ট হয় নি। জানে সে যা করছে একটা অবলা জীব এর জন্য করছে।তা যে যতই বদমাইশি করুক না কেন? তবে মনে মনে সবসময় মনোজের কথাটাই ভাবছে। আজকাল কি হয়েছে কে জানে?
ওর কি কোন অফিস সংক্রান্ত সমস্যা চলছে ?সেটাও তো শেয়ার করে নি ।'
হঠাৎ করেই মনোজকে লক্ষী পূজোর ফর্দ ধরিয়ে রেখা বলল 'এই ফর্দটা রাখো। বাজার করতে হবে।'
মনোজ চিৎকার করে বলল 'তোমার কবে আক্কেল হবে বল তো ?যখন তখন যা কিছু ধরিয়ে দিলেই হলো।আমি যেতে পারবো কি পারবো না ,সেটা একবারও মাথায় আসলো না।'
রেখা তো হতবাক। ফ্যাল ফ্যল করে মনোজের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল 'আমি বুঝতে পারি নি।'
মনোজ বলল ' কবে বুঝবে তুমি আমাকে ?তোমার তো ওই একটাই কথা ।বুঝতে পারি নি। ভাগশেষ।'
রেখার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল টপটপ করে আর কোন কথা বলল না। সে শুধু ভাবতে লাগলো
অকারণে অনেক কথা শোনাল ।রেখা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে ।
রেখা ভাবছে 'ও কি করেছে? বাড়ির পুজোর জন্য ই ফর্দটা ধরিয়েছে ।এত চিৎকার করার কি আছে ?এটাই তো বুঝতে পারছে না।'
শেষ পর্যন্ত রেখাকেই লক্ষ্মী পূজার ফর্দ নিয়ে যেতে হয়েছে বাজার করতে।
ভেতরে ভেতরে সব সময় একটা কষ্ট রেখার।এতদিনের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম মনোজ রেখার প্রতি এতটা রিয়াক্ট করল ।রেখার কি অপরাধ নিজেই বুঝতে পারছে না ।বারবার নিজের আত্মসমালোচনা করছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না কোনো হদিস ।এইসব ভাবনা চিন্তা মাথায় নিয়ে সন্ধ্যেবেলাটা একটু বসেছে ,কিভাবে কি জোগাড় যন্ত্র করবে?পুরোহিত মশাইকে খবর দেয়া ,ফোনবুক ঘেটে ঘেটে নম্বর জোগাড় করে তাকে ফোন করা। এর পর ঢাকওয়ালাকে খবর দেয়া। সমস্ত কিছুই কন্টাক্ট করেছে রেখা। বড্ড ক্লান্ত লাগছে রেখার। বরাবর মনোজ এই সমস্ত কাজ গুলো করে। মনোজের যা মেজাজ বিগড়ে আছে ,ধারে কাছে যেতেই রেখা সাহস পাচ্ছে না। এর ই মধ্যে রাত সাড়ে দশটায় হঠাৎই ফোন।রেখা ফোন রিসিভ করে ক্লান্ত স্বরে বলে 'হ্যালো'।
ওপার থেকে কণ্ঠ ভেসে আছে 'আমি বড়দি বলছি রেখা।'
রেখা এবার বালিশ ছেড়ে উঠে বসে ধড়ফড় করে। আর মনে মনে ভাবে হঠাৎ বড়দির ফোন?
রেখা বলল 'হ্যাঁ দিদি ।বলুন?'
বড়দি বললেন 'তোমার কি শরীর খারাপ?'
রেখা বললে 'না দিদি ।বলুন। একটু ক্লান্ত আছি।'
বড়দি বললেন আসলে গলার স্বর টা শুনে তাই মনে হলো তো? যাই হোক কাজের কথায় আসি।
কালকে তোমাকে একবার স্কুলে আসতে হবে?'
রেখা বললো 'কেনো দিদি?
এখন তো ছুটি চলছে।'
বড়দি বললেন 'হ্যাঁ ছুটি চলছে কিন্তু এসআই অফিস থেকে আজকেই একটা মেসেজ এসেছে,আগামীকাল স্কুলে স্কুলে মাননীয় মন্ত্রী শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন ।সেই শুভেচ্ছা বার্তার পত্রটিকে গ্রহণ করতে হবে। স্কুলের হেড অফ দা ইনস্টিটিউশন না থাকলেও হবে ।অন্য কোনো প্রতিনিধি গ্রহণ করলেও হবে। তাই..'
রেখা বলল ' দিদি লোকাল টিচারকে বললে হয় না?'
বড়দি বললেন 'হ্যাঁ ।আমি ফোন করেছিলাম। শুধুমাত্র অনিন্দিতা ছাড়া ,বাকিরা সবাই আউট অফ স্টেশন। 'অনিন্দিতার আবার জ্বর সেজন্য তোমাকেই বলছি। কেন তুমি কি আউট অফ স্টেশন?'
রেখা বললো ' না দিদি। রেখা যে কি জ্বালায় জ্বলছে এটা বড়দিকে কি করে বলবে?কত রকম সমস্যায় জর্জরিত ।অপরদিকে তো নাও করতে পারবে না। আসলে বড়দি অনেকটাই ভরসা করেন রেখার উপর । নিজের অসুবিধা সত্তেও এবং স্কুলের কথা ভেবে জিজ্ঞেস করল' ওনারা 'কটায় আসবেন?'
বড়দি বললেন 'ওটাই তো মুশকিল রেখা।কিছু বলেন নি। বলেছেন এগারোটা থেকে থাকতে। একটা তো নির্দিষ্ট টাইম দেবেন সে সবকিছু দেন নি।'
রেখা বললো ' তাহলে দিদি কটা অব্দি থাকতে হবে এটা না বললে হয় ,বলুন ? সাড়ে চারটার দিকে থাকা সম্ভব?'আগামীকাল আবার লক্ষ্মী পুজো। যদিও লক্ষ্মী পুজো দুদিন পড়েছে।'
বড়দি বললেন 'তবুও আমি আর একবার যোগাযোগ করব ধীরেন বাবুর সঙ্গে। তোমাকে জানাবো ।তবে তুমি ধরেই নাও এগারোটার মধ্যে স্কুলে যেতে হবে।'
রেখা বলল 'ওখানে কি করতে হবে দিদি?'
বড়দি বললেন 'তেমন কিছুই করতে হবে না। উনারা আসবেন শুভেচ্ছা বার্তার পত্রটি দেবেন ।সেটি তুমি গ্রহণ করবে,সঙ্গে ফটো তুলবে।সেই ফটোগুলোকে গ্রুপে আবার পোস্ট করে দেবে কেমন,?'
রেখা বলল 'ঠিক আছে দিদি।'
বড়দি বললেন 'তাহলে তুমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যেও কেমন? আমি জানি ,তুমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে ।তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।'
রেখা বলল 'ওকে দিদি।'
রেখা ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল । লক্ষ্মীপূজো না হয় পরশুদিন করবে। কিন্তু মিলিদের খাবার ব্যবস্থা করতে হবে ।সুমিতা কাজে আসবে কি ,আসবে না ।ওর তো কোন ঠিক ঠিকানা নেই। যা কাজ আজকেই গুছিয়ে নিতে হবে ।সবথেকে বড় মনে অশান্তি লাগছে মনোজকে নিয়ে।
সন্ধ্যার পর থেকে একটা কথাও মনোজ রেখার সঙ্গে বলে নি। রেখা যে মনোজকে বলবে,আগামীকাল স্কুলে যাবে,সেটাও বলতে পারছে না।মিলির বাচ্চাগুলোকে নিয়েই যত চিন্তা।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। অবশেষে খাবার টেবিলে মনোজকে রেখা বলল 'আগামীকাল স্কুলে যাব। তাই মিলিদের খাবারটা তুমি ঠিকঠাক দিয়ে দিও।'
মনোজ কোন কথারই উত্তর দিল না ।খেয়ে উঠে চলে গেল। রেখার চোখ ফেটে জল পড়তে লাগল।
একটা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমাতে গেল।
এদিকে ভোর থেকেই শুরু হয়ে গেছে বৃষ্টি ।মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে ।চারিদিকে কিছু দেখা যাচ্ছে না। রেখা ট্রেন ধরে স্কুলে পৌঁছালো। স্কুলে গিয়ে দেখছে দিলীপ দা গেট খুলে দাঁড়িয়ে আছে । একগাল হেসে কাছে এগিয়ে এসে বলল ' দিদি শুভ বিজয়া।'
রেখাও একগাল হেসে মনের কষ্টটাকে চেপে বলল 'শুভ বিজয়া।ভালো আছেন তো সবাই?'
দিলীপ দা বললেন 'হ্যাঁ দিদি। আপনারা?'
রেখা বলল 'সবাই ভালো আছে।'কতটা যে ভালো আছে ,সে শুধু রেখাই জানে কিন্তু সৌজন্যবোধের জন্য তো বলতেই হবে।
সঙ্গে সঙ্গে দিলীপ দা বলল 'দিদি একদম ভিজে গেছেন তো? যান ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ করে নিন। না হলে চারিদিকে যা জ্বর জ্বালা হচ্ছে।'
অনেকদিন পর স্কুলে এসে সত্যিই খুব ভালো লাগছে ।কিন্তু চারিদিক শুধু শূন্যতা শূন্যতা। পাশের চেয়ারটায় রিম্পাদি বসে। রিম্পাদি তো ক্ষণিকের অতিথি। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সময় গড়িয়ে দুটো বাজে তখনও তাদের দেখা নেই। ঠিকা আড়াইটে নাগাদ দিলীপদা এসে বললেন ' দিদি এসআই অফিস থেকে লোক এসেছেন? তবে দিদি চেনা কাউকে লাগলো না। আপনি আসুন।'
রেখা বলল ' আপনি ওনাদের ভেতরে নিয়ে আসুন।'
দিলীপদা ঘাড় নেড়ে চলে গেলেন।
একটু পরেই দিলীপ দা এসে বললেন ' দিদি উনাদের এই ঘরেই ডেকে আনছি।'
রেখা শুধু বলল ' ঠিক আছে।'
হঠাৎই স্টাফ রুমে যাকে ঢুকতে দেখলো রেখা ।দেখে তো অবাক হয়ে গেল এবং সেই ভদ্রলোক অবাক হয়ে গেলেন। সৌজন্যবশত রেখা বলল 'নমস্কার ভিতরে আসুন।"
আগন্তুক ভদ্রলোক সৌজন্যবশত নমস্কার জ্ঞাপন করলেন।
রেখা দিলীপ দা কে বলল দিলীপ দা উনাদের একটু মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা করুন বিজয়ার পরে আসলেন তো? আর মালাদি এসেছে একটু চা এর ব্যবস্থা করতে বলুন।'
দিলীপদা ঘার ছেড়ে চলে গেলেন।
ভাবছে হঠাৎ সুব্রত কোথা থেকে হাজির হলো। রেখার জীবনে কি ঘটতে চলেছে ,কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎই সুব্রতের সঙ্গে থাকা ভদ্রলোক বললেন আমি একটু স্কুলটা ঘুরে দেখছি আপনি বসুন।
রেখাকে একা পেয়ে সুব্রতবাবু বললেন 'তুমি এই স্কুলে আমাকে চিনতে পারছো? অনেকদিন পর তোমাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে ।ভালো আছো তো?'
রেখা তো প্রথমে ভেবেছিলো স্বপ্ন দেখছে ।এখন দেখছে না বাস্তবের মাটিতে আছে ।ভাবতে পারছে না সুব্রত এসআই হয়ে স্কুলে এসেছে।
শুধু ঘাড় নেড়ে বলল হ্যাঁ।
এরপর মাননীয় মন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পত্রটি স্বয়ং এসআই সাহেব রেখার হাতে দিলেন এবং ছবি তোলা হলো।
রেখা ভাবতে পারছে না ,শেষ পর্যন্ত সুব্রতর সঙ্গেই তাকে ছবিটা তুলতে হলো ।এটা কি ভবিতব্য?
এদিকে বৃষ্টি থামছে না বড়দি ফোন করে খবর নিলেন।
থাকে অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন বললেন 'এই জন্যই তো তোমাকে এত ভালোবাসি রেখা। তোমাকে কোন কাজ দিলে তুমি সহজে না করো না। তোমার ওপর ভরসা করা যায়।'
রেখা শুধু বলল 'না, না, দিদি এটা তো আমাদের ডিউটি।'
বড়দি বললেন 'তোমাকে তো সেই ৫টার ট্রেন ধরতে হবে।সাবধানে এসো।'
সুব্রত বাবু বললেন'তোমাকে স্টেশনে পৌঁছে দেয়া হবে আমাদের গাড়িতে।'
রেখা কিন্তু কিন্তু করলেও গাড়িতে যেতেই হলো। কিভাবে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে না গিয়ে কোনো উপায় ছিল না। আর মনে মনে ভাবছে সেই কলেজ লাইফের কথা ।সুব্রত কি সেই আগের মতই আছে? আজ সেই বৃষ্টির দুপুর আর কলেজ লাইফের বৃষ্টির দুপুর, দুটোর মধ্যে বিস্তর তফাৎ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)